পারমিতা পর্ব ৩২
Nabila Ahmed
ভোরের আলো মিতার চোখে পড়তেই চোখ খুলে মিতা। চোখে ব্যাথা অনুভব করছে। মোবাইলের ক্যামেরা অন করে নিজের চেহারার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় চোখ ফুলে আছে। গতকাল রাতে কান্না করার কারণে চোখ ফুলে গেছে।
বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় মিতা। বই খাতা সব রেডি করে নেয়। নাস্তা করার উদ্দেশ্যে রুমের দরজা খুলতে নিচে নামে মিতা।
নাস্তার টেবিলে আজ আবরারকে ছাড়া আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দূর থেকে আবরারকে দেখতেই যেন হাসি ফুটলো মিতার ঠোঁটে। দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নেমে সোজা গিয়ে আবরারের পাশে বসে।
–আরিয়ান ভাইয়া।
পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলে মিতা।
–মিতা, কেমন আছিস?
মিতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে আবরার।
–ভালো আছি। তুমি কখন আসলে ঢাকা থেকে?
আবরারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–গতকাল রাতে।
জবাব দেয় আবরার।
–কেমন কাটলো তোমার ট্যুর?
উৎসুক মিতা জিজ্ঞাসা করে।
–খুব ভালো।
জবাব দেয় অরিয়ন।
মিতা প্লেটে নিজের খাবার নিয়ে খেতে থাকে। আবরারও নিজের খাবার খাচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–শুনলাম…
কথাটা বলে একটু চুপ থাকে আবরার।
আবরারের কথা শুনে আবরারের দিকে তাকায় মিতা।
–শুনলাম আফরিন ভা…আফরিন আপু ফিরে এসেছে?
মিতার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে আবরার।
–হ্যাঁ।
জবাব দেয় মিতা।
–যা শুনেছি সব কি সত্যি?
মিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আবরার।
–মিথ্যে কেন হবে?
ভ্রু কুচকে বলে মিতা।
–রাশিয়ান মাফি*য়া সম্পর্কে কোনো আইডিয়া আছে তোর? তারা কেন একজন মেয়েকে, যে কিনা র*ক্ষিতা হতে গিয়েছিলো তাকে বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে যাবে? ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
অনায়াসে বলে আবরার।
–কি বলতে চাচ্ছো তুমি? ওরা ফিরিয়ে দিয়ে গেছে কারণ ওরা ভালো মানুষ। সবাই খারাপ হবে এমন কি কোনো কথা আছে?
সরল মনে বলে মিতা।
–না। কথা নেই। তবে মা*ফিয়ারা এতো দয়ালু না মিতা।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–ওসব কিছু জানিনা আমি। আপু ফিরে এসেছে তাতেই খুশি।
খাবার মুখে দিতে দিতে বলে মিতা।
–আফরিন আপু ফিরে এসেছে তাতে আমিও খুশি। কি একটা এবার হবে।
অন্যমনস্ক হয়ে বলে আবরার।
–কি হবে?
জানতে চেয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–তেমন কিছু না।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
আবারও যেন খাবার টেবিলে নিরবতা বিরাজ করতে শুরু করলো। মিতা একটু পর পর আড় চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা ভাবছে গভীর ভাবে।
–তুমি কি জানতে?
হুট করে প্রশ্ন করে মিতা।
মিতার নজর নিজের প্লেটের দিকে। চামচ শক্ত করে ধরে রেখেছে। আবরার মিতার কথা শুনতেই মিতার দিকে তাকায়।
–কি জানতাম?
জিজ্ঞেস করে আবরার।
–তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা ছিলো তা?
নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে মিতা।
মিতা ভালোই জানে আবরার এমন একজন মানুষ যে, কিছু যেনে থাকতে মিতার কাছে কখনোই গোপন করবে না। আনিকা চৌধুরী বা হাবিব চৌধুরী মিতাকে কিছুই বলবে না। অরিয়নও কিছু বলতে অস্বীকার করে দিয়েছে। মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরীর বলার হলে অনেক আগেই বলে দিতে পারতো মিতাকে। তার অর্থ তারা বিষয়টা মিতাকে জানাতে চায় না। একমাত্র ভরসা শুধুই আবরার।
–জানতাম।
স্বীকার করে আবরার।
আবরারের কথা শুনে একটা হাসি দিলো মিতা। এই হাসি আনন্দের নয়। নিজের অনুমান ঠিক হয়েছে তার হাসি।
–তুমি কি জানো কেউ আমাকে মা*রতে চায়?
