নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২২

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২২
ঝিলিক মল্লিক

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? এখন কী অবস্থা ওর? সামথিং সিরিয়াস?”
আরবিন চিন্তিত ভঙ্গিতে ঘরময় পায়চারি করতে করতে ফোনটা কানে আরো শক্ত করে চেপে ধরে প্রশ্নটা করলো। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি কিছু একটা বলে উঠতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো আরবিন। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পরলো ওর৷ আরবিন ফোন কানে ধরে রেখেই আরো কিছুক্ষণ পায়চারি করলো ঘরময়। তারপর গিয়ে বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ও। কিছুটা সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বললো,

“ওকে আসছি আমি। আজ-ই রওয়ানা হচ্ছি। সবাই সাবধানে থাকার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে কমান্ডারের সাথে কনট্যাক্ট রানিং রাখো। আর একা কোথাও যাতায়াত কোরো না এই মুহূর্তে। প্লিজ, বি সেইফ। ডেটাগুলো যেন একটাও এদিক-ওদিক না হয়!”
আরবিন কল কাটলো। পরনের সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি দ্রুত টেনে খুলে গামছা বের করে নিতে নিতে চেঁচিয়ে ডাকলো,
“রিদি ও রিদি, ঘরে আসো তো দ্রুত।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদি রান্নাঘরে ওর শাশুড়ির পাশে একটা টুলে বসে গল্প করছিল। আফসানা বেগম রান্নার কাজে ব্যস্ত। আড়াইটা পেরিয়ে গেছে। দুপুরের রান্না প্রায় শেষের দিকে। রিদি হাতে হাতে সাহায্য করতে চাইলেও আফসানা বেগম সাফ মানা করে দিয়েছেন। একারণে রিদি তার পাশে বসে গল্প করছে। দু’জনের মধ্যে বেশ ভালো সখ্যতা গড়ে উঠেছে।
আরবিনের ডাক শুনে রিদি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। কাল রাতে সে-ই যে দু’জন মাঝখানে কোলবালিশ রেখে একে-অপরকে মুখ ঝামটা দিয়ে ঘুমিয়েছে, তারপর থেকে আর তেমন কোনো কথাবার্তা হয়নি দু’জনের মধ্যে। রিদি তো না পারতে আরবিনের সামনেই যায়নি। ভোরবেলা উঠে লাগেজ থেকে একটা উপন্যাসের বই বের করে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসেছে। সকাল হওয়া পর্যন্ত সেটা কোলের ওপর নিয়েই বসেছিল রিদি। তারপর থেকেই শাশুড়ির আঁচল ধরে ঘুরছে। ঘুনাক্ষরেও ওঘরে যাওয়ার কথা ভাবেনি।
আরবিনের ডাক শুনেও রিদিকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আফসানা বেগম বললেন,

“ও মা, আরবিন বোধহয় ডাকছে তোমাকে। শুনে আসো তো।”
এবার আর ডাক উপেক্ষা করা গেল না। রিদি উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিলো। কিছুটা বিড়ম্বনা, কিছুটা বিরুদ্ধাচারণ নিয়ে..

আরবিন নিজের লাগেজটা বের করে তার ভেতরে থাকা সামান্য জামাকাপড়গুলো এলোমেলো করে দেখছিল। গতকালই আসার পরে লাগেজ আর খোলা হয়নি একেবারের বেশি। জামাকাপড়ও বেশিরভাগ সব ভেতরেই ছিল। রিদি ততক্ষণে আরবিনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। উঁকি দিয়ে দেখছে, আরবিনের কর্মকাণ্ড। আরবিন এবার ঘাড় ঘুরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রিদি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
“ডাকছিলেন?”
“হুঁ।”
আরবিন আলমারিতে কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে রিদির প্রশ্নের জবাব দেয়। রিদি ওর পেছন পেছন এগিয়ে গিয়ে বলে,
“কী হয়েছে? কী খুঁজছেন? আমাকে বলুন।”

“আমার ঘর, জিনিসপত্র আমার। তুমি এখানে এসেছো মাত্র একদিন হলো। তাহলে তুমি কীভাবে জানবে আমার জিনিসপত্র কোথায় কোনটা আছে? আমি নিজেই খুঁজে নিতে পারবো।”
রিদির কপট রাগ হলো। ঠোঁট চেপে রাগান্বিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আরবিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও আরবিন তা খেয়াল করলো না। রিদি এবার বেশ শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
“খুঁজছেনটা কী?”

