নে আদরে জড়িয়ে মন শেষ পর্ব 
সিনথিয়া
গায়ে হলুদের গোটা দিনটাই আরশিকে এড়িয়ে চলেছে শেহজাদ। কথা বলেনি। হুটহাট এসে আদর করে দিয়ে যায়নি গালে, ঠোঁটে, কপালে।
এমন ভয়াবহ অবজ্ঞা পাওয়ার পর আরশিরও উচিত ছিল অভিমান করা। অথচ মনে বিন্দুমাত্র অভিমান পুষে রাখলো না মেয়েটা। সবাই যখন ব্যাকইয়ার্ডে হলুদ খেলায় ব্যস্ত, তখনই বুদ্ধি করে সে পিছু নিলো তার বরের।
পা টিপে টিপে ছাদের সিঁড়ি অবধি উঠলো শেহজাদের সাথে সাথেই। অমনি ভদ্রলোক থামলেন। পিছু নেয়া পা দু’টোতে পরে থাকা নূপুরের রিনঝিন শব্দে চট করে শেহজাদ ঘুরে তাকাতেই ভ্যবাচ্যাকা খেয়ে গেলো আরশি।
শ্বাস খিঁচে সামলে নিলো নিজেকে। ফ্যালফ্যাল করে তাকালো সম্মুখের তিতিবিরক্ত চোখদুটোর পানে।
‘ কী চাই?’
প্রশ্ন তো করলো না, যেন ছুড়ে মারলো শব্দগুলো ওর দিকে! তটস্থ রমনী ছলকে উঠলো একদফা। দু’হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরলো পরনের বসন। নিজেকে আপ্রাণ বোঝালো, ‘ঘাবড়ে গেলে চলবে না আরশি! জাম্বুবানের রোগ খুঁজে বের করতে হবে তো তোকে! কী কারণে মেজাজের এমন চৌদ্দটা বেজে আছে জানতে হবে না?’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
উত্তর না পেয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেললো শেহজাদ। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেও যেন প্রচন্ড বিরক্তি তার। নিচে চলে যাবে সে। কিন্তু আরশিকে পাশ কাটাতে আবারও যখন উদ্যত হবে তখুনি একেবারে মুখের সামনে সরে এলো মেয়েটা। হড়বড়িয়ে বলল,
‘ আপনাকে চাই! এখন বলুন! এতো রাগ করে আছেন কেন আপনি?’
টানটান কপালে ভাঁজ পড়লো শেহজাদের। ভ্রুজোড়া কুঁচকে মুখ ঘোরালো অন্যপাশে। যতই হোক, তার স্নোফ্ল্যাকের চোখের দিকে তাকিয়ে তো সে আর মিথ্যে বলতে পারবে না!
‘ রেগে নেই আমি!’
‘ বললেই হলো? স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনি রেগে আছেন আমার উপর!’
শেহজাদ মুখ ফিরিয়ে আনল। কাতর চোখদুটো শক্ত রাখলো খুব করে। বুকে হাত বেঁধে দাঁড়াল রমনীর সামনে। মেঘমেদুর গলায় হেয়ালি মিশিয়ে শুধাল,
‘ তাই বুঝি? এতো বোঝো তুমি আমাকে?’
ফাঁকা ঢোক গিললো আরশি। শেহজাদকে অনুকরণ করে সেও হাত বাঁধল বুকে। আত্মবিশ্বাসের সাথে আওড়াল,
‘ আলবাত বুঝি! শুধু আমি কেনো? স্নোবল অবধি বুঝে গেছে আপনি আপনার রোমান্টিক বরের ক্যারেক্টার থেকে আগের সেই জাম্বুবান ক্যারেক্টারে ফিরে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে!’
‘ আমি…হোয়াট? কী ক্যারেক্টার?’
আরশি শেহজাদের হতবুদ্ধিভাবটা উড়িয়ে দিলো হাত নেড়ে। লাফিয়ে এক সিঁড়ি উঠে এলেও শেহজাদের বুক বরাবর হলো না ওর হাইট। অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ দুঃখও দেখা গেলো না পেলব মুখখানায়। সে মনের মাধুরি মিশিয়ে আজকে জানবে শেহজাদের সিস্টেমে এই গন্ডগোল হওয়ার কারণটা কী! কোনো তাড়া নেই ওর!
‘ হোয়াট? হোয়াট আবার কী? আরে আপনি নিশ্চিন্তে আমাকে খুলে বলতে পারেন সবটা। বউয়ের কাছে কিছু লুকোতে নেই। আমরা আমরাই তো। কাউকে কিচ্ছু বলবো না আমি। চাপ নেই!’
‘ কী বলবে না তুমি কাউকে?’
আরশি সতর্ক চোখে একবার আশেপাশে তাকাল। পিছনে তাকিয়ে অন্য কেউ আছে কি না নিশ্চিত হয়ে ঝুঁকে এলো শেহজাদের দিকে। একহাত দিয়ে মুখটা এমনভাবে আড়াল করল যেন ব্যাপারটা বেশ কনফিডেনসিয়াল। অন্যহাত দিয়ে ইশারা করল শেহজাদকে কাছে আসতে।
মানুষটা চোখেমুখে একপ্রকার বীতস্পৃহা নিয়েই ওর দিকে ঝুঁকল কান পেতে। আরশিও ফিসফিস করে বলে উঠলো,
‘ আপনি সত্যি করে বলুন তো! আসলে আপনার মেশিনে ঝামেলা করছে তাই না? আরে করবে না-ই বা কেন? সকাল থেকে তো কম স্পাইসি খাবার খেলেন না! নির্ঘাত হজম হয়নি আপনার! হবেই বা কী করে? ঐ পেটানো পেটের তো শুধু সিদ্ধ ব্রকলি ছাড়া আর কিছুর ধকল নেয়ার অভ্যেস নেই, তাই না?’
আরশি আফসোসের সাথে কথাগুলো বলতেই তড়িৎ সোজা হয়ে দাঁড়াল শেহজাদ। কেমন চোখমুখ অন্ধকার করে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।
আরশি সেসব খেয়াল করে আরো হাহাকার করে উঠল। প্রায় গলা উঁচিয়েই শুধাল,
‘ আরে আপনি টেনশনে পড়ে গেলেন নাকি? এ্যাই! টেনশন করবেন না একদম। আমার নানারও তো আপনার মতো, ভারী খাবার খেলেই পেট খারাপ…’
বাক্যের মাঝপথেই ওর মুখটা ঠেসে ধরলো শেহজাদ। সিঁড়ির নিচ মানুষজনের গলা টের পেতেই মেয়েটাকে একটানে তুলে আনলো ছাঁদের উপর। পা দিয়ে দরজা ভেজিয়ে তপ্ত চোখে তাকালো আরশির দিকে।
বেচারির তখন প্রাণ এই যায় তো ঐ যায় অবস্থা! শেহজাদের হাতের তালু যে ওর পুরো মুখের সমান। ফাঁকফোকড় দিয়েও শ্বাস নিতে পারলো না মেয়েটা।
দরজার পাশের দেয়ালের সাথেই ওর পিঠ এনে ঠেকালো শেহজাদ। মুখের ওপর থেকে হাত সরালো আস্তেধীরে।
বড় করে দম নিলো আরশি। টুকটুকে নাকের পাটা ফুলিয়ে চাইলো শেহজাদের দিকে। হিসহিসিয়ে বলল,
‘ আমার নানাভাই বলতো তার পেট নাকি জাপানি মেশিন। যা খাবে সব হজম হয়ে যাবে। তাই বলে পৃথিবীর সব পেটই যে জাপানি মেশিন হতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই! তাহলে শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন কেনো আপনি? পুরো কথাটা তো আগে শুনবেন আমার! আমি বলছিলাম কী যদি একটু সেদ্ধ কাঁচকলা খেতে পারতেন, তাহলে পেটটা সেরে যেতো না?’
