নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৪৪
সিনথিয়া
“আই হ্যাভ ডিসাইডেড বাটারফ্লাই! এজ অ্য রেসপন্সিবল বয়ফ্রেন্ড, ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে আমি ন্যাশনাল হলিডে হিসেবে ঘোষণা করলাম!’
আয়ানের স্বভাবসুলভ উচ্ছ্বল কন্ঠ আজ থমথমে শোনালো ভীষণ। যেনো দুঃখে ভিতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে তার। কালো হেলমেটের আড়ালে অন্ধকার হয়ে আছে তার সৌম্য মুখ।
সম্মুখের কালো লেদার জ্যাকেট আর লেদার প্যান্ট পরনে নজরকাঁড়া মানুষটার এমন ধারা বাচ্চামো কথায় ঠোঁট টিপলো জারা। একহাতে নিজের ওভারকোটের সামনেটা জড়িয়ে অন্য হাত রাখলো বাইকের গ্র্যাব হেন্ডেলসে।
রৌদ্রজ্জ্বল সকালের ঝিরিঝিরে ঠান্ডা বাতাসে উড়লো তার ক্লাসিক বব কাট করে রাখা চুলগুলো।
গলায় মেকি উদ্বেগ নিয়ে শুধালো,
‘তা হঠাৎ রেসপন্সিবল বয়ফ্রেন্ডের এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ?’
মেঘের ভেলার ফাঁক গলে আসা রোদে ঝলমলে নিউইয়র্কের রাস্তা। বরফের গা ছুঁয়ে বাইকের চাকা দূরত্ব কমিয়ে আনছে তাদের গন্তব্যের।
উত্তরে আয়ান গম্ভীর গলায় বললো,
‘কোথায় ভাবলাম আজ সারাদিন একটু চুটিয়ে প্রেম করবো! ছুটিও নিয়েছিলাম জানো। কিন্তু একজনের নাকি আজ কাজে যেতেই হবে! কোনোভাবেই মিস দেয়া যাবে না! তাই দায়িত্ব নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আজ থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারী ন্যাশনাল হলিডে। ব্যস!’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘বাপ্রে! একটু প্রেম করবেন বলে ছুটি নিয়ে নিলেন? তাহলে বেশি প্রেম করার সময় কী করবেন?’
প্রশ্নটা জারা দুষ্টুমি করে করলেও উত্তরে খাঁদে নামলো আয়ানের স্থুল স্বর,
‘ম্যাডামের ব্যস্ত শিডিউল থেকে তাকে চুরি করে অনেকটা দূরে নিয়ে চলে যাবো!’
‘আর থাকবো কোথায়?’
‘কখনো তাবু টাঙিয়ে, কখনো খোলা আকাশের নিচে! ঘাসের উপর শুয়ে তুমি তারায় ভরা আকাশ দেখবে আর আমি তোমাকে। বা কখনো বরফের উপর বরফের ঘর বানাবো। তারপর সেই ঠান্ডা ঘরে উষ্ণতা ছড়াবে আমাদের ভালোবাসার মূহুর্ত গুলো!’
‘উমম লাইক ইগলু?’
‘ইয়েস ম্যাডাম!’
‘এতো লোভ দেখাবেন না বানরমশাই! লোভ সামলাতে না পেরে যদি আপনাকে এক্ষুনি কষে একটা চুমু খেয়ে ফেলি তখন?’
আয়ান হকচকালো। জারা মজার ছলে বললেও হৃদকম্পন ঘটলো পুলিশের বুকে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখারও চেষ্ট করলো! কিন্তু লাভ হলো না। মিডটাউনের কাছাকাছি আসতেই আবদার ছুড়ে বলে উঠলো,
‘আজকের ক্লাসগুলো ক্যান্সেল করে দাও বাটারফ্লাই! তারপর আমরা কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসি! চলো! কিছু খেতে ইচ্ছে হলে এতক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক না। মনকে এতক্ষণ অপেক্ষা করালে পাপ হয়, আমি শুনেছি!’
জারা ঠোঁট টিপে হাসি আঁটকালো। কন্ঠে ছদ্ম বিষন্নতা ঢেলে আওড়ালো,
‘আমার আবার কী খেতে ইচ্ছে হলো?’
‘কেনো? এই মাত্র না বললে? তোমার আমাকে চুমু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে?’
‘আগে অফিসিয়ালি বানরমশাই থেকে বরমশাই হয়ে দেখান! তারপর ভেবে দেখবো!’
আয়ান বাচ্চাদের মতো গাল ফুলালো। শিশুসুলভ অভিমানে রুদ্ধ তার গলবিল। কিছুক্ষণ থমথমে মুখে বসে থেকে হাল ছেড়ে দিলো। দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে বললো,
‘সে উপায় কী আর রেখেছেন ম্যাডাম? আপনি তো বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করবেন বলেই খালাস! এদিকে বিয়ে না হওয়ার কষ্টে দম বন্ধ হয়ে মরছি আমি!’