“আমার আর্মি ওয়াচটা পাচ্ছি না। কোথায় যে রাখলাম। ধ্যাততেরি! কাজের সময় কিছু পাওয়া যায় না।”
আরবিন বিরক্ত হয়ে পুরো ঘরময় জিনিসটা খুঁজতে ব্যস্ত হলো। রিদি কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো। তারপর-ই বিছানার ওপর ফিট করে রাখা আরবিনের লাগেজটার দিকে এগিয়ে গেলো। সেকেন্ডের মধ্যে শার্ট-প্যান্ট হাতড়ে ভেতর থেকে জিনিসটা বের করে রিদি জোরে গলায় বলে উঠলো,
“এইযে মহাশয়, আপনার ওয়াচ। খুব তো মেজাজ দেখাচ্ছিলেন খুঁজে পাবো না বলে। চোখের সামনে থাকতেও আপনি খুঁজে পেলেন না। আর আমি আসা মাত্রই খুঁজে দিলাম।”
আরবিন দ্রুত এগিয়ে আসলো রিদির দিকে। তারপর রিদির হাত থেকে ঘড়িটা নেওয়ার জন্য হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,

“উফফ! অবশেষে!”
আরবিন ঘড়িটা নিতে যাবে, তখনই রিদি ছিটকে হাতটা দূরে সরিয়ে নিয়ে দাঁড়ালো। আরবিন ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। রিদি এবার বললো,
“থ্যাংকস বলুন। নাহলে পাবেন না আপনার ঘড়ি।”
আরবিন কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। পরপরই মুহূর্তের মধ্যে এগিয়ে গিয়ে রিদির ডান গালে তড়িৎ গতিতে একটা চুমু খেলো। আচমকা কর্মকান্ডে রিদির শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা বরফের মতো স্পর্শ অনুভূত হলো যেন। রিদির অস্থিরতা আর বেখেয়ালি ভাবের সুযোগে আরবিন ওর হাত থেকে ঘড়ি কেঁড়ে নিয়ে ক্রুর হেসে বললো,
“থ্যাংকসও দিয়ে দিলাম, আর ওয়াচও নিয়ে নিলাম। ইক্যুয়াল-ইক্যুয়াল।”
রিদি আরবিনকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর গিয়ে আসন দিয়ে বসলো৷ তারপর বসে বসে একনাগাড়ে আরবিনের কাজকর্ম দেখতে লাগলো৷ আরবিন আলমারি থেকে নিজের শার্ট-প্যান্ট নিয়ে সব লাগেজে ভরছে। তা দেখে রিদি প্রশ্ন করে,

“কী ব্যাপার? এসব এখন রাখছেন কেন লাগেজে?”
“আজ-ই ক্যান্টনমেন্টে ফিরবো।”
“আজ-ই ক্যান্টনমেন্টে ফিরবেন মানে? তারমানে আপনি চলে যাবেন?”
প্রশ্নটা করে মনে মনে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয় রিদি। আরবিন ক্যান্টনমেন্টে কি তাহলে একা-ই চলে যাবে এখন? গেলে তো ভালোই হবে। রিদি শান্তিতে থাকতে পারবে কিছুদিন।
কিন্তু রিদির মনে মনে করা সকল পরিকল্পনা আর ভাবনা বানচাল করে দিয়ে আরবিন বলে ওঠে,
“তোমাকে নিয়ে ফিরবো আজ। আম্মার রান্না হয়েছে? দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালের দিকে বের হবো। মাইক্রোবাস ভাড়া করেই যাবো। এখন ড্রাইভারকে একটা কল করা জরুরি।”
রিদিকে বলে ফোনটা আবার ড্রয়ারের ওপর থেকে উঠিয়ে তাতে মনোযোগী হয় আরবিন। রিদি দ্রুত বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরবিনের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
“এখন কেন যাবেন এখান থেকে? আমাদের না আট-দশ দিন এখানে থাকার কথা ছিল? তাহলে এই অসময়ে কেন যেতে হবে?”

