নীল চিরকুট গল্পের লিংক || নৌশিন আহমেদ রোদেলা

নীল চিরকুট পর্ব ১+২
নৌশিন আহমেদ রোদেলা

গ্রীষ্মের তান্ডব শুরু হয়েছে মাত্র। আকাশে তেজস্বী সূর্য। রোদের তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পিচ ঢালা রাস্তা, ফুটপাত। শাহবাগ জাতীয় গ্রন্থাগারের দ্বিতীয় তলার ফ্যানগুলো দ্রুত গতিতে ঘুরছে। চারপাশে পিনপতন নীরবতা। ভ্যাপ্সা গরমে ঘেমে নেয়েই চাকরির বই ঘাটছে বিভিন্ন বয়সের পাঠক। গ্রন্থাগারের একদম কোণার দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে বসে আছে নীরা। সামনে রাখা বইয়ের এক-আধ পাতা উল্টে পাল্টে দেখে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘ তুই কি তোর পাগলামোটা বন্ধ করবি না নমু? এভাবে আর কতদিন? সহ্যের একটা সীমা থাকা উচিত। তোর কি বিরক্ত লাগে না?’
নম্রতা জবাব দেয় না। সামনে থাকা চির পরিচিত ফিলোসোফির বইটি আবারও উলটে পালটে দেখে। বইয়ের মলাটের নিচের দিকটায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নীরা এবার চেতে উঠে বলল,
‘ আর কতবার দেখবি এই বই? তিন বছর ধরে তো দেখছিস। কিছু পেয়েছিস?’
নীরার উঁচু স্বরে কয়েক জোড়া বিরক্ত চোখ তাদের ওপর এসে পড়ল। নীরা ঝটপট গলার স্বর নিচু করল। চাপা ফিসফিসিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ নমু? পাগলামো করিস না। আজকালকার যুগে এমনটা শুধুই কল্পনা। কেন এতো সিরিয়াস হচ্ছিস বল তো? তিনটা বছরে কী থেকে কী হয়ে গিয়েছিস জানিস? একবার তাকিয়ে দেখেছিস নিজেকে? এটা ১৯১৯ নয় এটা ২০১৯। বুঝার চেষ্টা কর একটু।’
নম্রতা জবাব না দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাতের বইটা নির্দিষ্ট জায়গায় খুব যত্ন করে রাখল। ডানহাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে খুব যত্ন করে ছুঁয়ে দিল বইটার গা। সাথে সাথেই বুকের ভেতর উথলে উঠল এক দলা কান্না। নম্রতা মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল। এদিকে ওদিক তাকিয়ে চোখের জল গড়ানো আটকাল। আর কত কাঁদবে সে? প্রতিটি দিন তো এমনই হচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তই তো নিঃশ্বাস আটকে আটকেই বেঁচে থাকছে সে। নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। নম্রতার কাঁধে আলতো স্পর্শ করে বলল,

‘ ক্লাস টাইম হয়ে গিয়েছে দোস্ত। এবার তো চল। আর কতক্ষণ থাকবি?’
নম্রতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ হুম। চল।’
কথাটা বলেও কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকে নম্রতা। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে ফিলোসোফির ময়লা হয়ে আসা মলাটটির দিকে। তারপর ধীর, গম্ভীর পায়ে বেরিয়ে যায়। নীরা খানিক অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ছোট্ট বেলার উচ্ছল বান্ধবীটির এমন বদলে যাওয়া দেখে বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা করে উঠে। মনটা সেই অজ্ঞাত পুরুষের প্রতি ভয়ানক রাগে ফুঁসে ওঠে। পরমুহূর্তেই নিভে যায়। কে জানে? আদৌ সে পুরুষ নাকি কোনো মহিলা?

