না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৪
মাইশা জান্নাত নূরা
২ দিন আগের ঘটনা…..
পিহু প্রতিদিনের ন্যায় বিকেল বেলায় আঙিনা ঝাড়ু দিচ্ছিলো। সোমা আর সোনালী বারান্দায় বসে ভিডিওকলে জবরুলের সাথে কথা বলছিলেন। বারান্দার দিকে না তাকালেও কানে ঠিকই ভেসে আসছিলো তাদের কথোপকথন। পিহুর মন এখন আর একটুও টানে না জবরুল কল করলে তার সাথে কথা বলার জন্য। জবরুলও পিহুর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে পোষণ করে না।
ফোনের ওপাশ থেকে জবরুল বললেন….
—“ছোটবেলায় আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ছিলো। আমাদের এলাকা এক ছিলো, খেলাধুলা, বেড়ে ওঠা সব একইসাথে বলা চলে। যদিও ওরা অনেক ধনী ছিলো। কিন্তু আমার বন্ধু আশরাফের মনটা বড্ড ভালো। একদম সাদাসিধে। কোটি টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে অ*হং*কার দেখায় নি সে কখনও। আর সবথেকে বড় কথা ওর সাহায্যেই তো আমি চট্টগ্রামে এই চাকরিটা পেয়েছিলাম। ওর অবদান তাই আমার জীবনে অনেক বেশি। তোমাদের সাথে সেভাবে কখনো ওর কথা শেয়ার করা হয় নি যদিও।”
সোমা কৌতূহলী মন নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন…
—“হ্যাঁ, মনে আছে আমার। তা কী খবর তার?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—“আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো আছে সে তার পরিবার নিয়ে। ক’দিন আগে আশরাফ চট্টগ্রামে এসেছিলো বিশেষ একটা কাজে। তখন ওর সাথে দেখা হয়েছিলো আমার। বললো, তার একমাত্র মেয়ে রুহিনার বিয়ে আগামীকাল। ধুমধাম করেই বিয়ে সম্পন্ন করবে। আমাকে স্বপরিবারে যেতে বললো। কিন্তু আমার তো ছুটি নেওয়া সম্ভব না। ছেলে দু’টো হোস্টেলে আছে। ওদের পরীক্ষা সামনের মাস থেকে কল করে শুনলাম। তাই তুমি, সোনালী আর পিহুকে নিয়ে কাল বিকেলে চলে যেও ওদের বাড়িতে। আমি ঠিকানাটা বলে দিচ্ছি লিখে নাও। সম্মান রক্ষার জন্য আমাদের পরিবার থেকে কারোর না কারোর সেখানে উপস্থিত থাকাটা জরুরি।”
এ কথা শুনে সোমার চোখে-মুখে খুশির ছাপ ফুটে উঠেছে। বড়লোকের বাড়ির বিয়ে মানেই এলাহি আয়োজন। সোমা মনে মনে ভাবলেন…..
‘যদি কোনো বড় ঘরের ছেলের নজরে সোনালী পড়ে যায, তাহলে ওর বিয়ে সেই ছেলের সাথে হয়ে গেলে আমাদের জীবনটাই পাল্টে যাবে।’
এই ভেবে সোমা সোনালীর দিকে তাকালেন। সোনালীর মুখশ্রী জুড়ে ইতিমধ্যেই উচ্ছ্বাসের ছাপ স্পষ্ট হয়েছে। পরক্ষণেই পিহুর কথা মনে হতেই বি*র*ক্তির ছাপ ফুলে উঠলো সোমার মুখশ্রী জুড়ে। চিন্তায় আসলো…..
‘বড়লোকদের বিয়ে বাড়ি বলে কথা। এমন জায়গায় পিহু পুরোনো জামাকাপড় পড়ে গেলে জবরুলের সাথে তার নিজের সম্মানও ন*ষ্ট হবে।’
আর জবরুল যেহেতু স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে পিহুকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে তখন নিতে হবেই। না নিলে যদি জবরুল রেগে যান তখন আরেক ঝা*মে*লা*র সৃষ্টি হবে। যা সোমা চান না। তাই বাধ্য হয়েই এ নিয়ে কোনো দ্বিমত তিনি পেষন করলেন না। অতঃপর আশরাফের বাড়ির ঠিকানা নোট করে নিলো সোনালী। জবরুলের বিরতি টাইম শেষ হলে কল কেটে দিলেন তিনি।
রান্নাঘরে বসে সবজি কাটছিলো পিহু। এদিকে সোনালী আলমারি থেকে নিজের সবচেয়ে দামি জামাটা বের করে শরীরের উপর চাপিয়ে ঢ*ঙ করে দাঁড়ালো সোমার সামনে। আর বললো…..
