না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৭
মাইশা জান্নাত নূরা
—”কই গো সোনালীর মা! বাড়ি আছো নি?”
একজন মধ্যবয়সের মহিলা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সোমাকে ডাকতে শুরু করলেন। পিহু আর কমলা রুমেই ছিলো। বাহির থেকে এমন হাঁক ডাক শুনে ওরা সহ সোমা, সোনালীও রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। পিহুর এই মহিলাকে একদম পছন্দ না। পিহু অনেকটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। সোমাকে দেখা মাত্র মহিলাটি নিজের মুখভর্তি পানের জমে থাকা পিচকি আঙিনার উপর ছুঁড়ে ফেললেন৷ সোমা বললেন….
—”কোথায় আর যাবো পপেলা ভাবী এই ভিটা মাটিটুকুই ম*র*ণ না হওয়া পর্যন্ত আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল।”
পপেলা ভেং*চি কেটে বললেন…
—”থাক আর ভোলা-ভালা সাজার নাটক করতে হবে না তোমাদের। তলে তলে কি কি করো তোমরা মা-মেয়েতে মিলে তা কি এলাকাবাসী জানে না বলে মনে হয়?”
সোনা চোখের আকৃতি খানিকটা ছোট করে বললেন…
—”এসব কি ধরণের কথাবার্তা তোমার ভাবী? আমরা মা-মেয়ে সর্বক্ষণ শালীন ভাবে চলাফেরা করি। আমাদের ঘরে যে পুরুষ মানুষ থাকে না তবুও আমাদের আচার-আচরণে কবে কোন বি*শৃ*ঙ্খ*ল ভাব তোমার নজরে পড়েছে শুনি?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
—”এতোই যখন সুশৃঙ্খল তোমরা তাইলে এই অভাবের সংসারে হঠাৎ কোন সোনার তৈরি জাদুর কলসী মাটি ফেঁ*টে বের হয়ে আসলো যে তোমাদের জন্য বাড়ির বাহিরে রাস্তার মোড়ে সর্বক্ষণ কোটি টাকা মূল্যের গাড়িখানা দাঁড় হইয়া থাকে? প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে সেই গাড়িতে করেই আসা-যাওয়া করো তোমরা।”
পপেলার এরূপ কথায় এবার পুরো বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলেন সোমা ও সোনালী দু’জনেই। সোনালী দাঁত কি*ড়*মি*ড়ি*য়ে কিছু বলতে নিবে তখুনি সোমা সোনালীর হাত চেপে ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন….
—”ও গাড়ি আমাদের জন্য না। ও গাড়ি আমার স*তীন কন্যা পিহুর যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্বয়ং এমপি সাহেব রেখে গিয়েছেন।”
সোমার এরূপ কথা শুনে পপেলা নিজের মুখের উপর আলতো ভাবে হাত চেপে ধরলেন। চোখের আকৃতি তার স্বাভাবিক এর তুলনায় খানিকটা বড় হয়ে গিয়েছে। পপেলার নজর তখন পড়লো বারান্দার অন্যপার্শে দাঁড়িয়ে থাকা পিহুর দিকে। পপেলা বললেন…..
—”ও মা গো মা। এসব আমি কি শুনতাছি রে পিহু!কি দিয়া জাদু করছিস তুই এমপি সাহেবরে হ্যা? তোর দেখি গাঁয়ের রংটাও কতো চাপা।”
পিহু অ*প*মা*নে ভিতরে ভিতরে ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত বোধ করলো পপেলার এমন ঠেঁ*স দেওয়া কথাগুলো শুনে। পিহু বললো…..
