নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৫ (২)

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৫ (২)
সিনথিয়া

আয়ানের বন্ধ চোখের ওপাশে জারা বড় বড় চোখে তাকিয়ে। পিছনের এলোমেলো চুলের ফাঁকে মানুষটার এক হাত। অন্য হাত জড়িয়ে কোমর। পাতলা ওষ্ঠপুটের সবটুকু অফিসারের আয়ত্তে।
যেনো ওর ভেতর পর্যন্ত শুষে নিতে মরিয়া ঐ পুরু অধরজোড়া।
শ্বাস নিতে বেগ পেতে হলো জারার। সরাতে চাইলো মুখটা। কিন্তু পেরে উঠলো না আয়ানের সাথে। দাঁতের ফাঁকে ফেলে সজোরে কামড়ও বসালো ঠোঁটে।
কিন্তু বিধিবাম! যতই ছটফটালো ততই যেনো আরো শক্ত করে জেঁকে ধরলো অফিসার।
সময় গড়ালো। শান্ত হলো মানুষটা। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে আস্তে ধীরে হাত সরালো জারার মাথার পিছন হতে।
নিচের ঠোঁট জ্বলছে ভীষণ। রক্ত জমে লাল হয়ে গেছে যেখানটায়। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিচু স্বরে শুধোলো,

“ঠ-ঠিক আছো তুমি?”
জারা হাঁপাচ্ছিল তখনো। কিন্তু প্রশ্নের পিঠে উঠে দাঁড়ালো তড়াক করে। বিভ্রমে আশেপাশে চাইলো কাঁধের ব্যাগ খুঁজতে।
হুট করেই মুখের সামনে সেটা তুলে ধরলো আয়ান।
“এটা খুঁজছো বাটারফ্লাই?”
ছোঁ মেরে ব্যাগটা নিলো ও। কোনো উত্তর না দিয়েই ঢুলতে ঢুলতে ফোন বের করলো মেয়েটা। কিন্তু ডায়ালপ্যাড খুলতেই যেনো খপ করে হাতটা ধরে ফেললো অফিসার।
“কি করছো? কাকে কল করবে?”
মাথা তুললো জারা। ঠোঁট সরু করে বললো,
“পুলিশের কাছে! আপনাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য!”
আয়ানের গলার স্বর শান্ত। শুধোলো,
“পুলিশের লোককেই জেলে পাঠানোর ভয় দেখাচ্ছো বাটারফ্লাই! কারনটা বলবে না?”
“আপনি–চুমু খেয়েছেন আমাকে!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজের ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে দেখালো জারা।
মূহুর্তেই প্রগাঢ় হলো অফিসারের হেম চোখ।
থেমে গেলো কিশোরী। ঢোক গিললো শুকনো গলায়। অমন চোখে কখনো তাকায়নি আয়ান। যেনো ঘোর ওর নয়; অফিসারের লেগেছে।
এই দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। তাই তো হন্তদন্ত হয়ে হাঁটা শুরু করলো মেয়েটা। কিন্তু হুট করেই পেছন থেকে ওকে কাঁধে তুলে নিলো অফিসার। ভড়কালো ও।
আয়ানের হাতের বাঁধন দৃঢ়। পা ছুঁড়ে-টুঁড়ে নামতে চাইলে ভারী কন্ঠে বললো,
“চুমু যখন খেয়েছি; তখন তার দায়ভারও আমার! ”
উল্টো ঝুলে গা গুলিয়ে এলো জারার। মাথাটাও ঘুরছে কেমন ! তবুও জিজ্ঞেস করলো কোনোমতে,
“ক-কী করবেন আপনি?”
আয়ানের অন্য হাতে ফোন। উবার ডাকছে সে। সেদিকে তাকিয়েই ভরা গলায় আওড়ালো,
“বিয়ে করবো তোমাকে!”
আঁতকে উঠলো মেয়েটা।

