না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২২ (৩)
মাইশা জান্নাত নূরা
সারফারাজের ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিমা দেখে ও তার আন্তরিক কণ্ঠে নিখাদ ভালোবাসা ভরা কথাগুলো শুনে পিহুর ভেতরটাতে অদ্ভুত শান্তি অনুভব হচ্ছে। পিহুর দু’চোখে খুশির অশ্রুতে চিকচিক করছে। ঠোঁটে লাজুকতা ও প্রশান্তির মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। পিহু ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে মোলায়েম কণ্ঠে বললো…..
—“ক্ষমা করেছি আপনাকে। উঠুন এমপি সাহেব। এভাবে আমার পায়ের কাছে বসে আমায় আর লজ্জা দিবেন না দয়া করে।”
সারফারাজ বুকফাঁকা করে একবার শ্বাস ছাড়লো। সারফারাজের চোখে-মুখে স্বস্তির ঝলক ভেসে উঠলো। পরক্ষণেই সারফারাজ উঠে দাঁড়িয়ে পিহুকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। একেবারে বুকের গহিনে পিহুকে ঢুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে যেনো সারফারাজ। অতঃপর বললো….
—“তুমি জানো, তোমাকে খুঁজে না পেয়ে আমার নিঃশ্বাস নিতেও কেমন কষ্ট হচ্ছিলো বউ…! মনে হচ্ছিলো দম আটকে যাচ্ছে।”
সারফারাজের কণ্ঠস্বর মৃদুভাবে কাঁপছিলো। সারফারাজের বুকের ভেতরটা নিঙরে বেরিয়ে আসা ভয় মিশ্রিত এই ভালোবাসার স্বীকারোক্তি শুনে পিহু মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকাতেই সারফারাজ আবারও বললো…
—“প্রতিশ্রুতি তো দিলে না আমাকে…!”
পিহু মিষ্টি হাসি হেসে শান্ত কন্ঠে বললো….
—“এই দেহে প্রাণ আছে যতোদিন, প্রহেলিকা পিহু তার এমপি সাহেবেরই থাকবে ততোদিন। আপনার খুব সন্নিকটে, একেবারে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে।”
এই বলে পিহু সারফারাজের বুকের বাঁপাশে হাত রাখলো। যেনো সেখানে পিহু ওর নিজের নামটা লিখে দিলো সারফারাজের হৃদস্পন্দনের সাথে মিশিয়ে। সারফারাজ পিহুর কপালে গভীরভাবে একটা চুমু এঁকে দিয়ে ওর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…..
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—“একটা কথা মনে রেখো প্রিটিহার্ট, আমার কাছে থেকে পালানোর ক্ষমতা তোমার নেই। আমি রাগ করতে পারি, ধ*মক দিতে পারি, কিন্তু শেষমেশ আমিই তোমাকে বুকে টেনে নিবো। কারণ তুমি আমার আসক্তি, তুমি আমার নেশা। আর এই নেশা থেকে না আমি কোনোদিন মুক্তি পেতে চাই না।”
কিয়ৎক্ষণ পর ছাদের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে এলে পিহু আর সারফারাজ একে-অপরের থেকে দূরে সরে গেলো। সার্ভেন্ট মালতী ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন….
—”বড়বাবা, ভিতরে আসবো কি?”
সারফারাজ বললো….
—”আসুন, মালতী চাচী।”
মালতী ভিতরে আসার পর নম্রস্বরে বললেন….
—”বড়বাবা, বড়বউমাকে নিয়ে এক্ষুণি নিচে আসতে বলেছেন আপনাকে বড়সাহেব। ড্রয়িংরুমে সবাই আপনাদের অপেক্ষায় বসে আছেন।”
—”ঠিক আছে। আপনি যান। আমরা যাচ্ছি।”
মালতী স্থান ত্যগ করলেন। অতঃপর পিহুকে নিয়ে সারফারাজও নিচে চলে আসলো। ড্রয়িংরুমে খান পরিবারের সবাই সোফায় বসে আছেন। কেবল তেজ আর নির্ঝর অনুপস্থিত। সারফারাজের বাবা জামাল খান বললেন….
