নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১৮

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১৮
ঝিলিক মল্লিক

রিদিকে বাসায় আনা হয়েছে মাত্র। ওকে ওর ঘরে শুইয়ে দিয়ে বসার ঘরে এসে সোফায় বসেছে আরবিন। পাশে আফসানা বেগম। তসবি গুনছিলেন তিনি৷ এতোক্ষণ তানিয়া বেগম আর হালিমা খাতুনও বসেছিলেন সোফায়। আরবিন এসেছে দেখে রান্নাঘরে গিয়েছেন তারা।
আরবিন ওর মায়ের সাথে আলাপ করছে বসে।
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে তানিয়া বেগম আর হালিমা খাতুন। হালিমা খাতুন ফিসফিসিয়ে বললেন,
“কী রান্না করবা আপা? জামাইকে দেখে মনে হলো, কিছু পেটে পরেনি অনেকক্ষণ। চোখ-মুখ শুকনো দেখলাম।”
“সকালবেলা তো৷ নাস্তা তৈরি করি। তার আগে ওকে একটু বিশ্রাম নিতে বলে আসি গিয়ে। দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে, না?”

“হুম। তা-ই তো মনে হলো৷ এখন একটু বিশ্রাম নেওয়া-ই বরং ভালো হবে।”
তানিয়া বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে দাঁড়ালেন। আরবিনের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আব্বা, ঘরে যাও। ঘরে গিয়ে একটু জিরিয়ে নাও। তারপর নাস্তা করে নেবে।”
শাশুড়ীর কথা শুনে আরবিন ইতস্তত করলো। মুখে বললো,
“আসলে বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম।”
তানিয়া বেগম কথাটা শুনে হৈরৈ করে বললেন,
“এখন বাসায় যাবে কেন? তোমার আম্মা এখানে আছেন। আজকের দিনটা থাকো। কাল যেও বরং। আর তোমার আম্মাকেও এখন যেতে দিচ্ছি না।”
আরবিনকে কথাটা বলে আফসানা বেগমের দিকে তাকিয়ে তানিয়া বেগম বললেন,
“আপা, আজ কিন্তু এখনই যাওয়া হচ্ছে না।”
আফসানা বেগম বললেন,
“আচ্ছা, আচ্ছা। থাকলাম নাহয়। আরবিন, আব্বা যাও। গিয়ে জিরিয়ে নাও একটু।”
আরবিন উঠে দাঁড়ালো। তারপর ব্যাগটা কাঁধে টেনে রিদির ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরবিন হাত-মুখ না ধুয়েই বিছানার ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পরেছে। ঘরে এসে রিদিকে পায়নি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলো। এই বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে মেয়েটা যাবে কোথায়?
রিদি দুই মিনিট পর বের হলো বাথরুম থেকে। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে এসেছে ও। আরবিন তা দেখে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে প্রশ্ন করলো,
“এই অবস্থায় একা বাথরুমে গিয়েছিলে কেন? কাউকে ডাক দিতে তো পারতে।”
রিদি আস্তে-ধীরে বিছানায় এসে বসে বললো,
“প্রয়োজন ছিল না। আহামরি কিছু হয়নি আমার৷ একাই দিব্যি হাঁটতে-চলতে পারছি।”
রিদি পা উঠিয়ে বসলো বিছানায়। হাত বাড়িয়ে বালিশ নেওয়ার চেষ্টা করতেই আরবিন ওর ডানপাশ থেকে বালিশ নিয়ে এগিয়ে দিলো রিদির কোলের ওপর। রিদি সেটা নিয়ে বিছানার বাঁ পাশে রেখে আধশোয়া হলো। আরবিন আর ওর মধ্যে এখন মাত্র এক হাত সমান দূরত্ব৷ ঘাড় ঘুরিয়ে আরবিনকে বললো,

“একটু সরুন ওদিকে। আমি ঘুমাবো।”
“এই অসময়ে ঘুমাবে কেন? কী হয়েছে?”
“জানি না। চোখ ভার লাগছে খুব৷”
“আচ্ছা ঘুমাও। দেখি, কাছে আসো।”
কথাটা বলেই আর রিদির জবাবের অপেক্ষায় বসে থাকলো না আরবিন। রিদির বালিশ সমেত ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। তারপর একই বালিশে মাথা রেখে বললো,
“একটা বালিশ নিয়ে ঘুমাও কীভাবে ভাই? আমার তো মাথায় একটা, কোলবালিশ একটা, পায়ের কাছে একটা আর ডান হাতের কাছে একটা লাগে৷”
আরবিনের কথা শুনে রিদি জবাব দিলো,
“আপনার মতো জমিদার নাকি আমি? আর আপনি সরে ঘুমান। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
আরবিন সরলো না। একইভাবে বুকে দুইহাত রেখে চোখ বুঁজে শুয়ে রইলো৷ রিদি ওর দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কন্ঠ খাদে নামিয়ে ধারালো গলায় প্রশ্ন করলো,

