পাতা বাহার পর্ব ১১
বেলা শেখ
পাতা নিজেও হাত ধুয়ে ভাত মাখিয়ে ভোরের মুখে দেয়। ভোর হাসিখুশি মুখে পুরে খেতে থাকে। নাহ খাবারটা মজার! তখনই ফোনটা পুনরায় বেজে ওঠে পাতার! সবাই তার দিকে তাকিয়ে! পাতা বাম হাতে রিসিভ করে কানে ধরে। হ্যালো বলার সুযোগই পায় না!
-” মিস পাতাবাহার! আমি আপনাদের বাড়ির সামনে! দয়া করে ভোরকে নিয়ে আসুন! রাইট নাও!”
পাতার ভিতরটা কেঁপে ওঠে খানিক! কি ভয়ানক গম্ভীর আওয়াজ! ভোর সহ সবাই পাতার দিকে চেয়ে পাতা তাদের দিকে চেয়ে অরুণকে বলে,
-” নিয়ে আসছি এই দশ মিনিট!”
-” এক মিনিটও না! জলদি নিয়ে আসুন নইলে বাচ্চা কিডন্যাপের কেস ঠুকে দিব!”
পাতা দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে ভয়াবহ কয়েকটা গালি দেয়। যেগুলো অরুণ সরকার শুনলে তাকে হয়তোবা রিমান্ডে পাঠাতো! পাতা কল কাট করে! এক মিনিট? দেখ অপেক্ষা কত প্রকার ও কি কি তোকে বুঝিয়ে দেব! ভোরের মুখে লোকমা দিয়ে বলে,
-” ভোর ধীরে ধীরে খাও! কোনো তাড়াহুড়া নেই!”
ভোর মুখে ভাত নিয়েই চিবোতে চিবোতে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আব্বু ছিল কলে?”
পাতা মাথা নাড়ে। লাবনী আক্তারের ভ্রুযুগল কুঁচকে যায়! সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-” তোকে কেন কল করেছিল? আর নাম্বারই বা পেল কোথায়?”
পাতা অসহায় বোধ করে! মায়ের ভাবনা কি হতে পারে ভেবেই! লতা বুঝতে পেরে বলল,
-” আম্মু? পাতা ভোরের টিচার! তো ভোরের বাবার কাছে ছেলের টিচারের নাম্বার থাকবে এটা স্বাভাবিক! আর ভোর এখানে এসেছে তাই হয়তো কল করেছে!”
লাবনী আক্তার বিশ্বাস করে। তবুও কেমন যেন মন খচ খচ করে! হুট করে একটা বাচ্চা আনলো! এখন বাচ্চার বাপ ডিভোর্সি! তার সাথে পাতার কোনো কানেকশন নেই তো আবার! নাহ কি ভাবছে সে! পাতা ওমন মেয়ে মোটেই না! তিনি পাতাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-” কি বললো ওর বাবা?”
পাতা দড়িমসি করে জবাব দিল,
-” ওর বাবা নিতে এসেছে ওকে! বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বলল!”
ভোরের মুখ খানা চুপসে যায়। আজ তাকে বাবা সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে না দেয়!! লাবনী আক্তার পাতাকে ধমকের সহিত বললেন,
-” তো ভেতরে আসতে বলবি না? নূন্যতম সামাজিকতা নেই তোর মাঝে! লুবমান বাবা যা তো? ওনাকে ভিতরে নিয়ে আয়! বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে কেমন দেখায়! যাহ?”
