নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৭
ঝিলিক মল্লিক
নিজের ঘরে টানা পাঁচ মিনিট যাবত সমানে পায়চারি করছে রিদি। ভাবনাচিন্তা করছে ও। ওর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে ওর ভবিষ্যৎ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্তের চাবিকাঠি। রিদি যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে—এমনটা নয়। প্রস্তাবটা ওর জন্য অস্বস্তিকরও নয়। তবে ওর মন দ্বিধায় পড়ছে প্রতিনিয়ত।
রিদি শুনেছে, আরবিন স্যার শীঘ্রই এই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন চাকরির জন্য। এরপর যদি কখনো দেখা হয়ও, তা-ও শুধুমাত্র ভাগ্যের ফেরে। এই বিষয়টা রিদিকে গত কয়েকদিনে ভাবিয়েছে ভীষণ। কেমন যেন একটা দুঃখ দুঃখ বোধ হয়েছে ওর। কেন হয়েছে, কেন এমন অস্থিরতা — তা গত কয়েকদিনে বহুবার বোঝার চেষ্টা করে অবশেষে নিশ্চিত হয়েছে ও। তবে পুরোপুরিভাবে নয়। তারওপর এতোবড় একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হবে, তা ভাবনাতেও আসেনি ওর।
রিদি গিয়ে বসলো বিছানার ওপরে। দক্ষিণের খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কিছু একটা বললো। মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে ওর। কিছুটা অজানা, কিছুটা জানাশোনা।
আরবিন স্যার সরকারি চাকরি পেয়েছেন। কি চাকরি তা অবশ্য জানা নেই রিদির। তাতে বিশেষ আগ্রহবোধও নেই। তবে এই খবরে খুশি হওয়ার সাথে সাথে বিষন্নও হয়েছে ও। ওই মানুষটার সাথেই রিদির নাম জড়ানো হবে, এ যেন সম্পূর্ণ অকল্পনীয় ছিল রিদির কাছে। কিছুক্ষণ আগে ওর আব্বুর মুখে প্রস্তাবটা শোনার পর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছিল। মনে অস্থিতিশীল ভাবের সৃষ্টি হয়েছিল। এখন মিনিট দশেক পরে অবশ্য শান্ত মনে, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখছে ও। রিদির সামনে দু’টো বিষয় এসে দাঁড়িয়েছে।
এক, এই বিয়ের ঘটনায় ওর জীবনের নূন্যতম পরিবর্তন হবে না বলেই মনে হচ্ছে। এতে পঁচানব্বই ভাগ নিশ্চয়তাও রয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দুই, আরবিন স্যারের প্রতি রিদির একটা সুক্ষ্ম দুর্বলতা রয়েছে। এটা ও টের পেয়েছে যথাযথ সময়েই। রিদির মন বলছে, ওই মানুষটার সাথে নিজেকে জড়াতে। দুনিয়া উচ্ছন্নে যাক। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাক। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার কোনোকিছু দরকার নেই। শুধু ওই মানুষটাকে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ সাজাতে পারতো!
এই কথাটা মাথায় আসার সাথে সাথে আব্বা-আম্মার কথাও মনে পড়ে যায় রিদির। তাদের একমাত্র মেয়ে ও। তারা কম তো করেনি ওর জন্য। এখনও করছেন। সবসময় করেন। রিদির আব্বা-আম্মার স্বপ্ন, তাদের মেয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। তাদের ইচ্ছে পূরণ করবে। মেয়ে তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, ক্যারিয়ারে অনেক উন্নতি করে তাদের মুখ রক্ষা করবে।
সেই দিক বিবেচনা করতে গেলে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার উচ্ছন্নে রেখে শুধুমাত্র আরবিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাটা মোটেও সমীচীন নয়। এটা স্বার্থপরতা। এটুকুও জানে রিদি। সেই হিসেবে, একটা সিদ্ধান্তেই আসা যায় — বিয়ে করে জীবনের কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে দু’জনকে দুই মেরুতে থাকতে হবে। রিদি তার মতো পড়াশোনা করবে, আর আরবিন চাকরি করবে।
রিদি উঠে দাঁড়ালো। শেষবারের মতো খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ভাবনাচিন্তা করা হয়ে গেছে ওর। চোখ বুঁজে শ্বাস টেনে নিজেকে ধাতস্থ করলো। তখনই পেছনে পায়ে হাঁটার শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকালো। ওর আম্মা দাঁড়িয়ে আছেন। রিদিকে দেখছেন, জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে। মায়ের মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে নিলো রিদি। শান্ত গলায় বললো,
“আম্মা, আব্বুকে বলে দাও, তার সিদ্ধান্তে আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
“তাহলে বলছো, তুমি রাজি?”
