পাতা বাহার পর্ব ২৪(২)

পাতা বাহার পর্ব ২৪(২)
বেলা শেখ 

খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পাতা। কোলে ভোর। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে তারা। অরুণ মাত্রই চলে গেল। ভোর এখনো হাত নাড়ছে। পাতা শান্ত চোখে গাড়ির প্রস্থাণ দেখছে। লোকটা‌ কি বলে গেল? এর অনুধাবন কি? পাতা কথাগুলোর মর্মার্থ পুরোটা বুঝতে পারে না। তার ভাবনার মাঝেই কেউ কাঁধে হাত রাখে। পাতা চমকে পিছন ফিরে। কাওসার হাত সামনে দু হাত তুলে বলে,
-” আরে বইন ভয় পাচ্ছিস কেন আমি!”

পাতা স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। ভোর পাতার গলা জড়িয়ে। কাওছার আশেপাশে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-” কই তোর বুইরা জামাই? শালার আজ তার এক দিন কি আমার তিন দিন?”
বলেই শার্টের হাতা গোটায়। পাতা চোখ ছোট ছোট করে চায়। ভোরকে কোল থেকে নামিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
-” বলেছি না বুইড়া বলবা না? না মজায় না সিরিয়াসলি ! আর কি হয়েছে টাকি? তুমি কোথায় গিয়েছিলে তখন? উনিও বলল না!”
কাওছার কটমট করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” জামাইয়ের প্রতি খুব দরদ দেখছি? এই তোদের মধ্যে সত্যিই কিছু ছিল না তো?”
মজা করে বললেও কথাটা পাতার কানে বাজে। সে হাটা থামিয়ে ভোরের হাত ধরে শক্ত কন্ঠে কাওছারের উদ্দেশ্যে বলে,
-” যেটা মনে করো! তোমার ভাবনা তো বদলাতে পারবো না। আর দরদ থাকবে না কেন? এখন আমার গোটা জীবনটাই তাকে ঘিরে। যার সাথে সারাটা জীবন থাকবো বলে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি তার প্রতি দরদ থাকবে না! ভাই আল্লাহর রহমতে আমি সব পরিস্থিতিতে খুব জলদি মানিয়ে নিতে পারি।
এবারও আমি মন থেকেই সবটা মেনে নেব। কি দরকার ছোট্ট এই জীবনে আফসোস নিয়ে পড়ে থেকে। যা হয় নি , হয় নি! ভাগ্যে ছিল না। যা হওয়ার তা হয়েছে। ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে। নিশ্চয়ই ভাগ্যের নির্ধারণ আমি তুমি করি না!”

ছোট্ট ভোরের মাথায় উপর দিয়ে যায় বড় বড় কথা! তবে এটুকু বুঝতে পেরেছে আম্মুর জামাই তো আব্বু! আর আব্বুকে এই আঙ্কেলটা বুড়ো বলেছে। আর আম্মু তাকে বকা ঝকা করছে। তার ছোট্ট মনটা পুলকিত হয়‌। কাওছার গিল্টি ফিল করে। মজা করে বলেছিল কিন্তু পাতা কথাটাকে সিরিয়াসলি নিবে ভাবে নি।
-” হয়েছে আর সেন্টি খাস না। এখন বিচার কর! আমি তোর আদরের জামাইয়ের নামে কেস ফাইল করছি!”
পাতার মুখের আদল এখনো সিরিয়াস। কাওছার তার মাথায় চাটি মেরে বলে,

-” হয়েছে বইনা আর ফিট খাইস না। তোর জামাইয়ের কান্ড শোন! আমাকে ডেকে নিয়ে প্রীতি প্রেমাদের বাড়ির স্টোর রুমে নিয়ে যায়। আমি জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না।‌ অনেক সময় পর মুখ খোলে। বলে কিনা দরকারি কাজ আছে। সিরিয়াস মুখে বলল দেখে আমি সত্যিই ভাবলাম। কিন্তু ধুরন্ধর লোকটা স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে বলে তুমি দাঁড়াও আমি আসছি! বলেই চলে যায়। আমি ওয়েট করি লোকটা আসে না। এদিকে গরমে নাজেহাল অবস্থা। মিনিট দশ পেরিয়ে যায় তবুও আসে না। আমি সেখান থেকে বেড়োনোর জন্য দরজা ধাক্কাই। ওমা ! দরজা বন্ধ বাইরে থেকে। অনেক ডেকেছি কেউ শোনেনি।‌ ভাবলাম তোকে কল করি ! বা*ল নেটওয়ার্কও ছিল না‌ সেখানে। এদিকে পার্টি শুরু হওয়ার ফলে লোকজনের উপস্থিতি নেই। পুরো ঘন্টা খানিক পর একটা স্টাফ এসে দরজা খুলে।‌ আমি কৃতজ্ঞতায় পারি না জড়িয়ে চুমু খাই। কিন্তু ওই শা*লা স্টাফ কি বলে জানিস?”
পাতা ভোর দুজনেই আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে মাথা ঝাঁকায়।

