নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১২

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১২
ঝিলিক মল্লিক

“হ্যালো, কন্ট্রোল রুম। লেফটেন্যান্ট আরবিন স্পিকিং হেয়ার।”
আরবিন অফিসে বসে। ওর সামনে ডেস্কটপ কম্পিউটার। হেডসেটে মাইক্রো-স্পিকার। এক হাতের মুঠোয় ওয়াকিটকি। আরবিনের সতর্ক দৃষ্টি সামনে কম্পিউটারের স্ক্রিনে। মাইক্রোফোনের ওপাশ থেকে কন্ট্রোল রুম অপারেটর আশীষ বললো,
“স্যার, আমাদের নেটওয়ার্কে সন্দেহজনক ট্রাফিক শনাক্ত হয়েছে।”
আরবিন প্রশ্ন করলো,
“কতগুলো প্যাকেট ব্লক হয়েছে?”
আশীষ জবাব দিলো,
“প্রায় এক হাজার প্যাকেট প্রতি মিনিটে। মনে হচ্ছে এটা একটা ডি-ডস অ্যাটাক।”
আশীষের কথা শুনে আরবিন দ্রুত মাউসে হাত রাখলো। কম্পিউটারে অন করে রাখা রানিং ফাইল ক্লোজ করতে করতে তড়িঘড়িতে বললো,
“দ্রুত ফায়ারওয়ালের লোগগুলো অ্যানালাইসিস করো। আইপি অ্যাড্রেসগুলো ব্লক করো। নাহলে ওরা আমাদের সব ডেটা হ্যাক করে নেবে।”
“ইয়েস স্যার। কমান্ড এপ্রুভড।”

সময়টা মার্চ মাসের। মাথার ওপরে উত্তপ্ত সূর্য। খা খা রোদ।
আরবিনের রীতিমতো ঘাম ঝড়ছে। খাদি কাপড়ের জলপাই জাতীয় রঙের পোশাক ঘামে ভিজে চটচটে হয়ে গেছে। সকালে নতুন কয়েকজন অফিসারদের ট্রেনিং করিয়ে এখন আবার নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে আননোন হ্যাকারদের হাত থেকে সার্ভার সিস্টেম হ্যাক করা প্রতিহত করছে। একবিন্দু নিজ জায়গা থেকে সরার অবকাশ নেই। আরবিনের ওপর দায়িত্ব পরেছে এই কাজের। এমনকি একটা স্পেশাল টিমের ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব ওকে দেওয়া হয়েছে অথোরিটি থেকে। তাছাড়াও নিজের রুলস এন্ড রেগুলেশনে আরবিন দৃঢ় অবস্থানে থাকে সবসময়। কর্মক্ষেত্রে কঠোরতা ওর দায়িত্বকে ছাড়িয়ে যায়। টিমের সবাই সর্বদা তটস্থ হয়ে থাকে আরবিনের ঝাড়ি খাওয়ার ভয়ে।
গতকাল সকাল থেকে ইন্টারনাল নেটওয়ার্কে অস্বাভাবিক একটা ভিন্ন নেটওয়ার্কের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিল আরবিন। মাত্রই আজ দুপুরের কাছাকাছি সময়ে এসে কনফার্ম হলো, আসলেই এক বা একাধিক ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের একটা টিম ওদের কন্ট্রোলে থাকা নেটওয়ার্ক হ্যাক করার চেষ্টা করছে। ওদেরকে প্রতিহত করার জন্য টানা একদিন একরাত নির্ঘুম রাত্রি পার করে, বিনা খাওয়া-দাওয়ায় নিরন্তর কাজ করে চলেছে আরবিন।
কিছুক্ষণ পরেই কন্ট্রোল রুম থেকে আবারও আপডেট আসলো। এবার কল করেছে কাউসার। ও তাড়াহুড়ায় বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“স্যার, একটা সম্ভাব্য ডেটা ব্রিচের সতর্কতা এসেছে।”
“কোন সিস্টেমে?”
“ ইমেইল সার্ভারে।”
আরবিন শক্ত গলায় বললো,
“দ্রুত সার্ভার লকডাউন করো এবং পাসওয়ার্ড রিসেট শুরু করো।”
আরবিনের নির্দেশনা মোতাবেক কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার কাউসার সার্ভার লকডাউন করে পাসওয়ার্ড রিসেট মারতে লাগলো দ্রুত।
আরবিন একদৃষ্টিতে কম্পিউটারের দিকে চেয়ে আছে৷ আবারও মাইক্রোফোন টেনে মুখের সামনে এনে বললো,
“কন্ট্রোল টু সেকশন আলফা, রিপোর্ট করো।”
ওপাশ থেকে সেকশন আলফা টিমের একজন বললো,