শেহজাদ চোখ খিঁচে নিলো কাঁচকলার কথা শুনে। এ সে কার উপর রাগ করতে গিয়েছিল? কীজন্য রাগ করেছিল? তা-ও তো ভুলে গেলো সে!
আরশি আরো কিছু বলতে যাবে তখনই চোখজোড়া বড় বড় করে ফেললো শেহজাদ। নরম তুলতুলে ঠোঁটে করতালু চেপে রেখে বলল,
‘ আ’ম টোটালি ফাইন ওকে? কিচ্ছু হয়নি আমার! ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?’
টুপটুপ করে চোখের পলক ফেললো আরশি। একহাতে ধীরে ধীরে ঠোঁটের উপর থেকে শেহজাদের হাত সরিয়ে শুধাল,
‘ তারমানে আপনার পেট ঠিক আছে?’
‘ হ্যাঁ!’
ঘনঘন শ্বাস ফেলে বলল শেহজাদ। আরশি বুঝদারের মতো মাথা নাড়লো ঠিকই, কিন্তু সে নীরবতা পালন করার মেয়ে নয়। দু’সেকেণ্ডের মাথাতেই আবার জিজ্ঞেস করে বসলো,
‘ তাহলে সারাদিন আমাকে ওভাবে এড়িয়ে চলছিলেন কেন? আপনি যে আমার উপরেই রেগে ছিলেন, স্বীকার করুন এটা! নইলে কিন্তু সত্যি সত্যি ভেবে নেবো আপনার পেট খারাপ!’
‘ হ্যাঁ! রেগে ছিলাম আমি তোমার উপর!’
‘ কেনো ছিলেন রেগে?’
‘ তুমি বোঝো না কেনো রেগে ছিলাম আমি?’
আরশি নিষ্পাপ চোখে তাকিয়ে ঘনঘন মাথা নাড়লো দু’পাশে।
‘ কেউ মুখে না বললে আমি কী করে বুঝবো তার মনের কথা?
শেহজাদের অসহায় দৃষ্টি হুট করেই ছেয়ে গেলো আক্রোশে। মটমট করে উঠলো চোয়ালের পেশি। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,
‘ তা কেনো বুঝবে? অথচ একটা বাইরের মানুষকে তো অনেক ভালো বোঝো তুমি! ইনফেক্ট আমার তো মনে হয়, তুমি এই পৃথিবীর প্রত্যককে বোঝো, শুধু আমাকে ছাড়া!’
আরশির চোখে বিভ্রমের সয়লাব। তাকিয়ে রইলো বাচ্চাদের মতো অভিমানে করে বসে থাকা মুখটার দিকে। যে তার নিঃশব্দ অনুযোগ, অভিযোগে নাজেহাল করে দিচ্ছে আরশির মনটা।
‘ আমাকে একটু রয়ে সয়ে বলবেন আপনি? আসলে কাকে কী বলেছি বলে আপনার এতো রাগ?’
শেহজাদ দমে গেলো খানিকটা। দু’বাহুর মধ্যিখানে মেয়েটাকে আঁটকে রেখে বলল,
‘ আমি কেনো বলব? আয়ানকে কী যেন বলছিলে? আয়ান ভাই, উনি খারাপ মানুষ নন, ওনাকে ছেড়ে দাও! সেই ভালো মানুষকে গিয়েই না হয় জিজ্ঞেস করো! কী বলেছো তুমি! দাঁড়িয়ে আছো কেনো? গো না?’
এতক্ষণে শেহজাদের রোগ ধরতে পারলো আরশি। ঠোঁটে ঠোঁট পিষে ভ্রু নাচালো সে। টেনে টেনে বলল,
‘ ওওও! আপনি রেজার কথা বলছেন? ওনাকে জিজ্ঞেস করতে হলে তো ওনার বাড়িতে যেতে হবে এখন! উনি তো কখন চলে গেছেন বাড়িতে!’
আঁতকে উঠলো শেহজাদ। কন্ঠে অবিশ্বাস
নিয়ে বলল,
‘ তুমি ওর বাড়িতে চলে যেতে চাইছো?’
আরশি পারে না ফিক করে হেসে ফেলতে! বহু কষ্টে হাসি চেপে বলল,
‘ কী আর করার? আপনি কিছু বললে তো আমি সেটা ফেলতে পারি না! তাই না?’
শেহজাদ স্তম্ভিত। প্রস্তরীভূত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সটান। সুযোগ বুঝে শেহজাদের হাতের ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো আরশি। ছাঁদের গেট খুলে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ঘাড় বাকিয়ে দেখল শেহজাদকে। পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছে সে মানুষ!
হায়রে পাগল! ও যা বলে সেটাই কি না বিশ্বাস করে স্ট্যাচু হয়ে যায়?
দু’পাশে মাথা নাড়লো আরশি। হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,
‘ আপনি নিচে আসবেন নাকি স্নোবলকে এখানে রেখে যাবো? আপনাকে সঙ্গ টঙ্গ দেবে? আসলে মন ভেঙে যাওয়ার কষ্ট তো! ছাঁদে বসে বসে ওর সাথে শেয়ার করুন, দেখবেন ভালো লাগবে!’
থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকা শেহজাদের টনক নড়লো অমনি। কটমট চোখে আরশির দিকে তাকানোর আগেই চোখের পলকে অদৃশ্য হলো মেয়েটা।
আরশি চলে যেতেই শেহজাদ পায়ের কাছে তাকিয়ে দেখল স্নোবল সত্যি সত্যি মুখ বাড়িয়ে চেয়ে আছে তার দিকে।
মানুষটা বসবে না বসবে না করেও হাঁটু ভেঙে বসলো ওর পাশে। জিজ্ঞেস করলো,
‘ ডিড শী জাস্ট মোক মি স্নোবল? আমার মজা উড়িয়ে গেলো ও এই মাত্র তোর মা?’
