নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৪৫ (২)
সিনথিয়া
—“শেহজাদ!”
আরশির তীব্র চিৎকারে থমকায় ধরণী। অন্তঃস্থলের আতঙ্কে আচমকা রঙ হারায় একটা উচ্ছ্বসিত মুখ। ভীত চোখদুটো তুলতেই ঘাড় বাঁকায় আদি। স্কেলিটন মাস্কের আড়াল থেকে আওড়ায়,
—“বি লাউডার ডার্লিং! বিকজ নো ওয়ান ইজ হিয়ার টু লিসেন ইয়র ড্যাম স্ক্রিম!”
শুকনো সন্ত্রস্ত ঢোক গিললো আরশি। ভয়টুকু মাথা থেকে সরিয়ে ভাবতে লাগলো আত্মরক্ষার উপায়! কী করে বাঁচাবে সে নিজেকে। শেহজাদের ফিরতে হয়তো মিনিটখানেক লাগবে! কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত হলেও ওর কোনো ক্ষতি করা থেকে আঁটকে রাখতে হবে আদিকে।
ব্যস! মস্তিষ্ক তখন নীরবেই খুঁজে চললো আত্মরক্ষার অস্ত্র। আড়চোখে আশেপাশে চাইতেই চোখে পড়লো একটা ধাতব ছুরি। ডেকোরেশনের কোনো কাজে লাগলেও এখন অবহেলায় পড়ে আছে সেটি মেঝেতে।
আরশির হাত থেকে ইঞ্চি খানেকের দূরত্ব তার।
তবে ধীরে ধীরে সেখান পর্যন্ত হাত নেয়ার আগেই আদি ঝুঁকে এলো আরশির সামনে। এতক্ষণ চোখেমুখে পৈচাশিক তৃপ্তি থাকলেও আরশির হঠাৎ এই ছদ্ম নির্লিপ্ততা বিভ্রান্ত করলো আদিকে। প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে কালো গ্লাভস পরিহিত এক হাত আরশির গলা পর্যন্ত উঠিয়েও হুট করেই থেমে গেলো সে। বাঁকা হেসে অসুস্থের মতো আওড়ালো,
—“তুমি কী ভাবলে? মেরে ফেলবো তোমাকে? এতো সহজে? আই মিসড্ ইউ বেবি! জেলে থাকতে যাকে এতো মিস করলাম, জেল থেকে পালিয়েই তাকে এতো সহজে মেরে ফেলবো? নাহ! এটা আমার সাথে ঠিক মানাবে নাহ!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এটুকু বলেই দু’পাশে ঘাড় নাড়লো আদি। বিষন্ন স্বরে ফের বললো,
—“ইউ নো হোয়াট ডার্লিং? শিকারী কখন শিকার করে? যখন তার শিকারকে সর্বোচ্চ দূর্বল অবস্থায় সে পায়! শিকারের চোখেমুখে থাকে প্রবল ভয়, প্রাণ বাঁচানোর আকুতি! কিন্তু! তোমার চোখের সেই ভয় কোথায় গেলো আরশি? ডোন্ট ইউ স্কের্ড অফ মি এনিমোর?”
—“আমি তো কোনো লুজারকে ভয় পাই না! আদি!”
ভেতরটা কাঁপলেও আরশির চোখে তখন অপ্রতিরোধ্য সাহস। দৃঢ়তায় মোড়ানো তার সুকোমল নারীকন্ঠ। চিবুকের ভাজ উদ্বেগহীন, স্পষ্ট। ভঙ্গুর নারীসত্তার এমন পরিবর্তনে চোয়াল শক্ত হলো আদির। অপমানে লাল হয়ে উঠলো চোখগুলো,
—“এতো বদল? কন্ঠে এতো তেজ? কার কাছ থেকে শিখলে ডার্লিং? প্রফেসরের কাছ থেকে? হুম?”
আরশির ভয়হীন গলা যেনো ত্যাঁড়া জবাব দিতেই প্রস্তুতই ছিল। আদি থামতেই সে বলে উঠলো,
—“অবশ্যই! প্রফেসরের কাছ থেকে আরো অনেক কিছু শিখেছি আমি! লাইক হাউ টু ফাইট এন্ড হাউ নট টু লেট অ্য ক্রিমিনাল লাইক ইউ লেই হিজ হেন্ডস অন মি!”
