পাতা বাহার পর্ব ১০

পাতা বাহার পর্ব ১০
বেলা শেখ

মেঘাচ্ছন্ন সকাল বেলা। গতরাতেই বৃষ্টি থেমে গেলেও মেঘমল্লার এখনো দিগন্তের বুকে উড়ে বেড়াতে ব্যস্ত। নিস্তব্ধ পরিবেশে ফটিক জল পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। আর ধান ক্ষেতে জমানো পানিতে থাকা ব্যাঙের দল ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকছে অবিরত। মাঝে মাঝে থামছে সেটাও একজোট আবার শুরু করছেও একজোটে। পাতার গাঢ় ঘুম এই ডাকে ভেঙে যায়। তার ঘর থেকে আওয়াজ আরো বেশি আসছে। জানালা খুলে দিলেই সারি সারি ধানের ক্ষেত!! তাই! পাতার ঘুম ভাঙলেও বিছানা থেকে উঠে না‌।

সেখানেই কতক্ষন গড়াগড়ি খেতে খেতে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সারে সাতটা বেজে গেছে ‌ পাতার চোখ কপালে!! তার স্কুল দূরে হওয়ায় আটটার মধ্যেই বের হতে হয়। পাতা বিছানার থেকে বিদায় যাত্রা সেরে বাইরে বেরিয়ে আসে ওয়াশ রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তার রুমে এটাচ ওয়াশরুম নেই। এটাচ ওয়াশরুম শুধু লুবমানের ঘরে আছে। আর লুবমানের ঘরটা আগে লতার ছিল। লতার বিয়ের পর লুবমান সেখানে শিফট হয়েছে। পাতা ওয়াশরুম হয়ে এসে রেডি হয়ে নিল। ব্যাগ পানির বোতল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে জুতা জোড়া হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুম পেরিয়ে মেইন দরজায় কাছে রাখে। ড্রয়িংরুমের সোফায় আতিকুর রহমান বসে টিভিতে আবহাওয়ার খবর দেখছেন। মামা ভাগ্নে এখনো ঘুমিয়ে। লতা আর লাবনী আক্তার রান্না করছে। পাতাকে স্কুলের জন্য রেডি দেখে লাবনী আক্তার গলা উঁচিয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” এই পাতা পরোটা বানাচ্ছি। একটা হয়েছে আরেকটা হওয়ার মধ্যে! আচার দিয়ে খেয়ে যা পরোটা দুটো!”
পাতা খুশি হয় বেশ!
-” না আম্মু! অনেক দেড়ি হয়ে গেছে অলরেডি! খেতে গেলে আরো লেট হবে আসছি!”
আতিকুর ইসলাম টিভির ভলিউম কমিয়ে পাতার উদ্দেশ্যে বললেন,
-” জলদি উঠতে পারো না! কাল থেকে যেন ফজরের ওয়াক্তে উঠতে দেখি! আর একদিন লেট হলে কিছু হবে না! খেয়ে যাও!”

পাতা যেন এটারই অপেক্ষা করছিল। তার ওতটাও লেট হয়নি। দুটোর জায়গায় চারটা খেলেও কিছু হবে না‌। কিন্তু না করেছিল বাবার একটুখানি যত্নের আশায়। আর সেটা সফলকাম হয়েছে। সে ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে রান্না ঘরে যায়। লতা প্লেটে একটু আমের আচার আর আরেকটা পরোটা দিয়ে বাড়িয়ে দেয় পাতার দিকে। পাতা মুচকি হেসে সেটা ধরে পরোটা ছিড়ে আচার দিয়ে মুখে পুরে। আহ! গরম গরম পরোটার সাথে আমের আচার! যেন অমৃত! আহা সে খুশি মনে আস্তে ধীরে তিনটে পরোটা শেষ করল। লতা তাকে পানির গ্লাস দিয়ে বলল,

-” বাটিতে দিয়ে দিই কয়েকটা? টিফিনে খাস?”
পাতা ঢক ঢক করে পানি গিলে।
-” না আপু! আজ বৃহস্পতিবার! হাফ ক্লাস! আম্মু আপু আসছি আমি?”
-” সাবধানে যাস!”
লতা লাবনী একসাথে বলে ওঠে। পাতার ইচ্ছে করে দুজনকে জড়িয়ে চুমু খেতে। কিন্তু পারে না জড়তার কারণে! ড্রয়িং রুমে গিয়ে বাবাকেও বলে,
-” আব্বু আসছি!”
-” হুম!”
সংক্ষিপ্ত জবাব। পাতা ভেবেছিল মা বোনের মতো সাবধানে যেতে বলবে। পাতার মন খারাপ হয় না তবে আশাটা ভেঙে গেল!

