না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১৩
মাইশা জান্নাত নূরা
ঢাকার নামকরা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টের ভেতরে একদম কর্ণারে সাজানো টেবিলটিতে মুখোমুখি বসে আছে তেজ আর নিশা। চারপাশে মৃদু আলো জ্বলছে আর হালকা মিউজিক বাজছে। নির্ঝরও প্রথমে তেজের সাথে এসে ওর পাশেই বসেছিলো কিন্তু নিশা স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিলো….
—”আমি তেজের সাথে একা কিছু কথা বলতে চাই।”
তখনই নির্ঝর না চাইলেও সেখান থেকে উঠে অন্যদিকে গিয়ে বসেছে। কিন্তু দূর থেকে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে সে।
তেজ আজ পরেছে কালো রংশের একটা শার্ট, যার অর্ধেক বুকের বাটনগুলো খোলা। ফলস্বরূপ জিম করা লোমহীন বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যা নিশার মতো মর্ডান যেকোনো মেয়েকেই আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে রাখায় হাতের ফুলে ফুলে উঠা শিরাগুলো দেখা যাচ্ছে। তেজ চেয়ারের সাথে হেলান না দিয়ে নিয়ের দু’হাত শক্ত করে টেবিলের উপর রেখেছে। ওট চোখে-মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। ভ্রু যুগলও কুঁচকে রয়েছে তেজের। সূক্ষ্ম দৃষ্টিখানা নিশার উপরেই স্থির করা। তেজের ঠোঁটের কোণে হালকা ব্য*ঙ্গা*ত্ম*ক হাসির রেখে ফুটে রয়েছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নিশা তেজের সামনের চেয়ারটায় পূয়ের উপর পা তুলে বসে আছে। নিশার পরণে একটা সর্ট হোয়াইট এর ভিতর হালকা কাজ করা টপস রয়েছে যা হাঁটু ছুই ছুই। হালকা মেকআপ করেছে। ঠোঁটে নুড লিপস্টিক দিয়েছে। কানে লম্বা দুল পড়েছে। হাতে একটা ডায়মন্ডের ব্রেসলেট রয়েছে। নিশা নিজের চোখে-মুখে চরম আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট রেখে বাঁকা হেসে বললো…..
—”খুব তো এটিটিউড দেখাচ্ছিলে আমায়! মনে পরে সেই দিন গুলোর কথা? তোমার মনে না পড়লেও আমার সব মনে আছে। আর এখন দেখো নিজের পায়ে হেঁটে চলে এলে আমার সাথে দেখা করতে। ভেতরে ভেতরে অনুভূতিটা কেমন কাজ করছে? আমার কিন্তু দারুণ লাগছে। মি. প্লে বয় তেজওয়ার খান।”
তেজ ওর ঠোঁটে যেই ব্য*ঙ্গা*ত্ম*ক হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখেই বললো…..
—”তুমি যেরকম আমাকে পাওয়ার জন্য ছ্য*চ*ড়া*মি গুলো করে যাচ্ছো ওমনটা আজ অবধি কোনো মেয়ে করে নি। অবশ্য তারা ওমন করার মতো সুযোগই পায় নি। কারণ আমার একটা ইশারাই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো আমার বিছানায় আসতে। নিজেদের সবকিছু বিলিয়ে দেওয়ার জন্য ম*র*তো তারা।”
তেজ সামনের দিকে একটু সামনে ঝুঁকলো। ঠাণ্ডা গলায় বললো…..
—”মনে হচ্ছে তোমার ক্ষেত্রে ভু*ল*ই করেছি আমি। তোমাকে এ*ভয়েড না করে যদি প্রথমেই বেড পার্টনার বানিয়ে নিতাম তাহলে আজ তোমার থেকে এতো বা*জে হু*ম*কি আমায় শুনতে হতো না।”
নিশার চোখ এর আকৃতি কিন্ঞ্চিত ছোট করে বললো….
