নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১০

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১০
ঝিলিক মল্লিক

আরবিন পরেছে মহা ঝঞ্ঝাটে। রিদির সাথে ঝামেলা করে তো ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়ালো, কিন্তু এখন করবে-টা কি! না বলেকয়ে নিজ বাড়িতে এখন কোনোভাবেই ফিরে যাওয়া যাবে না। তাতে বরং অশান্তি আরো বাড়বে বৈ কমবে না। কেউ ওকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেও হাজারটা প্রশ্ন করবে। কারণ, রিদির সাথে আলাপ করতেও ঘরে পাঠানো হয়েছিল ওকে। যদিও এসব মুরব্বিদের কারসাজি ছিল। তবুও, এভাবে হুটহাট ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানে— তাদেরকে এককথায় বুড়ো আঙুল দেখানো। যা অভদ্রতার শামিল।
আরবিন ঠোঁট কামড়ে ভাবছে কি করবে, তখনই শালা তিতাসকে দেখা গেল বাইরে থেকে এসে সদর দরজা আটকাচ্ছে। আরবিনকে দেখে তিতাস এগিয়ে এসে বললো,

“কিছু লাগবে দুলাভাই? চাচিকে ডাক দেবো?”
“না, আম্মুকে ডাকতে হবে না। আসলে আমি কিছু সময়ের জন্য একটু বাইরে যেতে চাচ্ছিলাম। সবে তো সন্ধ্যা। অনেকক্ষণ ভেতরেই বসেছিলাম। মনে হচ্ছে, এখন একটু বাইরের হাওয়া দরকার।”
আরবিনের শান্ত-স্বাভাবিক কন্ঠস্বর। দেখে মনে হচ্ছে না, কিছুক্ষণ আগেই সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী-র সাথে তুমুল রেষারেষি হয়েছে ওর। ঝগড়াটা আর কিছুদূর এগোলেই বোধহয় মারামারিও লেগে যেতে পারতো। রিদির কথা আর আচরণ জাস্ট সহ্যসীমার বাইরে। আরবিনের সহ্যশক্তি যথেষ্ট আছে৷ তবে রিদি বোধহয় তার ধার ধারে না। ওর অমন অসভ্য, বেয়াদবের মতো আচরণ আরবিনের জীবনের এক অন্যতম চমক। এখনো রীতিমতো রাগে মাথা যন্ত্রণা করছে ওর। তবে তিতাস কেন? বাইরের কেউ-ই তা বুঝে উঠতে পারবে না। তিতাস আরবিনের প্রশ্নের জবাবে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কিন্তু আম্মু, চাচি সবাই তো আপনার জন্য পিঠা বানাচ্ছে। রাতের খাবারের আয়োজন করছে। আপনি এখন বাইরে গেলে..”
“আরে শালাবাবু, আমি কী একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি? ফিরবো তো আবার রাতের দিকে। দরকার হয় তুমিও সাথে চলো।”
তিতাসের কাঁধে হাত রেখে হালকা একটা চাপড় মে’রে কথাটা বললো আরবিন। তিতাস তখন সানন্দে বললো,
“আচ্ছা। আমি তাহলে বড়দের বলে আসি। আপনি দুই মিনিট দাঁড়ান দুলাভাই।”
তিতাস দৌড়ে ড্রয়িংরুমের দক্ষিণ পাশের ঘর পেরিয়ে ভেতরের বারান্দা হয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। এদিকে আরবিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
তিতাস ফিরলো মিনিটখানেকের মধ্যেই। ছুটছে ও। ছুটতে ছুটতেই এসে বললো,
“দুলাভাই, চাচি আর আম্মুকে সবাইকে বলে এসেছি। তারা বলেছে, তাড়াতাড়ি আবার চলে আসতে। রাতের রান্না প্রায় হয়ে গেছে।”
আরবিন মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে “আচ্ছা” বলে তিতাসকে নিয়ে বের হলো রিদিদের দো’তলা বাসা থেকে।