-” গাধাটা বলে আমি নাকি তাদের স্পেশাল গেস্ট! টেনে নিয়ে গিয়ে একদম জামাই আদর করলো! দেখ পেটটা এখনো ফুলে ঢোল।‌ সেভেন আপ খেয়ে মাত্রই ঢেকুর তুললাম! এখন‌ তুই বিচার কর তোর জামাই আমায় ওইখানে আটকে রাখলো কেন?”
পাতা অধরকোণে ক্ষিণ হাসির আভাস। বাব্বাহ নাক উঁচু লোকটা তাহলে সত্যিই জেলাস! ভোর ভ্রু যুগল কুচকে কাওছারের পেটে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দেয়। পেট ফুলে ঢোলও হয়? কাওছার হাত বাড়িয়ে ভোরকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,

-” ঢোল হয়েছে কি না পরীক্ষা করছো? হয়েছে বেটা! আর পাতা বিচার চাই বিচার চাই!”
পাতা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
-” তোমার কেস গ্র্যান্টেড হয় নি। সম্পর্কে উনি তোমার দুলাভাই! তাই একটু মজা করেছে!”
কাওছার ভোরকে কোলে নিয়ে গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলে,
-” তোকে আর কি বলবো! তুই তো বিয়ের আগে থেকেই জামাই জামাই করতিস!এখন জামাই পেয়েছিস, ভাইকে যে চোখে দেখবি না সেটা জানি!”
পাতা হেসে তার পেটে চিমটি কেটে বলে,
-” কাওছার ভাই!”

কাওছার পেট ডলে। ভোর খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। তার হাসির ঝংকার, যেন পরিবেশ গুনগুনিয়ে গান গাইছে। কাওছার তার গাল টিপে দেয়।
-” এতো রাতে ভুতের লাহান হাসে! এই পোলাডা কেডা কাওছার?”
আকলিমা খাতুনের কথায় ভোরের হাসি থেমে যায়। ভোর সহ পাতা, কাওছার তার দিকে চায়। তার পিছনে প্রিয়। বাকি সবাই ঘুমিয়ে হয়তো। রাত কম হয়নি তো। বারোটা বাজে, গ্রামের সকলের এক ঘুম হয়েছে বোধকরি। কাওছার হেসে বলে,

-” তোমাদের না বললাম ঘুমিয়ে পড়তে। কিরে প্রিয় ঘুমাস নি?”
প্রিয় পাতার দিকে চায়। তারপর কাওছারের কোলে বাচ্চা ছেলেটার দিকে চায়।
-” পাতুপুর জন্য‌ ওয়েট করছিলাম। একসাথে ঘুমাবো বলে!”
আকলিমা খাতুন উঠোনে পানের পিক ফেলে বলে,
-” আমি যেইটা বলছি সেইটার উত্তর দে আগে? আর ওই মা*গির জামাই কই? সত্যিই জামাইয়ের লগে গেছিলো নাকি অন্য না…”
পাতা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-” জামাইয়ের সাথেই গিয়েছিলাম। এখানে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে উনি। আর এই যে বাচ্চা দেখছো আমার ছেলে!”

আকলিমা খাতুন পান খাওয়া টকটকে ঠোঁট নাড়িয়ে ব্যঙ্গ করে বলে,
-” আহা! আমার বাচ্চা! মনে হচ্ছে তুই ই জন্ম দিছোস! এসব আগলা পিরিত সময় হইলি উইড়া যাইবো! ঢংয়ের কথা হুহ!”
পাতা কিছু বলে না। কথা বললে কথা বাড়বে। আর এই বুড়ি সেটাই চাইছে বোধকরি। প্রিয় হনহন করে নিজের ঘরে চলে যায়। পাতা কাওছারকে বলে,

-” ওকে প্রিয়র ঘরে নিয়ে যাও। আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি! ছেলেটা খাবে! ভোর মামুর সাথে যাও?”
ভোর লক্ষি ছেলের মতো মাথা নাড়ে। কাওছার তাকে নিয়ে চলে যায়। আকলিমা খাতুন মুখ মোচরায়!পাতা খাবার ঘরের দিকে যেতে নিলে আকলিমা খাতুন আটকায়। পাতাকে আগা গোড়া পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-” এই মা*গি কই যাস? গোসল কইরা খাওয়ার ঘরে ঢুকবি!”
পাতার কপালে ভাঁজ পড়ে। সে বুঝতে পারে না বুড়ি গোসলের কথা কেন বলছে? আকলিমা খাতুন পাতার পিঠে আস্তে কিল বসিয়ে বলে,

