পাতা বাহার পর্ব ৬০
বেলা শেখ
টিক টিক টিক! সময় বহমান। সময়ের পৃষ্ঠা উল্টে পাল্টে তিনটে বসন্ত কেটে যায় চোখের পলকে। পরিবর্তন সাধিত হয় প্রতিটি কোনায়। ঝড় ঝাপটা দুঃখ আনন্দ মিলে কেটে যায় মানব জীবন। সরকার বাড়ির আঙিনায় ক্রিকেট খেলার জন্য স্বল্প দূরত্বের পিচ বানিয়েছে আরিয়ান! ছোট বেলা থেকেই সে ক্রিকেট প্রেমী মানুষ! স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হবে। একদিন বাবা অনিক সরকারকে জানালে তিনি বাঁধা দেন না। তবে জানান,
-” আমারও ছোট বেলায় শখ ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হবো! ক্লাস নাইনে সাইন্স নেওয়ার পর শখ মিটে গেছে। তুমি বাচ্চা ছেলে শখ করেছো, হবে! আগে ক্রিকেট খেলো তারপর দেখা যাক!”
আরিয়ান খুশিতে পারে না নেচে দেয়। চলতে থাকে টুকটাক খেলাধুলা! একবার এলাকার সমবয়সীদের সাথে ম্যাচ খেলার সময় বল লেগে মাথা ফাটিয়ে এনেছিলো। অরুণ তাঁর হাল দেখে পেটে হাত রেখে রাক্ষুসে হাসি হেসেছিল। পিঞ্চ করে কান পচিয়ে দিয়েছিলো! তাঁর ক্রিকেট খেলার শখ সেদিনই মাটি হয়ে গিয়েছিল।তবে ক্রিকেট ভালোবাসে সে। ছোট ভোরকেও তাঁরই পথে হাঁটতে দেখে আরিয়ান প্রথম প্রথম মনে মনে হাঁসতো। তবে ভোরের খেলার প্রতি ভালোবাসা ও দৃঢ় মনোবল দেখে আরিয়ান অবাক হয়। আর এইটুকুন বাচ্চা দুর্দান্ত বোলিং করে। ব্যাটিং অবশ্য কোনরকম! আরিয়ান অরুণকে জানালে অরুণ গুরুত্ব দেয় না খুব একটা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তাই আরিয়ান পাতাকে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি ভর্তি করিয়েছে। অরুণ আপত্তি করলেও পাতা তাকে সামলে নিয়েছে। তবে অরুণ হুমকি দিয়েছে পড়াশোনার ক্ষতি হলে দেখে নেবে একেকটাকে। ভোর তো খুশিতে আত্মহারা! পড়াশোনা যেমন তেমন সে ক্রিকেট চর্চায় খুব আগ্রহী। শুক্র শনি ছুটির দিন সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ট্রেইনিং করে। বুধ বৃহস্পতি বিকেল চারটা থেকে ছয়টা অবধি।
স্কুল মিস গেলেও ভোর ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে খুব নিয়মিত ও আগ্রহী! রেজাল্ট কোনরকম টেনেটুনে।এই নিয়ে অরুণের ঝাড়িও কম শোনে না। তবে তাঁর আম্মু আছে তো তাকে বাঁচানোর জন্য। বর্তমান সে সরকার বাড়ির আঙিনায় চাচুর বানানো পিচে খেলছে। তাঁর খেলার সঙ্গী আনিকা, রূপ, নয়ন ও আভারী! ছোট ভাবনাও উপস্থিত। সে হাত তালি দিয়ে ভাইকে চিয়ার্স করছে। নয়ন তাকে দূরে যেতে বলে। বল না লেগে যায়। ভাবনা তো ভাবনাই সে যাবে না মানে যাবে না। ভোর দক্ষ হাতে বল ঘুরিয়ে বল করার প্রস্তুতি নেয়। তখনই ব্যাট হাতে রূপক সরকার গলা উঁচিয়ে বলে,
-” ভোর ভাই আস্তে হ্যাঁ? আউট হলে খেলবো না কিন্তু! তোমার বল আমাকে ব্যাথা দিলে আমা’কে বলে বকা খাওয়াবো কিন্তু!”
ভোর ছোট ছোট চোখে চায়। রূপ তাঁর ধবধবে দাঁত দেখিয়ে হাসে হি হি করে। ভোর একটু দূরে যায় বল করার জন্য। পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও জার্সি। মাথায় স্পোর্টস ক্যাপ। ভোর এখন সেই ছোট্ট টি নেই। না সেই গুলুমুলু ভাব! হ্যাংলা পাতলা শরীর তাঁর; উচ্চতা সারে চারের হবে টেনেটুনে ।ছোট বেলার এখনকার ভোরের মাঝে বিরাট ফারাক! ভোর দূর থেকে দৌড়ে এসে দ্রুত গতিতে বল করে। বল কোথা দিয়ে গেলো রূপ বুঝতেই পারে না। সে ব্যাট ফেলে কোমড়ে হাত রেখে বলে,
-” খেলবোই না আমি! আমি ছোট না? আস্তে বল করতে পারো না?”