রিদিদের বাসার থেকে দুই মিনিটের পায়ে হাঁটা পথে কিছুটা সামনে এগোলেই রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকান। আরবিন তিতাসকে ওর পছন্দ অনুযায়ী এক কাপ লাল চা আর মোজো হাতে ধরিয়ে বসিয়ে রেখেছে ভেতরের বেঞ্চির ওপরে। নিজে বাইরে এসে দোকানদারের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে সবে একটা সিগারেট লাইটার দ্বারা জ্বালিয়ে মুখের সামনে ধরে ফুঁকছিল। তখনই কোথা থেকে যেন সামনে এসে হাজির হলেন, রিদির আব্বা সোহরাব হোসেন। শ্বশুরকে দেখে দ্রুত সিগারেটটা মুখ থেকে সরিয়ে হাতের আঙুলে চেপে ধরে হাতটা পেছনের দিকে নিয়ে নিলো আরবিন। তবে সোহরাব হোসেনের তা চোখ এড়ালো না৷ তিনি এগিয়ে এসে হালকা কাশি দিয়ে আরবিনকে বললেন,

“বাজান, তুমি এখানে যে?”
“জি আব্বু, এইতো একটু এসেছিলাম বাইরের হাওয়া নিতে। আপনি কি এদিকটাতেই ছিলেন?”
“হ্যাঁ, গিয়েছিলাম ওই একটু সামনে দরকার ছিল৷ বাসায় ফিরছিলাম এখন। তোমাকে দেখে এগিয়ে আসলাম। তুমি কখন আসলে?”
“এইতো মাত্র কিছুক্ষণ আগে বেরিয়েছি। তিতাসও সাথে এসেছে। ও-ই যে ভেতরে, চা খাচ্ছে।”
আঙুলের ইশারায় ভেতরে বসে চা পান করতে মগ্ন তিতাসকে দেখিয়ে দিলো আরবিন। বিয়ের প্রথম দিনেই শ্বশুরের সামনে অপ্রত্যাশিতভাবে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে ; চরম অস্বস্তি হচ্ছে ওর। সোহরাব হোসেন হঠাৎ বললেন,
“চলো, ওখানে গিয়ে বসি।”

আরবিনকে নিয়ে চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসলেন সোহরাব হোসেন। দোকানদার এই এলাকার হওয়ায় তার পরিচিত-ই। দোকানদারকে ডেকে সোহরাব বললেন, তার আর তার মেয়েজামাইয়ের জন্য দুইটা লাল চা দিতে।
তারপর-ই টুকটাক কথা বলতে লাগলেন সোহরাব সাহেব। চা আসতেই চায়ে চুমুক দিতে দিতে তিনি বললেন,
“বুঝলে বাজান, এখন না খেলেও আগে আমি একসময় খুব সিগারেট খেতাম। তোমারই মতো বয়সে। কিন্তু বিয়ের পর ওসব খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি। কেন জানো?”
আরবিন চমকে তাকায় শ্বশুরের দিকে। মৃদু স্বরে প্রশ্ন করে,
“কেন?”

“কারণ তোমার শাশুড়ী সিগারেট খাওয়া পছন্দ করতো না। রিদির আম্মার তো সিগারেটের ধোঁয়া-ই সহ্য হতো না। বড্ড হাঁপানির সমস্যা আছে। এজন্য তখন থেকেই আমি সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিই। এখন তো না খেতে খেতে সেই অভ্যাসটাই আর নেই।”
কথাগুলো মৃদু হেসেই বললেন সোহরাব হোসেন। আরবিন চুপচাপ শোনে তার কথা। কোনো জবাব দেয় না। সোহরাব হোসেন আবারও বলেন,
“আমার মেয়েটাও সেরকম বুঝলে। একে তো ও সিগারেটের ধোঁয়া আর গন্ধ সহ্য করতে পারে না, তারওপর ওর আবার হাঁপানির রোগ। মায়ের ধারা পেয়েছে।”
শেষ কথাটাও সোহরাব হোসেন হাসিমুখেই বললেন। পরপরই উঠে গেলেন তিনি। চায়ের বিল মিটিয়ে আরবিনের কাঁধ চাপড়ে যাওয়ার সময়ে বললেন,