“ইমিডিয়েট প্রয়োজন পরেছে তাই যেতে হবে রিদি। ওখানে আমার দু’জন কলিগের ওপর পরপর হা’মলা হয়েছে। একজনের তেমন কিছু হয়নি। আরেকজন সিলেট এম ও জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হসপিটালে অ্যাডমিট। এটা আমাদের প্রফেশনের একটা ইন্টারনাল ইস্যু। আর সিরিয়াস ম্যাটার। আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্বে সার্বিকভাবে আমিই আছি৷ তাই এখন আমার সেখানে যাওয়াটা জরুরি। আমি না গেলে ভয়াবহ কিছু একটা ঘটার আশংকা রয়েছে।”

রিদি এবার বেঁকে বসে হা’মলার কথা শুনে। আরবিনের দুই হাতের বাহু চেপে ধরে হঠাৎ। ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
“আপনি বলেছিলেন, আপনাদের প্রফেশনে লাইফ রিস্ক নেই। আপনারা সরাসরি যুদ্ধে মদদ দেন না, বা শত্রুপক্ষের সাথে কোনোরকম মিশনে জড়ান না৷ তাহলে আপনাদের সেক্টরের আপনার-ই কলিগের ওপরে হা’মলা হয় কীভাবে আরবিন? তারমানে আপনার ওপরেও হা’মলা হওয়ার আশংকা আছে?”
রিদির প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারে না আরবিন৷ কারণ, এই প্রশ্নের কোনো যৌক্তিক জবাব ওর কাছে নেই। বরং, আশংকটা যেন এতটুকুও অযৌক্তিক নয়। ভীষণ যুক্তিযুক্ত। যেহেতু আরবিন এই স্পেশাল টিমের ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্বে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। বহুবারই তো সেনাবাহিনীর অপারেশন টাইমে ওদের স্পেশাল টিম সাইবার সাপোর্ট দিয়েছে। আর এটা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা না হলেও, আক্ষরিক অর্থে দেখতে গেলে কোনো অংশে কম নয়। বরং একটা বিশেষ কারণের জন্য, আইটি ও সাইবার সিকিউরিটি অফিসারদের অনেকেরই লাইফ রিস্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সবসময়।

আরবিন সরে যেতে চাইলো। আর রিদির প্রশ্নকে এড়াতেও। কিন্তু রিদি বড্ড বেশি নাছোড়বান্দা। আরবিনকে ছাড়লো না। ওর আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে দূরত্ব ঘুচিয়ে নিলো। আরবিনের চোখে চোখ রেখে করুণ দৃষ্টিতে বললো,
“বলুন না আরবিন। আপনার লাইফ রিস্ক আছে তাই-না?”
রিদি জবাবের আশায় একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আরবিনের মুখপানে। তবে আরবিন কোনো জবাব দিলো না। রিদি তখন সরে আসলো। নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও এগোলো। দুই মিনিটে ফোনের ভেতরে কিছু একটা কাজ করেই আরবিনের সামনে ফোনটা তুলে ধরে প্রশ্ন করে,

“লাইফ রিস্ক যদি না-ই থাকে; তাহলে এসব কী?”
রিদির ফোন স্ক্রিনে গুগল অ্যাপসের ভেতরে দেখা যাচ্ছে — আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে একজন আইটি ও সাইবার সিকিউরিটি অফিসারকে জ বাই করে হ ত্যা করা হয়েছিল, সেই নিউজ। সেই অফিসারকে হ ত্যা করার কারণ ছিল, তার কাছে বেশকিছু সিক্রেট ইনফরমেশন মজুদ ছিল সেনাবাহিনীর। সে জানতে সিক্রেট ডেটাবেসের ব্যাপারে। এমনকি দেশের নিরাপত্তা সেক্টরের বিরাট একাংশের দায়িত্ব তার টিমের ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। শত্রুপক্ষের হাতেই নিহত হয়েছিলেন সেই অফিসার। রিদি ফোনে আরো ঘেঁটে দু’টো-তিনটে এমন বহু আগের নিউজ আরবিনকে দেখালো। তারপর বললো,
“আমার চোখে পর্দা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্ধ মানুষও উপলব্ধি করতে পারে। সেখানে তো আমি পরিষ্কার দেখতে পাই সবকিছু!”
আরবিন রিদির প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে বললো,
“আম্মার রান্না হয়েছে কিনা দেখে আসো তো। আমি গোসল সেরে আসি। আর শুনে ঘরে এসে সবকিছু গুছিয়ে নাও। তোমার লাগেজ গোছানো আছে না?”
“হু।”
অস্পষ্ট জবাব দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রিদি। আরবিন গামছা নিয়ে বাথরুমে ঢোকে।