—“মা, কাল এই জামাটা পরলে আমাকে সবথেকে আকর্ষণীয় লাগবো তো! বলো?”
সোমা হাসিমুখে বললেন…..
—“আমার মেয়ে তো সবথেকে সুন্দরী। কী ফর্সা তোর গায়ের রং! তোকে সব পোশাকেই অপ্সরা লাগে রে মা। এটা-ই পড়িস তুই কাল।”
সোনালী একবার পিহুর দিকে তা*চ্ছি*ল্যে*র দৃষ্টিতে তাকালো তারপর আবার সোমার দিকে তাকিয়ে বললো…..
—“কিন্তু বাবা যে বললো ঐ কালো পে*ত্নী*টাকেও নিয়ে যেতে তো ওইটাকে পুরোনো জামায় নিয়ে গেলে আমাদের ই*জ্জ*ত তো থাকবে না মা। তাহলে ও কী পড়বে কাল?”
কথাটা শুনে সোমার গা জ্ব*লে উঠলো। সত্যিই তো! এই বিষয়টা একটু আগেও সোমার মাথায় এসেছিলো। কালকে পড়ার জন্য পিহুকে সোমার কিছু একটা দিতে হবে। নইলে স*ম*স্যা হবে। এই বুঝে সোমা নিজ ঘরে গিয়ে আলমারি হাতড়ে বের করলেন একটি পিংক রঙের হালকা কাজ করা নরম জর্জেট শাড়ি। অতঃপর রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বি*র*ক্তি ভরা কন্ঠে বললেন…..
—“শুনছো মহারানী! কাল তুমিও যাচ্ছো আমাদের সাথে। তাই কাল নিজের ফ*কি*ন্নি পোশাক ছেড়ে এটা পড়ে নিও। আর হ্যা একটা কথা মনে রেখো, যদি আমার এই শাড়িতে সামান্য কোনো খুঁতও লাগে তাহলে তোমার কী অবস্থা হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।”
এই কথা বলেই সোমা তার হাতে থাকা শাড়িটা ছুঁ*ড়ে মারলেন পিহুর দিকে। অতঃপর সোমা স্থান ত্যাগ করলেন। পিহু শাড়িটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই পিহুর বুক চিঁ*ড়ে বেড়িয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। পিহুর জন্মদাতা বাবার রোজগারের টাকায় কেনা এই শাড়িটা। অথচ ভুলে একটু ছিঁ*ড়ে গেলে বা ন*ষ্ট হয়ে গেলে তার জন্যও ওকে ভোগ করতে হবে কঠিন কোনো শা*স্তি!
মুহূর্তেই পিহুর মনে পড়লো নিজের জন্মদায়িনী মা প্রিয়ন্তিকে। আজ যদি প্রিয়ন্তি বেঁচে থাকতেন! তাহলে পিহুও হয়তো সোনালীর মতো আনন্দ করে পছন্দের জামা হাতে নিয়ে প্রিয়ন্তির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতো…..
—“মা, কাল এই পোশাক পরলে কেমন লাগবে আমায়?”
আর প্রতিত্তুরে প্রিয়ন্তি হয়তো মায়া ভরা চোখে পিহুকে দেখে বলতেন…..
—“আমার পিহু তো সবথেকে সুন্দর ও সবার মধ্যে সেরা। তাই ওকে অনেক সুন্দর লাগবে।”
কিন্তু আজ নেই পিহুর সেই মা। নেই তার সেই স্নেহভরা কোল। মন খারাপ হলে যেই কোলে মাথা রেখে একটু সুখ খুঁজে পাওয়া যেতো একসময়। পিহুর দু’চোখ ছলছল করছে। পলক ফেলতেই ওর চিন্তা আরো গভীর রূপ ধারণ করলো। পিহু বললো…..