“জি আম্মা।”
“যাক, আলহামদুলিল্লাহ। শুনে খুশি হলাম। নিজের দিকটা ভেবে বলছো তো?”
“হ্যাঁ আম্মা। আমার কোনো সমস্যা নেই। আব্বুর সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই আমার জন্য খারাপ নয়?”
“ইন শা আল্লাহ কখনোই না হোক। আমরা তোমার আব্বা-আম্মা। নিশ্চয়ই তোমার খারাপ চাইবো না? বরং, তোমার ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে চাইবো সবসময়। তাছাড়াও তোমার আব্বুর এই সিদ্ধান্তে আমি খারাপ কিছু দেখছি না। নাহলে সবার আগে আমিই মতবিরোধ করতাম। সামনে তোমার পরীক্ষা। এই সময়ে কোনোভাবেই শ্বশুরবাড়ি যেতে দেবো না। পরীক্ষার পরে যা করা লাগে করবো।”
রিদি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখালো। সামান্য হাসলো সৌজন্যতাবোধ দেখাতে। ওর প্রবল কোনো অনুভূতিও হচ্ছে না, আবার বিরোধ করার মনোভাবও নেই। যা হচ্ছে, সবকিছু ওর আব্বা-আম্মার ওপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বই নিয়ে বসলো ও। পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনা থেকে বহুদূরে সরে এসেছে ও। আরবিন স্যার শিক্ষিত মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই একজন অর্ধ-শিক্ষিত ছা গলের সাথে বসে আলাপ করতে চাইবেন না!
রম্য কথাটা মনে আসার সাথে সাথে আরবিন স্যারের কি এই বিয়েতে মতামত আছে — এই প্রশ্নটাও মাথায় আসলো রিদির। ওর আম্মাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এমন প্রশ্ন করাও যায় না। চক্ষুলজ্জারও একটা ব্যাপার আছে। মায়েদের সাথে রসিকতা করা গেলেও সব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যায় না। পরে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। রিদির মনে হলো, একবার স্যারকে কল দিয়ে শুনবে। পরে আবার ভাবলো, এতো আগ বাড়িয়ে আলাপ করে লাভ নেই। বিয়ে যেহেতু হচ্ছেই, তারচে বরং একটু ভাব ধরে থাকা যাক। বিবাহযোগ্যা কুমারীর ভাব আর আসমানের চাঁদ — দু’টোই দুর্লভ এবং আকর্ষণীয়। ধরাছোঁয়ার বাইরে, আবার খপ করে ধরে ফেলতে মন চাইবে।
রিদি মুচকি হাসলো। বই সামনে নিয়ে বসতেই কয়েকবার আরবিন স্যারের মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। অথচ, ও ভবিষ্যৎ জানে না। জানার কথাও নয়। কিশোরীর আবেগী মন যেই স্নিগ্ধ সুখের কল্পনা করছে; তা যেন অলীক কল্পনায় রূপ নেওয়ার অপেক্ষায়! সবকিছু শুরু হওয়ার আগেই শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। এই অপেক্ষারা যেন খুব দ্রুতই শেষ হতে চলেছে। সময় যত এগোচ্ছে, রিদি ততোই যেন ওর সর্বনাশের দিকে পা বাড়াচ্ছে।
ইকবাল জম্মাদার আর সোহরাব হোসেনের দেখা করার কথা স্থানীয় একটা রেস্টুরেন্টে। ইকবাল জম্মাদার কিছুক্ষণ হলো এসে বসেছেন। সোহরাব হোসেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ঘড়িতে সময় দেখতে লাগলেন তিনি। তখনই রেস্টুরেন্টের প্রবেশদ্বার ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন সোহরাব হোসেন। চোখ ঘুরেফিরে খুঁজতেই মাঝের দিকের একটা কোণঘেঁষা টেবিলে ইকবাল জম্মাদারকে দেখতে পেলেন। হাসিমুখে এগিয়ে গেলেন সোহরাব হোসেন। ইকবাল সাহেব তাকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বসতে বললেন। দু’জনে বসা মাত্র ইকবাল জম্মাদার ওয়েটারকে ডেকে টুকটাক খাবার অর্ডার করলেন। সোহরাব হোসেন নিষেধ করলেও ইকবাল জম্মাদার শুনলেন না। ওয়েটার যেতেই তিনি বললেন,
“তা কী খবর সোহরাব ভাই?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই। আপনার কী খবর?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ। চলে যাচ্ছে দিনকাল। আরবিনকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম দু’টো দিন। ওর যাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। শনিবার সকালেই চলে যাওয়ার কথা। আমি ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন দেরী হবে। কিন্তু ও থাকতে চাইছে না।”
“কোনো বিশেষ কারণ?”
সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলেন সোহরাব হোসেন। ইকবাল জম্মাদার প্রথমে থতমত খেয়ে পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
“না ভাই। তেমন কোনো বিশেষ ব্যাপার না। আসলে ওইখানে যাওয়ার পরপরই তো জবে জয়েন করতে হবে। বসে থাকার কোনো উপায় নেই। ও চাইছিল, দুইদিন আগে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেবে। ক্যান্টনমেন্টে পুরো একটা ফ্ল্যাট ওর একার। সেখানে গোছগাছ করা ছোটোখাটো ব্যাপার নয়।”
সোহরাব হোসেন এবার নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন,
“তা তো বটেই। ছেলেটা খুব কর্মঠ আর বুদ্ধিমান। এজন্য বুঝেশুনে আগে যেতে চাইছে।”
“হ্যাঁ। তা আপনি কি চিন্তাভাবনা করলেন সোহরাব ভাই? হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। আর মাত্র দুই-তিন দিন।”
“ভাবনাচিন্তা তো করেছিই। সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়ে গেছে। আর সেই সিদ্ধান্ত-ই আপনাকে জানাতে আসা।”
“কী সিদ্ধান্ত নিলেন?”
ইকবাল জম্মাদার প্রশ্নটা করে অধীর আগ্রহে সোহরাব হোসেনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। ততক্ষণে কফি আর হালকা কিছু খাবার চলে এসেছে৷ কফিতে চুমুক দিয়ে সোহরাব সাহব বললেন,
“আমাদের দিক থেকে হ্যাঁ ধরে নিন ইকবাল ভাই। আমি, আমার স্ত্রী রাজি এই বিয়েতে। তাছাড়াও মেয়ের মতামতও শুনতে চেয়েছি যে, তার বাপের সিদ্ধান্তে তার কোনো অসুবিধা আছে কিনা। মেয়ের দিক থেকেও কোনো অসুবিধা নেই।”
ইকবাল জম্মাদার কথাটা শোনা মাত্রই হাত উঠিয়ে বললেন,
“শোকর আলহামদুলিল্লাহ। যাক, আমি এখন চিন্তামুক্ত হলাম। তাহলে আগামীকাল-ই আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা পাত্রী দেখতে যেতে চাইছি আপনাদের বাড়িতে। এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?”
“অবশ্যই। হাতে তো আর বেশি সময় নেই। যা করার এই শুক্রবারের মধ্যেই করতে হবে তো নাকি? আপনারা বরং কাল চলে আসুন। আমি ম্যানেজ করে নেবো। আর তখনই সবকিছু ফাইনাল করবো।”
ইকবাল জম্মাদার আর সোহরাব হোসেনের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ আলাপ চললো, বিয়ের সাদামাটা আয়োজনসহ আরো নানান বিষয়াদি নিয়ে।
“আব্বা, রিদির মতামত কী নেওয়া হয়েছে এখানে? আমি শুধু এই প্রশ্নের উত্তরটা চাইছি। বেশিকিছু তো নয়। আপনি সুযোগ বুঝে আমার হাত বেঁধে দিয়েছেন। এখন যেকোনোভাবেই হোক বিয়েটা করিয়েই ছাড়বেন। নাহলে এই বাঁধন খোলা সম্ভব নয়। আম্মাও হঠাৎ করে আপনার পক্ষ নিয়ে কঠোর হয়ে গেল। আপনারা কেউই আমার কথা শুনছেন না। তা-ও বাদ দিলাম। সামান্য একটা প্রশ্নের জবাব দিতে কী অসুবিধা?”