“আমি আগে আগে যাই। তুমি বরং তিতাসকে নিয়ে আরো কিছুটা সময় ঘোরাঘুরি করে তারপর এসো। এই ম্যাজমেজে শীতে বেশি সময় বাইরে থেকো না কিন্তু। ঠান্ডা ধরে গেলে ছাড়ানো সহজ হবে না।”
সোহরাব হোসেন বাসার পথ ধরে হেঁটে চলে গেলেন। আরবিন তার যাওয়ার পথে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো। একসময় ওর ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো। শ্বশুরটা খুব বুদ্ধিমান। তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক আর স্বাভাবিক কথার মাধ্যমে আরবিনকে যা বোঝাতে চাইলেন, তা বোঝা আরবিনের পক্ষে খুব সহজ ব্যাপার।
মানুষ অভ্যাসের দাস।
অভ্যাস খারাপ জেনেও মানুষ তা ছাড়তে পারে না।
স্মোকিং খারাপ। সিগারেট নিজের এবং আশেপাশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
সিগারেট খারাপ জেনেও অনেকে তা এক কথায় ছেড়ে দিতে পারে না।
আর আরবিন হচ্ছে সেই পর্যায়ের মানুষ।
তাই, দোকান থেকে গোটা এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট আর একটা লাইটার কিনে পকেটে ঢুকিয়ে তিতাসকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো ও।

রাতের খাবার শেষ হতে হতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে। আরবিন কিছুক্ষণ আগে খাওয়া শেষ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেছে। সামনে টিভিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের কোয়ার্টার ফাইনাল চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ — ম্যাচের সিডিউল এখন। টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিংয়ে এসেছে। ম্যাচ শুরু হয়েছে মাত্রই। আরবিনের সম্পূর্ণ মনোযোগ সেদিকে। এছাড়া আর কিছু করার উপায় নেই। ওর পাশেই শালা-সম্বন্ধী, শ্বশুর, মামাশ্বশুর, খালুশ্বশুর সবাই বসে আছে। একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন সবাই।
রাতের খাওয়ার সময়ে রিদিকে টেবিলের আশেপাশেও দেখা যায়নি। সম্ভবত রান্নাঘরে ঘুরঘুর করছিল। তবুও আরবিনের সামনে আসেনি। আরবিনও বাইরে থেকে আসার পর সেই যে ড্রয়িংরুমে বসেছে, এখান থেকে উঠে শোবার ঘরে পা বাড়ায়নি। রিদির থেকে দূরে দূরে থাকতে পারলেই যেন বাঁচে।আজকের দিনটা শুধু সহ্য করে থেকে যাবে। এখান থেকে বিদায় নেওয়ার পরে ওই মেয়ের মুখও দেখবে না আর কখনো। পরবর্তীতে কি হবে, তা পরে দেখা যাবে।

আরবিন ভেবেছিল আজ প্রায় অর্ধেক রাত-ই কাটিয়ে দেবে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ম্যাচ দেখার অজুহাত দিয়ে। কিন্তু মাঝখান থেকে ওর পরিকল্পনা বানচাল করে দিলেন সোহরাব হোসেন। হঠাৎ তিনি খেলার মাঝপথেই টিভি বন্ধ করে দিয়ে বললেন,
“এখন বরং সবাই ঘুমাতে যাক। আজ অনেক ধকল গেছে সবার। তাছাড়াও আরবিন বাজান, তোমার তো কাল সারাদিন জার্নি করতে হবে তাইনা? তুমি এখুনি ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে। ও রিদির আম্মা। শোবার ঘর গুছিয়ে দাও তো। আরো দু’টো মোটাতাজা কম্বল দিও ওঘরে। মশার কয়েল দিও না। ‘গুড নাইট’ দিও।”
সোহরাব হোসেন উঠে গেলেন। তিতাস উঠে আরবিনকে ধরে বললো,
“চলেন দুলাভাই, আপনাকে আপুর ঘরে দিয়ে আসি।”
“না থাক। আমি যেতে পারবো।”
সহাস্যে কথাটা বলে উঠে দাঁড়ালো আরবিন। রিদির ঘরের দিকে পা বাড়ালো অসহ্যকর অনুভূতি নিয়ে।

রিদি তখন বিছানার ওপরের বালিশগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ঠিক করে রাখছিল। কাজ করছে না যেন যুদ্ধ করছে— এমন একটা ভাব। হঠাৎ পেছনে দরজার নব আটকানোর শব্দ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। জানতো লোকটা আসবে ঘুমাতে। কিন্তু ভেবেছিল, অনেক রাত করে ঘরে আসবে। ততক্ষণে রিদি ঘুমিয়ে পরবে। আরবিনের মুখোমুখিও হতে হবে না। কিন্তু সেঁগুড়ে বালি। রিদির আব্বা সব ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। রিদি এতে ভীষণ বিরক্ত। আর বিরক্তি ভাবটা চোখে-মুখে বেশ ভালোই প্রকাশ পাচ্ছে। ভ্রূদ্বয় কুঞ্চিত করে রেখেছে। আরবিনকে দেখেও যেন দেখছে না।
আরবিন রিদির বেয়াদবি ব্যবহারের তোয়াক্কা করলো না। উঠে গিয়ে বিছানার ওপর বসলো। বালিশ টেনে পেছনে রেখে হেলান দিয়ে ফোনে গেইম খেলতে ব্যস্ত হলো। রিদি দাঁড়ালো না সেখানে। দ্রুত ঘর পেরিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেল। আরবিন সেদিকে ঘুরেও দেখলো না।

