নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৫
ঝিলিক মল্লিক
ঢাকার এক কোলাহলমুক্ত পড়ন্ত দুপুর। চারিপাশে কোনো তাড়াহুড়ো নেই৷ আর না আছে চিরপরিচিত গাড়িঘোড়ার ঝঞ্ঝাট। শুধু মাঝেমধ্যে শোনা যায় শীতের আগমনী বার্তায় অতিথি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ৷ চারতলা বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলা আজ লোকসমাগমে ভর্তি। রিদি আর ওর আম্মা সোফায় বসেছিল। তানিয়া বেগম আলাপ করছিলেন এখানে আসা এক মেহমানের সাথে। রিদি মনোযোগী শ্রোতার মতো চুপচাপ শুনছে তাদের কথা। মাঝেমধ্যে চটপটে চাহনিতে ওর আব্বুকে খুঁজছে। মনে মনে বলছে, “অনুষ্ঠান বাড়িতে এসে আব্বু উধাও হয়ে যাবে কোথায়!”
জম্মাদার ভিলার চতুর্থ তলা। ইকবাল জম্মাদারের বাসস্থান। বসার ঘরে উপস্থিত আছেন শুধুমাত্র ইকবাল জম্মাদার আর সোহরাব হোসেন।
সোহরাব হোসেন বসে আছেন ইকবাল জম্মাদারের সামনের সোফায়। ইকবাল জম্মাদার একটা চেয়ার টেনে এনে বসেছেন। বোঝা-ই যাচ্ছে, বেশ গুরুগম্ভীর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে চলেছে। বসার ঘরে তার সামনে চা-নাশতা পরিবেশন করা হচ্ছে। সোহরাব হোসেন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ইকবাল জম্মাদারের দিকে তাকিয়ে বলেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ইকবাল ভাই, ফোনে বলছিলেন কোনো জরুরি কথা আছে। কী কথা?”
“আমি তো চেয়েছিলাম আগামী রবিবার বেশ আয়োজন করে আপনাদের বাসায় যাবো। আগে যদিও কখনো যাওয়া হয়নি। কিন্তু যখন শুনলাম, আপনিই এখানে আসছেন; তাই ভাবলাম আজ এখানেই বরং আলোচনা হোক। যদিও নিয়মটা এরকম নয়।”
ইকবাল জম্মাদার কথাটুকু বলে থামলেন। সোহরাব হোসেন বোঝার চেষ্টা করলেন ইকবাল জম্মাদারের কথা। কিন্তু বুঝে উঠতে পারলেন না। তাই বেশ কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলেন,
“ইকবাল ভাই, আপনি কি বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কিছু কী হয়েছে? কোনো জরুরি বিষয়?”
ইকবাল জম্মাদার একটু কেশে নিলেন, তারপর সরাসরি মূল প্রসঙ্গে আসেন।
“ভাই সোহরাব, জরুরি বিষয় তো বটেই। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।”
সোহরাব হোসেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
“বলুন ভাই৷ কী বিষয়ে?”
ইকবাল জম্মাদার গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,
“আমার ছেলে আরবিন তো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আইটি ও সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে লেফট্যানান্ট পদে। এখন কিছুদিনের মধ্যেই ওর সিলেটে পোস্টিং।”
সোহরাব হোসেন আনন্দিত হয়ে হাসিমুখে বলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ! মাশাআল্লাহ, ছেলে তো বেশ কৃতী অর্জন করেছে। এ তো অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার।”
“হ্যাঁ তা তো বটেই। বাবা-মা হিসেবে আমাদের জন্য বিষয়টা খুবই গর্বের। এরকম ছেলে সৌভাগ্য করে কয়জন পায় বলেন? বুয়েট থেকে পড়াশোনা করে বেরিয়ে টাইগার আইটি বাংলাদেশে জব করলো কিছু বছর। তারপর সেখান থেকে স্বেচ্ছায় সমঝোতার মাধ্যমে অব্যাহতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আইটি ও সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের জন্য অ্যাপ্লাই করলো। ওর পূর্ব অভিজ্ঞতা আর সিভি ভালো পর্যায়ে থাকার কারণে সহজেই চান্সও পেয়ে গেল। ইতিমধ্যে ট্রেনিংয়েও করে এসেছে কয়েকমাসের। তারপর তো এই দু-এক মাস বাসায় বসা। আর হুট করেই সুখবরটা আসলো। যদিও আমরা নিশ্চিত ছিলাম। তবুও আনন্দে একটুও কমতি নেই। কিন্তু একটা বিষয়ে ভাবছি বুঝলেন।”
“কি বিষয়?”