আব্বা-আম্মার সামনের সোফায় বসে বেশ তিরিক্ষি মেজাজেই প্রশ্নটা করলো আরবিন। কিছুক্ষণ আগে সেলুন থেকে ফিরেছে ও। সিলেট পোস্টিংয়ের আগে যত যা কাজ আছে, সেরে নিচ্ছে। ঘরের মধ্যে যে কোনো একটা ষড়যন্ত্র চলছিল, তা সম্পর্কে বেশ আন্দাজও হয়েছিল ওর। আজ বাসায় ফেরার পরে ওর আব্বা-আম্মার কথা শুনে শিওর হলো৷
রিদির সাথে আরবিনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আগামীকাল পাকা দেখা। তারপরই এই শুক্রবারের শুভ কাজ সেরে ফেলা হবে। কথাটা শোনার পরে মোটেও চমকায়নি আরবিন। চমকানোর মতো কোনো বিষয় নয়। বরং, ওর আব্বা-আম্মা যে এরকম একটা কাজ করতে পারে— সেটা যেন ওর ধারণাতেই ছিল। কিন্তু ইকবাল জম্মাদার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আরবিনকে যেভাবে জালে আটকে ফেলেছেন, তা থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। চাইলে আরবিন সবকিছু ছেড়েছুড়ে আজ-ই রাগের মাথায় ব্যাগ, ব্যাডিং গুছিয়ে সিলেট ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারে। কিন্তু এর ফলে এতো বছরে যেই কাজটা কখনো করেনি; সেই কাজ করা হয়ে যাবে। শেষ বয়সে আব্বা-আম্মাকে কষ্ট দেওয়ার মতো নির্বোধ ও নয়। এমনও তো হতে পারতো, ওর আব্বা-আম্মা ওকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বলতেন, “তোমার চাকরি করতে হবে না। আমাদের তো কম নেই। একমাত্র ছেলে তুমি আমাদের। ঘরের ছেলে ঘরেই থাকো। বাপের সম্পত্তি আর টাকা-পয়সা যা আছে, তা তোমার পরবর্তী তিন পুরুষ খেয়ে শেষ করতে পারবে না।”
এ-ধরনের কথা আরবিনের আব্বা-আম্মা বলেননি ওকে। এই দিক থেকে আরবিন কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি। যদি এখন ও বিরোধ করে, তবে এমন কথা বলে ফেলতে সময় লাগবে না আরবিনের আব্বা-আম্মার৷ তখন আমও যাবে, আর ছালাও। দেশের চাইতে তো রিদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় আরবিনের কাছে। এই কথাটা মনে আসতে একটু শান্ত হলো আরবিন। ইকবাল জম্মাদার ওকে বললেন,
“রিদির বিয়েতে মতামত আছে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”
“তাহলে আমার অসুবিধা নেই কোনো। তারপরও আমি রিদির সাথে কথা বলে নেবো।”
আরবিন উঠে গেল। বসার ঘর থেকে নিজের ঘরে আসতে আসতে ফোনটা বের করলো ট্রাউজারের পকেট থেকে। কনট্যাক্ট লিস্টে ঢুকে রিদির নাম্বারে কল দিলো ডিরেক্ট। কল দেওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যেই রিসিভ হলো। আরবিন ফোন কানে চেপে ধরে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে শোনা গেল,
“আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি এখন একটু পড়াশোনায় ব্যস্ত আছি। আপনার কোনো জরুরি কথা আছে? থাকলে বলুন। আমি আম্মার কাছে ফোন দিচ্ছি। আম্মাকে বলবেন। পরে আমি শুনে নেবো।”
আরবিন কাটকাট গলায় বললো,
নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৬
“তোমার আম্মার কাছে দিতে হবে না। আমি তোমাকে বলতে চাইছিলাম। তুমি খুব ব্যস্ত যখন, শোনার প্রয়োজন নেই। তাহলে একবারে বিয়ের দিনই দেখা হচ্ছে। সেদিন এই আচরণের জবাব পাবে। রাখি, আল্লাহ হাফেজ।”
আরবিন ফোন কেটে দিয়ে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বিছানার ওপর বসে পড়লো। মেয়েটা এখন ওকে ইগনোর করতে শুরু করেছে। অথচ বিষয়টা জরুরি ছিল। কিছু বলতে গেলেও শুনতো না। ওর আচরণে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানীং। আরবিনের প্রতি দুর্বল হওয়ার পর থেকেই এমন করছে। আরবিন ভেবে রাখলো, সিলেট যাওয়ার আগে ওকে সোজা করে তারপর যাবে। নাহলে এই মেয়ের মতিগতির ঠিক নেই। মাথার তাঁর কয়টা ছিঁড়া আছে, খোদাতায়ালাই ভালো জানেন!