স্নোবল উত্তর দিলো না। লম্বা কানগুলো সামনের পা দুটো দিয়ে টেনে টেনে সোজা করলো এক এক করে। চেটেপুটে শরীর পরিষ্কার করলো। কিন্তু পাত্তা দিলো না শেহজাদকে।
মানুষটা কিছুক্ষণ গোমড়া মুখে থাকার পর হেসে ফেললো ওর কান্ড দেখে। স্নোবলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তোকে না আরশি আমার সাথে দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে রেখে গেলো, আর তুই কি-না আমাকে পাত্তা দিচ্ছিস না?’
স্নোবল এবারেও যেন নীরব শ্রোতা। শেহজাদ ওকে আদর আদর করতে করতেই বলল,
‘ তোর মা তোকে আর আমাকে প্রায় একই ক্যাটাগেরিতে ফেলে বুঝলি? কিন্তু তোর কোনোকিছুতে হিংসে না হলেও, আমার তো হিংসে হয়। তোর মা শুধু আমার! সে কেনো অন্য কাউকে ভালো বলবে?’
স্নোবল এবার মনোযোগ ঘোরালো শেহজাদের হাতের দিকে। এ্যানালগ ঘড়িতে মোড়ানো কব্জি থেকে শুরু করে হাতের তালু পর্যন্ত চেটেপুটে সাফ করে দিলো একদম।
শেহজাদের ঠোঁট টিপে ছোট্ট জিভটার কান্ড দেখে! ভিজিয়ে দিয়েছে ওর হাত। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই আনমনে আওড়াল,
‘ আমি যদি একটু হিংসুটেও হই, তারমানে তো এই নয় যে তোর মা আমাকে সত্যি সত্যি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলবে? আমি না হয় এখন থেকে একটু কম কম হিংসে করবো! কিন্তু তোর মাকে ছাড়া তো বাঁচতে তো পারবো না আমি স্নোবল! একটুও পারবো না! তুই একটু আমার হয়ে বুঝিয়ে বলবি তোর মাকে? আমাকে যেন কখনো ছেড়ে না যায়! আমি তো বুঝিয়ে কিছু বলতেও পারি না!’
স্নোবল মুখে কিছু বলতে না পারলেও আদর করে দিলো শেহজাদের হাতে। মানে, ‘ বুঝিয়ে বলবো আমি মাকে। বলবোই। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো!’
শুক্রবারের গোধূলিলগ্ন। কনেদেখা আলোয় একটু একটু করে ঘনিয়ে এলো সেই প্রতীক্ষিত মূহুর্ত। বিয়ে বিয়ে গন্ধটা গায়ে মেখে লাল টুকটুকে বেনারসিতে সাজলো জারা। আরশি নিজের হাত তৈরি করে দিলো তার একমাত্র সখীকে। সাজগোজ শেষ হলো। নতুন বউয়ের কানের পিছনে কাজলের ফোঁটা লাগিয়ে দেয়ার ভান করতে করতে আরশি বলল,
‘ নে! এবার আর কেউ নজর লাগাতেই পারবে না আমাদের এই মিষ্টি বউটার দিকে!’
অমনি খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরলো জারা। দুরুদুরু বুকে শুধাল,
‘ আমার এতো নার্ভাস লাগছে কেনো বল তো আরশি?’
‘ বোকা মেয়ে! যে মানুষটাকে তুই নিজেই সারাদিন চিমটির উপরে রাখিস! তাকে বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছিস এখন?’
জারা ধরা গলায় আওড়াল,
‘ পারবো তো ঐ মানুষটাকে সবসময় ভালো রাখতে?’
আরশির ধপ করে বসলো মেয়েটার পাশে। গলা জড়িয়ে ধরে মোলায়েম স্বরে বলল,
‘ এমন একটু আধটু সবার হয়। আমারও তো হয়েছিল। ভাবতাম মা বাবাকে ছেড়ে যদি কখনো দূরে গিয়ে থাকতে হয়, তখন কীভাবে থাকবো? কীভাবে কী করবো? ওনার কাজ তো দূর, আমি তো নিজের কাজগুলোই নিজে ভালোভাবে করতে পারি না। বিয়ের পরে কীভাবে সামলাবো এতকিছু? ওনাকে কীভাবে সামলাবো?’
‘ তারপর?’
‘ তারপর?’
আরশি জারার মাথায় দোপাট্টা টেনে দিতে দিতে আওড়াল,
‘ তারপর আর কী? কপাল করে এতো একজনকে পেয়েছি, যার সামনে কোনো কাজ করতে গেলেই শুনতে হয়, এ্যাই আরশি! তুমি এসব কেনো করছো? তোমার না সামনে ফাইনাল? পড়তে বোসো!’
জারা হেসে ফেললো ফিক করে। মুখে হাত চেপে বলল,
‘ তোকে ভাইয়া এভাবে ধমকায়!’
‘ ঠিক বকে না! শাসন করে! সম্পর্কে বর, বয়সে বড়, তারউপর ডিপার্টমেন্টের সব কঠিন কঠিন কোর্সগুলো ওনার আন্ডারে !
শান্তি আছে কোথাও?’
‘ ভালোও তো তোকে কম বাসে না বল! আমার ভাইয়ের প্রশংসা করিস না কেনো রে তুই?’
আরশি ঠোঁট কামড়ে মাথা নোয়ায়। লাজুক হাসে জারার কথায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘ সাথে অভিমানও তো করে বাচ্চাদের মতো! একটু কিছু হলেই ছাঁদে চলে যায় মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। উনি বাচ্চাদের চেয়ে কোনো অংশে কম? ’
মেহমানদের পদচারণায় সরব বসার ঘর।
জারা ভালো করে শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞাসু গলায় আওড়ায়,
‘ কিছু বললি?’
চকিতে মুখ তুলে তাকায় মেয়েটা। নিজভাবনার সুতো ছিঁড়ে সখীর দুশ্চিন্তা ভোলায়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ বললাম এতো ভাবাভাবির কিছু নেই। তারচাইতেও বড় কথা, আয়ান ভাই তো তোকে এ বাড়ি থেকে এখনই নিয়ে যাবে না বলেছে। ভয় পাচ্ছিস কেনো বলতো? কত ভালো আমার ভাইটা। তার থেকেও বড় কথা, যার সাথে তুই সারাটা জীবন কাটাবি! দেখবি সেই মানুষটা তোকে কোনো কষ্টই পেতে দেবে না কোনোদিন। কেমন আগলে আগলে রাখবে সারাজীবন! সবার থেকে, সব বিপদ থেকে, সব খারাপ থেকে!’
আরশির কথায় কোটর ভরলো জারার। উষ্ণ জলের ধারা নামলো গাল বেয়ে। আরশি ব্যস্ত হাতে সেই জল মোছে।
‘ ঐ দেখো! আবার কাঁদে! বুদ্ধু! সারাজীবন যদি কেঁদেই যাবি? তাহলে হাসবি কখন?’