ইকবাল জম্মাদার ছেলের সাথে আলাপ করছেন সোফায় বসে।
আফসানা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল মুখে চেপে সুর করে কাঁদছেন। রিদি গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আফসানা বেগম রিদির হাত শক্ত করে ধরে রেখে বললেন,
“দেখলে মা? ছেলেটা এসে পারলো না দুইদিন, এখনই আবার চলে যাবে। এটা কেমন কথা বলো তো?”
রিদি যেন এবার মনমতো কথা বলার সুযোগ পেল৷ আফসানা বেগমকে বললো,
“আমিও তো সেটাই বলছি আম্মু৷ এখন যাওয়ার কী দরকার বলুন? আর আমারও তো সেভাবে বেড়ানো হলো না এ বাড়িতে। তারচেয়ে একটা কাজ করলে ভালো হয় না?”
“কী কাজ?”

আফসানা বেগম কান্না থামিয়ে মুখ থেকে আঁচল সরিয়ে প্রশ্নটা করেন। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পেরে রিদির চোখদুটো চকচক করে ওঠে। ও যেন প্রস্তুত-ই ছিল জবাব দেওয়ার জন্য। এবার বেশ সাড়ম্বর করে বললো,
“উনি আর আমি চলে গেলে তো আপনারা সেই আগের মতো একা হয়ে যাবেন। তারচেয়ে আমি বরং আপনাদের কাছে থাকি, আর উনি নাহয় যাক?”
“না, না! তা কী করে হয় মা? তোমাদের বিবাহিত জীবনের প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল। আর কতদিন আলাদা থাকবে তোমরা? থাক, আমাদের বুড়ো-বুড়ির একা থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না। তুমি আমার বাজানের সাথে ক্যান্টনমেন্টে যেয়ে সুন্দরমতো সংসার করো।”
রিদি আর কোনো কথা বলার অবকাশ না পেয়ে চুপ হয়ে যায়। এদিকে আরবিন ব্যস্ততা দেখাচ্ছে ভীষণ। ড্রাইভার কল দিচ্ছে বারবার। নিচে এসে সময়ের আগে থেকেই অপেক্ষা করছে। আব্বার সাথে কথা বলা শেষ করে এবার আম্মার কাছে এগিয়ে আসলো আরবিন। আফসানা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আরবিন ওর আম্মাকে শান্ত করতে বললো,

“আম্মা তুমি মন খারাপ কোরো না। আমরা আবারও দুই-তিন মাসের মধ্যে আসবো এখানে। যেহেতু আমি ছুটি কাটিয়ে যাচ্ছি না।”
মুখ উঠিয়ে আরবিন রিদির উদ্দেশ্যে বলে,
“ঘরে যেয়ে তোমার লাগেজগুলো বাইরে নিয়ে এসো।”
রিদি ঘরের দিকে এগিয়ে যায় লাগেজ আনার উদ্দেশ্যে। আফসানা বেগম আজ ওকে একটা আকাশি রঙা শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন। সাথে লাল-খয়েরি জামদানী ব্লাউজ। জুয়েলারি বলতো কালো চোকার সেট।
রিদির আজ তেমন অস্বস্তি হচ্ছে না। কতক্ষণ না হয়, তা সম্পর্কে সন্দিহান ও!