পাতা ধমক খানা গিলে নেয়! ওই নাক উঁচু ম্যানারলেস লোকের সাথে আবার সামাজিকতা দেখাতে হবে!! পারলে দুই একটা গালি দিয়ে ঘার ধরে বের করে দিত!না ঘার ধরতে তার মই চড়তে হবে ! জিরাফ কিনা!! তার নামে কিডন্যাপারের কেস ঠুকে দিতে চায়!! আর কতগুলো ধমক দিল। নেহাৎ সে ভদ্র শান্তশিষ্ট মেয়ে নইলে দেখিয়ে দিত পাতা কি জিনিস! লুবমান বেরিয়ে যায় রুম্পাকে কোলে নিয়ে। রাস্তায় আসতেই দেখে বাড়ির পাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে! গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে এক ভদ্রলোক। লুবমান এগিয়ে যায় সেদিকে। লোকটির চোখে সানগ্লাস! কালো সুট বুট পড়ে এদিকেই তাকিয়ে! লোকে প্রথম দেখায় বলে দেবে সুদর্শন সুপুরুষ! লম্বা চওড়া মুখে গাম্ভীর্যভাব! সবমিলিয়ে ঝাক্কাস! লুবমান এগিয়ে অরুণের সামনে দাঁড়ায়! এক হাত বাড়িয়ে বলে,
-” আমি লুবমান ইসলাম! আপনি নিশ্চয়ই অরুণ সরকার? ভোরের বাবা?”
অরুণ হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে! কে এই ছেলে?তাকে চিনে কিভাবে!তাকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। লুবমান নিজেই উত্তর দেয়।
-” আমি ভোরের টিচার পাতার ভাই! ভোর আমাদের বাড়িতে! ভিতরে চলুন?”
অরুণ সানগ্লাস খুলে হাতে নেয়!
-” নট নেসেসারি! আপনি প্লিজ ভোরকে নিয়ে আসুন! আমাকে জলদি ফিরতে হবে!”
লুবমান হেসে রুম্পাকে অন্য কোলে নিয়ে বলল,
-” তা হবে না মশাই. ! আপনি ভিতরে চলুন তারপরেই ভোরকে পাবেন। নইলে এতো কিউট বাচ্চা যেতে দিচ্ছি না!”
অরুণ ঠোঁট চেপে রাখে। কিছু ভেবে বলে,
-” ঠিকাছে চলুন!”
লুবমান হেসে পথ ধরে। অরুণ তার পিছু পিছু। রুম্পা অরুণের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে পলকই যেন ফেলছে না। অরুণ হাত বাড়িয়ে তার মুখ বন্ধ করে আঙ্গুল তার ঠোঁটে ধরে চুমুর মতো নিজের গালে ছোঁয়ায়! যেন রুম্পা তার গালে চুমু দিল! রুম্পা হেসে ওঠে। অরুণের অধরকোনেও হাসি ফুটে ওঠে। কি মিষ্টি বাচ্চা। তার একটা মেয়ের শখ ছিল। মায়ের মতো মেয়ে! শুনেছে মেয়েরা মায়ের মতো শাসন করে ,ভালোবাসে। তাই! ভোরের বেলায়ও মেয়ের আশায় ছিল! কিন্তু উপরওয়ালা আব্বু দিয়েছে!! এতেও সে খুশি!
অরুণ ভিতরে ঢুকে। একতলা আদর্শ মধ্যবিত্তের বাড়ি! ছোট ড্রয়িংরুমে দুইটা ডাবল সোফা একটি সিঙ্গল। সামনে ছোট এল ই ডি টিভি। সোফার পরে ডাইনিং টেবিল তার পর কিচেন! ডায়নিং টেবিলেই সবার আগে নজর যায়! তার কলিজাটা চেয়ারে বসে! মুখের একপাশ দেখা যাচ্ছে! মিস পাতাবাহার তার পাশে দাঁড়িয়ে খাইয়ে দিচ্ছে বোধহয়! ছেলেটাও না! আদর পেতে অস্তাদ! নিশ্চয়ই খাইয়ে দেওয়ার আবদার জুড়ে দিয়েছি! অরুণকে ভিতরে ঢুকতে দেখে লাবনী আক্তার এগিয়ে আসে! অরুণ তাকে সালাম দেয়! ব্যস লাবনী আক্তারের সন্দেহ দূর! এত বড় ঘরের ছেলে তাদের বাড়িতে! তার উপর সুন্দর করে সালামও দিল! তিনি হেসে সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,
-” আমি পাতার মা! কি মিষ্টি ছেলে তোমার! বস বাবা?”