অমনি ঘাড় নুইয়ে হেসে ফেলল জারা। আরশি ওর মুখ তুলে চোখজোড়া মুছিয়ে দিয়ে বলল,
‘ চলুন ম্যাডাম! কান্নাকাটি করার সময় এখন পরেও পাবেন। কবুল বলে আপনার বানরমশাইয়ের বুকটা শান্ত করে দিয়ে আসুন আগে!’
আরশি উঠে দাঁড়াতে নিলেই জারা থামালো ওকে। হাত টেনে ধরে শুধালো,
‘ আমাকে তো সাজিয়ে দিলি! তুই সাজবি না? বেনারসি পরবি না আমার মতো?’
আরশি সাজগোজ করতে চায়নি মোটেও! কিন্তু সে চাওয়ায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মরিয়ম নিজে এসে জোর করে সাজাতে বসলেন ওকে। সঙ্গে নিয়ে এলেন আঞ্জুমানকেও। শেহজাদের কিনে রাখা শাড়িটা আরশিকে পরিয়ে দিলেন দু’জনে মিলে। একটা খয়েরি বেনারসি।
দুধে-আলতা শরীরে এই খয়েরি রঙ এতো ভালো মানিয়েছে যে জারা বেহুশ হয়ে যাওয়ার ভান করে বলল,
‘ আমি কেনো ছেলে হলাম না? আমার এতো সুন্দরী বান্ধবীটাকে আমার ওমন আঁদাছেচা ভাইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে ভেবেই তো আমার বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছে মা!’
মরিয়ম হেসে মেয়ের মাথায় আলতো চাটি মারতেই হুহা করে হেসে ফেললো জারাও।
আঞ্জুমান তখন আরশির গলায় হালকা ওজনের একখানা নেক পিস পরাচ্ছিলেন। জারার কথায় হেসে বলে উঠলেন,
‘ তোমার ভাই শুনলে তোমাকে আজকেই না আয়ানের গ্র্যানির বাড়িতে রেখে আসে!’
জারা মরিয়মকে পিছন থেকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ সে আমাকে বনবাসে রেখে এলেও আমি বলব, আমি ছেলে হলে, আরশির জন্য আমার সাথে ভাইয়ের হাড্ডাহাড্ডি টক্কর হয়ে যেতো একদফা! এতো সুন্দর বউ আমি হাত ছাড়া করতাম নাকি মনি? প্রশ্নই আসেনা!’
প্রৌঢ়া হাসতে হাসতে কানে ঝুমকোজোড়া পরিয়ে দিলেন আরশির। মাথায় দোপাট্টা না থাকলেও খোপায় বেলী ফুলের গাজরা পরিয়ে দিলো জারা। দিঘীর জলের মতো শান্ত চোখজোড়ায় কাজল টানলো গাঢ় করে।
আরশিকে আয়নার সামনে বসিয়ে সবাই যখন পিছিয়ে গেলো কিছুটা? তখন আয়নায় নিজেকে দেখে দ্বিধার সাগরে ডুবলো আরশি। এতো সেজেছে ও?
বাজে লাগছে নিশ্চয়ই খুব ওকে!
মেয়েটা ঠোঁট উল্টে উঠে দাঁড়াতেই মরিয়ম কাছে ডাকলেন ওকে।
আরশির সাথে সাথে জারাও ছুটে এলো মায়ের পাশে। পরপর দুই মেয়েকে দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরে মরিয়ম বললেন,
‘ আমার দুই মেয়েকেই যে আজ পরীর মতো লাগছে। মা হয়ে আমারই না নজর লেগে যায়!’
আঞ্জুমান সামনে এসে বললেন,
‘ এক মেয়েকে তো তার বান্ধবী কাজলের ফোঁটা লাগিয়েই দিয়েছে, আমি বরং আপনার এই মেয়েটাকে লাগিয়ে দেই ফোঁটা?’
সবাই হেসে ফেললো আঞ্জুমানের কথায়। মরিয়ম মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিতেই আঞ্জুমান ঝুঁকে এসে মিছেমিছি ফোঁটা লাগিয়ে দিলো আরশির কানের পাশে। তখনই হন্তদন্ত হয়ে রুমে এসে ওদের তাড়া দিলো এমিলিয়া,
‘ তোমাদের সাজগোজ হলো খালামনি? ওদিকে যে তোমার বর তার বউয়ের অপেক্ষায় মিষ্টি খেয়ে খেয়ে সুগার লেভেল হাই করে ফেলছে। এক গাদা মিষ্টি খেয়ে নিয়েছে সন্ধ্যা থেকে! আমার হাতে ধরা পড়ে গিয়ে বলছে, এটা নাকি তোমাকে পুরো এক ঘন্টা দেখতে না পাওয়ার কষ্টে খেয়েছে সে!’
মরিয়ম হেসে এসে কান মলা দিয়ে দিলেন এমিকে। মেয়েটা ব্যথায় ককিয়ে উঠতেই আবার জড়িয়ে ধরলেন ওকে। পরপর আর সময় নষ্ট না করে আঞ্জুমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ আপা! আপনি ওদের নিয়ে নিচে আসুন! আমি আমার এই বিচ্ছুটাকে নিয়ে যাই আগে নিচে! কতবড় সাহস, আমাকে বলে কি না আমার বর আমাকে না দেখে মিষ্টি খেয়ে নিয়েছে?’
‘ আরো করো দেরি! এজন্যই তো মিষ্টি বউয়ের বদলে দোকানের কেনা মিষ্টি খেয়ে মন ভরছে আমার খালুজান!’
আবারও একদফা হাসির রোল পড়লো ঘরে। এমিলিয়া আর মরিয়ম আগে আগে নামলো নিচে। তারপর আঞ্জুমান আর আরশি জারাকে দু’পাশ দিয়ে ধরে ধরে নিয়ে এলো বসার ঘরে।
শেহজাদ তখন আলাপে ব্যস্ত। মেহমানরা ঘিরে রেখেছে তাকে। অথচ সেসবের মাঝেও নুপুরের আওয়াজ পেতেই থমকালো সে। থমকালো তার চমৎকার বাচনভঙ্গি।
মেহমানদের সামনেই ঘুরে তাকালো সে
সিঁড়ির দিকে। খয়েরি বেনারসির আঁচল সামলাতে হিমশিম খাওয়া মেয়েটা ঝড় তুললে তার বুকে। দমকা হাওয়ার মতো তাকে ছুঁয়ে গেলো ঐ খিলখিল হাসি। নীলাভ অক্ষিযুগলের পলক পড়ল বহু সময় পরপর। ফিকে হয়ে এলো বাকিসব। একমাত্র ধ্রুব সত্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সম্মুখের মেয়েটা।
আয়ান পাশ থেকে আলতো ধাক্কা দিতেই নড়ে উঠলো শেহজাদ। হুঁশ ফিরতেই ধড়ফড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকালো ও। ভাবলো বোধহয় এড়িয়ে যেতে পারবে এই বাঁদরকে। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। একেবারে সামনে এসে দাঁড়াল আয়ান। কন্ঠে সীমাহীন বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ অমন বোয়াল মাছের মতোন হা করে কী দেখছিলি এতক্ষণ? কই আমিও একটু দেখি তো!’