—”বউমাকে নিয়ে বসো সারফারাজ।”
সারফারাজ আর পিহু সোফায় পাশাপাশি বসলো। অতঃপর সারফারাজের দাদু মোস্তফা খান বললেন….
—“এখন সময় এসেছে আমার বড় নাতবউকে সামাজিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। বড় দাদু ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানটা আমরা ধুমধাম করে করবো। এই আয়োজনে কারো আপত্তি নেই তো?”
সবাই একসাথে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। পুরো পরিবেশে আনন্দের শীতল বাতাস দোলা দিয়ে গেলো। পিহু মাথা নুইয়ে রেখেছে। মুখশ্রী জুড়ে জোড়পূর্বক খুশির ছাপ ফুটিয়ে রেখেছে কেবল।
একটা বিয়েতে আনন্দ-উল্লাস সবথেকে বেশি করে থাকে মেয়েদের পরিবারের মানুষরাই। অথচ পিহুর বাবার বাড়ি বলতে কেউ নেই আজ ওর পাশে।
পিহুর বাবা জবরুল বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পিহুকে যেদিন জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন জবরুল আর ওর সৎ মা সোমা ও সৎ বোন সোনালী জবরুলের অফিসের ৫০ উর্ধো বয়সের ম্যনেজারের সাথে পিহুর বিয়ে দেওয়ার জন্য সেদিন সারফারাজ রাগের বশে জবরুল সহ সোমা ও সোনালীর পায়ে গু*লি করে ওদের আ*হ*ত করে দিয়েছিলো।
জবরুল যখন সোমা ও সোনালীর বিষয়ে সকল সত্য জানতে পারলেন তখন সোমাকে তালাক দিয়ে সেই সম্পর্কের বি*চ্ছে*দ ঘটিয়েছিলেন। সারফারাজ সোমা ও সোনালীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলো। তাই ওরা এখন জেলখানাতেই আছেন৷ পিহুর সৎ ছোট জমজ দুই ভাই রিফাত-রিয়াদ স্কুল হোস্টেলেই থাকে।
সারফারাজ পিহুর মুখশ্রী পানে তাকিয়েই ওর মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা চাপা ব্য*থাগুলো বুঝে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃত ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়। প্রিয় মানুষটির মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় তার মনের অবস্থা এখন কেমন! সব কথা অপর মানুষটিকে মুখ ফুটে বলে ভেঙে ভেঙে বুঝিয়ে দিতে হয় না।
তেজের সাথে সপিং মলের ঐ বুটিক শপটার ভিতরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কাঁচের ভিতরে থাকা ঐ জামাটা তেজ সেখানের একজন মহিলা কর্মীকে বের করে দিতে বললো। তেজ ইলমাকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—”আশপাশটা একটু ঘুরে দেখুন। আরো কয়েকটা জামা পছন্দ করে নিন।”
ইলমা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে চারপাশটা দেখে আরো কয়েকটা জামা পছন্দ করে হাতে নিলো। ইলমার চোখেমুখে এখনও দ্বিধা ও সংকোচের ছাপ ফুটে আছে। জামাগুলো নিয়ে তেজের সামনে এসে দাঁড়তেই তেজ বললো…..
—”ঐযে, ঐ পার্শে ট্রায়াল রুম। ওখানে গিয়ে একে একে সবগুলো জামাই পরে দেখুন। সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিনা, কম্ফর্টেবল কিনা বুঝতে পারবেন।”
ইলমা বিনাবাক্যে ট্রায়াল রুমে চলে গেলো। তেজ পাশেই সোফায় পিঠ ঠেকিসে বসে ফোনে স্ক্রল করতে করতে বললো…..