—”যার মা নেই, তার জন্য এই দুনিয়া শান্তির জায়গা নয়। এই পৃথিবী তো আসলে শা*স্তি ভোগের জায়গা। প্রকৃত শান্তি রয়েছে শুধু জান্নাতে। আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছিলেন তখন তিনি তাঁদের জান্নাতেই রেখেছিলেন। কিন্তু শ*য়*তা*নের প্র*রো*চনায় পরে তারা দু’জনেই ‘নিষিদ্ধ ফল’ খেয়ে ফেলেন। যদিও আদম (আঃ) গিলে নেওয়ার আগেই আল্লাহর নিষিদ্ধ বাক্য তার স্মরণ হওয়ায় তিনি আর সেই ফল গিলতে পারেন নি। কিন্ত আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন নি। শা*স্তি ভোগ করার জন্য ২জনকেই পাঠিয়ে ছিলেন এই দুনিয়ায়। মানুষ ভুলতে বসেছে যে, দুনিয়ার এই আনন্দ-সুখ এগুলো ক্ষণস্থায়ী। নিজের ইমান মজবুত করা উচিত প্রত্যেককে। আল্লাহ ভী*তি নিজ মনে রাখা উচিত। তবেই হয়তো প্রকৃত সুখ মৃ*ত্যু*র পর জান্নাত লাভ করা সম্ভব সেই ব্যক্তির পক্ষে।”
পিহু নিজের দু’চোখের পানি মুছে নিলো। রান্নার কাজে এবার পুরোপুরি ভাবে মন বসালো সে।
পরেরদিন বিকেলবেলা……
পিহু সোমার দেওয়া শাড়িটা পড়েছে। ওর সাজার কোনো সামগ্রী নেই। কেবল মুখটা ধুয়ে মুছে নিয়েছে। হাত-কান-গলা সব ফাঁকা। হাঁটু ছুঁই ছুঁই চুলগুলো বিনুনি করেছে। এই সাধাসিধা বেশেও পিহুকে অনেক সুন্দর লাগছে।
অতঃপর রুম থেকে বেড়োতেই পিহু দেখলো সোমা আর সোনালী দু’জনেই খুব বেশিই সেজে ফেলেছে। সোনালী গাড় লাল রংয়ের একটা গাউন পড়েছে। ওড়না নেয় নি। পিঠ ছুঁই ছুঁই স্ট্রেইট করা পাতলা ফিলফিলে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে রেখেছে। ভাড়ি মেকআপ করেছে যেনো মুখের উপর ১ইন্ঞ্চি উঁচু আস্তরণ বিরাজ করছে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়েছে সে। যা পুরোপুরি মাত্রাতিরিক্ত রূপ দিয়েছে সোনালীকে। আর সোমা পড়েছে একটা গাড় সবুজ রংয়ের বেনারসি। গলায় নিজের এ পর্যন্ত বানিয়ে রাখা ৩ ধরণের স্বর্নের হাড় রয়েছে। দু’হাত ভর্তি চুড়ি ও দু’হাত মিলিয়ে ৩-৪টে আঙুলে আংটি পড়েছে সে। একপাশ দিয়ে সিঁথি উঠিয়ে চুলগুলো খোঁপা করেছে। সোমাও সোনালীর মতো ভাড়ি মপকআপ করেছে। খয়েরি রংয়ের লিপস্টিকও দিয়েছে। সোনালী বললো….
—”আজ আমাকে সবথেকে সুন্দরী লাগবে আমি শিওর। সব ছেলেরা তো আমায় দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে। ঠিক বলেছি না! বলো মা?”
সোমা বললেন….
—”তেমনটাই তো চাই রে সোনালী মা। তেমনটাই যেনো হয়।”
অতঃপর ওরা আগে আগে বের হলো আর পিহু ওদের পিছন পিছন যাচ্ছে। প্রায় ৪০ মিনিট এর পথ অতিক্রম করার পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছালো পিহু, সোমা, সোনালী। অটো থেকে নামার পরই পিহু খেয়াল করলো সোনালীর ডান গালের মেকআপ গুলো কেমন স্যত স্যতে মতো দেখাচ্ছে। পিহু বললো….