রিদি ব্যালকনি থেকে ঘরে ফিরলো প্রায় মিনিট দশেক পরে। ভেতরে এসে দেখলো আরবিন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে মুখে ধরেছে সবে। রিদির মন-মেজাজ, শরীর — কোনোটাই এখন ভালোর পর্যায়ে নেই। তারমধ্যে আরবিনের এমন কাজ দেখে পিত্তি যেন জ্বলে উঠলো ওর। বিছানার এক কোণে বসে বললো,
“আমার রুমে বসে সিগারেট খাওয়া যাবে না। ওসব ছাইপাঁশ গিলতে হলে এখান থেকে বের হয়ে গিয়ে গিলুন।”
রিদির ত্যাছড়া কথা শুনে আরবিন সরু চোখে তাকালো। গম্ভীর স্বরে বললো,

“তুমি কী আমার ওপর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করছো? ভালোভাবে বললে সিগারেট ফেলে দিতাম। ছুঁয়েও দেখতাম না। কিন্তু তোমার সাথে অসভ্যতামিই ঠিকঠাক মতো যায়। ভালো ব্যবহার তুমি ডিজার্ভ করো না।”.
কথাটা বলেই আরবিন রিদির মুখোমুখি বসলো। ওর সামনে বসেই বেনসনের ধোঁয়া উড়াতে লাগলো। রিদি কটমট চোখে আরবিনের দিকে চেয়ে রইলো। যেন এখুনি পারলে গিলে ফেলবে! আরবিনের তবু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
রিদি আর সহ্য করতে পারলো না। আরবিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে টান মেরে ওর হাত থেকে সিগারেটটা কেঁড়ে নিলো। দ্রুত খোলা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো সিগারেটটা৷ তারপর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“এসব করতে হলে বাইরে গিয়ে করবেন। আমার রুম এধরনের ফালতু কাজ করার জায়গা নয়।”
রিদি কথাটা বলেই থমকালো। আরবিন ওর দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে আছে। হু! আগেও একবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল রিদি। আরবিন কোনো কথা বললো না। কম্বল টেনে বিছানার ডানপাশে বালিশে মাথা রেখে টানটান হয়ে শুয়ে পরলো। রিদি ওকে একপলক দেখলো। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আরবিনের দিকে। ভেবেছিল, ওর এমন কাজে আরবিন রেগে গিয়ে ওকে কিছু বললেই রিদি আরো উল্টো দু’টো কথা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু সবকিছু কেমন যেন আশাতীত হচ্ছে আজ!
রিদিও আর কোনো কথা বললো না। দরজা-জানালা সব আঁটকে, ঘরের সব আলো নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে আরবিনের থেকে বেশকিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বিপরীত পাশে শুয়ে পরলো। আরেকটা কম্বল টেনে গায়ে দিলো।
অনেকটা সময় দু’জন চুপচাপ। আলো-আঁধারি খেলা করছে ঘরের মধ্যে। আবছা আলোয় রিদির আড়ষ্ট দেহ মোটামুটি যে কাউকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। হঠাৎ আরবিন বলে উঠলো,

“রিদি।”
“হু?”
“তোমার এমন মনোভাবের কারণটা কিন্তু আমাকে বলোনি।”
“কেমন?”
“এইযে, যারা দেশের জন্য কাজ করে; তাদেরকে তোমার পছন্দ না কেন, সেটা বলোনি।”
“আমার ছোট কাকাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জব করতো। ছোটবেলা থেকেই খুব বেপরোয়া ছিল কাকাই। কারো কথা শুনতো না। মাথায় ভূত চেপেছিল, দেশের জন্য কিছু করবে। তাই সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়েছিল। কাকাইকে বিয়ে দেওয়ার পরেও কাকাই একইরকম থেকে গেল। দু’টো সন্তান হওয়ার পরেও কাকাইয়ের সেই ‘দেশের জন্য কাজ করার ভূত’ আর গেল না। লাস্ট দুই বছর আগে যখন অথোরিটি থেকে একটা অপারেশনে কাকাইকে পাঠাতে চায়; তখন কাকিমণি, আমাদের পরিবারের সবাই অনেক অনুরোধ করেছিল কাকাইকে— এমন ভয়ানক মিশনে না যাওয়ার জন্য। দরকার হয় চাকরি ছেড়ে দিক।

