নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ১৯
সিনথিয়া
অনুমতি নেয়া তো দূর, যে মানুষটা কোনোদিন কাউকে কৈফিয়ত দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি; নিজে যা ভালো বুঝেছে তাই করেছে! সে-কি না আজ অনুমতি চাইছে আরশির কাছে?
এতোটা পরিবর্তন হজম হবে তো ওর? চোখ বড় বড় করে ঢোক গিললো আরশি! জাম্বুবানটা স্পাঞ্জ করাতে গিয়ে গায়ের ছাল-চামড়া তুলে ফেললে ও তো কাউকে বলতেও পারবে না!
“আ-আপনার স্পাঞ্জ করাতে হবে না! আমি নিজের কাজ নিজেই করতে পারবো। দিন আমাকে ওটা–”
আরশির হাতটা তোয়ালে অবধি পৌঁছনোর আগেই ঝট করে তোয়ালেটা অন্য হাতে নিয়ে নিলো শেহজাদ। মুখে চিরাচরিত গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বললো,
“তারমানে অনুমতি আছে! দেখি পেছনে ঘোরো!”
“আপনি তো মহা বেকায়দার মানুষ মশাই! নিজে নিজে রুলস বানান; নিজেই সেটা ভাঙেন! নিজে থেকে অনুমতি চান; আবার না করলেও বলেন অনুমতি আছে–”
প্রফেসরের ধৈর্য্যের সীমা বোধহয় ভাঙলো এবার। নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে কোমরে দু’হাত রেখেছে মেয়েটা। ভয়টয় সে আর এখন পায়না শেহজাদকে। আগে থেকে একটু সাহস বেড়েছে কিনা! একটা জলজ্যান্ত সাইকোপ্যাথকে কামড়ে ঘায়েল করে দিয়ে এলো! সেখানে জাম্বুবান আর এমনকি?
“পেছনে ঘুরে দাঁড়াও আরশি। আমাকে দিয়ে বেশি কথা বলালে কিন্তু নিজেই পস্তাবে! এমনিতেই অনেক টেনশন দিয়েছো আজকে তুমি আমায়!”
ওষুধে কাজ হলো। ঘাবড়ালো কিশোরী। আস্তে করে এক পা পেছালো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। তারপর কোমর থেকে হাত নামিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ব-বেশ! তাহলে আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে!”
“দরকার হলে চোখ বন্ধ রাখব আমি; কথা দিলাম!”
আহা! এ যেনো মেঘ না চাইতেই জল! তবুও খুশিটুকু দমিয়ে রেখে আরো একখানা আবদার ছুড়লো আরশি!
“সাথে স্নোবলকেও আমাদের সাথে বাসায় নিয়ে যেতে হবে!”
শেহজাদের ঠোঁটের বাঁকে হাসি ফুটলো সহসা।কন্ঠে প্রহসনের শীতল ফাঁদ। ডান চোখের ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“কিন্তু তুমি প্রথমেই বলেছো একটা কথা রাখার কথা! সেখানে দুটো কথা কেনো রাখবো আমি? এটা তো চিটিং রাইট?”
শেহজাদের কথা শুনে ওর খুশিটুকু হাওয়াই বেলুনের মতো নেতিয়ে পড়লো অমনি। শুকিয়ে আসা গলাটা ঢোক গিলে ভেজালো একটু। পরপর মিনমিন করে বললো,
“দু’টোই রাখা যাবে না?”
“উহু! যেকোনো একটা!”
বুকে হাত বেধে তর্জনী উঁচিয়ে দেখালো প্রফেসর। আচ্ছা গেঁড়াকলে ফাঁসিয়েছে তো মেয়েটাকে।
আরশির চোখেমুখে অনুশোচনা! ইশশ! কেনো যে প্রথমেই ‘দুটো’ বললো না!
“এতো সময় নষ্ট কোরো না আরশি! তাড়াতাড়ি বলো কোন কথাটা রাখবো? চোখ বন্ধ করে তোমাকে স্পাঞ্জ করিয়ে দেয়ার কথা নাকি স্নোবলকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা!”
স্নোবলকে ফেলে ও যাবে না! তারউপর শেহজাদ একবার যখন বলেছে শরীর মুছিয়ে দেবে! তখন চোখ বন্ধ করে হোক; আর খুলে হোক! দেবেই! অগত্যা হাল ছাড়লো কিশোরী।ভোঁস করে শ্বাস ফেলে বললো,
“ঠিক আছে! যা করার করুন! কিন্তু কথা দিন স্নোবলকে বাসায় নিয়ে যাবেন; নেবেন তো ওকে?”
প্রফেসর আননজুড়ে জিতে যাওয়ার সুখটুকু আড়াল করলো গম্ভীর কন্ঠে,
“আমি কথার খেলাফ করি না আরশি!”
‘ওয়েস্টফিল্ড লন্ডন!’ চেলসির অন্যতম শপিং সেন্টার। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান, রেস্তোরাঁ, মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল, গেমস-রাইড! কি নেই এখানে? জারা মুভিতে দেখেছিল ওসব! চেলসিতে থাকলেও এদিকটায় আসার সাহস করেনি কখনো! সাহস তো দূর! লাইব্রেরি আর ভার্সিটি সামলে সুযোগই তো করে উঠতে পারেনি ও!