ভার্সিটি ক্লাস শেষে রোকেয়া হলের দিকে হাঁটছিল নম্রতা আর নীরা। বরাবরের মতোই চুপচাপ নম্রতা নীরার গল্প ঝুড়ির নীরব শ্রোতা। নীরা ছোট থেকেই কম কথা বলা মেয়ে আর নম্রতা চঞ্চল। কিন্তু সেই ইন্সিডেন্টের পর অদ্ভুতভাবেই বদলে গেল সব। নম্রতার চঞ্চলতা শরৎ-এর শিউলির মতোই ঝড়ে পড়ল। দুই বান্ধবীর মধ্যে তৈরি হলো বিস্তর নীরবতা। সেই নিশ্চুপতা দূর করতেই ইন্ট্রোবার্ট নীরা নিজেকে প্রকাশ করতে শিখল। নম্রতাকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু নম্রতার আটকে থাকা মনটা আর সচল হলো না। হাজারও ব্যস্ততা আর হাসি-মজার মাঝেও এক চিলতে উদাসীনতা তার চোখে-মুখে দৃঢ় বসতি গেঁড়ে বসল। সেই দৃঢ় বসতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কি নীরার আছে? রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের কাছে আসতেই হঠাৎ-ই দাঁড়িয়ে পড়ল নম্রতা। নীরা নম্রতা থেকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছিল। পিছন ফিরে ভ্রু কুঁচকাল। বলল,

‘ কি রে? দাঁড়িয়ে পড়লি যে? কি হয়েছে?’
নম্রতা জবাব না দিয়ে ফটকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির হাতের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটির হাতে দশ-বারোটা পাতলা নীল রঙের কাগজ। রোল করে ধরে রেখেছে হাতে। নীরা জবাব না পেয়ে নম্রতার দৃষ্টি অনুসরণ করে মেয়েটির হাতের দিকে তাকাল। তারপর নরম কন্ঠে ডাকল,
‘ নমু?’
নম্রতা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে তাকাল। হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ কিছু না। চল।’

নীরা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মাথা নাড়ল। নম্রতার গোপন রাখা অশ্রুগুলো যে আজও বেহায়ার মতো ঝড়বে তা বেশ বুঝতে পারছে নীরা। এমনটাই তো দেখে আসছে দিনের পর দিন। এক-দুই সপ্তাহ ঠিকঠাক যায় তারপর আবারও শুরু হয় নম্রতার ধুঁকে ধুঁকে কান্না। আচ্ছা? এতো বড় মেয়ের কি এতো আবেগ সাজে? নীরার আপ্লুত মস্তিষ্ক উত্তর দেয়, ছোট-বড় কি? মেয়ে মানেই তো আবেগের আঁটখানা।

হলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় কাজগুলো বেশ স্বাভাবিকভাবেই করল নম্রতা। গোসল-খাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলালো। বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পর পরই উপলব্ধি করল, সে ভীষণ ক্লান্ত। শরীরের ভারটা বোধ হয় আর বয়ে চলা যাচ্ছে না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। বুকে জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো উথলে উথলে উঠছে। নম্রতা ফ্যানের সুইচ অন করে আগাগোড়া কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ল। ক্লান্ত চোখজোড়া বন্ধ করতেই বুকে অসহনীয় এক ব্যথা চিনচিন করে উঠল। নম্রতা হুড়মুড় করে উঠে বসল। টেবিলের ড্রয়ারে থাকা পুরোনো ডায়েরিটা বের করেই বুকে চেপে ধরল। গলাটা খানিক কাঁপছে তার। বোধ হয় কান্না পাচ্ছে। নম্রতা বিছানার সাথে লাগোয়া দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসল। চোখদুটো বুজে নিয়ে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিল। ডায়েরিটাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল বুকে। মনের কার্ণিশে ভেসে উঠল প্রায় চারবছর আগের অদ্ভুত সুন্দর দিনগুলোর কথা।

তখন কতটা চঞ্চল ছিল নম্রতা! ২০১৫ সাল। মাত্রই কলেজে পা রেখেছে নম্রতা। দীর্ঘ সময় গার্লস স্কুলে কাটানো মেয়েগুলো যেমন কলেজে উঠেই পাখা মেলে দেয় আকাশে। ঠিক তেমনভাবেই পাখা ছড়িয়েছিল নম্রতা। ক্লাসে, বাইরে, বান্ধবীদের আড্ডায় দুষ্টুমিতে ছেয়ে গিয়েছিল সে। কিভাবে কিভাবে একদল ছেলে বন্ধুও জুটিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু কারো সাথেই তেমন একটা ঘনিষ্ঠতা হয়ে উঠে নি। উকিল বাবার দুই মেয়ের বড়জনই ছিল নম্রতা। ছোটবোন নন্দিতা তখন ক্লাস ওয়ানের গন্ডিতে পা দিয়েছে মাত্র। বাবার আদুরে হওয়ায় বাড়িতে তখন অবাধ স্বাধীনতা। সকালে কলেজের নামে বেরিয়ে সন্ধ্যা পাঁচটার আগে বাসায় ফিরে গেলেই সব দোষ মাফ। নম্রতারা তখন শাহবাগেই থাকত। তাদের ধানমন্ডির বাড়িটা কমপ্লিট হয় নি তখনও।