অরুণ সিঙেল সোফায় বসে! লুবমান অপর পাশে রুম্পাকে নিয়ে বসে। ছোট রুম্পা অরুনের দিকে হাত বাড়িয়ে বু বু করে! অরূণ তাকে কোলে নেয়। রুম্পা অরুণের গালের চাপ দাঁড়ি ধরে টান দিয়ে খিলখিলিয়ে হাসে। তার মিষ্টি হাসি অরুণের অধরকোনেও হাসি ফুটে তোলে। লতা ছেলের খাওয়া শেষ হওয়ায় হাত ধুয়ে অরুণের সামনে লুবমানের পাশে বসে অরুণকে বলে,
-” ভালো আছেন ভাইয়া?”
অরুণ লতার দিকে ছোট ছোট চোখে তাকায়। চেনা চেনা লাগছে কেমন যেন! কোথায় দেখেছে?
-” আই থিংক আই নো ইউ! ইউ?”
লতা মুচকি হেসে বলে,
-” আমি লতা! আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম! যদিও আপনার বেশ জুনিয়র! তবে আপনাকে চিনি! আমার স্বামীর নাম রাতুল ভুঁইয়া!”
অরুণ খানিকটা ভেবে বলে,
-” আপনাদের লাভ ম্যারেজ! রাতুল নামক ছেলেটা আপনাকে চিঠি দিতে গিয়ে ভুলে আমাদের ডিপার্টমেন্টের একটি মেয়েকে দেয়! এতে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডের সাথে অনেক ঝামেলা হয়েছিল! তখন আমরা মিলেই তো সলভ করলাম! এম আই রাইট?”
লতা জিভে কামড় দিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে মায়ের দিকে চায়! লাভনী আক্তারের চোখ কপালে! তারা তো এসব বিষয়ে জানে না!তারা পারিবারিকভাবে বিয়ে পড়িয়েছে। রাতুলের পরিবার সম্মন্ধ আনে তারা যাচাই-বাছাই করে মেয়ে দেয়! কিন্তু এখন জানতে পারল এটা পারিবারিক ছিল না! পুরাই লাভ ম্যারেজ! তিনি মেয়ের দিকে কটমট চোখে চায়! লতা হে হে করে হাসে। লুবমান জোরে হাসতে শুরু করে।
-” আপু দেখ সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না!”
অরুণ বোঝে না কিছু! লুবমান তাকে সব খুলে বলে! অরুণ সরকার শুনে লতাকে বলে,
-” বাহ! অনেক দিনের লুকিয়ে থাকা রহস্যের খোলাসা হলো বলে!”
লাবনী আক্তার শুনে আর প্রতিক্রিয়া করলেন না! যেভাবেই হোক বিয়েটা! মেয়ে খুশি আছে এতেই শুকরিয়া! তিনি অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-” বাবা হুট করে এসেছে বাচ্চা ছেলেটা! কিছুই রান্না করতে পারি নি! ঘরে যা আছে তাই খেতে দিয়েছি! তুমিও বস টেবিলে? এই মধ্যবিত্তের ঘরে আজ মেজবান হয়ে? আসো?”
অরুণ বিনয়ের সাথে বলেন,
-” না আন্টি! আজ না অন্যদিন! আমার জরুরি কাজ আছে! জলদি যেতে হবে! ভোর জলদি শেষ কর?”
ভোর বাবাকে দেখেছে আগেই! তবুও চুপটি করে বসে আছে! বাবা না আবার বকা দেয়!পাতা ভোরকে চোখে আশ্বাস দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকে!
লাবনী আক্তার শুনলেন না অরুণের কথা।
-” খেতে আর কত দেড়ি হবে! আর না হয় একটু দেরি হলো! কিছু হবে না! তুমি বস তো বাবা? নাকি মধ্যবিত্তের ঘরে খাবে না!”
অরুণ শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে চায়! লতা, লুবমানও অনুরোধ করে! পাতা দূর থেকেই সব দেখছে! এই নাক উঁচু লোক তাদের বাড়িতে খাবে? অসম্ভব! আম্মু আপুর সাথে কথা বলল এই অনেক!! নইলে অহংকারে তার পা মাটিতে পড়ে না! এই লোক যদি তাদের বাড়ি খায় সে তার নাম বদলে মর্জিনা রাখবে! হুহ!
