নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ১৯+২০

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ১৯+২০
আহমেদ হৃদ

‘এবার তো হয়েছে অগোছালো। নিন, পরিষ্কার করুন।’
অভ্র’র শক্ত কন্ঠে মাথায় বাজ পড়লো তানিয়ার। পা থেকে মাথা অব্ধি শিউরে উঠলো অভ্র’র এরুপ কাজে। কি করলো লোকটা এটা? কেন করলো? তানিয়াকে খাটাতে? নিজেই সব অগোছালো করে, সেগুলোই আবার করতে বলার মানে কি? তানিয়া শুকনো ডোগ গিললো। অবাক নয়নে তাকালো অভ্র’র দিকে। অভ্র’র তিক্ন নজর অকপটে তানিয়ার দিকে স্থির। কপালে ফুটে ওঠা রগ, লাল চক্ষুদ্বয় প্রমান দেয়, অভ্র রেগে আছে। কিন্তু এই সকাল সকাল কে রাগিয়েছে এই লোকটাকে? আর রাগ দেখানোর জন্য কি তানিয়াকে’ই চোখে দেখলো? দুনিয়ায় আর কেউ নেই? তানিয়া চোখ সরিয়ে নিলো। মেঝের দিকে তাকালে-ই তানিয়ার কান্না পাচ্ছে। পুরো মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাগজগুলো। কোমরে আলতো করে হাত রাখলো তানিয়া। এখনো ব্যাথা কমেনি। এই ব্যাথা নিয়ে কিভাবে করবে তানিয়া? তানিয়ার চোখের কোনে নোনাজল জমলো। মেঝেতে দৃষ্টি রেখেই তানিয়া ক্রন্দনরত কন্ঠে শুধালো অভ্র’কে,

‘কি করলেন এটা? কেন করলেন?’
তানিয়ার করুন কন্ঠে কোন ভাবান্তর ঘটলো না অভ্র’র মাঝে। বরং অভ্র চেয়াল শক্ত করে তাকালো। এসি চলা সত্ত্বেও তরতর করে ঘামছে অভ্র। এতো গরম লাগার কারন কি? সামনে থাকা মেয়েটা? হ্যা! তানিয়াকে দেখলেই রাগ হচ্ছে অভ্র’র। আক্রোশ নিয়ে এগিয়ে এলো অভ্র। তপ্ত কন্ঠে বললো,
‘একটু আগেই তো বললেন সবকিছু গোছানো। এখন তো আর গোছানো নয়। এলোমেলো দেখাচ্ছে। পরিষ্কার করুন মিস তানিয়া।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানিয়া চোখ তুলে তাকালো। সাথেসাথে গড়িয়ে পড়লো একফোটা অশ্রু। সাথেসাথে মুছে নিলো তানিয়া। নাকের পাঠা দু’টো ফুসছে তার। এই লোকটার সামনে তানিয়া দুর্বল হতে চায় না! তবুও বেহায়া চোখ যেন সুযোগ খোঁজে প্রকাশের। তানিয়া বিরক্তি হলো, কিঞ্চিৎ রাগে লাল হয়ে উঠলো তানিয়ার ফরসা নাক। এই নোনাপানি এতো তুচ্ছ কেন? এতো সাধারণ কারনে চোখে আসে কেন এভাবে? কেন’ই বা গড়িয়ে পড়ে এই নির্দয় মানুষটার সামনে? এতোই মুল্যহীন? এতোটা যে, কালকে তানিয়া রাত জেগে কেঁদেছে! ভালোবাসার মানুষটির থেকে পাওয়া আঘাতে কষ্ট পেয়েছে! তানিয়ার নিজের প্রতি নিজের-ই ঘৃণা হচ্ছে। পারলো কিভাবে এই মানুষটাকে ভালোবাসতে সে? সেধে এসে কষ্টের ভার নেওয়ার কি খুব দরকার ছিলো? অভ্র কি বোঝে না, তার কথাগুলোয় তানিয়া কষ্ট পায়। ভেতরটা অভিমানে মূর্ছা যায়! বুঝবে কিভাবে? বুঝতে তো মন লাগে। যেটা সামনের মানুষটার আদতেও নেই!
অভ্র তানিয়ার চোখে পানি দেখতেই নরম হলো। মলিন হলো আঁখিদ্বয় তার। তানিয়ার কাঁপাকাঁপা মুখখানা থেকে চোখ সরিয়ে, নিঃশব্দে শ্বাস ফেললো অভ্র। কথায় কথায় কাঁদে কেন এই মেয়ে? নিজেকে ধাতস্থ করে,শক্ত গলায়তেই বললো,