আয়ান প্রশ্ন করে ঘাড় ঘোরানোর আগেই ওর শেরওয়ানি কলারে থাবা বসালো শেহজাদ। নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে বলল,
‘ আমি আমার বউকে দেখছিলাম! তুই কেনো তাকাচ্ছিস?’
‘ ওমা তাকাবো না? দুনিয়াতে শুধু তোর বউ আছে, আর কারোর বউ নাই?’
শেহজাদ ছাড়তে না চাইলেও আশেপাশে তাকিয়ে ছেড়ে দিতে হলো ছেলেটাকে।
আয়ান তেতে উঠে বললো,
‘ বল আমি কিছু ভুল বলেছি? ওখানে তো রুশাও দাঁড়িয়ে আছে! ভালো করে চোখ দুইটা খুইল্যা দ্যাখ! ঐ যে ছোটো ছোটো চুল। ঐটা আমার বউ! আমি শুধু আমার নিজের বউকেই দেখি ব্যাটা! অন্যের বউ টউ দেখি না! হুহ!’
কুঁচকে যাওয়া শেরওয়ানির কলারটা ঝেড়ে ঠিক করলো আয়ান। শেহজাদ চুপ হয়ে যেতেই আবার দাঁত কপাটি বের করলো সে। বলল,
‘ বিয়ের ব্যাপারে তুই আমার সিনিয়র! কিছু উপদেশ টুপদেশ দে ভাই!’
‘ বোন দিচ্ছি! এই নিয়েই খুশি থাক! বেশি জ্বালাবি তো…’
শেহজাদ কথা শেষ করার আগেই অভি চলে এলো ওদের মাঝে। এসেই মাঝে ঢুকলো দুই ভাইয়ের। কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ কী বলছো তোমরা আমাকে রেখে?’
আয়ান স্বরে আওড়াল,
‘ দুষ্টু কথা বলছিলাম! তুমি শুনতে এসো না অভিবাবু! এসব শুধু বিবাহিতরা বলতে পারে!’
শেহজাদ ফের একবার তপ্ত চোখে তাকাতেই ঠোঁট টিপলো সে। পরপর গলা পরিষ্কার করে আওড়াল,
‘ না মানে আজ রাতে আমার জীবনের প্রথম বাস…এ্যাই না মানে আমার ইয়ে আরকি…বিয়ে..বিয়ে! তাই এ্যাডভাইস নিতে এসেছিলাম বন্ধুর থেকে! যতই হোক! ব্যাটা বিয়ের ব্যাপারে আমার তিন বছরের সিনিয়র বলে কথা!
শেহজাদ প্রলম্বিত শ্বাস ফেললো। অভি বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে শুধালো,
‘ তা দিলো তোমাকে এ্যাডভাইস শায়ান ভাই?’
আয়ান চরম হতাশ স্বরে জবাব দিল। বলল,
‘ নাহ! তাড়িয়ে দিচ্ছিল। ভাগ্যিস ওর বোনের সাথেই বিয়েটা হচ্ছে! নইলে এতক্ষণে আমার গলা টিপে ধরলেও খুব একটা অবাক হতাম না আমি। তা অভি বাবু, তুমি বিয়েটা কবে করছো?’
‘ বিয়ে করার আসলে কোনো সময় নেই আয়ান ভাই! বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই খারাপ সময়ের শুরু হওয়া! আমার কথা নয়, রবু ভাইয়ের কথা!’
আয়ান চোখ কপালে তুলে বলল,
‘ সে কি? রবিন চাচা তিনবাচ্চার বাপ হয়ে তোমাকে এসব বলেছে?’
শেহজাদ বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ উনি বিয়ে করেননি এখনো!’
‘ তাই বলে, সিঙ্গেল থেকে যারা বিয়ে করছি তাদের এভাবে বিনা পয়সায় ভয় দেখাবে?’
অভি তড়িঘড়ি আওড়াল,
‘ আরে না আয়ান ভাই! রবিন চাচা এসব বলবেন কেনো? বলেছে তো রনবীর কাপুর! আমি সেটাই তোমাকে আবার শোনালাম আরকি!’
আয়ান আর অভির এমন বেহুদা আলাপ শোনার ইচ্ছে হলো না শেহজাদের। তার চোখ খুঁজছে আরশিকে।
ওখান থেকে সরে আসতেই চোখজোড়া শান্ত হলো তার। খু্ঁজে পেয়ে গেলো
মেয়েটাকে। তাকে দেখেই তার দিকে এগিয়ে এলো আরশি। রুনঝুন শব্দ ছড়ালো তার পায়ের নূপুর, দু’হাত ভর্তি খয়েরি কাঁচের চুড়ি আর স্বর্ণের বালা।
কাছে এসে কন্ঠ নামিয়ে বলল,
‘ আমার একটা আর্জি ছিল আপনার কাছে!’
শেহজাদ সপ্রশ্ন চোখে তাকাতেই আরশি বুঝিয়ে বলল তাকে,
‘ জারা আর আয়ান ভাইয়ের কাবিন হলেও আমরা কিন্তু নতুন করে কবুল টবুল বলবো না আজ! মনে থাকবে?’
শেহজাদ ভারী চিন্তিত মুখটায় প্রশ্রয়ের দৃষ্টি ফেলে শুধাল,
‘ কেনো? সবার সামনে আজ কবুল বলতে লজ্জা করছে নাকি তোমার?’
আরশি অমনি আরো দু’পা এগিয়ে এলো শেহজাদের কাছে। দু’পায়ের বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কানে কানে বলল,
‘ এখন তো অক্টোবর চলছে। আর আমাদের বিয়ে কবে হয়েছিল? ফেব্রুয়ারীর চৌদ্দ তারিখ? আমি চাই, আমাদের জীবনে ঐ চৌদ্দ তারিখটাই প্রতিবছর আসুক। প্রতিবছর ঐদিন আপনি আমাকে একটা করে চিঠি লিখুন। ভর সন্ধ্যায় ছাঁদে গিয়ে আমি লজ্জায় মুখ গুঁজে দাঁড়াই আপনার বুকে! আপনি আপনার ভালোবাসার কথা স্বীকার করতে গিয়ে চোখ ভেজান। ব্যাস! আপতত এটুকুই আবদার!
