পাতা বাহার পর্ব ৩৯

পাতা বাহার পর্ব ৩৯
বেলা শেখ 

-” জলদি আসো পাতাবাহার। উই আর গেটিং লেট!”
-” আম্মু? ফাস্ট ফাস্ট!
-” আসছি তো!”
পাতা ব্যাগ হাতে জলদি পা চালায়। বাড়ির মেইন ফটক থেকে গ্যারেজের সামনে দাঁড়ানো বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই অরুণ সরকার বসার জন্য তাড়া দেয়‌। পাতা পিছনে বসে অরুণের কাঁধে হাত রাখলো। ভোর বাবার সানগ্লাস চোখে দিয়ে সামনে বসেছে। অরুণ হেলমেটের ফিতা বেঁধে বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,

-” শক্ত করে ধরে বসবে!”
-” সেটা বলতে হবে না। আপনি শুধু তুফানের বেগে বাইক চালাবেন না!”
বাইক চলতে শুরু করে। পাতার কথার প্রেক্ষিতে অরুণ বলে,
-” স্বাভাবিক গতিতেই চালাবো!”
-” আপনাদের মানে ছেলেদের স্বাভাবিক গতি রকেটের গতির থেকে কম না। মনে হয় গাঁজা সেবন করে বাইক চালায়।”
-” হোয়াট ড্যু ইয়ু মিন?”
-” মানে এটাই কিছু কিছু লোক রাস্তায় এমন ভাবে বাইক চালায় মনে হয় রাস্তাটা তাদের বাপের! আর কিছু ইয়াং বাচ্চা ছেলে এমন তিড়িং বিড়িং করে বাইক চালায়; বলা চলে জান হাতে নিয়ে। ভয়ডড় কিছুই নেই। একবার আমার স্কুটির সাথে লাগিয়ে ছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি!”
ভোর বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” আম্মু ব্যাথা পেয়েছিল?”
-” তা একটু আকটু। হাত পা ছিলে গিয়েছিল।”
অরুণ গম্ভীর গলায় বলে,
-” ওই বয়সে সবারই একটু আকটু রক্ত গরম থাকে। বয়সের একটা ফ্যাক্ট আছে! আমরাও ছিলাম! আমরা সব বন্ধুরা মিলে বাইক রেসিং করতাম। কতবার মরতে মরতে বেঁচেছি তবুও রেস করতাম! একটা আলাদা সাহসিকতা কাজ করতো।”
পাতা হেসে বলে,
-” আপনিও তাহলে একি গোয়ালের গরু!”
অরুণ হাসে না। পূর্বের ন্যায় গম্ভীর সুরে বলল,
-” ল্যাঙ্গুয়েজ!”

এখানে ভাষা সংযত করার কি আছে। সে তো কথার কথা বলল। এই লোকটার এতেও এলার্জি। এরকম আজব কিসিমের জীব সে আগে দেখেনি। নিজে ম্যানারসের এম জানে না; অথচ গলাবাজি! পাতা চুপ বনে যায়। একটা কথাও বলে না।ভোর টুকটাক জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়। অরুণ সরকারও চুপচাপ বাইক চালানোতে মনোযোগী হয়। শা শা করে অন্য গাড়ির সাথে‌ পাল্লা দিয়ে বাইক ছুটে চলেছে বিরতিহীন। ভোর কখনো উল্লাসে চিল্লিয়ে উঠছে। অরুণ ধমকে ধমকে তাকে চুপ করিয়ে দিচ্ছে। পাতা হতাশ, চরম হতাশ। এই লোক ধমকা ধমকি ছাড়া কথাই বলতে পারে না। বিরতিহীন বাইক হঠাৎ থেমে যায় সিগন্যালের দরূণ।

রেড লাইড জ্বলছে সিগন্যালে। অরুণ বিরক্ত হয় বেশ। সকাল হলেও বেশ কড়া রোদ উঠেছে; সাথে গরম ও হর্ণের বিরক্তিকর আওয়াজ বোনাস। টানা রোদের ভিতর বাইক দাঁড়িয়ে আছে। ভোরকে সে বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে রোদ থেকে আড়াল করে। পাতা মুচকি হাসলো। এই লোক যেমন কথায় কথায় ধমকায় আবার খুব বেশি যত্নও করে; আগলে রাখে। হয়তোবা তার ভালোবাসা কেয়ারের আরেকটা মাধ্যম ধমক! পাতা হেসে ফেললো। অরুণ লুকিং গ্লাসে পাতার দিকে তাকায়। মেয়েটা পাগলের মতো বিনা কারণে হাসছে কেন? পাতা হাসি থামিয়ে নেয়। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় একটা ছেলে হাত নাড়িয়ে হাই বলছে। পাতার ভ্রু কুঁচকে যায়। সামনের রিকশার পরে একা বাইকে দুটো ছেলে আছে। পেছনে বসা ছেলেটা দাঁত বের করে হেসে উঁচু স্বরে বলল,
-” আপু? আপনার হাসিটা সুন্দর ছিল! ন্যাচরাল!”

আশেপাশের সবাই তাকায় পাতার দিকে পাতা খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে। ছেলেটা হাসছে। মেয়েদের একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে তাঁরা ছেলের কথা, হাসি, আচার ভঙ্গ দেখে বুঝতে পারে ছেলেটা ভালো নাকি খারাপ দিকে ইঙ্গিত করছে। পাতার কাছে ছেলেটাকে খারাপ মনে হলো না ; দেখতে ভদ্রই। কমবয়সী ছেলে সবে কলেজ শেষ করে অনার্সে ভর্তি হয়েছে বোধকরি। দাঁড়ি গোঁফ মাত্র উঁকি দিচ্ছে। পাতা মুচকি হেসে ধীমে সুরে ‘থ্যাক ইয়ু’ বলে। যদিও ছেলেটা শুনতে পায় না তবে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝতে পারলো ধন্যবাদ দিচ্ছে। ওদিকে হেলমেটের ভিতরে কারো চোয়াল দ্বয় শক্ত হয়ে গেছে। অরুণ হেলমেটের গ্লাস উপরে তুলে ছেলেটাকে চোখে শাসায়। পাতার থ্যাংক ইয়ু বলা ওই ছেলেটা না শুনতে পেলেও কাছ ঘেঁষে বসা অরুণের কানে পৌঁছে গেছে। পাতার উদ্দেশ্যে হিসহিসিয়ে বলে,

-” খুব হাসি পাচ্ছে পাতাবাহার? ভরা রাস্তায় দাঁত গুলো হারাতে চাও?”
পাতা গালে জিভ ঠেকায়। সে ভুলেই বসেছিল ক্ষ্যাপা ষাঁড় সম্মুখে। সে কিছু বলবে এর পূর্বে বাইকের সেই ছেলেটি আবার বলে,
-” আপু ওইটা কি আমাদের দুলাভাই নাকি?”
অরুণের দিকে হাত বাড়িয়ে ইশারা করে বলে। পাতা ছোট করে মাথা নেড়ে সায় জানাতেই ছেলেটি হেসে বলল,
-” দুলাভাই? জিতেছেন আপনি! আপু কিন্তু খুব মিষ্টি ও কিউট। একদম আমার ছোট বোনের মতো! বকবেন না তাকে?”

