নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৯

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৯
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

“ত্যাড়ামি বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে সোজা টালবাহানা ছাড়া আমায় বিয়ে করবেন, অন্যথায় আপনাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।”(বজ্র কণ্ঠে)
ইলার বাক্য বচনে আদিত ভ্রু না কুঁচকে পারলোনা। বাজ খাই কণ্ঠে বলে উঠলো,,
“এই মেয়ে এই, মেয়ে হয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার থ্রেট দিচ্ছ। কানের নিচে একটা দিলে কান্না করতে করতে বিছানায় সাগর তৈরী করে ফেলবে। নিজের লিমিট ক্রস করতে আসবেনা।”(বাজ খাই কণ্ঠে)
ইলা মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসলো, মুখে হাসি বিদ্যমান রেখে বলে উঠলো,,

“আমি তো জানি আমি লিমিট ক্রস করলে আপনি রেগে আমায় বিয়ে করে ফেলবেন অতঃপর আমাদের ডজনখানেক বেবি হবে। আয়হায়, মে তো ফিদাআআ হো গ্যায়া।”(মিটমিট করে হেসে)
আদিত মুখোভঙ্গি এমন করলো যেন রাজ্যের বিরক্ত সে ইলার উপরে। জানালার দিকে মুখ করে আদিত বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,,
“ন্যাকাষষ্ঠী জানি কোথাকার।”(বিড়বিড়িয়ে)

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইলা এক গাল হেসে আদিতের এক হাত জড়িয়ে ধরলো, আদিত ছাড়িয়ে নিতে গিয়েও নিলোনা।
আদিত মূলত ইলাকে চায়, ভীষণ ভাবে চায়। কিন্তু তার জীবনে সে যে পাপ করেছে, সে পাপের আঁচ সে ইলাকে স্পর্শ করতে দিতে চায়না। সবটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আদিত।
এদিকে সারু মুখ গোমড়া করে একবার শেরহামের দিকে তাকাচ্ছে একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাচ্ছে তো আরও একবার আড়ি পেতে আদিত ইলার কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছে। বিরক্তিতে সারুর চোখ মুখ কুঁচকে এলো। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,,
“ভাল্লাগেনা, এভাবে কতক্ষন বসে থাকা জায়গা! এই লোক পাশে থাকলেও বসে থাকা যেত, কি একা একা একজোড়া কবুতরের পাশে বসে ওদের ঠোকরা ঠুকরি দেখছি।”(বিড়বিড়িয়ে)

কক্সবাজার টু ঢাকা জার্নি করে প্রায় সকলেই ক্লান্ত। রাত হয়ে এসেছে অনেকটা। কল্যাণী ইলাকে রায় বাড়িতে থাকতে বললেন কিন্তু ইলা থাকবেনা, সে বাড়িতেই যাবে। শেষে কল্যাণী আদিতকে বললেন ইলাকে বাড়িতে ছেড়ে আসতে। আদিত একনজর ইলার দিকে তাকিয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে গিয়ে বসলো। ইলা মৃদু হেসে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।

খাওয়ার টেবিলে প্লেটের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে সারু। এতদিন যা খেত তারচেয়েও দুই গুণ বেশি খাবার প্লেটে। সারু অসহায় চোখে পাশে বসা শেরহামের দিকে তাকালো। শেরহাম ইশারা করলো খাওয়া শুরু করতে।
সারু একে একে কল্যাণী, নেহাল রায়, স্নিগ্ধা, আদিত ও মিতালির দিকে তাকালো। মিতালির দিকে তাকাতেই মিতালি বলে উঠলেন,,
“সবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলে কি তোমার প্লেটের সব খাবার উধাও হয়ে যাবে? এসব তোমাকে খেয়ে শেষ করতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো।”

সারুর আর করার কিছুই রইলোনা। সবাই একসাথে জেকে ধরেছে তাকে সব খাবার শেষ করানোর জন্য। অগত্যা সারুকে খাওয়া শুরু করতে হলো। সারুর নজর গেলো কল্যাণীর পাশে থাকা স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে চেয়ে আছে তার দিকে। সারু ভাবলো, স্নিগ্ধার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু স্নিগ্ধার সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনার পর স্নিগ্ধা একেবারে নিশ্চুপ নির্বাক হয়ে গেছে। সারু চেয়েও স্নিগ্ধার সাথে তেমন কথা বলতে পারেনি। সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সারু। মৃদু কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,

“এতসব আমি কিভাবে খাবো! আমার পক্ষে সম্ভব নয়..”(মৃদু কণ্ঠস্বরে)
সারুর কথা পুরোপুরি শেষ না হতেই হুট করে স্নিগ্ধা বলে উঠলো।
“দাভাই খাইয়ে দিলে নিশ্চয়ই খাবে। দাভাই বৌদিকে খাইয়ে দাও।”(থেমে থেমে)
খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। মেয়েটা আজ এতটা দিন পর নিজ ইচ্ছাকৃত কিছু বলেছে। এদিকে সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধা অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে ফেললো। কল্যাণী হালকা কেঁশে বলে উঠলেন,,