“আমি ভাবছিলাম, ছেলের বিয়েটা পোস্টিংয়ের আগেই করিয়ে দিই। এত দূরে যাবে, ফিরবে কবে বলা যায় না। এর আগেও চাকরির জন্য কতগুলো বছর আমাদের থেকে দূরে ছিল। বিয়েশাদির কথা এতোবছরে বলেকয়েও করাতে পারিনি। আরো. . .”
সোহরাব হোসেন স্নিগ্ধ হেসে জিজ্ঞেস করেন,
“তাই বলুন! তবে পাত্রীর খোঁজ করেছেন? ভালো পাত্রীর সন্ধান না পেলে আমাকে জানাতে পারেন। প্রফেশনাল ঘটক না হলেও জীবনে এক-দুইবার ঘটকালি করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনের জন্য। আপনার ছেলে জন্যও নাহয় খুঁজে দিলাম।”
ইকবাল জম্মাদার হালকা গলা ঝেড়ে বলেন,
“পাত্রীর খোঁজ পেয়েছি বটে। এক মেয়েকে বেশ মনে ধরেছে আমাদের ছেলের জন্য।”
“কাকে?”
সোহরাব হোসেনের প্রশ্নে ইকবাল জম্মাদার সরাসরি বলেন,
“আপনার মেয়ে রিদিকে।”
এই কথায় ঘরের ভেতর মুহূর্তের জন্য এক ধরনের নীরবতা নেমে আসে। সোহরাব হোসেন চায়ের কাপ রাখতে যাচ্ছিলেন টি-টেবিলের ওপরে রাখা ট্রে-তে। তার হাত থমকে গেল হঠাৎ।
সোহরাব হোসেন একটু গম্ভীর হয়ে বলেন,
“জম্মাদার সাহেব, আপনার ছেলে তো খুব মেধাবী, আর আপনি অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। তবে, রিদি তো এখনো পড়াশোনা করছে। সে কি এই বয়সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত?”
“এই প্রস্তাবটা আমি পাঁচ-দশ বছর পরে হলেও দিতাম সোহরাব সাহেব। রিদি তো আমার স্টুডেন্ট। ওর মেধা আর ভদ্রতা আমি খুব ভালো করে জানি। আমার আর আমার গিন্নির আপনার মেয়েটিকে খুব পছন্দ হয়েছে আমাদের ছেলের জন্য।
সোহরাব হোসেনকে কিছুটা উদ্বিগ্ন দেখা গেল। তিনি উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন,
“কিন্তু আপনি তো জানেন-ই ইকবাল ভাই, সমস্যাটা ঠিক কোথায়। মেয়েটাকে আমি আরো কিছু বছর রাখতে চাইছিলাম আমাদের কাছে। আপনি শিক্ষিত মানুষ। আপনার কী মনে হচ্ছে না? প্রস্তবটা এখন অযাচিত?”