এমন আদুরে নালিশের পিঠে হাসাটা বেমানান। জারাও হাসলো না। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট পিষে বেমানান বিষয়টাকে আঁটকে ফেললো। একটু চুপ থেকে বললো,
‘আমি তো গতকালই আপনাকে বললাম, বিয়েটা কেনো আমি বাংলাদেশে গিয়ে করতে চাই! ওখানে হোমসের সবাই আছে! যে দাদা-দিদুনদের কাছে ছোট থেকে বড় হয়েছি, তারা আছে! তাদের ছাড়া বিয়ে করে ফেললে তারাও তো কষ্ট পাবে বলুন! আমার এইটুকু আবদার রাখবেন না আপনি?’
উত্তর দিলো না আয়ান। মানুষটা হয়তো আবারও রেগে গেছে ভেবেই ঠোঁট উল্টালো জারা। অভিমানী নীল চোখজোড়া চওড়া কাঁধ ডিঙিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে চাইলো আয়ানকে। কিন্তু! বিধিবাম! মাথার ঐ মস্ত হেলমেটটা বড্ড দুশমনি করলো জারার সাথে। দেখতেই দিলো না আয়ানকে।
কিছু একটা ভেবেই আলগোছে গ্র্যাব হেন্ডেলস থেকে হাত সরালো মেয়েটা। পরপর আচমকাই জড়িয়ে ধরলো আয়ানের সরু কোমর। আদর মেখে জিজ্ঞেস করলো,
‘কথা বলবে না? জান?’
আয়ান থমকালো। কোমরের দু’পাশে পেলব হাতের উষ্ণতা ঝড় তুললো তার প্রেমিক মনে। সেকেন্ডখানেকের জন্য ব্যালেন্স হারিয়ে টালমাটাল হলো চলন্ত বাইকখানা।
‘আরে করছেন কী? এক্সিডেন্ট হবে তো!’
বরফভেজা রাস্তায় বাইকের চাকা হড়কে গিয়ে এক্সিডেন্ট হওয়ার ঘটনা অপ্রতুল নয়।
জারা ঘাবড়ে গেলো সেই চিন্তায়। বেখেয়ালে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে। বাইকের সামনের চাকা সেকেন্ডখানেক এদিকওদিক করে ক্ষান্ত হলো অবশেষে। থেমে গেলো বাইকের ইঞ্জিন।
ব্যস্ত রাস্তার সাইডে জড়বস্তুর ন্যায় দাঁড়িয়ে পড়লো দুচাকার যানটা। আয়ান তখনও প্রকট চোখে চেয়ে সম্মুখে। ম্যারাথনের বেগে শ্বাস পড়ছে তার।
কতবার কাছাকাছি হলো ওরা! তবুও জারার ঐটুকু ছোঁয়ায় ওমন নাভিশ্বাস ওঠার কোনো মানে হয়?
বাইক থামতেই আয়ানের প্রশস্ত পিঠ বরাবর জোরে এক চাপড় বসালো জারা। কন্ঠে উষ্মা নিয়ে বলে উঠলো,
‘কী করছিলেন এটা? এক্ষুনি তো বেকায়দায় এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো!’
আয়ানের হুশ ফিরলো পিঠের ব্যথায়। একবার পিছনে তাকিয়ে চোখ নামালো কোমরের দিকে। যেখানে জারার পেলব হাতজোড়া তাকে সহ জড়িয়ে ধরে আছে। খড়খড়ে গলাটা হাওয়া গিলে ভেজানোর ব্যর্থ চেষ্টায় আর গেলো না আয়ান। আবারও পিছনে তাকিয়ে ফট করে বলে উঠলো,
‘একটু আগে কী বললে তুমি?’
জারা ভ্রুকুটি করলো। মসৃণ কপালের কয়েকপরত ভাজ ফেলে আওড়ালো,
‘বলেছি এভাবে কেউ বাইক চালায়? এক্ষুনি যদি এক্সি…!’
‘না তার আগে!’
জারা থামলো। ‘আগে’ বলতে আয়ান কী বোঝাতে চাইছে, সেটা বুঝতেই বিমূঢ় মুখখানা রক্তিম হলো তার! অলিন্দের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়লো কপোলের জাফরানি রঙ।
প্রেয়সীর নীরবভূমিকায় অস্থির হলো সম্মুখে বসে থাকা প্রেমিক সত্তা। নিজেই ফের অবিশ্বাসের স্বরে শুধালো,
‘ডিড ইউ জাস্ট কল মি জান?’