সে বছরই বান্ধবীদের সঙ্গ পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর থেকে শুরু করে রবীন্দ্র সরোবর চষে বেড়ানো হলো তার। বাসায় বেশ কয়েকবার জব্বর বকুনিও খেলো। ‘ভালো মেয়ে’র পদবীটা সরে গিয়ে দুষ্ট, ফাজিল মেয়ের পদবীগুলোও সেবছরই পাওয়া হলো। এই দুষ্টুমি ভরা জীবনটাতে হঠাৎই একদিন ঘটনাপ্রবাহতা এলো। কলেজ ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীরা গিয়ে বসল শাহবাগ জাতীয় গ্রন্থগারে। সেইসময় নম্রতা ব্যতীত বান্ধবীদের প্রায় সবারই বয়ফ্রেন্ড ছিল। নম্রতা প্রেম-ভালোবাসা পছন্দ করে না তেমনটাও নয়। বরং প্রেম নিয়ে নম্রতার ছিল অন্যরকম বিলাসিতা। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা সামনাসামনি প্রেম তো সবাই করে। নম্রতার ইচ্ছে সে ‘চিঠি প্রেম’ করবে। একদম সেই আগের যুগের মতো। সপ্তাহে একটা চিঠি পাওয়া। ধুরু ধুরু বুকে সেই চিঠি পড়া। বুক ভরা আবেগ নিয়ে চিঠি লেখা, অপেক্ষা করা। আরো কত কী! নম্রতার এমন উদ্ভট কথায় হেসে কূল পেত না নীরা। সেবারও তাই হলো। নীরা হাসতে হাসতে বলল,

‘ ধুর! এমনও হয় নাকি? ওসব শুধু কল্পনাতেই সম্ভব। এটা তোর মান্ধাতার আমল না দোস্ত। ২০১৫ সাল। এখন প্রথম দিন প্রেম করেই দ্বিতীয় দিনে বন্ধুদের ফাঁকা বাসা খুঁজে ছেলেরা। সেই যুগে এসে চিঠি প্রেম? তাও আবার না দেখে? ইম্পসিবল। ওমন ছেলে বাংলাদেশে ক্যান? এই পৃথিবীতে আছে কি-না সন্দেহ।’
নম্রতা মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ একদম ফাউল আলাপ করবি না বলছি। প্রেম করতে হলে চিঠি প্রেমই করব। তবু না দেখে। একদম পুরাতন যুগের মতো। আমাদের যোগাযোগের শুধু একটা সোর্সই থাকবে তা হলো চিঠি। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিচ্ছু না। একটা চিঠি পাওয়ার আশায় ক্যালেন্ডারের দিন গুণবো। আর যখন সেই আকাঙ্ক্ষিত চিঠিটা পাবো তখন এক মুঠো স্বর্গীয় সুখ আছড়ে পড়বে আমার বুকে। ভাবতে পারছিস?’
নীরা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে তাচ্ছিল্য ভরে হাসল। মাথা নেড়ে বলল,

‘ পাচ্ছি। তুই যে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি আমি। শোন দোস্ত, এগ্লা আগলা স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। এই আধুনিক যুগে এসে। যোগাযোগের এতো এতো উপকরণ থাকা সত্ত্বেও কোনো ছেলে একটা চিঠি পাওয়ার আশায় বসে থাকবে না। আগে প্রেম করার আর কোনো রাস্তা ছিল না বলে চিঠি চালান হতো। এখন সেই সমস্যা নেই। যে জিনিসটা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে তার জন্য এতো অপেক্ষা কেনো?’
নম্রতা উৎসাহ নিয়ে বলল,

