পারমিতা পর্ব ২৪
Nabila Ahmed
রুম থেকে আফরিনের সব ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আফরিনের কাপড়চোপড় যা আলমারিতে রাখা ছিলো তাও একটু আগে শায়লা এসে নিয়ে গেছে।
–আমার মনে হচ্ছে অরিয়ন ধীরে ধীরে মুভ অন করছে।
মিতার পাশে বসে থাকা মায়া চৌধুরী বলে।
–জানিনা মা। অরিয়ন ভাইয়া অনেক কনফিউজিং, এখন এক তো একটু পরেই আরেক।
জবাব দেয় মিতা।
–ওর সময় দরকার মিতা। আফরিনের প্রতি ওর ভালোবাসা সত্যি ছিলো, ৬ টা বছর ও নিজের সব দিয়ে আফরিনকে ভালোবেসেছে, সেই আফরিনকে ভুলতেও ওর সময় দরকার। নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–তুমি এতো সহজে কীভাবে সব বলে ফেলো মা?
মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–সহজে সব বলে ফেলতে পারি কারণ কথাগুলো সত্যি। আর তুই ও এতো দ্বিধাবোধ করিস না। এখন এই সংসার তোর, অরিয়ন তোর স্বামী।
মিতার হাত ধরে বলে মায়া চৌধুরী।
–বিয়ে করা অনেক সহজ, মিতা। কিন্তু সেই পবিত্র বন্ধন টিকিয়ে রাখা সব চাইতে কঠিন কাজ। ভালোবাসার সম্পর্কে শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয় কিন্তু বিয়ের সম্পর্কে ভালোবাসার সাথে সাথে সৎ জীবনসঙ্গী, একে অপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা, কম্প্রোমাইজ করার মন মানসিকতা থাকতে হয় । হয়তো অরিয়ন তোকে এখনি সব দিতে পারবে না কিন্তু ও কেমন তুই আর আমরা সবাই ভালো করেই জানি।
মিতার হাত ধরে কথাগুলো বলে মায়া চৌধুরী।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–জ্বি।
সায় মিলায় মিতা।
–আমরা চাইলেই আমাদের অতীত ভুলতে পারিনা। চাইলেও আমরা তার প্রভাব বর্তমানে এড়িয়ে যেতে পারিনা। অতীত বর্তমানে এবং বর্তমান ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবেই।
কথাগুলো বলে একটু থামে মায়া চৌধুরী।
মিতা মনোযোগ দিয়ে মায়া চৌধুরীর কথা শুনছে।
–অরিয়ন ও আটকাতে পারবে না অতীতের প্রভাব তোদের সম্পর্কে পড়তে। তবে কোনোদিন যদি মনে করিস, তোর ১০০% চেষ্টা করার পরও কোনো কিছু পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তুই সেটাই করবি যেটা তোর ভালো মনে হবে। আর তোর সব ধরণের সিদ্ধান্তে তোর মা, আমি পাশে আছি।
আবারও বলে উঠে মায়া চৌধুরী।
মায়া চৌধুরীর কথাগুলো শুনতেই যেন কান্না চলে আসলো মিতার। কে বলে মায়া চৌধুরী মিতার আসল মা না? মায়েরা তো তার সন্তানের জন্য এমন ই করে। আফরিন চলে যাওয়াতে মায়া চৌধুরী গোপনে গোপনে কতটা কান্না করেছে তা মিতা ভালোই জানে। আফরিনের প্রতি তার ভালোবাসা আর মিতার প্রতি তার ভালোবাসায় কোনোদিন পার্থক্য দেখেনি মিতা। জড়িয়ে ধরে মায়া চৌধুরীকে।
–তুমি অনেক ভালো, মা। খুব খুব ভালো।
জড়িয়ে ধরা মিতা মায়া চৌধুরীর কাধে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
–কান্না করছিস কেনো বোকা মেয়ে? থামা।
মিতার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে মায়া চৌধুরী। নিজেরও চোখ ভিজে আসছে মায়া চৌধুরীর।
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে চোখের পানি মুছতে মুছতে আবারও নিজের জায়গায় বসে মিতা। মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মা বলে ডাকা নারীর দিকে।
–তোমাকে একটা প্রশ্ন করি,মা?