বাচ্চাদের হট্টগোল আর হইচইয়ে প্রাণোচ্ছল কিন্ডারকেয়ার স্কুলটির মাঠ। ঘাসের ডগায় মাথার তাজের মতো ঝলমল করছে বরফ কুঁচি। রোদেলা দিনেও শীতের পোশাকে জবুথুবু বুড়ো থেকে গুড়ো সবাই! হিমেল হাওয়ায় বসন্তের আগমনী বার্তার বদলে বইছে আবারও তুষারপাতের আভাস।
এতোকিছুর মধ্যে আয়ানের সবিস্ময়ে করা প্রশ্নের উত্তর আর তার পাওয়া হয়নি। জারা করুণা করেও দ্বিতীয়বার আর ‘জান’ বলে ডাকেনি তাকে।
অবশেষে শুকনো মুখে আয়ান বাইক থামালো স্কুলের সামনে। কিন্তু জারা নামতেই বেচারা হাত টেনে ধরলো প্রেয়সীর। নিজের বুকের কাছে এনে কাতর স্বরে বললো,
‘আর একবার, জাস্ট একবার জান বলে ডাকবে? প্রমিজ! আর জ্বালাবো না বাটারফ্লাই!’
‘ওটা ওয়ান্স ইন অ্য লাইফটাইম সুযোগের মতো বুঝলেন? সবসময় ডাকলে মর্ম থাকবে না!’
জারার দুষ্টুমি ধরতে পেরে আরো একবার প্রলম্বিত শ্বাস ফেললো অফিসার। তবে হাত ছাড়লো না। অন্য হাতে মাথার হেলমেট খুললো। পরপর জারাকে চমকে দিয়েই চুমু খেয়ে বসলো তার মেদুর গালে।
অকস্মাৎ এই ঘটনায় লাজবন্তী প্রকট চোখে তাকাতেই আয়ান ছেড়ে দিলো তাকে। ত্রস্ত সামনে চেয়ে হড়বড়িয়ে বললো,
‘ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই! ওয়ান্স ইন অ্য লাইফটাইম সুযোগ হারানোর বেদনা তুমি কী বুঝবে পাষাণ রমনী? যাও যাও গিয়ে ক্লাস করাও! মানুষ একটু চুমু খেয়ে শোক প্রকাশও করতে দিতে চায় না! উফ!’
কিছুক্ষণ রুদ্ধশ্বাস মূহুর্ত পার হওয়ার পর আয়ান আড়চোখে তাকালো জারার মুখপানে। আচমকা দু’জনের চোখাচোখি হতেই হেসে ফেললো ওরা। হাসতে হাসতেই ফের চাঁদমুখখানা মলিন হয়ে উঠলো জারার।
তবে আয়ানের নজর এড়াতে পারলো না সেই মলিনতা। সামনে ঝুঁকে নাক টেনে দিয়ে দুষ্টুমির স্বরে শুধালো,
‘সকাল থেকেই খেয়াল করছি, কেমন মনমরা হয়ে আছো? বাই এ্যানি চান্স তুমি কি ইনসিকিউরড ফিল করছো আমাকে নিয়ে বাটারফ্লাই? ভাবছো যদি কোনো সুন্দরী রমনী আমাকে প্রপোজ করে ফেলে? তাই না?’
জারা হতাশ শ্বাস ফেলে বললো,
‘আজকের দিনে এতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে একা একা রাস্তায় ঘুরবে! এটাই কি ইনসিকিউরড হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়?!’
আয়ানের প্রাঞ্জল মুখটা শুকিয়ে গেলো অমনি। ভীত চোখে ঢোক গিললো। জারার কথাগুলো সত্যি ভেবে প্রায় বলেই বসতো ‘আমি যাচ্ছি না আজ তোমার কাছ থেকে কোথাও, চাকরি চুলোয় যাক!’ তার আগেই জারা চোখ খিঁচে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বললো,
‘রিল্যাক্স! অতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই! আমি তো মজা করছিলাম!’
পরপরই থামলো মেয়েটা। ঠোঁট টিপে দৃষ্টি নামালো পায়ের ওপর। মিহি স্বরে বললো,
‘আসলে মরিয়ম আন্টি আর মেহমেদ আঙ্কেলের কথা মনে পড়ছে। ঐদিন ঐ কয়েকঘন্টার জন্য মনে হয়ছিল যেন নিজের বাবা-মায়ের কাছে আছি!’
এতোক্ষণে ভার নামলো আয়ানের বুক থেকে। স্মিত হেসে বেশ হেয়ালি করে বললো,
‘এই যদি হয় মন খারাপের কারণ তাহলে তো মন ভালো করে দিতেই হয়!’
জারা সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাতেই আয়ান বললো,
‘তোমার মরিয়ম আন্টি আজ দুপুরে যেতে বলেছেন তাদের বাসায়। আরশি আর ঐ শায়ান ব্যাটাকে একটা গ্র্যান্ড সারপ্রাইজ দেয়া হবে ম্যাডাম! এ্যানি গেইস কেনো?’