‘কাজটা করুন মিস তানিয়া।’
অভ্র এক মুহুর্ত আর দাড়ালো না। বলেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। তানিয়া নাক টেনে মেনে নিলো অভ্র’র কথা। আবারো চোখে চিকচিক করে উঠলো নোনাজল। তানিয়া ধীর গতিতে হেলে বসে সব কাগজ গোছাতে লাগলো। বিষমিনিট ধরে সবগুলো একত্রে করে গুছিয়ে রাখলো টেবিলে। সস্থি নিয়ে দাড়িয়ে পাশের চেয়ারে ঠেস দিয়ে দাড়ালো তানিয়া। চিনচিনে ব্যাথা করছে। এখনো অভ্র কেবিনে আসেনি। নিশ্চয়ই অনেক আনন্দ পাচ্ছে তাকে কাজ করিয়ে? পাবেই তো! তাকে কষ্ট দিয়ে হয়তো পৈশাচিক আনন্দ পায় অভ্র। তানিয়া ফিকে হাসলো। সে হাঁসিতে স্পষ্ট তাচ্ছিল্য!
আরও মিনিটদশেক পর রুমে ডুকলো অভ্র। তার পিছুপিছু তাল মেলাতে না পেরে, একপ্রকার ছুটছে অথৈ। অভ্র আসতেই, তানিয়া এক সাইডে গিয়ে দাড়ালো। তাকালো না অব্ধি। অভ্র’র হাতে একটি কাগজ। বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে নজর রাখলো কাগজটায়। সবকিছু ঠিক আছে কি-না চেক করে নিলো। অভ্র অথৈর দিকে তাকালো। অথৈ তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে। ভ্রু কুঁচকে এলো অভ্র’র। ডাকলো,

‘অথৈ?’
অথৈ’র ধ্যান ছুটলো। তানিয়াকে কেবিনে দেখে বিষ্ময় ঘিরেছিলো তাকে। তানিয়ার দিক থেকে চোখ সরালো অথৈ। এই মেয়েটাকে অথৈর মোটেও ভালোলাগে না। কালকের পর থেকে তো নয়’ই! কেমন চিপকে থাকে অভ্র’র সাথে। সারাক্ষণ এই রুমে’ই বা কি কাজ? কি করে এই মেয়ে? অভ্র তাকে এলাও-ই বা কেন করে? কই, তাকে তো করে না! মুখে চিন্তার রেশ নিয়ে অভ্র’র দিকে তাকালো অথৈ। আমতা-আমতা করে বললো,

‘জ্বি স্যার।’
অভ্র পেপারে চোখ রাখলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘সবাই জানে এই ব্যাপারে?’
‘জ্বি স্যার। পুরোনো সব স্টাফ তো আগে থেকেই জানে। তাদের বেশ উৎসাহ এতে। এখন শুধু নোটিস’টা দিয়ে দিলেই কনর্ফাম হবে।’
‘গুড, নটিসটা লাগিয়ে দেবেন।’
অথৈ মাথা নেড়ে বললো,’জ্বি, স্যার।’
অথৈ ঘুরে দাড়ালো যাওয়ার জন্য। একপা এগিয়ে থামলো আবারো। পিছু ফিরে তাকালো অভ্র’র দিকে।
কিছু বলার জন্য উশখুশ করতে লাগলো। অথৈকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অভ্র সেভাবেই বললো,
‘আর কিছু বলবেন?’

‘না মানে স্যার, নতুন স্টাফ’রা তো যাচ্ছে না। পেন্ডিং কাজগুলো যদি নিউ এমপ্লয়িদের বুঝিয়ে দিতেন.. কজ, সামনের দুটো দিন তো আমরা থাকছি না।’
অভ্র তাকালো অথৈর দিকে। শান্ত গলায় বললো,
‘আমরা বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন? এবার আর পুরোনো-নতুন নয়। সবাই যাবে। বাকি রইলো কাজগুলো তো? এ দুদিনে সব শেষ হওয়া চাই! এজ এনি কস্ট!’
অথৈ আশ্চর্য হলো। এ নিয়ম কবে থেকে শুরু হলো আবার? কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো থ হয়ে অথৈ। আড়চোখে তাকালো তানিয়ার দিকে। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তানিয়া। অথৈর যেন প্রচন্ড রাগ হলো। কোন কিছু তোয়াক্কা না করেই এগোলোতানিয়ার দিকে। সামনে গিয়ে কড়া গলায় বলে উঠলো,

‘তুমি এখানে দাড়িয়ে স্যারকে ডিস্টার্ব কেন করছো? কোন কাজ নেই তোমার? যাও, নিজের ডেস্কে যাও!’শেষের কথায় রাগের মাত্রা বেশি অথৈর। তানিয়া কিছুই বললো না। উত্তর দিলো অভ্র,
‘ওনাকে আমিই থাকতে বলেছি।’
অথৈ চমকে তাকালো অভ্র’র দিকে। বললো,
‘কিন্তু স্যার..’
‘আপনি নিজের কাজ করুন। নোটিসটা জানিয়ে দিন সবাইকে। আর হ্যা, করিম সাহেবকে আসতে বলবেন।’
‘জ্বি,স্যার।’