—”আমি কাউকে জাদু করি নি চাচী। আমাকে এ নিয়ে কোনো কথা শোনাতে আসবেন না আপনি। যদি আপনার একান্তই জানার আগ্রহ থাকে তাহলে স্বয়ং এমপি সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকেই এই প্রশ্ন গুলো ছুঁ*ড়ি*য়েন যে, দুনিয়ায় ভূবনমোহিনী সুন্দরী নারীদের তো অভাব নেই তবুও কিসের টানে তিনি আমার জন্য এসব করছেন।”
পপেলা নাক হালকা উচিয়ে বললেন…
—”এটুকু মেয়ের মুখে কতো বড় বড় বুলি ফুটেছে দেখেছো! তোর কি মনে হয় আমরা ঘাসে মুখ দিয়ে চলি হ্যা? দুনিয়া কোন হালে চলে তা সম্পর্কে কিচ্ছু জানি না?”
—”আপনার ধারণা, আপনার জ্ঞান অনেক বেশি হবে এটা স্বাভাবিক। কারণ আপনার বয়স আমার থেকে দ্বিগুণের ও বেশি। কিন্তু এর মানে এই না আপনি আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলার অধিকার রাখবেন।”
—”বেশ করছি। একবার কইছি, দুইবার কইছি আরো একশত বার বলমু। তোর কথার যে ধাঁচ দেখতেছি তাতেই সব প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে আমি ধারণা করে যা বলছি তা সবটাই সত্য।”
—”এক একালায় থাকি, বিপদে-আপদে একে-অপরের পাশে দাঁড়াবো মানবিকতার খাতিরে কিন্তু এর মানে এও না যে আপনি আমার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলে কথা বলবেন আর আমি তা চুপচাপ সহ্য করবো।”
—”ও মা রে মা। দেখছো সোনালীর মা, দেখছো তুমি ওর কথা কওয়ার ধাঁচ কেমন! ওরে তোরে তো আমি খুব সাদাসিধা স্বভাবের মাইয়া ভাবছিলাম। কিন্তু তুই তো আসলে সেইসব মাইয়াদের মতো হইয়া গেছিস যারা কিনা নিজেদের শরীর বিলিয়ে হলেও বড়লোক বাড়ির পোলাদের ফাঁ*সা*ই*য়া নেয়। ছি: ছি: ছিহ্। কি নি*র্ল*জ্জ, মেয়ে-ছেলেরে তুই পিহু। বাপের মান এক্কেরে ডুবাইয়া ফেললি।”
পিহু চিৎকার করে বলে উঠলো….
—”চুপ করুন। আর একটা শব্দ আপনার ঐ ঘৃ*ণ্য মুখ থেকে বের করবেন না। আর বেড়িয়ে যান এক্ষুণি এ বাড়ি থেকে। আপনাদের মতো নিচু মানসিকতার মানুষদের নিজের বাড়ির গেইট পেরিয়ে ভিতরে আসতে দেওয়াই উচিত না।”
পপেলা দাঁত দাঁত চেপে বললেন….
—”তোর এই গু*মো*র যদি আমি না ভা*ঙ*ছি তাইলে আমার নামও পপেলা বানু না। পুরা পাড়ায় র*টা*ইয়া দিমু তোর কে*চ্ছা*র কথা। তখন আমিও দেখমু কয়জনের মুখ তুই বাঁধতে পারিস। কয়জনরে গেইট পার হইয়া এই বাড়িতে ঢুকতে না দিস।”
এই বলে হনহন করে পিহুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন পপেলা। সোমা আর সোনালী পিহুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁ*কিয়ে হাসছে। পিহুকে এভাবে অ*প*দ*স্থ হতে দেখে যেনো আত্মীক শান্তি পেলো ওরা দু’জনে। পিহুর দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে অশ্রুরা ঝড়ে পড়তে শুরু করলো। এমনটা তো হওয়ার কথাই ছিলো। পিহুরা যে পরিবেশের মাঝে থাকে সেখানে পান থেকে চুন খ*সা*ও দায়।
তেজের দাদু মোস্তফা খান লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তেজের কাছে আসতে আসতে বললেন….