—”আমাকে কি তুমি ঐসব স*স্তা মেয়েদের মতো ভেবেছো যে তুমি আঙুল নাচালেই আমি ছুটে যাবো তোমার বিছানায়? না, তেজওয়ার খান আমি তেমন নই।”
তেজ বললো,
—”কি চাও তুমি?”
নিশাও টেবিলের উপর দু’হাত রেখে তেজের দিকে কিছুটা ঝুঁকলো। ঠোঁটে বাকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললো…..
—”শুধু একটা রাত নয়, পুরো একটা জীবন চাই আমি। কেবল একবার না হাজারবার তোমাকে রিপিট করতে চাই আমি আমার জীবনে। তোমার সব রাগ, সব দম্ভ পুরো তুমিটাকেই আমি চাই তেজ। আমি নিশা সিনহা চৌধুরী। এই পৃথিবীতে এক পিসই মাত্র। তাই আমি কারোর ১ রাতের ভো*গ্য বস্তু হতে চাই না।”
তেজ রাগী স্বরে বললো….
—”কথা ক্লিয়ার করো। এতো হেয়ালিপনা পছন্দ না।”
নিশা বললো….
—”তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে তেজ। সারাজীবন ধরে কেবল এই আমি ছাড়া আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও দেখতে পারবে না তুমি।”
নিশার বলা শব্দগুলো যেন তেজের বুকে ধাঁ*রা*লো ছুঁ*ড়ি*র মতো এসে বিঁ*ধ*লো। সঙ্গে সঙ্গে তেজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর নিজের দু’হাতের মুঠি বারা এমন জোরে আ*ঘা*ত করলো যে পাশে থাকা কাঁচের গ্লাসটা পর্যন্ত মৃদু ভাবে কেঁ*পে উঠলো। আশেপাশের দু’একজন মানুষ ওদের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
তেজ গ*র্জে উঠে বললো….
—”আর ইউ আউট অফ মাইন্ড গডড্যাম? আমার মতো একজন পুরুষ তোমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করবে? হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ থিংকিং নিশা?”
নিশা তেজের গ*র্জে উঠা স্বর শুনে বিন্দুমাত্র না ভ*য় পেলো না। নিশা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো….
—”ডোন্ট শাউট মিস্টার খান। তুমি যতোই গ*র্জাও না কেনো তোমার আসল রূপটা তো আমি জানি। আমার কথায় যদি তুমি রাজি না হও তাহলে আমার কিছু শব্দের প্রয়োগের ফলে তোমার পরিবারের সামনে তোমার ইমেজে কেমন দাগ লাগতে পারে সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না!”
তেজের চোখজোড়া এই মূহূর্তে র*ক্ত*চো*ষা শিকারিদের মতো দেখাচ্ছে। তেজ দাঁতে দাঁত চেপে গ*র্জা*নো কন্ঠেই বললো….
—”তুমি আমাকে ব্লা*কমে*ইল করছো তাই না? কিন্তু একটা কথা স্পষ্ট ভাবে শুনে রাখো এই তেজওয়ার খান কাউকে ভয় করে না!”
নিশা ঠাণ্ডা হাসি দিয়ে বললো…..
—”এতো দিন পর্যন্ত কারো নি কিন্তু এখন ঠিকই করবে। নিজের পরিবারের চোখে হিরো থেকে এক মুহূর্তের মধ্যেই জিরো হয়ে যাওয়ার ভ*য়*টা তোমার ভেতরে পুরো দমেই আছে। আমি সেই ভ*য়*টা তোমার চোখে-মুখে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। তাই এতো সুন্দর একটা সুযোগ আমি হাতছাড়া হতে দিতে চাই না হ্যন্ডসাম বয়।”
নির্ঝর দূরে বসেই এতোসময় তেজ আর নিশার মধ্যে হতে থাকা সব কথোপকথন শুনেছে কানে থাকা ব্লুটুথ এর সাহায্যেই। রেস্টুরেন্টে ঢোকার সময়ই তেজের ফোন থেকে নিজেকে কলে নিয়ে রেখেছিলো নির্ঝর। সব কথা শোনার পর নির্ঝরের বুকের ভেতরটা কেমন যেনো ধ*ক-ধ*ক করছে।নির্ঝর ভাবছে…..