প্রথমে একটু সংকোচবোধ করে বলে মিতা।
–বল না, আমাকে প্রশ্ন করতে আবার পারমিশন কবে থেকে লাগে?
হেসে জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।
–আনিকা আন্টির সাথে কি আমার বাবা মায়ের কিছু সমস্যা হয়েছিলো?
কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই যেন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মায়া চৌধুরীর। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ক্ষনিকেই।
–এরকম কথা কেনো বলছিস?
একটু আমতা আমতা করে বলে মায়া চৌধুরী।
–কারণ উনি আমাকে সহ্য করতে পারে না, মা। ঘৃণা নিয়ে কথা বলে আমার সাথে, যা আমি এখন সবই বুঝতে পারছি।
বলে মিতা।
–আসলে…আসলে আফরিনকে খুব ভালোবাসতো তো তাই, এখন আফরিন নেই আর তুই আফরিনের জায়গায় আছিস তাই হয়তো তা মেনে নিতে পারছেন না উনি।
মিতার নজর এড়িয়ে বলে মায়া চৌধুরী।
–কিন্তু আপু চলে যাওয়ার আগেও এরকম ছিলো উনি।
মায়া চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে মায়া।
–তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছুই না। আনিকা আপা একটু অন্যরকম এই আর কি।
কথাটা বলেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় মায়া চৌধুরী।
–অরিয়নের চলে আসার সময় হয়ে গেছে। আমি যাচ্ছি।
বলে মায়া চৌধুরী।
–ওকে।
জবাব দেয় মিতা।
এক দৃষ্টিতে মায়া চৌধুরীর চলে যাওয়া দেখতে থাকলো মিতা। কথাটা উঠাতেই কেমন যেন চাহারার রঙ বদলে গিয়েছিলো মায়া চৌধুরীর। মিতা সবটাই খেয়াল করেছে। মায়া চৌধুরী কখন মিথ্যে বলছে আর কখন সত্যি তা বুঝার মতো ক্ষমতা আছে মিতার।
“সত্য উন্মোচন হবেই” বিরবির করে বলে মিতা।
বেডের সাথে হেলান দিয়ে গল্পের বই পড়ছে মিতা। রাত প্রায় ১১ টা হয়েছে তাও ঘুম নেই মিতার চোখে। গেম খেলতে খেলতে বোর হয়ে এবার গল্পের বই তুলে নিয়েছে মিতা। মানুষ বলে বই ধরলেই নাকি ঘুম আসে কিন্তু মিতার চোখে ঘুমের চিহ্নও নেই। “বুদ্ধু, সেটা টেক্সট বই,গল্পের বই না” নিজেই নিজেকে উত্তর দেয় মিতা।
দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে অরিয়ন। কানের কাছে মোবাইল ধরা। কোর্ট হাতে, শার্টের বাটন খোলা।
–যাই হয়ে যাক, এই প্রোজেক্টটা আমাদের পেতেই হবে। তুমি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সাথে মিটিং ঠিক করো আমার।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে সোফার সামনে এসে দাঁড়ায় অরিয়ন। কোর্ট সোফার উপর রেখে মিতার দিকে তাকায়। মিতাও অরিয়ন কি করছে তা দেখার জন্য অরিয়নের দিকে তাকায়।
–হুম…হ্যাঁ ঠিক আছে। তাহলে মিটিং ফিক্সড করে আমাকে জানাও। আর xy কোম্পানি সম্পর্কে যেই খবর নিতে বলেছিলাম তা নিয়েছো?