জরিমানা-শাস্তি হলে হবে। বউ, দু’টো সন্তান ফেলে রেখে এভাবে লাইফ রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই। তাছাড়াও আমার কাকাইকে এসব ছেড়ে ব্যবসা করতে বলেছিল আমার কাকিমণি। কিন্তু কাকাই আর শুনলো কোথায়! ওই এক দেশের ভূতের জন্য মিশনে যাওয়ার মাসখানেকের মাথায় জীবন খুইয়ে দিতে হলো। আর এসবের বিনিময়ে কাকাইয়ের পরিবার কী পেলো? ক্ষতিপূরণের চেক আর কিছু মিথ্যে সান্ত্বনা! এসবকে আবার আপনারা বলেন দেশভক্তি! এজন্য আমি এমন সো কল্ড দেশের জন্য কাজ করা মানুষদের অপছন্দ করি। এরা এই এক দেশের ভূতের জন্য নিজেদের জীবন জলাঞ্জলি দেয়। আর একটা পরিবারকে ধুঁকে ধুঁকে প্রতিনিয়ত মরতে হয়।”
রিদির পুরো কথা শুনে আরবিন উঠে বসলো তড়িৎ গতিতে। দু’জনের মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে রেখেছিল রিদি। সেটা ঠেলে সরিয়ে দিলো। রিদির কাছাকাছি এসে আধশোয়া হয়ে উচ্চস্বরে বললো,

“এই সামান্য বিষয়ের জন্য ভুলভাল যুক্তি ধরে তুমি এমন আচরণ করছো? হোয়াট দ্য ফা*ক! আর ইউ কিডিং উইথ মি?”
আরবিনের কন্ঠস্বরে ক্ষণিকের জন্য রিদির হৃৎস্পন্দন কেঁপে উঠলো। নিজের মনের ভয়ডরকে আড়াল করতে চেয়েও পারলো না। চোখের চাহনিতে তা প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। আরবিন কিছুক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো৷ তারপর চোখ বুঁজে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
“লুক রিদি, আমি সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করলেও যুদ্ধ করবো না বা যুদ্ধে মদদ দেবো না। যে, আমাকে এই কাজের জন্য ম’রতে হবে। আমি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার কাজ করবো। তাছাড়াও এসব আমি তোমাকে বলছি কেন? দেশের জন্য ম’রতে হলে ম’রবো। তোমাদের মতো দেশ আর দেশের কাজকে ঘৃণা করা মানুষের জন্য নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারবো না। তুমি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নও।”

আরবিনের শক্ত শক্ত কাটখোট্টা কথাগুলো রিদির বুকে যেন ধারালো ছুরির ফলার ন্যায় আ’ঘাত করছে। আরবিন নিজেও জানে, ও অবিশ্বাস্য কথা বলেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জীবনের ঝুঁকির বাইরে নয়। বরং কিছু বছর আগে সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র আইটি অফিসারকে হ ত্যা করা হয়েছিল — শুধুমাত্র তার হাতে কিছু সিক্রেট ইনফরমেশন ছিল বলে৷ আর এই ঘটনা দেশের নামকরা সব পত্রিকায় খবরের শীর্ষস্থানে ছিল।
রিদি আহত চোখে আরবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে যথাসম্ভব কঠিন দেখাতে চেয়েও পারছে না। বরং জেদ বাড়ছে আরো। আর এই জেদের কারণেই রিদির চোখ টলমল করতে লাগলো। পারলে এখুনি কেঁদে ফেলবে। ক্ষত-বিক্ষত দহনের যন্ত্রণা নিয়ে আরবিনের চোখের দিকে তাকিয়ে ও বললো,