‘আরশির বার্থডে উপলক্ষে?’
‘ইয়াপপপ! সাথে আমার অকর্মার ঢেঁকি বন্ধু মহাশয়ের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষেও! কিন্তু ওদেরকে জানানো হয়নি। সারপ্রাইজ কি না!’
এটুকু বলেই থামলো আয়ান। জারা তখন খুশিতে ঝুমঝুম করছে। দু’হাত এক করে ভাবছে কী গিফট নেবে আরশির জন্য। তখনই ফের মুখ খুললো মানুষটা। ভ্রু উঁচিয়ে আওড়ালো,
‘ভেবেছিলাম কেউ একজন জান না ডাকলে তাকে আজ আর বলবোই না দাওয়াতের কথাটা!’
এটুকু শুনতেই ভ্রুকুটি করে তাকালো জারা। মেকি রাগ দেখিয়ে শুধোলো,
‘তাহলে এখন বললেন কেনো?’
অফিসার এবার তার নীলাম্বরীর দিকে তাকিয়েই বুকের বা পাশে হাত রাখলো। তারপর বললো,
‘কী করবো বলো বাটারফ্লাই? যাকে এতো ভালোবাসি সে সারাদিন মুখ ভার করে থাকলে এখানে কষ্ট হবে না?’
আয়ানের গালে তখনও টোল পড়া হাসি।
‘এখন আসি? তোমাকে দুপুরে এখান থেকেই পিক করে ও বাড়ি নিয়ে যাবো কেমন? বেশি লেইট করো না কিন্তু বের হতে! ’
এটুকু বলে থ্রটলে হাত রাখতেই একেবারে কাছাকাছি চলে এলো জারা। স্তব্ধ হলো আয়ানের হেম চোখ। মুখ ঘুরিয়ে জারার দিকে তাকাতেই ঠোঁট বরাবর চুমু খেয়ে বসলো মেয়েটা।
জারা নিজেও হতভম্ব। প্রকট তার অক্ষিযুগল। ভেবেছিল গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভো-দৌড় লাগাবে। কিন্তু বিধিবাম! গালে ঠোঁট ছোঁয়াতে গিয়ে ঠোঁটেই যে চুমু খেয়ে বসবে কে জানতো?
আয়ানের হৃদযন্ত্র থামিয়ে দিয়ে জারা আর দাঁড়ালো না এক মুহূর্তও। এক প্রকার উড়ে চলে গেলো সামনে থেকে। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আয়ান তখনও তাকিয়ে লাজবন্তীর প্রস্থান পানে। পরপর আনমনেই মাথা নোয়ালো মানুষটা। কামড়ে ধরলো নিম্নাষ্ঠ। নিঃশব্দে হেসে ফেলে হতাশ স্বরে বললো,
‘মিস্টার আয়ান হান্টার! ইউ আর ডুমড বাডি! তোর এই দূর্বল হৃদয় বাটারফ্লাই এর হুটহাট চুমুর ধকল সামলাতে পারলে হয়!’
তখনই তারস্বরে বেজে উঠলো তার মুঠোফোনখানা। ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করতেই স্বয়ংক্রিয় ইয়ারপডে
শুনতে পেলো কলদাতার আওয়াজ। মূহুর্তেই চোখমুখ শক্ত হলো আয়ানের। অবিশ্বাসের স্বরে আওড়ালো,
‘হোয়াট? আদি পালিয়ে গেছে? জেল থেকে একটা ক্রিমিনাল পালালো কী করে?
তোমরা কোথায় ছিলে? উইথিন ফাইভ মিনিটস ডিটেইলসে জানাও আমাকে সবটা। আর টিম রেডি করো! আমি আসছি!’
মোম গলানো সন্ধ্যে নেমেছে নিউইয়র্কের শহরজুড়ে। একে একে স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলতেই অন্ধকার ফুরিয়ে যায় ব্যস্ত রাস্তার। সেই সোডিয়াম আলোর গা বেয়ে আকাশ থেকে তুষার ঝড়ে। ঝুপ করে হওয়া মন খারাপের সুর তোলে নীড়ে ফেরা চড়ুই। বিষন্নতাগুলো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হারিয়ে যায় শতশত মানুষের ভীড়ে।
গায়ে জড়ানো নীল শাড়িটার আঁচল লুটিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো আরশি। স্নিগ্ধ মুখখানায় প্রসাধনীর বালাই নেই। সুডৌল গড়নে গয়নার আতিশয্য নেই। তার অজান্তেই অনিন্দ্য সৌন্দর্যের অধিকারিণী সে।
কিন্তু বিশ পেরোনো মেয়েটার এই অনিন্দ্য সৌন্দর্যকে ম্লান করতেই যেনো উপস্থিত হয়েছে অহেতুক মনখারাপ।
দুপুরটাও সুন্দর কেটেছিল। কত কত আয়োজন করলেন মেহমেদ হাসান। কেক আনলেন। মরিয়ম বেগম নিজের হাতে রান্না করলেন আরশির পছন্দের খাবারগুলো। বেলুন দিয়ে পুরো বাড়ি ডেকোরেশনের ভার নিলেন রবিনসন।
ব্যস্ততার জন্য যদিও আয়ানভাই আসতে পারেনি তবে জারা এসেছিল। সঙ্গে এনেছিল এই কনকনে শীতের মধ্যেও বসন্তের ফুল। একগুচ্ছ ডেফোডিল!