-” আচ্ছা! ব্যাট তোল। আস্তে বল করবো! এই আনি যা বল আন?”
গলা উঁচিয়ে বলে ভোর সরকার। আনি ফোঁস ফোঁস করতে করতে বল এনে দেয়। ভোর আস্তে বল করে। রূপ বলে আঘাত করলে সেটা বাউন্ডারির বাইরে! সে ব্যাট ফেলে নাচতে শুরু করে ‘ছক্কা ইয়ে’ ! দূর থাকা ছোট্ট ভাবনা দৌড়ে আসে পিচে। দু হাত উঁচুতে তুলে রূপের সাথে ঘুরে ঘুরে নাচে আর ‘চক্কা চক্কা’ বুলি আওড়াতে থাকে। ভোর এগিয়ে এসে বোনের মাথার উপর তাল গাছের ন্যায় ঝুটিটা টেনে বলে,
-” এই ভাবনা যাও? ওই খানে গিয়ে বসো। বল লাগবে!”
ভাবনা নাচ থামিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে,
-” আমি কেলি পিলিজ ভাই?”
-” নাহ্। আগে বড় হও তারপর খেলবে! যাও?”
ভাইয়ের নিষেধাজ্ঞা শুনে ছোট্ট ভাবনার মুখ খানি এইটুকুন হয়ে যায়। গাল ফুলিয়ে সে চলে যায়। নয়ন ভাবনার দুঃখি মুখখানি দেখে ভোরকে বলে,
-” অলু লাগ কললো তো!”
ভোর ভাবনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হালকা গোলগাল পিচ্চিটা শব্দ করে হেঁটে যাচ্ছে। ভোর ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে অল্প। রূপ ব্যাট হাতে তুলে নিয়ে বলে,
-” করুক রাগ! মিষ্টি চকলেট দিলে রাগ চলে যাবে। এই ভোর ভাই বল করো!”
আভারি বল এনে দেয়।ভোর বল করে। এবার আর ছক্কা হাঁকাতে পারে না রূপ। বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। এবারের হাসি নয়ন উপহার দেয়। সে নাচতে নাচতে গিয়ে রূপের হাত থেকে ব্যাট নেয়। এবার তার ব্যাট করার পালা। আভারি ছেলের কান্ডে হাসে। রূপ গাল ফুলিয়ে চলে একপাশে দাঁড়ায়।
-” আমি আমা’কে বলে দিবো। তুমি আউট করেছো আমায়। আমি ছক্কা মেরেছি তোমার সহ্য হয় নি তাই না? পঁচা ভাই!”
ভোর এগিয়ে এসে তাঁর মাথায় চাটি মেরে বলে,
-” কিছু হলেই আমা’ আমা’ । আমা’র চামচা চুপ থাক! আরেকবার আমা’ আমা’ করলে তোকে বল বানিয়ে খেলবো বাঁদর!”
রূপ ঝাড়ি খেয়ে ভোঁতা মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। সে সত্যিই বলে দিবে আমা’কে। হুহ! ভোর বল হাতে নিয়ে পিচে দাঁড়ায়। নয়ন মিষ্টি করে হেসে বলে,
-” ভোল ভাই? আস্তে বল কইলো? আচ্ছা?”
ভোর মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। নয়ন ‘র’ উচ্চারণ করতে হিমশিম খায়। ‘র’ বললেও শোনা ‘ল’ ই যায়। ভোর ধীর গতিতে পরপর বল করে। চারবারের বেলায় নয়ন আউট হয়ে যায়। এবার ব্যাটিং করতে আসে আনিকা। পরনে লেগিংস ও টি শার্ট ; মাথায় স্পোর্টস ক্যাপ। ফর্সা মুখটায় সূর্যের তেজে লাল হয়ে আছে। সে ভোরের দিকে ব্যাট তাক করে ভাব নিয়ে বলে,
-” এই ভোর! একদম ভাব দেখিয়ে জোরে বল করার চেষ্টা করবি না। আউট গেলে ব্যাট দিয়ে তোর নাক ফাটিয়ে দিবো!”
-” খেলতে পারিস না আবার বড় বড় কথা! দূর্গন্ধ যুক্ত মুখটা বন্ধ রাখ!”