মিতার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝায় খাবার খেয়েছে কি না।
মিতাও মাথা নাড়িয়ে বোঝায় খেয়েছে।
–ওকে।
বলে কল কাটে অরিয়ন।
–ঔষধ খেয়েছিস?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হ্যাঁ।
জবাব দেয় মিতা।
মিতার উত্তর শুনে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায় অরিয়ন। একটু পরেই রুমে খাবার নিয়ে আসে শায়লা।
–এখানে খাবার আনলে যে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–অরিয়ন স্যার খেয়ে আসেনি। বললো খাবার রুমে পাঠিয়ে দিতে তাই নিয়ে এসেছি।
জবাব দেয় শায়লা।
–অহ।
শায়লা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে অরিয়ন। ড্রেস চেঞ্জ করে টি শার্ট আর ট্রাউজার পরেছে। টেবিলে বসে খাবার খাওয়া শুরু করে অরিয়ন। মিতাও নিজের বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়। মিতার মনোযোগ ভাঙ্গে বইয়ের উপর কারো ছায়া পড়াতে। চোখ তুলে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন দাঁড়িয়ে আছে।
–একটু ঐদিকে যা, আমি বসবো।
অরিয়নের কথা শুনেই মিতা সরে বসে।
মিতা সরে বসতেই অরিয়ন খাটে উঠে বসে।
–কি করছো?
হঠাৎ করে অরিয়ন মিতার পিছনে যেতেই প্রশ্ন করে মিতা।
অরিয়ন মিতার কথার কোনো উত্তর দিলো না। মিতার পিছনে গিয়ে বসে পড়ে। নিজের দু হাত দিয়ে মিতার কোমরে ধরে।
–অরিয়ন ভা…কি করছো তুমি?
ভাইয়া বলতে গিয়েও বললো না মিতা। অরিয়ন থেকে দূরে সরার চেষ্টা করতে করতে বলে।
–চুপ করে বসে থাক।
মিতার কোমর শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের জায়গায় চুপ করে বসে রইল। নার্ভাসনেস যেন হাজারগুন বেড়ে গেছে মিতার। হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। হঠাৎ করে অরিয়নের এতো কাছাকাছি আসার কারণ বুঝতে পারছে না মিতা। মিতার সব প্রশ্নের উত্তর মিললো যখন অরিয়ন মিতার চুলের খোঁপা খুলে দিলো। চুলের মধ্যে নিজের হাত গুজিয়ে দেয় অরিয়ন।
–চুলের এই অবস্থা কেনো? সারাদিনে চুল বাধার সময় হয়নি?
নিজের নাক মিতার চুলের মধ্যে গুজিয়ে দিয়ে বলে অরিয়ন। অরিয়ন মিতার চুল থেকে ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত। মিতাকে দেখতেই কেনো যেন প্যারিসে মিতার কাছ থেকে যেই ঘ্রাণটা পেয়েছিলো সেই ঘ্রাণটার তীব্র আকাঙ্খা জাগলো অরিয়নের।
বড় করে নিঃশ্বাস নিতেই পরিচিত সেই ঘ্রাণটা পেলো অরিয়ন। মুখে ফুটে উঠে আলতো এক হাসি। চুল থেকে মুখ উঠিয়েই চিরুনি নেয় অরিয়ন। মিতা মাথায় চিরুনি অনুভব করতেই অবাক হয়ে যায়। কি হচ্ছে অরিয়নে? হঠাৎ করে এতো এতো যত্ন, এতো আদর কি জন্য তা বুঝতে পারছে না মিতা।
–কি করছো তুমি?
কনফিউজড মিতা প্রশ্ন করে।
–চুল আচরিয়ে দিচ্ছি, দেখতে পাচ্ছিস না? এতো সুন্দর চুলগুলো এরকম বাদরের মতো করে রাখিস কেনো?