হুট করেই তার মনখারাপেরা অলৌকিক ভাবে খুঁজে পেলো বাকশক্তি। শুধালো,
‘এতো এতো কিছুর মধ্যে জাম্বুবান কী করলো?’
আরশি পরিতাপের পোড়া শ্বাস ফেললো প্রশ্ন শুনে! বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘সে যেমন শেষ মূহুর্তে ঝড়ের গতিতে এসেছিল তেমনি ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। কেক কাটা শেষ হতেই নাকি তার মনে পড়ে গেছে এক্সট্রা ক্লাস নেয়ার কথা!’
‘আর সন্ধ্যায় যে ছাঁদে যেতে বলা হয়েছিল আরশিকে? সেকথা বেমালুম ভুলে গেলো মানুষটা?’
আরশি উত্তর দেয় না! প্রেমজ্বরে তার মনভাঙে। যার জন্য আজ শাড়ি পরলো, যার দেয়া শাড়ি পরলো, তার ফিরে না চাওয়ার দুঃখে বিবাগী হতে চায় ক্ষনিকের প্রেম প্রেম অনুভূতি।
সেই মনভাঙার শব্দে চাপা পড়ে যায় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। সাড়া না পেয়ে অগত্যা ভেড়ানো দরজা ঠেলেই ভেতরে ঢোকেন মরিয়ম। মেয়েটাকে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই ঠোঁট টিপে ফেলেন তিনি। হাসি আঁটকে উদ্বেগ টানেন চেহারায়। শুধিয়ে ওঠেন,
‘হ্যাঁ রে আরশি! স্নোবলকে দেখেছিস? আমি সারা বাড়ি খুঁজলাম জানিস! কোত্থাও পেলাম না। তুই একটু দেখতো মা!’
স্নোবলের নাম শুনতেই হুশ ফেরে আরশির। আঁচল সামলে ফিরে চায় মরিয়মের দিকে৷ ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনেই যেনো মাথায় বাজ পড়ে ওর। কপালে হাত রেখে ঠোঁট ভেজায়। উৎকন্ঠিত স্বরে আওড়ায়,
‘সব জায়গায় খুঁজেছিলে মা? ইয়ার্ড, বাবার লাইব্রেরীর ঘরটা?’
‘সব জায়গায় খুঁজেছি রে মা! শুধু..!’
‘শুধু?’
‘শুধু ছাঁদটাই বাকি। আমার পায়ের ব্যথাটা না বাড়লে আমিই যেতাম! তুই একটু গিয়ে দেখবি ওখানে আবার গিয়ে লুকিয়ে টুকিয়ে আছে কি না!’
স্নোবলের চিন্তায় ললাটপটে ঘাম জমলো আরশির। মনে মনে খুব করে চাইলো ছাঁদেই যেনো পেয়ে যায় ছেলেটাকে৷ আর যদি না পায়? যদি কোনো অঘটন ঘটে? কুচিন্তাগুলো দু’পাশে মাথা নেড়ে ঝেড়ে ফেলতে চাইলো আরশি। পরপর মরিয়মের কথা মতো আগেপিছে না ভেবেই ব্যস্ত পায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো ছাঁদের উদ্দেশ্যে।
আরশি বেরিয়ে যাওয়ার মিনিটখানেক বাদেই যাকে নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা তাকে কোলে নিয়ে পা টিপে রুমে ঢুকলেন মেহমেদ। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি ফেলে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন,
‘পাঠিয়েছো?’
মরিয়ম বেগম হাসছিলেন একা একা। কিন্তু মেহমেদকে ঢুকতে দেখেই শক্ত করে ফেললেন চোখ-মুখ। ভেবেছিলেন উত্তর না দিয়েই বেরিয়ে যাবেন ঘর থেকে কিন্তু তার আগেই পথ আঁটকে দাঁড়ালেন মেহমেদ। স্নোবলকে কোল থেকে নামিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলেন মরিয়মকে।
মরিয়ম বেগম হকচকালেন। দাপাদাপি করে নামতেও চাইলেন কোল থেকে। কিন্তু সুবিধে করতে পারলেন না। অগত্যা হাল ছেড়ে দিয়ে তপ্ত কন্ঠে বললেন,
‘আমাকে কোলে তোলার বয়স আছে তোমার? এক্ষুনি তো ফেলে দিয়ে আমার মাজাটাও ভাঙবে সাথে নিজেরটাও মচকাবে। নামিয়ে দাও বলছি! নামাও আমাকে!’