সাদা মাইক্রোবাসটি ছুটে চলেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে। ঘড়ির কাটায় সময় এখন রাত আটটার ঘর ধরে এগিয়ে চলেছে টিকটিক শব্দ করে৷ কয়েক হাজার টাকায় ভাড়া করা এই মাইক্রোবাসটিতে লোকসংখ্যা বলতে শুধুমাত্র ড্রাইভার, আরবিন আর রিদি। রিদি আশেপাশের প্রকৃতি দেখছে৷ যাত্রা দীর্ঘ হবে— এতটুকু বুঝে নিয়েছে ও। বেরিয়েছিল চারটায়। তখনই মাইক্রোর ভেতরে এক ঘুম দেওয়া হয়ে গেছে ওর। তাই এখন আর ঘুম আসার কোনো প্রশ্ন-ই আসছে না। রিদি বিরক্ত হচ্ছে খুব। ওদিকে পাশের সিটের মানুষটা হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে শুয়ে আছে। ক্লান্ত বুঝি অনেক। রিদি আর বিরক্ত করছে না আরবিনকে।

সড়কপথটা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের কাছাকাছি। মাধবপুর থেকে অলিপুর পর্যন্ত প্রায় পনেরো কিলোমিটারের এই সড়ক খুবই নির্জন। বসতবাড়ি হাতেগোনা কয়েকটা চোখে পরে কয়েক কিলোমিটার পরপর। বাকিসব ধানি জমি, নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর আর বন-জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। গাড়িও রাতের বেলা এই সড়কপথটুকু দিয়ে খুবই কম চলাচল করে। বিপদের আভাস তখনও পাওয়া যায়নি। দুর্ভাগ্যবশত বিচক্ষণ এবং তীক্ষ্ম বুদ্ধির আরবিন ক্লান্তভাবে শুয়ে থাকার কারণে তৎক্ষনাৎ বুঝে উঠতে পারলো না, কি হতে চলেছে সামনে! আর রিদি তো এসব ধারণায়ও রাখে না। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল নিজের তালে।
মাইক্রোবাসটা যখন মাধবপুর অঞ্চলের আরো ভেতরে প্রবেশ করে বন-জঙ্গলের মধ্যবর্তী সড়কপথ দিয়ে চলতে শুরু করলো, তখনই হঠাৎ থেমে দাঁড়ালো মাঝপথে। আরবিন চমকে উঠে বসলো৷ কৌতূহলী হয়ে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলো,
“কী হয়েছে ব্রাদার? এ্যনি প্রবলেম?”
“ভাই, সামনে দ্যাখেন!”

ড্রাইভার সামনে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো। আরবিন আর রিদি সামনে তাকালো। দেখলো, পেছন থেকে একটা লেগুনা এসে সামনে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে পুরো রাস্তা ব্লক করে দিয়েছে। মাইক্রোবাসের হেডলাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে, লেগুনার ভেতর থেকে দু-চারজন লোক বেরিয়ে আসছে কালো কিছু একটা হাতে করে। ভালোভাবে সরু দৃষ্টিতে খেয়াল করতেই চমকে উঠলো আরবিন। ওদের হাতে পিস্তল! দূর থেকে মনে হচ্ছে— হ্যাঁ, খেলনা নয়; আসল পিস্তল। এসবের সাথে আরবিনের পরিচিতি বেশ ভালো। তাই চিনতে অসুবিধা হলো না। ষন্ডা গোছের লোকগুলো মুহূর্তের মধ্যে মাইক্রোর কাছে এগিয়ে এসে মোটা গলায় চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
“ভেতরে যারা আছো, বাইরে বেরিয়ে আসো।”
আরবিন হাত তুলে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে আসলো। রিদি আসতে চাইলেও ওকে চোখ রাঙিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে ইশারা করলো। ড্রাইভারকে বের হতে বললো না লোকগুলো। আরবিনকে দেখে একজন এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“লেফটেন্যান্ট আরবিন আল তৈমুর?”
“ইয়েস! লেফটেন্যান্ট আরবিন আল তৈমুর ফ্রম দ্য আইটি এন্ড সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট অব দ্য বাংলাদেশ আর্মি। বাট, হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
“আমাদের ওই সিক্রেট ডেটাবেস চাই।”
“কোন সিক্রেট ডেটাবেস? আমার কাছে কোনো সিক্রেট ডেটাবেস নেই।”
আরবিন হাত নামাতে যায়। কিন্তু ওরা পিস্তল উঁচিয়ে চোখ রাঙিয়ে হুশিয়ারি দিতেই আরবিন সাবধান হয়ে গেল। তারপর লোকগুলো আবারও বললো,
“আমরা জানি তোমার কাছেই আছে।”
আরবিন এবার হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে,
“ভাই, বলদ নাকি তোমরা? আমি ছুটিতে বাসায় এসেছিলাম নিজের বউকে নিতে। সেখানে ডেটাবেস নিয়ে কী আমি মুড়ি খাবো?”

