পারমিতা পর্ব ৩১

পারমিতা পর্ব ৩১
Nabila Ahmed

–অরিয়ন মিতার সাথে ঐভাবে কথা বললো কেন? এসবের মানে কি?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–আমি ও কিছু বুঝতে পারছি না মায়া।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–তুমি দেখলে? মিতার যাবার কথা শুনতেই কীভাবে প্লেট ছুড়ে মারলো ও? আর মিতা অরিয়নকে আবার কবে থেকে ভয় পাচ্ছে?

একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে মায়া চৌধুরী।
মুখে তার বিষন্নতার ছোঁয়া। ভ্রু কুঁচকে কথাগুলো বলে যাচ্ছে একের পর এক।
মিতা আর অরিয়ন বাসা থেকে বের হওয়ার পর হাবিব চৌধুরীর স্ট্যাডি রুমে একসাথে কথা বলতে বসেছে সবাই। হাবিব চৌধুরী, মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী বসে আছে রুমে। আজ সকলে সবাই নিজের চোখে যা দেখলো তা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কারো। যেখানে ওয়াহিদ চৌধুরী ও মায়া চৌধুরী একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে সেখানে হাবিব চৌধুরী চুপ করে সব কথা শুনছে। দেখে মনে হচ্ছে গভীর চিন্তায় মগ্ন তিনি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–আমার মনে হচ্ছে আফরিনের ফিরে আসা, যা যা ঘটে গেলো আফরিনের সাথে তা শুনে ও কিছুটা মেন্টালি ডিস্টার্ব ফিল করছে। তাই রিয়েকশন ঐরকম চলে এসেছে।
একটু ভেবে বলে হাবিব চৌধুরী।
–নিজের আর এই সিচুয়েশন এর উপর ফ্রাস্ট্রেটেড মনে হচ্ছিলো অনেক।
আবারও বলে হাবিব চৌধুরী।
মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে হাবিব চৌধুরীর কথাগুলো গ্রহণযোগ্য মনে হলো। অরিয়ন যে আফরিনকে কতটা ভালোবাসতো তা সম্পর্কে সবাই অবগত। যেহেতু আফরিন ফিরে এসেছে আবার অরিয়ন চিট করার মতোও মানুষ না। সেহেতু নিজের প্রতি ডিস্টার্ব ফিল করাটা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতেও সময় লাগলো না।

–তা তো বুঝলাম। কিন্তু ভাইয়া, একটা কথা না বললেই না।
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমার মনে হয় এখন ভাবির একটু নরম হওয়া উচিৎ। মিতার সাথে আর কতদিন এসব করে আসবেন উনি? আজ ঐ বিষয়টাও তুলে ফেলেছেন। ভাগ্য ভালো যে মিতা ব্যাপারটা খেয়াল করেনি।
একটু কঠোর সুরে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমি আনিকার সাথে কথা বলবো এই ব্যাপারে।
উত্তর দেয় হাবিব চৌধুরী।
–হুম।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।

–তোমাকে যা যা বলেছিলাম তা করা শেষ?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–জ্বি স্যার। আমি সব খবর নিয়ে নিয়েছি। ওরা চেষ্টা করছে আমাদের থেকে টেন্ডারগুলো নিয়ে নেওয়ার।
জবাব দেয় অরিয়নের বয়সি এক যুবক।
–ওরা চেষ্টা করতে থাকুক। তোমাকে যে প্রমাণ যোগার করতে বলেছিলাম তার কিছু হলো?
আবারও বলে অরিয়ন।
–না স্যার। প্যারিসের রাস্তার যেখানে এই ঘটনা ঘটেছিলো সেখানে কোনো সিসিটিভি পাওয়া যায়নি। গাড়ি শনাক্ত করতে না পারার কারণে কিছু কনফার্ম করা যাচ্ছে।
জবাব দেয় ছেলেটি।