আর আজকের এই বিশেষ দিনটা নাহয় শুধু জারা আর আয়ান ভাইয়ের হয়েই থাকুক।’
শেহজাদ কথা খুঁজলো না। আরশি এতো সাবলীলভাবে বলল সবটা, যে ঐ নিখুঁত মুখটা দেখতে দেখতেই ওকে বুকে টেনে নিলো শেহজাদ। সবার সামনে।
আরশি ভড়কে সরে যেতে চাইলে শেহজাদ কোমল গলায় আওড়াল,
‘ তুমি নিজের মুখে কোনোকিছু চেয়েছো, আর আমি সেটা রাখবো না? এমন কোনোদিন হবে না আরশি! কক্ষনও হবে না!’
বিয়ের ব্যস্ততা কমলো একে একে মেহমানরা সব চলে যাওয়ার পর। তখনই একটু যেন দম ফেলার ফুরসত পেলো হাসান ভিলার মানুষগুলো। কিন্তু জিরোনোর জন্য সোফায় গোল হয়ে বসতেই সাউন্ড সিস্টেমের রিমোট হাতে উপস্থিত হলো এমি। পা টেনে টেনে এসে বসলো জারার পাশে। বলল,
‘ দেখি রুশা! তোমার হাতটা দাও তো! আজকের প্রথম কাপল ডান্সটা তুমি আর আমি করবো!’
জারা অবাক হলো ভীষণ। ধকলটুকু নিমেষেই উবে গেলো তার। উঠে দাঁড়ালো চটপট!
মরিয়ম ওদের সামনেই বসে ছিলেন। অবশেষে এমিকে সবার সাথে স্বাভাবিক হতে দেখে হাসলেন প্রসন্ন মুখে।
হঠাৎ মরিয়মের পাশ থেকে কেউ একজন
গমগমে গলায় বললেন,
‘ আমাকে কি কাপল ডান্স করার জন্য কেউ বলবে নাকি আমি নিজেই আমার পছন্দের হাতটা তুলে নেবো নিজের হাতে?’
বয়সের ভারে সদা গম্ভীর হয়ে থাকা গলার স্বরটা চিনতে অসুবিধে হলো না মরিয়মের। মেহমেদের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে হতবুদ্ধ গলায় শুধালেন,
‘ কেনো? হাত দিয়ে কী করবে তুমি?’
মরিয়মের এমন প্রশ্নে ভালোই অস্বস্তিতে পড়লেন মেহমেদ। ইতিউতি চাইলেন বিব্রত মুখটা লুকোতে।
কিন্তু লাভ হলো না। মেহমেদকে বেকায়দায় পড়তে দেখে সোফায় বসে হেসে লুটোপুটি খেলো এমি আর জারা। মেহমেদ বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘ আশ্চর্য! এতে এতো হাসার কী হলো? আমি আমার বউয়ের সাথে কাপল ডান্স করতে পারি না?’
তখনই পিছন থেকে এসে মরিয়মের গলা জড়িয়ে ধরলো আরশি। শাশুড়ি মায়ের আদর খেতে খেতে মেহমেদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ অবশ্যই পারো। শুধু তুমি কেনো? আমার তো মনে হয় এ বাড়ির প্রতিটা ছেলের উচিত তোমার থেকে শেখা, বউয়ের হাত ধরে কীভাবে নাচতে হয়!’
অমনি আরশির কান টেনে ধরলেন মরিয়ম! বললেন,
‘ সন্ধ্যায় যেমন এমিটার কান মুলে দিয়েছিলাম, তেমন তোকেও দিতে হবে নাকি?’
অমনি খিলখিল করে হেসে উঠলো আরশি।
জারা মায়ের কাছে এসে তার হাত টেনে দাঁড় করালো বাবার পাশে। এমি এগিয়ে এসে একজনের হাতের উপর অপরজনের হাত তুলে দিতেই গলা ফাটিয়ে হইহই করে উঠলো পুরো স্নোবল স্কোয়াড। আরশির হাত তালি আর
আয়ানের শিস বাজানোর শব্দে কানে তালা লেগে গেলো সবার।
বাড়ির নতুন জামাই মেহমেদের কাছে এসে বলল,
‘ আঙ্কেল! আপনি আজ নির্ভয়ে আন্টির সাথে নাচুন তো! আমরা সবাই আপনার সাপোর্টে! বেলোন, খুন্তি, ছু-রি চা-কু সব লুকোনো আছে। কোনো টেনশন নেই!’
আঞ্জুমান শাড়ি ঠিক করতে করতে নেমে আসছিলেন উপর থেকে। আয়ানের মুখে আঙ্কেল আন্টি ডাক শুনে শুধরে দিয়ে বললেন,
‘ আবার আঙ্কেল আন্টি?’
জিভ কাটলো আয়ান। দু’আঙুলে কানের লতি ছুঁয়ে বলল,
‘ এই রে! সরি সরি! মনি আসলে হয়েছে কী, বহুদিনের অভ্যাস তো! তাই একটু সময় লাগছে!’
অভি ইভেন্ট ম্যানেজারকে বিদেয় করে বাড়িতে ঢুকতেই শুনলো সেসব। পরপর আয়ানের পিছনে এসে ফিসফিস করে বলল,
‘ ভাগ্যিস তখনের মতো বলোনি, এটা তোমার প্রথম বিয়ে তো, তাই ডাকগুলো উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে! এমন দুয়েকবার বিয়ে করলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে!’
আয়ান ঘুরে প্রতিত্তোর করতে যাবে,
কিন্তু আচমকাই, ‘মা গো’ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন আঞ্জুমান।
ত্রস্ত একযোগে সবাই তাকালো সিঁড়ির ওখানটায়। এতো জোড়া চোখ যেন একসাথে বড়সড় একটা ধাক্কাবখেলো এবার।
জারার চোয়াল ঝুলে গেলো ফ্লোরে। আরশি গাল হাত দিয়ে হেলে পড়লো একপাশে। অভি হতবুদ্ধি হয়ে থেমে থেমে বললো,
‘ আঞ্জুমান আন্টি আমার বাবার হাত ধরে…’
বাকিটা শেষ করলো আয়ান।
‘ ঝুলে আছে!’
এটুকু বলতেই খুশিতে চকচক করে উঠলো আয়ানের চোখদুটো। কে জানতো, সে শুধু একটা নয়, পুরো একজোড়া নতুন দম্পতি আবিষ্কার করে ফেলতে পারবে নিজের বিয়েতে?
আঞ্জুমান অভির বাবার হাত ধরে দাঁড়াল সোজা হয়ে। মনে মনে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারলো। শাড়ির কুঁচি পায়ে জড়িয়ে যাওয়ার আর সময় পেলো না তার? এতগুলো বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ের সামনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে যে এখন।
চোখ তুলে তাকাতে পারলো না আঞ্জুমান। মাথা নুইয়ে রাখল শাড়ি ঠিক করার বাহানায়। পরপর ক্ষীণ স্বরে সম্মুখের মানুষটার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেই ছুটে পালালো সেখান থেকে।
অনিল শিকদার তখনও যেন ছিলেন ঘোরের মধ্যে। থ্যাঙ্ক ইউর উত্তরটাও দিতে পারলেন না, তার আগেই আয়ান হইহই করতে করতে ছুটে গেলো তার কাছে। সাথে টেনে নিয়ে গেলো অভিকেও। অনিল সাহেবের কাঁধে কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা মারলো। কন্ঠ নামিয়ে বলল,
‘ আঙ্কেল! সামথিং সামথিং?’
