নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৬
ঝিলিক মল্লিক
“মেয়েটা আমার প্রতি দুর্বল, তা ওর কথাবার্তা আর আচরণে খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। এতটুকু বোঝার ক্ষমতা আরবিন আল তৈমুরের না হলেও লেফটেন্যান্ট আরবিনের আছে। এখান থেকে আমার যেতে চাওয়ার কারণটা তুই বুঝতে পারছিস না কায়েস।”
লেদার-ব্যাগে আলমারি হতে জামাকাপড় বের করে এনে ব্যাগে গুছিয়ে রাখছে আরবিন। একহাতে কানে ফোন ধরে কায়েসের সাথে কথা বলছে৷ কায়েস বললো,
“কী কারণ? তুই বল।”
“মেয়েটার ভবিষ্যৎ, মেধা সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। ওর এখন টিনএজ বয়স। একটু আবেগী। ও আমার প্রতি কিছুটা হলেও দুর্বল। যা কথার ইঙ্গিতে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিল। টিনএজ হলেও স্পষ্টবাদী। এজন্য সরাসরি বলতে না পারলেও আচরণ-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। যা সবাই করে না। আর এটাই আমি মানতে পারছি না। হঠাৎ কি হলো ওর! এখনও কোনো গুরুতর বিষয় হয়নি। আমি যথাসম্ভব ওকে এড়িয়ে গেছি। আগের মতো নরম গলায় কথা বলিনি। কিন্তু এখানে আমার থাকা মানে ওর মনোযোগ, ধ্যান-ধারণা সব আমার দিকে থাকা৷ পড়াশোনায় মন বসাবে না। সামনে ওর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমার কারণে ধ্বংস হোক, তা চাইনা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কিন্তু আরবিন, তুই চলে গেলেই যে মেয়েটা তুই যেমন চাইছিস, তেমন হয়ে যাবে; এটা কেন ভাবছিস? বরং, এভাবেই অন্য কাউকেও তো পছন্দ করে ফেলতে পারে৷ কারণ বয়সটাই এমন! মোহে পরতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আর একবার যখন এই মোহের রঙ দেখে নিয়েছে।”
“এসব ভেবে দেখিনি।”
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে বসতে কথাটা বললো আরবিন। মাথায় আঙুল চেপে ধরে স্লাইড করতে লাগলো। ও আসলেই এতোকিছু ভেবে দেখেনি। শুধুমাত্র একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা ভেবেছে। এমনিতেও আরবিনকে যেতেই হতো এখান থেকে। সেটা হোক খুব দেরিতে, কি’বা খুব দ্রুত। এই রিদির মতো মেয়েরা একদিন এদেশের গর্ব হবে, তাদের মেধার মাধ্যমে দেশের জন্য কিছু করতে পারবে। যাতে দেশের নাম উজ্জ্বল হয়। কিন্তু আরবিনের কারণে একজন সম্ভাবনাময়ীর জীবনে অচিরেই মরীচিকা পড়ে গেলে আরবিন তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবে না। তাই এতো দ্রুত দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। কায়েস আবারও বললো,
“ওই মেয়েটার সাথে নাকি তোর বিয়ের কথাবার্তা চলছে শুনলাম..”
“হাউ রিডিকিউলাস! এসব কথা কে বললো তোকে? আমার আব্বা? নিশ্চয়ই আমাকে কনসিডার করানোর জন্য? আব্বার হয়ে একটা কথাও বলবি না কায়েস। তিনি এখন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমার ওপর পারিবারিক সামরিক শাসন জারি করার মতো ভয়াবহ কান্ড করে ফেলছেন।”
আরবিনের কন্ঠস্বরে মারাত্মক ক্ষোভ ঝড়ে পড়লো। দাঁতে দাঁত পিষে চেয়ারের হাত ধরে বসে রইলো ও। ফোনের ওপাশ থেকে কায়েস যথেষ্ট ঠান্ডাভাবে বললো,
“শান্ত হ। আমি একটা পরামর্শ দিই তোকে। শুনবি?”