“আপনার চাকরি কী আপনার জীবনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ?”
“আমার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে দেশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
কথাটা বলে থামে আরবিন। সামনের দিকে কপালের ওপরে থাকা হালকা ঝাঁকড়া চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে রিদের দুই পাশে হাত রেখে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড টু মি! তোমাকে এতো কৈফিয়ত দিচ্ছি কেন? কে তুমি? তুমি কী নিজেকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ভাবছো? যদি ভেবে থাকো, তবে তুমি সম্পূর্ণ ভুল। একজন সৈনিকের স্ত্রী হিসেবে তোমার দায়িত্ব হলো, তুমি আমাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে সবসময় সাপোর্ট করবে, পাশে থাকবে। অথচ বিয়ের প্রথম দিনেই তুমি পল্টি খেয়ে গেলে। পোল্ট্রি মুরগি একটা!”
আরবিনের কথা শুনে রিদির শরীর জ্বলে উঠলো। পোল্ট্রি মুরগি ও খাওয়া তো দূর: এর নামও শুনতে পারে না। সেখানে আরবিন কিনা ওকে পোল্ট্রি মুরগির সাথে তুলনা করছে!

“আপনি কিন্তু..
রিদি আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে, তখনই আরবিন ওর আঙুল চেপে ধরে হাতটা বিছানার সাথে মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“আঙুল আর চোখ নামিয়ে কথা বলবে। স্বার্থপর মেয়ে কোথাকার! আমি স্বার্থপরদের খুব ঘৃণা করি। আর দুর্ভাগ্যবশত তা-ই এসে জুটেছে আমার কপালে। তুমি কী চাও? আমাকে বলো তো? এতো অশান্তি করছো কেন? আমার শান্তির জীবনটা ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো কেন?”

আরবিনের কথায় যেন কিছু একটা ছিল। রিদির বিছানার সাথে লাগানো পিঠের মেরুদণ্ডের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল। অপরদিকে অজানা কারণে কান, মুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে লাগলো। এতক্ষণে টের পেলো, আরবিন আর ও একই সাথে। আরবিন ওর ওপরে ভর দিয়ে শুয়ে আছে। আর রিদি ওর বুকের নিচে। আরবিনের লম্বাচওড়া হাতদুটো রিদির কোমরের দুইপাশ ঘেঁষে অবস্থান করছে। পায়ের সাথে পা লেগে গেছে প্রায়। আরবিন মোটেও এসবের তোয়াক্কা করছে না। ও রিদির দিকে উত্তপ্ত চাহনিতে চেয়ে আছে শুধুমাত্র জবাবের আশায়। রিদি যেন বোবা হয়ে গেছে আচনক। কোনো কথা বলতে পারছে না। শুধু নোটিশ করছে, আরবিনের সাথে ওর শরীরের ছোঁয়া লাগছে কিনা।
আরবিন মনে করলো, রিদি ওর কথাকে মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না। ওকে অপমানিত বোধ করাতেই চুপ করে আছে। কোনো জবাব দিচ্ছে না।

“রিদি!”
আরবিন জোরে চিৎকার করে একটা ধমক দিলো রিদিকে। রিদির শরীর কেঁপে উঠলো আচনক এমন কান্ডে। ভাগ্যিস এই ঘরটা বাড়ির একেবারে দক্ষিণ কোণে, শেষের দিকে৷ সামনে ড্রয়িংরুম। তারপর আরেকটু ফাঁকা বারান্দা ছেড়ে বাদবাকি ঘর। বদ্ধ এই ঘরের কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি বাইরের কারো কানে যাচ্ছে না।
এমনকি দু’জন মানুষ যে এখানে তাদের বিয়ের পরে একসাথে প্রথম রাত কাটানোর মুহূর্তে ঝগড়ায় লিপ্ত, তা-ও গোটা দুনিয়ার কাছে অজানা। কেউ বোধহয় কোনোদিন জানতেও পারবে না, ওদের সম্পর্কের এই জটিল সমীকরণের কথা।
রিদি প্রায় কেঁদেই ফেলেছে। শাড়ির আঁচলটা টেনে চোখ মোছার বৃথা চেষ্টা করলো ও। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আরবিনের কঠোর আচরণে জেদ ধরছে আরো বেশি। ভাবতেও পারেনি, রাত বাড়ার সাথে সাথেই আরবিন এতোটা কঠোর হয়ে যাবে ওর প্রতি। অথচ আজ সন্ধ্যায়ও রিদি ওকে ইচ্ছামতো কথা শুনিয়েছিল, মেজাজ দেখিয়েছিল। তার-ই শোধ তুলছে বোধহয়। রিদি এবার চোখ নামিয়ে আরবিনের পাঞ্জাবির কলারের ওপর রাখলো। আস্তে আস্তে বললো,