পাতার হাসি পায়। ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে। বাইকের মিররে চোখ পড়তেই হাসি থেমে যায়।লোকটা রেগে আছে। অরুণ চোখ রাঙিয়ে চেয়ে আছে। ওদিকে ছেলেটাও থেমে নেই ভোরকে ইশারা করে বলে,
-” ওটা বুঝি ভাগ্নে আমার? হাই! নাম কি তোমার?”
-” ভোর সরকার!”
মিষ্টি হেসে বলে ভোর।আশেপাশের অনেকেই হাসছে মিটিমিটি। অরুণ হেলমেট খুলে ছেলেটাকে জোড়ে ধমক লাগিয়ে বলে,

-” এক থাপ্পড়ে কানে তালা ঝুলিয়ে দিব বেয়াদব ছেলে! রাস্তায় যাকে তাকে দেখেই আপু ডেকে কথা বলার পাঁয়তারা খোঁজো? এই আপু ডেকেছিস না? তোর বাড়ির অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিবি! আর তোর বাবার ফোন নম্বরটা দে? কথা বলি শশুর মশাইয়ের সাথে!”
ছেলেটার মুখ দেখার মতো হয়েছিল। আশেপাশের লোকগুলো মজা নিতে ব্যাস্ত। সাথে দু একজন ফোন বের করে ভিডিও করতে ব্যস্ত। অরুণ সরকার তাদেরকেও ঝাড়ি দিতে ভোলে নি। পাতার মুখখানি ফাটা বেলুনের মতো চুপসে আছে। এরপরের ঝাড়ি যে তার উপরেই বর্তাবে। তাছাড়া তার সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া ভাইটার জন্যও দুঃখ হচ্ছে। এই লোকটা হাসি মজাও বোঝে না।

অরুণের মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।রোদের তাপের গরমে নাকি রাগে কি জানি! অরুণ সবাইকে ঝেড়ে হেলমেট পড়ে নেয়। সে পাবলিক প্লেসে মোটেই তামাশা করতে চায় নি। তবে মেজাজটাও ধরে রাখতে পারে নি। অরুণ বাইক স্টার্ট করে চিপার মধ্যে দিয়েই খানিকটা এগিয়ে যায়। তবে ভুল স্বরুপে একটা গাড়ির পেছনে ধাক্কা লাগে। অরুণ ছেলেকে শক্ত করে ধরে। পাতা অরুণের পিঠে ধাক্কা খায়। অরুণ ক্ষীপ্ত মেজাজকে ঠান্ডা করে স্যরি বলে ড্রাইভারকে।‌ ড্রাইভার অবশ্য কিছু বলে না। তবে পেছনের জানালার গ্লাস নেমে যায়। বের হয়ে আসে অরুণের চেনা পরিচিত এক মুখ। লোকটা হেসে চোখের সানগ্লাস খুলে বলে,

-” অরুণ সরকার যে? কেমন আছিস? লং টাইম হ্যাঁ?”
সদ্য ঠান্ডা হওয়া মেজাজটা আবার বিশ্রী ভাবে বিগড়ে গেলো। অরুণ কিছু বলে না। পাতা অরুণের পিছন থেকে উঁকি দিয়ে লোকটাকে দেখে। ভোর পিটপিট করে চায় লোকটার দিকে। সে চেনে উনাকে। ওই মেয়র নানুর ছেলে। লোকটা হেসে ভোরকে দেখে বলে,
-” আরে ব্যাটা তুই তো দেখছি তোর বাপের কার্বন কপি! সাথে নসিব টাও মিলে গেছে। তোর মা ডিভোর্স নিয়ে অন্যত্র বাসা বেঁধেছে। আর তোর বাপের মা অবশ্য..”
-” সাদমান ভাই! বেশি কথা বলবে না।”

লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে অরুণ গম্ভীর সুরে বলে। ভোরের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। চোখটাও ভরে উঠলো। পাতা অবাক! এই লোক আবার কে? সাদমান চোধুরী হাসে উচ্চ স্বরে।
-” অরু দেখ তোর ছেলে তোর মতোই ন্যাকা কান্না করছে।”
অরুণ ছেলের গালে হাত রাখল। সাদমানের উদ্দেশ্যে বলে,
-” তুমি ভালো হলে না। সিগন্যাল ছেড়ে দিয়েছে। গাড়ি টানো?”
সাদমান ড্রাইভারকে ইশারায় না করে। জানালা থেকে মাথা সম্পুর্ন বের করে অরুণের ঘারের দিকটা দিয়ে উঁকি দেয়া পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,

-” বাবা বলল বিয়ে করেছিস? ওইটা তোর বউ বুঝি? আগেরটা থেকে ট্যু মাচ বেটার! তবে ছোট ছোট লাগছে। সেটা ব্যাপার না। এন্ড ইয়ু? অরুণের বড় ভাই, তোমার ভাসুর লাগি।”
অরুণ পাশের রাস্তা ক্লিয়ার হওয়ায় সেখান দিয়ে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায়। ওদিকে সাদমান গাড়িতে বসে হাসতে লাগলো।

থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ভোর ও অরুণের দুজনের মুখশ্রী থমথমে। ভোরের নাকটা লাল হয়ে আছে। চোখের পাপড়ি ভেজা। বাইকের হ্যান্ডেলে রাখা অরুণের হাতের রগ ফুলে উঠেছে। পুরনো কিছু বাজে স্মৃতি মাথার ভিতর কিল বিল করে। কপালের জেগে ওঠা নীল শিরা হেলমেটের কারণে অলক্ষ্যে। পরনের শার্টটা ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে বলিষ্ঠ শরীরের সাথে। পাতা চুপচাপ আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। লোকটা কে ছিল? বড় ভাই! কেমন বড় ভাই! পাতার মনে অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহস পায় না। এতদিনে এতটুকু চিনেছে অরুণ সরকার কে যে এখন প্রশ্ন করা মানে সেধে ঝাড়ি খাওয়া। তবুও দ্বিধায় ভুগে আমতা আমতা করে বলে,