পাতা স্কুটি নিয়ে বের হয় স্কুলের উদ্দেশ্যে। বৃষ্টিতে ভিজে আছে পিচঢালা রাস্তা। রাস্তা জুড়ে গাছের পাতা, ছোট ছোট ডাল পড়ে আছে। সেগুলো গাড়ির চাপায় পড়ে ভেঙে আছে। গাছ গাছালি এখনো ভেজা। গাছের পাতায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। হালকা বাতাসের ধাক্কায় মাঝে মাঝে সেগুলো ঝড়ে পড়ছে ঝমঝম করে। পাতার উপরেও পড়ে খানিকটা। পাতার বেশ লাগে। স্কুটির গতি সামান্য বাড়িয়ে দেয়।‌ লেট না হয় আবার আর জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই। সারি সারি গাছ ধানের ক্ষেত পেরিয়ে স্কুটিটি শা শা করে এগোচ্ছে।

সামনে খাবার হোটেল চা স্টল পড়ে। পাতা একনজর সেদিকে চায়। শুকলা মন্ডল বসে চা খাচ্ছে। তাকে দেখতেই কালকের কথা মনে পড়ে যায়। তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিল রাত্রে।‌ পাতার শুকলাকে দেখে ইচ্ছে করে করে গরম চায়ের কাপ মাথায় ঢেলে কাপটা ওই টাকে ভাঙতে! শালা লু*চ্চা! শুকলার নজরেও পাতা পড়ে যায়। কালকের বেইজ্জতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। হাতটা আপনেআপ গালে চলে যায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায়। পাতা খানিকটা ঘাবড়ে যায়। শতহোক মেয়ে মানুষ তো! সম্মানের ভয় কার না থাকে!যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে! সে স্কুটির বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়ে চটপট চলে যায়। নাহ চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে!
শুকলা পাতার প্রস্থান দেখে চায়ে চুমুক দিয়ে পাশে থাকা মুরুব্বি গোছের লোকটিকে বলল,

-” এইটা আতিকের ওই পালক দেওয়া মাইয়া পাতা না?”
লোকটি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
-” হ মন্ডল ! মাইয়াডা ভালোই। তয় কেন জানি বিয়া হইতেছে না। বয়স তো ভালোই হইলো! মনে হয় আতিকের ভাইরারে যে পালক দিছিল তার জন্যিই হয়তো!”
শুকলা চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে মুখে পুরল।

-” দেখো গা কোনো নাগর আছে বান! নইলে বিয়া হইবো না ক্যা?”
লোকটি হেসে বলে,
-” কখনো চোখে পড়ে নাই!”
-” তোমাদের সামনে ঘুরবো নাকি! শহরে যায় ! কোথায় কি করে না করে কে যানে! আজকালকার মাইয়া গোরে ভরসা আসে?”
-” তা ঠিক বলছো! এখন কার মনে কি আমরা কেমনে কমু?”
আরো বিভিন্ন আলাপ আলোচনা চলতে থাকে চায়ের দোকানে।

পাতা শহরের মধ্যে চলে এসেছে। গ্রামের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বেশ আয়েশেই আসছিল। এই ভিড়ভাট্টা তার একদম পছন্দ হচ্ছে না। এই গাড়ি সেই গাড়ি। সাইট দাও তো ওভারটেক! উফ বিরক্তিকর! আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখে একটি চকলেট কালারের বি এম ডাব্লিউ কার দাঁড়িয়ে। গাড়িটা চিনতে অসুবিধা হয় না। এটা ভোরদের গাড়ি। বাচ্চাটা নিশ্চই আজও তার অপেক্ষায় আছে। সে গাড়ির পাশে স্কুটি থামাতেই চেনা ডাক ভেসে আসে।
-” মিস আসসালামুয়ালাইকুম! কেমন আছেন? আজ এতো লেট কেন হলো? আমি কখন থেকে অপেক্ষায়?”
পাতা হেলমেটের গ্লাস উপর করে চায়। গাড়ির ভিতরে দেখা যাচ্ছে না! জানালার কাচ অল্প খানিকটা খোলা। সেখান থেকেই ভোর হাত নাড়াতে নাড়াতে বলছে। হয়তো সে তাকে দেখতে পাচ্ছে।

-” ভোর সরকার যেতে চাইলে জলদি আসো এমনিতেই উই আর লেট!”
ভোর বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে পাতার সামনে দাড়ালে পাতা খেয়াল করে ভোরকে। টাই ভালো ভাবে লাগায় নি কলার একাংশ উঁচু। শার্ট টাও কুঁচকে আছে, ভালো ভাবে ইন করা হয় নি। শু পড়েছে তবে মুজো পড়ে নি। চুলগুলোও এলোমেলো! পাতা টাই ঠিক করে কলার ঠিক করে দিল।
-” এই কি অবস্থা ভোর সরকারের! ভালোভাবে রেডিই তো হও নি!মুজো পড় নি?”
বলে শার্ট ইন করে। চুলে হাত বুলিয়ে ঠিক করলো! ভোর চিরচেনা মিষ্টি হাসি দিল। মিস তার কেয়ার করছে! তার বেশ লাগছে।

-” সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বু নেই! কাক্কু বললো অফিস চলে গেছে ভোরেই! এখন কে রেডি করে দেবে?তাই একা একাই রেডি হয়েছি‌। মুজো পড়তে পারি না। তাই পড়িনি!”
পাতা শান্ত চোখে চায় ভোরের দিকে। ছোট্ট ছেলেটা একা একাই সব করেছে? ভোরের কপালে চুমু দিয়ে স্কুটিতে বসায়। জানালায় টোকা দিয়ে আভারিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” আপনি একটু রেডি করে দিতেন! বাচ্চা ছেলে! ওকি ওসব পারে?”
আভারি ইতস্তত করে বলে,

-” আমিও ওসব পারি না। তাছাড়াও আমি ওবাড়ির কাজের লোক! ওভাবে কি মালিকের ঘরে যেতে পারি তার অনুপস্থিতিতে? ভোর বাবা ডাকলে সে অন্য কথা ছিল!”
পাতা কিছু বলে না। স্কুটি স্টার্ট দেয়। ভোর আভারিকে হাতা নাড়িয়ে টাটা জানায়।তারপর পাতার পেট জড়িয়ে ধরে। পাতা ভোরকে বলে,
-” অন্য কাউকে বলতে পারতে রেডি করিয়ে দেওয়ার জন্য?”
ভোর মুখ গোমড়া করে জবাব দেয়,
-” আব্বু বলে সে না থাকলে নিজের কাজ নিজে করে নিতে! কাউকে বিরক্ত না করতে!”
পাতার কপাল কুঁচকে যায়।
-” আশ্চর্য! এতো ছোট ছেলে এখনি নিজের কাজ করবে কিভাবে? তোমার বাবা একজন গম্ভীর মুখো পাগল!”
ভোর হেসে উঠলো। সাথে পাতাও।

-“ভোর বাড়িতে কে কে আছে তোমার?”
-” আব্বু , দাদি, চাচ্চ, চাচিমনি , ফুপুমনি, আনি, রুপক , আভারি কাক্কু ,মিনু খালা আর পা..”
-” আর কে?”
-“কেউ না।”
ভোর বিড়াল শাবকটির কথা বলতে চেয়েছিল। সেও তো এখন তাদের বাড়ির সদস্য হয়ে গেছে ! কিন্তু মিসকে পাতাবাহারের কথা বলবে না।

-” সবাই খুব ভালো বাসে তোমাকে, তাই না?”
ভোর হাসিমুখে জবাব দেয়,
-” খুব ভালোবাসে। তবে সবাই আনি আর রুপককে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে! তবে আব্বু আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।”
পাতা হেসে দেয়।
-” তাই?”
-” হুম!”

খানিক নিরবতা। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া শা শা করে তীব্র বেগে ছুটছে। হর্ন বেজে চলছে কারো গাড়ির। পাতা স্কুটির বেগ নরমালেই রাখে। পাতা দোমানায় ভুগছে। ভোরকে ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করবে কি না? যদি কষ্ট পায় বা মন খারাপ করে?আবার কৌতুহলও জাগছে মনে। সে খানিকটা ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
-” ভোর তোমার মাকে তোমার মনে নেই?”

ভোর চুপ করে রয়। মা! মনে নেই তেমন তার। সব আবছা আবছা । তবে আদুরির কাছ থেকে বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি দেখেছে। দেখলে চিনতেও পারে এটা মা! মায়ের আদর, ভালোবাসা,যত্ন কিছু মনে পড়ে না তার! তার কাছে অবিরাম ভালোবাসা,আদর, যত্ন বলতে বাবাই। তাকে খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে দেয়,তার আবদার জেদ‌ পূরন করে, ঘুম পাড়িয়ে দেয় বুকে জড়িয়ে, অনেক আদর করে, আর অনেক অনেক অন্নেক ভালোবাসে। তার কিছু হলে বাবা অস্থির হয়ে পড়ে। বাবার চোখে জল‌ চলে আসে সেটাও দেখেছে। তার আবদারে বেশ কয়েকবার মায়ের সাথে ফোনেও কথা বলিয়েছে! তবে লাস্ট কবে কথা হয়েছে তার মনে নেই। হবে এক দেড় বছর আগে।তখন তো ভোর বেশ ছোট ছিল।