“স্যার, সার্ভার স্টেবিলাইজড। ব্লক করা আইপিগুলো আইডেন্টিফাই করেছি।”
“গুড। সার্ভারের লোগ অ্যানালাইসিস চালিয়ে যাও।”
আরেকজন অফিসার কন্ট্রোল রুম থেকে জানালো, নেটওয়ার্ক টিম, রিয়েল-টাইম মনিটরিং চালু রাখা হয়েছে। যদি আরও আক্রমণ আসে, আরবিনকে অবহিত করা হবে।
তার-ই কিছু সময় পরে আশীষ ওয়াকিটকিতে বললো,
“স্যার, অ্যাটাক থেমে গেছে। আমাদের সিস্টেম এখন নিরাপদ। দুশ্চিন্তার আর কোনো কারণ নেই।”
“গুড জব।। রিপোর্ট তৈরি করে হেডকোয়ার্টারে পাঠাও।”

আরবিন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো যেন। এতক্ষণ শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিল। এসব মধ্যম মানের হ্যাকারদের হাত থেকে সিস্টেম হ্যাক হওয়া বাঁচানো গেলেও মেজাজ এখন মারাত্মক বিগড়ে রয়েছে আরবিনের। একে তো ঘুম হয়নি টানা একরাত, পেটে কিছু পড়েনি গতকাল থেকে; তারওপর আবার একটা বিশেষ গোপনীয় ঘটনা আন্দাজ হওয়ার পর থেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না ও। মস্তিষ্ক আর শরীরের ওপর প্রচুর প্রেশার পরছে।
আরবিন উঠে দাঁড়ালো চেয়ার ছেড়ে। নিজের জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দকৃত স্পেশাল ডেস্ক থেকে বেরিয়ে এলো। টিম মেম্বার ফারিয়া ইতিমধ্যে কিছু স্ন্যাকস নিয়ে এসেছে। সবাই এক জায়গায় উপস্থিত হয়ে শোরগোল করে আলাপ করছে আজকের বিষয় নিয়ে। আজ কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি সবাইকে। এরইমধ্যে গুরুতর আলোচনা স্বাভাবিক হাসি-মজার আড্ডায় পরিণত হলো। ফারিয়া সবার হাতে বার্গারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছে। আরবিনকে দেখে চুপ হলো সবাই। ওকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। ঝাঁকড়া চুলগুলো সামনে কপালের ওপর এসে এলোমেলোভাবে পরে আছে। ফারিয়া এগিয়ে এসে আরবিনের দিকে বার্গারের একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো,

“স্যার এটা আপনার জন্য। খেয়ে নিন।”
আরবিন হাত উঠিয়ে বললো,
“নোপ ফারিয়া। আমি এখন খাওয়ার মুডে নেই। একটু বিশ্রাম নেবো। কেউ ডেস্কে এসে ডিস্টার্ব করবে না। ওকে? বোঝা গেল?”
শেষোক্ত কথাটা আরবিন শক্ত গলায় বললো৷ সবাই ভদ্রভাবে মাথা নেড়ে “আচ্ছা” বোঝালো৷ আরবিন উল্টেদিকে ঘুরে নিজের ডেস্কে চলে গেল। ফারিয়া ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো। খানিকটা চিন্তিতও হলো। যা ওর মুখভঙ্গিতে স্পষ্ট।