“তেজ ভাইয়ের মতো ভ*য়ং*কর চালাক প্রকৃতির একজন মানুষকে আজ প্রথমবার কোনো মেয়ের হাতে ঘা*য়ে*ল হতে হলো। এবার তেজ ভাই কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতো সক্ষম হবে..?”
তেজ দাঁড়ানো অবস্থাতেই শ্বাস নিচ্ছে গভীরভাবে। শরীরের প্রতিটি শিরা রাগে টানটান হয়ে আছে ওর। চোখজোড়া দিয়েই যেনো মুহূর্তেই নিশাকে ছিঁ*ড়ে ফেলতে পারবে তেজ এমন অনুভূতি কাজ করছে ওর ভিতর। কিন্তু নিশা পুরোপুরি শান্ত ও অবিচল ভঙ্গিতে বসে ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে তেজের দিকেই তাকিয়ে আছে৷
সারফারাজ নিজ আস্তানায় প্রবেশ করে সরাসরি নিজের অফিসকক্ষে চলে এলো। এই কক্ষের বাহিরের পরিবেশ এই মূহূর্তে থমথমে বর্ণ ধারণ করে আছে। শত শত গার্ডসরা চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশালকৃতির ব*ন্দু*ক হাতে নিয়ে।
সারফারাজ ল্যপটপটা অন করে পিহুর বাড়ির সামনে গতকাল রাতে সে চলে আসার পর থেকে কে এসেছে পিহুর বাসায় এবং পিহু কি স্বইচ্ছায় বেড়িয়েছিলো নাকি ওকে জোর করে কেউ বের করছে তা দেখার উদ্দেশ্যে ফুটেজটা দেখতে শুরু করলো।
সারফারাজ দেখলো ভোর ৫টা নাগাদ পিহুর বাবা জবরুল বাড়ির গেইট খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। সারফারাজের কপালের ও ঘাড়ের সূক্ষ্ম র*গ গুলো তৎক্ষনাৎ ভেসে উঠলো। এটা দেখার পর সারফারাজের আর বুঝতে বাকি রইলো না গতকাল রাতে সে খান ভিলায় ফেরার পর যখন জবরুলকে কল করেছিলো তখন তার ফোন বন্ধ পাওয়ার আসল কারণ কি হতে পারে আর হুট করেই জবরুলের নিজ বাড়িতে ফিরে আসার কারন-ই বা কি হতে পারে।
সারফারাজ নিরব রইলো। ওর দু’চোখের গাড় নীলচে রংয়ের মণিজোড়ার চারপাশে থাকা সাদা অংশ ইতিমধ্যেই লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। সারফারাজ ল্যপটপের পাশেই থাকা লাল রংয়ের পান্ঞ্চ বলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিচ্ছে।
সিসিটিভি ক্যমেরার সাথে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে রাখতে বলেছিলো সারফারাজ আহাদকে। যেনো ক্যমেরায় যা দৃশ্য দেখা যায় প্রয়োজনের স্বার্থে সেখানে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিরা কোনো প্রকার কথপোকথন করলে তাও যেনো শোনা যায়।
জবরুল বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার পর থেকই ভিতর থেকে মৃদু মৃদু আওয়াজ আসতে শুনতে পায় সারফারাজ সেই ক্যমেরায় থাকা সাউন্ড সিস্টেমের বদৌলতে। কিন্তু সেই সাউন্ডগুলো স্পষ্ট ছিলো না। ক্যমেরাটা বাহির পার্শের দৃশ্য দেখার মতো পজিশনে সেট করায় ভিতরে এইমূহূ্র্তে কি চলছে তা সারফারাজ দেখতে পারছে না।
প্রায় ৩ ঘণ্টা পর সোমা আর সোনালী দু’জনে মিলে পিহুকে ধা*ক্কা-ধা*ক্কি করে টেনে বাড়ির ভিতর থেকে বের করলো। সারফারাজের পান্ঞ্চ বলের উপর দেওয়া প্রেসারের মাত্রা বেড়ে দ্বিগুণ হলো।
পিহু কান্না করছে। হাতজোর করে জবরুলকে অনুরোধ করছে বলছে…..