‘ তুই বুঝতে পারছিস না। সহজ জিনিস তো সবাই পায়। ভালোবাসা এতোটা সহজ হয়ে গিয়েছে বলেই তো এখন আর তার মূল্য নাই। প্রথমবার দেখা হলো। দ্বিতীয়বার দেখা হতেই বলে দিল ‘আই লাভ ইউ’। মানে কোনো ফিলিংস নাই। বলতে হয় বলে বলছে। বলতে না হলে বলতো না। ‘আই লাভ ইউ’ শব্দটা যোগাযোগের সহজলভ্যতার জন্যই এতোটা ঠুনকো আর সস্তা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমার প্রেম হবে ইউনিক। চিঠিতে দু’জনের আবেগ থাকবে। অপেক্ষা থাকবে। এক চিঠিই বারবার পড়ার আকুতি থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে বন্ধন। যোগসূত্র।’
নীরা হাতজোড় করে নিচু স্বরে বলল,
‘ আমারে ক্ষেমা দে মা। এইসব পাগলা আলাপ দয়া কইরা আর করিস না। মানুষ তোরে পাবনায় দিয়ে আইবো। জীবনটা সিনেমা না দোস্ত। তুই তো রীতিমতো বাংলা সিনেমা রচনা করে ফেলছিস।’
নম্রতা ফুঁসে উঠে বলল,

‘ ঠাডাইয়া লাগামু এক চড়। তোর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে না করলে করিস না। জোর করছে কে? চিঠি প্রেম হবে কি হবে না তা আগেই কি করে বলিস তুই? আগে তো চেষ্টা করে দেখি নাকি?’
নীরা সন্দিহান গলায় বলল,
‘ চেষ্টা? তা কী করে চেষ্টে করবি তুই?’
নম্রতা দুর্বোধ্য হাসল। নোটবুক থেকে একটা নীল রঙের কাগজ টেনে নিয়ে বলল,
‘ এইভাবে।’
নীরা বুঝতে না পেরে বলল,
‘ মানে?’
নম্রতা জবাব দিল না। নীল কাগজের মসৃণ জমিনে একের পর এক অগোছালো শব্দগুচ্ছ সাজাতে লাগল। তার প্রথম সম্বোধনটা ছিল এমন,
প্রিয়….!

তোমায় সম্মোধন করার জন্য চমৎকার কোনো শব্দ এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না আমার। তাই সম্মোধনটা উহ্য রাখছি। তুমি তো জানো, নীরবতাতেই মিশে থাকে হাজারও আকুতি, হাজারো ভালোবাসা। তাই এই নীরবতা থেকেই নাহয় খুঁজে নাও সেই নাম। চমৎকার সেই সম্বোধন। যে সম্বোধনে কেঁপে উঠবে তোমার বুক। ঠোঁটে ফুঁটবে তৃপ্তির হাসি। আচ্ছা? তুমি-আমি দুজনেই কি এক? যদি একই হই তাহলে কি তোমার স্বপ্নগুলোও আমার স্বপ্নের মতো ধোঁয়াসে? ভীষণ অগোছালো এই মনটা কি হঠাৎ হঠাৎই ভীষণ অভিমানে আমার মতো আরো খানিকটা অগোছালো হয়ে যায়? আমার হয়। খুব করে হয়, জানো? হঠাৎ করে চমকে উঠি। হঠাৎ করেই কান্না পায়। বুকে ব্যাথা হয় তারসাথে অসহনীয় এক শূন্যতা। সেই শূন্য মনে খা খা দুপুর নেমে আসে কখনো বা নামে গাঢ় বর্ষা।

দুপুরের প্রখরতায় পুড়ে তামাটে হয় এই মন। বর্ষায় হয় আপ্লুত…. রক্তেভেজা বাণ। বুকের কোথায় যেন তীক্ষ্ণ ব্যাথা হয়। অযথায় কান্নাগুলো গলায় এসে আটকে যায়। ছন্নছাড়া বাতাসে উড়ে চলে লম্বা চুল। উদাসী চোখদুটো বারবার পাতা ঝাপটায় কিন্তু অপেক্ষাটা ফুরায় না। মন বলে এইতো আসবে। এখনই তো সময়। কিন্তু…আসে না। কি আসে না? কেন আসে না? জানি না। শুধু জানি অপেক্ষাটা ফুরায় না। এই অপেক্ষাটা বুঝি নির্বীক, অমর? এই অপেক্ষার হয়তো মৃত্যু নেই। আমি এই অপেক্ষাটার একটা নাম দিয়েছি, জানো? এই অপেক্ষাটার নাম হলো —” Pain Of Expect”