-” কে ছিল লোকটা? আপনার পরিচিত?”
-” উইল ইউ প্লিজ সাট ইউর মাউথ পাতাবাহার!”
পাতার জবান বন্ধ হয়ে যায়। লোকটা এভাবে ধমক দিয়ে বলল যেন এখানে সব দোষ তারই।
-” নো! আপনি বলুন উনি কে? একদমই ধমক দিবেন না। উত্তর দিন?”
-” থাপ্পড় খাওয়ার শখ জেগেছে! ধাক্কা দিয়ে বাইক থেকে ফেলে দিব বেয়াদব!”
ধমকে পাতা ভয় পায় বেশ। তবে ভয় পেলে চলবে না। এভাবে ভয় পেয়ে দমে গেলে লোকটা আরো মাথায় চড়ে বসবে। সেও দ্বিগুণ তেজের সাথে বলে,

-” হ্যাঁ জেগেছে শখ। দিন ধাক্কা! অন্যের রাগ আমার উপর দেখাচ্ছেন কেন? যেখানের রাগ সেখানে দেখাতে পারেননি! তখন কোথায় ছিল রাগ?”
অরুণ পাশের ফুটপাতে বাইক থামায়। বাইক থেকে নেমে পাতাকেও টেনে নামিয়ে দিল।
-” কি হচ্ছে টাকি ভোরের বাবা?”
অরুণ জবাব দেয় না। তার মেজাজ মোটেও ঠিক নেই। সে বাইকে চড়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল শা শা করে‌। ভোর ঢোক গিলে জড়িয়ে আসা গলায় বলল,
-” আব্বু! আম্মু?..”
আর বলতে পারে না। ডুকরে কেঁদে ওঠে। অরুণ একহাতে ছেলেকে ঘুরিয়ে বুকে টেনে নেয়। গম্ভীর গলায় বলে,
-” আব্বু কাঁদে না। আম্মু এসে যাবে!”

ভোর কান্না থামায় না। বাবাকে জড়িয়ে ধরে নাক টেনে বলে,
-” ওই নানুর ছেলে একটুও ভালো না। মা’কে নিয়ে পঁচা কথা কেন বলল? আমি মেয়র নানুর কাছে বলে দেবো!”
অরুণের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। সে বাইকের গতি কমিয়ে দেয়। সামনে দৃষ্টি রেখে ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বলে,

-” কিছু অভিযোগ কারো কাছেই করতে নেই! কিছু কিছু কথা, দুঃখ, সুখ নিজের ভিতরেই গচ্ছিত রাখতে হয় মানিক সোনা!”
পাতা আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা সত্যিই সত্যিই চলে গেল? আশেপাশের অনেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে উৎসুক হয়ে। এভাবে একটা মেয়েকে বাইক থেকে টেনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল? তাদের সকলের মনেই কৌতূহল কাজ করছে। একটা দোকানি পাতার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
-” কি হয়েছে খালা? কুনো সমস্যা? কেডা ছিল?”
পাতা স্বয়ংবৎ ফিরে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জবাব দেয়,
-” মামা সমস্যা অনেক বড়। ওই লোকটা আপনার খালু। কথা হলো তার মাথা সবসময় গরম থাকে। কিছু বললেই ছ্যাত করে ওঠে। সে ধমক দিলো আমায় ।পাল্টা আমিও একটু মেজাজ দেখিয়েছি। ব্যস রেখে চলে গেলো! কোথাও একটু শান্তি নেই!”

বলে পাতা ব্যাগ কাঁধে ফেলে পা চালায়। আশেপাশের লোক গুলোর কৌতূহল মিটে যায়।এটাতো প্রত্যকেটা বিবাহিত কপোতীদের সমস্যা থুরি মান অভিমান। মিষ্টি খুনসুটি। তার সবাই নিজ কার্যালয়ে ব্যস্ততা হয়ে পড়ে। পাতা একটু হেঁটে রিকশা ডেকে নেয়। আর বেশি দূরে না এই পাঁচ মিনিটের রাস্তা তাই স্কুল। সে রিকশা ওয়ালাকে জলদি চালাতে বলে। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর পাতা রিকশা থেকে নেমে একটা স্প্রাইট কিনে নেয়। গরমে মাথা একটু ঠান্ডা করা দরকার। নাক উঁচু ম্যানারলেস রাগি লোকটাকে আজ হাতের সামনে পাক! পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে। শালার জামাই এভাবে রাস্তায় কেউ টেনে ফেলে দেয়। এটাতো রীতিমতো বউ নির্যাতন। নেহাতই সে তার জামাইটাকে একটু আকটু ভালোবাসে।

চোখে হারায়! তাই থানায় কেস টেস করলো না। আর গতকাল সকালে লোকটা এক অভাবনীয় কাজ করে পাতাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। জখম গালে আদুরে চুমু খেয়ে অধরে অধর ছুঁয়েছে আলতো ভাবে। এক বার না বেশ কয়েকবার। পাতা বোধহয় তখন বোধগম্য হারিয়ে রোবট বনে গিয়েছিল। ভাবতেই অধরকোনে লজ্জালু হাসির আবির্ভাব ঘটে। কপোলজোড় লালিমায় ছেয়ে যায়।

পাতা গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। টিচার্স আইডি কার্ড দেখে দাড়োয়ান লম্বা সালাম জানায়। পাতা খানিক হেসে মাঠ বরাবর হাঁটতে থাকে। টিচার্সরুম একেবারে স্কুলের মাথায়। বড় মাঠ পেরিয়ে যেতে হয়‌। পাতা একটু হাঁটার পর দেখতে পায় অরুণ সরকার হনহন করে হেঁটে আসছে। ঘেমে নেয়ে একাকার। মুখটা টমেটোর ন্যায় লাল হয়ে আছে। পাতার বেশ মায়া হয়। সমস্ত রাগ উবে যায় ওই মায়াময় আদুরে গম্ভীর মুখটা দেখে। ইশ লোকটার কি হাল হয়েছে গরমে। সাথে তো তার মেজাজটাও গরম আছে। হবে না? ওই সাদিক না সাদমান কি যেন নাম! যে কথাগুলো বলল মা, প্রাক্তন স্ত্রী/প্রেমিকা কে নিয়ে। একজন শান্ত মানুষেরই মেজাজ ঠিক থাকবে না! সেখানে এ তো অরুণ সরকার! পাতাকে দেখেও অরুণ প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অপরিচিত লোকের মতো হেঁটে যেতে থাকে বড় বড় পা ফেলে। পাতা দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অরুণ থেমে যায়। পাতা কাঁধে ঝুলানো ওড়না হাতের মুঠোয় পুরে উঁচু হয়ে অরুণের কপাল সহ মুখের ঘাম মুছে দেয় যত্ন করে। কপালে ভাঁজ ফেলে গম্ভীর মুখে বলে,

-” শুনুন ভোরের বাবা? ওত রাগ স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। রাস্তায় কত কুকুরই তো ঘেউ ঘেউ করে! সেসব কানে নিলে চলে? যাস্ট ইগনোর ম্যান!”
অরুণ এখনো থমথমে মুখে। কপালে গাঁঢ় ভাঁজ ফেলে পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। পাতা স্প্রাইটের বোতলটা অরুণের দিকে বাড়িয়ে বলে,
-” ধরুণ? এটা খেয়ে মাথা শরীর দুটোই ঠান্ডা করুণ! রাগ দেখালেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে না! লোকের কথা বাদ দিয়ে নিজের কথা ভাবুন। আপনার কলিজার কথা ভাবুন! তারপরও ভাবনা বাদ পড়লে আমার কথাও ভাবতে পারেন! আমি মাইন্ড করবো না। আসছি!”