-” গাঁধার বাচ্চা! জামাইয়ের লগে ইটিশ পিটিশ কইরা আইলা রাইতের বেলা! নাপাক শরীরে ওই ঘরে যাওয়া যাইতো না। এই সবও কইয়া দিতে হইবো?”
পাতার কান যেন গরম হয়ে যায়। এই বুড়ির কি অশ্লীল ভাবনা। সে অবাকের সুরে বলে,
-” দাদি কিসব কথা বলছো! ওসব কিছু হয় নি আমারা যাস্ট কথা বলতে গিয়েছিলাম! বাচ্চা..”
আকলিমা খাতুন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

-” হইছে আর বুঝাইতে হইবো না! ওসব রঙ ঢং আমরাও বুঝি! নতুন নতুন বিয়া হইছে। একলা নির্জনে ওতোসব না হইলেও চুম্মা চাটি, গায়ে হাত তো দিছেই! পুরুষ মানুষ বউ পাইলে হুঁশ থাকে না।”
বলেই দন্তহীন খ্যাক খ্যাক করে হেসে দেয়। পাতা কান ধরে খাওয়ার ঘরের দিকে যায়। এই বুড়ির অশ্লীল কথাবার্তায় আজ রাত মনে হয় না তার ঘুম হবে।
-” কি সব ছিঃ মার্কা কথাবার্তা! ধ্যাত!”
আকলিমা খাতুন শুনতে পায়। তিনি পাতাকে ভর্ৎসনা করে বলে,
-” ও এহন ছিঃ মার্কা কথা!! কয়েকদিন পর যহন জামাই লইয়া..”
পাতা আর শুনতে পায় না। খাওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। গ্লাসে পানি ঢেলে ঢক ঢক করে পান করে বুড়ির চৌদ্দ গুষ্টির ভবলিলা সাঙ্গ করে।

বার্থডে পার্টি শেষ কিন্তু হইহুল্লোড় এখনো কমেনি। বাচ্চারা সব ঘুমে বিভোর। এখন‌ পার্টি চলছে বড়দের। সব ছেলেরা মিলে পার্টি জমিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের উপস্থিতি নেই। আসলাম অতি গোপনতার সাথে বাড়ির লেডিস ও তার বাবার চোখ লুকিয়ে বিয়ার এনেছে। বন্ধুরা ও কিছু কাজিন মিলে সেটাই গিলছে । অরুণ নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে। মাত্রই গোসল সেরে এসেছে। ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় অলস ভঙ্গিতে তোয়ালে চালাচ্ছে। ছেলেকে ছাড়া ভালো লাগছে না তার। বুকটা খালি খালি লাগছে। তোয়ালে বিছানায় ছুড়ে ভাবে নিচে গিয়ে একটা বিয়ারের বোতল আনবে। বেশ সময় ধরে খাওয়া হয় না। আগে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় নিত্যসঙ্গী ছিল। ছেলে হওয়ার পর তেমন খাওয়া হয় নি। স্বাদটা ভুলতে বসেছে বলা চলে।

যাবে কি? পরে ভাবে নিচে আড্ডায় উপস্থিত সকলেই তার চেয়ে ছোট। তার উপর ভাইয়ের শরুড় বাড়ির আত্মীয়। তাদের থেকে বিয়ার চাওয়াটা কেমন লাগবে? আর ছোটমা বা আরিয়ানের কানে গেলে? আরিয়ান তো কোমড়ে হাত দিয়ে বকে বকে কানের পোকা তুলে ফেলবে। আগেও বকতো! তার এসব নেশা দ্রব্যে এলার্জি। আজ পর্যন্ত সিগারেটও ছুঁয়ে দেখেনি। অরুণ হাসে! ছোট ভাইটা নিতান্তই ভদ্র ছেলে। ভোরের সাথে জড়িয়ে ইমোশনাল কথাবার্তায় পেঁচিয়ে তাকেও দূরে রেখেছে।

তবে আজ ছেলেটা দূরে থাকায় , আর বিয়ারের বোতল নজরে আসায় কেমন যেন টানছে। ভোরকে যেভাবে আইসক্রিম ডাকে সেরকম তাকেও ডাকছিল! লোভী মনটাকে অনেক কষ্টে দমিয়েছে। সে ভাবে যাবে? অল্প একটু খেলে কিছুই হবে না। পা বাড়ায় তখনি বিছানায় ফেলে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। তবে তার ফোন নয়। মিস পাতাবাহারের, তার কাছেই ছিল। দেওয়ার কথা মনে ছিল না। সে ফোনটা হাতে নেয়। স্কিনে একটা ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি! অরুণের ঠান্ডা মেজাজ যেন একটু হলেও খারাপ হয়। চিনতে অসুবিধা হয় না, কাওছার ভাই নাম জ্বল জ্বল করছে। অরুণ রিসিভ করে কানে ঠেকায়। ওমনি মিষ্টি কণ্ঠের সালামে যেন মেজাজটা ঠান্ডা হলো। সালামের জবাব নিয়ে বলে,