ত্যাড়া গলায় বলে ভোর আনিকা কটমট করে চায়। কিছু বলবে তাকে বলতে না দিয়ে ভোর ব্যাঙ্গ স্বরে বলল,
-” এখন নিশ্চয়ই বলবি ‘আমি বড় চাচ্চু এলে সব বলেদিবো!’ কান খুলে শুনে রাখ তোর বড় চাচ্চুকে ভয় পাই না আমি!”
আনিকা ভেংচি কেটে বলে,
-” ভয় পাস না? তাহলে যখন বকা দেয় চাচি মনির আঁচলে লুকিয়ে কেন থাকিস হুম? ভিতুর ডিম!”
ভোর এবার রেগে তেড়ে যাবে আভারী বিপদ সংকেত বুঝতে পেরে আটকে নেয়। আনিকা’কে চুপ করতে বলে ভোরকে বলে ঝগড়া না করতে। তাদের বুঝিয়ে সে চলে যায় বাড়ির ভেতরে। তাকে বাজারে যেতে হবে। ভোর কটমট করে চেয়ে বল ঘুরিয়ে তাঁর সর্বোচ্চ গতিবেগে বল ছুঁড়ে মারে। আনিকা চোখ রসগোল্লার ন্যায় বানিয়ে ‘ও আম্মু ‘ বলে সরে যায়। বল তীব্র গতিতে চলে যায় অনেক দূরে। আনিকা রেগে মেগে বলে,
-” যদি লাগতো আমার?”
-” তো?”
ভোরের এক রোখা জবাব। আনিকা রেগে ব্যাট ছুঁড়ে ফেলে বলে,
-” শয়তান ছেলে! চাচ্চু এলে আমি সব বলবো!”
-” আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম! চাচ্চুর চামচিকা যা বল নিয়ে আয়! নইলে তোর ডল হাউজ পিসপিস করবো!”
আনিকা রেগে গেলেও তার শখের ডল হাউজের কথা ভেবে দমে যায়। নইলে দেখা যাবে তাঁর ডল হাউজের রফাদফা করে ছাড়বে। সে রূপকে বলে বল এনে দিতে। রূপ সাফ সাফ মানা করে। আনিকা নয়নকে বললে নয়ন ভোরের দিকে চেয়ে মানা করে সে আনবে না। বল আনিকেই আনতে হবে। আনিকা ফোঁস ফোঁস করে ভোরের দিকে চায়। যেন এখুনি গিলে নেবে। সে ভাবনাকে ডাকে। ছোট ভাবনা ছুটে এলে আনিকা তাকে মিষ্টি করে বলে,
-” আমাদের অরু কতো ভালো আর মিষ্টি! ওই ওখানে বল আছে! এনে দিবে প্লিজ? আপু তোমাকে তোমার ফেবারিট চকলেট আইসক্রিম দিবে!”
আইসক্রিমের নাম শুনে ছোট ভাবনার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে। সে মাথা কাত করে বল আনতে চলে যায়। ভোর পিছু ডাকে শোনে না। ভাবনা তো আইসক্রিমের ভাবনায় ডুবে আছে। আইসক্রিম পেলে ভাবনা সব ভাবনা ভুলে যায়। সে ছুটে গিয়ে বল এনে আনিকার হাতে দেয়। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-” আমাল আইকিলিম?”
তাঁর ছোট গোলগাল মুখ খানা লাল হয়ে আছে। বোচা নাকটা যেন টুকটুকে স্ট্রবেরি। আনিকা হেসে বলে,
-” এখুনি দিবো! চলো!”
ভাবনা খুশি হয়ে হাত তালি দিয়ে বলে,
-” আমাল এততা, ভাই এততা আততা?”
ভোর রেগে ভাবনাকে ছাড়িয়ে একটা চর লাগায় মাথায়। ভাবনা পিটপিট করে চায়। ভাই কেন মারলো তাকে? সে নাক টেনে ঠোঁট ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলে,
-” মাচচো কেনু? আমি কি কচচি?”
ভোর আরেকটা লাগায় তাঁর গালে! ভাবনা কেঁদেই দেয়। আনিকা এসে ভোরকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-” মারলি কেন ওকে? ও কি করেছে?”
ভোর আনিকার গালেও লাগিয়ে দেয়! রূপ ভো দৌড়! ভোর ভাই রেগে আছে। তাকে না আবার মারে ধুমধাম! তাই সে সময় থাকতেই কেটে পরে। আনিকা চুপ থাকে না। সেও ভোরকে একটা বসিয়ে দিলো। ব্যস লেগে গেলো দুজনের। কেউ কম যায় না। আনিকা ভোরের চুল টেনে ধরে। ভোর তাঁর ঝুটি টেনে প্রতিশোধ নেয়। ছোট ভাবনা হা করে তাকিয়ে দেখে। তারপর আনিকার পা টেনে বলে,
-” আমাল ভাই মালু কেন? ছালু?”