“স্নিগ্ধা মা যেহেতু বলেছে শেরহাম নিজ হাতে খাইয়ে দে সারুকে।”(হালকা কেঁশে)
সারু শেরহামের দিকে আড়চোখে তাকালো। শেরহাম হালকা হেসে সারুর প্লেট থেকে এক লোকমা নিয়ে সারুর মুখের সামনে ধরলো। সারু শেরহামের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
শেরহাম ইশারা করলো মুখ হা করতে। সারু মুখ হা করে খাবার টুকু খেয়ে নিলো। খাবার শেষ হতেই স্নিগ্ধা বললো,,
“এই না বললে সবটা খেতে পারবেনা, দাভাই খাইয়ে দিতেই তো সবটা খেতে নিলে।”
স্নিগ্ধার কথায় বেশ লজ্জা পেলো সারু। খাওয়ার টেবিলে শশুর শাশুড়ি, জেঠি শাশুড়ি, ভাসুর এতগুলো মানুষের সামনে শেরহামের হাতে খাবার খেলো। ভাবতেই সারুর কান গরম হয়ে এলো।
“বৌদি আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।”(নিচু স্বরে)

স্নিগ্ধা একথা বলে নীরবে উঠে ধীর পায়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। কল্যাণী বহুদিন পর মেয়েটাকে এমন নিজ ইচ্ছায় কথা বলতে ও সারুর সাথে একসাথে ঘুমাবার কথা বলতে দেখে খুশি হলেন। কল্যাণী মনে প্রাণে চাইছেন স্নিগ্ধা আবারো আগের মতন প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক।
সারু বেশ খুশি হলো, অনেকদিন পর স্নিগ্ধার সাথে ঘুমাবে। আসলে ঘুমাবে কম গল্প করবে বেশি। সারু উৎফুল্ল মনে নেচে উঠে স্নিগ্ধার ঘরের দিকে আগত হতে নিলেই শেরহাম চাপা স্বরে বলে উঠলো,,

“প্রথমে ঘরে এসো এরপর স্নিগ্ধার ঘরে যেও। আর দ্রুত উঠা চলা করবেনা একদম।”(চাপা স্বরে)
সারু যেতে নিয়েও ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে তাদের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। শেরহামও সারুর পিছু পিছু উঠে গেলো। টেবিলে বসে থাকা মিতালি, কল্যাণী ও নেহাল রায় মিটমিট করে হাসলেন। আদিতের খাওয়াও প্রায় শেষ। আদিত উঠে যেতে নিলে কল্যাণী কড়া গলায় আদেশের স্বরে বলে উঠলেন,,
“যেখানে বসে আছিস সেখানেই বসে থাক, ঘরের দিকে এক পাও বাড়াবিনা।”

আদিত ভ্রু কুঁচকে সদ্য টেবিল থেকে উঠতে যাবে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কল্যাণীর এমন কড়া কণ্ঠের আদেশ সূচক বাণী শুনে চুপচাপ ভ্রু কুঁচকে। কল্যাণী কণ্ঠে কঠোরতা বজায় রেখে বলে উঠলেন,,
“সবটা কি পুতুল খেলা পেয়েছিস? মেয়েটা তোকে ভালোবাসে। তোর জন্য পারফেক্ট। যথেষ্ট সরল, ভদ্রসভ্য, শান্তশিষ্ট। সবাইকে মান্য করে চলে। তুমিও ওকে ভালোবাসো, সেখানে কেনো তুমি ওকে বিয়ে করবেনা বলছো? সমস্যাটা কোথায়? বয়স তো তোমার কম হয়নি! আমার কি ছেলে বউকে আদর যত্ন করতে ইচ্ছে হয়না?”(কড়া কণ্ঠে)

আদিত বুঝলো ইলাকে বিয়ে করার কথা বলছেন কল্যাণী। তবুও আদিত ভাবটা এমন করলো যেন কল্যাণী কোন মেয়ের কথা বলছে বুঝতে পারছেনা আদিত। সরল কণ্ঠে বলে উঠলো,,
“কোন মেয়ের কথা বলছো মা?”(সরল কণ্ঠে)
কল্যাণী রাগ দেখালেন। রাগান্নিত স্বরে বলে উঠলেন,,
“নাটক করবেনা একদম, তুমি ভালো করেই বুঝেছো কোন মেয়ের কথা বলছি। ইলার কথা বলছি, শুনো আমি তোমার কোনো বাহানা দেখতে চাইনা। সামনের মাসেই তোমার আর ইলার বিয়ে হবে এন্ড দ্যাট’স মাই ফাইনাল ডিসিশন।”(রাগান্নিত স্বরে)