ষাটোর্ধ্ব মেহমেদ স্ত্রীকে কোলে নিয়ে বেশ দাপুটে স্বরে বললেন,
‘শেষ বয়সেও যদি বউকে কোলে তুলেই রাখতে না পারলাম তাহলে কীসের জিমটা করলাম সারাজীবন? এই তুলেছি আর একেবারে আমাদের রুমে গিয়ে নামাবো!’
‘ কিন্তু..!’
‘শশশ! আর কোনো কিন্তু নয়! সারাদিন একটা কথা অবধি বলোনি আমার সাথে! তাই শাস্তি হিসেবে আজ রাতে শুধু আমি বলবো, আর তুমি শুনবে বেগামজান!’
এদিকে ‘নামিয়েই যখন দিবি তখন কোলে নিয়েছিলি ক্যান’ টাইপ লুক নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে স্নোবল। চোখ-মুখে জগৎ সংসারের উপর প্রবল অনীহা। কেউ কি দেখছে না যে সর্বসাকুল্যে সে-ই একমাত্র সিঙ্গেল? আশ্চর্য! পৃথিবীতে ন্যায় বিচার কোথায়? তার ঘাস খাওয়ার পার্টনার কোথায়?
পাঁশুটে অম্বুদের পসরা সাজিয়ে বসেছে আকাশ। ঝিরিঝিরে বৃষ্টির মতো সন্ধ্যে থেকেই বিরামহীন তুষারপাতে জাঁকিয়ে শীত নেমেছে শহরে। আরশির ভয় বাড়ে স্নোবলকে নিয়ে। ছাঁদে এই ঠান্ডার মধ্যে এতক্ষণ কীভাবে আছে ছেলেটা কে জানে?
দ্রুত পা চালিয়ে ছাঁদের সিঁড়ি অবধি আসতেই থমকায় সে। সিঁড়ির হাতলে ফেইরি লাইটস। সিঁড়ির টাইলসের উপর পুরু করে ছড়ানো গোলাপের পাপড়ি দেখেই ভুরু কুঁচকে ফেললো আরশি। ছাঁদের সিঁড়িও কি তবে রবিনসন চাচা ওর জন্মদিন উপলক্ষে সাজিয়েছিলেন? কারণ যার সাজানোর কথা ছিল সে তো আর বাড়িতে নেই!
আরশির মন ভার হয়।
তবুও শাড়ির কুঁচি ধরে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে আসে মেয়েটা। আপতত স্নোবলকে ছাঁদ থেকে নিয়ে আসা জরুরী। যে আরশির কথা ভাবলো না, তার কথা কেনো ভাববে সে?
ছাঁদের দরজা আগেই খোলা ছিল। সেখান দিয়ে ঢোকার সময় খেয়াল না করলেও ছাঁদে এসে দাঁড়াতেই কৃষ্ণ গহ্বরে বিস্ময় নামলো আরশির। ফাঁক হয়ে এলো ঠান্ডার প্রকোপে লালচে হওয়া ওষ্ঠপুট।
ছাঁদের মেঝেতে সিঁড়ির মতোই পুরু করে ছড়ানো গোলাপের পাপড়ি। রমণীর পায়ের আলতারাঙা রঙের সাথে সখ্যতা হলো খুব তাদের। পদ্মসম চরণ ডুবে গেলো হাজারখানেক ছিন্ন গোলাপের বুকে।
নিটোল চোখজুড়ে তখন সম্মুখের সাদা শিফনে মোড়া টেন্ট। ত্রিভুজাকৃতির টেন্টটির ঢোকার মুখেও লাগানো হয়েছে ফেইরি লাইটস। হলদে আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে লাইটগুলোর সাথে ঝোলানো ওদের বিয়ের কয়েকটি ছবি। সবগুলোতেই দু’জন গোমড়া মুখে বসা।
সাথে জায়গা পেয়েছে আরশির কিছু কেন্ডিট ছবিও। এই ছবিগুলো কবে তোলা হয়েছে সে সম্পর্কে আরশির ধারণা নেই।
এ পর্যায়ে অবাক চোখগুলো আবিষ্কার করলো টেন্টের সামনেই পেতে রাখা সাদা টেবিলখানা। যার উপরে স্থান পেয়েছে একটা গোলাপের বুকে আর আরশির সবচেয়ে পছন্দের কেক। চকলেট কেক!