অরুণ বিভ্রান্ত হয় ! কি করবে! সবাই এতো অনুরোধ করছে! আর তাছাড়া ক্ষিধে লেগেছে অল্প! সকাল থেকে পেটে কিছুই পড়েনি!
-” আচ্ছা ঠিক আছে! তবে আমার তাড়া আছে!”
লাবনী আক্তার খুশি হয়ে ডায়নিং এ যায়। লতা অরুণের কোল থেকে মেয়েকে নেয়। অরুণ লুবমানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” তুমিও আসো!”
লুবমান উঠে যায়! লাবিব সামনে দাঁড়িয়ে! অরুণকে দেখে ভোরের দিকে চায়! ভোর মিষ্টি হাসে!
-” আমার আব্বু!”
অরুণ ছেলের দিকে তাকাতেই ভোরের মুখের হাসি গায়েব । কাঁচুমাচু করে গালে ভাত চিবোতে থাকে! পাতার দিকে চায় অরুণ! পাতার অবস্থাও সেম! লুবমান লাবিবকে দেখিয়ে বলে,
-” আপুর ছেলে লাবিব!”
অরুণ তার মাথার চুল এলোমেলো করে দেয়। বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে এসে ভোরের পাশে বসে! পাতা একটু সরে যায়। লাবনী আক্তার অরুনের সামনে প্লেট দিয়ে ভাত দেয়। অরুণ অল্প খানিকটা ভাত দেয়ার পরেই থামিয়ে দেয়,
-” হয়েছে আর না! লাগলে চেয়ে নেব!”
লাবনী আক্তার খুশি হয়! দুটো চিংড়ি, ভাজি, ডিম , ও কাঁঠালের তরকারি দেয়! অরুণ স্বাভাবিকভাবেই সব শেষ করে! পাতা মনে মনে তাকে ধুয়ে দিচ্ছে! শালা তোর জন্য আজ নিজের নামটা মর্জিনা রাখতে হবে! নাহ! রাখবে না পাতা! এতে কার কি ? কেউ তো আর জানে না! সে তো মনে মনেই পণ করেছিল! কেউ শোনেনি! ভোরের খাওয়া শেষে পাতা তার মুখ পুছে দেয়! ভোর পাতার ওড়নার কোনা টেনে মুখ মুছে মিষ্টি হাসে! পাতা তার গাল টিপে দেয়! অরুণ আড়চোখে দেখে সব! কলিজাটা এই মেয়ের সাথে বেশ সহজেই মিশে গেছে! অবশ্য সবার সাথেই সহজেই মিশে! তবে মিস পাতাবাহারের ব্যাপারটা আলাদা! ভোর সবার মতো তার থেকেও মায়ের মতো ভালোবাসা, আদর পেতে চায়! সবাই না দিলেও মেয়েটা কিছুটা হলেও আদর করে! তার জন্যই তো তার আগেপিছে থাকতে পছন্দ করে! হঠাৎ করে শুভর কথা গুলো কানে বাজে!
খাওয়া দাওয়া শেষে অরুণ ,ভোর সবার থেকে বিদায় নেয় চলে যাওয়ার জন্য! লাবনী আক্তার ভোরের জন্য বৈয়াম ভর্তি মুড়ির মোয়া দিলেন।
-” আরেকটু থেকে যেতে পারতে? বাচ্চাটার সাথে সেভাবে কথাই হলো না!”
ভোর বাবার কোলে আছে। তার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
-” আব্বু আরেকটু থাকি?”