কিন্তু আজ অদ্ভুতভাবে আয়ান বাইক থামালো এই শপিং সেন্টারটির সামনে। অবাক হলো জারা। বিমূঢ় চোখজোড়া একবার চারতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং-এ তো আরেকবার আয়ানের মুখে তাকিয়ে বললো,
“এখানে থামালেন কেনো? আমরা বাসায় যাবো না?”
“নেমে পড়ো বাটারফ্লাই! আজ না হয় একটু দেরি করেই ফিরলে বাসায়!”
“কিন্তু–”
মেয়েটার কথা শেষ করার আগেই বাইক থেকে নামলো অফিসার। কালো হেলমেট মাথায় হাঁটু গেড়ে বসলো জারার সামনে। বাইকিং গ্লাভসবন্দী হাতখানা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আর ইউ রেডি ফর দ্যা রাইড বাটারফ্লাই?”
এতক্ষন বিস্ময়ের দোলাচলে থাকা অশান্ত মুখখানা হুট করেই বদলে গেলো মুচকি হাসিতে। নীল চোখে ভরসার বানী! আয়ানের হাতে হাত রেখে বাইক থেকে নামতে নামতে বললো,
“এমন একটা শক্ত হাত পেলে রেডি না হয়ে আর উপায় কোথায় অফিসার?”
খুশির ছটা খেলে গেলো আয়ানের ঠোঁটেও। জারার হাতটা শক্ত করে ধরতেই অলিন্দের গতি বাড়লো। ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ!
ঐ হেমচোখে শুধু একটা মেয়ের প্রজাপতির মতো রঙিন হাসি ছাড়া ফিঁকে হলো আশপাশের সবকিছু!
ভিজে উঠলো অক্ষিকোটর! খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
“বস! এতো ভয়ানকভাবে কারোর প্রেমে ফেলবে বলেই বুঝি কিছুদিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছো হাতে? বেশ! এরপর যখন আর যেতে চাইবো না তোমার কাছে! তখন দেখবো তুমি কি করো!”
“কি এতো ভাবছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে?”
জারার প্রশ্নে ভ্রম কাটলো মানুষটার। ভাগ্যিস হেলমেট পড়া ছিল? নয়তো বাটারফ্লাই কি ভাবতো? ওর অফিসার বাচ্চাদের মতো কাঁদে?
রেস্টহাউজের রুমের ভিতর পিনপতন নীরবতা। নিশ্বাস ফেললেও যেনো তার শব্দ শুনতে পাচ্ছে আরশি। শেহজাদের দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ানোর পর হতে না ঐ মানুষটা কোনো কথা বলছে; না ও!
বুকের ভিতর কেমন ধরাস ধরাস শব্দ হচ্ছে আরশির! মনে হয় এক্ষুনি খুলে হাতে চলে আসবে কোনোকিছু। জাম্বুবানের কাছাকাছি দাঁড়ালে আগেও কি এমন হতো ওর?
“মাথার পেছনে এতোটা রক্ত?”
হুট করেই কক্ষের মৌনতা ভাঙলো! শেহজাদের কন্ঠে অবিশ্বাসের তোপ। শানের মতো ঐ পুরুষালীও স্বরও কেঁপে উঠলো যেনো।
আরশির আর চিন্তা করা হলো না। মুখ হা করে কিছু বলে ওঠার আগেই কাঁধের উপর থেকে টি-শার্টের হাতাটা আঙুল দিয়ে স্লাইড করে নিচে নামালো শেহজাদ। উন্মুক্ত হলো ওর ফর্সা পিঠের একাংশ। ছিলে গেছে সেখানটায়! ছোপ ছোপ রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে চামড়ার সাথে।
শেহজাদের উষ্ণ আঙুলের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো হিমের মতো শরীরখানা। কুন্ঠারা এসে ভিড় জমালো গলার কাছে। অস্ফুটে আওড়াল,
“মনে হয় বরফের ওপর থেকে যখন টেনে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধেছিল তখনই হয়েছে এমন। চামড়া উঠে গেছে পিঠের? বেশি বাজে লাগছে দেখতে?”
আরশির চোখমুখে শঙ্কা! এমনিতেও মা সবসময় ভিডিও কল করে; তারউপর এতোগুলা চোটের দাগ! পিঠের গুলো নাহয় লুকোতে পারবে; কিন্তু গালেরটা? যখন কি করে হয়েছে জানতে চাইবে তখন কি বলবে ও? যদি দুশ্চিন্তা করে প্রেশার বাড়িয়ে ফেলে?
আরশির অশান্ত কন্ঠ শুধোলো ফের,
“কি হলো? বলছেন না কেনো কিছু? এই দাগ
আর সাড়বে না? সেলাই-ফেলাই করতে হবে না তো?”
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ১৮
চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিললো শেহজাদ। পরপর কোনোকিছু না ভেবেই ঠোঁট ছোঁয়ালো মেয়েটার কাঁধে!
আরশি স্তব্ধ! বাকরুদ্ধ হলো গলবিল। পাতলা অধরের বেপরোয়া স্পর্শে সমস্ত শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো ওর। কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“শুধু অ্যা-অ্যান্টিসেপটিক লাগালেই ঠিক হয়ে যাবে! তাই না?”