অভ্র এতক্ষণে প্রগাঢ় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তানিয়ার দিকে। পায়ের দিকে চোখ রেখে দাড়িয়ে রয়েছে তানিয়া। অথৈ যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই অভ্র গলা খেঁকিয়ে অথৈকে ডাকলো,
‘অথৈ, আপনি কি প্রেম করেন?’
অথৈ হুট করে করা অভ্র’র প্রশ্নে সচকিত হলো। অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে তাকালো অভ্র’র দিকে। আচমকা এমন প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেললো অথৈ। হাসফাস করতে করতে জবাব দিলো,
‘না স্যার। এসব তো মাথাতেও আনি না।’
অভ্র তখনো গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে তানিয়ার দিকে। তার প্রশ্নে যে তানিয়া এতটুকু বিচলিত নয়, তা মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝলো অভ্র। শান্ত গলাতেই বলতে লাগলো আবারো,

‘মিস অথৈ,মনে করুন আপনি প্রেম করে। আপনার প্রেমিক একটা কর্পোরেট অফিসে জব করে। তার পাশে থাকতে, নিজ স্বার্থে আপনি কি সে অফিসে চাকরি নেবেন? ধরুন, কোন মেধা, জ্ঞান, যোগ্যতা কিছু না থাকা সত্ত্বেও রেকোমেন্ডেড হয়ে চাকরি নিয়েও নিলেন। তার ক্ষতি, অফিসের ক্ষতির দিকটা কি ভাববেন না?’
তানিয়া চট করে চোখ তুলে তাকালো। অভ্র’কে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো নামিয়ে নিলো দৃষ্টি।
অথৈ আগামাথা বুঝলো না। তবুও চটপট উত্তর দিলো,
‘অবশ্যই না স্যার। এতে তো সে মন দিয়ে কাজ করতেই পারবে না; বরং চাকরিটাও যেতে পারে।’
‘আর ইউ সিওর?’

অথৈ সিনা টান করে উত্তর দিলো,’অফকোর্স স্যার।’
‘এবারে আসুন।’
অথৈ মাথা নাড়লো। আঁড়চোখে একবার দেখে নিলো তানিয়াকে। এরপর ধীর গতিতে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে।
তানিয়া না তাকালেও, সব শুনলো মন দিয়ে। কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে? আর রেকোমেন্ডেড তো তানিয়া’ই হয়ে এসেছে। কি বোঝাতে চাইলো অভ্র? কিছুই বুঝলো না তানিয়া। এককথায়, সে বুঝতে চাইলো না। অভ্র’র চিন্তা সে আর করতে চায় না। ভাবতে চায় না হৃদয়হীন নিষ্ঠুর মানুষটার কথা। কেন ভাববে? পদে পদে অপদস্ত হতে? তানিয়ার মাথায় আপাতত একটা শব্দই ঘুরছে। আর তা হলো, ‘রিজাইন!’

ক্লান্ত দুপুর। মাথার উপর তির্যক রোদ। এই কাঠফাটা রোদে আরুর ইচ্ছে জেগেছে, সে হাঁটবে। হেঁটে হেঁটে ফিরবে। অগত্যা রুদ্র’কে গাড়ি থামাতে হলো। এতক্ষণ তো লজ্জায় মুখ অব্ধি তুলে তাকায় নি মেয়েটা। যে-ই না কথা বললো, তাও আবার অসহ্যকর আবদার। এই আবদার রুদ্র রাখলো না। আগের মতোই গাড়ি স্টার্ট দিলো।
আরু রাগে কটমট করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এরপর মুখ ফিরিয়ে সামনে তাকালো। এই গাড়িতে চলাচল, আরুর মোটেই ভালো লাগে না! তারউপর গ্লাসগুলো ও বন্ধ। বলি, বাইরের হওয়ার মতো এসির হওয়া হবে? হবেনা! কত সুন্দর ফুরফুরিয়ে বাতাস আসবে, ঘুম জেঁকে বসবে। তা না! আরু আড়ালে ভেঙচি কাটলো। লোকটা অসম্ভব খারাপ।

‘আরু।’
আরু সচেতন হয়ে তাকালো। আজ আবার গম্ভীর স্বর তুলেছে লোকটা। নির্ঘাত কোন ফন্দি মাথায় কিলবিল করছে! আরু চোখ ফিরিয়ে বুকে হাত গুজে বাবু সাজলো। বললো,
‘বলুন।’
‘সরি।’
আরু চমকালো, ডাগরডোগর চোখদুটোয় বিষ্ময় নিয়ে তাকালো রুদ্র’র দিকে। অবিশ্বাস্য কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’কি? কি বললেন? কেন বললেন?’
আরুর একনাগাড়ে করা প্রশ্নে কোন ভাবান্তর ঘটে না রুদ্র’র মাঝে। এমন কি সে উত্তর অব্ধি দিলো না। আরু তার পাণেই চেয়ে রইলো উত্তরের আশায়। উত্তর না পেয়ে আরু হতাশ হলো, বিরক্ত হলো। আগের মতোই মুখ ফিরিয়ে নিলো।