প্রথমে থতমত খেলেও পরবর্তীতে কপট হাসলো আদি। মুখ থেকে চুকচুক ধরনের আওয়াজ করে বলে উঠলো,
—“বাট আই ডোন্ট লাইক দিস টোন অফ ইয়র্স ডার্লিং!”
—“ইজ্যান্ট ইট ফানি? যে জিভ নাড়িয়ে তুমি তোমার পছন্দ অপছন্দের কথা বলছো সেই জিভটাই হয়তো আর তোমার থাকবে না আদি? স্পষ্ট করে বলি?”
আরশিও ঝুঁকে এলো এবার। ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে আওড়ালো,
—“ইউ শ্যুড কন্সিডার ইয়োরসেলফ লাকি ইনাফ, যে তুমি এতোদিন জেলের ভিতরে ছিলে! আমাকে ছোঁয়া তো দূর, এই যে তুমি আমার সামনে এসে নিশ্বাস ফেলছো, সেজন্যও তোমাকে না এবার ছ’ফুট মাটির নিচে থাকতে হয়!”
রমণীর হুশিয়ারী বার্তায় দাঁতে দাঁত পিষলো আদি। পরপর একটা সিরিঞ্জ সমেত অন্য গ্লাভসবন্দী হাতটা উঠালো কঙ্কালাকৃতির মুখের সামনে। শীতল দৃষ্টি ফেলে বললো,
—“বললাম না, আই ডোন্ট লাইক ইয়র টোন। আমি চেয়েছিলাম তোমার কোনো ক্ষতি না করে তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যেতে, বাট ইউ লেফ্ট মি উইথ নো চয়েস!”
আদি থামলো। অন্য হাতের আঙুল দিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিলো আরশির কপালের উপর লেপ্টে থাকা চুলগুলো। তারপর সিরিঞ্জটা চোখের সামনে এনে বললো,
—“এটা কী জানো? সিডেটিভস! মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করলে ভিক্টিমের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তোমার সামনে দুটো অপশন খোলা! এক! এটা তোমার ঘাড়ের পাশে পুশ করলে তুমি কষ্ট কম পেয়ে মরবে! আর দুই! আমি নিজের হাতে গলা টিপে তোমাকে মারলে তুমি কষ্ট একটু বেশি পেয়ে মরবে। সো হুইচ অপশন ইউল ইই প্রেফার ডার্লিং? দেখো আমি চাই, প্রফেসরের ওয়াইফ তার মৃত্যুর পথ সে নিজে বাছাই করুক!”
—“কেনো?”
—“কজ ইট উইল বি ফান!”
আরশি তখনও আদির চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে। সতর্ক তার হাতের গতিবিধি। ছুরিটা পেতে এখন মাত্র যতসামান্য অপেক্ষা। আর তারপরই চিরদিনের মতো খেলা শেষ হবে আদির!
কিন্তু বিধিবাম! আদি দেখে ফেললো সেটা। আরশির হাতে ছুরি ওঠার আগেই উঠে এলো ওর সিরিঞ্জ সমেত হাতটা। তবে আরশির ঘাড়ের পাশে সুইয়ের সূচালো মাথা স্পর্শ করানোর আগেই কান খাড়া হলো আদির। ছাঁদের সিঁড়ি ভেঙে ওঠা পায়ের আওয়াজ কর্ণধার অবধি পৌঁছতেই প্রকট হলো তার নেত্রদ্বয়।
পরপর অধর বাঁকিয়ে হাসলো আরশির ফ্যাকাসে মুখের দিকে চেয়ে। ধীর স্বরে বললো,
—“এবারের জন্য বেঁচে গেলে! সি! তোমার লাইফ সেভার চলে এসেছে। বাট ডোন্ট ওয়ারি ডার্লিং! আমাদের আবার দেখা হবে! এন্ড দ্যাট টাইম আই উইল ডেফেনেটলি মেইক শিয়র টু কিল ইউ বিফর কিলিং ইয়র হাজবেন্ড!”
