নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩২ (২)

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩২ (২)
সিনথিয়া

শেহজাদের গলা জাপ্টে ধরে রইলো আরশি।
সুতো বিহীন বুকে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত করলো নিজেকে। বলিষ্ঠ হাতদুটোর উপর আরশির ছোট-খাটো শরীর। শাওয়াররুম থেকে বিছানা পর্যন্ত আসতেই থমথমে গলায় মেয়েটা বলে উঠলো,
“কথা যখন শুনবেনই না, তখন নামিয়ে দিন আমাকে!”
আরশির আননে জুড়ে বিষাদের মেঘ। অন্তস্থলে অভিযোগের পাল্লা ভারি। শেহজাদের মুখের দিকে তাকাতেও তীব্র অনীহা।
বিষয়টা লক্ষ্য করেই ফোঁস করে শ্বাস ঝাড়লো প্রফেসর। লম্বা দেহ দাঁড়িয়ে গেলো সটান! নীল চোখ দুটোয় অগাধ ভালোবাসা মিশিয়ে শুধোলো,
“রাগ করেছো?”
“নামিয়ে দিতে বলেছি!”

অন্যদিক ফিরেই আওড়ালো আরশি। ক্রোধটুকু চেপে রাখতে পারলো না আর। কথার ধরনেই স্পষ্ট বেরিয়ে এলো তা। অভিমানে নিঃশেষ হলো কৃষ্ণ গহ্বর। নিজেকে আঁটকে রাখতে না পেরে ফিরে তাকালো সহসা। শেহজাদের চোখে চোখ রেখে বললো,
“এতো করে যখন বারন করছি যেতে! তবুও শুনবেন না?”
প্রফেসরের শিথিল আদল। তাড়াহুড়ো বিহীন এগিয়ে এলো আরশির মুখের সামনে।
কিন্তু আজ আর ভড়কালো না মেয়েটা। যত যাই বলুক! যত যাই বুঝাক! জেনেশুনে একটা মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারবে না সে।
“আমার ওয়াইফের দিকে নজর দিয়েছে ঐ বাস্টা*র্ডটা। আমার ওয়াইফ! যার গায়ে আমি একটা ফুলের টোকা অবধি সহ্য করবো না! তাকে ছোঁয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে ও! হাউ ক্যান আই লেট হিম গো সো ইজিলি উইথ আউট হেভিং অ্য প্রপার ইন্টারেকশন সুইটহার্ট?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শেহজাদের কন্ঠ দৃঢ়। প্রখর তার বলা প্রতিটি শব্দ। অথচ দৃষ্টির সীমানায় আরশির গালের সেই কাটা দাগ। গভীর নয়। বরং অস্পষ্ট। খুব কাছ থেকে খেয়াল না করলে বোঝা যায় না।
একটু থেমে ঢোক গিললো প্রফেসর। টুপ করে চুমু খেলো সেখানে। ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই থমথমে অক্ষিযুগল বন্ধ হলো মেয়েটার। শেহজাদ মুখ তুলতেই চাইলো সে-ও! নিস্প্রভ কন্ঠে আওড়ালো,
“নিজের জীবন বাজি রাখতে কেনো এতো উঠে পড়ে লেগেছেন? আর কী বললে থামবেন আপনি? কি করলে থামাতে পারবো আপনাকে?”
মানুষটার অধর পাশে সূক্ষ্ম হাসি ফুটলো অমনি। নীল চোখে খেলে গেলো তীক্ষ্ণ ধূর্ততা! কানের পাশে ঝুঁকে এসে বললো,
“দ্যান সে ইয়েস এন্ড কিস মি হার্ড সুইটহার্ট! মার্ক মি এজ ইয়রস্! আর কতদিন অপেক্ষা করাবে বলো তো তুমি আমায়?”
আরশি কুন্ঠায় আরেকদফা সিঁটিয়ে গেলো ঐ শক্তপোক্ত বুকটাতে। ঠোঁট টিপে চাইলো বিরক্তে চোখে।
নিঃশব্দে হাসলো শেহজাদ। মেয়েটাকে নামিয়ে দিয়ে হাত বাড়ালো বিছানার উপরে থাকা নিজের ফরমাল স্যুটের ওপর।