পাতা মুচকি হেসে অরুণের হাতে বোতল ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। অরুণ ছোট ছোট করে চেয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতে থাকা স্প্রাইটের বোতলটা দেখে অজান্তেই অধর কোনে হাসির ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। নিমিষেই মন খারাপি দূর হয়ে যায়। গরমটাও কমে গেল যেন!
পাতা খানিকটা ফুরফুরে মেজাজে টিচার্স রুমে প্রবেশ করে। ক্লাস শুরুর দেড়ি আছে বেশ। গরমের জন্য আর সপ্তাহে একদিন পি টি হয় শুধু বুধবার। পাতা নিজের টেবিলে ব্যাগ রেখে চেয়ারে আরাম করে বসে। এসি যুক্ত রুম একটু স্বস্তি মিলছে। এই লোকটার সাথে জুড়ে যাওয়ার পর থেকে কেমন যেন বড়লোকি স্বভাব হচ্ছে তোর পাতু!!

তার আরামকে ব্যারামে পরিণত করতে আগমন ঘটে তার আরেক কলিগ রুপালি হোসাইন। পাতার থেকে বছর চারেক বড় হবে। বিবাহিত! একটা বাচ্চাও আছে। সে পাতার পাশে এসে থুতনি ধরে মুচকি হেসে বলে,
-” পাতা তোমার বুড়ো জামাই দেখছি বেশ রোমান্টিক হু? কামড়ে গালে দাগ বসিয়ে দিয়েছে।”
পাতার মেজাজ খারাপ হয়। আশ্চর্য সঙ্গ দোষে সত্যিই লোহা ভাসে। তাই তো লোকটার সাথে থাকতে থাকতে তারও মেজাজ বিগড়ে যাবার রোগ হয়ে গেছে। পাতা কিছু বলবে এর আগে আরো একটা কলিগ এসে বলে,
-” শুনেছি বুড়োরা রোমান্টিক হয় আজ দেখলামও। তোমার ভাগ্য ভালো পাতা!”
রুপালি হেসে বলে,

-” তোমার জামাই তোমাকে খুব আদরে রাখে দেখছি! রাখবে না? আমাদের পাতা এতো কিউট। বুড়ো কালে এরকম সুন্দর কচি বউ পেয়েছে বলে কথা!
পাতা দাঁতে দাঁত চাপে। এখন এসব সয়ে গেছে। এসব শুনে আর চোখ ছলছল করে না।বরং জিভ লকলক করে কড়া কথা শুনিয়ে দেয়ার জন্য। এই দুদিন ভদ্রতা ও সিনিয়রের খাতিরে চুপ থাকলেও আজ চুপ থাকে না। ক্লোজআপ হেসে বলল,

-” আমার হাসব্যান্ড মোটেও বুড়ো নয় আপু! এখানে আসে, দেখো না? কোন দিক দিয়ে বুড়ো লাগে? সে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। আর হ্যাঁ সত্যিই আমাকে ভালোবাসে। আদর করে, বলা চলে মাথায় তুলে রাখে। আমি যা বলবো তাই! এর বাইরে একটা কথাও বলবে না। এতো কেয়ার করে!! মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে যাই। রান্না করে খাওয়াবে এ বেলা ও বেলা! ধমক দেয়া তো দূর! পাতু পাতু বলে পিছু পিছু ঘুরে। যখন যেটা চাইবো তার ডাবল এনে দিবে। এতো এতো শপিং করিয়ে দিয়েছে তারপরও রোজ শাড়ি, গয়না কসমেটিকস ব্লা ব্লা আনবে! গয়নার কথা নাই বলি! আমার বাইকে চড়তে ভালো লাগে তাই বাইক কিনেছে। গাড়ি ছেড়ে আজ বাইক নিয়ে পৌঁছে দিয়ে গেছে।”

বলেই লজ্জার ভান করে। সাথে মনে মনে শ খানিক তওবা কাটে। এগুলো যদি ওই লোকটা শুনতে পেত পাতার গর্দান কাটা পড়তো। অন্যদিকে পাতার কলিগদের মুখ খানা দেখার মতো হয়েছে। হবে না? ওমেন!! দেখবে, শুনবে সাথে আফসোস করবে। পাতা তাদের আফসোস বাড়িয়ে দিতে নিজের গলায় অরুণের দেয়া পেনডেন্ট দেখিয়ে বলে,
-” এটা উনি বিয়ের আগে দিয়েছিল! ডায়মন্ডের! আরো দিয়েছে। মাঝে মাঝেই দেয়। গোল্ড প্লাটিনাম কত কিছু!!
রুপালির চোখে অবাকতা। তার স্বামীও যথেষ্ট বিত্তশালী। তাদের লাভ ম্যারেজ কই তাকে তো এতো কিছু গিফট করে না। শপিং মলের কথা শুনলেই না না করে কেটে পড়ে। পাতা এবার মজা পাচ্ছে। সে আরেকটু মশলা মাখিয়ে বলে,
-” আপু কি হলো? আপনাদের স্বামী ভালো বাসে না ? যত্ন আত্তি করে না, নাকি? তাহলে আই হ্যাভ আ সল্যুশন। ওই বেডারে ছেড়ে দিয়ে একটা বড়লোক বুড়ো জুটিয়ে নিন। দেখবেন মাথায় তুলে রাখবে। ”
বলে হেসে উঠলো উচ্চ স্বরে। হাসি থামিয়ে বললো,
-” মজা করছি আপু কিছু মনে করবেন না কিন্তু হ্যাঁ? যাস্ট ফান।

চুপচাপ গম্ভীর মুখে বসে আছে ভোর সরকার। ক্লাসের একেবারে শেষ ব্রেঞ্চে। পাশে টুটুল নামক তার এক সহপাঠী বসে আছে। অরুণ এখানেই বসিয়ে দিয়ে গেছে। তারা যখন ক্লাসে ঢুকে ভোরের চোখ সর্বপ্রথম কোনের ফাস্ট ব্রেঞ্চে পড়ে। যেখানে রোজ সে আর রোহান বসতো। ওই ব্রেঞ্চে রোহান তো বসে আছে কিন্তু ভোরের জায়গায় তাসকিন বসে আছে। ভোরের মুখটা আবার মলিন হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় রোহানের মায়ের কথা। রোহান কি সত্যিই তার সাথে আর মিশবে না? এখন তো ওর মা নেই চুপি চুপি কি ভোরের সাথে কথা বললে ক্ষতি হবে? অরুণ ভোরের মলিন মুখ দেখে বলে,