হুট করে ফোন বেজে উঠলো রুদ্র’র। রুদ্র ব্লুটুথ কানেক্ট করে রিসিভ করলো ফোন। ওপাশ থেকে অভ্র’র কন্ঠ,
‘স্যার, পরশুদিন বাৎসরিক গ্রীষ্ম ট্রিপের নোটিস দেয়ার পর থেকে অফিসের সবাই আজ ছুটি চাইছে।’
রুদ্র ভ্রু কোঁচকালো। জিজ্ঞেস করলো,
‘এতে ছুটির কি আছে?’
ওপাশ থেকে আর কোন কথা শোনা গেলো না। অভ্রকে চুপ দেখে রুদ্র বুঝলো, অভ্র শুধু ‘হ্যা’ অথবা ‘না’ শোনার জন্য ফোন দিয়েছে। রুদ্র নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আরুর দিকে তাকালো একপলক। অতঃপর বললো,
‘দিয়ে দাও।’
ফোন কেটে গেলো। রুদ্র ড্রাইভ করতে করতেই আরুকে ডাকলো আবারো,
‘আরু!’

আরু তাকালো না। আবার কি হলো? রুদ্র শান্ত স্বরে বললো,
‘পরশুদিন থেকে বেশ কয়েকদিন আমাদের আর দেখা হবে না।’
আরু চমকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,
‘কেন?’
‘অফিস ট্রিপে যাচ্ছি সবাই।’
আরুর অকপটে তাকিয়ে। ইতস্তত হয়ে থমথমে গলায় বললো,’আমিও যাবো।’
রুদ্র তাকালো। চোখ ফিরিয়ে নিলো আবারো। গম্ভীর স্বরে বললো,
‘নেভার! কখনোই না।’
‘কেন? আমি গেলে কি হয়?’

রুদ্র উত্তর দিলো না। মন দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো আবারো। আরু তিরিক্ষি মেজাজে তাকিয়ে থাকলো রুদ্র’র দিকে। আরুদের বাড়ির সামনে আসতেই, গাড়ি থামালো রুদ্র। গাড়ি থামতেই আরুর রাগের মাত্রা বাড়লো উর্ধগতিতে। ঝটপট নামে আরু। রাগে গাড়ির দরজা স্ব-শব্দে লাগিয়ে দিলো। হাঁটা ধরতেই গলায় ওড়নার টান পড়লো আরুর। আরু পিছু ফিরলো। দেখলো, এককোনা আঁটকে গেছে দরজায়। সারা মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো আরুর। দাঁত খিঁচে একটান দিতেই, ছিঁড়ে গেলো কিছুটা।

আরুর মুখ এবার মলিন হলো। কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকালো রুদ্র’র দিকে। ভেতর থেকে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে এলো। আসলেই মেয়েটার মাথায় ঘিলু নেই। রুদ্র আসতেই, আরু কিছুটা সরে দাঁড়ায়। রুদ্র হেলে খুলে দেয় দরজা। রুদ্র’র খোঁচালো দাঁড়ির উপর রোদ পড়েছে। চিকচিক করছে সেগুলো। হুট করে আরু রুদ্র’র গলা টেনে চুমু বসিয়ে দিলো গালে। ততক্ষনে ছুটে গেছে ওড়না। আরু রুদ্র’কে ছেড়ে ছুটে পালালো। একেবারে বাড়ির ভেতরে গিয়ে শ্বাস ফেললো। কি করে বসে মাঝেমাঝে আরু?

গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে নিজ রুমে গেলো আরু। কোন কিছুই ভালো লাগছে না তার। তাকে ট্রিপে নেওয়া হবে না! কেন নেওয়া হবে না? আরু কি বেশি খাবে? আরু যাওয়ায় কি জায়গা কম পড়বে? তানিয়াও তো যাবে। সে গেলেও তো খাওয়া কম পড়বে। জায়গা কম হবে। তাহলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে, আরুকে কেন নয়? আরু যাবেই! তা সে যে করেই হোক! আরুর মাথা ধরে গেলো। লোকটা মুখের উপর বলে দিলো আরুকে নেবে না। কি সাহস!
আরু ভাবতে ভাবতে গিয়ে দাড়ালো আয়নার সামনে। পার্ফিউম থেকে শুরু করে চিরুনি পর্যন্ত সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। আরু আলগোছে সবগুলো আউলিয়ে দিলো। এরপর এসে বসলো বিছানায়। এখন সে তানিয়াকে ফোন করবে।

‘রিজাইন করতে গেলে কি কোন এপ্লিকেশন করতে
হবে, স্যার?’
তানিয়ার নতজানু কন্ঠে শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে এলো অভ্র’র। ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে তানিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করলো অভ্র। তার চোখে ঈষৎ রাগ। শুভ্র, সাদা, সচ্ছ মেঝেতে তানিয়ার সরল মুখ স্থির। হঠাৎ রিজাইন? অর্থাৎ চাকরি ছাড়তে চাইছে মেয়েটা? অভ্র গম্ভীরমুখে কিছু একটা ভাবলো। রাগ মিলিয়ে মুখে কুটিল হাঁসি ফুটলো অভ্র’র। দু’হাত থুতনিতে ঠেস দিয়ে রয়েসয়ে বসলো অভ্র। জিজ্ঞেস করলো সন্তর্পণে,
‘আপনি রিজাইন নিতে চাইছেন?’
তানিয়া তাকালো না। ছোট করে জবাব দিলো,
‘হ্যা।’