আরবিনের কথা শুনে লোকগুলো এবার দ্বিধাদ্বন্দে পরলো। একে-অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ব্যস্ত হলো। সেই সুযোগে আরবিন ভীত-সন্ত্রস্ত, হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ড্রাইভারকে ইশারা করে কিছু একটা বলে। ড্রাইভারও তড়িৎ মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। লোকগুলো এবার এগিয়ে এসে বললো,
“তাহলে তোমাকে আমরা জিম্মি করছি৷ আর কে আছে তোমার সাথে? এই ভেতরে আর কে? বেরিয়ে আসো।”
আরবিন জোরে ডাকলো,
“ও রিদি, বেরিয়ে আসো তো বাইরে৷”
রিদি শাড়ির আঁচল চেপে ধরে মাইক্রোর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো। স’ ন্ত্রাসীগুলোর মধ্যে থেকে একজন গিয়ে সামনের থেকে লেগুনাটা চালিয়ে একপাশে সরিয়ে আনলো। ওদের পরিকল্পনা — আরবিন আর রিদিকে লেগুনায় আটক করে নিয়ে জিম্মি করে রাখবে। ওরা লেগুনা সরাতেই সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোবাসের ড্রাইভার মুহূর্তের মধ্যে মাইক্রোটা সামনের দিকে টান দিলো। কিছু বোঝার আগেই সামনের সড়ক ধরে বহুদূরে চলে গেল মাইক্রোটা৷ অদৃশ্য হলো চোখের আড়ালে। স’ ন্ত্রাসীরা বলাবলি করলো,

“থাক গে। ওই ড্রাইভাররে আমাগে দরকার নাই গা। আসল মাল তো পাইয়ে গেছি।”
আরবিন আর রিদি সামনে হাঁটছে। পেছনে অ’ স্ত্রধারী চারজন স’ ন্ত্রাসী। আরবিন আড়চোখে তীক্ষ্ণভাবে একবার পরখ করে নিলো ওদের হাতের অ’ স্ত্রগুলো৷ আর তারপর, আশেপাশের পরিবেশ। লেগুনার দিকে যত এগোচ্ছে, তত যেন আরবিনের মস্তিষ্ক ধারালো হয়ে উঠতে লাগলো। রিদির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে গেছে যেন ও। আরবিন হাত উঠিয়ে সাবধানে হাঁটছে। হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে রিদির দিকে ইশারা করলো ও। রিদি প্রথমে কিছু বুঝতে পারলো না। আরবিন আবারও ইশারা করতেই রিদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল। ওকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে স’ ন্ত্রাসীদের একজন বললো,
“কী সমস্যা?”

রিদি এবার অস্ফুট স্বরে জবাব দিলো,
“আমাকে একটু দু’টো মিনিট সময় দেওয়া যায় ভাই? শাড়িতে একটু অসুবিধা হয়েছে। ওপাশে গিয়ে ঠিক করে আসতাম। শ্রেফ দুই মিনিট!”
রিদি কথাটা বলে মারাত্মক আশংকা আর অস্থিরতা নিয়ে তাকায় ওদের দিকে। না জানি কি রিয়্যাকশন হয় ওদের! কিন্তু সৌভাগ্যবশত ওরা সম্মতি দিলো। পি’ স্তল উঁচিয়ে বললো,
“যাও, কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবে।”