আমার ছোট থেকেই খুব ইচ্ছে একজন পত্র মিতা হবে আমার। একদম পুরাতন দিনের মতো। আচ্ছা? তুমি কি অনেক আগের যুগের চিঠি প্রেমের গল্পগুলো শুনেছ? সেখানে একটা চিঠিকে ঘিরে প্রেমিক-প্রেমিকার কত আবেগ, কত অনুভূতি থাকে দেখেছ? রোজ কারো চিঠির জন্য অপেক্ষা। কাঁপা কাঁপা বুকে সেই চিঠি পড়া। ঘুমহীন চোখ দুটো চিঠির পাতায় নিবদ্ধ করে প্রত্যেকটি অক্ষর বুকের মাঝে গেঁথে নেওয়া। ইশ! কী অনুভূতি! আজকালকার সহজলভ্য দিনগুলোতে এমন একজন দুষ্প্রাপ্য বন্ধু কি সত্যিই পাওয়া যায়? পাওয়া গেলে আমি পেতে চাই। খুব করে পেতে চাই জানো? প্রেম না হোক, শুধুই বন্ধুত্ব হোক।

কেউ একজন আমার চিঠির অপেক্ষা করুক। চলতে থাকুক তার আমার নীল চিরকুটের গল্প। এই অাধুনিক জগৎ-টাতে সবার অগোচরে তুমি-আমি চিঠি দেওয়া নেওয়া করব। তুমি আমায় জানবে না। আমি তোমায় জানব না। চিঠিতে কোনো সম্বোধন থাকবে না। শুধু থাকবে এক আকাশ আবেগ, এক ঝুড়ি কথা আর ছোট্ট একটা আদুরে নাম। তারপর…..অনেক অনেকদিন পর যখন দু’জন দু’জনকে খুব করে চাইব। ঠিক তখন আমাদের দেখা হবে। বিষয়টা মজার না?
হয়তো মজার, হয়তো নয়। তোমার কাছে মজার লাগছে কিনা বুঝতে পারছি না। তবে আমি তোমার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম। সেই তুমিটা কে হবে জানি না। তবে এটুকু জানি সেই তুমিটা আমার ‘সে’ হবে। আজ এতটুকুই।
ইতি
শ্যামলতা
চিঠিটা পড়ে নিয়ে চোখ কপালে তুলল নীরা। অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,

‘ তুই সিরিয়াসলি চিঠি লিখে ফেললি?’
‘ ফেললাম।’
‘ এবার কি করবি?’
‘ সেটা তো দেখতেই পাবি।’
‘ তুই তো ফর্সা। তাহলে ইতি শ্যামলতা লিখলি কেন?’
নম্রতা হেসে বলল,
‘ নামটা সুন্দর লাগে তাই।’
কথা বলতে বলতেই পাশের সারি থেকে দর্শনের একটা মোটা বই নিয়ে তার মলাটের মাঝে চিঠিটা রেখে দিল নম্রতা। নম্রতার কাজে প্রথম দফায় স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে হেসে ফেলল নীরা। হাসতে হাসতে বলল,
‘ পাগল তুই? এখন লাইব্রেরিতে এসে ক’জন মানুষ বই পড়ে শুনি? যে যার মতো বই এনে যার যার বই পড়ে। এসব বই পড়ার সময় কই? তারওপর এই মোটা দর্শনের বই? মলাটের নিচে? কারো চোখেই পড়বে না তোর চিঠি। আর পড়লেও হাসতে হাসতে মরে যাবে।’

নম্রতা হেসে বলল,
‘ মরলে মরল। বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের মাঝে একজন হাসতে হাসতে মরে গেলে দেশের অর্থনীতিতে ভয়ানক কোনো ক্ষতি হবে না।’
নীরা হঠাৎ-ই গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ আর যদি কোনো মেয়ে ফাজলামো করে?’
নম্রতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ চিঠি পড়েই বুঝতে পারব।’
সেদিন চিঠি রেখে এসে উত্তেজনায় ঘুম হলো না নম্রতার। নীরাকে ফোন দিয়ে বারবার জ্বালাতে লাগল। মনের মধ্যে ঘুরতে লাগল একটাই প্রশ্ন, কি হবে? কি হবে? আদৌ কি কারো চোখে পড়বে?