প্রশ্ন করে মিতা।
–জানি।
এবারও স্বীকার করে আবরার।
এবার মিতার হাসির সাথে দু ফোঁটা চোখের পানি প্লেটে পড়লো।
–তুমি কি জানো আন্টি আমাকে অনেক ঘৃণা করে?
কথাটা বলতে যেন মিতার শ্বাস আটকে আসছে। তাও বললো।
–আমরা কেউ অন্ধ না মিতা। সবার চোখ আছে।
জবাব দেয় আবরার।
এবার মিতা চোখ তুলে আবরারের দিকে তাকায়। আবরার আগে থেকেই মিতার দিকে তাকিয়ে আছে। মিতার চোখে পানি ছলছল করছে অন্যদিকে আবরারের চোখেও বিষন্নতা।
–কারণ কি?
আবরারের চোখে চোখ রেখে বলে মিতা। আবরার এবার চোখ সরিয়ে নেয়। কি বলবে নিজেও জানেনা।
–আমার বলার অনুমতি নেই। থাকলে আমি তোর কাছে কিছুই লুকাতাম না।
মাথা নিচু করে বলে আবরার।
–কি ভুলের শাস্তি পাচ্ছি আমি? আমাকে কেনো তোমরা কেউ কিছু বলছো না? কি এমন অপরাধ করেছি যার জন্য তোমরা সবাই মুখ বুজে সব সহ্য করো?
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–কি হলো বলো? তোমার সাথে কেনো আমার বিয়ে ঠিক হবে? কেনো কেউ আমাকে মারতে চাইবে? কেনো আমি এই বাড়িতে আন্টির চোখের কাঁটা? জবাব দেও আরিয়ান ভাইয়া।
আবরারের শার্টের কলার ধরে চেঁচাতে থাকে মিতা।
মিতার এতো অপমান, এতো রহস্য আর সহ্য হচ্ছে না। যদি কেউ পছন্দই না করে তবে কেনো মিতাকে এখন থেকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিচ্ছে না। সামনে থেকেও কেনো অদেখার মতো বাঁচবে মিতা? এতোদিন সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিলো, ভেবেছিলো সময়ের পরিক্রমায় সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা।
আবরার কাঁদতে থাকা মিতাকে জড়িয়ে ধরে। কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না। তবে মিতার চোখের পানি আবরার সহ্য করতে পারে না।
–কাঁদিস না। কিছু কথা না জানাই ভালো।
মিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে আবরার।
দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন। অনেক্ষন ধরেই সব কিছু দেখছে। হাত দিয়ে রেলিং শক্ত করে ধরা। তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। মিতা নিজের দু হাত দিয়ে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। মিতার মাথা আবরারের কাঁধে। আবরারের হাত মিতার মাথায়। প্রতিনিয়ত মিতার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে আবরার। রাগান্বিত অরিয়ন নিচে আর নাস্তা করতে না নেমেই হাটা শুরু করে।
গাড়িতে বসে আছে মিতা। গন্তব্য নিজেদের বাড়ি। একবার সামনা-সামনি সব কিছু মায়া চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করতে চায় মিতা। নাস্তা শেষ করে কলেজে চলে আসে। নাস্তা করা বা কলেজে আসার সময়ও অরিয়নের সাথে দেখা হয়নি মিতার। মনে মনে ঠিক করেছে এবার যা প্রশ্ন করার তা নিজের মা বাবা থেকেই আগে শুরু করতে হবে। তাই কলেজ থেকে বাড়ি না গিয়ে সরাসরি নিজের বাসায় যাচ্ছে মিতা।
মিতা যখন বাড়িতে ঢুকলো ওয়াহিদ চৌধুরী তখন অফিসে। ওয়াহিদ চৌধুরী নিজের বড় ভাই হাবিব চৌধুরীর ব্যবসার দেখাশোনা করে। ড্রয়িং রুমে মায়া চৌধুরী কারো সাথে মোবাইলে কথা বলতে ব্যস্ত।
–মা?
মুখে বিশাল বড় হাসি ফুঁটিয়ে দৌড়ে যায় মিতা।
–আচ্ছা আমি পরে ফোন দিবো।
কথাটা বলেই মোবাইল রেখে দাঁড়িয়ে পরে মায়া চৌধুরী। মিতাকে জড়িয়ে ধরে।
–কেমন আছে আমার মেয়েটা?
বলে মায়া চৌধুরী।
–ভালো। তুমি কেমন আছো মা?
জবাব দেয় মিতা।
–আমিও ভালো আছি। তুই আসবি কল করে বলিস নি কেনো?