“বাবা আমায় ছেড়ে দিন। দয়াকরে আমাকে নিয়ে যাবেন না। আমার কথা শুনুন। আমি কোনো মহা পা*প করি নি যার জন্য আপনার মান-সম্মান ধু*লি*স্সা*ৎ হয়ে যেতে প…!”
জবরুল পিছন ঘুরে পিহুর গালে স্বজোড়ে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিলেন।
সারফারাজ এবার এতোটাই শক্ত করে নিজের ডান হাতের মুঠোয় থাকা পান্ঞ্চ বলটাতে চাপ দিলো যে তা ফেঁ*টে চতুরদিকে তার অংশ ছিঁ*টে ছিঁ*টে গেলো।
জবরুল ধ*ম*কে*র স্বরে পিহুকে বললেন…..
—”ন*ষ্টা মেয়ে-ছেলেতে পরিণত হয়ে গিয়েছিস আবার মুখে মুখে ত*র্ক করছিস তখন থেকে? মা-টা ম*র*লো তারপর গলায় দ*ড়ি দিয়ে ম*র*তে পারিস নি তুই জা*নো**? বেঁচে ছিলিস এইসব ন*ষ্টা*মি করার জন্যই? আর একটা শব্দ যদি তোর এই মুখ দিয়ে বের করেছিস তাহলে তোর গলায় পা*ড়া দিয়ে এইখানেই শ্বাস*রো*ধ করে মে*রে ফেলবো আমি। আমায় চিনিস নি এখনও তুই।”
পিহু অনেকটাই নেতিয়ে পড়েছে সোমা আর সোনালীর উপর। সারফারাজ লক্ষ্য করলো পিহুর দুই হাতের বের হয়ে থাকা অংশে জায়গায় জায়গায় র*ক্ত জমাট বেঁ*ধে কা*ল*চে বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। সারফারাজ বুঝতে পারলো জবরুল বাড়িতে প্রবেশ করার পর থেকে যেই ৩ ঘন্টা সময় পেরিয়ে গিয়েছে তখুনি তিনি পিহুর শরীরে আ*ঘা*ত করেছেন বা*জে ভাবে।
সোমা জবরুলকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—”আহহ, অনেক তো মে*রে*ছো এবার আর মে*রো না। এর ভিতর অন্তত নিজ পায়ে দাড়িয়ে থাকার ক্ষমতাটুকু তো রাখতে হবে। নয়তো চট্রগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পর ছেলে পক্ষের লোকজন যদি দেখে মেয়ের অবস্থা এতো কা*বু তখন তারা কি এই মেয়েকে ঘরে উঠাতে চাইবে?”
জবরুল বললেন….