ইকবাল জম্মাদারকে মোটেই চিন্তিত দেখালো না। বরং যথেষ্ট শান্ত থেকে তিনি জবাব দিলেন,
“তা মনে না হওয়ার কারণ দেখছি না। নিতান্তই বাধ্য হয়ে আমাকে এতো দ্রুত প্রস্তাব দিতে হলো। তবে মেয়ে আপনাদের কাছেই থাকবে। ব্যাপারটা আমি খোলাসা করি। আরবিন এখন সিলেটে চলে গেলে ওর বিয়ে করতে আরো অনেকটা দেরি হবে। আর এতো দেরি আমরা করতে চাইছি না। বিয়েটা সাদামাটাভাবে করিয়ে রাখলে ভালো হয়। পরবর্তীতে নাহয় অনুষ্ঠান করবো৷ ওদের দুজনের ওপর কোনো চাপ থাকবে না। আরবিন তো সিলেটে পোস্টিংয়ে চলে যাবে। কয়েকমাস পরে ছুটিতে এসে ও রিদিকে নিয়ে যাবে। তাছাড়াও এই সময়ের মধ্যে রিদির পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে৷ ও সিলেটে গিয়েই অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন নিতে পারবে। একটুও ঝামেলা হবে না।”
সোহরাব একটু সংকোচ নিয়ে বলেন, “আচ্ছা, রিদির মতটা তো জানা দরকার। তাছাড়াও বিয়ের ব্যাপারে এতো তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। আপনি পরিচিত কাছের মানুষ। একটা প্রস্তাব দিয়েছেন, অবশ্যই আমি আমলে নিয়ে ভেবে দেখবো। প্রস্তাবটা তো আর ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আপনার ছেলে কি বিয়েতে রাজি?”
“হ্যাঁ ও বিয়েতে রাজি। আরবিন আমার কথা কখনো ফেলেনি। আমি ওকে বুঝিয়ে বলব। রিদি যদি রাজি থাকে, ওর দিক থেকেও কোনো সমস্যা হবে না।”
ইকবাল জম্মাদার একটু চেপে গেলেন এই বিষয়টায়। কথা ঘুরিয়ে বললেন,
“তাহলে কী আমি “হ্যাঁ” ধরে নেবো সোহরাব ভাই?”
“আপাতত সেরকম কথা দিতে পারছি না। তবে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, প্রস্তবটা আমি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবো। তাছাড়াও সবার আগে আমার মেয়ের মতামত নিতে হবে। যদিও আপনার প্রস্তাব আমার অযৌক্তিক মনে হলো না। তারপরও.. ”
ইকবাল জম্মাদার আত্মবিশ্বাসী সুরে বলেন,
“আমি কাছের মানুষ বলে আপনি চাপ নেবেন না। তবে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন সব দিক থেকে। আমি আবারও বলছি, বিয়ের কারণে কিন্তু আপনার মেয়ের পড়াশোনায় নূন্যতম ক্ষতি হবে না। বরং আগের মতোই স্বাভাবিক জীবনে থাকবে। আমি শুধু ওদের দু’জনের একটা গাঁট বেঁধে দিতে চাইছি। যাতে শান্তি পাই। বাঁচি কয়দিন, তা তো বলা যায় না!”