“ভালো কোনো পরামর্শ হলে দিতে পারিস। বন্ধু হয়ে বাঁশ খাওয়ানোর চিন্তা করিস না।”
“আরে অতো খারাপ বন্ধু এখনো হয়ে পারিনি৷ নয়তো মীরজাফরের মতো মীর কায়েসের নামও ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।”
কায়েস হোহো করে হাসলো। আরবিন রাগী গলায় বললো,
“মজা করিস না কায়েস। সিরিয়াস মুডে আছি। ওই মেয়ের অধঃপতনের কথা চিন্তা করলেই রাগে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে আমার। নিজের মাথা ধরে দেয়ালে টাক দিতে মন চাইছে। কেন যে কয়েকদিনের সাময়িক শিক্ষকতায় এতো নরম গলায় কথা বলতে গেলাম ওর সাথে! আরো আগেই কঠোর হওয়া উচিত ছিল৷ মেয়েটা এতো আবেগী! আমি ভাবতেও পারিনি, এভাবে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসবে। আগে সবসময় বলতো, স্যার আমি ডাক্তার হবো, নয়তো আইনজীবী হবো। অথচ এখন ওকে দেখে মনেই হয় না, পড়াশোনার ধারেকাছেও যায়! মাত্র কয়েকটা দিনে কতটা চেঞ্জ! আশ্চর্য হচ্ছি আমি!”
কায়েস কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো ফোনের ওপাশ থেকে। তারপর বললো,
“তুই কী মেয়েটাকে পছন্দ করিস?”
“ছাগল লাগে তোর আমাকে? কত দিন যাবত চিনিস? সামনে আয় হা রামজাদা। মাথা ফাটিয়ে ফেলবো। তোরে কুপাবো আমি।”
“আরে ক্ষেপিস কেন? সোজাসাপ্টা জবাব দিলেই তো হতো।”
“কতদিন যাবত তুই চিনিস আমাকে? তারপরও এধরনের লজিকলেস কথা বলছিস। প্রথমত, ও বয়সের দিক থেকে খুব ছোট। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রহমতে এখনো অবধি আমি ওকে ছাত্রীর বাইরে বেশিকিছু ভাবতে পারি না। ভবিষ্যতের কথা জানা নেই। তাই ওভার কনফিডেন্স নিয়ে কিছু বলতে চাইছি না। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক ওকে আমি একটু আলাদাভাবে দেখি। সেই আলাদাভাবে দেখার কারণ জানিস?”
“কী?”
“ও টপার স্টুডেন্ট। পিএসসি হতে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত সব বোর্ড পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস ছিলো৷ বোর্ড মার্কও অনেক। মেধা তালিকায় তিন নাম্বারে ছিলো বোর্ডের মধ্যে। সবসময় ক্লাসে ফার্স্টগার্ল হয়। এসব আমার আব্বার মুখ থেকে ওর নামে শোনা প্রশংসা। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে ওকে পড়াতে যেয়ে বুঝলাম, আসলেই দারুণ স্টুডেন্ট। এতোটা তো আমিও ছিলাম না স্টুডেন্ট লাইফে। ফাঁকিবাজি করে বেড়াতাম।”
আরবিন থামে। এক গ্লাস পানি পান করে নেয়। চোখের সামনে ড্রেসিং টেবিল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখে এলোমেলো চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দেয়৷ কায়েস আবারও ওপাশ থেকে বলে,
“তোকে আমি কি বলি শোন। মেয়েটা একবার এরকম অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে গেছে, এরপর বারবার যে একই অনুভূতিতে পরবে না; তার কী গ্যারান্টি? তুই দিতে পারবি?”
আরবিন থমকালো। ভেবে বললো,
“আমি গ্যারান্টি দেওয়ার কে?”
“হ্যাঁ! সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম আমি। কেউ-ই গ্যারান্টি দিতে পারবে না। এজন্য একটা কিশোরী মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটা বোকামি।”
“আমাকে এখান থেকে আজ হোক, এক বছর পর হোক; যেতেই হতো। যা বলতে চাইছিস সরাসরি বল কায়েস। ভণিতা আর ভণ্ডামি পছন্দ করি না। আর তাই-ই করার চেষ্টা তুই করছিস আমার সাথে।”
“মেয়েটার সাথে যদি তোর বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হয়, তাহলে তুই ওকে বিয়ে করে নে আরবিন। এতে একটা ব্যাপার ভালো হবে, মেয়েটা তোর আয়ত্তে থাকলে বরং আরো বেশি সেইফ থাকবে। আর তোকে যারা ভালোভাবে চেনে, তারা জানে— তুই ওর পড়াশোনা আর ভবিষ্যৎ ধ্বংস নয়, বরং গ্রো-আপ করতে হেল্প করবি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট এফোর্ট দিবি। এতটুকু তো চিনি তোকে।”
“আই ডোন্ট ডু দিস। ইট’স লাইড এন্ড ক্লিয়ার!”
“আর তোর সাথে না হোক, মেয়েটার বাবা যদি তার মেয়ের বিয়ে খুব শীঘ্রই অন্য জায়গায় দিয়ে দেয়? তখন তো যেই লাউ সেই কদু।”
“আমার মনে হয় না ওর আব্বু এমন কিছু করবেন৷ শিক্ষিত মানুষ উনি। উনার ওপর ভরসা আছে আমার।”
“আর যদি মেয়েটা প্রেমে-ট্রেমে জড়িয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে..”