আদিত মুহূর্তের মাঝেই ভাবনায় হারালো। কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হতেই আদিতের মুখশ্রীতে রাজ্যের গম্ভীরতা ভর করলো। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,,
“নেক্সট মান্থ ১ তারিখেই আমি কানাডা ফিরছি।”(গম্ভীর স্বরে)
কল্যাণী সহ মিতালি, নেহাল রায় অবাক হলেন। ভড়কে যাওয়া দৃষ্টিতে চাইলেন আদিতের দিকে। কল্যাণী অবাকের স্বরে বলে উঠলেন,,

“নেক্সট মান্থ কানাডা ফিরছি মানে! তুই আবার আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?”(অবাক স্বরে)
“একেবারের জন্য তো যাচ্ছিনা। নেহাৎ কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক তাই আমাকে চারমাসের লম্বা ছুটি দিয়েছেন। সময় ফুরিয়ে আসছে, আমাকে নেক্সট মান্থ যেতে হবে মা।”(গম্ভীর কণ্ঠস্বরে)
কল্যাণী নিশ্চুপ হয়ে রইলেন। হঠাৎ ওনার বিপুল রায়ের কথা মনে পড়লো। মানুষটাকে বহুদিন হলো দেখেনি কল্যাণী। কণ্ঠস্বর অব্দি শুনতে পায়নি।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কল্যাণী বলে উঠলেন,,

“ঠিক আছে, যেও। তবে শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাক করে এখানেই কোনো জব করো।”(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
কল্যাণী নিজের কথা বলে আর বসে থাকলেন না। টেবিলের এটো প্লেটগুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন। মিতালি কল্যাণীকে সাহায্য করার জন্য কল্যাণীর পিছু পিছু গেলেন। নেহাল রায় আদিতের কাঁধে হাত রেখে “এবার আর দূরত্ব তৈরী করোনা। দাভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে এসো।” বলেই নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। একা আদিত খাবার টেবিলে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। শেষে ফোঁস করে একটা শ্বাস ত্যাগ করে দেও তার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।

“স্নিগ্ধার কাছে যাচ্ছ ভালো কথা, রাত জেগে গল্প করতে যেন না দেখি। এখন রাত জাগলে তোমার জন্য প্রব্লেম হবে সেই সাথে স্নিগ্ধারও প্রব্লেম হবে। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে।”(কড়া কণ্ঠে)
সারু চোখ মুখ কালো করে মেঝের দিকে চেয়ে রইলো। কতক্ষন ধরে লোকটা কড়া গলায় কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সারুর এমন মুখোভঙ্গি দেখে শেরহাম কড়া কণ্ঠেই বলে উঠলো,,
“এদিকে তাকাও, তাকাও বলছি।”(কড়া কণ্ঠে)
সারু তাকালোনা। শেরহাম দুহাতে সারুর গাল স্পর্শ করে সারুর মুখশ্রী নিজের দিকে ফেরালো। সারু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা না করে চোখ বন্ধ করে আছে। এর মানে সে বুঝাতে চাচ্ছে কিছুতেই শেরহামের দিকে তাকাবেনা। শেরহাম মৃদু হেসে দিলো সারুর মুখোভঙ্গি দেখে। সারুকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঠোঁ’ট বাড়িয়ে আলতো করে চু’মু খেলো সারুর ঠোঁ’টে। সারু ফট করে চোখ মেলে তাকালো। নিজের দুগাল থেকে শেরহামের হাত সরিয়ে বলে উঠলো,,

“এসব চু’মু’টু’মু খাওয়ার চিন্তা ভাবনা ভুলেও করবেন না। ঠোঁটে একদম ২৪ ঘন্টা থাকার লিপস্টিক লাগিয়ে দিবো হুহ। কোথাও নিজের মুখ দেখাতে পারবেন না। সরুন, যাচ্ছি আমি।”
“আমাকে বাবা বানানোর শাস্তি কিন্তু আরও বাড়বে।”
“হুহ, পারেনই তো শুধু এই এক কথা বলতে।”
“শুধু বলতে নই, কাজেও দেখাবো। এখন চু’মু দেও আমাকে।”
“আচ্ছা দিব চোখ বন্ধ করুন।”

সারুর সরল কথায় শেরহাম সত্যিই নিজের চোখ বন্ধ করলো। সারু শেরহামের কান মলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালোনা। দ্রুত পদে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এদিকে শেরহাম আহ শব্দ করে চোখ মেলে দেখলো সারু পালিয়েছে। দরজার দিকে তাকাতে দেখলো সারু মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিয়ে তাকে মুখ ভেঙালো। শেরহাম এগিয়ে যেতে নিলে সারু দৌড় দিলো স্নিগ্ধার রুমের উদ্দেশ্যে।
শেরহাম বিড়বিড়িয়ে বললো,,

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৮

“শান্তিতে কোনোকালেই এঁকে চু’মু খেতে পারলাম না। কোনো না কোনো ভাবে বাগড়া দিবেই দিবে। চু’মু খেতে গেলেই শিং মাছের মতো নড়াচড়া করবার, উফফ।”(বিড়বিড়িয়ে)

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ২০