আদি সরে এলো। বাতাসে উড়লো তার বরফভেজা আলখাল্লা। মাস্কের আড়ালের ক্রুর চোখ দুটো অসাবধান হতেই আরশি বলে উঠলো,
—“অবশ্যই! দেখা তো আমাদের হতেই হবে! কারণ পালাতে তুমি বেশিদূর পারবে না। আর না পারবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে।”
আদি কপাল গোটালো। হেয়ালির মানে ধরতে পারার আগেই লক্ষ্য ভেদ করলো আরশির ছুড়ি। ধারালো ধাতব আদির পায়ে বিঁধিয়ে দিয়েই উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা। ওভারকোটখানা খসে পড়লো শাড়ির ওপর থেকে। আদিকে দু’হাতের ধাক্কায় সামনে থেকে সরিয়ে ওখানে আর দাঁড়ালো না একমুহূর্তও। দিক্বিদিক হারিয়ে গেট অবধি দৌঁড়ে এলো আরশি।
আর তখনই মুখোমুখি হলো শেহজাদের। রক্তশূন্য দিশেহারা মুখটা যেনো প্রাণ ফিরে পেলো এতক্ষণে। সেকেন্ডের মাথায় ঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে। ছদ্ম সাহস কাঁচের ন্যায় ভেঙেচুড়ে রূপ পেলো সীমাহীন কান্নায়।
শেহজাদ হতভম্ব। আরশিকে বুকের সাথে চেপে ধরে বিভ্রান্ত স্বরে শুধালো,
—“আরশি? তুমি ঠিক আছো? ইজ এনিথিং র–
কথা শেষ হতে দিলো না শেহজাদের। বুকে মাথা রেখেই বিড়বিড় করলো আরশি,
—“আদি! আদি এসেছে এখানে! ঐ তো! ঐখানে দাঁড়িয়ে আছে!”
ত্রাশে কম্পমান তার গলবিল। তর্জনী তুলে টেন্টের সামনের দিকটা ইশারা করতেই শেহজাদ তাকালো সেদিকে। মিনিটখানেক বাদে মেয়েটাকে আশ্বস্ত করতে নরম স্বরে বললো,
—“কেউ নেই ওখানে আরশি! একটু শান্ত হও! প্লিজ!”
কথাটা শোনা মাত্রই বরফের ন্যায় জমে গেলো আরশি। ত্রস্ত ফিরে চাইলো পিছনে। ফাঁকা ছাঁদ তার কন্ঠের অবিশ্বাসকে শৃঙ্গে তুললো। উন্মাদে মতো আওড়ালো,
—“অসম্ভব! আমি নিজের হাতে আঘাত করেছি আদির পায়ে। জখম নিয়ে এতো তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে পড়া কোনো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। ও নিশ্চয়ই আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে আছে।”
দুবাহুর মধ্যিখানে আগলে রেখে শেহজাদ তখনও হাত বুলিয়ে যাচ্ছে মেয়েটার চুলে। তবুও আরশি থামছে না। থরথর করে কাঁপছে তার সমস্ত শরীর।
—“আপনি আমায় বিশ্বাস করছেন না তাই তো? ভাবছেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি? ভাবুন! কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখেছি আদি এখানেই ছিল! আমার সামনে। হাতে সিডেটিভস নিয়ে! ও আমাদের মেরে ফেলতে চায় শেহজাদ! প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনুন!”
হুট করেই শেহজাদের দৃষ্টি পৌঁছোলো আরশির পিছনে। একটি কালো ছায়া রেলিঙের বাইরে থেকে মিনিটখানেক ওদের দিকে চেয়ে থেকেই যেনো অদৃশ্য হয়ে গেলো সেখান থেকে। নাহ্! ভুল দেখেনি সে।
শেহজাদের বুদ্ধিদীপ্ত চোখজোড়ায় অন্ধকার নামলো অমনি।
আক্রোশে ফুলে ফেঁপে উঠলো চোয়ালের শিরা। গতবার আদিকে ছাড়লেও এবার আর নিস্তার নেই তার শেহজাদের হাত থেকে।
শেহজাদকে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে কান্না ভুলে বসলো আরশি। মানুষটরা থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার জন্য ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ ফাঁক হওয়ার আগেই
একহাতে আরশিকে শূন্যে উঠিয়ে অন্য হাতসমেত পাঁজাকোলা করে তাকে কোলে তুলে নিলো প্রফেসর।
বিহ্বলিত চোখে সপ্রতিভ হলো আরশি হাতজোড়াও। টাল সামলাতে আঁকড়ে ধরলো শেহজাদের গ্রীবাদেশ। সপ্রশ্ন চোখে চাইতেই শেহজাদ গম্ভীর স্বরে আওড়ালো,
—“পুরো দুনিয়া একদিকে আর তুমি একদিকে থাকলেও আমি কখনো আমার স্নোফ্ল্যাককে অবিশ্বাস করবো না আরশি। তুমি ঠিক ছিলে! আদি এসেছিল এখানে। আর এটা আমার ব্যর্থতা যে আমি ঐদিন জানোয়ারটাকে শেষ করে দেয়নি! ইনফেক্ট আজও তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনি!”