“ওহহ! কায়েস, থাম তো। আলতু-ফালতু, ভিত্তিহীন কথা বলে আমার মাথা খারাপ করিস না। ওর বিষয় ও বুঝবে। নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংস করতে চাইলে আমি-তুই, ওর ফ্যামিলি — আমরা কেউ নই আটকানোর। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’রা খুব সোজা। আর এসব বোকা ও স্বার্থপরদের কাজ।”
“আমি তোকে কি বলতে চাইছি, একবার ভেবে দেখিস আরবিন। মেয়েটাকে বিয়ে করে কিন্তু তুই তোর সাথে নিয়ে যাচ্ছিস না। ও ওর মতো থাকবে, আর তুই তোর মতো৷ শুধু পার্থক্য এইটুকুই, ওর আরো একটা অভিভাবকত্ব বাড়বে৷ তোর সাথে বাঁধা পড়ে থাকলে অন্যপথে যাওয়ার চিন্তা করবে না। অন্যপথে হয়তো কাটা থাকতে পারে৷ কিন্তু তোর আর ওই মেয়ের পথ এক হলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ ভালো হবেই৷ আমি কারো সুপারিশে নয়, বরং এমনিও এভাবেই বোঝাতাম তোকে। এখন রাখছি৷ তুই বরং নিরিবিলিতে ভাবতে থাক।”
কায়েস কল কেটে দিলো। আরবিন ফোনটাকে একবার দেখে বিছানার ওপর ছুঁড়ে মারলো। মাথাটা যেন যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে ওর। চেয়ারের পেছনে মাথা এলিয়ে দিয়ে দু’হাতে মাথার দুইপাশ শক্ত করে চেপে ধরলো৷ চোখ বুঁজে ভাবনায় মত্ত হলো।
সোহরাব হোসেন বিকালের নাস্তা সেরে বসেছেন মাত্র। নাস্তা বলতে চা-বিস্কুট আর কিছু হালকা খাবার। একটু পরেই বেরোবেন তিনি। গত দুই রাতে অনেক ভেবেছেন। দু’টো দিন সময় হাতে নিয়েছিলেন। আজকের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে গত দু’দিনে। আজ শুধু রিদির কাছ থেকে শোনার পালা, ও কি করতে চায়। তানিয়া বেগম রিদির ঘরে গিয়েছেন ওকে ডাকতে। মেয়েটা এই দুইদিন শুধু ঘুমাচ্ছে। এতো বেশি ঘুম ওর কখনোই হয় না। পড়াশোনাও যেন উচ্ছন্নে গেছে এই দু’দিনে।
সোহরাব হোসেন বসার ঘরের সোফায় বসে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। তার মনে পড়ে গেল, গত দু’দিনে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বিস্তর আলাপ-আলোচনার কথা। একটা দ্বিধায় ভুগছিলেন তারা। অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন দু’জনে। প্রথমবার যখন তানিয়া বেগমকে ইকবাল জম্মাদারের প্রস্তাবের কথা বলেছিলেন সোহরাব, তখন চমকে উঠেছিলেন তানিয়া বেগম। স্তব্ধ চাহনিতে তাকিয়ে ছিলেন কিছুক্ষণ। পরপরই বলেছিলেন,
“এসব কথা কেন বলছো? তুমি কী কিছু ভাবছো? এর আগেও যে সম্বোধন আসেনি তা তো নয়। তখন তো আমলে নেওনি৷ আর ঘরে বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকলে তো সম্বন্ধ আসবেই। সব কী গুরুত্ব দিয়ে মনে নিতে হবে?”
তখন সোহরাব হোসেন বেশ অবাক করে দিয়েই বলেছিলেন,
“এবার আমি গুরুত্ব দিয়েই নিচ্ছি তানি। কারণ এই সম্বন্ধটা অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। অন্যরকম।ইকবাল ভাই পরিচিত আর খুব ভালো মনের একজন মানুষ। অনেক বছর ধরে মোটামুটি চিনি তো তাদের পরিবারকে। কখনো বাজে কিছু শুনিনি। যেখানে আমার মরহুম ছোটভাই জীবিত থাকাকালীন তাদের খুব প্রশংসা করতো, সেখানে আমলে নিতেই হচ্ছে। কারণ তুমিও খুব ভালো করে জানো, বেঁচে থাকাকালীন এজহারের মুখ থেকে সহজে কারো প্রশংসা শোনা যেত না। আর মিথ্যাবাণী তো বহু দূরের কথা।”
মৃত দেবরের আলোচনা আসতেই শান্ত হয়েছিলেন তানিয়া বেগম। এজহারও তার ছোটভাইয়ের মতোই ছিল। এজহারের কথা মনে পড়েতেই অল্পবয়সে স্বামীহারা হালিমা আর তার সন্তানদের কথা মনে পড়ে যায় তানিয়া বেগমের। বুক ফেড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। চোখের কোণে অশ্রু জমে। রুপালি তারার ন্যায় তা জ্বলজ্বল করতে থাকে। কতদিন যে দেখা হয় না ওদের সাথে!