ভোরকে চুপ থাকতে দেখে পাতা দুঃখিত বোধ করে। ইশ ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলল।
-” ভোর ? আই এম স্যরি! আমার বলা উচিৎ হয় নি। প্লিজ মন খারাপ কোরো না। আজ ছুটি..”
তাকে বলতে না দিয়ে ভোর বলে,
-” স্যরি বলছেন কেন? আমি কিছু মনে করি নি। আর না মন খারাপ হয়। মা কে চিনি আমি। সামনে পড়লে চিনতে পারবো! তবে তার ব্যাপারে কিছুই মনে নেই আমার!”
পাতার মন খারাপ হয়। ইশ এ ব্যাপারে কথা না তুললেই পারতো। ছেলেটা না করুক তবুও কষ্ট হয়তো পেয়েছে।
-” মিস মা কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেল?”
পাতার চোখ ভরে ওঠে। ছেলেটা কত নিষ্পাপ মাসুম! এখনো মা বলে ডাকছে ওই মহিলাকে! আর এতো মিষ্টি আদুরে একটা ছেলে কে ছেড়ে ডিভোর্স নিয়ে চলে যেতে একটুও কি বুক কাঁপে নি!!
-” জানি না সোনা! তুমি মিস কর তাকে?”
-” না। আমি আমার আব্বুকেই ভালোবাসি অনেক গুলো! মা কে না! সে আমাকে ভালোবাসে না আমি কেন তাকে মিস করবো?”

পাতা স্কুটি থামিয়ে পিছনে ঘুরে হেলমেট খুলে ভোরকে জড়িয়ে গালে মুখে চুমু খায় কয়েকটা। এতো কষ্ট কেন ছেলেটার? অথচ সব সময় হাঁসি থাকে।
-” আইসক্রিম খাবে ভোর?চল খাই?”
ভোর মুখ ফুলিয়ে বলে,
-” আইসক্রিম খেলে আব্বু বকবে। আমার ঠান্ডা আছে!”
-“তাহলে অন্য কিছু?”
-” না। তবে আজ স্কুল ছুটি হলে আমাকে সাথে স্কুটিতে আনবেন?”
পাতা চোখ ছোট ছোট করে চায়। ভোর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
-” আজ কিন্তু হাফ স্কুল। সবার একসাথে ছুটি আমি জানি! প্লিজ মিস? আমার আব্বুও বাইক কিনেছে! অনেক সুন্দর! আমাকে ছবিও দেখিয়েছে! আচ্ছা আব্বুকে বলবো আপনাকেও বাইকে চড়াতে! ভালো হবে না মিস?”
পাতা ভোরের গাল টিপে কপালে চুমু দিয়ে স্কুটি চালানো শুরু করে। ছেলেটা এতো কথা জানে!!!
-” আমার স্কুটিতে চড়েছো বলে তোমার আব্বু বাইক কিনেছে? বাহ! ভালো!!”
-” মিস আপনি রাগ করবেন না প্লিজ! আপনার বাইকেও উঠবো তো! আবার আব্বুর বাইকেও। আপনাকেও সাথে নিব!”

পাতা হাসে। নাক উঁচু দাম্ভিক লোক! কিছুতেই ছোট হবে না!
-” তোমার আব্বু নেবে আমাকে? কখনো না! যে দাম্ভিক লোক তোমার আব্বু!!”
-” দাম্ভিক কি মিস? আর আব্বু নিবে তো! আমি বললে অবশ্যই নিবে! আমি আপনি আর আব্বু বাইকে চড়ে অনেক সময় ঘুরব ঠিকাছে?”
-” এই না! কিছু বলবে না! আমি চড়ব না তোমার ওই নাক উঁচু আব্বুর বাইকে!
ভোর এবার মুখ ফুলিয়ে বলে,
-” আব্বুর নাক উঁচু না। আমি কাল রাতে হাত দিয়ে মেপে দেখেছি! খুব সুন্দর নাক আমার আব্বুর! আপনি বলবেন না ওটা!”
পাতা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। ভোর প্রথমে মুখ ফোলালেও মিসের হাসি দেখে নিজেও হেসে দেয়। দুজনে হাসি ঠাট্টায় মেতে স্কুলে পৌঁছে যায়।

সরকার বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই। সবাই বলতে আসমা বেগম,আরিয়ান, রুবি,আদুরি। আনিকা আজ স্কুল যাই নি। ঘরে ঘুমিয়ে আছে রুপকের সাথে! আসমা বেগম টি টেবিলের উপর থেকে চশমাটা তুলে মুছে চোখে দিলেন। তার পাশে আরিয়ান বসা। আরিয়ানের হাত থেকে ছবিটা নিয়ে ভালোভাবে দেখতে লাগলেন। সামনে একটা মধ্যবয়স্ক লোক বসা। যার মাথায় চুলের সংখ্যা অতিশয় নাজুক। নেই বললেই চলে। তাই নাম ফরিদ হলেও সবাই টাকলু ফরিদ বলেই জানে। পেশায় একজন ঘটক। একেবারে প্রফেশনাল। আজ পর্যন্ত ১৬৭ টা বিয়ের ঘটকালি করেছে। আসমা বেগমের কথায় অরুণের জন্যও তিনিই মেয়ের খোঁজ খবর চালাচ্ছে।