—”মেয়েটা অসহায়, এতিম না হলে এমন বি*র*ক্তি*কর কাজে আমি পা বাড়াতাম না অন্তত।”
মিনিট খানেক পরেই ইলমা ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে এলো। প্রথম ড্রেসটা ছিলো হালকা গোলাপি রঙের। ইলমার টকটকে ফর্সা শরীরের সাথে যেনো এই রঙটা একেবারে মিশে গিয়েছে। কোমর ছুঁই ছুঁই চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। ওড়নাটা শরীরের সাথে ভালোভাবে জড়িয়ে রেখেছে। ইলমার মায়াবী মুখশ্রী জুড়ে লাজুকতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে।
তেজ ফোন থেকে নজর সরিয়ে ইলমার দিকে তাকাতেই ওর দৃষ্টি ইলমার উপর আটকে গেলো। তেজ ওভাবেই একবার ঢোক গি*ল*লো। ইলমা তেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো…
—”এই জামাটা কেমন লাগছে?”
সঙ্গে সঙ্গে তেজ ওর নজর ইলমার উপর থেকে সরিয়ে নিলো। গলা পরিষ্কার করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো…
—”ভালো আছে। অন্যটা ট্রাই করুন।”
ইলমা আবারও ভেতরে চলে গেলো। দ্বিতীয়বার একটা হালকা নীল রংয়ের গাউন পরে বের হলো ট্রায়াল রুম থেকে ইলমা। প্রথমবারের মতো এবারও তেজের চোখ আটকে গেলো ইলমার উপর। বুকের ভেতর যেনো অন্যরকম একটা ধাক্কা খেলো তেজ। বিরবিরিয়ে বললো….
—”কন্ট্রোল তেজ, কন্ট্রোল। কি হচ্ছে তোর? এমন বেহায়ার মতো একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে হয়?”
এই বলে তেজ নিজেকে সামলে নিতে মুখশ্রীজুড়ে গম্ভীরতার ছাপ ফুটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো। কিন্তু ওর অবাধ্য দৃষ্টি না বারবার ইলমার দিকেই যাচ্ছে। ইলমা আবারও প্রশ্ন করলো….
—”আর এটা কেমন?”
তেজ ওর জিহ্বার অগ্রাংশ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো…
—”ভালোই।”
তৃতীয়বার যখন ইলমা ট্রায়াল রুম থেকে বের হলো ১ম যে জামাটা দেখেছিলো সেই সাদা রঙের গাউন এর মতো জামাটা পরে তেজের সামনে আসলে ওর তাকানো এবারও এড়াতে পারলো না। তেজের হাতে থাকা ওর ফোনটা অজান্তেই স্লিপ করে নিচে পায়ের কাছে কার্পেটের উপর পড়ে গেলো। তেজ ওর বুকের বা’পার্শে হাত রেখে একটু হাসফাস করতে লাগলো।
তেজের মন যেনো ওর মস্তিষ্ককে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে….
‘এই মেয়ের দিকে এভাবে দেখো না। এই মেয়ে বাকিদের মতো সাধারণ মেয়ে না। এই মেয়ের সৌন্দর্যের ফাঁ*দে পা দিলে স*র্ব*না*শ তোমার জন্য ফরজ হয়ে যাবে।’
তেজ ঠোঁট কাঁ*মড়ে নিরব রইলো। ইলমা তেজের চোখের সামনে তু*ড়ি বাজালো৷ তেজের ধ্যন ভাঙলো। ইলমা বললো….
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ২২ (২)
—”বলেন না, এইটা কেমন লাগছে? ড্রেসটা অনেক ভাড়ি হলেও এর কাজটা যথেষ্ট নিখুঁত।”
তেজের গলা শুকিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ ইলমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মৃদুস্বরে বললো…..
—”সবকয়টাই নিন।”
ইলমা মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। তেজ মনে গেয়ে উঠলো….
❝তোকে প্রত্থমবার দেখেই
চোখে চোখ রেখেই
কখন জানি না আমি কেইস খেয়েছি
তোর সে* হাসিতে, মন দিতে দিতে
কখন জানি না আমি কেইস খেয়েছি (২)
স্বপ্নেরি জ্বালে তোর হাই ভোল্টেজ গালে (২)
যেই হালকা ঠোঁট রেখেছি
ও সিট
সলিড কেইস খেয়েছি
ও ও ও সলিড কেইস খেয়েছি (২)❞