ওগুলো নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে গিয়েও ঘাড় ঘোরালো।
“আজকে তোমার ভার্সিটি যেতে হবে না! ইনফ্যাক্ট পারলে বাসায় থেকো সারাদিন! আমি চেষ্টা করবো সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসার! ওকেই?”
উত্তর দিলো না আরশি। থম মেরে চেয়ে রইলো কেবল।
কারণ বুঝতে পেরে নরম হলো প্রফেসর। আদুরে চোখে তাকালো ওর দিকে। কন্ঠে নমনীয়তা মিশিয়ে ফের বলে উঠলো,
“ইটস্ অ্য রিকোয়েস্ট! প্লিজ রেখো?”
এক বুক হতাশা নিয়ে ওপর-নিচ মাথা নাড়লো আরশি।
সে যা-ই করুক না কেনো! বলুক না কেনো! এই মানুষকে আঁটকাতে পারবে না! তবে হাত গুটিয়ে বসেও থাকবে না। জাম্বুবান যদি একা ঐ সাইকোটার কাছে যেতে পারে, তাহলে সে-ও পারবে! পারবেই!

হাসান ভিলান খাবার টেবিল সাজানো। মরিয়ম বেগম ব্রেডে বাটার মাখতে মাখতে চাইলেন পাশে বসে খবরের কাগজ উল্টে-পাল্টে দেখা মেহমেদ হাসানের পানে। গলার শ্লেষা দূর করে বললেন,
“কিছু বলবে?”
ত্রস্ত ইংরেজি পত্রিকাটা কাঁচের টেবিলের উপর রাখলো ভদ্রলোক। স্ত্রীর কাছে ঘেঁষে আওড়ালেন,
“কী করে বুঝলে?”
“এতো বছর সংসার করলাম! আর এটুকু বুঝবো না?”
ঠোঁট টিপে লাজুক হাসলেন মেহমেদ। মরিয়ম হাতের কাজটুকু শেষ করে শুধোলেন ফের,
“তারপর বলো! উশখুশ উশখুশ করছো কেনো? ছেলেকে কিছু বলতে হবে?”
ভদ্রলোক হা করার আগেই বুটে আওয়াজ তুলে সিড়ি ভেঙে নেমে আসলো শেহজাদ।
পরনে সাদা শার্ট ছাড়া সবটাই কালো।
হাতের আরমানির ঘড়িতে সময় দেখে ত্রস্ত পা বাড়ালো দরজার দিকে।
অমনি পিছু ডাকলেন মরিয়ম।

“এভাবেই যাবি? কিছু খেয়ে যাবি না?”
আরশি চুপচাপ এসে দাঁড়ালো শাশুড়ির পাশে। ভোঁতা মুখে বিড়বিড় করে বললো,
“উনি খাবেন না আন্টি! রোজ তো না খেয়েই চলে যান ভার্সিটিতে! তারপর খিদেয় যখন সুগার লেভেল শূন্যে নামে, তখন মনে হয় খাওয়ার কথা মনে পড়ে ওনার!”
এমিলিয়া এলো সবেমাত্র। ঢুলু ঢুলু চোখে কথাগুলো শুনেই কপালে ভাজ পড়লো ওর।
“ভাইয়ার তো সুগার ছিলো না!”
শেহজাদ শুনলো সবটা। আরশির খোঁচাটুকু হজমও করে নিলো হাসি মুখে। পরপর এমিলিয়ার দিকে তাকিয়ে উশুল সমেত খোঁচাটুকু ফেরত দিয়ে বললো,
“আগে ছিলো না! বাট তোর ভাবি এতো মিষ্টি! ওরজন্যই মনে হয় আমার সুগার লেভেল আর কন্ট্রোলে নেই!”
নিজের গোমড়ামুখো সত্তার বাইরে গিয়ে এমন একটা কথায়
থতমত খেলো এমিসহ রুমের সবাই। কেশে উঠলেন মেহমেদ।
সেটা খেয়াল করে তড়িৎ মাথা নোয়ালো প্রফেসর। ঠোঁট কামড়ে হাসলো আনমনে।
চোখ মার্বেল বানিয়ে দাঁড়িয়ে আরশি।
কুন্ঠার লাল রঙে তপ্ত গালদুটো। সবার সামনে এমন ধরে বেঁধে লজ্জায় ফেললো জাম্বুবান ওকে?
পরপরই আনত মুখটা তুললো প্রফেসর। আকন্ঠ লজ্জায় মিশে যাওয়া মেয়েটার পানে তাকিয়ে ছোট করে শুধু বললো,