—”আপা, তোমার ডান গালের মেক-আপ…!”
পিহুকে পুরো কথা শেষ করতে দিলো না সোনালী। বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো….
—”চুপ, একটা কথা বলবি না। মেক-আপের বিষয়ে তুই কি বুঝিস হ্যা? আমার এতোসুন্দর মেক-আপ করা দেখে যে হিং*সা*য় নিশ্চয়ই ভিতরে ভিতরে জ্ব*ল*ছিস তা আমি জানি।”
এই বলে সোনালী আর না দাঁড়িয়ে একাই সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করলো। সোমা অটোর ভাড়া মিটিয়ে পিহুর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—”ভিতরে যাওয়ার পর একদম আমাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করবি না। নিজেকে পুরোটা সময় আমাদের থেকে দূরে রাখবি। এমন ভাবে চলবি যেনো আমাদের তুই চিনিস না আর না আমরা তোকে চিনি। বুঝেছিস?”
পিহু ঠোঁটে হালকা কাঁমড় বসিয়ে নিচু কন্ঠে বললো…
—”কেউ যদি আমার পরিচয় জানতে চায় তখন কি বলবো?”
—”কে তোর পরিচয় জানতে চাইবে? যে সাদাসিধা রূপ নিয়ে এসেছিস এখানের বড় বড় সব মানুষরা তোকে তাদের সমাজের লোক মনে করবে না। কাজের লোক ভেবে এড়িয়ে যাবে।”
এই বলে সোমা মুখ বাঁ*কিয়ে ভিতরে চলে গেলেন। পিহু শব্দ করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই একটা কারণেই পিহুর বাড়ির বাহিরে নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও আসার ইচ্ছে হয় না। যাদের সাথে ওর সর্বক্ষণ উঠাবসা তারাই ওকে তু*চ্ছ-তা*চ্ছি*ল্য নজরে দেখে সেখানে সমাজের বাকি মানুষের আর কি বা দো*ষ।
পিহু মলিন মুখশ্রী নিয়ে কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজানো বিশাল গেইট পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো সরু মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো ছাদের মতো রাস্তাটা ধরে একটু একটু করে আরো ভিতরে যাচ্ছে সে। চারপাশে কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ৷ বড়লোকদের বড় বড় ব্যপার। এমন এলাহী আয়োজনের বিয়ে ওর ২২ বছরের জীবনে এই ১ম দেখার সুযোগ পেয়েছে পিহু।
এই বাড়ির এড়িয়াটা যথেষ্ট বড়। পিহু চারপাশে একবার চোখ বুলালো। বাগানের সাইডে সকল অতিথিরা দাঁড়িয়ে-বসে একে-অপরের সাথে গল্প করছেন। সকলের মধ্যমনি বিয়ের কণে বধুর সাজে মন্ঞ্চে বসে আছেন। বর এখনও আসে নি। কারণ মন্ঞ্চে থাকা বরের আসন ফাঁকা৷ বিশাল বিশাল সাউন্ড বক্সে গান বাজছে। এতো শব্দতে পিহুর কিছুটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। তাই পিহু সবার থেকে কিছুটা দূরে একপাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। মনে মনে ঠিক করেছে এই স্থান থেকে সে আর নড়বে না। একেবারে যখন বাড়ি যাওয়ার সময় হবে তখন যাবে। এখানে সবাই যে অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি তা তাদের বাহ্যিক রূপের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে।
সোনালী আর সোমা সবার মাঝে মিশে যাওয়ার চেষ্টায় লেগে পড়েছে। সোমা সোনালীকে নিয়ে বেছে বেছে কিছু মহিলা ও ৩০ এর এপাশে বয়স এমন পুরুষদের কাছে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে গল্প করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ সোনালী সামনের দিকে এগোতে গিয়ে নিজের গাউনের সাথে পা বেজে একজন চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষের উপর গিয়ে পরে। লোকটা সোনালীকে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে বললেন…..
—”Are you alright? (আপনি ঠিক আছেন তো?)