অনেক্ষণ ধরেই গলার কাছটা মোড়াচ্ছিল ওর। বমি বমি ভাব যেনো দলা পাকাচ্ছিল সেখানে।
কিন্তু আয়ানের মুখে বিয়ের কথা শোনা মাত্রই ভেতর ঠেলে বেরিয়ে এলো সবকিছু।
মুহূর্তের মধ্যেই ইউনিফর্মের পিঠ ভিজলো অফিসারের।
ভেজা ভেজা লাগতেই থামলো মানুষটা। কি হয়েছে আন্দাজ করেই বরফের মতো জমে গেলো ফ্যাকাসে মুখে। শুকনো ঢোক গিললো পরপর। মেয়েটাকে কাঁধে রেখেই প্রশ্ন করলো,
“তুমি কি–”
হাতের পিঠ দিয়ে মুখ মুছছিলো জারা। কিন্তু লাভ হলো না। সকালে যা খেয়েছিল ফের সবটা বেরিয়ে এলো পেট থেকে। ঝুলে থেকেই হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
“আর করবেন বিয়ে?”

নিউইয়র্কে সন্ধ্যা ঘনালো চোখের পলকে। শেহজাদদের বাড়ি সাজলো নতুন অতিথির অভ্যর্থনায়।
রান্না-বান্নার জন্য মানুষ রাখা আছে বিধেয় সুবিধে হলো মরিয়ম বেগমের।
আরশি কাজে সাহায্য করতে আসলেও বেচারিকে কাজ করতে দিলেন না প্রৌঢ়া।
উল্টে বকে ধমকে রুমে পাঠালেন সাজার জন্য। নতুন বউ বলে কথা; একটু সেজেগুজে না থাকলে হয়?
মরিয়ম বেগম ভারি শাড়ি পড়েছেন মেহমেদ হাসানের পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে। তবে আরশিকেও ভারি শাড়ির কথা বলতেই না করে বসলো মেয়েটা।
অগত্যা হালকা গোলাপির উপর সিল্কের একটা শাড়ি নিয়ে রুমে হাজির হলেন প্রৌঢ়া।
সাথে মেলানো গয়নার সেট। আরশিকে সাজিয়েও দিলেন নিজে থেকে। শাড়ির সাথে মেলানো ফুল স্লিভ ব্লাউস।
পুরো বাড়িজুড়ে সেন্ট্রাল হিটারের ব্যবস্থা রয়েছে ওদের এপার্টমেন্টের মতো। তাই শাড়ি পড়ার পরও ঠান্ডা খুব একটা লাগছে না।

মেয়েটার হাতে মিলিয়ে চুড়ি পড়িয়ে দিলো মরিয়ম বেগম।
সাজানো শেষ হতেই আরশি বলে উঠলো,
“এমি আপু রেডি হয়েছে ?”
“তোমার মনে হয় ও এখনো না সেজে আছে? তার তো সাজগোজ সেই কখন শেষ! দেখে আসলাম হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে! আদির সাথেই হবে হয়তো!”
অবাক হলো আরশি। এমিলিয়া নিশ্চয়ই মনে মনে জাম্বুবানকে পছন্দ করে; নয়তো তখন ওভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো না গায়ের উপর! তাহলে অন্য কারোর সাথে বিয়ে হবে জেনেও এতো খুশি হচ্ছে মেয়েটা? নাকি ফের কোনো ঘোট পাকাচ্ছে মনে মনে?
“এখন তো হুট করেই এ্যাঙ্গেজমেন্ট ঠিক হয়ে গেলো ; তাই বেশি মানুষজন দাওয়াত দিতে পারলাম না! তবে বিয়েতে কিন্তু মনে করে তোমার বন্ধু-বান্ধব সবাইকে বোলো আসতে!
মা মরা মেয়ে তো।

ছোট থেকে নিজের মেয়ের মতো করেই বড় করেছি ! বোনের মেয়ে হিসেবে ভাবিই নি কখনো! তাই চাইছি ওর বিয়েটাও ধুমধাম করে দিতে। রুশাটা থাকলে তো–”
থামলেন প্রৌঢ়া। ঢোক গিলে আড়াল করে গলায় দলা পাকানো বিষাদটুকু। রুশার নাম শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো আরশিরও। ইশশ! যদি কোনোদিন খুঁজে পেতো মেয়েটাকে।
ভদ্রমহিলা স্মিত হাসলেন কথার মোড় ঘোরানোর জন্য। বললেন,
“শায়ানটাকেও বলে দেবো আয়ানকে নিয়ে আসার জন্য। ছোটবেলায় তো আমার কাছেই পড়ে থাকতো ছেলেটা। মিলিয়ে নামও রেখে দিয়েছিলাম দুটোর। অথচ এখন আর যেনো ফুরসত নেই কারোর দুদণ্ড এই মায়ের কাছে আসার!”