অনিল মাথা নোয়ালেন সহসা। একহাতে ঘাড়ের পিছন ডলতে ডলতে হেসে বললেন,
‘ ধূর! কি যে বলোনা তোমরা? বুড়ো বয়সে আবার কীসের সামথিং সামথিং?’
অভি আবার বাবাকে ভয়টয় বিশেষ পায় না। সে তুরন্ত চেপে ধরলো তাকে।
‘ বাবা! মনের বয়সই আসল বয়স!’
অনিল ঋজু হয়ে দাঁড়ালেন। সুঠাম দেহের আড়ষ্টতা ভেঙে হাত রাখলেন ছেলের কাঁধে। নরম গলায় বললেন,
‘ অভি! তোমার মা মারা যাওয়ার এতোগুলো বছর পরে নতুন করে আবার কাউকে পছন্দ করা, বা ভালোবাসা…বড্ড সময়ের ব্যপার। আমি সেই সময়টুকু শুধু আমার ছেলেকে দিতে চাইছি! তুমি তো আছোই! আর কী চাই আমার?’
অভি এবার বাবা নয়, নিজের সন্তানের মতো বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ কেনো? একজন কথা বলার সঙী? এই যে সারাদিন আমি মেডিকেল নিয়ে পড়ে থাকি! তুমি ব্যবসার ভার তোমার কর্মচারীদের হাতে তুলে দিয়ে অবসর সময় কাটাও বাড়িতে! তখন তোমার কী একটুও হলেও একা একা লাগে না বলো তো?’
অনিল উত্তর খুঁজে পেলেন না। ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রইলেন ছেলের দিকে। অভি নিজে থেকেই হেসে ফের আওড়াল,
‘ বাবা! আমি বলছি না তুমি তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে কিছু করো। আই নো, তুমি মাম্মামকে এখনও ততটাই ভালোবাসো যতটা তাকে আগে বাসতে। বাট স্টিল! এরপরও যদি তোমার মনে হয়, যে তুমি তোমার এই একা থাকার সিদ্ধান্ত বদলাতে চাইছো, তাহলেও কিন্তু তুমি আমাকে সবসময় তোমার পাশে পাবে।’
সবাই যখন মুগ্ধ হয়ে অভির কথা শুনছিল তখনই মেহমেদ মরিয়মকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘ আমাদের অভিকে দেখেছো? একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে তাই না? আমার বোনটাও কিন্তু এমন ছিল জানো? সবার ভালোমন্দ নিয়ে সে ভাবত। সবার খেয়াল রাখত।’
এমি সেটুকু শুনে ফের তাকালো অভির দিকে। আচমকা…চোখে চোখ পড়লো তার সাথে অভির। দু’জনই নির্নিমেষ একে অপরের দিকে চেয়ে থাকার এক পর্যায়ে ভ্রু নাচালো ছেলেটা। অমনি মাথা নুইয়ে ফেলল এমিলিয়া। ধরা পড়ে যাওয়ায় হাসলো নিঃশব্দে!
সদর দরজা পেরিয়ে সবে বাড়ির ভিতরে ঢুকল শেহজাদ।
হাতদুটো পিছনে রেখে আড়চোখে একবার দেখে নিলো আরশিকে।
এতো কিছুর মাঝেও মরিয়ম ছেলেকে দেখেই বলে উঠলেন,
‘ এতক্ষণ কোথায় ছিলি বলতো? সব গেস্টরা যাওয়ার সময় তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলেন!’
শেহজাদ মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। জবাবে বলল,
‘ আসলে আরশিকে তো প্রথমবার তেমন কিছু দিতে পারিনি! তাই আরকি ওর জন্য একটা গিফট…’
গিফটের নাম শুনেই আরশি গুটিয়ে গেলো কুন্ঠায়। গিফটটা শেহজাদের হাতেই ছিল। আরশিকে কাছে ডাকল নাম ধরে।
মেয়েটা কাছে আসতেই পিছন থেকে সামনে আনলো হাতে ধরে রাখা বাক্সটা শেহজাদ। মুহূর্তেই চোখগুলো রসগোল্লা হয়ে গেলো আরশির। চারকোনা বাক্সের ভিতরে একটা তুলতুলে শরীর দেখে রীতিমতো দু-হাতে নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো ও। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে শুধাল,
‘ খ-খরগোশ?’
বাড়ির বাকিরাও খরগোশের নাম শুনে ঘিরে ধরলো ওদের। স্নোবলও প্যালেটস ফেলে দৌঁড়ে এলো ওদের কাছে।
আরশি আলতো হাতে বাক্স থেকে তুলে নিলো বাচ্চাটাকে। বাদামী রঙা হল্যান্ড লুপ। আরশির চেহারায় বাচ্চাদের মতো খুশি। চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো কোলের প্রাণটাকে। পরপর শেহজাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ওকে কোথায় পেলেন?’
বাড়ির সবারও একই প্রশ্ন। শেহজাদ হেসে বলল,
‘ বানি রেসকিউ শেল্টার থেকে এডপ্ট করেছি ওকে। তুমি বলছিলে না তোমার স্নোবলের একটা সঙ্গী লাগবে?’
আয়ান তুরন্ত মানুষটার কাঁধ চাপড়ে বলল,
‘ ভাই, এতোদিনে তুই কাজের মতো একটা কাজ করেছিস!’
জারা আরশির কোলের খরগোশটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ এবার তাড়াতাড়ি একটা নাম রেখে ফেলা দরকার ওর!’
এমিলিয়াও কোলে তুলে নিলো স্নোবলকে। বলল,
‘ আমাদের এই নতুন বউয়ের নাম তার বরের হয়ে কে ঠিক করবে?’
অভি হাত তুললো অমনি। বলল,
‘ আমি ঠিক করি?’
সবাই হেসে উঠলো ওর হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে। আয়ান বলল,
‘ বলে ফেলো শালাভায়া, বলে ফেলো!’
‘ উমম..চকলেট রাখলে কেমন হয়? ওর গায়ের রঙের সাথে ম্যাচিং ম্যাচিং নাম!’
শুনেই নাক ছিঁটকালো আয়ান। বলল,
‘ ভাগ্যিস তুমি স্নোবলের নাম রাখার সময় ছিলে না, নইলে এই ম্যাচিং ম্যাচিং এর চক্করে নির্ঘাত ব্যাটার নাম ভ্যানিলা ট্যানিলা রেখে দিতে…আমি শিওর!’