“আরবিন আমি আসলে..”
পুরো কথা শেষ করতে পারলো না রিদি। তার আগেই আরবিন ওর ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো। আলতোভাবে বললো,
“স্যরি।”
আরবিন গম্ভীরতার সাথে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে রিদির দিকে। ওর চোখের চাহনি অন্যরকম। রিদির আশংকা হলো হঠাৎ। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিপদের সংকেত দিলো। হৃৎস্পন্দন দ্রুততার সাথে বাড়তে লাগলো। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যেতেই রিদি আরবিনের বুকে ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একচুল পরিমাণও সরাতে পারলো না। রিদি এবার আরবিনের চোখে নিজের হরিণীর ন্যায় ভীতু চোখজোড়া রাখলো। এই চোখজোড়ায় ভয় লুকিয়ে আছে আরবিনের ওই চোখের ভাঁজে লুকানো স্ত্রী-র প্রতি সদ্য জন্মানো কামুকতা, ওর দাঁতে দাঁত চেপে আঁটকে রাখা ঠোঁটের ভাঁজে অবস্থান করতে থাকা স্পষ্ট রাগ-ক্ষোভ আর জেদের প্রতি। এসবের সমন্বয়ে যেই ধ্বংসের আবির্ভাব আসন্ন, তা আন্দাজও করতে পারেনি রিদি। যদি করতে পারতো তবে আরবিনের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে তর্ক করার আর গলা উঁচিয়ে কথা বলার মতো সাহস করতো না৷ নূন্যতম জেদও দেখাতে যেতো না।

রিদিরও হঠাৎ কি হলো কে জানে! ও নিজেও বোধহয় এই ইশারার অপেক্ষায় ছিল। বদ্ধ ঘরে ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় আরবিনের ওই চোখ জোড়া ভয়াবহভাবে আকর্ষণ করতে লাগলো। যা থেকে বেঁচে ফেরার উপায় জানা নেই রিদির। ও যেন সম্মোহিত হতে থাকলো মুহূর্ত বাড়ার সাথে সাথে। আরবিনের মুখ ধীরে ধীরে নেমে আসলে রিদির গলার কাছটায়। আরবিন হুঁশেই ছিল। যা করছিল, পরিণতি জেনে-বুঝেই, ইচ্ছাকৃত আর চালাকির সাথে। মেয়েটা ওকে নিয়ন্ত্রণে থাকতে দিচ্ছে না। শেষমেশ আরবিন নিজেদের মধ্যকার দূরত্বের বাঁধ ভেঙে ফেললো চোখের পলকে। রিদিও সাড়া দিলো। আরবিনের পোড় খাওয়া ওষ্ঠদ্বয়, যাতে এখনো লেপ্টে আছে সিগারেটের ছোঁয়া; তারা মিশে গেল রিদির প্রস্ফুটিত কোমল পুষ্পের ন্যায় ওষ্ঠজোড়ায়।

রিদির রাগ নাকি জেদের হার, জানে না ও; কি একটা কারণে যেন এই মুহূর্তেই ওর চোখের কোল বেয়ে টপটপিয়ে কয়েকটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো। কাঁধের কাছাকাছি গিয়েই তা বিউটিবোনের ওপর গড়িয়ে পড়লো। শক্ত করে আরবিনের পাঞ্জাবির কোনা চেপে ধরলো রিদি। সেখান থেকে হাত সরিয়ে আরবিনের শক্তপোক্ত পেটানো বাহুতে রাখলো। দু’জনেই এখন নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে। ঝগড়া, মা রা মারি, হানাহানি, জেদ, তর্ক-বিতর্কের স্থান নেই যেখানে। আরবিনও নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত। রিদির কিশোরী মন এবং নির্লিপ্ত কায়া জীবনের প্রথম পুরুষালি স্পর্শের ছোঁয়া পেয়ে আশকারা দিতে দ্বিধা করছে না মোটেও৷ ওর মাথাতেই নেই, সন্ধ্যায়ও ডিভোর্সের কথা তুলেছে ও। এই স্বামীর স্পর্শ, এই আলতো ছোঁয়া — এসব অনুভূতি ওর জন্য নতুন। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়েছে যেন। নিজেকে, আশেপাশের পরিবেশকে ভুলে গেছে ক্ষণিকের জন্য।