-” জায়গা নেই অন্যত্র বসো?”
অন্য সময় হলে ভোর জেদ করতো যে সে রোহানের‌ পাশেই বসবে। তা নাহলে ক্লাসই করবে না। কিন্তু এবার ভোর সায় জানালো। অরুণ ছেলের গোমড়া মুখ দেখে তাসকিন নামক বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” আংকেল তুমি একটু এই পাশে বসবে? ও রোহানকে ছাড়া..”
ভোর টেনে নিয়ে আসে বাবাকে। সে বসবে না রোহানের কাছে। কখনোই না। দরকার নেই তার রোহানের।
-” আব্বু আমি টুটুলের কাছে বসবো। তুমি যাও? যাও?”
অরুণ বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে দুজনের মধ্যে। সে ছেলেকে কোলে নিয়ে রোহানের কাছে গিয়ে বলে,
-” রোহান দুজনের ঝগড়া হয়েছে?”
রোহান মাথা নিচু করে না বলে।

-” তাহলে কি হয়েছে আঙ্কেল? বলো আমাকে ভোর দুষ্টুমি করেছে আবার? মেরেছে তোমায়?”
অরুণ নরম গলায় বলে রোহানকে। রোহান ভোরের দিকে আড়চোখে চেয়ে চুপ করে থাকে। আশেপাশের সব বাচ্চারাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভোরের এবার অভিমান হয় বাবার উপর। সে রাগে দুঃখে বলে,
-” মারিনি আমি! না দুষ্টুমি করেছি! ও সেকেন্ড হয়েছে তাই ওর মা বকেছে! আমার সাথে মিশতে মানা করে দিয়েছে!”

অরুণ শান্ত চোখে ছেলের দিকে তাকালো। ছেলেটার চোখে পানি টলমল করছে। রোহান মাথা নিচু করে বসে আছে। তার চোখেও পানি টলমল করছে। অরুণ রোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” ইটস ওকে আঙ্কেল! তুমি তোমার মতো থেকো!”
বলে লাস্ট ব্রেঞ্চে টুটুলের পাশে বসিয়ে সেও পাশে বসে। কিছু বলে না। সে জানে এখন কিছু বললেই কেঁদে দেবে ছেলেটা। সে ভোরের ব্যাগ থেকে রুমাল টিস্যু বের করে নাম মুখ মুছে দিল। ছেলের গালে মুখে আদর করে। পাশের টুটুলের মাথায় হাত বুলিয়ে ভোরের ব্যাগ থেকে একটা ডেইরি মিল্ক সিল্ক চকলেট তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-” এটা তোমার! আমার ছেলেটাকে একটু দেখিও কেমন?”
টুটুল চকলেট নিবে না। অরুণ তার হাতে দিয়ে গাল টিপে দিল। টুটুল মুচকি হেসে মাথা চুলকায়। অরুণ ছেলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
-” এই ভোর কোথায় হারিয়ে গেলি? টিচার এসেছে! দাঁড়া না?”
ভোর মাথা তুলে দাঁড়ায়। টুটুল হেসে বলে,
-” তুই ঘুমাচ্ছিলি ভোর? রাতে ঘুমাস নি?”
ভোরও মুচকি হাসে।
-” ঘুমাচ্ছিলাম না।”

ক্লাস শুরু হয়। ভোর চুপচাপ ক্লাসে মনোযোগী হয়। পরের এক্সামে সেও ভালো করবে। তখন রোহানের আম্মু খুশি হয়ে বলবে ‘রোহান তুই আজ থেকে ভোরের সাথে মিশবি।’ তখন সে আব্বুর মতো করে বলবে ‘ভোরের কোনো বন্ধুর দরকার নেই। দরকার থাকলেও রোহানের দরকার নেই হুম!’
পরপর তিনটা ক্লাস শেষ হয়ে লাস্ট ক্লাসে পাতার আগমন ঘটে। ভোর খুশিতে পারেনা চিল্লিয়ে ওঠে‌। সে মুচকি মুচকি হাসে পাতার দিকে তাকিয়ে। পাতা ক্লাসে প্রবেশ করেই ভোরকে খোঁজে। রোজ তো সামনেই বসে রোহানের পাশে। আজ নেই কেন? পিছনের দিকে নজর যেতেই ভোরকে দেখতে পায়। তার দিকে তাকিয়েই মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। পাতা ক্লাস শুরু করে।
টুটুল ভোরের পাশ ঘেঁষে বসে বলে,

-” ভোর মিস তোর আম্মু হয়?”
-” হুম!”
-” মিস তো অনেক ভালো! আমাকেও অনেক আদর করে। আমাকে কেন সবাইকেই!”
ভোরের ভালো লাগে না তার কথা। আগে মিস ছিল তাই আদর করেছে। এখন ভোরের আম্মু! তাই শুধু ভোরকে আদর করবে! পাতা বাচ্চাদের পড়িয়ে সবার হোম ওয়ার্ক চেক করে সাথে নতুন করে হোম ওয়ার্ক দিয়ে দেয়। এরমধ্যেই টিফিনের ঘন্টা বাজে। সাথে প্লে, নার্সারি, ওয়ান ও ট্যুয়ের বাচ্চাদের ছুটি। সবাই সমস্বরে চিল্লিয়ে উঠে ঘন্টার আওয়াজ শুনে। ভোর চটজলদি ব্যাগ পত্র গুছিয়ে পাতার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে। পাতা মুচকি হেসে ভোরকে নিয়ে হাঁটা দেয়। এই ছেলেটা এতো আদুরে!

পাতা ভোরকে নিয়ে টিচার্স রুমে যায়। সব টিচার ভোরের দিকে তাকিয়ে টুকটাক মজা করে। ভোর লজ্জা পায়। পাতার ওড়নায় মুখ লুকিয়ে থাকে। একে একে সব টিচার লাঞ্চ বক্স নিয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে চলে গেলে ভোর তবেই স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। পাতা ভোরকে টেবিলের উপর বসিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যায়। একটু পর ফিরে এসে ব্যাগ থেকে লাঞ্চ বক্স বের করে। তিন বাটির বক্স; একটাতে মিনি সাইজের দুটো বার্গার। যেটা অরুণ সরকার নিজ হাতে বানিয়ে দিয়েছে। অপরটাতে পোলাও ও মুরগির মাংস। পাতা প্লেটে খাবার বেড়ে নেয়। ভোরকে পানি খাইয়ে দিয়ে মুখে খাবার দেয়। ভোর মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে বলে,
-” আম্মু টুটুল আমার নতুন ফ্রেন্ড। ও না অনেক মজার মজার কথা বলে। ও খুব ভালো!”
-” তাই?”
-” হুম! আম্মু তুমিও খাও না?”