আরবিনকে দেখা গেল সাদা পাঞ্জাবিতে ঘেমে-নেয়ে একাকার, বলা চলে কিম্ভূতকিমাকার হয়ে বসার ঘরের একটা লাইট ঠিক করছে চেয়ারে দাঁড়িয়ে।
অনুষ্ঠান মূলত হয়েছে এই বিল্ডিংয়ের ছাঁদে প্যান্ডেল করে। জুনায়েদ সাহেবের বাড়ির সদস্য সংখ্যা কম। পরিবারে মানুষ বলতে শুধু তিনি, তার স্ত্রী আর একমাত্র ছেলেটা। আত্মীয়-স্বজনও তেমন সহযোগী নয় বলা চলে। তারা আসছে, সোজা ছাঁদে যেয়ে টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ; দু’টো ভালো-মন্দ বলে আবার চলে যাচ্ছে। তাই জুনায়েদ মোড়লের এই অনুষ্ঠানের সবকিছু সামাল দিতে বেশ অসুবিধায় পরার কথা ছিল। কিন্তু আরবিন থাকতে তা আর হয়ে ওঠেনি। আরবিন-ই অনেকটা দিক সামলে নিয়েছে। ক্যাটার স্টাফদের নিজে নির্দেশনা দিচ্ছে। অনেকের যে-কোনো সুবিধা-অসুবিধা দেখছে। এমনিতেও গাত্রবর্ণ শ্যামলা। তারওপর ঘামের আস্তরণে আরো বেশি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত লাগছে ওকে।
আপাতত ও নিজে এসে তার জুনায়েদ চাচার ফ্ল্যাটের বসার ঘরের একটা বাল্ব ঠিক করে লাগাচ্ছে। জুনায়েদ সাহেব সবে ভেতরে এসেছেন। ভীষণ ব্যস্ত তিনি৷ এখনো সবার খাওয়া শেষ হয়নি। আরবিন চেয়ার থেকে নামতেই তিনি ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“ভাইপো অনেক করেছো। এতোটা ঋণী বানিয়ে দিও না। এবার যেয়ে খেতে বসো। তোমার আব্বা-আম্মার খাওয়া শেষ কখন। তোমাকে বললাম বসে যেতে। এখানে এখনো কাজ করছো!”
“কাজ ছাড়া পুরুষ মানুষের জীবনে আছে কী চাচা? পুরুষ মানুষের চোখের সামনে কাজ পড়ে থাকা সত্ত্বেও চুপচাপ পুতুল হয়ে বসে থাকা শোভা পায় না। ওসব কাপুরষদের কাজ৷ আর আমি কাপুরুষের কাতারে পরতে চাই না।”
কথাটা বলে আরবিন হাসে৷ জুনায়েদ সাহেব ওর এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“অনেকদিন বেঁচে থাকো বাজান। তবে পরের বৈঠকে কিন্তু তোমাকে বসতেই হবে। বাকিটা আমি সামলে নেবো।”
জুনায়েদ সাহেব অন্যদিকে চলে গেলেন। রিদি সোফার ওপর বসে এতোক্ষণ দেখছিল আরবিনকে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ওর আব্বু এখনো আসেননি। রিদি ওর আম্মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ওর আব্বুর কথা। ওর আম্মা বলেছেন, এখানে কিছুক্ষণ বসতে। ওর আব্বা একটা জরুরি দরকারে গেছেন আশেপাশেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবেন। তারপর ওরা বাড়ি ফিরবে।
রিদিও ওর মায়ের কথা মোতাবেক বসেছিল। আরবিন ওকে এর আগেও কয়েকবার দেখেছে। তবে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি৷ কাজের ব্যস্ততা দেখানোর ভাব করেছে যেন৷ রিদির আম্মা কয়েকজন মহিলাদের সাথে আলাপ করছিলেন। রিদি এবার পাশ থেকে উঠে গেল। আরবিন প্রায় খুলে যাওয়া একটা পর্দা ঠিক করছিল। রিদি ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“স্যার আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
আরবিন কাজ করতে করতেই জবাব দিলো। রিদি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। তবুও আরবিন আর একটাও বাড়তি কথা বললো না। রিদি এবার সরাসরি বললো,
“স্যার আপনি কী কোনো কারণে আমার ওপরে রাগ করেছেন?”
আরবিনের হাতের কাজ হঠাৎ থেমে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে রিদির দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার হঠাৎ এমনটা কেন মনে হলো?”