—“কিন্তু দাদুভাই, মেয়েটা যে বলছে আমার পুতি আসতে চলেছে! যাকে তুমি আজকের পূর্বে দেখো নি পর্যন্ত সে হঠাৎ নিজের লজ্জা-শরম ভুলে আমাদের সামনে এসে এমন দাবি করলো কিসের ভিত্তিতে আমি তো সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।”
তেজ বললো….
—“আমি তো খুবই সাধারণ ভাবে চলাফেরা করি সবসময় দাদু। তোমরা তো খুব ভালো ভাবেই চেনো আমায়। এই আন্টিটা কেনো এমন বলছে তার কারণও আমার জানা নেই।”
নিশা এবার রেগে গেলো। রাগে গ*জ*গ*জ করতে করতে বললো….
—“তুমি একটা মু*খো*শ ধারী এবং অত্যন্ত বা*জে পুরুষ। নিজের পরিবারের সবার সামনে এমন ভোলা-ভালা, সাদা-সিধে সাজতেছো যেনো ভাজা মাছটা উল্টে পর্যন্ত খেতে জানো না। কিন্তু তাদের আড়ালে যে তুমি নাইট ক্লাবে গিয়ে প্রতিদিন ১০-২০ টা মেয়ের সাথে ডান্স করো, এমনকি ওয়াইন খেয়ে তাদের নিজের বেড পার্টনার বানাও সেসব তো মি*থ্যে হয়ে যাবে না।”
তেজ মাথা নোয়ানো অবস্থায় নিজের দু’চোখ বুঁজে জিহ্বায় আলতো ভাবে কাঁ*ম*ড় বসিয়ে দু’গালে আঙুল ছুঁইয়ে বললো…..
—“ছি: ছি: ছি: এসব কি আসতাগফিরুল্লাহ ধরণের কথাবার্তা বলছেন আপনি আন্টি। আমি আজ পর্যন্ত একটা সিগারেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখি নি সেখানে এসব নোং*ড়া কাজ করা তো অনেক দূরের বিষয়।”
নিশা আবারও কিছু বলতে নিলে জামাল নিজের হাত উঠিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে রাগী স্বরে বললেন…..
—“এই মেয়ে থামো তুমি, আর একটা উল্টো – পাল্টা কথা আমার ছেলের সম্পর্কে বলবে না। নেহাতই তুমি একজন মেয়ে। তাই অনেক সময় ধরে তোমার বানোয়াট অভিযোগ গুলো শুনেছি আমরা। কিন্তু এখন আর না। এইমূহূর্তে তুমি আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে। আর কখনও যদি আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় তোমার ছায়া পর্যন্ত পড়তে দেখেছি তাহলে তোমার পরিণতি যে কতোটা খা*রা*প হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।”
অ*প*মানে নিশার মুখশ্রী লালাভো বর্ণ ধারণ করলো। নিশা ক্ষি*প্ত নয়নে তেজের দিকে তাকালো। তেজ চশমার কর্ণার দিয়ে আঁড়দৃষ্টিতে নিশার দিকে একবার তাকালো পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিশা মনে মনে বললো…..
—“তোমার এই সাধু মুখোশ যদি আমি টেনে-হিঁচড়ে খুলে না ফেলতে পারি তাহলে আমার নাম ও নিশা সিনহা নয় মি.তেজওয়ান শেখ। কথায়-ই আছে অতি চালাকের গলায় দ*ড়ি। তোমার গলাতেও দ*ড়ি পড়াতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না। মাইন্ড ইট।”
এই বলে নিশা হ*ন*হ*নি*য়ে শেখ ভিলা থেকে বেড়িয়ে গেলো। জামাল ও মোস্তফা দু’জনেই স্থান ত্যগ করলেন। শিউলি, আতুশি ও তাহমিনা তেজের সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। আতুশি আদুরে স্বরে বললেন….