আনিকা ভোরকে ছেড়ে দিয়ে ভাবনার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” অরু তোর জন্য মার খেলাম। আর তুই আমাকে মারছিস! শয়তান ভাইয়ের শয়তান বোন! যা ফুট!”
বলে আনিকা হনহন করে চলে যায়। ভাবনা পিটপিট করে চায়। ভোর হেসে বোনকে কোলে তুলে দুই গালে আদর করে। ভাবনা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে চায়। ভোর হেসে তাঁর মাথার ক্যাপ খুলে ভাবনাকে পরিয়ে দেয়। ভাবনা এবার হেসে বলল,
-” চুন্দল?”
-” অনেক সুন্দর! ‘আব্বু যদি বলে ভাই মেরেছে?’ তখন কি বলবে?”
ভোর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে। ভাবনা মিষ্টি করে হেসে বলে,
-” ভাই মালি নাই! ভাই আদুল কচচে!”
-” এই তো আমার মিষ্টি বোন! তোমাকে দুটো আইসক্রিম দিবো! চলো?”
হেসে বলে ভোর সরকার। ভাবনা খুশি হয়ে ভাইয়ের গালে চুমু দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। ভোর তাকে কোলে নিয়ে পা বাড়ায়! বাড়ির মেইন ফটক পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতেই নজরে আসে সুধী মন্ডল!
পাতা খানিক রাগি চোখে চেয়ে আছে ভোরের দিকে। তাঁর আঁচলে মুখ লুকিয়ে রাখা রূপকেও চিনতে অসুবিধা হয় না। বাঁদর ছেলে নিশ্চয়ই গড়গড় করে সব বলে দিয়েছে। সোফায় বসে ফোঁস ফোঁস করা আনিকাও নজর এড়ায়নি! নয়ন পাতার পাশে দাঁড়িয়ে কুটুর মুটুর চোখে। এখন খালামুনি বকবে সবাইকে? ভোর ভাবনাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
-” আম্মু কিছু বলবে? জলদি বলো হ্যা? ভোরের অনেক খিদে পেয়েছে!”
ভাবনা ভাইয়ের হাত ধরে বলে,
-” ভাই খিতে দাও!”
পাতা গম্ভীর সুরে বলে,
-” আনিকাকে মেরেছো কেন? রূপকেও বকেছো!”
ভোর রূপের দিকে চায়। কি মিথ্যুক ছেলে! রূপ পাতার আঁচল থেকে মুখ বের করে ভোরের দিকে চেয়ে হেসে দেয়। ভোর চোখ রাঙাতেই রূপ পাতার দিকে সেটে গিয়ে বলে,
-” দেখো আমা!কেমন করে তাকিয়ে আছে! তুমি চলে গেলে আবার মারবে। অরু কেউ মেরেছে! কিন্তু আমি জানি অরু বলবে না। ”
সাথে সাথে ভাবনা তেড়ে এসে রূপের পেটে একটা চাপড় মেরে বলে,
-” ভাই মালি নাই। ভাই মালি নাই!”
রূপ কাঁদো কাঁদো গলায় পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” তোমার মেয়েও মারলো!”
পাতা ভাবনাকে ছাড়িয়ে ধমক দিবে এর আগে ভোর এসে বোনকে টেনে নেয় নিজের কাছে। গম্ভীর সুরে বলে,
-” একটুও বকবে না ভাবনাকে। ওই বিচ্ছুটা এক নম্বরের মিথ্যুক! ওর আলোভোলা মুখের পেছনে আস্ত শয়তান লুকিয়ে থাকে!”
রূপ পিটপিট করে পাতার দিকে চায়। যেন বোঝাতে চাইলো সে নিরপরাধ! পাতা ভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” তুমি আগে বলো আনিকাকে মেরেছো কেন?”
-” রাগ উঠেছিলো মেরে দিয়েছি! তোমার আনি বুড়িও চুপ ছিলো না। ওউ মেরেছে। শোধবোধ। তাহলে আবার নালিশ করে কেন?”
-” ভোর! বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!! সবার বড় কে? তুমি! তোমার উচিত ছোটরা ঝগড়া মারামারি করলে থামিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া। সেখানে তুমিই মারামারি চুলাচুলি করো! দিন দিন দুষ্টু হচ্ছো!”
পাতা খানিক ধমকের সুরে বলে। ভোর মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। পাতা হতাশ হয়। এ ছেলেকে কিছু বলাই যাবে না। গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। ছোট ভাবনা মায়ের সামনে দাঁড়ায়। কোমড়ে হাত রেখে ফোঁস ফোঁস করে বলে,
-” ভাই বকছু কেনু! ভোলেল বাবা বলে দিবু!”
পাতা মেয়ের বোচা নাক টেনে ভেংচি কেটে বলে,
-” বুচুন! তোমাল ভোলেল বাবাকে আমি ভয় পাই নাকি!”