রিদি যেতেই ওরা বলাবলি করতে লাগলো— “এই মাইয়া মাইনষেরে নিয়ে তো ভারী সমস্যা।”
কথা বলার মাঝে ওরা আরবিনের অবস্থান খেয়াল করেনি। আর এটাই ছিল আরবিনের জন্য সবচেয়ে বড় একটা সুযোগ। লেগুনা ওইতো আর হাত চারেক দূরে। আরবিন স’ ন্ত্রাসীগুলোর থেকে দেড় হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে। ও হাত নামিয়ে নিলো ধীরে ধীরে। চারিপাশে আবছা অন্ধকার। এই সময়ে একটা গাড়িও চলাচল করছে না এই রাস্তায়। আরবিন দ্রুত এগোলো৷ লক্ষ্য করে রাখা দু’জনের হাত থেকে দু’টো পিস্তল দক্ষ হাতে বুঝে ওঠার আগেই টান মে’রে নিলো। অপর দু’জনের হাতে ব্ল্যাক কালারের পিস্তল দু’টো তখনও রয়ে গেছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় ওরা হতভম্ব হলো। বিস্মিত হয়ে আরবিনের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহূর্তের জন্য। পরপরই হিংস্র হয়ে উঠলো। ক্রোধে ফেটে পরলো। গর্জন করে বলে উঠলো,

“শালা শেয়ানা! বলদ মনে হয় আমাগে? এখনো দু’টো পিস্তল আছে হাতে? গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো একদম। দে, পিস্তল ফেরত দে!”
আরবিন পিছিয়ে যেতে যেতে রিদি যেইদিকে সড়কের পাশের জঙ্গলের সরু পথ দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল, সড়ক থেকে সেদিকে নামতে লাগলো ও। ক্রুর হেসে বললো,
“বাছাধনেরা, লেফটেন্যান্ট আরবিন আল তৈমুরকে পিস্তল চেনাও? ওসব খেলনা পিস্তল নিয়ে আট-দশ বছর বয়সে খেলতাম। এখন হাতের মোয়া মনে হয়। আসল দু’টো পিস্তল আমার হাতে। আর খেলনা দু’টো তোমাদের। ওকে! গেম ওভার! লেট’স গো টু ওয়্যার!”
কথাটা বলে দুই হাতে পিস্তল তুলে নিয়ে লোকগুলোর ওপরে সামনের পথে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পেছাতে থাকে আরবিন। সামনের লোকগুলো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খেলনা পিস্তল নিয়ে আর কীসের যুদ্ধ করবে! তা-ও আবার একজন আর্মাড অফিসারের সাথে! ওরাও পেছাতে লাগলো পাল্টা ধাওয়া খেয়ে।
“ওই মুরগীর বাচ্চারা, পরের বার আসবি যখন; আসল পিস্তল নিয়ে আসিস। এসব খেলনা পিস্তলে মজা নেই৷ সস্তার খেলা।”

স’ ন্ত্রাসীগুলোর উদ্দেশ্যে জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে আরবিন জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গেল পুরোপুরি। তখন দু’টো পিস্তলের বুলেট প্রায় শেষের দিকে। রিদি ভেতরের দিকে ছিল। আরবিনেরই অপেক্ষায়। এই প্রথম যেন আরবিনের ইশারা বুঝতে পারলো ও। আরবিন ভেতরে গিয়ে রিদির হাতের কব্জি চেপে ধরলো শক্ত করে৷ এমনভাবে, যেন সহজে ছুটে না যায়। তখনই পেছন থেকে একটা ছোরা ছুটে আসতে দেখে আরবিন রিদির সামনে ওকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে গেল। ধারালো ছোরাটা আরবিনের শক্তপোক্ত পিঠ আঘাত করে নিচে পড়ে গেল। রিদি ভয়ে চিৎকার করে উঠলো৷ আরবিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও। যেন কিছুই হয়নি। হালকা হাসলো ও। কান খাঁড়া করে পেছনে পাতা মড়মড় করার শব্দ শুনতে পেয়ে রিদির হাত চেপে ধরে সামনের দিকে দ্রুত পা বাড়াতে বাড়াতে ও বললো,
“চলো, পালাও!”
রিদি শাড়ির কুঁচি শক্ত হাতে চেপে ধরে আরেক হাত আরবিনের হাতের মুঠোয় রেখে ছুটতে লাগলো সামনের দিকে। জানা নেই, সামনে ওদের জন্য কি অপেক্ষা করছে!