মিতাকে নিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে মায়া চৌধুরী।
–তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
জবাব দেয় মিতা।
–আচ্ছা তুই এসেছিস ভালোই হয়েছে। কথা ছিলো তোর সাথে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–কি কথা? আর আপু কোথায়?
আশেপাশে খুজে দেখার চেষ্টা করে মিতা।
–আফরিন নিজের রুমে।
জবাব দেয় মায়া চৌধুরী।
–ওহ, কি কথা বলবে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–আফরিন আশার খুশিতে একটা পার্টি দিবো ভাবছি। ওর মনটাও ভালো হবে। সারাদিন মন খারাপ করে থাকে।
বলে মায়া চৌধুরী।
–হ্যাঁ দেওয়া যায়। কবে করবে ঠিক করেছো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–এখনো করিনি। তুই বল, ২ দিন পর করলে কেমন হবে?
প্রশ্ন করে মায়া চৌধুরী।
–করা যায়।
বলে মিতা।
মিতার সম্মতিতে চোখেমুখে আনন্দ ফুঁটে উঠেছে মায়া চৌধুরীর। একটু পরেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। মাথা নিচু করে কান্না করা শুরু করে দেয় মায়া চৌধুরী।
–আমার হাসিখুশি থাকা মেয়েটাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে না, মিতা। কি পাপের শাস্তি দিচ্ছেন আমাদের জানিনা।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মায়া চৌধুরী।
–কেঁদো না মা। সময় দেও, আপু ঠিক হয়ে উঠবে দেখো।
মায়া চৌধুরীকে ধরে বলে মিতা।
৯ মাস। ৯ মাস পতি*তালয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে থাকা কোনো মুখের কথা না। একজন নারীর কাছে ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করার চাইতে বড় শাস্তি আর কিছু নেই। আফরিন কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা কল্পনাও করতে পারছে না মিতা। তাও এটা সকলের জানা বড় থেকে বড় ক্ষতও একদিন ঠিক হয়ে যায়। দরকার শুধু সময়ের। দরকার আপনজন মানুষের সাপোর্ট।
“কিন্তু সেই আপনকে তো তুই নিয়ে নিয়েছিস” কথাটা যেন মিতার মাথায় হুট করেই চলে আসলো। নিজে একটু নড়েচড়ে বসলো।
–এসেছিস যখন তখন আজ থেকে যা। আমি হাবিব ভাইকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।
বলে মায়া চৌধুরী।
–আচ্ছা মা। আমি আপুর কাছে যাচ্ছি।
কথাটা বলেই ব্যাগ কাধে নিয়ে আফরিনের রুমের দিকে হাটতে থাকে মিতা।
ছাদে বসে আছে আফরিন আর মিতা। মিতা দোলনায় দোল খাচ্ছে, আফরিন পাশেই চেয়ারে বসে আছে। ছাদের একপাশে করা বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে আফরিন। আর আফরিনের দিকে তাকিয়ে আছে মিতা।
–আমার মাঝে মধ্যে মনে হতো ঐ জাহান্নাম থেকে হয়তো আমি কখনো রক্ষা পাবো না।
হুট করে বলতে শুরু করে আফরিন।
–একবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ধরে ফেলেছিলো আমাকে..সেদিন আমি বুঝতে পারলাম না খেয়ে থাকার কষ্ট কতটা। শুধু পানি খেয়ে ৪ দিন ছিলাম। ওরা আমাকে খাবার দেয়নি।
বাগানের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে বলে আফরিন।
মিতা দোলনা থেকে উঠে আফরিনের পাশের চেয়ারে বসে। আফরিনের হাতে নিজের হাত রাখে।
–কত কত দোয়া করেছি আমি জানিনা..তবে আমার চোখের পানিতে হয়তো তার একটু দয়া হয়েছে তাই রাশিয়ায় আমি ও চলে গেলাম।
দু জনের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে আফরিন।
–মা*ফিয়ার মতো মারাত্মক জায়গা থেকে কীভাবে ফিরে আসলে তুমি? বাড়িতেই বা কেনো দিয়ে গেলো তোমাকে?
আফরিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–জানিনা। হয়তো পুরোটাই মিরাকেল। তবে..
একটু বলে থামে আফরিন।
–তবে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–তবে ওদের বসকে দেখে আমার চেনাচেনা লাগছিলো। মনে হয়েছিলো কোথাও তো দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখেছি তা মনে করতে পারছি না।
বলে আফরিন।
–কি বলছো? রাশিয়ান মা*ফিয়া বসকে দেখেছো এর আগে?
একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–বস কিন্তু রাশিয়ান ছিলো না।
বলে আফরিন।
–কিহ?