—“আমি আগেই জানতাম আমাদের তেজের মতো মাসুম ছেলেটার উপর মি*থ্যা অ*প*বা*দ লাগাচ্ছিলো ঐ মেয়ে।”
তাহমিনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে রেখেছেন তেজের দিকে। শিউলি বললেন…
—“ছোট, এবার আমার সাথে রান্নাঘরে চল। তেজ গতকাল থেকে বাড়ির বাহিরে ছিলো। না জানি কি খেতে পেরেছে ওখানে গিয়ে। ওর জন্য ওর পছন্দের খাবার বানাবো আমরা।”
—“তেজ বাবা, তুমি রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো।”
তেজ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর শিউলি আর আতুশি স্থান ত্যগ করলো। তেজের মা তাহমিনা তেজের শার্টের কলার্টের উল্টে থাকা ভাঁজটা ঠিক করে দিতে দিতে বললেন…..
—“কাজের প্রেসার এতোটাই বেশি ছিলো যে শার্টের কলার্টটা ঠিক করে নিতে পারো নি এমনকি নিচের দিকের বোতাম ২টো ও উপরনিচ করে লাগিয়ে ফেলেছো।”
মায়ের কথা শুনে তেজ শার্টের দিকে লক্ষ করলো। অতঃপর মনে মনে বললো….
—“নির্ঝরের বাচ্চা। সামান্য শার্টটা ঠিকভাবে পড়িয়ে দিতে পারে নি সকাল বেলা। একে একবার একলা হাতের কাছে পেয়ে নেই। উল্টো ঝুলিয়ে যদি কান্নাগুলো কপাল বেয়ে না ফেলিয়েছি তো আমার নামও তেজওয়ান শেখ নয়।“
নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে চুপচাপ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে বললো….
—“চাচা এবার আপন প্রাণ বাঁচা।”
নিজ বাড়ির উঠানে থাকা বেতের সোফায় বসে আছেন পপেলা ও তার একমাত্র মেয়ে সবেদা। পপেলা রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললেন….
—”ঐ মাইয়া আজ আমারে কতোগুলো কথা শুনাইলো ওরে আমি ছাইরা দিমু না এমনে এমনেই। ওর থাইকা আমার মাইয়ার গাঁয়ের রং উজ্জ্বল বেশি তবুও ঐ মাইয়া এমপির নজরে পড়লো আলিশান ভাবে জীবন-যাপন করতে শুরু করলো এগুলা তো মানার মতো না।”
সবেদা বললো…
—”ঠিক বলেছো মা। আমারও এসব সহ্য হইতাছে না।”
—”এখন থাইকা সবসময় আরো বেশি সাইজা-গুইজা থাকবি বুঝছিস৷ যেনো তোর রূপ দেইখা সব পোলাই পাগল হইয়া যায়।”
নিজরুমে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে পিহু। পাশে থাকা ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে। সে নিয়ে পিহুর কোনো হেলদোল নেই। কমলা পিহুর পায়ের কাছে এসে বসে বললো….
—”আপামনি অনেকক্ষণ ধইরা ফোনটা বাইজা যাচ্ছে। এইবার তো উঠান। ভাইসাহেব নিশ্চিত আপনেরে নিয়া অনেক চিন্তা করতেছে।”
পিহুর কমলার দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো….
—”তার চিন্তা, না চিন্তায় আমার কিছু যায় না কমলা আপা। আর আপনি তো তখন দেখলেন বাহিরে কি হলো। ঐ সব কিছুর জন্য কে দায়ী? আপনার ভাইসাহেব দায়ী না? তারপরও আপনি কিভাবে বলছেন আমাকে তার কল উঠানোর জন্য?”
কমলা শান্ত কন্ঠে বললো….
—”আমি জানি আপামনি আপনের ঐ ব*জ্জা*ত মহিলার কথায় অনেক কষ্ট হইছে। কিন্তু ভাইসাহেবের কি দো*ষ কন? ভালোবাসা কি কোনো অ*প*রা*ধ?”