অভ্র’র হাঁসি প্রশস্থ হলো। মুখজুড়ে তার প্রাশান্তির আভাস। তানিয়ার এই কথায় এতো শান্তি পাচ্ছে কেন অভ্র? তার নিক্ষেপিত বিষাক্ত বান কি কাজ করলো তবে? করেছে! এইতো তার সুনির্দিষ্ট প্রমান! অভ্র তাচ্ছিল্য হাঁসলো। হীন স্বরে বললো,
‘ব্যাস, এতটুকুই! ভালোবাসা শেষ?’
তানিয়া চমকালো। চক্ষুদ্বয়ে বিষ্ময় নিয়ে তাকালো অভ্র’র দিকে। অভ্র সহজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে। অজানা ভয়ে আঁতকে উঠলো তানিয়ার বুক। অভ্র কি তবে জেনে গেলো, তানিয়া অভ্র’কে ভালোবাসে? কে বললো? আরু? আরু তো আগ বাড়িয়ে বলবে না! তানিয়া ডোগ গিললো। আটকানো কন্ঠে বললো,
‘ম্ মানে?’

‘বুঝছেন না? নাকি না বোঝার ভান ধরছেন?’
তানিয়া মাথা নাড়লো; যার অর্থ সে বুঝছে না। অভ্র’র কপালে ভাজ পড়লো। কর্কশ গলায় বললো,
‘আপনি নিজেকে কি মনে করেন মিস তানিয়া?’
তানিয়া উত্তর দিলো না। তার জীবন এখন বেদনার! কোন কুলক্ষণে যে এসেছিলো চাকরি করতে। তানিয়া বিরবির করলো,’কি আবার মনে করবো? নিজেকে আপাতত চাকর মনে হচ্ছে। আর একজন কুৎসিত মনের অধিকারী মানুষ আমার বস!’

শান্ত, নিঃশব্দ আততীয় স্থানে কথাগুলো কানে বাজলো অভ্র’র। চেয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। কন্ঠনালি শক্ত করে গরম চোখে তাকালো তানিয়ার দিকে। সে কুৎসিত মনের অধিকারি? তাহলে নিজে কি? ধোয়া তুলসি পাতা?
অভ্র চোখ বুজলো। আজকাল অভ্র পাল্টে যাচ্ছে। ইদানিং ‘মিথ্যে’ নামক শব্দতেই জ্বলে ওঠে অভ্র’র শরীর। রাগ হয়, সব বিষাক্ত লাগে! এইযে, তার সামনে দাড়ালো মেয়েটা, এই মেয়েটাও তো মিথ্যে বলছে! মেয়েটা নিজেকে যত চালাক ভাবে, আসলেই কি অতোটা চালাক? আসলে, অতোটাই বোকা! তুর্য’র জন্যে যে এই অফিসে তানিয়া এসেছে, তা ভালো করেই বুঝছে অভ্র। তাইতো এতো সখ চাকরির। এতো উতলা! তবে? হঠাৎ কেন দমে গেলো? ফুরিয়ে গেলো ভালোবাসা? দাঁতে দাঁত চেপে দমন করলো রাগটুকু অভ্র। শান্ত, তবে তপ্ত কন্ঠে বললো,
‘আপনি চাকরি ছাড়তে পারবেন না মিস তানিয়া।’
চোখ বড়বড় করে তাকালো তানিয়া। কথাটা কয়েকবার প্রতিধ্বনি হয়ে কানে বাজলো। একটি বাক্যে ধরাস করে উঠলো তানিয়ার বুক। চাকরি ছারতে পারবে না মানে? তানিয়া ক্রুর চাহনি নিয়ে তাকালো। এগিয়ে এসে অবাক চিত্তে জিজ্ঞেস করলো,

‘পারবো না মানে?’
‘পারবেন না মানে পারবেন না!’
‘কেন পারবো না? আমার চাকরি, আমি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারি।’
‘না পারেন না!’
‘সেটাই তো! কেন পারবো না?’
‘এগ্রিমেন্টের কথা ভূলে গেছেন? নাকি এতোটাই উত্তেজিত ছিলেন যে, পড়েও দেখেন নি। আপনি দু’মাসের আগে এ চাকরি ছাড়তে পারবেন না।’
তানিয়া থমকে গেলো। মুচড়ে উঠলো ভেতরটা। তানিয়া কবে এমন এগ্রিমেন্টে সাইন করলো? অভ্র তো এ ব্যাপারে কখনোই কিছু বলেনি। তবে আজ এসব কি বলছে অভ্র? কপোট রাগান্বিত তানিয়া টেবিলে হাত রেখে ঝুকে গেলো কিছুটা। চেঁচিয়ে উঠলো,
‘আপনি বানিয়ে বলছেন এসব। আমি কখনোই এমন কিছুতে সাইন করিনি।’
‘ওহ্ রিয়েলি?’