“আপনি সিগারেট খেয়ে এসেছেন তাই-না?”
“হু। বেনসন আর মালবোরো ব্র্যান্ডের। কেন তুমি খাবে?”
“ছিহ! জঘন্য। আপনার প্রতি মায়াদয়া করে তা-ও একটা বালিশ শেয়ার করে নিতাম এই মুহূর্তে। কিন্তু এখন প্রশ্নই আসছে না। সরুন। আগে সরুন!”
রিদি এক হাত দিয়ে ঠেলে আরবিনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোনোভাবেই সরাতে পারলো না ওই শক্তপোক্ত শরীরটা। আরবিন নিজেই স্বেচ্ছায় সরে একপাশে হাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হলো। রিদি ওড়নাটা আলতোভাবে টেনে ভালোভাবে শরীরের ওপর ফেলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। পরমুহূর্তেই হতচকিত হলো ও। আরবিন চোখের পলকে রিদির কাছাকাছি এসে শুয়েছে। আধশোয়া হয়েই চেয়ে আছে ওর দিকে। রিদি হতভম্ব হয়ে দেখতে লাগলো ওকে। বিরবির করে বললো,

“কী হয়েছে? কী চাই?”
আরবিন কোনো কথা বললো না। একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ রিদির দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর তাকালো ঘরের দরজার দিকে। দরজার দিকে তাকিয়ে আরবিন নিশ্চিন্ত স্বরে বললো,
“নাহ, দরজা আটকানো আছে তাহলে।”
কথাটা শেষ করেই হাতের আর্মি ওয়াচ, পরনের জলপাই রঙের টিশার্ট টেনে শরীর থেকে খুলে ফেললো আরবিন। ওর উদম শ্যামলা গাত্রবর্ণের খোলা বুকের পশম দেখা মাত্র লজ্জায়, আড়ষ্টতায় চোখ নামিয়ে নিলো রিদি। কই! সেদিনও ওইযে প্রথম রাতে আরবিন ওর কাছে এসেছিল। এভাবে তো সেদিন খালি গায়ে ছিল না। শুধুমাত্র রিদির গলায়, ঠোঁটে আর শরীরের কিছু ব্যক্তিগত স্থানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছিল। নিজেকে অনাবৃত করেনি। তবে আজ কেন?
প্রশ্নটা মনে আসার সাথে সাথেই রিদির মস্তিষ্ক যেন ঝংকার তুললো মুহূর্তের মধ্যে। ও দ্রুত হাত বাড়িয়ে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,

“নো আরবিন। কাছে আসবেন না। প্লি..”
পুরো কথা শেষ করতে পারলো না রিদি। তার আগেই আরবিন ওকে সম্পূর্ণভাবে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে নিতেই রিদি ছটফটিয়ে উঠলো। কোনোমতে বহুকষ্টে বলে উঠলো,
“আরবিন, সিগারে..ট”
ওর কথা শেষ করতে দিলো না আরবিন। তার আগেই আবারও গভীরভাবে ওর নরম ঠোঁটের ভাঁজে নিজের পোড়ানো ঠোঁট চেপে ধরে রাখলো বহুক্ষণ। তারপর ফিসফিসিয়ে রিদির কানের কাছটায় মুখ রেখে বললো,
“সিগারেটের চেয়ে ঠোঁটের স্বাদ বেশি।”
রিদি কম্পিত কন্ঠে প্রশ্নে করে,
“কার..?”
আরবিন একইভাবে জবাব দেয়,
“তোমার।”
রিদি ঠেলে আরবিনকে সরিয়ে দিতে যায়। আরবিন ওকে টেনে কাছে এনে খোলা বুকে মাথা চেপে ধরে বললো,
“ঘুমা বাপ। আমাকেও একটু ঘুমাতে দে। আর জ্বালাবি না।”