“আসছি!”
ভেবেছিলো আরশিও বলবে তেমন কিছু। কিন্তু রা করলো না মেয়েটা। অগত্যা! প্রত্যাখান বুকে নিয়ে বাইরে পা বাড়ালো মানুষটা!
শেহজাদ চলে যেতেই মরিয়ম বেগম চাইলেন আরশির দিকে। চিন্তিত স্বরে আওড়ালেন,
“ও একা চলে গেলো যে? তুই যাবি না?”
শুধু একবার যদি সত্যিটা বলতে পারতো আরশি। কিন্তু বললেই যে, আরো দুশ্চিন্তা বাড়বে সবার।
শ্বাস ফেলে বললো,
“শরীরটা ভালো লাগছে না আন্টি! তাই আর যাইনি!”
প্রৌঢ়া গালে হাত রাখলেন ওর। পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে মা?”
চিন্তার ভাজ পড়লো মেহমেদ হাসানের কপালেও। উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন,
“তাহলে আজ বরং আমরাও আর কোথাও না যাই? কি বলো মরিয়ম? আরশি মায়ের শরীরটা একটু ভালো হোক! তারপর না হয়–”

মেহমেদের কথার মাঝেই উঠে দাঁড়ালো আরশি। মুখে একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে শুধোলো,
“তোমরা কোথাও যাচ্ছিলে বুঝি?”
স্মিত হাসলেন মরিয়ম। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“ঐ ভেবেছিলাম আরকি! কিন্তু তোর শরীরটাও হুট করেই এতো খারাপ করে বোসলো–”
ওনাকেও থামিয়ে দিলো আরশি।
“আরে! কোথায় আর এমন খারাপ করেছো শরীর। এই দ্যাখো! আমি একদম ফিট!”
নিজেকে ঘুরিয়ে দেখালো মেয়েটা। কোমরে হাত দিয়ে বললো,
“আমার জন্য তোমরা প্ল্যান ক্যান্সেল করবে? নোপ! কাভি নেহি!”
এমিলিয়ার সহ্য হলো না এসব আদিখ্যেতা। আজকাল খাবার টেবিলেও একটু শান্তি পাওয়া যায় না এদের জন্য। চোখ তালুতে তুলে শ্বাস ঝাড়লো বিরক্তির।
পরপর উঠে যেতে যেতে বললো,
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে! ”
মিইয়ে এলো আরশি। মরিয়ম বেগম আঁটকালেন ওকে
“দাঁড়াও!”
পরপর বলে উঠলেন,
“আরশি যেহেতু এতো করে বলছে, তাহলে তো যেতেই হবে! আর তুমিও যাবে আমাদের সাথে!”
খালার মুখের উপর কিছু বলতে পারে না এমি। এবারও পারলো না।
আরশির একটু মন খারাপ হলো বটে। সবাই এতো মজা করে ঘুরবে, শুধু সে-ই থাকতে পারবে না।
ঠোঁটের পাশে ফিচলেমিও ফুটে উঠলো অমনি। বাড়ি ফাঁকা থাকলে সন্ধ্যায় ওর বের হতেও সুবিধে হবে। জাম্বুবান একা ঐ সাইকোটার মোকাবিলা করবে? বললেই হলো নাকি?

আয়ানের গাড়ি এসে থামলো ‘পার্ক এভিনিউ কিন্ডারকেয়ার’ স্কুলটির সামনে। মিডটাউন
ম্যানহাটনের থার্টি নাইন আর ফর্টি স্ট্রিটের মাঝবরাবর ওরা। সকালের তীর্যক কিরণে
ঝলমলিয়ে উঠেছে স্কুলের মাঠটি।
বরফের পাতলা আস্তরণ ফিকে হচ্ছে অল্প অল্প করে। ‘ফল’ সিজনের বিদায় বেলার সুর প্রকৃতিতে।
জারা মুগ্ধ চোখে দেখলো সেসব। হুট করেই পাশ থেকে গাড়ির দরজা খুলে হাত বাড়ালো অফিসার!
“নেমে পড়ো বাটারফ্লাই!”
একান-ওকান জুড়ে হাসি দেখে খেই হারালো জারা। নীলাভ চোখ বেহায়া চেয়ে থাকে ঐ টোল পড়া গালের দিকে।
কালো ইউনিফর্মে আঁটসাঁট শরীর কিঞ্চিত সতর্ক হলো ঐ দৃষ্টিতে। মনে মনে নিজেকেই নিজে বোকলো অফিসার।
হয়তো ওর মতো করে বাটারফ্লাইও একটু একটু প্রেমে পড়ছিলো ওর। মাঝখানে এমন আহাম্মকের মতো একটা কথা বলে বসলো সে। কি দরকার ছিল কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের কথা তোলার! তবুও ভাগ্য ভালো, এখনো না করে বসেনি জারা।