আরশিরও তখন মনে পড়লো জারার কথা।যেনো যুগ পেড়িয়েছে দুই বান্ধবীর দেখা হয়নি; কথা হয়নি! মনে মনে ভাবলো, এই সুযোগে জারাকেও আসতে বলবে বিয়েতে।
তখনই গাড়ির শব্দ এসে থামলো বাড়ির সামনে। ভাবনায় বিচ্ছেদ ঘটলো আরশির। মরিয়ম বেগম তাড়াহুড়ো করে আওড়ালেন,
“ঐ চলে এসেছেন বোধ হয় তোমার সাহেব! নিচে যাবে তো আমার সাথে?”
মেয়েটা না করতে পারলো না। শাশুড়ির হাত ধরে সিড়ি পর্যন্ত আসতেই গলা শুকোলো ওর৷ জাম্বুবানটা ওর সাজ দেখে কি বলে ওঠে আবার কে জানে?

শেহজাদ এসে গাড়ি থামিয়েছে মাত্র। হাতে একটা গিফট বক্স। আসার সময় নিয়ে এসেছে আরশির জন্য৷ শানের মতো ধারালো মুখে দুর্বোধ্য হাসি। কিছুটা ঠোঁট বাকিয়ে ভাবছে কি রিয়্যাকশন দেবে ওর খরগোশের মা গিফটা দেখার পর।
মেহমেদ হাসানের দোতলা বাড়ি জ্বলজ্বল করছে অনুষ্ঠানের আমেজে। মেহমান বলতে শুধু ছেলে আর ছেলের বাবা-মা। তবুও যেনো আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখেনি উনি।
পার্কিং প্লেসে গাড়ি রেখে ইয়ার্ড ধরে হেঁটে বাড়িতে ঢুকলো শেহজাদ। অমনি কোত্থেকে পানির গ্লাস হাতে ছুটে আসলো এমিলিয়া। পরনে ল্যাভেন্ডার রঙা লেহেঙ্গা। সেজেগুজে তৈরি শেহজাদকে দেখাতে। কিন্তু মানুষটার নীল চোখ যে খুঁজছে অন্য একটা মুখ।
গলা পর্যন্ত শুকিয়ে আছে তাকে দেখার তৃষ্ণায়।

“কি হলো ভাইয়া পানির গ্লাসটা ধরো আর বলো আমায় কেমন লাগছে!”
শুধু মাত্র এ্যাঙ্গেজমেন্টের দিন বলে বড়সড় একটা ধমকের হাত থেকে বেঁচে গেলো এমিলিয়া। শ্বাস ফেললো শেহজাদ। অগত্যা পানির গ্লাসটা ধরে মুখে তুলতেই চোখ গেলো সিঁড়ির ওপরে।
হালকা গোলাপি রঙা শাড়ি পড়ে মায়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আরশি। একেবারে সাদামাটা সাজ; তবুও কি চোখ ধাধানো সৌন্দর্য।
প্রফেসর ঢোক গেলে। অক্ষিযুগল স্থির থাকে আরশির উপর। কিন্তু বেখেয়ালে কাত হয় হাতের গ্লাসটা। শার্টের ওপর পানি গড়িয়ে পড়তেই হুশ ফেরে শেহজাদের।
মরিয়ম বেগম হাসছেন ঠোঁট টিপে। কিন্তু আঁতকে উঠলো আরশি। সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসলো শেহজাদের কাছে।

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৫

“আপনি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসুন! ইশশ! কতটা ভিজলো দেখেছেন!”
সেসব শুনলো না প্রফেসর। উল্টে নজর গিয়ে আটকালো আরশির কোমরে। শাড়ির ফাঁক গলে বের হওয়া ফর্সা ত্বকে ব্যাধের দৃষ্টি তার।
গলা শুকিয়ে কাঠ হলো শেহজাদের। পানির গ্লাসটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“রুমে এসো ফাস্ট! চেঞ্জ করে কি পড়বো দেখিয়ে দিয়ে যাও!”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ২৬