সাথে কিছু মকটেলের বোতল আর পুরো টেবিলজুড় অনেকগুলো ছোট ছোট মোমবাতি। সেন্টেড ক্যান্ডেলগুলোর মিষ্টি সুবাসে যেনো মাতোয়ারা রাতের বাতাস।
পুরো ছাদের বেশ কয়েক জায়গাতেই আধিপত্য তাদের৷ গোলাপের পাপড়ির ফাঁকে ফাঁকে মাথা জাগিয়ে রাখতে পেরেছে কিছু আগুনের শিখা। বাকিগুলো আত্মাহুতি জানিয়েছে তুষারে ঢেকে গিয়ে।
স্নোফল বাড়তেই ঝিরঝিরে বরফে ঢাকা পড়তে শুরু করলো কারোর বহু কষ্টের এই সমস্ত আয়োজন। আরশি ঠোঁট উল্টে আশে পাশে তাকায়। মানুষটাকে দেখামাত্র তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ার অদম্য ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে ভীষণ।
একসময় চোখদুটো ক্লান্ত হয় শেহজাদকে খুঁজতে খুঁজতে! ঝাপসা হয়ে ওঠে অক্ষি কোটর। লালচে রঙ ধরে টিকালো নাকের ডগায়ও।
মেয়েটা অস্পষ্টে আওড়ালো,
‘আপনি কোথায় শেহজাদ? প্লিজ একবার সামনে আসুন! আমার কষ্ট হচ্ছে তো আপনাকে ছাড়া!’
আরশির পাষণ্ড পুরুষ এবার আর আড়াল করে রাখতে পারলো না নিজেকে। প্রিয়দর্শিনীর কাতর ডাকে সাড়া দিতেই কি না কে জানে? আচমকাই হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলো তার পৌরুষ মনের অনুরক্তি,
‘দূরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে
বিরহ ছু’তে চায় মনের দুয়ার
দু’চোখ নির্বাক আসোনা ছুটে..!
তুমি এলে রংধনু রং ঢেলে দেয়
তুমি এলে মেঘেরা বৃষ্টি ছড়ায়
এই মনের আহলাদ আসোনা ছুটে..!
দূরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে
বিরহ ছু’তে চায় মনের দুয়ার
দু’চোখ নির্বাক আসোনা ছুটে..!’
সুরের মূর্ছনায় অনুগামী চোখজোড়া টলমল করে উঠলো আরশির। দৈবাৎ পিছনে ফিরে চাইতেই দৃশ্যমান হলো পরিচিত ছায়ামূর্তি।
ছাঁদের ডোরফ্রেমের সাথে সামান্য ঠেস দেয়া তার বাইসেপস। দু’হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে লম্বাটে এক পুরুষ। বলিষ্ঠ তার গড়ন। বুদ্ধিদীপ্ত চোখগুলোতে যেনো দ্রবীভূত হয়ে আছে এ জগতকালের সমস্ত ভালোবাসা আর প্রশ্রয়।
ধূসর রঙা উলের ওভারকোট আর কালো টার্টলনেইক সোয়েটার পরনের মানুষটাকে দেখা মাত্রই সেদিকে ধীরে ধীরে পা বাড়ালো আরশি। শীতল বাতাসে উড়লো তার শিফন শাড়ির আঁচল।
সেদিকে তাকিয়ে বোধহয় খেই হারালো আরশির পাষণ্ড পুরুষও। দাঁড়ালো সোজা হয়ে। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তার প্রিয়দর্শিনীর পানে।
কোনো এক ঘোরের মধ্যে রুফটপের মাঝবরাবর কাছাকাছি হলো তারা।
আরশি অভিযোগের চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো মানুষটার দোহারা মুখের দিকে। পরপর একবুক অভিমান নিয়ে শুধালো,
‘তারমানে তখন ওভাবে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া, পুরো দুপুরটা আমাকে এড়িয়ে চলা, আমার দিকে না তাকানো সব নাটক ছিল? আপনি ইচ্ছে করে করেছিলেন সেসব তাই না? আপনি জানেন আমার কতটা খারাপ লেগেছে তখন?’
একশ্বাসে এতকিছু বলে একটু থামলো আরশি। দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো গোলাপের পাপড়িতে ঢেকে থাকা পায়ের পাতার ওপর। গালের পানি মুছে বললো,
‘আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে আমাকে শাড়িতে সুন্দর লাগছে না বলেই হয়তো আপনি এড়িয়ে চলছেন আমাকে! এইবুঝি ফুরিয়ে গেলো আপনার সব ভালো..!