আরবিন যখন ওর ঠোঁটজোড়া রিদির গলার ভাঁজের আড়ালে লুকায়িত তিলটার ওপরে রেখে ওর গলায় মুখ ডোবালো, রিদির চোখ-মুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠলো তখন। শীতের এই রাতেও মনে হচ্ছে যেন, আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত শিখায় অবগাহন করছে ও। ঠোঁট কেঁপে উঠলো ওর। আরবিনের ঝাঁকড়া চুল শক্ত করে চেপে ধরলো দু’হাতে। তখন আরবিনের কণ্ঠস্বর শোনা গেল,
“স্বামীর সংস্পর্শে এসে এতোটা আনন্দিত হইয়ো না, যাতে আবার স্বামীর মাথার চুল একটাও না থাকে।”
রসিকতা করছে নাকি! এমন মুহূর্তেও কেউ রসিকতা করে? রিদির জানা নেই। কারণ, এসব অনুভূতির সাথে ও নতুন পরিচিত হচ্ছে। তবে আরবিনের কন্ঠস্বর গম্ভীর-ই শোনাচ্ছে। তাতে বিন্দুমাত্র রসিকতার আভাস নেই। আরবিন এবার ধীরে ধীরে মাথা উঠালো। রিদির চোখে চোখ রেখে ওর শাড়ির আঁচল সরিয়ে হাত গলিয়ে কোমরে রেখে বললো,
“আজকের রাতটা, আমাদের জীবনের একসাথে প্রথম এবং শেষ রাত। আর তুমি আজকের রাত সারাজীবন মনে রাখতে বাধ্য। এসব কেন বলছি বলে তো?”

“কেন?”
আরবিনের প্রশ্নের জবাবে রিদিও বোকার মতো প্রশ্নটা করে। আপাতত ওর অবাধ্য হতে ইচ্ছা করছে না। মন সায় দিচ্ছে না। মন বলছে, এভাবেই সামনের মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে থাকো৷ আর কিছু ভেবো না। কিন্তু আরবিনের পরবর্তী কথাটা যেন রিদিকে অকূল দরিয়ায় ফেলার মতো অবস্থা তৈরি করলো। আরবিন রিদির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

“আজকের রাতটা আমি আমাদের জন্য একটা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবো। জঘন্য স্মৃতির পাতায় রাখবো। জীবনের শেষ পর্যায়ে গিয়েও আমার মনে থাকবে, একজন দেশদ্রোহীকে লেফটেন্যান্ট আরবিন আল তৈমুর নিজের মায়াজালে আবদ্ধ করে শাস্তি দিয়েছিল। আর সেই শাস্তি এতোটাই ভয়াবহ যে, তরবারির ফলার চেয়েও ধারালো। আজকেই আমাদের প্রথম এবং শেষ রাত। এই রাতের পর থেকে তুমি ম’রে গেলেও আমার সংস্পর্শে আসতে পারবে না৷ আমি তোমাকে আসতে দেবো না। তোমার প্রতি স্বামী হওয়ার সকল দায়িত্ব পালন করবো। তোমার জীবনের ভার বহন করবো, প্রতিটা পদক্ষেপে সাথে থাকবো; কিন্তু! তুমি কখনো লেফটেন্যান্ট আরবিনের কাছাকাছি আসতে পারবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষও হতে পারবে না। আই উইশ, আজকের রাত তুমি সারাজীবনেও ভুলবে না। আমি তোমাকে ভুলতে দেবো না।”

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ৯

আরবিন প্রতিটা কথা যথেষ্ট শান্ত স্বরে বললেও রিদির মনে হলো ওই প্রতিটা কথার ভাঁজে মারাত্মক জেদ আর দম্ভ মিশে আছে। রিদির আবারও কান্না পেল ভীষণ। তবে এবার আর জেদ কিংবা আবেগের জন্য নয়। বরং নিজের নির্বুদ্ধিতা আর ভুলবশত আরবিনের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য। কিন্তু এখন এমন অবগাহনে ডুবে গেছে, যেখানে থেকে বাঁচার উপায় জানা নেই ওর৷ শত চেষ্টা করেও না পারলো আরবিনকে ধাক্কা দিতে, আর না ওর কাছাকাছি আসা থেকে রুখতে। নিজের দোষের জন্য আজ এতো বড় একটা শাস্তি পেতে হচ্ছে ওকে। আরবিন এতো চতুর আর নিষ্ঠুর! আগে বোঝেনি কেন!

নিষিদ্ধ শব্দের দিনলিপি পর্ব ১১