পাতা নিজেও খাওয়া শুরু করে। ভোর তার নতুন বন্ধুর গল্প জুড়ে দিলো। একটার পর একটা। পাতা রোহানের কথা বলে না। ভোরের বাবা ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়েছে তাকে। সে অবাক হয়েছিল! ফাস্ট সেকেন্ড তো যাস্ট একটা নাম্বার। একজন ফাস্ট, সেকেন্ড হয়েছে এর মানে এই না যে তারা মেধাবী আর যারা আসে নি তাঁরা কম মেধাবী। সবাই মেধাবী। ফ্যাক্ট হলো কেউ কম চর্চা করে তো কেউ বেশি। কেউ সারাবছর ক্লাসে ভালো ভাবে পড়া না দিতে পারলেও এক্সামে ভালো নাম্বার পায়। আবার অনেকে সারাবছর ভালো পড়া দিতে পারলেও এক্সামে ভালো নাম্বার তুলতে পারে না। এখানে ভাগ্য কাজ করে অনেকাংশেই। পাতা ভোরকে বলে,

-” আমার ক্লাস শেষ হতে সেই দুটো আড়াইটা বাজবে! তুমি বাড়ি চলে যাও তোমার ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে?”
ভোর তৎক্ষণাৎ মানা করে বলে,
-” আমি তোমার সাথেই যাবো আম্মু!”
পাতা বুঝিয়ে মানানোর চেষ্টা করে। জিদ্দি ভোর তার কথায় অটল। সে আম্মুকে ছাড়া যাবে না মানে যাবে না। পাতা হার মানে তার জেদের কাছে। পরবর্তী ক্লাস ভোরকে বগলদাবা করেই শেষ করে।

অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছে অরুণ সরকার। এমনিতেই কাল জলদি অফিস যাওয়ার জন্য কিছু কাজ পেন্ডিং পরে আছে। সেগুলো শেষ করতে না করতেই নতুন এক ক্লায়েন্টের আগমন ঘটে। সাথে ফটোশুট ছিলো মডেলের। তার উপর আজ অফিসে রুবির আগমন ঘটেছে। হুট করেই। সে জানতোই না রুবি আজ অফিসে আসবে আর জয়েন করবে। জানলে অয়েল কামের একটা ব্যবস্থা করা যেতো। তবুও দু তিনটা ফুলের বুকেয় দিয়েছে। রুবিকে মিসেস রুনার আন্ডারে দিয়েছে। মাঝে মাঝে সে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। অরুণ পিয়নকে ডেকে এক কাপ কড়া লিকারের চা বানাতে বলে নিজ কেবিনে রিল্যাক্সড হয়ে বসে। নাও অরুণ নিডস আ টাইনি রেস্ট। হঠাৎ ফোনটাতে নোটিফিকেশন আসে। অরুণ চেক করে। শুভ ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, কালকের পার্টির ভেন্যু। অরুণ চিন্তায় পড়ে যাবে কি যাবে না। হঠাৎ আরেকটা মেসেজে অরুণের চোখ পড়ে ‌। মেসেজ ওপেন করতেই তার অধরকোনে হাসি ফুটে ওঠে। পাঁচটা দুই মিনিটে ম্যাসেজ এসেছে। সে খেয়ালই করে নি।
~সম্মানীয় নাক উঁচু ম্যানারলেস লোক,

আসসালামুয়ালাইকুম! শুনুন প্রিয় লিখলাম না বলে আবার ধমকাবেন না কিন্তু। আমি ভেবেচিন্তেই লিখেছি। প্রিয় লিখলে আপনি আবার ধমক দিতেন যে ‘বেয়াদব মেয়ে কত বড় আমি তোমার। সম্মান দিয়ে কথা বলবে তা না প্রিয় লিখে ছ্যাবলামি করছো?’
মূল কথায় আসি! আপনার রাগ পড়েছে কি? নাকি মাথাটা এখনো গরম? যদি মাথা এখনো গরম থাকে জলদি বাড়ি ফিরুণ! আর যদি ঠান্ডা থাকে তাহলে আরো জলদি বাড়ি ফিরুণ। ভোরের এখনই ইমার্জেন্সি বাবা চাই! জলদি আসবেন কিন্তু নইলে দারাজ থেকে নতুন বাবা অর্ডার করে দিবো!
ইতি
ভোরের আম্মু!

অরুণ পুরোটুকু পড়ে ফোন পকেটে পুরে নেয়। ঘড়িতে রাত সাতটা বেজে বিশ মিনিট। এখন বাড়ি ফেরা জরুরি। ছেলের বাবা চাই ইমার্জেন্সি। ছেলের আম্মু হুমকি দিয়েছে। সে সুজনকে ডেকে রুবির কাছে যায়। রুবি অরুণকে দেখে মুচকি হাসলো। অরুণ তাকে বলল,
-” বাড়ি ফিরবে না? লেডিসদের সাতটা বাজেই অফিস ছুটি ঘোষণা করা আছে।”
-” হ্যাঁ যাবো ভাইয়া! আপনি কখন ফিরবেন একসাথেই ফিরি?”
-” হুম! মিসেস রুণা? অফিস বাস এখনো ছাড়ে নি। আপনার অপেক্ষায়! টেনশনের কিছু নেই। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ!”
-” থ্যাংকস বস!”
বলে মিসেস রুণা কেবিন ছাড়ে। অরুণ হাঁটা দেয়। রুবি তাদের পিছু পিছু। সুজন নিজ কেবিনে যায়। তার এখনো ছুটি হয় নি। সব কাজ খতম করেই তাঁর নীড়ে ফেরার পালা।

-“কেমন লাগলো অফিস? কোনো প্রবলেম হয়েছিল?”
অরুণের কথায় রুবি মুচকি হেসে বললো,
-” কোনো প্রবলেম হয় নি ভাইয়া। অনেক ভালোও লেগেছে।”
-” প্রবলেম হলে বলবে বিনা দ্বিধায়। আর রূপকেও সাথে আনতে পারো!”
-” মায়ের কাছেই থাকে এখন। কাঁদে না। আর তাছাড়াও অফিসে ওকে টানা ঝামেলা লাগে!”
অরুণ হেসে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। পাশে ড্রাইভিং সিটে রঞ্জু ড্রাইভ করছে। রুবি একা পেছনে বসে ফোন টিপছে। অরুণ পাতাকে কল করবে ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে। কিন্তু ফোন বের করে না। গ্যালারিতে ঢুকে পাতা ও ভোরের ছবি দেখতে থাকে। এই কয়েকদিনে তার গ্যালারির এক ফোল্ডার ছেলের আম্মু ও ছেলের ছবিতে ভরে গেছে। নানা ভঙ্গিতে ওঠা দুজনের কাপল ছবি। অরুণের অধর কোণে আবার হাসির বিস্তার ঘটে। তার মন প্রসূণে আগে একটা ছোট্ট চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শোনা যেত। এখন সেই ছোট্ট চড়ুইয়ের আরেকটা সঙ্গী এসেছে। এখন জোড়া চড়ুইয়ের কলতানে মুখরিত তার প্রসুণ। সেথায় আর দুঃখ, মলিনতার আভাস খুব একটা পাওয়া যায় না ইদানিং। সে দোয়া করে তার চড়ুই জোড়া যেন সর্বদাই প্রাণোচ্ছ্বল হাসিখুশিতে থাকে।