—”কোনো ছেলেপক্ষ-টক্ষ থাকবে না সেখানে। যিনি পাত্র তিনি আমি যেই কোম্পানিতে চাকরি করি সেই কোম্পানির ম্যনেজার কাশেম সাহেব। তার বয়স প্রায় ৫০ বছর। ২৫ বছর আগে কাশেম সাহেব ১ম বিয়ে করেছিলেন কিন্তু দূ*র্ভা*গ্য*বশত প্রথম স্ত্রী ১ বছর হলো প্য*রা*লাইসড হয়ে বিছানায় প*রে আছেন। আর তার ৩টা সন্তানও আছে। ২টা ছেলে ও ১টা মেয়ে। ছেলে ২ জনকেই বিয়ে করিয়েছেন বছর ২ হলো। মেয়েটা এখনও অবিবাহিত। আর্থিক অবস্থা অনেক স্বচ্ছল তাদের। নিজের বার্ধক্য সময়টাতে তো একজন সুস্থ সবল সঙ্গীর দরকার কাশেম সাহেবের। তাই তিনি ২য় বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। একদিন কথায় কথায় আমার সাথে বিষয়টা শেয়ার করেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার আগে তুমি যখন ফোন করে আমাকে পুরো বিষয় সম্পর্কে অবগত করলে তখন আমার নজরে পিহুর জন্য কাশেম সাহেবের থেকে উত্তম কোনো পাত্র নজরে ছিলো না।
তাই আমি কাশেম সাহেবের সাথে এ বিষয়ে একান্তে কথা বললে পরে তিনি তো সঙ্গে-সঙ্গেই রাজি হয়ে যান। আর বিয়েটা চট্টগ্রামে হবে না। হবে অন্য কোথাও। কারণ আমি খুব ভালো করেই জানি একজন এমপির ক্ষমতা অতি সামান্য নয়। আমি যে চট্টগ্রামে থাকি আর পিহুকে নিয়ে আমরা যাচ্ছি তা সম্পর্কে জানতে ওনার খুব বেশি সময় লাগবে না৷ তাই আমি এখানে আসার আগেই সম্পূর্ণ বিষয়টা চিন্তা করে গুছিয়েই এসেছি। এবার বেশি কথা না বলে চলো তো এই অ*প*য়া*টাকে নিয়ে। মোড়ে গাড়ি দাঁড় করানো আছে। সেই গাড়ি করেই আমরা আমাদের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাবো।”
সোনালী আর সোমার মুখ চিকচিক করছে খুশিতে পিহুর এমন দূ*র্বি*ষহ পরিণতি হবে চিন্তা করে। জবরুল মোড়ের দিকে আগে আগে এগিয়ে গেলেন। সোনালী হাসিমুখল বললো….
—”একজন ৫০ বছর বয়সী পুরুষকে শেষে কিনা পিহু জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে আর এমপি সাহেব কিছু করে উঠার আগেই যা হওয়ার তা হয়ে যাবে এই ভেবেই তো আমার খুশি আকাশ ছুঁই হয়ে দাঁড়িয়েছে মা।”
সোমা বললেন….
—”আমি তো ভাবতেই পারি নি এই বুড়োটা আমার এক কথায় রাতে রাতেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসবে আর পিহুর জন্য এমন পাত্রও ঠিক করে রেখে আসবেন। তবে এবার যা হবে আমাদের জন্য ভালোই হবে। এই অ*প*য়া*র জন্য ঐ এমপির অনেক হু*ম*কি-ধ*ম*কি হজম করতে হয়েছে আমাদের। এবার আর কিছুই করতে পারবে না সে। চল চল তাড়াতাড়ি একে নিয়ে চল গাড়ি পর্যন্ত।”
অতঃপর সোমা সোনালী মিলে নেতিয়ে পড়া পিহুকে ছেঁ*চ*ড়া*তে ছেঁ*চ*ড়া*তে মোড় পর্যন্ত আনলো। মোড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা সাদা রংয়ের “Toyota HiAce” কার গাড়ির পিছন সিটের দরজা খুলে দিলো ড্রাইভার। অতঃপর সোমা ও সোনালী মিলে পিহুকে ধরে গাড়িতে উঠালো। জবরুল ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠে বসলেন। গাড়ি স্টার্ট করে মূহূর্তের মধ্যে তা ক্যমেরা বন্দী জায়গা পেরিয়ে চলে গেলো তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
পুরো দৃশ্য দেখা মাত্র সারফারাজ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাশের অন্য টেবিলে এমনভাবে লা*থি মা*র*লো যে গ্লাসটা চূ*র্ণ-বি*চূর্ণ হয়ে গেলো। সারফারাজ রাগে চি*ল্লি*য়ে বললো….
