নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৫
সিনথিয়া
আরশিকে ছাড়লো না শেহজাদ। উল্টে আরো যেনো শক্ত করে মেশালো বুকের সাথে। খেয়াল রাখলো যেনো হাতদুটোও ছোড়াছুড়ি করতে না পারে মেয়েটা। ঠোঁটের বাঁকে হাসি লুকিয়ে বললো,
“তা এমি কি করছে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাই-ভাবীর রোম্যান্স দেখছে? সমস্যা নেই! দেখতে দাও!”
চোখ ফুটবল বানিয়ে চাইলো আরশি। চোয়াল ঝুললো শেহজাদের কথায়! অবাক হয়ে শুধোলো,
“আপনি খেয়ে ফেললেন?”
শেহজাদের ভ্রু জোড়ার মাঝে ভাজ পড়লো।
“কি খেয়ে ফেললাম?”
“আপনার লজ্জা শরম? এজন্যই তো বলি স্নোবল ফোনে কোনো ফিমেইল বানির রিলস্ দেখলেই অমন লাফঝাপ শুরু করে কোনো! আপনি ছেলেটাকেও নিজের মতো বেয়াড়া বানাতে চাচ্ছেন দিন দিন! তাই না?”
কেশে উঠলো প্রফেসর। হাত জোড়া আলগা হলো কাশির দমকে। আর এই সু্যোগটাই কাজে লাগালো আরশি। চড়ুই পাখির মতো ফুড়ুত করে বেরিয়ে গেলো শেহজাদের বাহু গলে। কিন্তু দরজার কাছে যেতে না যেতেই মানুষটার শীতল হুমকিতে থামলো
পা জোড়া।
“পালাচ্ছো পালাও! তবে রাতে পালানোর শাস্তির জন্যও প্রস্তুত থেকো মিসেস চার্লি! এখন তো এক মিনিটে ছেড়ে দিতাম; তখন সারারাতেও ছাড়া পাও কি না? ডাউট হচ্ছে!”
ঢোক গিললো কিশোরী। ত্রস্ত ফিরে চাইতেই ডাক পড়লো নিচে। মরিয়ম বেগম নাস্তার জন্য ডাকছেন ওদের। লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এলো প্রফেসর। মেয়েটা চোখ খিঁচে বন্ধ করতেই পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেলো ঝড়ের গতিতে। একবারও তাকালো না?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরশির ভ্রু বেঁকে এলো অমনি। আনমনে আওড়ালো,
“জাম্বুবানটা কি রাগ করলো?”
টেবিলে নানা রকম নাস্তা সাজিয়েছেন মরিয়ম বেগম। মেহমেদ হাসান বসেছেন কেবল। এমিলিয়াও এসে বসেছিল তবে শেহজাদকে নিচে নামতেই দেখে উঠে এলো ও। নিজের পাশের চেয়ারটা টেনে দিলো বসার জন্য।
কিন্তু সেদিকে তাকালোও না প্রফেসর।
স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আমি খাবো না মম! অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে! আসছি!”
অবাক হলেন প্রৌঢ়া। এইমাত্র তো ঠিক ছিল সবকিছু! হঠাৎ করে আবার কি হলো ছেলেটার!
আরশিকে মুখ ভার করে বসতে দেখে চিন্তার ছাপ পড়লো মেহমেদের আনন জুড়েও। ছেলের উগ্র মেজাজ সম্বন্ধে তার যথেষ্ট ধারণা আছে। মেয়েটার সাথে আবার ঝগড়াঝাটি করেনি তো?
তবুও উদ্বেগটুকু ঠেলে সরিয়ে শুধোলেন,
“আজ ভার্সিটি থেকে একটু তাড়াতাড়ি এসো কেমন?”
যেতে নিয়েও থামলো শেহজাদ,
“কেনো?”
“তোমার আদ্রিয়ানের কথা মনে আছে শায়ান? ঐ যে আমার বন্ধুর ছেলে? তোমার আর আরশির বিয়ের সময়ও গিয়েছিল বাংলাদেশে।
ওর বাবা অনেক দিন ধরেই এমির জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে চাইছে! সন্ধ্যায় আসবেও বলেছে! ঐ ছোটখাটো এ্যাঙ্গেজমেন্টের আয়োজন করবো ভাবছিলাম! আসতে পারবে তাড়াতাড়ি?”
প্রফেসর আড়চোখে একবার দেখে নিলো আরশিকে। মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে।একবার দেখছেও না মুখ তুলে ওকে। শ্বাস ফেললো শেহজাদ। পরপর ছোট করে শুধু বললো,
“চেষ্টা করবো!”
“বানর মশাইইই!”
জারার ঠোঁটে চওড়া হাসি। ঢুলু ঢুলু চোখ। বসে থেকেই হাত নেড়ে ডাকলো আয়ানকে।
ফিরিঙ্গিদের ছোটখাটো ভীর ওর টেবিলের আশেপাশে।
সবটা দেখে কপালে ভাজ পড়লো অফিসারের। গন্ডগোল কিছু একটা হয়েছে ভেবেই দৌড়ে আসলো সে। হাতের চকলেটের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখেই টেনে তুললো জারাকে। পা জোড়া টলছে মেয়েটার। দাঁড়াতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে যেনো! তবুও আয়ানের ডান হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো ও। পরপর অন্য হাত দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোককে দেখিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,
“অফিসার! এই লোক আমার জুসের বোতল খেয়ে ফেলেছে! একে এরেস্ট করুন!”