গোধূলির বিদেয় শেষে তিমিরের হাতছানি। সকালে কালো মেঘের ছিটেফোঁটা না থাকলেও বিকেল থেকেই ধীরে ধীরে কালো মেঘের আবির্ভাব ঘটে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই বাতাস বইছে এলোমেলো। মৃদু বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সাথে দীগন্তের বুক চিড়ে ভয়ানক গর্জন। সন্ধ্যা অবদি পাতা, ভোর, আনিকা, মিনু, আভারি আর ছোট্ট রূপ বাড়ির ছাদে বসে ছিলো।আনিকা, ভোর খেলছিল। রূপ হাম্পুরা দিয়ে এদিকে ওদিকে যাচ্ছিলো আনন্দের সহিত। বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে তারা নেমে আসে। বর্তমানে ভোর গালে হাত দিয়ে বাবু হয়ে বসে আছে সোফায়। দৃষ্টি তার মেইন দরজায় নিবদ্ধ। আনিকা পাশে বসে হোমওয়ার্ক করতে ব্যস্ত। ভোরের হোমওয়ার্ক পড়াশোনা শেষ। সে শুধু বাবার অধীর অপেক্ষায়।

পাতা তার পাশে বসে আরিয়ানের সাথে তর্ক করতে ব্যস্ত। তর্কের বিষয় মিনিট অন্তর চেঞ্জ হয় কিন্তু তাদের তর্ক ফুরায় না। পাতাবাহার নামক বিড়াল ছানা ভোরের কোলে বসে ভোরের মতই অরুণের অপেক্ষায় আছে। আসমা বেগম রুপকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন। মিনু আভারি রান্না শেষ করে, টেবিলে খাবার পরিবেশন করে নিজ ঘরে বসে রেস্ট করছে ‌। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। ভোর খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। বিড়াল শাবকটি বেশ ভয় পায় এতে। সে পাতার পা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মিও মিও করে। ভোরের সেদিকে খেয়াল নেই‌ সে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। বাবাকে দেখেই দৌড়ে কোলে উঠে। অরুণ ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে ভিতরে প্রবেশ করে। রুবি তার পিছনে। আনিকা মাকে দেখে এগিয়ে আসে। রুবি তাকে কোলে নিয়ে চুমু খায়‌।

-” তোমার ভাই কোথায়?”
-” ঘরে দাদির কাছে! ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়।”
রুবি আনিকাকে নামিয়ে দিয়ে ঘরে দিকে হাঁটা দেয়। আগে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে মাতৃ মনটাকে তৃপ্ত করুক। আরিয়ান আনিকাকে টেনে নিয়ে কোলে বসায়। অরুণ ছেলেকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ভোর বাবার গলা জড়িয়ে। পাতা তাদের পিছু পিছু আর পাতাবাহার সবার পিছু পিছু।
অরুণ রুমে প্রবেশ করে ছেলেকে বিছানায় বসিয়ে ব্লেজার খুলে। পাতা চটজলদি আলমারি খুলে অরুণের টি শার্ট ট্রাওজার বের করে । অরুণ সেগুলো খপ করে টেনে নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। পাতার কপালে ভাঁজ পড়ে। সে ভোরকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হলো? ভোর ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বোঝায় কি জানি! পাতা ভোরের মতো করে গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে। অরুণ সরকার সময় নিয়ে গোসল করে বের হয়। তবে নিত্যদিনের মতো খালি গায়ে মেল শ্যাম্পুর কড়া স্মেলে পাতার বশীভূত করার লুকে নয়। টি শার্ট পড়েই এসেছে। এতে পাতার চোখে মুখে খানিক নাখোশতা দেখা মিলে। অরুণ সেসবের তোয়াক্কাই করলো না। পাতাকে উপেক্ষা করে ভোরকে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেল। পাতা চোখ পিটপিট করে সোফায় বসা পাতাবাহারের দিকে চায়।

বিড়ালটিও পাতার দিকেই তাকিয়ে আছে। ক্ষণিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ পাতা বিছানা থেকে নামে। দৌড়ে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখল সবাই ডাইনিংএ বসে। মিনু খাবার বাড়ছে। পাতা গিয়ে মিনুকে সাহায্য করে। সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়। অরুণের পাতে ভাত,সবজি দিয়ে আড়চোখে লক্ষ্য করে তার গতিবিধি। লোকটার কি হলো? তাকে ইগনোর করছে এমনকি তাকাচ্ছেও না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে অরুণ ভোর রুমে যায়। পাতা সবার খাওয়া শেষে মিনু, আভারির সাথে খাবার খেয়ে নেয়। সাথে থালাবাটি ধুয়ে মুছে কিচেনে রেখে তবেই নিজ ঘরে যায়।

ভেজানো দরজা খুলতে সে অবাক! নাহ্ কেউ সারপ্রাইজ দেয় নি। বরং ঘর অন্ধকার বানিয়ে বাবা ছেলে শুয়ে আছে। অরুণ সরকার ধীমে সুরে গল্প শোনাচ্ছেন ভোর সরকারকে! পাতা আবছা অন্ধকারেই শব্দ করে দরজা লাগায়। অরুণের গল্পে বিঘ্নিত ঘটে। ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিরক্তিকর চাহনিতে পাতাকে একনজর দেখে গল্প বলায় মনোযোগ দেয়। পাতা হতাশ ভঙ্গিতে আলমারি খুলে সালোয়ার স্যুট নিয়ে গেল ওয়াশ রুমে যায়। শাড়ি চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসে। বিছানায় ঝপাস করে বসে। ভোর হেসে বলে,

-” আম্মু? এখানে এসো! আমার পাশে?”
পাতা ভোরের ওপাশে গিয়ে শুয়ে কম্ফোর্ট দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে নেয়। ভোর বলে,
-” আম্মু কি হয়েছে?”
পাতা যেন কথা বলার ওয়ে খুঁজে পেল। কম্ফোর্ট সরিয়ে উঠে বসে শান্ত ভঙ্গিতে বসে। ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় অরুণের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” ভোর! কি হবে আমার? কিছুই হয়নি। হয়েছে তোমার বাবার! সকালে ধমক দিল আমায়! ঝাড়ির উপর ঝাড়ি খেয়েছি! রেগে থাকার কথা কার?”
ভোর খানিক সময় ভেবে উত্তর দেয়,