আরবিন সবে ডেস্কের রয়্যাল চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বুঁজেছে। তখনই জেনারেল মুডে থাকা সেলফোনটা ক্রিংক্রিং শব্দে বেজে উঠলো। আরবিন দ্রুত উঠে বসলো। বিশ্রাম পরিপূর্ণ না হওয়ার কারণে চোখ লাল হয়ে গেছে ওর। এই মুহূর্তে যে-কেউ দেখলে ভয় পাবে।
সেলফোনটা উঠিয়ে যেই নাম্বার থেকে কল এসেছে, নামটা খেয়াল করে দেখলো আরবিন। খাঁটি বাংলা অক্ষরে “বেয়াদব মেয়েমানুষ” লিখে সেভ করা নাম্বারটা। এই অসময়ে বেয়াদবটার ফোনকল আরবিনের মেজাজ তুঙ্গে উঠিয়ে দিলো। হাতের মুঠো শক্ত করে কল রিসিভ করলো। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপাশ থেকে যেন ঝড় উঠলো।

“হ্যালো। আরবিন বলছেন? নাকি তার ভূত? বেঁচে আছেন আপনি? এখনো মরেন নাই?”
আরবিন চোখ বুঁজে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে বললো,
“সালাম-কালাম কিছু শেখোনি বেয়াদব? ভদ্রতা গুলে খেয়েছো?”
“ভদ্রতা? আর আপনার সাথে?”
রিদির চটপটে কন্ঠস্বর। আরবিন ফোনের এপাশ থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“বেশি বাড় বেড়েছো। আমি কাছে নেই বলে মুখ ছুটছো বেশি তাই-না? কাছে থাকলে বুঝতে।”
“কাছে থাকলে কী করতেন? ওইদিন রাতের মতো কাহিনী করতেন, তাইনা?”
“দুইমাস হয়ে গেছে। তবু ওইদিন রাতের কাহিনী এখনো ভুলতে পারোনি দেখছি। বলেছিলাম না? আমার কথার কখনো নড়চড় হয় না।”

আরবিন ক্রুর হেসে কথাটা বললো। ওই হাসি রিদির শরীরে কাঁটার মতো বিঁধলো। কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গেল ও। সব ঠিক আছে। বাকিসব জায়গায় ও শক্ত। আরবিনের সাথে ত্যাড়ামি করতে পারে। কিন্তু এই একটা জায়গায় এসে আঁটকে যায়, বোবা হয়ে যায় যেন। কোনো যথাযথ প্রতিত্তোর করতে পারে না। রিদি এবার একটু কঠিন হওয়ার চেষ্টা করে বললো,
“ওইদিন রাতের ঘটনা তো আমি কবেই ভুলে গেছি। আপনি যে আমার স্বামী, তা-ও তো ভুলে গেছি।”
“বেয়াদব! সামনে পেলে চ ড়িয়ে দাঁত ফেলে দেবো সবগুলো।”
“আরে আগে সামনে তো আসুন। আমার প্রেমিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। তারপর ওর রূপের আগুনে আপনি পু ড়ে যাবেন। আমাকে চড়ানোর কথাও ভুলে যাবেন সঙ্গে সঙ্গে।”
আরবিন থমকালো। ডেস্কের ওপর শব্দ করে জোরেসোরে হাতটা রাখলো। তাতে বেশ জোরেই শব্দ হলো। দাঁতে দাঁত চেপে ও প্রশ্ন করলো,