সারারাত উত্তেজনায় ছটফট করে ভোর চারটার দিকে ঘুমুতে গেল নম্রতা। কলেজে তখন ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। পরীক্ষার আগের দিনের ক্লাসটা তখন ভয়ানক গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর টু টু করে ঘুরে বেড়ানো নম্রতাদের জন্য শীট, নোট কালেক্ট করার সেই এক মোক্ষম সময়। কিন্তু নম্রতার মাথায় পরীক্ষার চিন্তা খেলল না। পরীক্ষার প্রতি সেনসেটিভ নম্রতা গ্রীষ্মের ঝুম বৃষ্টি মাথায় করে কলেজে গেল ঠিক, কিন্তু দু’মিনিটও টিকল না। ক্লাসরুমের পেছন দরজা দিয়ে নীরাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনলো। বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে নয়টার দিকে শাহাবাগ গ্রন্থাগারে গিয়ে পৌঁছাল তারা। গ্রন্থাগার তখন মাত্রই খুলেছে। নম্রতা উত্তেজনা নিয়ে দ্বিতীয় তলার দিকে ছুট লাগাল। নীরা অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ এতোদিন আমার শুধু সন্দেহ ছিল। আজ প্রমাণ হয়ে গেল যে তুই মারাত্মক পাগল। কাল বিকেলে মাত্র চিঠি লিখলি। আজই উত্তর পেয়ে যাবি? তোর কি ধারণা? মানুষ তোর চিঠির জন্য হা-হুতাশ করে মরে যাচ্ছে?’
নীরার কথায় নম্রতার উৎসাহ খানিক মিইয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপাল থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়ল। কম্পিত হাতে ফিলোসোফির বইটা উঠিয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। নীরা তাড়া দিয়ে বলল,
‘ কি রে? দেখ জলদি। এসেছে তোর চিঠি?’
নম্রতা চাপা উত্তেজনা নিয়ে বলল,
‘ যদি না থাকে?’
‘ যদি নয়। সত্যিই থাকবে না। সবাই তো আর তোর মতো পাগল নয় যে বই না পড়ে বইয়ের ভেতর চিঠি খুঁজে বেড়াবে। তবু দেখ। কথায় আছে, মনের শান্তিই বড় শান্তি।’
নম্রতা মলাটের নিচে চিঠির খোঁজ করল। তার নিজের লেখা চিঠি ব্যতিত ভিন্ন কোনো চিঠি পাওয়া গেল না। নীরা গুজগুজ করে বলল,
‘ বলেছিলাম পাবি না। শুধু শুধু ক্লাসটা মিস করলি। স্যার নিশ্চয় কত্তকিছু দাগিয়ে দিয়েছে। পরশু পরীক্ষায় কী লিখব আমরা?’

নম্রতা জবাব দিল না। বৃষ্টি ভেজা চুপসানো মুখ নিয়েই বাড়ি ফিরলো। অসময়ের বৃষ্টিতে ভেজায় পরের দিনই ভয়ানক জ্বরে কাহিল হলো। জ্বর আর পরীক্ষার চাপে চিঠির কথা বেমালুম ভুলে গেল নম্রতা। প্রায় এক সপ্তাহ পর, পরীক্ষা শেষে বান্ধবীদের সাথে ফুসকা খেতে বসে চট করেই মনে পড়ে গেল তার সেই নীল চিরকুটের কথা। ফুসকা ফেলে নীরাকে নিয়ে আবারও হাজির হলো গ্রন্থগারের বারান্দায়। ফুসকা ফেলে আসায় নীরা তখন মহা বিরক্ত। এই মাথা পাগল মেয়েটা তার বন্ধু হওয়ায় বিরক্তির বহরটা যেন আরও খানিকটা অতিরঞ্জিত। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের ওপর বিরক্ত হওয়া চলে না। এরা মানুষের বিরক্তি বা রাগকে যেমন পাত্তা দেয় না। ঠিক তেমনই অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে মান-প্রাণ সব হারালেও বিরক্ত হয় না। নম্রতা হলো সেই ধরনের মানুষ। তার ওপর বিরক্ত হওয়া সাজে না। নম্রতা এবারও আশাহত হলো। ফিলোসফির বইটির দিকে কিছুক্ষণ বিরক্ত ভরে তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল। মাথা নেড়ে বলল,

‘ চিঠির জবাব না এলে নাই। এই চিঠিটা এখানেই থাকুক। আমার আবেগময় সুন্দর চিঠিটা এই বইকে উৎসর্গ করলাম। চল, আজ তোকে ডাবল প্লেট ফুসকা খাওয়াব।’
নীরা বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ ফুসকা খাওয়াবি মানে? তোর মন খারাপ লাগছে না?’
‘ না, লাগছে না। আমাদের ছোট্ট জীবনটাতে ছোট্ট ছোট্ট বিষয় নিয়ে মন খারাপ করতে নেই। বাবা বলে, Life is a beautiful flower. We should feel it’s fragrance. এই যে চিঠি বিষয়ক সুন্দর ঝামেলাটা হয়ে গেল? এটাও সেই বিউটিফুল ফ্লাওয়ারেরই অংশ। আই হ্যাভ টু ফিল ইট।’