-” পাতাবাহার?”
পাতার মুখ কুঁচকে যায়। পাতা ঠিক আছে বাহার কেন যোগ করতে হবে। বাহার তার প্রাইমারি স্কুলের এক স্যারের নাম। একদম কাঠখড়ি। যেমন লম্বা তেমন চিকন। আর খিটখিটে।‌
-” আশ্চর্য পাতাবাহার কে? আমার নাম পাতা। শুধু পাতা। সেই নামেই ডাকবেন বলে দিলাম!”
অরুণ যেন মজা পেল।
-” তো শুধু পাতা? কলিজা কোথায়?”
পাতা চোখ উল্টিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে এই লোক শুধরানোর নয়। ব্যাটা ষাঁড়। সে ঘার মুড়ে ভোরের দিকে চায়। ভোর তার দিকেই তাকিয়ে। তার পাশে শুয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।

-” কাছেই আছে! শুয়ে আছে। আপনি পৌঁছে গেছেন?”
-” হুম। খেয়েছে কিছু?”
-” হুম। রুটি খেয়েছে একটা ডিম দিয়ে।”
অরুণ বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। তার পেটের ভিতরও গুডুর গুডুর করছে ক্ষিদের তাড়নায়। সেই দুপুরে খেয়েছিল।
-” ঘুমিয়ে পড়েছে?”
পাতা হাসিমুখে ভোরের নাক টিপে বলে,
-” না! কথা বলবেন?”

অরুণ কিছু বলবে এর আগে আরিয়ানের শোরগোল শুনতে পায়। ভাই ভাই বলে ভিতরে প্রবেশ করে। হাতে খাবারের ট্রে। পিছনে আনিকা পুতুল কাঁধে ঘুমে ঢুলু ঢুলু করে হাঁটছে। আরিয়ান খাবারের ট্রে টি টেবিলে রাখে।
-” নে তোর খাবার। এখানেই নিয়ে এলাম। নিচে মানুষের ভিড়ে অস্বস্তি হতে পারে। জলদি করে খেয়ে নি। তারপর তোকে দেখছি!”
অরুণ বালিশে ফোন রেখে অপর হাতে আনিকাকে কোলে তুলে চুমু খায়।আনিকা পাশ ফিরে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে চোখ বুজে। অরুণ ফোনের ওপাশে পাতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” এক মিনিট হোল্ড করুণ!”
বলে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” কি হয়েছে?”

আরিয়ান কোমড়ে হাত রেখে বিছানায় শোয়া অরুণের দিকে হালকা ঝুঁকে বলে,
-” আমরা তো তোর ছেলেকে ভালোবাসি না। যত্ন করি না। তাই কখনো আমাদের কাছে একবেলা রেখে অফিসেও যাস নি! অথচ তোর দুদিনের বউয়ের কাছে কলিজাকে রেখে এলি! বাহ্ খুব ভালো! আমরা তো স..”
অরুণ গম্ভীর মুখে বলে,
-” ডোন্ট সে দ্যাট। তুই আমার ভাই। আপন ভাই ! বুঝলি? আর রেখে আসতাম না জেদ করছিল। আর তার জেদের কাছে আমার মাথাটা সর্বদা ঝুঁকে যায়।”
আরিয়ান চুপ করে তবে এখনো রেগে আছে।
-” হ্যা ভালো করেছো! তোমার ছেলে তোমারি সব। আমরা তো কেউই না।”
অরুণ বিছানা থেকে উঠে আসে ফোনটা হাতে নিয়ে।
-” বাচ্চাদের মতো গাল ফুলাস না তো! আর দিন দিন কেমন ঝগরুটে হয়ে যাচ্ছিস!”

আরিয়ান ভাইয়ের দিকে চায় শান্ত চোখে। মনে পড়ে পার্টিতে ধাক্কা দেয়া মেয়েটার কথা। মেয়েটাও তাকে ঝগরুটে বলেছিল। আবার ভাই ও বললো । সে কি সত্যিই ঝগরুটে হচ্ছে? নাকি ওকালতির ফল এসব! সব সময় আর্গিউ! সে খেয়াল করে অরুণের হাতে ফোন। কমদামি এন্ড্রোয়েড। তার ভ্রু কুঁচকে যায়,
-” এটা কার ফোন তোর হাতে?”
অরুণ ফোন উল্টে পাল্টে দেখে বলে,
-” পাতার! ভুলে আমার কাছে রয়ে গেছে।”
আরিয়ানের ভ্রু কুঁচকে যায়,

-” পাতা! গাছের পাতাদের কাছে ফোনও থাকে নাকি? কিসের পাতা? আমা পাতা জোড়া জোড়া!”
ফোনের ওপাশে ভোর খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। পাতা বিরক্তিকর শ্বাস ছাড়ে। সে ফোন হোল্ড করে নি। দু ভাইয়ের সকল কথায় শুনেছে।
আরিয়ান কানটা খাড়া করে। হাসির আওয়াজ শোনা গেল না?
অরুণ এসে আরিয়ানের কাঁধ চাপড়ে বলে,
-” ভোরের আম্মুর নাম পাতা!”
আরিয়ানের এক ভ্রু উঁচিয়ে আচ্ছা বলে অরুণের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলে,
-” লাইনে কে এটা? হাসির আওয়াজ শোনা গেল?”
-“ভোরের আম্মু!”
আরিয়ান বত্রিশ পাটি বের করে বলে,
-” বাহ্। প্রেমালাপ চলছিল নাকি হুম?”
-” বড় ভাই হই তোর!”