“প্রেমিক মানে?”
“আরে প্রেমিক মানে, যেই পুরুষ প্রেমে পড়ে৷ আসলে একটা ছেলে আমার প্রেমে পরেছে৷ প্রপোজও করেছে রিসেন্টলি। গত কয়েকদিন ধরে কনভিন্স করার চেষ্টা করছে।”
“তো তুমি কী করেছো?”
যথেষ্ট শান্ত স্বরে প্রশ্নটা করে আরবিন। ওর কথাবার্তার ভাব গুমোট। যেন ঝড়ের আগের পূর্বাভাস। রিদি পাল্টা জবাব দিলো,
“আমি কী করবো? একসেপ্ট করে নিতাম। কিন্তু আমার স্বামী বেচারা যে এখনো বেঁচে আছে, দেশের জন্য ম’রে যায়নি; এটা তো ভুলিনি। তাই দয়া করে, ওই বেচারা প্রেমিককে ঝুলিয়ে রেখেছি। যেদিন সংবাদ পাবো, আপনি টপকে গেছেন; সেদিন ওই বেচারার প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেবো। তখন হবো আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা। আপাতত নাহয় ও একাই প্রেমিক হোক। কী বলেন?”

“রিদি!”
ফোনের মধ্য থেকে আরবিনের চিৎকার করে দেওয়া ধমকটা রিদির পিলে চমকে দেওয়ার মতো। প্রথমে চমকেও উঠলো ও। বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। পরমুহূর্তেই দু’জনের অবস্থানিক দূরত্বের কথা চিন্তা করে ভয়ডর কাটিয়ে বললো,
“ভালো লাগেনি শুনতে? তাই-না? আমারও ভালো লাগেনি, গত দু’দিন যাবত আমি আপনাকে কন্টিনিউসলি ফোনে একটার পর একটা কল দিয়ে যাচ্ছি, হোয়াটসঅ্যাপে নক দিয়েছি। আপনি আমার মেসেজ সিন করে রেখে দিয়েছেন। রিপ্লাই দেননি। কল রিসিভ করেননি। ইগনোর করে গেছেন। কাকে দেখেছেন ওখানে? কোন মেয়ে? নাম কী কালনাগিনীটার?”

আরবিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিদির কথা শুনলো। তারপর-ই হালকা ঝাঁঝালো সুরে বললো,
“অসময়ে কল কেন করেছো তাই বলো।”
“আগে বলুন আপনি আমার কল, মেসেজ ইগনোর করেছেন কেন?”
“রিদি আমি ব্যস্ত ছিলাম গত দু’দিন। তাছাড়াও তোমার সাথে আমার তেমন কোনো কথা নেই। গত দু-মাসে শুধুমাত্র তোমার খরচা পাঠানো আর পড়াশোনার বিষয়ে টুকটাক খবর নেওয়া ছাড়া আমি আর কোনো বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক ছিলাম না, আর না ভবিষ্যতে কখনো হবো।”
“ওকে ফাইন। আমার-ই তো ভালো৷ জালিমের হাত থেকে বেঁচে গিয়ে শান্তিতে আছি।”
“ফালতু কথা না বলে কাজের কথা বলো।”
“আমার তিন হাজার টাকা লাগবে।”

“কেন?”
“কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।”
“কৈফিয়ত দিতে হবে। তুমি তোমার স্বামীর কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা উড়াবে যখন, তখন অবশ্যই তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে।”
রিদি এবার কিছুটা চিন্তাভাবনা করে বললো,
“টেস্ট এক্সামে ফেইল করেছি। তিন হাজার টাকা দিলে কলেজ থেকে উঠিয়ে দেবে। তারপর এইচএসসি এক্সাম দিতে পারবো। নয়তো না।”
“হোয়াট?! টেস্ট এক্সামে ফেইল করেছো তুমি? হোয়াই?”
“কারণটা আমার মেয়ে ফ্রেন্ডদের কয়েকজনকে জানিয়েছি বুঝলেন। কি বলেছি বলুন তো?”
“আমি কীভাবে জানবো?”
“ও হ্যাঁ তাই তো! আপনার তো জানার কথা নয়। আমি আমার কয়েকজন মেয়ে ফ্রেন্ডকে বলেছি, আমার স্বামী আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না। অলটাইম আমার সাথে কথা বলা লাগবে তার। এমনকি সারারাত ঘুমাতেও দেয় না আমাকে। তাই আমার পড়াশোনার অসুবিধা হয়েছে। এজন্য ফেইল করেছি। ঠিক বলেছি না বলুন?”