অরুণ শান্ত চোখে চায়! ছেলেটা এতো ছোঁচো স্বভাবের কিভাবে হলো! তাদের পরিবারে আর কেউ তো এমন না! ভোর বাবার চাহনি দেখে চুপ করে যায়! পাতা খেয়াল করে সবটা! অরুণের দিকে তাকিয়ে ভেংচি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে ‘শালা’। অরুণে কানে পৌঁছায় না তবে পাতার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায়! মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো অষ্টাদশী রমনী! গোল জামার সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো! কাঁধ থেকে সামান্য নিচে গড়িয়ে পড়া চুল ঝুটি করে রেখেছে! ছোট বাচ্চাদের মতো সামনের চুল গুলো ছোট ছোট করে কাটা সেগুলো কপালে পড়ে আছে। এই হিট এলার্টের তাপমাত্রায়ও গরম লাগে না, নাকি!! গরম লাগলে কি? মেয়েদের আগে ফ্যাশন!তারপর বাদবাকি! অরুণ ছেলেকে কোলে নিয়ে মেইন দরজার পাশে শু জোড়া এক হাতে তুলে নেয়! তারপর বেরিয়ে আসে ঘর থেকে! বেরোতেই সামনে পাতার বাবা আতিকুর ইসলাম সামনে পড়ে! তিনি অরুণ ও ভোরের দিকে একপল চেয়ে পিছনে থাকা সকলের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চায়! অরুণ তার চাহনির মানে বুঝতে পেরে ভোরের শু জোরা বাম হাতে নিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে,
-” আমি অরুণ সরকার! এটা আমার ছেলে ভোর সরকার! মিস পাতার স্টুডেন্ট! বায়না ধরে এসেছিল। আমি নিতে এসেছিলাম!”
আতিকুর ইসলাম হাত মেলালেন। হালকা হেসে বললেন,
-” অরুণ সরকার মানে..!”
-” সরকার জুয়েলারি ফ্যাশন হাউসের ওনার!”
আতিকুর ইসলামের হাসি চওড়া হয়!
-” গরীবের বাড়িতে হাতির পারা! অবাক হলাম!!”
অরুণ হাসলো!
-” আসতে পারি না?”
পাতা অবাক গাম্ভীর্যে ঠাসা অরুণ সরকার হাসছে! এই প্রথম হাসতে দেখলো! নাহ লোকটাকে হাসলে বেশ লাগে! একদম ক্রাশ খাওয়ার মতো! মর্জিনা থুক্কু পাতা এসব কি ভাবিস! অরুণ সরকার শুনলে তোকে আস্ত রাখবে না!
আতিকুর ইসলাম হেসে বললো,
-” অবশ্যই আসতে পারেন! তা এখনি কোথায় যাচ্ছেন? বসুন?”
-” নাহ আর্জেন্ট কাজ পড়েছে! অন্যদিন! আসি!”
বলেই পা বাড়ায়! ভোর সবাইকে টাটা দেয় এক হাত নাড়িয়ে অন্য হাতে বৈয়াম! লতার কিছু মনে পড়ায় পাতাকে বলে,
-” ওর শার্ট?”
পাতা জিভে কামড় দিয়ে রুমে গিয়ে শার্ট নিয়ে আসে। আতিকুর ইসলাম সহ সবাই ড্রয়িং রুমে। পাতা শার্ট টা নিয়ে বেরিয়ে আসে। অরুণ ভোরকে কোলে নিয়ে গাড়ির কাছে চলে গেছে। পাতা দৌড়ে সেখানে যায়। অরুণ ভোর ঘুরে তার দিকে চায়! পাতা হেসে বলে,
-” ভোরের শার্ট! খুলে দিয়েছিলাম! এই নিন!”
অরুণ পাতার হাত থেকে শার্ট নিয়ে ভোরের দিকে চায়! গায়ে একটা টি শার্ট! সাইজে ভোরের থেকে বড়! এটা কার? ভোর ইশারায় পাতাকে কাছে ডাকে! পাতা খানিকটা এগিয়ে যায়। ভোর আরো কাছে আসতে বলে! পাতা ইতস্তত বোধ করে। আরো এগিয়ে গেলে তো ওই নাক উঁচু লোকের অনেকটা কাছে চলে যাবে। ভোর যে তারই কোলে! অরুণ ছেলের গতিবিধি আগেই ধরতে পারে! পাতার কাঁচুমাচু চেহারা দেখে বেশ লাগে! ভোর বিরক্ত হয়ে বলে,
-” মিস আসুন না!”