কথা শেষ করার আগেই ওর ঠোঁটের উপর উঠে এলো শেহজাদের তর্জনী। নরম স্বরে আওড়ালো,
‘এ জীবনে তোমার জন্য আমার ভালোবাসা ফুরোবে না আরশি।’
ওষ্ঠপটে আঙুলের উষ্ণ স্পর্শে ধক করে উঠলো আরশির বুকখানা। বিমূঢ় চোখজোড়া আবিষ্কার করলো এই মানুষটার জন্য তার ভালোবাসাও তো এমন। কখনো ফুরোবার নয়! তবে কিসের এতো জড়তা ছিল এতোগুলা দিন?
আরশির ভাবনার সুতো ছিঁড়ল তখন যখন শেহজাদ নিজের গায়ের ওভারকোটটা খুলে জড়িয়ে দিলো ওর গায়ে। পরপর হুট করেই মানুষটা দু’হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো আরশির সামনে।
শেহজাদকে ওভাবে বসতে দেখেই চমকে থমকে গেলো তার মেদুর আনন।
প্রফেসর চোখে বালকসুলভ চাওনি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘বলেছিলাম না আজ তোমার মান ভাঙাবো? সো বলুন ইয়র হাইনেস! এই অধম কী করলে আপনার মান ভাঙবে?’
আরশি থমথমে মুখে চেয়ে তখনও। অভিমানী কিশোরীর মতো অভিমান করে বললো,
‘কানে ধরুন! আর সরি বলুন!’
বিনা বাক্য বেয়ে শাস্তি টুকু মাথা পেতে নিলো শেহজাদ। দু’হাত উঠিয়ে কান ধরলো। তারপর তার মেঘমন্দ্র স্বরে কোমলতা মিশিয়ে বললো,
‘আ’ম সরি! শুরু থেকে হওয়া আমার প্রতিটা কাজ, যেগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তার জন্য আ’ম সরি!’
শেহজাদ সামনাসামনি সত্যিই সরি বলে ফেলবে আশা করেনি আরশি। অকস্মাৎ এই ঘটনার বিমূঢ়তা কাঁটতেই ঠোঁট টিপলো মেয়েটা। হাসি আঁটকে ফের গম্ভীর গলায় শুধালো,
‘আর রাতে না ঘুমিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য?’
শেহজাদ বড্ড সরল মুখে হড়বড়িয়ে বলে উঠলো,
‘আই সয়্যার! আমি কোনো ব্যাড ইনটেনশন নিয়ে তোমাকে দেখতাম না! শুধু তুমি কাছে থাকলে নিজেকে আটকাতে পারিনা বলেই দেখতাম! সো..এটার জন্য নো সরি!’
‘আর ভার্সিটিতে কেউ আমার সাথে কথা বললে তাদের দিকে ওমন খেয়ে ফেলার মতো করে তাকানোর জন্য?’
‘তার জন্য তো মোটেও সরি না! তোমার কোনো ছেলে ক্লাসমেটের সাথে তোমাকে হাসতে দেখলে, কথা বলতে দেখলে আমার অসহ্য লাগে, রাগ ওঠে! ইনফ্যাক্ট আমার তো স্নোবলকেও তোমার সাথে ঘুমোতে দেখলে জেলাস ফিল হয়! এ্যান্ড আই উইল নেভার সে সরি ফর দিস! তুমি শুধু আমার জন্য হাসবে! তুমি শুধু আমার সাথে ঘুমোবে। স্নোবল আমার ভাগের আদর পাবে কেনো?’
এ পর্যায়ে মাথা নোয়ালো মানুষটা। স্নোবলকে নিয়ে হিংসে করে এ কথাখানা শুনে আরশি কী রিয়্যাকশন দেবে, সেটা দেখার আর সাহস হলো না তার। ঢোক গিলে পরাস্ত কন্ঠে বললো,
‘আচ্ছা শুধু স্নোবলের জন্য আ’ম সরি!’
‘আর দুপুরে কেনো কথা বললেন না আমার সাথে?’
‘আয়ান না করেছিল। বলেছিল কথা বললে নাকি সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে! এজন্যই দুপুরে কিছু বলতে পারিনি! বাট এখন বলবো..?’
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৪৩
একটু থেমে স্বচ্ছ আকাশের মতো নীল চোখজোড়া তুললো শেহজাদ। আরশির প্রশ্নবিদ্ধ চোখের সাথে সন্ধি হলো তাদের। কান থেকে হাত নামিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে বের করলো একটা চৌকো বক্স!
ছোট্ট বাক্সখানা খুলতেই জ্বলজ্বল করে উঠলো ছোট্ট একটা আংটি।
সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকা মানুষটা স্মিত হেসে আওড়ালো,
‘হ্যাপি থার্ড এনিভার্সিরি মাই বিলাভড ফ্লেমিং জুন! এন্ড অলসো অ্য ভেরি ভেরি হ্যাপি বার্থডে টু মাই ওয়াইফ! মাই ভ্যালেন্টাইন! মাই এভরিথিং!’