আরিয়ান থোরাই কেয়ার করল। সে ফোন কানে ঠেকিয়ে লম্বা সালাম দেয়,
-” আসসালামুয়ালাইকুম ভাবিজান! ভালো আছেন? ডিস্টার্ব করলাম বুঝি?”
পাতা চোখ রসগোল্লার ন্যায় হয়ে যায়। গলা খাঁকারি দিয়ে মিনমিনে গলায় বলে,
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম। ভালো? আপনি? ভোরের সাথে কথা বলবেন? এই নিন?”
বলেই ফোন ভোরের কানে ঠেকায়। ভোর ফোন কানে ধরে উঠে বসে,
-” হ্যালো চাচ্চু?”
আরিয়ান চোখ ছোট ছোট করে চায় অরুণের দিকে।
-” তোর বউ লজ্জা পাচ্ছে!”

অরুণ চোখ রাঙায়। আরিয়ান ভেংচি কেটে ভোরের কথার জবাব দেয়,
-” হ্যা বাবা বলো? আম্মুকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেলে?”
ভোর মাথা নাড়িয়ে বলে,
-” ভুলি নি তো! চাচ্চু আমি না আম্মুর সাথে ঘুমাবো! আনি ও রুপের মতো! আব্বু থাকলে আরো ভালো হতো!”
আরিয়ানের বুকটা ভরে ওঠে।
-” তাই বাবা! আম্মুকে তোমার ভালো লেগেছে?”
ভোর হেসে পাতার গালে চট করে চুমু দিয়ে বলে,
-” অনেক।”

পাতা হেসে তাকে বুকে টেনে নিল। ভোর পাতার বুকে মাথা রেখে ফোনে মনোযোগ দেয়‌। আরিয়ান মুচকি হাসে। ভোর খুশি হলেই হল। আর কি চাই! সে অরুণের দিকে ফোন দিয়ে বলে,
-” তোর কলিজার সাথে কথা বল?”
অরুণ ফোন কানে ধরে আদুরে গলায় বলে,
-” কলিজা? আব্বুকে মনে পড়ছে না?”
ভোরের হাসি হাসি মুখটা মলিন হয়ে আসে।
-” আব্বু অনেক মনে পড়ছে। তুমি থাকলে অনেক ভালো হতো! তোমার আমাকে মনে পড়ছে?”
অরুণ মুচকি হেসে বলে,

-” বুকটা পুড়ছে কলিজা! ঘুমিয়ে পড়। সকাল ভোরে আমার ভোরকে নিয়ে আসবো!”
ভোর মাথা নেড়ে কল কাটে। পাতাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে।
অরুণ ফোনটা পকেটে পুরে। আরেকটু হলে ছেলেটা কেঁদে দিত!
আরিয়ান বিছানায় উঠে মেয়ের পাশে গা এলিয়ে দিল।
-” তা তোমার গাছের পাতার ছবি টবি কিছু আছে? একটু দেখতাম?”
অরুণ হাত ধুয়ে খাবারের প্লেটে হাত দেয়।

-” বড় ভাবি তোর। সম্মান দিয়ে কথা বল! আর ছবি নেই। সরাসরি দেখিস।”
আরিয়ান হামি তুলে বলে,
-” সে দেখা যাবে। গুড নাইট!”
-” এখানেই ঘুমাবি?”
আরিয়ান সন্দেহ নজরে অরুণের দিকে চায়।
-” কেন কোন সমস্যা? সমস্যাকে টা টা বায় বায় বলো। আমি এখান থেকে নড়ছি না। নরলেই নিচে বিয়ার পার্টিতে যেতে পারো তাই না?”
অরুণ অধরকোণে হাসি ফুটে ওঠে। তার ধারনাই ঠিক।
-” আমি ভালো হয়ে গেছি!”
-” হ্যা! তবে ওতটাও না। মাতালদের বিশ্বাস নেই!”
অরুণ চোখ রাঙায়।
-” আমি মাতাল নই! উঠতি বয়সে বন্ধুদের সাথে সবাই খায় একটু আকটু। এখন তুই সাধু পুরুষ তাই!!”