‘জ্বি হ্যা। আর আপনিই তো বললেন, আমার কোন জ্ঞান, মেধা কিছু নেই। আর সহ্য-ও তো করতে পারেন না। তাহলে দু’মাসের আগে কেন যেতে দিচ্ছেন না? আপনার তো উচিত, আমায় নিজে থেকে বরখাস্ত করা! কি,তাইনা?’
অভ্র মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। বললো,
‘ঠিক। তবে রুলস্ ইজ রুলস্। এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য!’
তানিয়া প্রতিবাদ করে উঠলো,’আমি মানি না। আমি এভাবে এই চাকরি করতে পারবো না।’
‘কেন? সেদিন তো খুব বলেছিলেন একশোবার পারবেন। আজ পারবেন না কেন?’
‘ওসব বাদ! ছোট মানুষেরা জিবনে অনেক ভুল-ভ্রান্তি করে থাকে। ওগুলো মনে রাখতে নেই।’
‘তাইতো এই বয়সে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘোরেন।’ বিরবির করে বললো অভ্র।
তানিয়া বুঝলো না অভ্র’র অস্পষ্ট স্বর। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি বললেন?’
‘নাথিং।’
তানিয়া কিছুক্ষণ স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র’র দিকে। অতঃপর গম্ভীর স্বরে বললো,
‘আপনি বরখাস্ত না করলে আমি কিন্তু বলে দেব সবাইকে!’
ভ্রু কুঁচকে তাকালো অভ্র। স্পষ্ট তাচ্ছিল্য অভ্র’র স্বরে,’কি বলবেন সবাইকে শুনি?’
‘বলে দেব যে আপনার..আপনার ছেলেদের প্রতি ইন্টারেস্ট আছে।’

মুহুর্তে মুখের ভাব পাল্টে গেলো অভ্র’র। চেয়ার ছেড়ে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো তানিয়ার দিকে। তানিয়া ভরকালো, ভয় পেলো কিছুটা। তবে চুপ করে রইলো। অভ্র ধির পায়ে এগিয়ে এলো তানিয়ার সামনে। আকম্মিকতায় নিঃশ্বাস আঁটকে এলো তানিয়ার। চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো তানিয়া। তাদের মাঝে কয়েক ইঞ্চির ব্যাবধান শুধু। অভ্র’র কড়া পার্ফিউমের গ্রাণ নাকে লাগছে। স্বর্বাঙ্গ যেন জমে গেলো তানিয়ার। অভ্র তানিয়ার মুখের কাছে এসে দাঁতে দাঁত পিশে বললো,
‘আপনার সাহস আমায় ক্রমাগত অবাক করে তুলছে মিস তানিয়া। কালকের কথা এতো দ্রুত ভুলে যাবেন, এক্সপেক্ট করিনি।’

কেঁপে উঠলো তানিয়া। কথার ভাজে আসা তপ্ত শ্বাস, অন্তরাত্মা নাড়িয়ে দিচ্ছে তানিয়ার। দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে বুকে। হুট করে এভাবে কাছে চলে আসে কেন অভ্র? অভ্র কি বোঝে না, সে কাছে আসলে তানিয়া মুমূর্ষ রোগি হয়ে যায়? বুকে উথাল-পাতাল শুরু হয়? শ্বাস আঁটকে আসে, হার্ট মিস হয় কতবার!
অভ্র সরে এলো। অন্যদিকে ফিরে একনিষ্ঠ কন্ঠে বললো,
‘এখানে এসেছেন নিজ ইচ্ছায়, যাবেন আমার ইচ্ছায়!’

ঘোর কাটলো তানিয়ার। মুখের ভয় মিলিয়ে ফুসে উঠলো রাগে তানিয়া। অভ্র স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে গেলো আলমিরার দিকে। সেখান থেকে একটি ফাইল বের করে এগিয়ে এলো তানিয়ার সামনে। স্ব-শব্দে টেবিলে রাখে নজর কারলো তানিয়ার। তানিয়া তাকালো। ফাইলের দিকে ইসারা করে, ক্ষিপ্ত স্বরে বললো অভ্র,’পড়ুন।’
তানিয়া তুলে নিলো ফাইলটা। অভ্র’র দিকে কড়া দৃষ্টি রেখেই ফাইলের সুতো খুললো। এলোমেলো ভাবে একের পর এক পৃষ্ঠা ওল্টাতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে উঠলো তানিয়া। সব পেজে নিঁখুত, স্পষ্টভাবে রয়েছে তানিয়ার সাক্ষর। যেদিন তানিয়া চাকরি নিয়েছে, সেদিন এগুলোতেই সাইন করেছিলো সে।