-” ভোলেল বাবা বুলি দিবু । বুচুন বলিচো!”
বলে কাঁদতে কাঁদতে সে আনিকার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরলো। আনিকা তাকে সরিয়ে দেওয়ার ভান করে বলে,
-” আমার কাছে আসছো কেন? যাও ভাইয়ের কাছে যাও!”
ভাবনা যায় না। শক্ত করে গলা জড়িয়ে রাখে। রূপ পাতাকে ছেড়ে পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে! চকলেট তাঁর কাছে সবসময় থাকে। তার অতি পছন্দ কি না! সে ভাবনাকে ডেকে বলে,
-” মিষ্টি অরুর জন্য মিষ্টি চকলেট! কাঁদে না!”
ভাবনা ফিরেও চায় না তাঁর চকলেটের দিকে। সে জানে রুপ ভাই চকলেটের কথা বললেও কখনো দিবে না। নিজেই খেয়ে বলবে পরে দিবো! নয়ন এগিয়ে এসে বলল,
-” এই অলু! এসো আমলা লুকোচুলি খেলবো! সবাই!”
ভাবনা নয়নের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” কেলবু না!”
বলে আবার ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে দেয়। তাঁর কান্নার আওয়াজ হলেও চোখে একফোঁটা পানির নিশান নেই। পাতা বুকে হাত গুটিয়ে মেয়ের কার্যকলাপ দেখে! এ কোন নমুনা? সে এগিয়ে এসে ভাবনাকে কোলে তুলে গালে ঠোঁট ডাবিয়ে চুমু বসিয়ে বলে,
-” নাক উঁচু বাপের ঢঙ্গি মেয়ে!”
ভাবনা কুটুর মুটুর চেয়ে বোঝার চেষ্টা করে তাখে বকলো না তো? পাতা হেসে মেয়েকে বুকের মাঝে লুকিয়ে বলে,
-” আমার সোনা মেয়ে। বকি নি তো! আমার মানিককে আমি বকতে পারি?”
ভাবনা হেসে উঠলো খিলখিলিয়ে। পাতা মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে সামনে চাইতেই দেখে সব বাচ্চারাই তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ, নয়ন হাসি মুখে থাকলেও আনি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পাতা এগিয়ে এসে আনির গালে হাত বুলিয়ে বলে,
-” ভোরকে আরো বকে দিবো! তুমি রেগে থেকো না কেমন? রাগলে বারবি ডলকে অ্যাংরি বার্ড লাগে! পাস্তা খাবে? বানিয়ে দিবো?”
আনিকা সায় জানালো সাথে রূপ! নয়ন চুপচাপ!
-” তাহলে আমি ঝটপট বানিয়ে আনছি। আনি বুড়ি তোমার চাচ্চুকে বলো না এসব হুম? আমি সত্যিই ভোরকে আবার বকে দিবো! প্রমিজ!”
আনিকা হেসে ওঠে এবার। চাচিমনি যতই বলুক ভোরকে বকে দেবে বকতে পারবে না। তবে সে চাচ্চুকে বলবে না। চাচ্চুকে বললে ভোরের খবর আছে। উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটাবে। পাতা মেয়েকে নিয়েই কিচেনে যায়। তাকে দেখে মিনু ছুটে এসে বলে,
-” ম্যাডাম কি লাইগবে বলেন আমি রাইন্ধে দিতেছি! নইলে সুফিয়াকে ডাইকে দিই”
-” না মিনু আপা। আমিই বানাবো! তুমি শুধু একটু হেল্প করো!”
মিনু হাসিমুখে তাঁর হাতে হাতে সাহায্য করে। ছোট ভাবনা মায়ের কোল থেকে নেমে চলে যায় ড্রয়িং রুমে! আনিকা টিভিতে কার্টুন চালিয়েছে সবাই সেটাই দেখছে। ভাবনা গিয়ে আনিকার কোলে বসে হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বোঝে না সে। তবে যখন রূপ নয়ন হেসে গড়াগড়ি খায় সেও হি হি করে হেসে দেয়। তাঁরা টিভি দেখায় এতোটাই মগ্ন ছিল যে এক ব্যাক্তি এসে তাদের পাশে বসে আছে তাঁরা খেয়ালই করে নি। সবার আগে নয়ন দেখতে পায় ব্যাক্তিটিকে। সে হেসে ‘চাচ্চু’ বলে ডাকে! অরুণ মুচকি হেসে নয়নকে নিজ কোলে বসিয়ে গালে চুমু দিয়ে হাতে কোন আইসক্রিম ধরিয়ে দিলো। নয়ন ইতস্তত বোধ করে নেয়। মা দেখলে বকবে তাকে। ভাবনা সহ সবাই টিভি ছেড়ে নয়নের দিকে চায়। ভাবনা বাবাকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাত বাড়িয়ে ডাকে ‘ভোলেল বাবা’ বলে। অরুণ মেয়ের দিকে চায় হতাশ চোখে। তোতা পাখির ন্যায় মেয়ে তাঁর। বাবা আব্বু বলে মিষ্টি করে ডাকবে! তা না ‘ভোলেল বাবা’ সম্মোধন করে। বাবা ডাকতে বললে ডাকবে না। সব দোষ পাতাবাহারের! তার থেকেই শিখেছে এ ডাক। অরুণ নয়নকে পাশে বসিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে গালে মুখে চুমু দেয়। আনিকা উঠে এসে চাচ্চুর অপর পাশে বসে বলে,
-” আজ জলদি এলে যে?”