স্নিগ্ধ শোভন ভোর বেলা। নীল দিগন্তের প্রান্তে অরুণ উঁকি দিচ্ছে ঝলমলিয়ে। তার তীব্রতা দেখে বোঝা যাচ্ছে আজ চরম তেজে দেখা দেবে ধরনী জুড়ে। মৃদুমন্দ হালকা বাতাসে গাছের পাতা দুলছে। পাখির কিচিরমিচির কলতানে মুখরিত পরিবেশ। বিভিন্ন পাখির কলতানের মধ্যে একটি পাখি চিকন গলায় ডাকছে ‘ফুটিক জল’! ডাকের সাথে মিল রেখে পাখিটির নামও ফটিক জল। গ্রামের মানুষের ধারনা এই পাখি ডাকলে আকাশ ভেঙ্গে জল নামে অর্থাৎ বৃষ্টি পাত হয়। এখন কথাটা সত্য নাকি মিথ্যা উপর ওয়ালাই জানে। শহরের বুকে এখন ঘুম থাকলেও গ্রামীণ জীবন শুরু হয়ে গেছে। গ্ৰামের মানুষ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে। ব্যতিক্রম নয় মিঁঞা বাড়ি! পারুল ও ফাতেমা জোহরা সকাল সকাল উঠে সকল বাসি কাজ ছেড়ে রান্না করতে বসেছে।

পাতার জামাই আসবে আবার বিকেলে জুবাইদা আসবে বাচ্চা সহ! তাই রান্নার তোরজোর। আকলিমা খাতুন ভোর বেলায় পাশের গ্ৰামে গেছে পানি পড়া আনতে। কয়েকদিন হলো গুঞ্জন ছড়িয়েছে যে পাশের গ্ৰামের এক ছয় বছরের ছেলের ভিতর অলৌকিক কিছু দেখা গেছে। মানুষের মনের কথা জানতে পারে। অসুখ বিসুখ ঝাড়া ফুক দিয়ে ছাড়াতে পারে। ব্যস হুজুগে বাঙ্গালীর ঢল সেখানে। দলে দলে চলে যায় পানি পড়া তেল পড়া আনতে। ছোট বাচ্চা বিড়বিড় করে ফু ফু দেয়। তাতেই বাঙালি ভিড় ঠেলে নিয়ে আসে।

আর তাদের ছোট্ট কবিরাজ বাবা টাকা পয়সা নেন না তবে খুশি হয়ে হাদিয়া দিলে দোয়া জলদি কবুল হয়।অসুখ সাড়ে। সহজ সরল চালাক উদার বাঙালি বিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ যে যেরকম পারে দিয়ে দেয় হাদিয়া। মানুষের ঢলও পড়ে অনেক। কবিরাজ বাবা এতো জনকে তো একে একে ফু দিতে পারে না তাই সকলকে একটা মাঠে সমাবেত করে মাইকের সাহায্যে জোড়ে একটা ফু দিয়ে সবাইকেই খুশি করে। সবাই খুশি হয়ে গামছা পেতে হাদিয়া তুলতে আসা লোকদের মন প্রাণ উজার করে টাকা পয়সা দেয়। অথচ রাস্তায় অসহায় অচল ভিক্ষুক যারা তিলওয়াত, হাদিস পড়ে সকলকে দোয়া করে সাহায্য চায় তাদেরকে দিতে অনিহা! মুখ বাঁকিয়ে বলি ভন্ডামি!

ফাতেমা জোহরা রান্না ঘরে রান্না করছে। পারুল উঠোনের একপাল বসানো মাটির চুলোয় পিঠা ভাজছে। তালের পিঠা, বড়া, ঝালের পিঠা, ঝাল চিতই ইত্যাদি। বর্ষাকালে তালের রস দিয়ে বানানো তালের পিঠা ও বড়া বেশ খেতে। কাওছার, ফরহাদ, পাবেল, প্রিয়, পাতা চুলোর সামনে চেয়ার পেতে বসে গরম গরম পিঠার স্বাদ উপভোগ করছে। ভোর পাতার পাশে বসে অল্প ঝালের পিঠা খাচ্ছে মজা করে। পরণে সেই পার্টির সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট। কোর্ট গাড়িতেই খুলে দিয়েছিল অরুণ। গরমে ঘেমে গেছে ছেলেটা। পাতা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে‌। ভোর মুচকি হেসে পিঠা ছিঁড়ে পাতার মুখে দেয়। পাতা হেসে বলে,

-” খেতে মজা লাগছে?”
ভোর মাথা নাড়িয়ে বলে,
-” খুব! আম্মু আব্বু কখন আসবে?”
-” আসবে বাবা এই আরেকটু পরেই!”
বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছেলেটা মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরে বাবাকে খুঁজছিল তার মুখ হাতরিয়ে। তারপর চোখ খুলে আব্বু বলে কেঁদে দেয়। তার আব্বুর কথা মনে পড়ছে। আব্বুর জন্য বুক কাঁদছে। পাতা অনেক বুঝিয়ে আদর করে ঘুম পাড়িয়েছিল! সকালে উঠে না হলেও একেবার বলেছে আব্বু কখন আসবে! পারুল গরম তেলের কড়াইয়ে তালের রস, চিনি, নারিকেল কোড়া,চালের গুঁড়া ইত্যাদি দিয়ে নরম করে বানানো খামি অল্প করে হাতে তুলে তেলের ভিতর ছেড়ে দিয়ে বলে,