তার মানে, ইউ হ্যাভ স্টিল গট অ্য চান্স আয়ান। গো ফর ইট!
তক্ষুনি ওদের দিকে এগিয়ে এলেন এক ভদ্রমহিলা। আয়ানকে পেছন থেকে ডাকতেই ফিরে চাইলো ও।
হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো পরপর। গাঁট হলো জারা। একটু পুড়লোও বোধ হয় বুকের ভিতর। পরপর নিজেকেই বোঝালো,
“তুই জেলাস হচ্ছিস কেনো? ঐ হাসিটা কি তুই কিনে নিয়েছিস নাকি যে অমন করে তোর বানরমশাই আর কারোর দিকে চেয়ে হাসতে পারবে না?”
প্রেমিকা সুলভ সত্তাটা হইহই করে উঠলো মস্তিষ্ক জুড়ে। মানতে পারলে না ওর ভাবনাগুলো। সেসবে পাত্তা না দিয়ে নেমে পড়লো মেয়েটা।
অমনি ওর দিকে তাকালেন ভদ্রমহিলা।
মধ্যবয়সী। জারার থেকে অনেকটা বড়।
পরনে জারার মতোই জিন্স টপস আর ওভারকোট। তবে রঙটা ভিন্ন।
চওড়া হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে পশ্চিমা ভাষাতেই বললো,
“হ্যালো মিস! আমি লরেন টিন। এই স্কুলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।”
কিছুটা অপ্রস্তুত হাসলো জারা। ছোট ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে আলগোছে হাত বাড়ালেও সে-ও। অল্প ঝুঁকে আওড়ালে,

“হ্যালো ম্যাম! আমি জারা। নিউইয়র্ক ইউনি–”
মাঝপথেই ওকে থামিয়ে দিলেন লরেন। হেসে বললেন,
“আমি জানি সবটা। আর হ্যাঁ! আমার সাথে কিন্তু এতো ফরমালিটিজ করতে হবে না! আয়ান আগেই বলেছে আপনার ব্যাপারে। আমার সাথে আসুন! আমি ভিতরটা ঘুরিয়ে দেখাই আপনাকে!”
থমকালো জারা। ভদ্রমহিলা ভিতরে যেতেই ঠোঁট কিঞ্চিত ফাঁক হলো ওর। অবিশ্বাস নিয়ে চাইলো আয়ানের দিকে। চোখের চাহনিতে স্পষ্ট বোঝালো,
“এটা কি হলো?”
পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে অফিসার। বক্সি স্মাইলে ইশারা করলো এগিয়ে যেতে। সে আছে ওর সঙ্গে। ওর পাশে।
ভরসা পেলো একটু জারা। দম নিয়ে হাঁটা শুরু করার আগে তবুও পাশে এসে দাঁড়ালো আয়ান। বলিষ্ঠ হাতের মুঠোয় নাজুক হাতটা নিয়ে বললো,
“আর ইউ রেডি ফর ইয়র নিউ জার্নি মিস বাটারফ্লাই?”
জারাও অল্প ঝুঁকে এলো অফিসারের দিকে। হার্ট বিট বন্ধ করা চমৎকার এক হাসি দিলো পরপর।
আয়ান রুদ্ধ শ্বাসে তাকিয়ে সেদিকে। পরপরই শুনলো এক মোহনীয় কন্ঠস্বর,
“ইয়েস আই অ্যাম! মিস্টার বানরমশাই!”
স্কুলটার ভিতর বেশ পরিপাটি। যেনো কোনো গোছানো বাসা। কিচেন কাউন্টার থেকে শুরু করে বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় সব আছে এখানে।

ক্লাস রুমের সামনেই টানানো ব্যানারে চোখ আঁটকালো জারার। সেখানে রঙিন অক্ষরে লেখা “হ্যাপি ফল!”
মেয়েটা মুগ্ধের মতো দেখলো সেসব। শখের বসে কতবার যে ভেবেছিল বড় হলে টিচার হবে। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে গন্তব্য বদলালো। উদ্দেশ্য বদলালো!
তখন মূলত লক্ষ্য বলতে ছিল, বিদেশে পড়াশুনা করতে আসতে পারা! এটুকুই!
আয়ান ওর সেই লক্ষ্য যেনো এগিয়ে দিলো আরো একধাপ। বিমূর্ত ইচ্ছেগুলোর হাত ধরে চূড়ায় আনলো! নিজের অজান্তেই ওর সুপ্ত বেরঙিন বাসনাগুলোকে রঙ দিলো এই মানুষটা।
মিসেস লরেন ফিরলেন ওদের দিকে। জারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আপনার পছন্দ হয়েছে আমাদের স্কুলটা?”
মেয়েটা লজ্জা পেলো খানিক। ঠোঁট টিপলো কৃতজ্ঞতায়।
“ভীষণ!”