বেশ কয়েকটি ছবিও দেখিয়েছে সরকার পরিবারকে। তন্মধ্যে একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে। একেবারে তাদের মনমতোই বলা চলে। মেয়েটার নাম‌ শ্রাবনী আহসান। এয়ার পোর্টে চাকরি করে। রিসেপশনিস্ট ! একত্রিশ বছরের শ্রাবনী ডিভোর্সি। একবছর হতে চলল ডিভোর্সের। কোনো বাচ্চা কাচ্চা নেই। দেখতে ভালোই! মেয়ের পরিবারের রেকর্ডও মন্দ নয় তাদের মতোই উচ্চবিত্ত। মেয়ের দুই ভাই বিবাহিত! বাবা রিটায়ার্ড প্রাপ্ত আর্মি অফিসার। মা গত হয়েছেন বেশ সময় হলো। সব মিলিয়ে আসমা বেগমের বেশ পছন্দ। মেয়ের বাড়িতে ঘটককে তাদের বিষয়ে কথা বলতে বলেছিলেন। ঘটক বলে তাদের কাছে পজিটিভ সাইন পায়। তাই এখন দেখা সাক্ষাত করিয়ে কথা বার্তা আগানোর বিষয়ে আলাপ চলছে। ঘটক টাকলু ফরিদ টি টেবিল থেকে আপেলের টুকরো তুলে মুখে পুরে বললেন,

-” ম্যাডাম মেয়ে মাশাআল্লাহ অনেক ভালো। কোনো খারাপ রেকর্ড পাবেন না। দেখতে শুনতে,কর্মে, আচার ব্যবহারে সব দিকেই প্রশংসিত। শুধু একটাই খুত মেয়ে ডিভোর্সি। আগের জামাইটা ভালো ছিলো না। আর্মির অফিসার ছিল! এক নাম্বারের মেয়েবাজ, নেশারু। মেয়ে জানতো না। ধীরে ধীরে জানতে পারে। বাঙালি মেয়ে স্বামীর সংসার সহজে কি ছাড়তে চায়? সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছে পারেনি। একদিন ঝগড়া বাঁধলে লোকটি মেয়েটির গায়ে হাত তোলে! ব্যস! মেয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে। তার পর ডিভোর্স! মেয়েটার বাপ ভাইয়েরা ভালো মানুষ। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। চাইলে আপনারাও খোঁজ খবর নিতে পারেন!”
আসমা বেগম সব শোনে মনোযোগ দিয়ে। আরিয়ানের কপালে ভাঁজ পড়ে খানিকটা!
সে খানিকটা ভেবে বলে,

-” সব শুনলাম! মেয়ে দেখতে মন্দ নয়। তবে আগে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে হবে। তার উপরে নির্ভর করে সবকিছু। আমাদের কথা কিছুই না। যেহেতু লাইফ টা তার! আর এর সাথে ভোরের জীবন জড়িয়ে আছে। ভাই আসুক আমরা কথাবার্তা বলি তার সাথে। তারপর আপনাকে জানাবো।”
রুবি সোফায় বসে আছে চিন্তিত ভঙ্গিতে। একটু পরেই অফিসের জন্য বেরোবে সে‌। আজ আর রুপমকে নিয়ে যাবে না। শাশুড়ির কাছেই রেখে যাবে। মেয়েটাও স্কুলে যাবে না। আর আরিয়ানে কোর্ট আজ বন্ধ আছে। তবে সে চিন্তায় আছে অন্য কারনে। মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লাগছে। তবে মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে।
-” শুনুন? অরুণ ভাইয়ের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু পেলে মেয়ে আর ভাইয়ের আগে কথা বলে নেওয়া উচিত। তারপর পরিবারের দেখাশোনা। না মানে আগে দুজন দুজনকে দেখুক জানুক?”