অগত্যা পাতা এগিয়ে যায়! ভোর ঝুঁকে পাতার গালে চুমু দিল! পাতা মুচকি হাসে! বাচ্চাটা এতো আদুরে! তবে সে খানিকটা লজ্জা পায়!অরুণের দৃষ্টি পাতাতেই নিবদ্ধ! মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে! সিরিয়াসলি! এই ছোট বাচ্চার চুমুতেই!! বিয়ের পর এই মেয়ের কি হবে উপর ওয়ালাই জানে!ভোর পাতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” মিস আমারটা?”
পাতার চোখ ছোট ছোট হয়ে যায়! বাহ এই ছেলে দেখি সুবিধাবাদী! আদর দিয়ে আবার আদর আদায়ও করে নিবে। পাতা ভোরের গালে চুমু দেওয়ার জন্য হালকা উঁচু হয় নাগাল পায় না! এই মেহগনি গাছের কোলে কি না! ভোর খানিকটা ঝুকে। অরুণ তাকে সোজা করিয়ে দেয়! পাতা ভোরের কোমর জড়িয়ে রাখা অরুণের হাতের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়। টুপ করে ভোরের গালে চুমু দিয়ে বিজয়ী হাসে! অরুণ ঝট করে পাতার হাত সরিয়ে দেয়! পাতা চোয়াল ঝুলে যায়! সে কি কারেন্ট নাকি! এভাবে সরিয়ে দিল! নাকি তার গলায় ঝুলে পড়েছিল! আশ্চর্য! এটিটিউড দেখ মনে হয় মেয়েদের কাছেই ঘেঁষে না!
পাতা জোর করে মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
-” আবার এসো ভোর?”
ভোর মাথা নাড়ে।
-” ওকে মিস! আপনাকেও আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবো! কেমন?”
পাতা হাসে।
-” ঠিকাছে! আর তুমিও এসো! তবে তোমার এই নাক উঁচু বাপকে আনবে না!”
অরুণ শান্ত দৃষ্টিতে পাতার দিকে তাকিয়ে। পাতার কথা শুনে হালকা হাসে! পাতা সেদিকে চোখ ছোট ছোট করে চায়! সে তো ঝগড়াঝাঁটির প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে । কতবড় সাহস তাকে কিডন্যাপার বানিয়ে কেস ঠুকতে চায়! কতগুলো ধমক দিল! আর এখন হাসছে!
অরুণ ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলে,
-” মিস পাতাবাহার আই এম স্যরি! আসলে তখন মেজাজ ঠিক ছিল না! আভারি ভাই ফোন করে বলে ভোরকে পাওয়া যাচ্ছিল না! শুনেই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়! ছেলেটা আমার প্রাণ!”
পাতা অবাক হয় বেশ! নাক উঁচু অহংকারী ম্যানারলেস লোকটা তাকে স্যরি বলছে? আবার এক্সকিউজেসও দিল! নাহ লোকটা অতটাও নাক উঁচু না!
-” স্যরি বলতে হবে না! আমি বুঝতে পেরেছি!”
-“আসছি!”
বলে গাড়ির জরজা খুলে ভোরকে বসায়! পাতা সেখানেই দাঁড়িয়ে।
-” শুনুন?”
অরুণ থমকে যায়! ঘার ফিরিয়ে বলে,
-” জি?”
-” আমি পাতা নট পাতাবাহার!”
-” একি হলো!”
-” এক হলো না! পাতা! বাহার কোত্থেকে এলো শুনি?”
অরুণ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুজে গম্ভীর গলায় বলে,
-” আপনি ঝগড়া করতে এসেছেন?”
পাতা ঘাবড়ে মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে না বোঝায়! এই তো ঠিক ছিল হঠাৎ এভাবে দৈত্যের মতো করে বলছে কেন?
অরুণ গাড়িতে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। অরুণ দরজা লাগিয়ে জানালার কাচ নামিয়ে বলে,
-” ওই মিস পাতাবাহার আপনাকে ঘাবড়ে গেলে ব্যাঙের বচ্চার মতো লাগে!”
পাতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়! ব্যাঙের বাচ্চা বললো তাকে!