সোনালী হেসে বললো….
—”হ্যা আমি জানি আমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে আমার এতো সুন্দর প্রশংসা করার জন্য।”
—”What? Are you crazy? When did I ever praise you?”
(বঙ্গানুবাদঃ—-কি? আপনি কি পাগল নাকি? আমি কখন আপনার প্রশংসা করলাম?)
সোনালী লোকটার কথার মানে বুঝতে পারলো না। জোরপূর্বক হেসে বললো….
—”ইয়াহ ইয়াহ।”
লোকটা মহা বিরক্তি নিয়ে বললেন….
—”I don’t understand where these stupid people come from in a well-ordered society like ours.”
(বঙ্গানুবাদঃ—-কোথায় থেকে যে আসে এসব মূর্খ মানুষ আমাদের মতো সুশৃঙ্খল সমাজের মাঝে আমি বুঝি না।)
সোনালী আর সেখানে না দাঁড়িয়ে পুনরায় নিজের মায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে সেই ৪০ উর্ধ্বো বয়সের লোকটিকে চোখের ইশারা করে বললো…..
—”মা, ঐ যে ঐ লোকটাকে দেখছো না! উনি মনে হয় আমার অনেক প্রশংসা করলেন। কিন্তু সব কথাই ইংরাজিতে বললেন। আমি তো ইংরাজি বুঝি না। যদিও আমার মতো একজন এতো সুন্দর মেয়েকে যে সুন্দর সুন্দর কথাই বলবে সবাই তা তো আমি শিওর।”
সোমা বললেন….
—”আজ এখান থেকে একটা বড় সড় মাছকে জা*লে ফাঁ*সি*য়ে নিতে পারিস যদি তাহলে তোর সাথে সাথে আমাদের ভাগ্যও খুলে যাবে। তাই যতোটুকু সময় পাচ্ছিস এভাবেই কাজে লাগা বুঝলি!”
সোনালী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে আবার অন্যপাশে গেলো।
হঠাৎ কমোরের উপর কারোর ছোঁয়া অনুভব করতেই পিহুর শরীর কেঁ*পে উঠলো। সে আগে-পিছে না দেখে না ভেবেই পিছন ফিরে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোকের গালে স্বজোড়ে একটা থা*প্প*ড় দিয়ে বসলো। পিহুর আকস্মিক এমন কাজে উপস্থিত সবার নজর এবার ওর দিকে পড়লো। পিহু থা*প্প*ড় দেওয়া লোকটার উদ্দেশ্যে চি*ল্লি*য়ে বললো…..
—”আপনার ঘরে কি মা-বোন নেই! ঘর থেকে বের হন মেয়েদের সাথে অ*স*ভ্য*তা*মো করার জন্য! তাদের বা*জে ভাবে স্পর্শ করার জন্য! আপনার কি এতোটুকু লজ্জাবোধ নেই!”
ওর সামনেই গালের উপর একহাত রেখে দু’চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে আছে এমপি সারফারাজ ইউসুফ খান। পিহু মূলত সারফারাজ ইউসুফকেই থা*প্প*র*টা মে*রে*ছে আর এতোগুলো কথা শুনিয়েছে একটু আগে। সারাফারাজের বডিগার্ডরা এগিয়ে আসতে নিলে সে অন্যহাত উঠিয়ে ওদের সেখানেই থেমে যাওয়ার ইশারা করলো। পিহু রিতীমত রা*গে-ঘে*ন্না*য় কাঁ*প*ছে। পিহু সবক্ষেত্রে চুপচাপ, সহ্যশীল হলেও নিজের চারিত্রিক দিক থেকে সে অনেক সচেতন ও কঠোর। তাই পরিবেশ পরিস্থিতি মেনে কোনো পদক্ষেপ পিহু এখন নেয় নি।
সারফারাজ ওর গাড় নীলাভো মনিবিশিষ্ট চোখজোড়া আগুন গরম করে পিহুর দিকে তাকালো। এই প্রথম জনসম্মুখে ওর গালে পড়া চ*ড়ে*র জ্বা*লা ওর ভিতরটাকে দা*উ*দা*উ করে জ্বা*লি*য়ে তুলেছে। কিন্তু পরক্ষণেই সারফারাজের চোখ আটকে গেল পিহুর সাদাসিধা রূপের উপর। পিহুর সাজ-সজ্জাহীন মুখশ্রী জুড়ে অদ্ভুত এক সতেজ দীপ্তি বিরাজ করছে। যা সারফারাজকে মুগ্ধ করে তুলেছে। সারফারাজের অ*প*মা*নে অ*গ্নি*মূ*র্তি ধারণ করা মুখশ্রীর রঙ পুরোপুরি মিইয়ে গেলো। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসির ঝলক। সারফারাজ দুই ঠোঁটের ভাঁজ থেকে বেড়িয়ে এলো কিছু শব্দ……
—”মাশাআল্লাহ। কি ভিষণ প্রিটি লাগছে!”