রুবির কথায় আরিয়ান সায় জানালো। আসমা বেগম কিছু বললেন না। তিনি ঘটককে কিছু টাকা দিয়ে বললেন,
-” আগে অরুণের সাথে কথা বলি তারপর আপনার সাথে কথা বলবো। এখন আসতে পারেন!”
লোকটি খুশি হয়ে টাকা পকেটে পুরে চলে গেল। যাওয়ার সময় মুঠো ভরে আপেলের টুকরো আর কমলার পিস নিতে ভুললেন না। লোকটি চলে গেলে আসমা বেগম একটা কমলার কোয়া নিয়ে আদুরির দিকে ঢিল দিল। আদুরি হঠাৎ ঢিল লাগায় চমকে ওঠে। সে এতক্ষন ঘুমে ঢুলু ঢুলু করছিল। তার ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি। মায়ের ঢিল দেওয়া কমলার কোয়া মুখে পুরে নিয়ে এক গাল হাসলো। আরিয়ান হেসে বলল,
-” রাতে কি ডাকাতি করতে বেরিয়েছিলিস নাকি? দিনের বেলায় ঘুমে ঢলে পড়ছিস?”
আদুরি রাগলো না। হেসে বলল,

-” আসলে দুইদিন পরেই আমাদের ট্যুর! তো বন্ধুরা মিলে কি কি করবো না করবো এসব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম অনলাইনে। খেয়ালই ছিল না সময়ের দিকে। তাই ঘুম পুরো হয়নি।”
বলেই হায় তোলে। আসমা বেগম মেয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল,
-” রাত ভর এসব চলে! আজ থেকে রাতে তোর ফোন আমার কাছে জমা দিবি। আর একটু জলদি উঠে ভোরকে রেডি করিয়ে দিতি? ছেলেটা কিভাবে কি করলো কে জানে!”
আদুরি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

-” কেন ভাই নেই?”
-” না। ভোরেই চলে গেছে। আর্জেন্ট কাজ ছিল বোধহয়!”
-” ইশ! ডাকলে পারতে মা?”
-” ডাকি নি ? কতবার দরজা ধাক্কা দিলাম! নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলি!”
রুবি বলে,
-” আমাকে বলতে পারতেন মা! বাচ্চা ছেলে কি থেকে কি রেডি হয়েছে!! খেয়েছে কিছু?”
আসমা বেগম টি টেবিল থেকে আঙুর নিয়ে মুখে দিল।
-” খেয়েছে! দুটো অমলেট খেয়েছে শুধু!”
আরিয়ান মায়ের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-” মা? তুমি রেডি করিয়ে দিতে পারতে? আনিকাকে তো তুমিই রেডি করিয়ে দাও!”
আসমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে,

-” অরুণ বোধহয় পছন্দ করে না আমি ওর ছেলের কোনো কাজ করি! খেয়াল করেছিস কি না জানিনা,আগে কিন্তু ভোর কত আবদার করতো দাদি এটা করে দাও? ওটা করে দাও? খাইয়ে দাও? মাথায় হাত বুলিয়ে দাও? আরো কতশত! অথচ এখন আর আসে না। দূরে দূরেই থাকে। সব কথা মিনুকে বলে! আগে অরুণ না থাকলে আমার হাতেই খেত! এখন মিনুর হাতে। একবার ভোরকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম কি বলেছিল জানিস? বলে,
-” আব্বু বলেছে তোমাকে দিয়ে কাজ না করাতে! তুমি তো বুড়ো হয়ে গেছো! কাজ করতে কষ্ট হয়! তোমার রেস্ট নেয়ার দরকার! তাই যা দরকার মিনু খালাকে বলতে!”

আমার খুব খারাপ লেগেছিল! বুঝতেও পেরেছি অরুণ কেন বলেছে! একদিন অনিকা খাওয়াচ্ছিলাম! ভোর এসে বায়না করে তাকে খাইয়ে দিতে। দুজনকে একসাথে খাওয়াতে চাইলাম! খাবে না একসাথে! ভোরকে বলেছিলাম ওকে খাইয়ে তারপর তোমাকে দিই। ভোর মানছিলই না।জেদ করছিল। তাই ধমক দিয়ে বলেছিলাম নিজের হাতে খাও! খাইয়ে দেব না। অরুণ কিভাবে জেনেছে জানি না। তবে এর পর থেকেই আর ভোর আমার হাতে খায় নি।”
আরিয়ানের মুখশ্রী গম্ভীর হয়ে যায়।

-” মা আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। ভোরকে একটু আকটু শাসন করলে বা উঁচু গলায় কথা বললেই এমন করে ভাই!! ভোরকে আমরাও ভালোবাসি ! একটু আকটু শাসন করতে পারি না?ভাইও তো করে! ভাইয়ের ধারনা হয়তো আমরা ভোরকে ভালোবাসি না! সেদিনো কিভাবে মারলো ছেলেটাকে আমার কথার জেদ ধরে!!”
রুবি আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-” এরকম নাও হতে পারে। মা ভোর ছোট সেদিনের বকা হয়তোবা মনে রেখেই দূরে থাকে। ছোট মানুষ কি থেকে কি বলেছে! আপনি কষ্ট পাবেন না।”
আদুরিও রুবিকে সায় দিল।