-” বাব্বাহ্! এ দেখি বাপ পাগল ছেলে! স্কুলে যাও তুমি?”
ভোর মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মুখে দেয়া পিঠা চিবিয়ে গলাধঃকরণ করে বলে,
-” আম্মু যে স্কুলে পড়ায় সেখানেই পড়ি! আন্টি আপনি কোথায় পড়েন?”
পাবেল হেসে উঠলো শব্দ করে। সাথে বাকি সবাই যোগ দিল।
-” পাতা আপু দেখ ছেলের কথা! তোকে আম্মু ডাকছে আর তোর মাকে আন্টি!”
ভোর কাঁচুমাচু মুখে পাতার দিকে চায়। পাতা ভোরের গাল টিপে বলে,
-” নানিমা বলবে। আর পাবু ছোট বাচ্চা বুঝে নাকি!”
পারুল হেসে বলে,
-” ছেলে মেয়ে বিয়েই দিলাম না নানি হয়ে গেলাম! ”

খেয়াল করে না তার কথায় পাতার মুখটা মলিন হয়ে যায়। সে কি তার মেয়ে না? আগে তো বলতো আমার দুটো মেয়ে পাতা প্রিয়! প্রিয় মায়ের কথার বিরোধীতা করে বলে,
-” পাতুপুর তো বিয়ে হয়েই গেছে। সে কি তোমার মেয়ে নয়? টান আসে না আর?”
রান্নাঘর থেকে ফাতেমা সব শুনছিল। সে এবার প্রিয়কে উদ্দেশ্য করে গলা উঁচিয়ে বলে,
-” সে তো পালক মেয়ে! তার উপর পালক মেয়ের সৎ ছেলে! টান টা আসবে কিভাবে?”
প্রিয়র রাগ হয়। গলা ফাটিয়ে বলে,

-” তো পালক এনেছো কেন? স্বার্থপর মানুষ!”
ভোর ভয় পায় এভাবে চিল্লানোতে। পাতা প্রিয়কে ধমক দিয়ে বলে,
-” চুপ! বেয়াদবি না! ঠিক কথাই তো বলেছে! তুই চুপ থাক!”
কাওছার পানি খেয়ে শান্ত গলায় বলে,
-” মা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? একটু পরেই চলে যাবে তোমাদের পালক মেয়ে! একটু ভালোবেসে বিদায় দাও! কি কপাল রে তোর পাতা!”

পাতার চোখ ভরে উঠে। ভোর গাল ফুলিয়ে সবাইকেই দেখছে। সবাই ঝগড়া করছে কেন?
ভোর কাঁচুমাচু মুখে পুনরায় পাতার দিকে চায়। ফাতেমা জোহরা বেরিয়ে আসে। ছেলেকে কিছু বলবে এর আগে বাইরে থেকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসে। কাওছার ফরহাদ বেরিয়ে যায়। পাতার বুঝতে বাকি থাকে না কে এসেছে। তবে এতো ভোরে আসবে ভাবে নি। সে কান্না গিলে অনুরোধের সুরে বলে,
-” চাচি প্লিজ কিছু বলো না ওনার সামনে! হাত ধরি তোমার প্লিজ? মা ?”

ফাতেমা জোহরা থমথমে মুখে রান্নাঘরে যায়। পারুল কপালে ভাঁজ ফেলে পিঠা ভাজায় মন দেয়। প্রিয় চেয়ার ফেলে দিয়ে নিজের ঘরে যায়। ভোর পাতার সাহায্যে চেয়ার থেকে নেমে দাঁড়ায়। গেটের দিকে তাকাতেই বাবাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে যায়। অরুণ কোলে তুলে নেয় ছেলেকে। ভোর বাবার গালে চুমু দেয়। প্রতিত্তরে অরুণ তার গালে মুখে চুমুতে ভরিয়ে দেয়। কেউ কিছু বলে না। পাতা এগিয়ে আসে। অরুণের পিছনে ফরহাদ ও কাওছার। তাদের হাতে অনেকগুলো মিষ্টির প্যাকেট ফলফলাদির সমাহার। অরুণ এগিয়ে আসে পাতার কাছে। পারুল মাথার কাপড় ঠিক করে ফাতেমা জোহরা ঘোমটা টেনে বেরিয়ে আসে। তারা শুনেছে জামাইয়ের বয়সটা বেশি। কিন্তু কই দেখে তো বুড়ো মনে হচ্ছে না? পুরোই রাজপুত্র। হ্যা একেবারে জোয়ান ছেলে লাগছে না! কিন্তু বুড়োও নয়। পাতার সাথে যেন জমে ক্ষীর! শুধু পাতা ছেলের তুলনায় খাট।
অরুণ পাতার পাশে দাঁড়ায় চুপটি করে। পাতা অরুণকে চোখ রাঙায়। পারুল ও ফাতেমা জোহরাকে দেখিয়ে বলে,