অরুণ আনিকার দিকে একটা আইসক্রিম বাড়িয়ে বলে,
-” মিস করছিলাম আমার দুষ্টু মিষ্টি ছানাদের তাই চলে এলাম! ভালো করি নি?”
-” অনেক!”
আইসক্রিম হাতে খুশি মুখে বলে আনিকা। রূপ অরুণের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পাতে। অরুণ তাঁর হাতেও দেয়। ভাবনা বাবার দাঁড়ি টেনে বলে,
-” ভোলেল বাবা আমাল কুনে? দাও?”
অরুণ মেয়ের ছোট্ট হাত দুটোয় চুমু দিয়ে বলে,
-” দেবো না তোমাকে। আগে বাবা বলো তবেই দিবো? বলো আব্বু?”
-” ভোলেল বাবা!”
-” তোমারও তো বাবা হই! মা বাবা ডাকো?”
ভাবনা ডানে বামে মাথা নাড়লো। বলবে না সে।অরুণও তাঁর মতো ডানে বামে মাথা নেড়ে বলে,
-” তাহলে আমিও দেবো না আইসক্রিম! ভোরের বাবা আমি, তাই ভোরকেই দিবো!”
ভাবনা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। আর একবারো আবদার করে না। অরুণ হেসে মেয়ের গালে চুমু দিয়ে আইসক্রিম বাড়িয়ে বলে,
-” নাও তোমার ফেবারিট চকলেট ফ্লেভারের!”
ভাবনা হাতে নেয়। তবে নিয়েই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আইসক্রিম ফ্লোরে গড়াগড়ি খায়। পাতা ট্রে হাতে পাস্তা এনে সবটা দেখে। এই টুকুন মেয়ের রাগ দেখো! সে ট্রে টেবিলের উপর রেখে আইসক্রিম তুলে বলে,
-” থাপড়ে গাল ফাটিয়ে দিবো! রাগ শুধু ওনারই আছে!”
ভাবনা চোখ পিটপিট করে কেঁদে দিবে দিবে ভাব। অরুণ পাতাকে চোখ রাঙিয়ে মেয়েকে আদর করে বুঝিয়ে আইসক্রিম খুলে দেয়। ভাবনা কান্না ভুলে আইসক্রিম মুখে নেয়। পাতা রাগি সুরে বলে,
-” আরো মাথায় তোলেন! যখন মাথায় উঠে নিজে নাচবে আপনাকেও নাচাবে তখন বুঝবেন! এদের এতো রাগ আসে কোথা থেকে!”
-” পাতাবাহার!”
অরুণের শান্ত গলায় প্রেক্ষিতে পাতা আর একটা কথাও বলে না। ভাবনা মাকে ভেঙ্গিয়ে আইসক্রিম খায় মজা করে। গাল মুখে মাখিয়ে একাকার। অরুণ রুমাল বের করে পরিষ্কার করে বলে,
-” আরেকজন কই? নবাব পুত্তুরকে দেখছি না যে?”
পাতা কিছু বলবে এর আগে রূপ দাঁত বের করে বলে,
-” ভোর ভাই ঘরে! আমা বকেছে তাকে। অরু ও আনি আপুকে মেরেছিলো তাই!”
অরুণের মুখাবয়ব গম্ভীর হয়! পাতা রূপের দিকে চায়। এই বাচ্চাটাও না! সিংহের সামনেই বলতে হবে? সে অরুণের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” মারে নি। ঝগড়া বেঁধেছিল শুধু। বকেছি আমি। আপনি কিচ্ছুটি বলবেন না। বললে আপনার খবর আছে! পাস্তা বানিয়েছি আমি! আপনিও নিন!”
অরুণ উঠে মেয়েকে পাতার কোলে দিয়ে বলে,
-” দেখা করে আসি ওনার সাথে!”