নম্রতা সর্বদা প্রাণোচ্ছল, প্রাণোবন্ত মেয়ে। তার সতেরো বছরের জীবনে কখনোই তাকে দীর্ঘসময় চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় নি। সবসময় ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি আটকে রাখা তার স্বভাব। অল্পতে উত্তেজিত হওয়া, অল্পতে খুশি হওয়া, প্রাণ খোলে হাসা আর আড্ডা জমানোর গুণে সে সর্বদাই আকর্ষণীয়া। নম্রতার স্বাভাবিক চরিত্র অনুযায়ী ‘চিঠি’ বিষয়ক ব্যাপারটাও তার মনে খুব একটা দাগ আঁকতে পারল না। পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধব, দুষ্টামো আর পাগলামো ভরা জীবনে ওই ক্ষুদ্র চিঠিটা দীর্ঘক্ষণ জায়গা দখল করে রাখতে পারল না। নম্রতা চিঠির কথাটা বেমালুম ভুলে বসল। যথারীতি ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা শেষ হয়ে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু হলো।

কলেজের সিনিয়র সিটিজেন হতে পেরে তারা তখন মহাখুশি। বান্ধবীরা মিলে হৈ-হৈ করে টিউশনি করা। ফুসকার দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া তখন নিত্য-নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠল। ঠিক এমন একটা সময়েই ঝড়টা এলো। এই মৃদু, শান্ত ঝড়েই এলোমেলো হয়ে গেলো নম্রতা। একদিন ইংরেজি টিউশনি শেষ করে শাহবাগ গ্রন্থাগারে গিয়ে বসল বান্ধবীরা। উদ্দেশ্য, নিরিবিলিতে ক্লাস নোট আর এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করা। বান্ধবীরা সবাই নোট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেই নম্রতার অসচেতন চোখ দুটো ওই চির পরিচিত বইটির ওপর গিয়ে পড়ল। নিতান্ত কৌতূহল বশত উঠে গিয়ে বইটা তুলে নিলো সে। মলাটের নিচে নিজ হাতে লেখা নীল চিরকুটের খোঁজ নিতেই চমকে উঠল নম্রতা। নীল কাগজের পরিবর্তে সাধারণ সাদা কাগজে লেখা সম্বোধনহীন ছোট্ট এক চিঠি ওঠে এলো হাতে। সেখানে গুটি গুটি সুন্দর অক্ষরে লেখা,

‘ আপনি কি পাগল নাকি নিতান্তই কিশোরী একজন? পাগল বোধ হয় নন। আমার জানা মতে, পাগলেরা সাজিয়ে গুছিয়ে চিঠি লিখতে জানে না। কিন্তু কিশোরীরা জানে। যুবতীদের থেকে কিশোরীদের চিঠি লেখার গুণটা পাকা। তাদের মাথায় থাকা উদ্ভট চিন্তাগুলোও ভীষণ পাকা। যেমন আপনার এই চিঠি প্রেমের উদ্ভট ভাবনাটা! উদ্ভট বললাম বলে মন খারাপ করলেন? মন খারাপ করবেন না। এই ভাবনাটা সত্যিই উদ্ভট বৈ অন্য কিছু নয়। আজকের যুগে এসে এভাবে বন্ধুত্ব বা প্রেম করার সাহস কারো হবে বলে মনে হয় না। হয়তো মাথাতেও আনবে না। তবে মাঝে মাঝে উদ্ভট কিছু করতে খারাপ লাগে না। যেমনটা আমি করছি। আপনার এই উদ্ভট চিঠির উদ্ভট জবাব দিচ্ছি। আমার মতো মানুষ অজ্ঞাত এক কিশোরীকে চিঠি লিখছে তা আমার নিজের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না!’
চিঠিটা এক নিঃশ্বাস দু-তিনবার পরে ফেলল নম্রতা। সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে। প্রায় তিন সপ্তাহ পর সেই আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা হাতে পেয়ে গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না তার। নম্রতা কিছুক্ষণ থম ধরে দাঁড়িয়ে থেকে লাফিয়ে উঠল। কয়েকজোড়া কৌতূহলী দৃষ্টি তার ওপর পড়তেই চাপা ফিসফিসিয়ে বলে উঠল নীরা,