চোখের জল আড়াল করে স্বামীকে তানিয়া বেগম বলেছিলেন,
“তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছো তুমি?”
সোহরাব হোসেন প্রথমে কিছু বলেন না। চুপচাপ মাথা নাড়েন শুধু। তানিয়া বেগম যা বোঝার বুঝে নেন। কতগুলো বছর সোহরাব হোসেনের সাথে সংসার করছেন। এতটুকু বোঝা মোটেও কঠিন নয় বটে। রাতভর স্বামী-স্ত্রী মিলে বিস্তর পরামর্শ করেন। দু’টো রাত নির্ঘুম কাটে তাদের। এই দু’দিনে সোহরাব হোসেনের কাজে কোনো মন বসেনি, আর না তানিয়া বেগমের ঘরের কাজে। অথচ, তাদের দুশ্চিন্তা মেয়েকে কোনোভাবেই বুঝতে দেননি তারা। শেষমেশ আজ এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন সোহরাব হোসেন।
তানিয়া বেগম রিদিকে ডেকে এনেছেন। সোহরাব হোসেন মেয়েকে বসতে বললেন পাশে। রিদির শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তারওপর দীর্ঘক্ষণের ঘুম। চোখ-মুখ ফুলে গেছে একদম। ঘুম ঘুম চোখে ওর আব্বুর পাশে বসতেই সোহরাব হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“আম্মা, তোমাকে একটা জরুরি প্রয়োজনে ডেকে আনলাম।”
“জি আব্বু?”
“তোমার আম্মা আর আমি মিলে তোমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তা করেছি। আমাদের দিক থেকে যতটুকু সম্ভব ভেবেছি। শুধু লাস্ট ফিনিশিংটা বাকি।”
“কী সিদ্ধান্ত আব্বু?”
সোহরাব হোসেন ধীরে ধীরে সবকথা খুলে বললেন রিদিকে। রিদি একদৃষ্টিতে ওর আব্বার দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনতে লাগলো। সোহরাব হোসেন সব কথা শেষ করে বললেন,
“এখানে তোমার মতামতের বাইরে কিছুই হবে না। কারণ, তোমার গুরুত্ব আমাদের কাছে সবার আগে। আমরা তোমার বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবো না। তবে আমরা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে তোমার নূন্যতম ক্ষতি নেই। তুমি আগের মতো এখানেই থাকবে৷ সবকিছু একইরকম থাকবে। শুধু পার্থক্য দাঁড়াবে এতটুকু, তোমার আরো একটা অভিভাবকত্ব বেড়ে যাবে।”
রিদি চুপ করে রইলো৷ তা দেখে সোহরাব হোসেন বললেন,
“তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো। চাইলে আরো কিছুটা সময় নাও। আমরা পরে পস্তাতে চাই না। তাড়াহুড়ো করে কিছুর প্রয়োজন নেই। তুমি নিজের ঘরে যেয়ে নিরিবিলিতে ভাবো। আমি আর তোমার আম্মা এখানে বসে আছি। যতটা সময় নেওয়ার নিতে পারো। তুমি না আসা পর্যন্ত আমি উঠবো না। কাউকে সিদ্ধান্ত জানাবোও না।”
রিদি উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে। নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে হঠাৎই ওর ভিন্নরকম অনুভূতি হতে লাগলো। যেই অনুভূতির সাথে ওর পরিচয় নেই।
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৫
অথচ ও জানতেও পারলো না, প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে অচিরেই এগিয়ে যাচ্ছে ও। একটা কথা জানা নেই ওর— লেফটেন্যান্ট আরবিন আল তৈমুর সবসময় বলেন,
“দেশপ্রেমীদের অপছন্দ করাও দেশদ্রোহিতার শামিল। আর আমি দেশদ্রোহীদের ঘৃণা করি। তাদের সাথে বিদ্রোহ করতে অবিচল।”
আরো একবার ধ্বংস হোক!
অচিরেই!