উত্তেজনার বসে তানিয়া একবারও পড়ে দেখেনি কি লেখা আছে এতে। তখন কি বুঝেছিলো; যার জন্য এতোকিছু, সে তার দু’চোখের বিষ! কাঙ্খিত পৃষ্ঠাটায় চোখ আঁটকে গেলো তানিয়া। অবাক হয়ে পড়তে লাগলো তানিয়া। সেখানে লেখা, তানিয়া স্ব’জ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে এ চাকরি নিয়েছে। কমপক্ষে দু’মাসের আগে এ চাকরি সে ছাড়তে পারবে না। যদি ছাড়ে, আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে তার প্রতি।

তানিয়া ক্লান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। সারা শরীর অবস হয়ে আসছে তানিয়ার। এবার? তানিয়া নিষ্প্রাণ দু’টি চোখ তুলে তাকালো অভ্র’র দিকে। শান্ত অভ্র তার দিকেই তাকিয়ে। তানিয়া তো মনেপ্রানে চায় এই মানুষটার আশেপাশে থাকতে। একটু ভালোবাসা পেতে। কিন্তু অভ্র তো তানিয়াকে এতোটুকুও পছন্দ করেনা। এতোটুকুও না! তানিয়া মেঝের দিকে তাকিয়ে স্থির দৃষ্টিতে। অভ্র এগিয়ে এলো। তানিয়ার হাত থেকে আলগোছে নিয়ে নিলো ফাইলটা। যত্নের সহিত টেবিলে রেখে চেয়ারে আরাম করে বসলো অভ্র। বাঁকা হেঁসে বললো,
‘অফিস ছুটি হয়ে গেছে মিস তানিয়া। বাড়ি চলে যান। আর হ্যা, পরশু অফিসের সকলেই ট্যুরে যাচ্ছি কক্সবাজার। যাওয়ার আগে, নোটিস বোর্ডটা চেক করে নেবেন।’
স্তব্ধ তানিয়া চোখ তুলে তাকালো না। কাধের ব্যাগটা তুলে ধীর পায়ে দোরমুখো হাঁটতে লাগলো। হুট করে পিছু ফিরে শক্ত গলায় বললো,

‘বেয়াদব লোক একটা!’
বলেই দ্রুত কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো তানিয়া। পেছনে অভ্র নিশ্চয়ই অনেক রেগে গেছে? যাক! তানিয়া ছাড়বে না ওই লোকটাকে। আজ থেকে শুরু, বুঝিয়ে দেবে একেবারে। তানিয়াও ছাড়বে না চাকরি। অভ্র’র মাথার উপর চড়ে যদি না নাঁচতে পেরেছে, তাহলে নিজের নাম বদলে রাখবে ঠিক করলো তানিয়া। কি কিম্ভুত মানুষ! নিজেই তো আজকে তানিয়ার মেধা, যোগ্যতা নিয়ে কতকিছু বললো! তাহলে রিজাইন নিতে দিলো না কেন? রাগ নিয়ে নোটিস বোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো তানিয়া। পরশুদিন সকাল নয়টায় অফিস থেকে রওনা দিতে হবে। কিন্তু তার বাবা? তিনি কি আদেও রাজি হবেন? যেতে দেবেন তানিয়াকে? দেবেনা! জিবিত থাকতে তো নয়’ই। তানিয়াকে জ্যান্ত কবর দিতেও হাত কাঁপবেনা ওনার। বিরক্ত হয়ে অফিস ত্যাগ করলো তানিয়া। এতোকিছু’র পর শরীর ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত তানিয়ার। বাইরে গিয়ে রিকশা নিয়ে নিলো। ফোন বের করতেই দেখলো অনেকগুলো কল দিয়েছে আরু। তখনকার অভ্র’র কথাগুলো মনে পড়লো তানিয়ার। ‘ব্যাস, ভালোবাসা শেষ?’ কথাটা ছুরির মতো আঘাত করেছিলো বুকে। তড়িঘড়ি করে কল দিলো আরুকে তানিয়া। সাথেসাথে ফোন রিসিভ করলো আরু। ওপাশ থেকে ভেসে এলো আরুর উৎকন্ঠা স্বর,

‘দোস্থ, তোরা নাকি বেড়াতে যাচ্ছিস?’
হুট করে করা আরুর প্রশ্নে তানিয়া থতমত খেলো। বললো,’কোথায় বেড়াতে যাচ্ছি?’
‘আরে তোদের অফিস থেকে।’
‘ওহ্,হ্যা।’
‘তুইও যাচ্ছিস?’
‘হ্যা।’
‘আমাকেও নে না।’
তানিয়া তপ্ত শ্বাস ফেললো। মলিন কন্ঠে বললো,’তোকে কিভাবে নেব? তুইতো আর অফিসের এমপ্লয়ি নস।’
‘তাতে কি? বলবি, আমি আমার খাবারের টাকা নিয়ে যাবো।’
এত রাগের মাঝেও হেঁসে ফেললো তানিয়া। অতিষ্ঠ গলায় বললো,’টাকার ব্যাপার নয় আরু। তোকে এলাও করবে না।’