খেপে উঠলো লোকটা। টেবিলের উপর পড়ে থাকা খালি বোতল গুলো আয়ানকে দেখিয়ে পশ্চিমা ভাষায় আওড়ালো,
“আমি জুসের বোতল খেয়েছি? না এই মহিলা টেবিলের উপরে রাখা আমার বোতলগুলো সাবাড় করেছে? দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে আপনাকে ; তারউপর পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া! তাহলে নিজের ওয়াইফকে বলে যাননি কেনো যে পারমিশন ছাড়া অন্যের জিনিস ধরতে নেই?”
আয়ানের মুখটা শক্ত হলো এবার। জারাকে এক হাতে আঁকড়ে ধরে মানিব্যাগটা বের করলো পকেট হতে। কচকচে টাকার নোটগুলো সামনে থাকা লোকটার হাতে দিয়ে ইংরেজিতেই বললো,
“আপনার যত টাকা লস হয়েছে তার চাইতে ডাবল দিলাম। কিন্তু এর পরেও যদি একটা বাজে কথা ওর নামে শুনেছি; তাহলে জিভ ছিড়ে এখানেই রেখে দেবো!”
থতমত খেলো বিদেশি। পুলিশের সাথে লাগা টা ঠিক হবে না ভেবেই টাকাগুলো নিয়ে সড়ে পড়লো আয়ানের সামনে থেকে।
আশেপাশে মানুষ কমলো মুহূর্তেই। আর তখনই দু’হাতে অফিসারের গাল চেপে ধরলো জারা। ফেরালো নিজের দিকে।
ছোট ছোট চোখে চেয়ে বললো,
“বানর মশাই! আপনার মুখটা ব্লেন্ডার মেশিনের মতো দেখতে লাগছে কেনো?
এই দাঁড়ান দাঁড়ান; তাহলে আমি ফ্রুটস্ নিয়ে আসি। জুস বানাতে হবে তো! ”
আয়ান স্তম্ভিত। যে মানুষটা বাটারফ্লাই ছাড়া একটা শব্দ উচ্চারন করে না; সে আজ জোরে বলে উঠলো,
“কোনো জুস বানাতে হবে না তোমাকে! আগে বাসায় চলো!”
বকা খেয়ে ঠোঁট ভাঙলো মেয়েটা। কেঁদে লুটিয়ে পড়লো টেবিলের উপর। উপায় না পেয়ে পাশে চেয়ার টেনে বসলো আয়ানও। তটস্থ সে! মাথায় হাত বুলিয়ে জারাকে শান্ত করতে করতে বললো,
“আ’ম সরি বাটারফ্লাই! আমার জোরে বলা উচিত হয়নি! প্লিজ এবার কান্নাটা একটু থামাও!”
অফিসারের নরম সুরে কাজ হলো। টেবিল থেকে মুখ তুললো মেয়েটা। অন্যদিকে তাকিয়ে নাক টেনে টেনে আওড়ালো,
“আপনি বকলেন তো আমাকে?”
দু’দিকে সজোরে মাথা নাড়লো আয়ান। কিন্তু সেদিকে হুশ নেই জারার। নিজের মতো করে বলতে লাগলো,
“বকুন! আরো বেশি করে বকুন! যার কেউ নেই; যে নিজের আসল জন্ম তারিখ জানে না! আসল নাম কি তা-ও না! সবটাই অন্যের দেয়া। এমন একটা মেয়েকে বকবেন না তো কাকে বকবেন?
ঢোক গিললো মানুষটা। অস্পষ্টে আওড়ালো,
“আ-আমি তোমাকে হার্ট করার জন্য বকিনি! তুমি উল্টোপাল্টা বলছিলে বলেই তো–”
কথাটা শেষ হলো না; তার আগেই অফিসারের ঠোঁটে তর্জনী ঠেকালো জারা। থামিয়ে দিয়ে আধবোজা চোখে বললো,
“বানর মশাই! একটা সিক্রেট বলি?”
আয়ান কিছু বলতে পারলো না। শুধু তাকিয়ে রইলো ফ্যালফ্যাল করে। যেনো অবিশ্বাস্য কিছু ঘটবে একটু পর; আর তখনই একেবারে মুখের কাছে ঝুঁকে এলো জারা।
হুট করেই দু’জোড়া অধরের অল্প-বিস্তর দূরত্ব ঘুচলো বন্ধ চোখে। হার্ট বিট মিস হলো অফিসারের। মস্তিষ্কের প্রতিটি সতর্ক নিউরন নেচে-কুদে জানান দিলো যে এটা স্বপ্ন নয়; সত্যি!
সেকেন্ড খানেক বাদেই ঠোঁট সরিয়ে নিলো মেয়েটা। হেসে বললো,
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৪
“সিক্রেট বলা শেষ! নিন চোখ খুলুন!”
আয়ান চোখ খুললো। তবে এবার নিজেই এগিয়ে এসে আঁকড়ে ধরলো জারার মাথার পেছন! দ্বিতীয়বার ঐ পাতলা ওষ্ঠপুটে দখল বসানোর আগে শুধু বললো,
“কিন্তু আমার শেষ হয়নি এখনো!”