–ওকে, এখন যেতে পারো।
ল্যাপটপে নিজের মনোযোগ দিয়ে বলে অরিয়ন।
–ওকে স্যার।
–সজিব?
ছেলেটি চলে যেতে নিতেই ডাক দেয় অরিয়ন।
–জ্বি স্যার?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে এসে বলে সজিব।
–আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠাও, আর বাড়িতে বড় দেখে ৩ তোড়া রজনীগন্ধা ফুল পাঠানোর ব্যবস্থা করো। নিশ্চিত করবা, সেই ফুল যেন গেস্ট রুমেই রাখা হয়।
বলে অরিয়ন।
–ওকে স্যার।
কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সজিব।

সজিব রুম থেকে বের হতেই একটু নড়েচড়ে বসে অরিয়ন। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। মিতার সাথে কেন এমন জানো*য়ারের মতো বিহেভ করলো তা নিজেও বুঝতে পারছে না। শুধু এতোটুকুই জানে, যখন মিতা অরিয়নকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বললো তখন মাথা খারাপ হয়ে গেলো অরিয়নের। মন চাচ্ছিলো সব কিছু শেষ করে দিতে, সাথে মিতাকেও। যখন দূরে রাখতে চেয়েছিলো তখন জোর করেই পাশে ছিলো মিতা আর এখন? এখন যখন নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছে তখন ছেড়ে যেতে চায়।
“ভালোবাসা ছাড়া কী সম্পর্ক টিকে না? সব সম্পর্কে কী সব সময় ভালোবাসা থাকে?”মনে মনে ভাবে অরিয়ন।
“আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তোকে আমি খু*ন করে ফেলবো, পরী”

কথাটা বার বার অরিয়নের মাথায় ঘুরছে, এসব টক্সিক কথাবার্তা অরিয়ন বলেছে তা যেন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু তখন যা বলেছে তা যে মিথ্যে ছিলো না, অভিনয় ছিলো না তা ভালোই বুঝতে পারছে অরিয়ন। মিতার চলে যাওয়ার কথাটা শুনতেই কেন এমন পাগলের মতো বিহেভ করলো তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন। আফরিন থাকাকালীনও এরকম ছিলো না অরিয়ন। অরিয়নের মনের মধ্যে এই অজানা ভয় বাসা বেধেছে।
“কি হচ্ছে আমার সাথে? কেন তোর চলে যাওয়ার কথা আমাকে মৃত্যু যন্ত্রণা দিচ্ছে, পরী? কেন আমি একই ভুল বার বার করছি? কি বলে ক্ষমা চাইবো আমি? তুই কি ক্ষমা করবি আমাকে? তোর রিয়নকে?” টেবিলের সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে ভাবতে থাকে অরিয়ন। সেই চেনাজানা অস্থিরতা আবারও অনুভব করছে।

বাসায় ফিরতে ফিরতে মিতার প্রায় ৪ টা বেজেছে। মন খারাপ লাগছিলো বলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছে আজ। রুমের দরজার সামনে আসতেই রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণ প্রবেশ করে মিতার নাকে। কিছু না ভেবে দরজা খুলতেই দেখতে পায় সোফার পাশের টেবিলে বড় বড় সাইজের ৩ টা ফুলের তোড়া। ফুলগুলো হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে মিতা। ব্যাগ রেখে কিছুক্ষণ ফুলের কাছে বসে থাকে। কি করা উচিৎ মিতার? জানেনা। শুধু জানে আফরিন এসেছে। সব কিছুর যে হকদার সে চলে এসেছে। স্যুটকেস থেকে একসেট জামা বের করে গোসল করতে চলে যায় মিতা।
মায়া চৌধুরীকে কোথাও দেখতে না পেয়ে খুজতে থাকে মিতা। পুরো বাড়িতে কোথাও আফরিন আর মায়া চৌধুরীকে দেখা যাচ্ছে না।