হইচই টের পেয়ে আঞ্জুমানও আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না। নিচে নেমে এলেন তৎক্ষনাৎ। আরশির কোলে নতুন এই সদস্যকে দেখে হাসি ফুটলো তার মুখেও। বলল,
‘ যার ছেলের বউ হবে, সে-ই নাহয় রাখুক তার ছেলের বউয়ের নাম। আরশি মা, বলো তো কী নাম রাখা যায় ওর?’
সবাই একযোগে তাকাল আরশির দিকে। মেয়েটা কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসল। বলল,
‘ কোকো! আজকে থেকে ওকে আমরা কোকো ডাকি? কেমন হবে?’
কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই একজন তার ফিডব্যাক নিয়ে যেন তৈরি। সবার আগে সে তার ভরাট কন্ঠে জানিয়ে দিলো,
‘ পারফেক্ট!’
লাজুক হাসলো আরশি। হাসলো বাকিরাও। অভিরও মন খারাপ হলো না খুব একটা। চকলেট, কোকো.. দুটো নামই তো প্রায় কাছাকাছিই।
ওদিকে আয়ান ছাড়লো না শেহজাদকে। খোঁচা দিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ! বউ যেটা বলবে, তোমার কাছে সেটা তো পারফেক্ট হবেই! আমি কোকোর নাম কোন রাণী মহারাণীর নামে মিলিয়ে রাখলেও দেখতাম ঠিকই তুই নাকমুখ কুঁচকে আছিস!’
শেহজাদ রাগ দেখালোনা এবার আর। ঘাড় পেতে মেনে নিলো এই অভিযোগ।
এমন স্বীকারোক্তি দেখে মজার ছলে মানুষটাকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো আয়ান।
এমি হাসি থামিয়ে বলল,
‘ অনেক তো হলো হাসাহাসি! এবার কাপল ডান্স হবে তো নাকি?’
অভি আর সময় নষ্টই করলো না। কোথাও একটা উধাও হলো মূহুর্তেই। অমনি বসার ঘরের আলো নিভলো। ফোকাস লাইটগুলো পড়লো একেকজন দম্পতির উপর। হিন্দি একটি গান বেজে উঠলো সাউন্ড সিস্টেমে,
‘ Tose nainaa laage piyaa savren
Nahi bas mein ab ye jiyaa savren
Mohabbat to ek
jaavedaa zindagi hai…
Mohabbat to ek
jaavedaa zindagi hai….
Tose nainaa laage mili roshani
Tose man jo laagaa mili zindagi
Mohabbat to ek
jaavedaa zindagi hai…
Mohabbat to ek
jaavedaa zindagi hai…’
কোকোকে কোল থেকে নামিয়ে রেখে আরশি এগিয়ে এলো শেহজাদের কাছে। চোখ থেকে চোখ সরালো না। শেহজাদ হাত বাড়িয়ে দিলে তার হাতের উপর হাত রাখলো ও।
গানের তালে তালে পা মেলালো শেহজাদের সাথে। মানুষটা ওকে ঘুরিয়ে দু-হাতে টেনে আনলো নিজের কাছে। কোমরে হাত রেখে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।
সমুদ্রের মতো গভীর চোখগুলো স্বপ্ন বুনলো ঐ কৃষ্ণগহ্বরে দৃষ্টি রেখে। একটা আদুরে স্বপ্ন। একটা সংসার। যেখানে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে আলুথালু ছোটাছুটি করবে দুটো প্রাণ। যাদের দেখতে একদম হবে তার এই পুতুল বউটার মতো। শেহজাদ হুট করেই মুখ নিয়ে এলো আরশির কানের পাশে। কন্ঠ নামিয়ে বলল,
‘ এতো সুন্দর করে আর সেজো না তো কখনো!’
আরশি বুঝতে পারে না। দ্বিধাভরা গলায় শুধায়,
‘ কেনো?’
ঠোঁটের কোণ তুলে নিঃশব্দে হাসলো শেহজাদ। চোখ বন্ধ করে বলল,
‘ ট্রাস্ট মি জান…নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় চোখের সামনে এতো সুন্দর একটা বউ ঘুরঘুর করলে!’
কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেও লাজবন্তী তার গলার কুন্ঠা লুকায়। না বোঝার ভান করে শুধায়,
‘ কিন্তু আপনি তো আমার উপর রেগে ছিলেন! রাগ পড়ে গেলো এরমধ্যে?’
‘ আ’ম সরি! রাগ করে ভীষণ ভুল করেছি!’
‘ আর যদি কখনো রাগ করেন?’
‘ তাহলে নাহয় মায়ের মতো কান মুলে দিও আমারও!’
আরশি ফিক করে হেসে ফেললো শেহজাদের কথায়। মানুষটা ওর কানের পাশ থেকে মুখ তুলে দাঁড়াল মুখোমুখি হয়ে। দু’হাতের আজলায় আরশির মুখটা তুলে নিয়ে বলল,
‘ আই লাভ ইউ খরগোশের মা! আই লাভ ইউ সো সো সো মাচ!’
আরশি চওড়া হাসলো। চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়ালো খুশির জল। দু’হাতে শেহজাদের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আই লাভ ইউ টু জাম্বুবান!’
‘ পাক্কা প্রমিজ? কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না বলো!’
ঘনঘন মাথা নাড়লো আরশি। আচমকা আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চুমু খেলো শেহজাদের কপালে। নেমে এসে চোখ খুলে বলল,
‘ কখনো না! পাক্কা প্রমিজ! আপনিও প্রমিজ করুন, সবসময় এভাবেই আদর করবেন আমাকে!’
শেহজাদ হেসো ফেললো ওর কথা শুনে। ঝুঁকে এসে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
‘ করবো তো!’
‘ দুই বাচ্চার মা হওয়ার পরও কমবে না তো আদর?’
‘ দুই বাচ্চার মা হওয়ার পরও কমবে না!’
‘ দশ বাচ্চার মা হওয়ার পরও কমবে না?’
‘ দশ বাচ্চার মা হওয়ার পরও কমবে না!’
‘ বাচ্চাগাচ্চায় ঘর ভরে যাওয়ার পরও কমবে না?’
‘ বাচ্চাগাচ্চায় ঘর ভরে যাওয়ার পরও কমবে না!’
‘ আমি বুড়ি হয়েও গেলেও কমবে না?’
নে আদরে জড়িয়ে মন পর্ব ৬০
‘ উহু! যাকে পেয়ে আমি ভালোবাসার মানে বুঝতে শিখেছি তার প্রতি আমার এই আদর কখনো কমবে না। একবিন্দুও কমবে না। সে বুড়ি হয়ে গেলেও কমবে না!’
আরশি নিশ্চিন্ত হলো এবার৷ সস্তির
শ্বাস ফেলে মাথা ঠেকালো ঐ প্রশস্ত সিনায়।
নরম স্বরে আওড়ালো,
‘ আমারও কমবে না। এই যে আদরে জড়িয়ে নিলাম আপনাকে, আপনার মনটাকে! এই আদর সারাজীবনেও কমবে না!’
 