সারফারাজকে হঠাৎ এভাবে হাসতে দেখে পিহুর ভেতরে জ্ব*ল*তে থাকা আগুনে যেনো ঘি পড়লো এবার। তাই পিহুর আর এক মুহূর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলো না। পিছু চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে সারফারাজ ইউসুফ পিহুর ডান হাতের কব্জি আলগোছে চেপে ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে গভীর সূক্ষ্ম কন্ঠে বললো……
—“পুরো সত্যিটা না জেনেই এভাবে কোথায় যাচ্ছো, প্রিটিহার্ট?”
পিহু বি*স্ফা*রিত চোখে পিছন ঘুরে দাঁড়ালো আবারও। সারফারাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পিহুর উপরেই স্থির। সারফারাজ আবারও বললো…..
—“তোমায় আমি স্পর্শ করি নি ঠিকই। কিন্তু তোমার থা*প্প*ড় খেয়েই তো আমার মনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। ইয়ে দিল তো তুমপে ফিদা হো গেয়া – প্রিটিহার্ট।”
পিহুর শিরদাঁড়া কেঁপে উঠলো এবার রাগে। পিহু সারফারাজের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাতকে মুক্ত করতে হাত মো*চ*ড়া*তে মো*চ*ড়া*তে তেজী কন্ঠে বললো…..
—“এসব কী ধরণের অ*স*ভ্য*তামো হচ্ছে! হাত ছাড়ুন আমার। নয়তো আরেক গালেও থা*প্প*ড় বসাতে আমি দু’বার ভাববো না।”
সারফারাজ এবার পিহুর দিকে নিজের অন্য গাল এগিয়ে দিয়ে বললো….
—“দাও। এবার থেকে আর মাইন্ড করবো না। প্রথম দেখাতেই যেখানে তোমায় মনের রানী বানিয়ে ফেলেছি, সেখানে তোমার দেওয়া প্রতিটি থা*প্প*ড়কেও আমি ভালোবাসার স্পর্শ হিসেবে কবুল করবো।”
উপস্থিত সবাই অবাক ও বিস্ময়ভরা চোখে সারফারাজ-পিহুকে দেখছে। এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের এমন রূপ সম্পর্কে তারা সবাই একেবারে অপরিচিত। কেউ কেউ কানাঘুঁষায় বলছে….
“এমপি সাহেবের কি হয়ে গিয়েছে? এমনভাবে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলছেন কেনো? তিনি তো ভিষণ গম্ভীর স্বভাবের মানুষ। তার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস যেখানে কেউ পায় না সেখানে এই মেয়ের হাতে থা*প্প*ড় খেয়েও তার সাথে এমন আচারণ করছে যেনো এই মেয়ে তার ঘরের অর্ধাঙ্গিনী!”
পিহু আশেপাশে দেখে বললো…..
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৩
—“এই অ*সভ্য, অ*ভদ্র লোকটা আমার সাথে অ*স*ভ্য*তামো করছে আর আপনারা চেয়ে চেয়ে তা দেখছেন? এই তাহলে আপনাদের উচ্চশ্রেণির সভ্য সমাজের আসল রূপ?”
সারফারাজ চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে বললো…..
—“এমপি সারফারাজ ইউসুফ খানের উপর কথা বলতে কলিজা লাগে, যা এখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটাও প্রাণীর নেই, বুঝলে প্রিটিহার্ট!”