পাতা অরুণের বাহু টেনে ধরে শান্ত ভাবে বলে,
-” একদম বাড়াবাড়ি করবেন না। সবেতে বাড়াবাড়ি আপনার। আমি বকেছি, এনাফ! আর একটা কথা শোনালে কিন্তু খুব খারাপ হবে!”
অরুণ মুচকি হাসে পাতার কথায়। তাঁর গালটা টিপে বলে,
-” চেঞ্জ করতে যাচ্ছি! এসে পাস্তা খাবো! দেখি কেমন রাঁধলে!”
বলে চলে যায় অরুণ সরকার। পাতা সন্দেহ চোখে চায়। সে রূপকে ডেকে বলে,
-” যাও তো চাচ্চুর পেছনে। চুপি চুপি যাবে। যদি ভোরকে বকে দৌড়ে এসে বলবে আমাকে!”
-” ভোর ভাই দেখলে মারবে আমাকে। আমি যাবো না। আপুকে বলো!”
পাতা রূপের দিকে চায়। আনি আইসক্রিমের শেষ অংশ মুখে পুরে নিয়ে বলে,
-” ফিকার নট চাচি মনি! ডিটেকটিভ আনিকা সরকার আছে না?”
বলে সে পা বাড়ায়। চুপিসারে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে ভোরের রুমের দিকে চলে যায়। চাচ্চুর ঘরের সাথেই ভোরের ঘর! সে দরজা সামনে দাঁড়ায়। দরজা তো বন্ধ! সে সবটা জানবে কি করে? আনিকা এগিয়ে দরজায় কান লাগিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছুই শুনতে পায় না। তাই বিরক্ত হয়ে দরজাটায় হাত রাখতেই একটু খুলে যায়। আনিকার অধর জুড়ে হাসি দোলা দেয়। সে দরজাটা অল্প একটু খুলে উঁকি দেয়। ভেতরের দৃশ্য চোখে ভাসতেই আনিকার হাসি গায়েব হয়ে যায়। সে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। অরুণের হাত ধরে বলে,
-” চাচ্চু মেরো না! ভোর কিচ্ছু করে নি। সব আমার দোষ। প্লিজ চাচ্চু!”
বলেই ঝরঝরিয়ে কেঁদে দেয় আনিকা। অরুণ আনিকার মাথায় হাত রাখে। তাঁর রাগি মুখাবয়ব ভয়ঙ্কর। চোখে যেন সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ করছে। সে আনিকাকে যেতে বলে। আনিকা যায় না। সে চাচ্চুর হাত টেনে বাইরে নিয়ে যেতে চায়। অরুণ যায় না। আবারও আনিকাকে যেতে বলে গম্ভীর গলায়। আনিকা ভয়ে কাঁপছে অনবরত। ভোরের উন্মুক্ত গায়ে নীল নীল জখম! চাচ্চু মেরেছে? সে ভোরকে ধরতে যাবে ভোর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-” যেতে বলছে যাচ্ছিস না কেন? যা বের হ এখান থেকে! যা?”
সাথে সাথেই তাঁর গালে শক্তপোক্ত হাতের থাপ্পড় পড়ে। আনিকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ভোর তার দিকে চোখ পাকিয়ে চায়। আনিকা দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ও চলে যেতেই ভোর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অরুণ ছেলের নীল জখমিত শরীর ছুঁয়ে শক্ত গলায় বলে,
-” দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছো! এই জখম! ব্যাথা লাগে না? গুন্ডামি করো স্কুলে? ক্লাস ফোরের বাচ্চা ছেলে! সিক্সের ছেলেপুলেকে মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে হসপিটালে পাঠাও! ব্যাট তুলেছিলে নাকি মারার জন্য? পিয়ন না থামালে কি হতে পারতো?”
গর্জে ওঠে অরুণ! ভোর কেঁপে উঠলো কি? তবে সে মুখ দিয়ে ট্যু শব্দটি করে না। চোখ নোনা জলে ভরে এলেও তাকে আটকে রাখার প্রচেষ্টা শতভাগ! মাথা নিচু করে সে ক্ষণে ক্ষণে নাক টানে। অরুণের রাগ বেড়ে যায়। কখন থেকে প্রশ্ন করছে ছেলেটা একটা প্রশ্নেরও জবাব দেয় নি; কথাই বলে নি। অরুণ ভোরকে ছেড়ে দুই হাতে মুখ ঢাকে। রাগে শরীরটা কাপছে তাঁর। ছেলের গাঁয়ে কালচে নীল জখম দেখে বুকটা জ্বলছে। অরুণ পরনের ব্লেজার খুলে ছুঁড়ে ফেলে। একহাতে ভোরের গাল জোড়া চেপে ধরে বলে,
-” কলিজা? কি হয়েছিল ওখানে? বলো আমাকে? সবটা! আমার কলিজা এতটা নির্দয় নয় তো! বলো?”