—“ড্যাম ইউ! তোরা আমার কলিজার টুকরোকে ছুঁয়েছিস? এই সারফারাজ ইউসুফ খানের থেকে তার হবু বউকে কে*ড়ে নিয়ে অন্য কারোর সাথে বিয়ে দেওয়ার কূ*ট*নৈ*তি*ক পরিকল্পনা করেছিস! নিজ নিজ জানের প্রতি সব মায়া ফুরিয়ে গিয়েছে যে তোদের তা-ও আমার বোঝা হলো। আমি জীবিত থাকতে তোরা আমার প্রাণপাখিকে আমার থেকে কে*ড়ে নিতে পারবি না। আজ তোদের ৩ জনেরই জীবনের শেষ দিন হতে চলেছে জা*নো** এর দল।”
এই বলে সারফারাজ ল্যপটপ থেকে পিহুকে নিয়ে যাওয়ার গাড়িটির পিছনে থাকা নাম্বার প্লেটের ঐ জায়গায়টায় ব্যক করে পজ করলো। অতঃপর সে গাড়িটির ছবি উঠালো ওভাবেই।
সেইসময় সারফারাজের অফিসকক্ষের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলে সারফারাজ বললো….
—”কামিং।”
তখুনি আহাদ সহ ওর পিছনে আরো ২জন গার্ড অন্য আরেকজন গার্ডকে ধরে ভিতরে প্রবেশ করলো। আহাদ বললো….
—”আমার স্ত্রী এখন আউট অফ ডে*ন্ঞ্জা*র পজিশনে আছে স্যার। আমি আর হাসপাতালে থাকতে পারলাম না ম্যমের নি*খোঁজ হওয়ার খবর শুনে।”
এই বলে আহাদ ওর পিছনে ধরে রাখা গার্ডটির দিকে একপলক দেখে আবারও বললো….
—”স্যার, গতকাল রাতে আমার স্ত্রীর লেবার পে*ই*ন এর খবর পেয়ে আমি চলে যাওয়ার আগে গার্ডস রিফাতকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম ম্যমের বাড়ির সামনের সিসিটিভি ফুটেজে নজর রাখতে। সে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করেছে। তাকে যথাপোযুক্ত শা*স্তি প্রদান ও করা হয়েছে। আপনি বললে তার শা*স্তি*র পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”
সারফারাজ গম্ভীর কন্ঠে বললো…
—”আর কোনো শা*স্তি*র প্রয়োজন নেই ওর। ছেড়ে দাও ওকে।”
সঙ্গে সঙ্গে বাকি দু’জন গার্ডস রিফাতকে ছেড়ে দিলে রিফাত হাঁটু ভে*ঙে মেঝের উপর বসে কান্নারত কন্ঠে বললো….
—”স্যার আমি ভু*ল করে ফেলেছি। আমার ভু*লের পরিমাণ যে অনেক বড় তাও আমি বুঝতে পেরেছি। দয়াকরে এবারের মতো আমায় মাফ করে দিন। আমাকে আমার কাজ থেকে ব*র*খাস্ত করবেন না স্যার।”
সারফারাজ বললো…
—”করা হয় নি তোমায় ব*র*খাস্ত। আহাদ থাকো। বাকিরা বের হও এই কক্ষ থেকে আর নিজ নিজ কাজে মনোনিবেশ করো।”
তৎক্ষনাৎ বাকি ৩জন গার্ডস বেড়িয়ে গেলো কক্ষ থেকে। আহাদ সারফারাজের পাশে এসে দাঁড়ালে সারফারাজ ভিডিওতে থাকা গাড়ির অংশটুকু আহাদকে দেখিয়ে বললো….
—”সিটি ইন্টেলিজেন্সকে জানাও। সাদা রংয়ের এই Toyota HiAce মাইক্রোটা ট্রেস করো। ঢাকার সব হাইওয়ে, টোলপ্লাজা, গ্যাস স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখো। ১৫ মিনিটের মধ্যে এই গাড়ির পুরো হ*দি*স বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করো আহাদ।”
আহাদ বেড়িয়ে গেলো ওর উপর বর্তানো দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে। সারফারাজ কক্ষ থেকে বেড়িয়ে সিক্রেট গেইট গুলো অতিক্রম করে বাহিরে এসে দাঁড়ালো খোলা আকাশে নিচে। একেবারে বাহিরে যাওয়ার শেষ ধাপের সামনে। পরপরই আহাদ ছুটে এলো সারফারাজের কাছে। আহাদ বললো….