চুল আচরাতে আচরাতে বলে অরিয়ন।
–তুমি কি ঠিক আছো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–মানে?
চিরুনি রেখে আবারও চুলে হাত দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
–মানে কেমন যেন অন্যরকম লাগছে তোমাকে।
বলে মিতা।
–তাই নাকি?
মিতার চুলে বেনী করতে করতে বলে অরিয়ন।
–হ্যাঁ তাই। আর….ছবিটা তুমি সরাতে বলেছো?
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার কথা শুনে অরিয়নের হাত স্থির হয়ে রইল মিতার চুলে।
–হ্যাঁ।
আবারও বেনী করতে করতে জবাব দেয় অরিয়ন।
–কেনো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–কারণ ছবিটা তোকে অস্বস্তি অনুভব করাচ্ছিলো।
অনায়াসে বলে ফেলে অরিয়ন।
–তাতে তোমার কি?
নিজের হাত শক্ত করে মুঠ করে রেখে প্রশ্ন করে মিতা।
এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে তা মিতা জানেনা, হয়তো বা জানে। তাও যেন জিজ্ঞেস করতে মন চাইলো। অরিয়ন মিতার চুলে বেনী করা শেষ করে মিতার বাহু ধরে নিজের দিকে ফেরায়। মিতা অরিয়নের দিকে ঘুরতেই অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে।
–আমার দ্বারা হয়তো ২য় বার কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয় পরী।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথাটা শুনতেই যেন ক্ষণিকের জন্য মনের মধ্যে জাগ্রত আশার আলো নিভে গেলো।মন খারাপ হয়ে যায় মিতার।
–কিন্তু আমি তোকে হারাতে চাই না। তোর জন্য হলেও আমি মুভ অন করতে চাই এই জীবন থেকে। আমি চাই আমরা দু জন একবার একটা সুযোগ দেই আমাদের এই সম্পর্ককে। যেখানে আমি চেষ্টা করবো আবারও ভালোবাসার, তোর প্রতি লয়াল থাকার, তোকে স্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান দেওয়ার। বিনিময়ে…
মিতার দু হাত ধরে কথাগুলো বলে একটু থামে অরিয়ন।
–বিনিময়ে তুই শুধু আমার হয়ে থাকবি। আমাকে কখনো ছেড়ে যাবি না।
মিতার হাত শক্ত করে ধরে বলে অরিয়ন।
গত কয়েকমাসে মিতার প্রতি অরিয়নের যে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে তা ভালোই বুঝতে পেরেছে অরিয়ন। হয়তো তা ভালোবাসা না, হয়তো এই অনুভূতি মিতা বা অরিয়ন কারো জন্যই ভালো না, তবুও মিতাকে ছাড়ার কথা বা মিতাকে অন্য কারো সাথে ভাবতেই যেন মাথা খারাপ হয়ে যায় অরিয়নের। ইচ্ছে করে সব কিছুতে আগুন ধরিয়ে দিতে। এতোদিন এই অনুভূতি এড়িয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে অরিয়ন কিন্তু সেদিন আবরারের কথা শোনার পর থেকে কেনো জানি মিতাকে হারানোর ভয় পাগল করে দিচ্ছে অরিয়নকে। তাই মিতাকে নিজের অনুভূতির কথা বলতে রাজি হয়ে যায়।
অরিয়নের সামনে বসে থাকা মিতা চুপ করে অরিয়নের কথাগুলো শুনলো। অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো ছলনা বা মিথ্যের চিহ্ন খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো শুধু সত্যতা। অরিয়নের মনে যা আছে তাই যেন চোখে প্রকাশ পাচ্ছে। এই সব কিছু শুনে হয়তো খুশিতে লাফাতো মিতা কিন্তু একটা কথাই এই খুশি আটকে রেখেছে “আমার দ্বারা হয়তো ২য় বার কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়”। ভালোবাসতে না পারলে কিভাবে? মিতা যে সব কিছুর সাথে ভালোবাসাটাও চায়।
–তুমি কি কখনোই ভালোবাসবে না?