-” ভাবি ঠিক বলেছে। অরুণ ভাই মাকে সহ আমাদের সবাইকেই ভালোবাসে। আর ভোর তো তার প্রাণ ভোমরা। ছেলেকে নিয়ে একটু বেশিই পসেসিভ। তোমরা আর এ নিয়ে ঝামেলা কোরো না। ভাই যদি কিছু মনে করে?”
আসমা চকিত চায়। সে চেনে অরুণকে। অনেক অভিমানী ছেলেটা। কষ্ট পেলে বুঝতে দেবে না। কিন্তু নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে সরে যাবে।
-” আরিয়ান কিছুই বলবি না অরুণকে। ও যা ভাবে ভাবতে থাকুক! আমরা তো ভোরকে কম ভালোবাসি না! খবরদার কিছু বলবি না! তোর বাবা নেই আর! কিছু হলে বাড়ি থেকে ভোরকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে এক সেকেন্ড সময় নেবে না!!”
-” মা তবুও?”
-” বলছি তো না! যেমন চলছে চলতে দে!”

অরুণ নিজের কেবিনে বসে গয়নার ডিজাইন চেক করছিল। সকাল ভোরেই চলে এসেছে আর্জেন্ট কাজ থাকায়। আসলে আজ আর্জেন্ট কিছু ডিজাইন বানাতে হবে। সকাল ভোরে এক ক্লাইন্ট ফোন করে বেশ কিছু অথেন্টিক গয়নার কালেকশন চায় বিয়ের জন্য। সেটাও কালকের মধ্যেই দিতে হবে। সেটাই সেট করে কারিগরকে দিয়ে আবার বানাতে হবে। অরুণের কাজ ডিজাইন দেয়া তারপর কারিগর সামলে নেবে। বেশ কিছু ডিজাইন সিলেক্ট করে অরুণ সেই ক্লাইন্টকে ইমেইল করে! ক্লাইন্টের পছন্দ হয়। সে বেশ কিছু গয়না অর্ডার দেয়। অরুণ ডিজাইন গুলো ম্যানেজারকে দেয় কারিগরকে দিতে!

সাথে এক কাপ কফির অর্ডার দেয়। সকাল থেকে পেটে কিছুই পড়ে নি। এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। অরুণ কেবিনের সোফায় বসে গা এলিয়ে দেয়। ছেলেটা কি করছে? এলার্জিতে এখনো কি শরীর চুলকাচ্ছে? অসুস্থ ছেলেকে রেখে আসতে মন একটুও সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু পুরনো ক্লায়েন্ট বেশ বড় পার্টির! না করতেও পারছিল না। ম্যানেজার সামলাতে পারতো তবে যদি গড়বড় হয়!! তাই এসেছে! হাত ঘড়িতে সময় দেখে ,ছেলেটার স্কুল ছুটি হয়েছে! একটা কল করা যাক আভারিকে! ফোন বের করতেই শুভর কল আসে। অরুণের কপালে ভাঁজ পড়ে। এই শালা কল করার আর সময় পেল না?

-” হ্যালো! অরু?”
অরুণ চোখ উল্টিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে। এই বন্ধু প্রজাতি কখনো ঠিক হবার নয়!
-“হাউ ম্যানি টাইমস হ্যাভ আই টোল্ড ইউ নট টু কলড অরু? সে ওয়ান সামথিং ওয়ানস , ইউ ডোন্ট হেয়ার ইট, রাইট? ইফ ইউ সে অরু ওনস এগেইন? আই উইল কিক ইউর অ্যাস সো দ্যাট ইউ কান্ট সিট ওন আ চেয়ার ইন ইওর হোল লাইফ!”
শুভ হেসে ওঠে।

-” হাউ ম্যানি টাইমস উইল ইউ সে দিস?”
অরুণ এবার হেসে ওঠে।
-” ইভরি টাইমস! আনটিল ইউ গাইস আর গেট বেটার!”
-” ইন ইউর ড্রিমস! শোন কথা আছে তোর সাথে?”
-” বল?”
-” আজ ভোরকে দেখলাম। সকালে তার পাতা মিসের সাথে স্কুটারে চড়ে যাচ্ছে দুজনে হাসতে হাসতে!”
অরুণের ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়। মিস পাতাবাহারের সাথে গেছে? এই ভোরটাও না!