—”ঢাকা থেকে বের হওয়ার সব গেইট, টোলপ্লাজা, হাইওয়ে, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন প্রত্যেকটা জায়গায় আমাদের গার্ডসদের বসানো হয়েছে স্যার। গাড়িটি এখন কোন জায়গাতে অবস্থান করছে তা খুব তাড়াতাড়ি জেনে যাবো।”
সারফারাজের বললো….
—“এই মাইক্রো যেনো ঢাকার বাহিরে বের হয়ে যেতে না পারে। বের হওয়ার যতো জায়গা আছে সব সিল করে দাও। যারা এই গাড়িটিকে আটকাতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে আর যারা ঘু*ষ খেয়ে এদের যেতে দিতে চাইবে তাদের কোনো ওয়া*র্নিং ছাড়া গু*লি করবে।”
আহাদ বললো….
—”ওকে স্যার।”
অতঃপর সারফারাজ আর্মি ক্যাম্প থেকেও বিশেষ বাহিনীকে নামিয়ে দিলো। সারফারাজ আস্তানার পিছনে থাকা এড়িয়াতে চলে এলো আহাদের সাথে। সেখানে থাকা ওর প্রাইভেট হেলিকপ্টারটাতে উঠলো সারফারাজ ও আহাদ। অতঃপর হেলিকপ্টারটিকে আকাশে উঠালো পাইলট। সারফারাজের হাতে একটা দূর্বিন রয়েছে। সারফারাজ সেটার সাহায্যে চারপাশে নজর বুলাচ্ছে। একই কাজ আহাদ ও করছে।
সারফারাজ বললো….
—“কতোক্ষণ পারবি তোরা আমার চোখ এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াতে! খুব শীঘ্রই তোদের আমি ধরে ফেলবো। যেদিকে গেছিস, যেখানে আছিস সেখান থেকেই তোদের ধরে ফেলবো।”
সারফারাজের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। চোখ জোড়া অসম্ভব লাল হয়ে আছে রাগে। তখুনি আহাদের ফোন বেজে উঠলো। আহাদ কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পাওয়া তথ্য শোনা মাত্র সারফারাজকে বললো…
—”স্যার, ওদের গাড়িটি বর্তমানে ঢাকার (***) এড়িয়ার বিল্ডিং নং (***) এর সামনে এসে থেমেছে।”
সারফারাজ পাইলটকে সেই ঠিকানা অনুযায়ী যেতে বললো দ্রুত।
সঠিক গন্তব্যের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলো জবরুল। অতঃপর পিছনের গেইটটি খুলে দেওয়া হলে পিহুকে দু’পাশ থেকে সোমা ও সোনালী যে ধরে রেখেছে তা দেখা হলো। পিহু আবারও ছটফট করতে শুরু করেছে। অঝোরে কাঁদছে। জবরুলকে অনুরোধ করছে ওর সাথে যেনো এতো বড় অন্যায় করা না হয়। জবরুল বললেন…
—”তোকে আমার কসম পিহু। যদি এখনও ছটফট করিস, আমার কথা মেনে না নিস তাহলে আমি এক্ষুণি গাড়ির নিচে প*রে আ*ত্ম*হ*ত্যা করবো বলে দিলাম।”
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ১২
জবরুলের মুখে এরূপ কথা শোনামাত্র পিহু ছ*ট*ফ*ট করা থামিয়ে দিলো। থম হয়ে থাকা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো বাবা নামক মানুষটির দিকে। মূহূর্তের মধ্যেই ওর হাত-পা-মুখ অদৃশ্য কোনো শি*ক*ল দ্বারা খুব ম*জ*বু*ত ভাবে বেঁধে দিলেন যেনো জবরুল। সোমা আর সোনালী পিহুকে ধরে গাড়ি থেকে নামালো। পিহু পুরোপুরি অনুভূতি শূন্য হয়ে ওদের সাথে বাসাটির ভিতরে প্রবেশ করলো।