-” তোমার!”
-” আমার তাই না? কিন্তু গাল ফুলিয়ে রেখেছে কে? রেগে আছে টা কে?”
ভোর এবার না ভেবেই চট করে উত্তর দেয়,
-” আব্বু!”
পাতা ভোরের গাল টিপে দিয়ে বলে,
-” তোমার বাবার মুড আমি বুঝতে পারি না। উপর ওয়ালা ওনাকে কি দিয়ে বানিয়েছেন উনিই ভালো‌ জানেন। হুট করে রেগে যাবে, ঝাড়ি দিবে। আবার এই হাসি ঠাট্টা করবে। হঠাৎ সায়লেন্ট মুডে চলে যাবেন। তাকাবেন না পর্যন্ত। ওনার মুড সুইং তো গিরগিটির থেকেও ভয়ংকর। ক্ষণে ক্ষণে চেঞ্জ হয়। এই দেখো কিভাবে তাকাচ্ছে? আমি কি ওনাকে গিরগিটি বলেছি নাকি? কথার কথা বলেছি! কিন্তু উনি আমায় বেয়াদব ট্যাগ দিবেন নিমিষেই। আচ্ছা আমার দোষ টা কি ক্লিয়ার বলবে কেউ? বললে আমি সুধরে নেবো। কথায় কথায় সায়লেন্ট হয়ে গিয়ে অপমান করার দরকার নেই।”
শেষের দিকে গলা কেঁপে উঠলো যেন! চোখটা দুশমনি করে বসলো বলে। পাতা সামলে নেয় নিজেকে! ভোরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,

-” তাহলে তুমিই বিচার করো ভোর! আমি আমার অভিযোগ দায়ের করছি!”
অরুণ মাথার নিচে এক হাত রেখে শুয়ে আছে। দৃষ্টি পাতার দিকে নিবদ্ধ। তার মুখের আদল স্বাভাবিক। ভোর গম্ভীর মুখে গভীর ভাবনায় পড়ে। সে কি বিচার করবে?সে কি অর্ডার অর্ডার বলা জর্জ সাহেব নাকি যে বিচার করবে? তবুও সে বিচার করবে বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। বাবা ও আম্মুকে পর্যবেক্ষণ করে বেশ সময় নিয়ে। সে বাবাকে পানিশমেন্টও দিতে পারবে না। আবার আম্মুকেও দুঃখি দেখতে পারবে না। হঠাৎ তার মাথায় আইডিয়া আসে। পাতার কোলে বসে মুচকি হেসে বলে,
-” ও আম্মু? তুমি বলেছিলে না যে আব্বু যখন রাগ করবে, কথা বলবে না! তখন যেন আমি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। আদর করি?”

পাতার কপালে ভাঁজ পড়ে। গম্ভীর স্বরে হুম বলে। অরুণ কান খাঁড়া করে রাখে। ছেলের পরবর্তী কথা কি হবে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। ভোর মিষ্টি করে বড়দের মতো বুঝানোর সুরে বলে,
-” আব্বু বোধহয় তোমার উপর একটু একটু রেগে আছে। তুমি বরং আব্বুকে একটু আদর করে দাও আব্বুর রাগ গলে পানি হয়ে যাবে! তোমার সাথে এতো এতো কথা বলবে। দেখে নিও?”
অরুণের অধরকোণে হাসির দেখা মিলল। পাতা খেয়াল করে সেটা। বিড়বিড় করে কয়েকটা ভদ্র গালি দিতে ভুলে না। ভোরকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে কম্ফোর্টে নিজেকে পুনরায় মুড়ে বলল,
-” বাবার জন্য খুব দরদ তাই না ভোর? আমি তো কেউ না। থাক সে কথা! দরকার নেই ওনার কথা বলার। উনি আমার সাথে কথা না বললে যেন আমি কেঁদে গঙ্গা যমুনা ভাসিয়ে দিবো!”

ভোর কাঁদো কাঁদো মুখে অরুণের দিকে তাকালো। অরুণ ছেলেকে আশ্বস্থ করে শুইয়ে দিল বালিশে। পাতার গায়ে দেয়া কম্বোর্ট টেনে ছেলে সহ নিজের শরীরেও দিলো। ভোরকে একহাতে বুকে জড়িয়ে আরেক হাত আরেক হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাতার পেটে রাখে। পাতা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিবে কিন্তু অরুণ তার আগেই সরিয়ে কৌশলে কামিজের ভিতরে নেয়। পাতা রেগে যায়। লোকটা মোটেও ভালো না।দু হাতে সর্বশক্তি দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বলিষ্ঠ হাত। কিন্তু ব্যর্থ হয়। অরুণ সরায় না বরং শক্ত করে ধরে রাখে।
-” আমি এমনিই। আর এই এমন লোকটাকেই সহ্য করতে হবে তোমাকে। কোনো অভিযোগ শোনার সময় আমার নেই।”

-” সব সময় আপনার মন মর্জি চলবে না। দাসি না আপনার!”
-” থাপরে গাল ফাটিয়ে দিবো বেয়াদব! দাসি কেমন ভাষা? বউ তুমি আমার! একটামাত্র আদুরে বউ!”
পাতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এই লোক মানুষ না মোটেও! এ লোক পাগলা ক্ষ্যাপা ষাঁড়। শালার জামাই! ভোর বাবার বুক থেকে মাথা তুলে উঠে বসে। অরুণের চুলের গোছা টেনে ধরে চিল্লিয়ে বলে,
-” আমার আম্মুকে বকলে কেন তুমি? পচা আব্বু?”

পাতা বাহার পর্ব ৩৮(২)

অরুণ পাতাকে ছেড়ে ছেলের হাত ধরে। পাতা উঠে বসে গোল গোল করে তাকায়। পরক্ষণেই হেসে বলে,
-” ভোর আরো জোড়ে টানো! একেবারে টাক বানিয়ে দাও। নাক উঁচু ম্যানারলেস অসভ্য লোক কোথাকার।”
ভোর বাধ্য ছেলের মতো তার আম্মুর কথা মেনে নেয়। অরুণ এটা ওটা বলে ভোলানোর চেষ্টা করে ভোর ভোলে না। তার কাজে অটল সে। অরুণ হার মানে। শান্ত স্বরে বলে,
-” স্যরি পাতাবাহার! আর এমন হবে না। ভোরকে ছাড়তে বলো? ইটস হার্টিং!”

পাতা বাহার পর্ব ৪০