ভোরের হ্যাংলা পাতলা শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে। চোখজোড়া বাঁধ ভেঙে বইতে থাকে। সে দু হাতে মুছে নিয়ে বলে,
-” ওরা লেগপুল করছিলো। আমার রাগ হচ্ছিলো তাই মেরেছি!”
-” কি বলেছিলো? বলো?”
ভোর বলে না। আবার নজর সরিয়ে নেয়। অরুণ হতাশ হয়! এরইমধ্যে কেউ ঝড়ের বেগে এসে অরুণের হাত থেকে ভোরকে ছাড়িয়ে নেয়। অরুণ পাতার দিকে চায়! পাতা ভোরের উন্মুক্ত শরীরে চোখ বুলায়। বুকে পিঠে কালচে জখম! পাতা অবাক চোখে অরুণের দিকে চায়। ভোরকে টেনে বুকে জড়িয়ে অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” এও বিশ্বাস করতে হবে? আমার ছেলের গায়ে জখম কিসের?”
আনিকা দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অরুণ তাকে দেখে নিয়ে বিছানায় বসে। ভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ওর সাথে ঝামেলা করে কিছু ছেলে আছে চেনো? ম্যাম ফোন করেছিল দুপুরে। মারামারি করে এসেছেন উনি। যাকে মেরেছে সে ক্লাস সিক্সের; হাসপাতালে ভর্তি! নাক মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে। ব্যাট তুলেছিলো মাথায় বাড়ি দিবে বলে। পিয়ন এসে আটকায়! মারামারি করে এই হাল করেছে নিজের! আমি অরুণ সরকারের বুক কাঁপবে না এভাবে নিজ কলিজায় আঘাত করতে?”
পাতা করুণ চোখে অরুণের দিকে চায়। ভোরের মুখটা তুলে বলে,
-” ওরা আবার তোমাকে ডিস্টার্ব করছিলো? বলেছিলাম না ওরা কিছু বললে ম্যামকে জানাতে? মারামারি কেন করেছো?”
অরুণের কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ে। সে দাঁড়িয়ে বলে,
-” কারা ডিস্টার্ব করে? আর আমাকে আগে কেন জানানো হয় নি? এই ভোর?”
এগিয়ে এসে ভোরকে ধরবে পাতা তাকে ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-” আপনাকে পড়ে দেখে নিচ্ছি। যান এখান থেকে বের হন বলছি? আমি কথা বলছি ওর সাথে যান?”
ধমকেই বলে পাতা। অরুণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেরিয়ে যায়। পাতা আনিকাকে ইশারা করে দরজা বন্ধ করে সরে যেতে। আনিকা চলে গেলে পাতা ভোরকে বিছানায় বসায়। মুখটা আঁচলে মুছিয়ে জখমে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
-” কতটা জখম হয়েছে! আমাকে বলো নি কেন? বাবা মেরেছে?”
ভোর পাতা কোমড় জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
-” দুটো চর মেরেছে। একটা আস্তে আরেকটা জোরে!”
পাতা ভোরের মুখটা তুলে দেখে ফর্সা গাল লাল হয়ে আছে।
-” বলো কি হয়েছিলো?”
-” ওরা আবার লেগপুল করছিলো আমাকে। বাজে বাজে কথা বলছিলো বাজে ভাষায়। তোমাকে নিয়ে, আব্বুকে নিয়ে। আমার রাগ হচ্ছিলো তাই মেরেছি!আবার বললে আরো মারবো!”
পাতা বাহার পর্ব ৫৯
কন্ঠে তেজে ভরপুর! পাতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ইদানিং স্কুলে কিছু উটকো ছেলে ভোরকে পেরেশান করে। এটা ওটা বলে ক্ষেপায়। বাজে টোনে কথা বলে। আর ভোর তো ভোরই। বাবার মতোই হাতটা বেশি চলে কি না। একবার জবাব দিয়েছিলো তবে হাতাহাতি হয় নি। পাতা প্রিন্সিপাল ম্যামকে বলে ছেলেগুলোর গার্ডিয়ান ডেকে ব্যাপারটা জানিয়েছিলো। এতে যেন ভোর ছেলেগুলোর চোক্ষু শূল হয়। তাদের ডিস্টার্বনেস বেড়ে যায়। পাতা ভোরকে সাবধান করে ছিলো। মারামারি নয়; ওরা ডিস্টার্ব করবে প্রিন্সিপাল ম্যামকে জানাতে। নইলে তাকে জানাতে। কিন্তু ভোর তো ভোরই! বাবার মতো হাতটা বেশি চলে কি না! পাতা অবাক হয়! এইটুকুন ছেলে সিক্সের ছেলেকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। শরীরে জখম নিয়েও সাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যাথা করছে না?