বিস্ময় কাটতেই বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো আরশির কন্ঠস্বর। শেহজাদ তারজন্য নিজেকে দোষ দিচ্ছে বুঝতেই সজোরে বলে উঠলো,
—“কিন্তু আপনি শেষ মূহুর্তে এসেও আমাকে বাঁচিয়েছেন! আপনার পায়ের আওয়াজ পেয়েই তো আমি সাহস করে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে পেরেছি ওকে!”
প্রিয়দর্শিনীর সাহসীকতায় স্মিত হাসলো প্রফেসর। মুখ নামিয়ে আরশির মসৃণ কপালে ঠেকালো নিজের ললাটপট। বন্ধ চোখে নরম স্বরে আওড়ালো,
—“এন্ড আ’ম প্রাউড অফ ইউ ফর দ্যাট স্নোফ্ল্যাক! আ’ম প্রাউড অফ ইউ!”
প্রাতঃকাল শুরু হওয়ার আগেই আরো খানিকটা ধূসররঙে ছেয়েছে আকাশ। বেড়েছে শীতের প্রকোপ। মেঘের চাদর গায়ে জড়িয়ে বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে মৃগাঙ্ক। তুষারপাতের সাথে পাল্লা দিয়েছে গা হিম করা ঠান্ডা।
চওড়া কাঁধের উপর বরফসাদা আস্তরণ নিয়ে রুমে ঢুকলো শেহজাদ। আরশিকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসালো নিভৃতে, আলগোছে!
রুম হিটারের বদৌলতে ঈষদুষ্ণ ঘরটায় ঠিক বাইরের ঠান্ডা আর অনুভব হচ্ছে না আরশির। তবে ভীষণ রকমের ভয় হচ্ছে তার। আদি আবারো যদি ওদের ক্ষতি করতে চায়, সেই ভয়েই যেনো তটস্থ রমনীর সমস্ত অন্তঃকরণ।
শেহজাদের অলক্ষ্যে গেলো না তা।
সারাদিন হইহট্টগোলে মেতে থাকা মেয়েটার এমন ধারা মৌনতায় হাঁটু ভেঙে ওর সামনে বসে পড়লো মানুষটা। ধীর লয়ে শুধালো,
—“অস্থির লাগছে?”
শেহজাদের আচমকা প্রশ্নে হুশ ফেরে আরশির। দীঘির জলের ন্যায় টলমলে চোখদুটো তুলে ওপর নিচ মাথা নাড়তেই নরম হলো শেহজাদের চোখমুখ। অঞ্জলিপুটে তুলে নিলো মেদুর আদল। ফিসফিসিয়ে শুধালো,
—“গান শুনবে?”
—“আপনি গাইবেন?”
শেহজাদের ওষ্ঠাধর প্রসারিত হলো। রমনীর অকস্মাৎ মুড বদলে মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসলো সে মানুষ! পরপর উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়ালো মেঝেতে ফেলে রাখা বিম ব্যাগটার দিকে। হাতে তুলে নিলো তার উপরে থাকা ইলেক্ট্রিক গিটারখানা। ফিরে এসে ঋজু হয়ে বসলো আরশির সামনে। মেয়ে তখন ডাগর ডাগর চোখে চেয়ে। ভয়টয় উবে গেছে তার। অসীম কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—“আপনি গিটারও বাজাতে পারেন?”
আরশির এক আকাশসম বিস্ময়ের প্রতিত্তোরে যন্ত্রখানায় টুংটাং শব্দ তুললো শেহজাদ। তার পৌরুষ স্বরে আওড়ালো,
—“ভার্সিটিতে পড়ার সময় টুকটাক শখের বশেই কিনেছিলাম এটা। একাডেমিক বইয়ের এক ঘেয়ামি আর বিরক্তির বিপরীতে এক টুকরো শান্তি ছিল এই গিটার। খুব ভালো সময় কাটতো আমাদের!”
—“আমার কী হিংসে হওয়া উচিত?”
—“কাকে নিয়ে?”
—“আপনার গিটারকে!”