–হ্যাঁ। দেখতে এশিয়ান মনে হয়েছিলো আর ছেলেটা আমার কথা সব বুঝতে পারছিলো। এত্ত ইয়াং বয়সে মা*ফিয়া কিভাবে হয়ে গেলো তাও মাথায় যাচ্ছিলো না।
–ইয়াং মানে? মাইকেল এর মতো না?
প্রশ্ন করে মিতা।
–না। ২০/২১ হবে যতোদূর আমার মনে হয়েছে।
বলে আফরিন।
–কি বলো, এতো কম বয়সে মা*ফিয়া বস!
অবিশ্বাসের সুরে বলে মিতা।
–হুম। আচ্ছা বাদ দে। আমাকে ছাড়া কি কি করলি তা বল।
একটু হাসি দিয়ে বলে আফরিন।
–তেমন কিছুই না। তবে আমরা প্যারিস গিয়েছিলাম।
বলে মিতা।
–তাই নাকি? কি কি দেখলি?
প্রশ্ন করে আফরিন।
–হ্যাঁ, আচ্ছা শুনো কি কি দেখেছিলাম।
বলতে শুরু করে মিতা।
বিছানায় শুয়ে আছে মিতা। এসেছিলো মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে নিজের প্রশ্নের উত্তর খুজতে। কিন্তু মায়া চৌধুরীর অবস্থা দেখে আর পার্টির কথা শুনে মহল নষ্ট করতে মন চায় নি মিতার। পার্টি শেষ হলেই জিজ্ঞেস করবে ঠিক করেছে মিতা।
সকালের নাস্তা শেষ করেই বাড়িতে চলে এসেছে মিতা। আজ কলেজ বন্ধ তাই টিউশন টিচার ১০ টা করে আসবে মিতাকে পড়াতে। তাই নাস্তা করেই আর অপেক্ষা না করে চলে আসে মিতা। শায়লার সাথে ড্রয়িং রুমে দেখা হতেই একটু কথা বলে নেয় মিতা।
শায়লার সাথে কথা শেষ হতেই রুমের দিকে যায় মিতা। রুমের সামনে আসতেই একটু দাঁড়িয়ে যায় মিতা। রুমের দরজা খোলা। সাধারণত মিতার এই গেস্ট রুমে কারও আসার কথা না। মিতার স্পষ্ট মনে আছে যাওয়ার সময় মিতা দরজা লাগিয়ে গিয়েছিলো। ধীরে ধীরে রুমের দিকে বিছানায় পা ঝুলে থাকতে দেখে মিতা। রুমের মধ্যে ঢুকতেই দেখতে পায় অরিয়ন বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। পা খাট থেকে নিচে ঝুলছে। পড়নে কোর্ট প্যান্ট। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। পাশেই টেবিলে অরিয়নের ব্রিফকেস রাখা।
অরিয়নকে দেখে মিতার বুঝতে একটু ও সময় লাগেনি যে, অরিয়ন এভাবে কাল রাত থেকে শুয়ে আছে। পরণের টাই খোলা, শার্টের বাটন খোলা। ইন করা শার্ট বেরিয়ে আছে। মিতা ধীরে ধীরে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই অরিয়নের চেহারা মিতার সামনে আসে।
চোখমুখে ক্লান্তি ফুঁটে উঠেছে অরিয়নের। মনে হচ্ছে কতরাত ঘুমায় নি। চোখগুলো কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। হুট করেই সামনা-সামনি তাকাতেই মিতার সাথে চোখাচোখি হয় অরিয়নের। মিতাকে দেখতেই ধীরে সুস্থে উঠে বসে অরিয়ন। নিজের হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে।
রাগান্বিত অরিয়নকে দেখে মিতার ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু সামনে বসে থাকা অরিয়নের চেহারায় রাগের কোনো চিহ্ন নেই। এমন শান্ত শিষ্ট অরিয়নকে দেখে মিতার রুহ যেন কেঁপে উঠছে।
চুল ঠিক করে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। আলতো করে এক হাসি দেয়। অরিয়নের হাসি দেখে দু পা পিছিয়ে পড়ে মিতা। মিতার পিছিয়ে পড়া লক্ষ্য করতেই বাঁকা এক হাসি দেয় অরিয়ন।
পারমিতা পর্ব ৩১
–আমার মানতেই হবে। তুই খুব সাহসী।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।
অরিয়নকে উঠে দাঁড়াতে দেখেই আর অপেক্ষা না করে দৌড় দেয় মিতা। লক্ষ্য যত দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
–ওহ, নো..
ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে কথাটা বলেই দৌড় দেয় অরিয়ন।