“না, আজ সামনের ওপর দেখেও কথা বললেন না যে। সবসময় তো দেখা হলেই হাসিমুখে কথা বলেন। সেদিন সকালে ঝাড়ি দেওয়ার পর থেকেই এরকম আচরণ করছেন।”
“আমি এখন কাজে ব্যস্ত আছি রিদি। চাচাদের এখন সহযোগিতার প্রয়োজন। তুমি তো দেখছো-ই ভীষণ ব্যস্ত আমি। এখন কথা বলার সময় নেই৷ তাছাড়াও শিক্ষক ছাত্রীর ওপর রাগ করে, যখন সে বেয়াদবি করে। তুমি তো কোনো বেয়াদবি করোনি। আর একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, আমি বিশেষ ব্যক্তিদের ওপর রাগ করবো। তুমি বিশেষ কেউ নও। নরমালি একজন স্টুডেন্ট মাত্র। আর সব স্টুডেন্টকে আমি যেমন নজরে দেখি, তেমনই। দ্যাট’স ইট।”
আরবিন শেষোক্ত কথাটার ওপর একটু বেশি জোর খাটিয়ে গম্ভীর গলায় বললো। রিদি ঢোক গিলে হজম করে নিলো বোধহয় কথাগুলো। পরপরই বললো,
“স্যার, আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। একটু রেস্ট নিয়ে নিন। পরে না-হয় আবার কাজ করবেন।”
“তোমার বলার প্রয়োজন নেই রিদি। আমার ব্যাপারে আমি বুঝবো।”
“স্যার কিছু মনে করবেন না, একটা কথা বলি। একজন স্টুডেন্ট হয়ে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি বলে হয়তো আপনার পছন্দ হচ্ছে না। তবে আমি কিন্তু আপনার খারাপের জন্য বলিনি।”
রিদির কাটকাট জবাব বোধহয় সহ্য হলো না আরবিনের। এবার কঠোর গলায় বললো,
“আমার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি তোমার মায়ের পাশে যেয়ে বোসো। মেয়েমানুষের সবসময় এতো স্পষ্ট কথা বলা উচিত নয়। সেখানে তুমি আমার ছাত্রী!”
রিদির যেন কিছুই হলো না আরবিনের কথায়৷ সরল মুখ করে বললো,
“আচ্ছা। ভালো কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনার তো সহ্য. . .”
বাকি কথাটুকু রিদি আর শেষ করলো না। বিপরীত দিকে হাঁটা দিলো। ও নিজেও জানে, বাড়াবাড়ি বলে ফেলেছে। হঠাৎ করেই আরবিন আর ওর শিক্ষক-ছাত্রীর সম্মান ও স্নেহের সম্পর্কে কেমন যেন একটা অঘোষিত বিদ্বেষ এসে হানা দিয়েছে। রিদি নিজেও এর কারণ কিছুটা অনুভব করতে পারে। বনভোজনের দিনে রিদি শুনেছিল, আরবিন স্যার নাকি সরকারি চাকরি পেয়েছেন। ডিটেইলসে অবশ্য শোনা হয়নি ওর। তবে যাওয়ার আগে স্যারের সাথে অঘোষিত বিদ্বেষটা মিটিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যটা বোধহয় পূরণ হওয়ার নয়৷
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৪
কিংবা ও বোধহয় জানে না, সামনে এর চাইতেও বড় বিদ্বেষ আর দা ঙ্গা অপেক্ষা করছে ওর জন্য। যেই অবস্থানের বিরোধিতা সারাজীবন করে এসেছে ও একটা দুর্ঘটনার জন্য, সেই অবস্থানের কারণে আবারও আরবিন নামক দৃঢ় অবস্থানের ব্যক্তিটার সাথে দীর্ঘস্থায়ী একটা সংঘাত তৈরি হয়ে যাবে ওর। অথচ রিদি তা কোনোদিনই চায়না। ওর মনে চলছিল অন্যকিছু। যা সম্পর্কে ও নিজেও স্পষ্ট নয়। নিজেকেই নিজে বারবার ধিক্কার জানায়। এতোটা অধঃপতন কীভাবে হলো ওর!
তবে অদৃষ্টের লিখন সম্পর্কে কে-ই বা জানত? সেখানে মিত্রতা লেখা আছে, নাকি অঘোষিত শত্রুতা. . .