আরু চুপ থাকলো কিছুক্ষণ। ক্ষিন স্বরে বললো,
‘আচ্ছা রাখ তাহলে।’
আরুকে থামালো তানিয়া। চটপট বলে উঠলো,’আরু শোন।’
‘হু?’
‘তুই অভ্র’কে কিছু বলেছিস আমার ব্যাপারে?’
‘কোন ব্যাপার? কি ব্যাপার? আর কেন?’
তানিয়া বুঝলো আরু কিছু বলেনি। তাহলে জানলো কিভাবে অভ্র? তানিয়া কথা শেষ করে কেটে দিলো ফোন। অভ্র যদি না জানে, তাহলে কি ইঙ্গিত করলো? কেন বললো ওমন কথা? সামনে কি হবে, ভাবলেই মাথার যন্ত্রণা তরতর করে বাড়ছে তানিয়ার।

বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আরু। অনেকগুলো মেসেজ করেছে রুদ্র’কে সে। একটা রিপ্লাই পর্যন্ত দেয়নি লোকটা। শুধু সিন করে রেখে দিচ্ছে। আরুর মেজাজ এখন অসম্ভব রকমের খারাপ। কি অসভ্য লোক! বউকে রেখে কোন ব্যাডা কোথাও যায়? যায় না! এই লোকটা যাবে, ঘুরবে! তার বউকে নেবে না। আরু এই জ্বলা মোটেও মেনে নিতে পারছে না। আরু সারাঘরে চোখ বোলালো। চোখ পড়লো দূরের ড্রেসিং টেবিলটায়। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো মুহুর্তে। আরু উঠলো। দ্রুত গিয়ে রক্তরঙা নেলপলিশ তুলে নিলো। ডাকনা খুলে বাঁকা হাঁসলো আরু। নেবেনা মানে? অতোই সোজা নাকি? নিতেই হবে! আরু ঘর কাঁপিয়ে হাঁসলো। নেলপলিশের ঢাকনা খুলে কিছুটা ঢেলে দিলো হাতে। পাশের ছোট্ট বক্সটা থেকে ব্লেড বের করলো আরু। এই বক্সটায় আরু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি রাখে। হাতটা টেবিলে রেখে, ব্লেড’টায় কিছুটা নেলপলিশ মাখিয়ে, সুন্দর করে ছবি তুললো আরু। ছবি দেখে নিজেই হতভম্ব আরু। একদম রিয়েল মনে হচ্ছে। যেন সবে হাত কে-টেছে কেউ।

ওয়াশরুমে গিয়ে নেলপলিশ তুলে বেড়িয়ে এলো আরু। ছবিটা পাঠিয়ে দিলো রুদ্র’কে। ছোট করে লিখলো,’এখনো বলুন, নেবেন? নাকি নেবেন না?’
এখন অপেক্ষা রুদ্র’র রিয়েকশন দেখার। খুশিতে বাক-বাকুম আরু। খানিক বাদেই মেসেজ সিন করলো রুদ্র। আরু যেন কাঁপছে। একমিনিট, দুইমিনিট, তিনমিনিট গেলো; রুদ্র রিপ্লাই দিলো না। মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো আরুর। ক্রোধে ফেটে পড়লো আরুর মুখশ্রী। মায়াদয়া নেই নাকি লোকটার? আরু ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানায়। এই লোকটাকে আরু বিয়ে করবে না।

সারা রুমে পায়চারি করতে লাগলো আরু। গরমে তরতর করে ঘামছে সে। অসহ্য লাগছে সবকিছু তার। আরু ফ্যানের দিকে তাকালো। এতো আস্তে ঘুরছে কেন এটা? উফফ্!
আরুর মাথায় এলো আরও এক বুদ্ধি। আরু আলমারি থেকে নিল রঙের একটা ওড়না নিয়ে এলো। ঘরের কোনা থেকে বেতের টুল নিয়ে এলো আরু। ফ্যানটা বন্ধ করে,বিছানায় ওপর টুল রেখে তাতে দাড়ালো সোজা হয়ে। সুন্দরমতো ওড়নাটা ফাঁসের মতো বেঁধে নিলো।

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ১৭+১৮

ফোনের ক্যামেরাটা অন করে সে-ই রকমের পোজ দিলো আরু। নাহ, ঠিক ভালো দেখাচ্ছে না। নীল ওড়নার সাথে লাল লিপস্টিক হলে দারুণ হতো। আরু নেমে গাঢ় করে লিপস্টিক দিলো ঠোঁটে। এরপর এসে ভিডিও কল দিলো রুদ্র’কে। রুদ্র রিসিভ করছে না। আরু ফাঁস নেওয়ার ভান ধরে ছবি তুললো কতগুলো। নেমে এসে সবগুলো পাঠিয়ে দিলো রুদ্র’কে। সাথেসাথে সিন করলো রুদ্র। তবে, আগের মতো এবারেও তার মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।

নিষিদ্ধ অনুভূতি পর্ব ২১+২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here