রিদি চুপ করে আরবিনের বুকের মধ্যে শুয়ে রইলো। নড়াচড়া করলো না আর একটুও। আরবিন কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমে বিভোর হলেও রিদির চোখে ঘুম আসলো না। ও স্থির চাহনিতে একদৃষ্টে আরবিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরবিনের নাক, মুখ, চোখ, থুতনি, চওড়া কপাল, এলোমেলো চুল, সবশেষে সিগারেট খেয়ে খেয়ে পুড়ে বেগুনি বর্ণ ধারণ করা ঠোঁট — সবকিছু অবলোকন করলো ধীরেসুস্থে। রিদির হঠাৎ কান্না পেল ভীষণ। ইশশ! এতো সুন্দর একজন মানুষকে পেয়েও পাওয়া হলো না। ওদের তিন কবুলের জোর কী এতোটাই ঠুনকো? যে তিনটা মাসেও দুজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা শক্তপোক্ত বন্ধন তৈরি হতে পারলো না! বরং ধীরেধীরে কাছে এসেও দূরে সরে যাচ্ছে ওরা। কাছে থাকলে মনে হচ্ছে, আরেকটু কাছাকাছি থাকি। আরো কাছে যাই। কিন্তু দূরে থাকলে মনে হয়, দূরত্ব বাড়ানো-ই শ্রেয়। ভালো থাকা যায় বটে। এর শেষ সমাধান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কী নাম দেবে রিদি এই সম্পর্কের? এর শেষ পরিণতি কী হবে?

রিদির জানা নেই। জানতেও চায় না ও। এসব নিয়ে ভাবলেই ওর মাথা ব্যাথা হয়। মাইগ্রেনের ব্যাথা বেড়ে যায়। মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যেতে চায়।
রিদি আরবিনের গলার কাছে গাল ঘেঁষে শুয়েছে৷ আরবিন যখন ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে ওঠে, চোখের পাতা কেঁপে কেঁপে ওঠে; তখন দুনিয়াদারি সবকিছু ভুলে শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখতে ইচ্ছা হয়। আরবিন অনেকটা সময় ঘুমিয়ে চোখ খুললো যখন, রিদি তখনও সজাগ। ও আরবিনের দিকেই চেয়ে ছিল এতো সময়। রিদি এবার কিঞ্চিৎ অনুরক্তি নিয়ে আরবিনকে জিজ্ঞাসা করে,
“আচ্ছা, এই জবটা কী সবকিছুর চাইতে আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?”
আরবিন সবে কাঁচা ঘুম ভেঙে সজাগ হয়ে এমন একটা প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সরু চোখে রিদির দিকে তাকিয়েই জবাব দেয়,

“হুঁ অবশ্যই। যেখানে আমার নিজের জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে আমি এই পেশাকে বেছে নিয়েছি, সেখানে এর চাইতে জটিল উত্তর আমার মনে হয় না আর হতে পারে৷ তোমার কী মনে হয়?”
“আমার ভয় হয় আরবিন।”
“কীসের এতো ভয় তোমার?”
“আপনার যদি কখনো কিছু হয়ে যায় তখন?”
“তোমাকে এতো অল্প বয়সে এই ছোটো মাথায় এতোসব আজগুবি, আজেবাজে চিন্তাভাবনা ঢুকাতে বলেছে কে? নামটা জাস্ট বলো। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।”

“আমাকে কেউ কিছু বলেনি আরবিন। আমার নিজের একটা বোধ আছে। কাকাইয়ের মা’রা যাওয়ার পরে কাকিমণি আর ভাই-বোনদু’টোর অবস্থা আমি দেখেছি৷ কতো সংগ্রাম, সমাজের রোষানল থেকে বেঁচে তারা সবসময় একটা ঠাঁই নেওয়ার জায়গা খুঁজে গেছে। কাকাই তো এই সো কল্ড দেশের জন্য ম’রে খালাস। একবারও কোনোদিন নিজের স্ত্রী-সন্তানদের কথা ভাবেনি। আপনার কী মনে হয় না? আপনিও সেই কাতারেই পরেন?”
আরবিন কিছুক্ষণ নিরব দৃষ্টিতে রিদির প্রশ্নসূচক, উদ্বিগ্ন মুখখানার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর হালকা হেসে জবাব দিলো,

“মরতে তো একদিন না একদিন আমাদের সবারই হবে৷ সেই দিক বিবেচনায় করলে তো আমরা রাস্তায় চলাচলও করতে পারবো না। যদি একটা ট্রাক এসে মে’রে উড়িয়ে দেয়। কী তাই-না?”
রিদি চুপ হয়ে গেল। ও জানে, আরবিনের সাথে তর্কে পারবে না ও। ওর যুক্তি যতই সঠিক হোক না কেন; এই লোক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ওকেই ভুল প্রমাণ করবে। রিদি শোয়া থেকে উঠে বসলো ধীরে ধীরে। ওড়নাটা বালিশের পাশ থেকে তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো। আরবিন তখন ফোন স্ক্রল করছিল। রিদি বিছানা থেকে নামতে নামতে সতর্ক করে বললো,