-” আমার মা! আর উনি আমার ছোট মা। এটা পাভেল আমার ভাই!”
এই লোক তো সত্যিই ম্যানারলেস! চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে! সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করবে না? সে অরুণের কাছ ঘেঁষে আস্তে ধীরে বলে,
-” সালাম দিন!”
অরুণ বেশ অবাক হয় এইটুকুনই মেয়ে তাকে চোখ রাঙায়। তবে কিছু বলে না। সবার উদ্দেশ্যে সালাম দেয়,
-” আসসালামুয়ালাইকুম!”

ব্যস! ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবি না শালা! পাতা তার হাতে চিমটি কাটে। ম্যানারলেস!
পারুল ফাতেমা সালামের জবাব দিল। পারুল হাসিমুখে বলে,
-” ভালো আছো?”
অরুণ ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
-” হুম!”
কাওছার হাতের মিষ্টি দেখিয়ে বলে,
-” পাবেল দেখ পাতার আদরের জামাই ওরফে আমাদের দুলাভাই কতকিছু এনেছে! শিখে রাখ বিয়ে করলে তোরও নিতে হবে।”
পাবেল ফরহাদের ব্যাগ থেকে একটা আপেল মুখে দিয়ে বলে,
-” ভাই আগে তুমি শিখে নাও! সবার বড় তুমি?”
কাওছার মাথা নাড়িয়ে হাসে। ফাতেমা জোহরা ছেলেদের হাতে ফল মিষ্টি দেখে বলে,
-” ওসব আনতে গেছো কেন? পাতা যা জামাইকে নিয়ে ঘরে যা। বাইরে গরম!”
-” আসুন?”

বলে পাতা গটগট করে হেঁটে ঘরের ভিতরে ঢুকে। অরুণ লম্বা পা ফেলে তার পিছু যায়। ঘরে দুজনের উপস্থিতিতে। অরুণ প্রিয়কে দেখে পাতার দিকে চায়। পাতা থমথমে মুখে উত্তর দেয়,
-” প্রিয়! আমার ছোট বোন!আর প্রিয় উনি ভোরের বাবা!”
প্রিয়োর এই লোককে পছন্দ হলো না। কেন? জানে না। তবুও ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিল। অরুণ গম্ভীর গলায় জবাব দিয়ে বলে,
-” তুমিই প্রিয়?”
প্রিয় পাতার দিকে চায়। এই লোক তার নাম জানে? আপু বলেছে নিশ্চয়ই। প্রিয়র মনটা ভালো হয় খানিক। হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে বলে,
-” হুম! আপনি বসুন? আমি আসছি!”
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। অরুণ ছেলেকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে। বেশ গরম এখানে। পাতা দরজা বন্ধ করে অরুণের দিকে কটমট করে চেয়ে বলে,

-” ম্যানারস জানেন না?”
-” আপনিই তো বলেন ম্যানারলেস! তাহলে ম্যানারস আশা করেন কিভাবে?”
স্পষ্ট জবাব। পাতা চোখ বুজে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে,পারে না। অরুণের মুখের সামনে আঙ্গুল তুলে রাগে গজগজ করে বলে,
-” নাক উঁচু ম্যানারলেস লোক। সামাজিকতা জানেন না। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলে কি হতো? মা, ছোটমা কি ভাবলো? ভাজ্ঞিস বাবা চাচা ছিল না! আপনি ..!”
আর বলতে পারে না। অরুণ তার বাড়িয়ে দেয়া আঙ্গুলের ডগা মুখে পুরে আলতো কামড়‌ বসায়।
-” নিন হয়েছে এখন।‌ আর হবে না। ভালোভাবে ম্যানারস, সামাজিকতা শিখিয়ে দিবেন। আই এম ভেরি ওয়াচফুল স্টুডেন্ট!”

পাতা বাহার পর্ব ২৪

ভোরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। পাতা অরুণকে বকছিল দেখে তার হাসি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এখন ফিরে এসেছে। আর পাতা! সে ঢোক গিলে। আঙুল টেনে নিয়েছে শুরুতেই। কি ছিল ওটা? কারেন্ট? তা নয়তো কি? পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিল কেন! বুকটা ধরফর ধরফর করছে। হৃদযন্ত্রটা মনে হয় ছিটকে বেরিয়ে আসবে। আচ্ছা এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি! না ভালো না খারাপ!! হৃদয় কুঠিরে হালকা নাড়িয়ে পালিয়ে গেল যেন!

পাতা বাহার পর্ব ২৫