—”ভালোবাসাটা অ*প*রা*ধ না তবে ভালোবাসতে গেলে সঠিক মানুষকে জেনে-চিনে তারপর ভালোবাসতে হয়। এমপি সাহেবের সাথে আমার যায় না আপা। আমি না দেখতে সুন্দর আর না আমার সমাজের সাথে তার সমাজ যায়।”
—”ভালোবাসা জাত-পাত যদি মানতো তাইলে তো হইতোই। ভালোবাসা এমনে এমনেই হইয়া যায় আপামনি। জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তো আমরা মানুষই। আর কে কইছে আপনে সুন্দর না? খালি শরীরের চামড়া খানা সাদা হইলেই হয় না। মনখানাও পরিষ্কার হওন লাগে। আপনের মনটা অনেক পরিষ্কার। আপনের চেহারা জুইরা যে মায়া আছে তা আরো হাজার সাদা চামড়ার মাইয়ার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবো না। আপনে চোখ গুলা যা সুন্দর। ভাইসাহেব প্রথমে আপনের চেহারার মায়ায় পইড়া আপনের টানা টানা কাজল কালো চোখজোড়ার দিকে তাকাইয়া আপনের পরিষ্কার মনটাকে পড়ে নিয়েছে। তাই ভাইসাহেবের আপনের জন্য ভালোবাসাটা হইলো খাঁটি ভালোবাসা। এবার আর না ভাইবা ফোন খানা উঠান দেখি।”
পিহু শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সারফারাজের রাগ মিশ্রিত ক*র্ক*শ কন্ঠটি ভেসে এলো…..
—”এতোসময় ধরে কল দিতে হয়? কোথায় থাকো তুমি হ্যা? কোন রাজ কার্যে ব্যস্ত থাকো যে আমার ফোন উঠানোর সময় তোমার হয় না?”
সারফারাজের কথায় পিহুর রাগ এবার মাথায় চড়ে বসলো। পিহু রাগী স্বরে বললো….
—”আপনার কল রিসিভ করতে আমি বাধ্য নই এমপি সাহেব। আর একটা কথা বলছি শুনুন, আজই আপনি এখানে এসে মোড়ে দাঁড় করানো গাড়িটা সহ এই ফোন ও সকল জামা-কাপড়গুলো নিয়ে যাবেন। আপনার জোরপূর্বক দেওয়া দয়ার দানের জন্য এই ২২ বছরের জীবনে আজ ১ম বার কেউ আমার চরিত্রের উপর আঙুল উঠাতে পেরেছে। আমাকে আপনি মুক্তি দিন। আমি অতি*ষ্ঠ হয়ে উঠেছি।”
পিহুর এরূপ কথায় সারফারাজের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সারফারাজ বললো….
—”কে তোমায় কি বলেছে পিহু?”
—”আপনার সেসব জানার কোনো প্রয়োজন নেই। যতোটুকু বললাম ব্যস ততোটুকু করুন।”
এই বলেই পিহু কলটা কেটে দিলো। আর ফোনটাও সুইচ-অফ করে পাশে রাখলো। কমলা নিঃশব্দে পিহুর পাশ থেকে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
এতোসময় নিজের আস্তানায় অফিস কক্ষে বসে পিহুর সাথে কথা বলছিলো সারফারাজ। পিহুর অসমাপ্ত কথায় সারফারাজের রাগের মাত্রা আকাশ ছুঁই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারফারাজ আহাদকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—”পিহুর বাড়ির সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে বলেছিলাম লাগিয়েছিলে?”