“আপনার যদি ওই জবের জন্য সামান্য কিছুও হয়ে যায়, সেদিন আমি নিজেকে বিধবা দাবি করবো।”
আরবিন কোনো জবাব দিলো না। নির্লিপ্তভাবে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। রিদি দরজার কাছে যেতেই বললো,
“এক কাপ চা করে এনো তো। সারারাত না ঘুমিয়ে গলা ধরেছে।”
“চিনি ছাড়া? নাকি চিনি বেশি?”
“চিনির দরকার নেই। আমি চিনি কম খাই। তবে তুমি চাইলে এক চুমুক খেয়ে তারপর দিতে পারো। ওতে স্বাদটা পারফেক্ট হবে।”
“এতো ফালতু কথাবার্তা আপনি বলেন কেন? মানে আপনার মাথায় আসে কীভাবে?”
“তোমাকে দেখে।”
আধশোয়া হয়ে কথাটা বলে রিদির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসে আরবিন৷ রিদি হাতে থাকা তোয়ালেটা ওর মুখের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত তানিয়া বেগম আর হালিমা খাতুন। হালিমা খাতুন ফ্লোরে টুল পেতে বসে সবজি কাটাকুটি করছেন। তানিয়া বেগম রান্নার দিকটা দেখছেন। আর আফসানা খাতুন সেখানেই একপাশে একটা চেয়ারে বসে গল্প করছেন তাদের সাথে। সোহরাব হোসেন আর ইকবাল জম্মাদার বেরিয়েছেন বাইরে৷
রিদি রান্নাঘরে ঢুকেই শাশুড়ীকে দেখে সালাম দিলো। আফসানা বেগম সালামের জবাব দিয়ে ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন। উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুখে হাত রেখে বললেন,
“মুখটা শুকিয়ে গেছে। একদিনের মধ্যে মেয়েটার কি অবস্থা হয়ে গেল! ব্যাথা কী বেড়েছে আম্মা?”
“না। ব্যাথা তেমন নেই। হাঁটতে-চলতে পারছি ঠিকমতো।”

আফসানা বেগম রিদিকে ছাড়তেই ও এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“দেখি আম্মা, সরো তো। উনার জন্য চা বানাবো।”
তানিয়া বেগম আশ্চর্য হয়ে বললেন,
“তুই উঠে আসতে গেলি কেন? আমাকে বললে আমিই বানিয়ে পাঠিয়ে দিতাম ঘরে।”
“না আম্মা। তুমি বানালে হবে না। আমিই বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
তানিয়া বেগমকে সরিয়ে দিয়ে পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যে চা বানিয়ে সুন্দর মতো পরিবেশন করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল রিদি। সবাই ওর কান্ড দেখে মুচকি হাসলো।

রিদি চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে বসে আছে। আরবিন চা চুমুক দিয়ে খেয়ে দেখছে। রিদির অধীর আগ্রহ সেদিকেই। আরবিন এক চুমুক খাওয়ার পরে বললো,
“চিনি দাওনি?”
“আপনিই তো দিতে নিষেধ করলেন।”
“আরে ওই চিনি না। যেই চিনি দিতে বলেছিলাম, সেটা দাওনি?”
“উহুঁ।”

রিদি চুপ করে নতমুখে বসে রইলো৷ আরবিন ওর দিকে চায়ের কাপটা উঁচু করে ধরে বললো,
“নাও, চিনি মিশিয়ে দাও এতে।”
রিদি এবার মুখ উঠিয়ে জবাব দিলো,
“পারবো না।”
“অনুরোধ করছি।”
“বিষ মিশিয়ে দিই?”
“তুমি দিলে বিষও অমৃত লাগবে।”
রিদি কিছু হতবাক, হতভম্ব হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আরবিনের মুখের দিকে। রসিকতা করছে নাকি!
“এতো ফ্লার্টিং কীভাবে করেন আপনি? মানে এনার্জি পান কোথা থেকে? নিশ্চয়ই জীবনে অনেকগুলো প্রেম করেছেন শিওর।”

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১৭

ঝাঁঝালো সুরে কথাটা বলেই আরবিনের হাত থেকে চায়ের কাপটা একপ্রকার কেঁড়ে নিলো রিদি। তারপর এক চুমুক চা খেয়ে আবারও আরবিনের হাতে ধরিয়ে দিলো কাপটা। তারপর উঠে দাঁড়াতেই আরবিন ওর হাতটা টেনে ধরার চেষ্টা করে বললো,
“ওই আমার দেশলাই কাঠি, কথায় কথায় এভাবে ছ্যাঁত করে জ্বলে ওঠো কেন? আরে শুনে তো যাও!”

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১৯