“তাহলে কাল থেকেই জয়েন করে ফেলুন? আপনার এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট লেটারটা আমি ইমেইল করে পাঠিয়ে দেবো!”
ভদ্রমহিলা হাসিখুশি প্রকৃতির। কথাগুলো বলার সময়ও একমুহূর্তের জন্য হাসি সরলো না তার মুখ থেকে।
একটু আগে নিজের বোকা বোকা ভাবনার যে মেয়েটা ফুলছিল আক্রোশে। সেই মেয়েটাই নিজের ভাবনাগুলো উপর বিরক্ত হলো ভীষণ। কুন্ঠায় ঝুঁকে গেলো সেই হিংসে টুকুর পাহাড়।
ভদ্রমহিলা ওদের নিজের অফিস-রুমে নিয়ে এলেন। নিজের হাতে কফি বানিয়ে এগিয়ে দিলেন ওদের সামনে। কতশত কথা বললেন তারপর। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল আয়ানের দাদির কথা।
কত ভালোবাসতো সে এই স্কুলটাকে। এখানকার বাচ্চাদের।
জারা শুনলো সেসব। মাঝেমধ্যে আঁড়চোখে
দেখে নিলো পাশে বসা আয়ানকে। তখনই যেনো সৌষ্ঠব পুরুষের সৌন্দর্য ঠিকরে এসে লাগলো নেত্রপল্লবে। গালের টোলগুলো ঝড় তুললো বুকের ভিতর। শুকিয়ে মরুভূমি হলো গলবিল।
“পানি?”
জারার প্রশ্নে থামলেন লরেন। পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরতেই ঢকঢক করে সবটা শেষ করলো ও। আয়ান উৎকন্ঠিত। কাঁধে হাত রাখতেই বুকের গতি বাড়লো জারার। পরের
কথাগুলো শুনলোই না ভালো করে। কি জিজ্ঞেস করলো লোকটা ওকে?
ও ঠিক আছে কি না?
একদম না! ঠিক নেই! কিচ্ছু ঠিক নেই!
কিছু একটা নিশ্চয়ই ওলট-পালট হয়ে গেছে ওর!

মিডটাউন সেভেনথ এভিনিউ। ফ্যাশন এভিনিউ নামেও অনেকের কাছে পরিচিত এই জায়গাটা। ঠিক সামনেই টাইম স্কয়ার। মানুষের কোলাহলে ব্যস্ত রাস্তা।
প্রজ্বলিত বিলবোর্ড, রঙিন বাতির আলোয় মোড়ানো চারপাশ। কানায় কানায় পূর্ণ দোকানগুলো।
গোধূলির আকাশে লাল মেঘের ভেলা। এলোমেলো শীতল বাতাস। পরন্ত বিকেলের বিদায়সারনি নিয়ে ছুটছে তারা। সূর্য ডোবার প্রতিক্ষায় বাতাবরণ। আটটায় সন্ধ্যা হয় এখানে। তারমানে এখনো এক ঘন্টা বাকি!
শেহজাদের গাড়ি এসে থামলো একেবারে সময়মতো। না দুমিনিট আগে, না পরে।
দরজা খুলেই লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এলো
মানুষটা। কালো বুট বরফে চিহ্ন ফেলতেই
দৃশ্যমান হলো বলিষ্ঠ গতর।

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩২

সজাগ তার নীলাভ অক্ষিযুগল। সতর্ক দৃষ্টি ফেললো আশেপাশে। সন্দেহজনক কিছু চোখ পড়লো না বটে তবে হাতে থাকা ফোনে আরেকটা মেসেজ এলো ঠিক সেই মূহুর্তেই।
দৃঢ় চোয়ালে সেদিকে তাকালো শেহজাদ।
“ইউ আর জাস্ট অন টাইম! সামনের ৮৮১ নং বিল্ডিংয়ের তেরো তলা!
নিজের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসো প্রফেসর! আমি অপেক্ষায় আছি!”

নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৩৩