–শায়লা আপু, মা আর আপুকে দেখেছো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–মায়া ম্যাম আর আফরিন বাগানে গেছে একটু আগে।
জবাব দেয় শায়লা।
–ওকে, ধন্যবাদ।
কথাটা বলেই হুরহুর করে হাটা শুরু করে মিতা। বাড়ির বাম দিকটা হাবিব চৌধুরী সখ করে ফুলের বাগান করেছে। সেখানেই এক পাশে বিকালে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য সোফা সেট করা হয়েছে। দূর থেকে মিতা দেখছে, মায়া চৌধুরী ও আফরিন পাশাপাশি বসে আছে। মিতার দিকে দুজনের পিঠ। কোনো একটা কিছু নিয়ে দু জনেই কথা বলতে ব্যস্ত। মিতার আসাটা কেউ লক্ষ্য করেনি।
–তারপর আফনান বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো?
প্রশ্ন করে আফরিন।
আফরিনের কথাটা শুনেই মিতা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলো। কোনো সারাশব্দ করলো না। অপেক্ষা করলো মায়া চৌধুরীর জবাব আসার।
–কোনো উপায় ছিলো না। আমরা সবাই যে মিতাকে কতটা ভালোবাসি তা তো তুই জানিস ই। আর বিশেষ করে অরিয়ন, ও যে মিতাকে কতটা আদর করে তা তোর থেকে কে ভালো জানে।
জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।

–হুম।
বলে আফরিন। কথাটা আফরিন বলতেই বড় করে একটা শ্বাস ফেলে। যেন বুকের কষ্টটা কমানোর চেষ্টা করছে।
–মিতাকে বাঁচাতে হলে এটা করতেই হতো। তোকে হারিয়ে অরিয়ন তো এমনিতেই ভেঙ্গে পরেছিলো মিতার ব্যাপারটা জানার পর মিতাকেও হারাতে চায় নি।
আবারও বলে মায়া চৌধুরী।
–আরিয়ানের সাথে তো বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো, তাহলে আরিয়ানের সাথে হলো না কেনো?
মাথা নিচু করে প্রশ্ন করে আফরিন।
আফরিনের কথা শুনে মনে হচ্ছে নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করছে অরিয়নের বিয়েটা হয়নি। কন্ঠে প্রকাশ পাচ্ছে দুঃখ কষ্ট।
–কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়াতেও যখন তুই আসলি না, স্টেজে একাই অপেক্ষা করছিলো অরিয়ন। মানুষ এটা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলো। কেন ৬ বছর ভালোবাসার পরও বিয়ের দিন তুই আসলি না। তাহলে কি অরিয়নের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে? কোনো চারিত্রিক সমস্যা? কোনো শারীরিক অক্ষমতা? তাও…
কথাটা বলে থামেন মায়া চৌধুরী। আফরিনের হাত নিজের হাতে নেয়।

–তাও?
জিজ্ঞাসা করে আফরিন।
–তাও অরিয়ন বিয়ে কর‍তে রাজি হয়নি। শেষমেশ মিতার ব্যাপারটা খুলে বলতে হয়েছে ওকে, সাথে কিছু মিথ্যে ও। তবেই রাজি হয়।
কথা শেষ করে মায়া চৌধুরী।
আফরিন নিজের হাত দিয়ে চোখ মুছে নেয়।
–আমি কী ছোটবেলায় খুব বড় কোনো পাপ করেছিলাম মা?
হঠাৎ করে প্রশ্ন করে আফরিন।
কথাটা শুনতেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে মায়া চৌধুরীর। মায়া চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।
–তাহলে আমার সাথে এমন কেনো হলো মা? কেনো দিনের পর দিন ঐসব সহ্য করতে হয়েছে আমার। কেনো যখন আশা নিয়ে ফিরলাম তখন আমার শেষ আশাটাও শেষ হয়ে গেলো।
কথাটা বলতেই মায়া চৌধুরী আফরিনকে জড়িয়ে ধরে।