আহাদ ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিলো। সারফারাজ আবার বললো…
—”আজকের ফুটেজটা দেখাও।”
আহাদ তৎক্ষনাৎ ল্যপটপে পিহুর বাড়ির সামনের আজকের ফুটেজটি চালু করলো। সারফারাজ দেখলো সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কেবল একজন ৪৫ উর্ধো বয়সের মহিলা ব্যতিত আর কেউ পিহুদের বাড়িতে আসে নি বা ওরাও কেউ বাহিরে যায় নি। সারফারাজের বুঝতে বাকি রইলো না এই মহিলাই পিহুকে এমন কিছু বলেছে যার জন্য সে এতো বেশি হা*র্ট হয়েছে ও রেগে আছে সারফারাজের উপর।
পরক্ষণেই সারফারাজের ফোন বেজে উঠলে সে ফোনস্ক্রিণের দিকে তাকাতেই দেখলো পিহুর জন্য যেই গাড়ি সে ওর বাড়ির মোড়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছে একজন ড্রাইভার সমেত সেই ড্রাইভারটিই কল করেছে। সারফারাজ কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কমলার কন্ঠ ভেসে এলো….
—”ভাইসাহেব, আমি কমলা বলতাছি। আমার তো কোনো ফোন নাই তাই এইখানে আসতে হইলো ড্রাইভার চাচার ফোন থেকে আপনেরে ফোন করতে।”
সারফারাজ বললো….
—”বলো কমলা।”
—”আপামনি অনেক রাইগা আছে ভাইসাহেব। আর কষ্টও পাইছে। অনেকক্ষণ আড়ালে কান্নাও করছেন।”
অতঃপর কমলা পুরো ঘটনা সারফারাজকে বললে সারফারাজের রাগের মাত্রা এতো বেশি হয়ে দাঁড়ালো যে ওর কপালের ও ঘাড়ের সূক্ষ্ম র*গ গুলো পর্যন্ত ভেসে উঠেছে। সারফারাজ কল কেটে দিয়ে আহাদকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে পড়লো ওর সিক্রেট আস্তানা থেকে৷
লাইব্রেরি রুমে বসে পছন্দের কিছু বই পড়ছিলেন জামাল খান। সেইসময় জামাল খানের স্ত্রী তাহমিনা খান এক কাপ চা নিয়ে লাইব্রেরি রুমে প্রবেশ করলেন। চায়ের কাপটা জামালের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। জামাল চায়ের কাপটা নিয়ে তাতে একবার চুমুক দিয়ে বললেন…..
—”তোমার বড় ছেলে কোথায়? তিন দিন হলো তার দেখা মিলে না। রাজনীতি নিয়ে এতো ব্যস্ত যে দিন-দুনিয়া সব ভুলে বসেছে সে এখন!”
তাহমিনা বললেন….
—”ছেলের গুণ যখন শুনেন তখন সে আপনার ছেলে হয়ে যায় আর যেই না খুঁ*ত*টা চোখে পরে ওমনি সে আমার ছেলে হয়ে যায় তাই না!”
জামাল তাহমিনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন…
—”আমার মধ্যে আজ পর্যন্ত কোনো খুঁ*ত খুঁজে পেয়েছিলে তুমি?”
—”হয়েছে হয়েছে থামেন আপনি। যুবতী বয়সেই আপনার সাথে কথায় পারি নি আমি এখন এই মধ্য বয়সে এসে এসবে পেরে উঠার তো প্রশ্নই আসে না।”
—”শিকার করছো তাহলে ছেলে-মেয়েরা যা গুণ পেয়েছে তা আমার বদৌলতেই কারণ আমি মানুষটাই এতো নিখুঁত।”
না চাইলেও তুমি শুধু আমারই পর্ব ৬
—”না করে উপায় আছে?”
—”হুম।”
—”সারফারাজ কল করেছিলো আমায় একবার গতকাল বিকালে। বললো আর্জেন্ট কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় আসতে পারছে না বাড়ি। কাজ শেষ হলে আসবে।”
জামাল কোনো প্রতিত্তুর করলেন না।