-” আর আপনাকে ক্ষ্যাপা ষাঁড় লাগে! সব সময় ফোঁস ফোঁস করে যে সেরকম! ”
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে,
-” আমি দ্বিধায় আছি! ভোরের মতো মিষ্টি কিউট ছেলে আপনার মতো ষাঁড়ের কি করে হতে পারে! নিশ্চয়ই চুরি করে এনেছেন তাই না?”
অরুণ গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে পাতার দিকে চায়!পাতা রেগে আছে বোঝাই যাচ্ছে। রাগে আরেকটু ঘি ঢালতে বলল,
-” মিস পাতাবাহার রাগলে আপনাকে বিড়ালের বাচ্চার মতো লাগে!”
গাড়ি শা শা করে চলে যায়! পাতা সেদিকে তাকিয়ে থাকে অপলক।
অরুণ জানালা লাগিয়ে ভোরের দিকে চায়! ভোর মিটি মিটি হাসছে! তার তাকানো দেখেই হাসি গায়েব! মুখ কাচুমাচু করে কিউট করে বিড়াল ছানার মতো চেয়ে আছে! অরুণ ভেবেছিল বেশ বড়সড় ধমক দিবে। এভাবে চাইলে ধমক দেয়া যায়!! তবুও অল্প স্বল্প দেবেই। চোয়াল শক্ত করে ধমক দিবে তখনই ভোর ঝড়ের গতিতে জড়িয়ে ধরে গালে টপাটপ চুমু খেয়ে বলে,
-” আব্বু! আমার কলিজা!”
অরুণ বকবে কিভাবে একে! এভাবে বললে বকা যায়? নাহ যায় না! সে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” আব্বুকে বশ করার ভালো পন্থা! হুম?”
ভোর হাসে। মিসের ট্রিক কাজে দিয়েছে তবে।
-” মিস বলেছিল এভাবে আদর করলে তুমি বকবে না! দেখ তুমি বকলে না। আই লাভ ইউ আব্বু?”
-” ওহ মিস পাতাবাহারের বুদ্ধি!! শিখিয়ে দিয়েছে তোমাকে? আচ্ছা বকবো না! তবে নেক্সট এমন কিছু করলে আমি অনেক রেগে যাবো বলে দিলাম!”
ভোর মাথা নাড়ল। অরুণ ছেলের মাথা তুলে গালে মুখে আদর দিয়ে পরনের টি শার্ট খুলে ফেলে।
-” আব্বু নতুন টি শার্ট ছিল! ওই ছেলেটার!”
-” ওহ!
বলেই গায়ের দাগ দেখে। নেই এলার্জির কোনো চিহ্ন! অরুণ ছেলেকে বলে,
-” আর চুলকিয়েছে?”
-” নাহ! তুমি আমায় সকালে না বলে চলে গেলে কেন? আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি!”
অরুণ ছেলের কথায় হেসে বলে,
-” স্যরি আব্বু! জরুরি কাজ ছিল।নয় তো যেতাম না! শার্টের নিচে গেঞ্জি পড় নি? মুজোও পড় নি দেখছি!”
-” গেঞ্জি পাইনি! আর মুজো আমি পড়তে পারি না! তাই শুধু শু পড়েছি!”
অরুণ হেসে ছেলেকে আদর করে বলে,
-” শু না পড়ে অন্য জুতো পড়তে পারতে!”
ভোর ইনোসেন্ট ভঙ্গিতে চায়।
-” ওটা মাথাতেই আসে নি!”
অরুন হেসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।
-” তাই! আমার ছেলেটার বুদ্ধি কবে হবে! কবে বড় হবে!”
পাতা বাহার পর্ব ১০(২)
ভোর কিছু বলে না। বাবার বুকে মাথা রেখে চুপটি করে রয়! অরুণ বুঝতে পারে ছেলের ঘুম ধরেছে।
-” আব্বু ঘুমিয়ো না এখন। মিস পাতাবাহারের বাড়ি কেমন লাগলো?”
ভোরের ঘুম উড়ে গেল। বাবাকে ওবাড়ির সবার কথাই বলল। মিসের ঘরে কি কি আছে সেটাও! এমনকি ওয়াশ রুমের বর্ণনাও দিল। অরুণ ছেলের দিকে তাকিয়ে অপলক। ঠোঁটে মুচকি হাসি।