‘ এই নমু? কি করছিস? সবাই দেখছে।’
নীরার কথায় চারপাশের খেয়াল হলো নম্রতার। চারদিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হাসল। তারপর বই হাতে কোণার এক টেবিলে চেয়ার টেনে বসল। বুকের পাঁজর ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে হৃদপিণ্ড। তার চিঠির জবাব এসেছে, এই সাধারণ কথাটা বিশ্বাস করতেই তার খুব বেগ পেতে হচ্ছে। নম্রতা সাদা কাগজে লেখা চিঠিটা টেবিলের উপর মেলে রাখল। কয়েক মুহূর্তে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আনন্দিত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নোট বুকের মাঝে ভাঁজ করে রাখা নীল কাগজটা টেনে নিয়ে লিখতে বসল। কিন্তু বিস্ময় নিয়ে উপলব্ধি করল, তার হাঁত কাঁপছে। মাথাটা ফাঁকা আর গোলমেলে লাগছে। মাথার ভেতর গোছানো, সুন্দর কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। নম্রতা দু’হাতে মুখ চেপে বসে রইল। মাথাটাকে একটু শান্ত করে লিখতে শুরু করল কয়েক লাইনের সম্বোধনহীন চিঠি,

‘ আপনাকে কী বলে সম্বোধন করা যায় বলুন তো? প্রথমবার ‘প্রিয়’ সম্বোধন করেছিলাম। এবার সেই ভরসাটাও পাচ্ছি না। এভাবে ‘আপনি’ ‘আপনি’ সম্বোধন করে আমায় ঘাবড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয়? আর সাদা পাতায় কেন লিখেছেন? নীল চিরকুট কি কখনো সাদা পাতায় লেখা যায়? নীল চিরকুট সবসময় নীল কাগজেই লিখতে হয় এটাই নিয়ম। আর নিচে ইতি ওতি কিছুই তো লেখেন নি। একটা চিঠিতে এতো এতো ভুল করা মানুষটি কি-না আমায় কিশোরী মেয়ের উদ্ভট চিন্তাভাবনার কারখানা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, এ তো ভারি অন্যায়!
ইতি
শ্যামলতা ‘

লেখা শেষে দু-বার পড়ে নিয়ে চিঠিটা মলাটের ভাঁজে রেখে দিল নম্রতা। আর সাদা কাগজে লেখা চিঠিটা খুব যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দিলো। বাসায় এসে চিঠিটাকে ডায়েরির পাতায় আঠা দিয়ে লাগাল। চিঠির কোণায় দুটো লাল গোলাপের পাঁপড়ি লাগিয়ে তাতে লিখল, ‘শ্যামলতা ও সে’। তারপর থেকে শুরু হলো নতুন চিঠির অপেক্ষা। কিন্তু অপেক্ষাময় দিনগুলো যেন আর কাটে না। কলেজ শেষে রোজ একবার গ্রন্থাগারে খোঁজ নেওয়ার পরও চিঠির সন্ধান মেলে না। অপেক্ষা করতে করতে নম্রতা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ল ঠিক তখনই দ্বিতীয় চিঠিটা এলো। নম্রতাকে দু-দুটো সপ্তাহ অপেক্ষা করিয়ে সাদা কাগজের মাঝখানে গুটি গুটি অক্ষরে দুই লাইনের একটা চিঠি লিখল অপরিচিত সেই ‘সে’।

‘ সত্যিই! এ তো ভারি অন্যায়। কিন্তু আমার যে নীল রঙা কাগজ নেই। এখন উপায়? আমাকে কি তবে চিঠি খেলা থেকে বহিষ্কৃত করা হবে?’
সেই দুই লাইনের চিঠিই অসংখ্যবার পড়ল নম্রতা। প্রথম দিকটাই বিরক্ত হলেও পরমুহূর্তে বেশ লাগল। এই চিঠির জন্য অপেক্ষামান অনুভূতিই তো চাইছিল সে। এখন সেই আকাঙ্ক্ষিত অনুভূতির জন্য নিশ্চয় বিরক্ত হওয়া চলে না? নম্রতা অনেক ভেবে চিন্তে লিখল,

নীল চিরকুট পর্ব ৩+৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here