–কেন আমার আফনানকে উনি আমার করে দিলেন না, মা? কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছেন উনি আমাকে? কেন ওরা আমাকে সেখানেই মেরে ফেললো না।
কাঁদতে কাঁদতে বলে আফরিন।
আফরিন আর মায়া চৌধুরীর সব কথাই দাঁড়িয়ে শুনলো মিতা। মিতার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
” আমার জীবন বাঁচাতে মানে? আরিয়ান ভাইয়ার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো? তাহলে সেই মানুষগুলো কি সত্যিই আমাকে মা*রতে এসেছিলো? অরিয়নকে নয়? আমাকে কে বা কেনই মা*রতে চাইবে?” মনে মনে ভাবতে থাকে মিতা। এসব কিছুর থেকেও যা মিতাকে সব থেকে কষ্ট দিচ্ছে তা হলো পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মিতা আর অরিয়নের বিয়ে হয়নি। হয়েছে মিতার জীবন বাঁচাতে, এবারও অরিয়ন আফরিনের না হতে পারার একমাত্র কারণ মিতা। কোনো কথা না ভেবেই দৌড়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে মিতা।
সোজা চলে যায় নিজের রুমে।

সবাই সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছে। গাড়ি অপেক্ষা করছে সবার জন্য। একটু পরেই নিজেদের বাড়তে চলে যাবে আফরিন। মিতার স্যুটকেস দরজার সামনে রাখা। নিজের প্রয়োজনীয় বই ব্যাগে ঢুকাতে ব্যস্ত। আফরিন রুমে প্রবেশ করতেই মিতার মুখে হাসি ফুটে। আফরিনও হাসি ফিরিয়ে দেয় বিনিময়ে।
–এইতো আপু, আর ৫ মিনিট।
কথাটা বলে ব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ঢুকাতে থাকে মিতা।
আফরিন হেটে গিয়ে মিতার পাশাপাশি দাঁড়ায়। নিজের হাত রাখে ব্যাগের উপর। বাধা দেয় কিছু ঢুকানোর জন্য।
–তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস না, মিতা।
বলে আফরিন।

–কেনো আপু? এরকম কেনো বলছো?
মন খারাপ করে প্রশ্ন করে মিতা।
–কারণ তোর যাওয়াটা ঠিক হবে না। এগিকে আয়।
কথাটা বলে মিতার হাত ধরে বিছানায় বসায় আফরিন। মিতার পাশে আফরিনও বসে।
–আমি অরিয়নকে এমন এক পর্যায়ে ছেড়ে গিয়েছিলাম যেখানে ওর জন্য সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ৬ বছরের ভালোবাসা, ৬ বছরের স্বপ্ন। সব।
মলিন এক হাসি দিয়ে বলে আফরিন।
এই হাসির পিছনের কষ্ট যেন মিতার নজর থেকে গেলো না।
–আপু…
–আমার কথা শেষ করতে দে মিতা।
বলে আফরিন।

–সেই সময়ে তুই আফনানের পাশে ছিলি। যেমন করেই হোক ওকে সময় দিয়েছিস। তোদের বিবাহিত সম্পর্ক আগের থেকে ভালো হয়েছে। ও তোকে নিজের জীবনে কিছুটা হলেও মেনে নিয়েছে। এর মানে কি জানিস?
প্রশ্ন করে আফরিন।
–কী?
জিজ্ঞেস করে মিতা।
–এর মানে ও না চাইতেও তোর উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। ওর সবটা না হলেও অনেকটা জুরে এখন তুই জায়গা করে নিয়েছিস। ও তোর উপর এতোটাই নির্ভরশীল হয়েছে যে, নিজের ভালো থাকা খারাপ থাকা এখন আর নিজের উপর নেই। তোর উপর ছেড়ে দিয়েছে। এক কথায় ও তোর উপর অবসেসেড।
আজ অরিয়নের চোখে মিতার জন্য যে পাগলামি লক্ষ্য করেছে আফরিন তাতে সব কিছু আফরিনের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