প্রশ্ন করে মিতা।
–আই ক্যান ট্রাই টু। কিন্তু তোকে আমি এমনটা কখনো ফিল করাবো না যে, তুই সুযোগটা দিয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। সুযোগ দিবি তুই?
মিতার দিকে এগিয়ে এসে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের চোখে কেমন যেন ডেস্পারেশন প্রকাশ পাচ্ছে। সাথে সাথে প্রকাশ পাচ্ছে আশার আলো।
–আমার একটু সময় চাই ভাবতে।
অরিয়নের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে বলে মিতা।
–কতোক্ষণ? ৫ মিনিটা? ১০ মিনিট?
অরিয়নের চোখ থেকে যেন আশার আলো পুরোটাই চলে গেল। ডেস্পারেশন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
–সিরিয়াসলি? ৫/১০ মিনিট?
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–তাহলে? কতোক্ষণ সময় চাস তুই? ১ ঘন্টা?
অধৈর্য্য হয়ে বলে অরিয়ন।
–কম করে হলেও ২/৩ দিন। আমার ভাবতে হ..
–ফা* নো। ১ দিনের বেশি আমি সময় দিতে পারবো না।
মিতার গাল ধরে বলে অরিয়ন।
–কেনো? ১ দিনের বেশি সময় দিলে কি হবে?
হঠাৎ করে অরিয়নের বিহেভিয়ারে এরকম চেঞ্জ দেখে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। তাই প্রশ্ন করে।
–তুই দেখতে পারছিস না? আমার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তোর ডিসিশন না জানা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাবো না। আর আমার মনে হচ্ছে এভাবে আমি বেশিক্ষণ ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবো না। তাই যা জানানোর কালকের মধ্যে জানা।
মিতার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে বলে অরিয়ন।
–ওকে।
জবাব দেয় মিতা।
–তবে..
একটু থেমে বলে অরিয়ন।
–তবে কি?
জানতে চায় মিতা।
–তবে, তোর উত্তর যদি না হয়…তাহলে বলবো আমার সামনে আসিস না তুই। দূরে কোথাও সরে থাকিস।
মাথা নিচু করে বলে অরিয়ন।
–কেনো?
ভ্রু কুচকে বলে মিতা।
–কারণ তোর কাছে আমি স্বস্তি পাচ্ছি, শান্তি পাচ্ছি লাভ। আমার মনের মধ্যে থাকা এই অস্থিরতা কমানোর জন্য হলেও আমি তোকে খুজে বের করে নিয়ে আসবো।
কথাটা বলে একটু থামে অরিয়ন। চোখ তুলে তাকায় মিতার দিকে।
–তোর চোখে হয়তো আমি দি গ্রেট অরিয়ন কিন্তু আমি জানি, সত্যিকারের আমি একটা মন্সটার থেকেও খারাপ।
অনায়াসে কথাটা বলে ফেলে অরিয়ন। যেন মিতার কাছে ভয় দেখানোর মতো কিছুই বলেনি অরিয়ন।
পারমিতা পর্ব ২৩
অরিয়ন আর অপেক্ষা না করে নিজের সাইডে গিয়ে শুয়ে পরে। মিতা নিজের জায়গায় বসে রইল। ” কি বলছে অরিয়ন? মন্সটার থেকেও খারাপ? কিসের খারাপ? ছোট থেকে দেখে আসছে আমি অরিয়নকে, তাহলে? তাহলে কি এই কারণেই আপু অন্যকারো প্রেমে পড়েছিলো? ” ভাবে মিতা
“আসলেই কী তুমি মন্সটার থেকেও খারাপ? নাকি সবটাই আমার ডিসিশন পরিবর্তন করার একটা পন্থা? ” ঘুমন্ত অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে মিতা।