জঙ্গল, বিল ছাড়িয়ে একটা বিশাল ধানি জমি। ওপাশে মরা নদী। চারপাশ ঘিরে পুরোটাই জঙ্গল। বিশাল ধানক্ষেতের মাঝখানে একটা খড়-বেড়া দিয়ে তৈরি পলুই ঘর। এই ঘরগুলো সাধারণত কৃষকের সাময়িক বিশ্রাম এবং ফসল পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। আরবিন আর রিদি সেখানেই এসেছে অনেক অনুসন্ধান করার পরে। এখন মহাসড়কপথ ধরার মতো পরিস্থিতি বা অবস্থা কোনোটাই নেই।

পলুই ঘরের ভেতরটা জনমানবশূন্য। শুধু খড়কুটোয় পরিপূর্ণ। ফসল কাটার পরে ফসলের অবশিষ্টাংশ এখানেই রাখা হয়েছে বোধহয়। আরবিন ভেতরে গিয়ে রিদির হাত ছেড়ে আচনক খড়ের ওপর গা এলিয়ে দিলো। রিদি চমকে উঠলো। এতোক্ষণ যথেষ্ট চুপচাপ থাকার চেষ্টা করেছে ও। এবার আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বসলো আরবিনের কাছে। আরবিনের হাতের শক্তপোক্ত বাহু চেপে ধরে ডাকতে লাগলো,
“আরবিন! শুনছেন? কী হয়েছে আপনার? দেখি তো, ঘুরুন এদিকে।”

আরবিন ঘুরলো না। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে ওর। রিদির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
“হুশশ। চুপ করো। চেঁচিয়ো না। ওরা কিন্তু আমাদের খুঁজছে। পিস্তলে বুলেট নেই। আমার হাতে কোনো অস্ত্রও নেই৷ শুধু আছো তুমি। তোমার কিছু হতে দেবো না। নাহলে এতোকিছু করতে হতো না আমাকে।”
রিদি আরবিনের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“চুপ। কথা না বলে উল্টোদিকে ঘুরুন তো দেখি। কি হলো? ঘুরুন বলছি।”
রিদি এই প্রথমবারের মতো আরবিনকে ধমক দিলো বয়সে ছোটো হয়েও। আরবিনও চুপচাপ শুনে উল্টো হয়ে ঘুরে শুলো।
জোছনা রুপালি রাত্রি। চাঁদের আলো ফিকে হয়ে এসেছে। তবুও সেই আবছা আলোয় রিদি খেয়াল করে দেখলো, আরবিনের পিঠের ডান দিক হতে রক্তের ফোয়ারা বইছে যেন। রিদি কিছুক্ষণ নির্বাক চাহনিতে দেখলো। ততক্ষণে আরবিনের চোখ বুঁজে এসেছে প্রায়। রিদির হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে ও। ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে আরবিন। রিদি ওর মুখের কাছে কান এগিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,

“হুঁ? কী বলছেন?”
“তুমি আমার কাছে থাকো। কোথাও যেও না। প্লিজ রিদি। থাকো এখানে…”
অস্পষ্ট কন্ঠস্বরটুকু নিরবে শুনলো রিদি। আর তারপর শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠা-নামার শব্দ। অতঃপর সব নিশ্চুপ। রিদি ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে দেখতে লাগলো আরবিনের মুখশ্রী। বোবা হয়ে গেছে যেন ও।
“আরবিন, উঠুন না। কী হয়েছে আপনার? কথা বলুন আমার সাথে। চুপ করে গেলেন কেন? আরবিন শুনছেন!”
রিদি আরবিনের পিঠ আঁকড়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। আরবিনের রক্তে ওর হাত-পেট, শাড়ির আঁচল — সব ভিজে যাচ্ছে। রিদির হৃৎস্পন্দন থমকে গেছে যেন। বুক ফেটে যাচ্ছে। অস্থির লাগছে প্রচন্ড। মুখ লাল হয়ে গেছে। নিশ্চুপ আরবিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিদি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২১

“এসব কেন হলো! কেন! আপনাকে আমি কেন এই প্রফেশন ছাড়তে বলেছিলাম, এবার বুঝেছেন? আপনাকে হারানোর ভয় পেতাম। ঠিক এই ভয়টা-! উঠুন না প্লিজ। আপনাকে হারাতে চাই না আমি। কখনো না! আমি আর জেদ ধরবো না কখনো৷ আপনার সব কথা মেনে চলবো। কথা বলুন আরবিন। এতো দ্রুত কেন সবকিছু শেষ হলো? আমাদের চলার পথ আরেকটু দীর্ঘ হতে পারে না?”

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ২৩