“রিদি! তোমাকে আমি সামনে পেলে কি করবো; তুমি জানোও না। আমার অনুপস্থিতিতে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। তোমাকে ছেলেরা প্রপোজ করছে, ইনডিরেক্টলি তুমিও তা একসেপ্ট করে নিচ্ছো, টপার স্টুডেন্ট হয়েও টেস্ট এক্সামে ফেইল করার মতো লজ্জাজনক কাজ করেছো, ফ্রেন্ডদের সামনে এসব বলে আমাকে ছোট করছো! কি করছো না তুমি! একবার জাস্ট আমাকে ছুটি পেতে দাও। ফিরে এসে তোমার এমন অবস্থা করবো, ধারণাও করতে পারবে না।”
রিদি ফোনের ওপাশ থেকে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো৷ হাসতে হাসতে বললো,
“জোক্স অফ দ্য ইয়ার। আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি? খুব অশান্তি লাগছে তাই না? আমাকে সহ্য হচ্ছে না, তবুও সহ্য করে নিতে হচ্ছে। আমার জীবনটা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে আপনিও শান্তিতে থাকতে পারবেন না আরবিন। মনে রাখবেন, নিউটনের থার্ড ল’ — এর কথা।”

আরবিন এপাশ থেকে বললো,
“টাকা বিকাশ করে দেবো বিকালের দিকে। এখন আমি ভীষণ ক্লান্ত রিদি। জ্বালিয়ো না তো আর। এমন কথা বলবো, সহ্য করতে পারবে না।”
“উহু জ্বালাবো তো। আপনাকে জ্বালাতে পারলে আমার শান্তি লাগে। খবরদার! কল কাটবেন না। তাহলে বুঝবো, আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন।”
কথাটা বলে ফোনের এপাশ থেকে আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় রিদি। তখনই ফোনের ওপাশ থেকে আরবিনের ফিসফিসানি কণ্ঠস্বর শোনা যায়—
“ওই রাতের কথা মনে পড়ছে নাকি? আসবো আমি? শাড়ি পরে বসে থাকো। কিস কোথায় নেবে? ঠোঁটে?নাকি গলার ভাঁজের ওই তিলে? নাকি বু..”

আরবিন পুরো কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই রিদি কল কেটে দেয় দ্রুত। আরবিন ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসে। এই মেয়েকে কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়, তা এতোদিনে খুব ভালোভাবে শিখে গেছে ও। নিশ্চয়ই এতোক্ষণে কেঁদেকেটে নাক-মুখ লাল করে ফেলেছে। লজ্জায়, আড়ষ্টতায় কান গরম হয়ে গেছে।
রিদিকে কীভাবে লজ্জায় ফেলে চুপ করানো যায়, সেই টেকনিক আরবিনের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।
আরবিন ফোনটা ডেস্কের ওপর রেখে চেয়ারে আবারও হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে। একটা ছেলের কথা বলছিল রিদি। আরবিনের মেজাজ বেশি বিগড়ে গেছে মূলত ওই কথা শুনেই। এই মেয়ে ওকে এক মুহূর্তও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। যেন জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই আরবিনের জীবনে এসেছে!

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১১

আরবিনের সহ্যক্ষমতা আর নিয়ন্ত্রণ করতে জানার দক্ষতার জন্যই এতোদিন সামলাতে পেরেছে সবকিছু। নেহাতই কাজের চাপ আগামী কয়েকদিনে খুব বেশি। এজন্য অথোরিটি থেকে ছুটিও পাওয়া যাচ্ছে না। শীঘ্রই কাজের চাপ কমলে অথোরিটিতে ছুটির আবেদন করবে আরবিন। আবেদন এপ্রুভ করা হলে ঢাকা যাবে ও। এবার গেলে ওই মেয়েকে উচিত শিক্ষা দিয়ে তবেই ফিরবে!

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১৩