-” ওহ্! এটা বলার জন্য ফোন দিয়েছিস?”
-” না রে! তবে আমি একটা জিনিস ভেবে দেখলাম! পাতা ভোরের আম্মু হলে মন্দ হয় না! মেয়েটা ভালোই! ভোরকে ভালোবাসবে আই গ্যারান্টি!”
অরুণের হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে নেয়। ঝটপট দু হাতে ক্যাচ করে নেয়।

-” পাগল হয়েছিস তুই? মেয়েটা কতো ছোট? আমার সাথে কেমনে কি ভাই? পাবনা সিট বুক কর জলদি!”
-” আরে ক্ষ্যাপা ষাঁড় ক্ষেপিস না শোন? পাতা মেয়েটা আমার ডিপার্টমেন্টের! নম্র ভদ্র ! পড়াশোনায় টেনেটুনে পাশ হলেও সব টিচারদের কাছে বেশ পরিচিত! কেন? সেটা অন্যদিন বলবো! ভোর যেহেতু পছন্দ করে মা হিসেবে তাকে চায়! সেহেতু একটা চান্স নেওয়াই যায়! আর পাতা আর ভোরকে মা ছেলে হিসেবে বেশ মানাবে! যদিও পাতার সাথে তোকে একটুও মানায় না আমরা মানিয়ে নেব কি বলিস?

-” তুই যদি আমার সামনে থাকতিস এক থাপ্পড়ে বত্রিশ পাটি খুলে ফেলতাম! আমার সাঁইত্রিশ চলছে।আর ওই মেয়েটার কত হবে বাইশ তেইশ!!এক যুগেরও‌ বেশি ডিফারেন্স!! আর মেয়েটাও অবিবাহিত! আমি ডিভোর্সি পাঁচ বছরের এক বাচ্চার বাপ! ওর পরিবার তো বসে আছে আমার জন্য!! যে অরুণ সরকার আসুক মেয়ে তাকেই দিব!! আহম্মক মাথামোটা !মাথা আছে না গেছে তোর?”

-” পাতার টোয়েন্টি ফোর প্লাস! ফাইভও হতে পারে! মানছি এজ ডিফারেন্স একটু বেশি! কিন্তু ভোরের জন্য চেষ্টা করাই যায় তাই না? ছেলেটার একটু মায়ের ভালোবাসা দরকার। সব সময় হাসিখুশি থাকলেও যখন কোনো মাকে বাচ্চা আদর করতে দেখে কেমন করে তাকিয়ে থাকে খেয়াল করেছিস?…”
অরুণ চুপ হয়ে যায়। সে অনেকবার দেখেছে ভোরের চাহনি! রুবি যখন আনিকাকে আদর করে ,খাইয়ে দেয়, পড়ায় হা করে তাকিয়ে থাকে তার কলিজাটা। ওপাশ থেকে শুভ বলেই যাচ্ছে! অরুণের সেদিকে মনোযোগ নেই।সে কান থেকে ফোন নামিয়ে কেটে দিল। মাথাটা ধরেছে বেশ! ফোনটা বাজছে শুভ আবার কল দিয়েছে। অরুণ কেটে দিল। শুভ থামে না। আবার কল লাগায়। অরুণ কেটে দেয়। পুনরায় কল আসলে অরুণ চোয়াল শক্ত করে! শক্ত একটা ঝাড়ি দিবে প্রস্তুতি নেয়। কল রিসিভ করে কিছু বলতে নিবে ওপাশ থেকে সেই সুযোগ দেয় না। গড়গড় করে বলতে থাকে,

-” স্যার ভোর বাবাকে পাচ্ছি না!”
অরুণের হৃৎপিন্ড যেন স্পন্দন করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি বললো ? সে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আভারি ভাই লেখা! ভোরকে পাচ্ছে না মানে কি?
-” আভারি ভাই!!”
আর গলা দিয়ে বের হয় না। কণ্ঠস্বর আটকে গেছে যেন। আভারি বুঝতে পেরে বলতে শুরু করে,

-” আসলে স্যার স্কুল ছুটির পর ভোর ওর ওই ম্যাডামের বাইকে চড়েই যাইতেছিল। আমরা তাদের পিছনে আছিলাম। জ্যামে পইড়লে ওনার বাইক আগে চইলে যায়। আমরা পিছনে পইড়ে যাই।জ্যাম ছুইটলে আমরা আর তাদের পাই না। ভাবেছিলাম বাড়িতে চইলে এসেছে তাই বাড়ি গিয়ে দেখি সেখানেও নাই! এখন স্যার কি করবো?”
অরুণ মাথা ঠান্ডা করে। পাতাবাহারের সাথে আছে হয়তোবা!

পাতা বাহার পর্ব ৯

কল করে জানা যাক। আর আজকে ভোরকে শক্ত করে বকে দেবে! কল লিস্টে পাতার নাম্বার বের করে । তখনই কেউ নক করে অরুণ পাতার নাম্বারে ডায়াল করে আসার অনুমতি দেয়। অরুণ গায়ের ব্লেজার টা খুলে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো পিয়নকে কফি নিয়ে আসতে দেখে বলে,
-” আমি বেরোবো! কফি খাব না। অন্য কাউকে অফার করো!”
বলেই মোবাইল কানে ধরে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

পাতা বাহার পর্ব ১০(২)