–তুই যদি এখন ওকে ছেড়ে যেত্ব চাস,তাহলে ও অন্য রকম পাগলামি করবে। এমনকি ভায়োলেন্টও হয়ে যেতে পারে।
–তাহলে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–ওকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে। ওর মতো করে কিছুটা চলতে হবে তবে একদম সব কিছু ওর মন মতো করা যাবে না। এতে আরও বেশি অভ্যস্ত হয়ে পরবে। তাই বলছি সব কিছু কিছুটা স্বাভাবিক হতে দে। এখন তুই চলে গেলে হিতে বিপরীত হবে।
মিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে আফরিন।
মিতার মধ্যে যেন অপরাধবোধ আরও বেড়ে গেলো। আফরিন সব হারিয়েও নিজের বোনের জন্য কতটা ভাবছে আর সেই বোনই নাকি তার ভালোবাসার মানুষ কেড়ে নিয়েছে।
–আমাকে ক্ষমা করে দেও আপু, আমাকে ক্ষমা করে দেও।
আফরিনকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে মিতা।
–এভাবে বলিস না পাগলি। মাঝে মধ্যে আমাদের হাতে কিছুই থাকে না। সব উপরওয়ালার ইচ্ছা।
মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে আফরিন।
–আমাকে ক্ষমা করে দেও, ক্ষমা করে দেও।
বিরবির করে বলতে থাকে মিতা।

অরিয়ন যখন বাসায় ফিরলো তখন সবার ঘুমানোর টাইম হয়ে গেছে। আফরিনরা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে সন্ধ্যার পর। মিতা নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। অরিয়ন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় চেঞ্জ করে আর এক মিনিটও অপেক্ষা করলো না। সরাসরি চলে যায় গেস্ট রুমে। সকাল থেকে একবারও মিতাকে দেখেনি অরিয়ন। অস্থির লাগতে শুরু করেছে অরিয়নের। এক ঝলকের জন্য হলেও মিতাকে দেখতে হবে।
মিতার রুমের কাছে এসে কড়া নাড়ে অরিয়ন।
ঘুমঘুম চোখে কড়া নাড়ার শব্দ শুনতেই চোখ খুলে তাকায় মিতা।

–কে?
শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে মিতা।
–আমি, দরজা খুল।
সাথে সাথে উত্তর দেয় অরিয়ন।
অরিয়নের কণ্ঠ শুনতেই ঘড়ির দিকে তাকায় মিতা। রাত প্রায় ১২ টা। এতো রাতে কেনো এসেছে তা বুঝতে পারছে না মিতা।
–দরজা খুল পরী।
আবারও বলে অরিয়ন।
মিতা কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। অপেক্ষা করে অরিয়নের চলে যাওয়ার।
–পরী? কি হয়েছে দরজা খুল।
অরিয়নের কন্ঠে যেন ধৈর্য্য নেই, এমন ভাবে বলতে লাগলো অরিয়ন।

–পরী?
–পরী?
–লাভ? দরজা খুল প্লিজ।
অরিয়ন নিজের শক্তি দিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে যেন ঘুম থেকে উঠে হলেও মিতা দরজা খুলে।
–আমি দরজা খুলবো না। তুমি নিজের রুমে ফিরে যাও।
এতো শব্দ সহ্য করতে না পেরে বলে উঠে মিতা।
–দরজা খুল পরী। তোকে একবার দেখবো।
অনুরোধের সুরে বলে অরিয়ন।
–কাল সকালে দেখো। এখন নিজের রুমে যাও। আমি দরজা খুলবো না।
নিজের ডিসিশন জানিয়ে দেয় মিতা।
–প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ। লেট মি ইন,লাভ।
দরজার লক ধরে মোচড়াতে মোচড়াতে বলে অরিয়ন।
–আই উইল কি*ল ইউ, কি*ল ইউ।
রেগে বলে অরিয়ন।

পারমিতা পর্ব ৩০

–সরি, সরি। প্লিজ লাভ, একবার খুল।
পরক্ষণেই কোমলভাবে বলে অরিয়ন।
অরিয়নের ক্ষনিকের মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখে আফরিনের বলা কথাগুলো ভাবে। নিজেকে কঠোর হতে হবে ভেবে চুপ করে খিচ মেরে বসে রইল মিতা। কিছুক্ষণ পরেই বাইরে থেকে শব্দ আসা বন্ধ হয়ে যায়।
” তোমার ভালোবাসাকে তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রমিস করেছি আমি, তার জন্য যা করার তাই করবো” বিরবির করে কথাটা বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মিতা।

পারমিতা পর্ব ৩২