শেহজাদ এবারও শব্দ করে হেসে উঠতেই ঠোঁট টিপলো আরশি। পরপর গালে হাত রেখে বললো,
—“নিন! এবার ঝটপট আরেকটা গান শুনিয়ে ফেলুন তো! আমি এমনিতেই অনেক স্ট্রেসের মধ্যে আছি! দেখি আপনার গলায় গান শুনে যদি একটু স্ট্রেসটুকু কমাতে পারি!”
—“বাহ! আমি গাইলেই স্ট্রেস কমে যাবে?”
—“চুমু খেলেও কমতো! কিন্তু ফ্রেন্ডশিপে তো আর চুমু টুমু খাওয়া যায় না! অগত্যা!”
ছদ্ম হতাশ হতাশ গলায় কথা গুলো বলে প্রলম্বিত শ্বাস ফেললো আরশি। কিন্তু হুট করে শেহজাদের দিকে তাকাতেই চমকালো সে। থমকে এলো তার নিরন্তর বকবক। শেহজাদের শাণিত চোখে সম্মোহনের ছটা। যে মেয়েটা নীলাদ্রির বুকে আকাশ ভেঙে প্রেম নামালো তার চোখে চোখ মিলতেই আচমকা ঢোক গিললো শেহজাদ।
শেহজাদ হুট করেই উপলব্ধি করলো, আরশির বিস্ময় ভরা দুটো স্ফিত চোখ, তুলতুলে ওষ্ঠপুট, সুডৌল চিবুকের স্বর্গীয় সৌন্দর্য যেনো থামিয়ে দিচ্ছে সময়ের গতি। শিফন শাড়ির ফাঁকফোকড় দিয়ে উঁকি দেয়া সুকোমল নারী গতরের সামনে শ্বাস নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। নিজেকে আঁটকাতে মুখ থুবড়ে পড়ছে তার পৌরুষ সত্তা। খড়া বয়ে বেড়ানো তৃষ্ণার্ত বুকটা অস্বীকার জানাচ্ছে চোখ ফিরিয়ে নিতে।
আরশিও যেনো বুঝলো ওই নীল চোখের ভাষা। লাজুকলতা হুট করেই কানের কাছে এসে বললো,
—“গান শোনাতে হবে তো প্রফেসর! ভুলে গেলেন?”
শেহজাদের বিক্ষিপ্ত মস্তিষ্ক হুঁশে ফিরলেও হুশ ফিরলো না চোখের। যেনো প্রেমময় মদিরা পানের লোভে মাতাল সে। নৈকট্য পেয়েও অধরসুধা না পাওয়ার বিষাদ কন্ঠে নিয়ে গিটারে সুর তুললো শেহজাদ। ধীর লয়ে গাইলো নিজের প্রিয় গানটা,
kaise kahun ishq mein tere
kitna hun betaab main..!
aankhon se aankhe mila ke
chura lu tere khwaab main..!
mere saaye hain saath mein
yaara jis jagah tum ho..!
main jo jee raha hun
wajah tum ho
wajah tum ho…!
আরশি তখনও বেঘোরে তাকিয়ে শেহজাদের বন্ধ চোখের দিকে। কি এক অমোঘ, অদ্ভুত টানে গানের মাঝেই মেয়েটা আরো একবার কাছাকাছি চলে এলো শেহজাদের।
মানুষটা তখনও এক হাঁটু ভাজ করে বসা বিছানার কিনারে। অন্য পা স্পর্শ করে আছে মেঝে।
আরশির কান্ডকারখানা আমলে নেই তার। বন্ধ চোখে গিটার হাতে ব্যস্ত সে পুরুষ।
কিন্তু গানের মাঝে আচমকাই গিটারটা হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ায় থামলো সে। কপালে ভাজ পড়তেই উরুর উপর অনুভব করলো নারী অস্তিত্ব। ঘাড়ের দু’পাশ ঘিরে ধরলো একজোড়া পেলব হাত।
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৪৫
হৃদপ্রকোষ্ঠের গতি বাড়লো শেহজাদের। বন্ধ চোখ খোলার আগেই কানের নিম্নাংশ ছুঁয়ে আরশি আওড়ালো,
—“সবসময় আপনি আপনার ভালোবাসা জাহির করেছেন! হাজার বার ভালোবাসতে চেয়েছেন। শুধু আমিই চাইনি এতো তাড়াতাড়ি আপনার তিন বছরের শাস্তি কমিয়ে দিতে। তবে আজ যদি আমি নিজে থেকে চাই, তাহলে আরেকবার ভালোবাসবেন আমায়?”