পারমিতা পর্ব ৩৯
Nabila Ahmed
অরিয়ন বাসায় আসার আগেই ডাক্তার আর নার্সরা বাসায় এসে অপেক্ষা করছে। কাজের লোকরা অরিয়নের রুম থেকে শুরু করে সব কিছু রেডি করে রেখেছে। ওয়াহিদ চৌধুরী গাড়িতে উঠতেই কল করে বলে দিয়েছে অরিয়ন ট্রিটমেন্ট বাসায় করাবে। যেহেতু অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে সেহেতু এখন ভয়ের কিছু নেই।
আফরিনের সাথে কথা শেষ করে নিজের রুমের চলে আসে মিতা। অরিয়নকে হাসপাতালে আবার দেখতে যাবে। যতো যাই হয়ে যাক, অরিয়ন মিতাকে ভালো না বাসলেও মিতা তো বাসে। দূর থেকে হলেও চোখের দেখাটা হলেও দেখে আসবে মিতা। হাসপাতালে গিয়ে সুযোগ বুঝে হাবিব চৌধুরীর সাথেও একটু কথা বলে নিবে। ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায় মিতা।
অরিয়ন যে বাড়িতে নিজের ট্রিটমেন্ট করার ব্যবস্থা করেছে সে সম্পর্কে বেখেয়াল মিতা। অন্য কেউ ও মিতাকে এই খবর দেয় নি, আসলে দেওয়ার সুযোগ হয়নি। ক্লান্ত মিতা নিজের রুমে চলে এসেছে সরাসরি, আফরিন বা আবরার এই কথা বলার সুযোগ পায়নি আর।
অরিয়ন বাসাতে আসতেই তাড়াতাড়ি করে ধরে রুমে নিয়ে যায় সবাই। অরিয়নের শরীর আর মাথা থেকে ঘাম ঝরছে অনবরত। বুকের ব্যাথাটা সহ্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে অরিয়ন। তাড়াতাড়ি করে অরিয়নকে রুমে নিতেই নার্সরা ড্রেসিং করতে চলে আসে। র*ক্তক্তা হাত আর বুকের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে স্যালাইন লাগায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
স্যালাইন হাতে লাগিয়ে শুয়ে আছে অরিয়ন। শরীর থেকে র*ক্ত যাওয়া ও পেইন কি*লার খাওয়াতে এখন ঘুমাচ্ছে। অরিয়নের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আনিকা চৌধুরী। চোখেমুখে রাগ যেন ভেসে উঠেছে স্পষ্ট। এই রাগ নিজের প্রতি, নিজের ছেলের প্রতি। যে সব কিছু জানার পরও মিতার জন্য পাগলামি করেই যাচ্ছে।
হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসা। নিজেদের মধ্যে কথা চলছে। যে মিতাকে মা*রার চেষ্টা করেছে তাকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে পুলিশ। কোন দিক থেকে গুলি চলেছে তা কেউ বলতেও পারেনি। বাড়িতে সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকতেও ক্যামেরায় কিছুই ধরা পড়েনি। যেন কোথায় কী আছে সব কিছুই খু*নির জানা।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের ব্যাগ কাঁধে নেয় মিতা। মনটা হুট করে আনচান করছে। একবার গিয়ে অরিয়নকে দেখে আসবে ঠিক করেছে। রুম থেকে বের হতেই লক্ষ্য করে ড্রয়িং রুমে বসে আছে ওয়াহিদ চৌধুরী ও হাবিব চৌধুরী। নিজেরা কথায় ব্যস্ত ভেবে আর সেদিকে আগায় না মিতা। বাইরে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করে।
–কোথায় যাচ্ছিস?
ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–হাসপাতালে চাচ্চু।
জবাব দেয় মিতা।
–হাসপাতালে? হাসপাতালে কেন? অরিয়ন তো বাসায়।
ভ্রু কুঁচকে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–বাসায়? হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিলো এতো তাড়াতাড়ি?
প্রশ্ন করে মিতা।
–হাসপাতাল তো দিতে চায়নি। তবে নবাব আর থাকতে চাচ্ছিলো না। নবাব তো হাসপাতাল থেকে একা একাই বের হয়ে গিয়েছিলো তোকে খুজতে।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমাকে খুজতে?
বলে মিতা।
–হ্যাঁ। বাড়িতে ফোন করে তুই নেই সেটা শুনার পড়ই পাগলের মতো দৌড়ে বাড়িতে গিয়েছিলো। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কী যে অবস্থা হয়েছিলো। হাসপাতালে নিতে চাইলে বললো বাসায় থাকবে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
মিতা এবার হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে যায়। অরিয়ন মিতার জন্য ম*রতে বসেছিলো সেটা কী কম ছিলো? যে এখন এই অসুস্থ শরীর নিয়েও খোজাখুজি করতে হবে?
–তোরা থাক আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নি।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় হাবিব চৌধুরী।
চলে যায় মিতা আর ওয়াহিদ চৌধুরীকে একা রেখে।
–খাওয়া দাওয়া করেছিস কিছু?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–কেন? না খেলে যে শ…
–আমাকে কে আর কেনই বা মা*রতে চাইবে বাবা? আমি কী করেছি?
ওয়াহিদ চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে মিতা। মিতার প্রশ্নে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–কে মা*রতে চায় জানিনা। তবে মনে হচ্ছে আমাদের ব্যবসায়ের শত্রু। অরিয়নকে ভয় দেখানোর জন্যই তোর উপর বার বার এটাক করছে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–বাবা, একটা প্রশ্ন করি?
বলে মিতা।
–আমার কাছে প্রশ্ন করার জন্য কবে থেকে আবার তোর অনুমতির প্রয়োজন পড়লো?
মিতার মাথায় হাত রেখে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–মায়ের কী কেউ ছিলো না? বাবা-মা কেউ? তারা কেন আমার সাথে যোগাযোগ করেনি?
প্রশ্ন করে মিতা। মা বলতে মিতা যে সুমাইয়া চৌধুরীর কথা বুঝিয়েছেন তা বুঝতে পেরেছে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–কোনোদিন তো এসব কথা জিজ্ঞেস করিস নি? তবে আজ কেন?
উলটো প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আজ মার কথা খুব মনে পড়ছে তাই। তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে।
মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বলে মিতা।
–তোর মা বাবার বিয়েটা ছিলো ভালোবাসার। তোর নানা বিয়েতে রাজি ছিলো না তাই তোর মা পালিয়ে আসে ওয়াসিমের সাথে। মেয়ের পালিয়ে যাওয়াতে তোর নানা অনেক কষ্ট পান। সে ছিলো বড়ই জেদি মানুষ। সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তোর মা বাবার মৃত্যুর খবর পাঠালেও সে আর যোগাযোগ করেনি।
সব ঘটনা মিতাকে খুলে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী। লুকানোর মতো কিছুই নেই। যেই ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখার ছিলো তা তো আনিকা চৌধুরী বলেই দিয়েছে৷ বাকি সব কিছু তো অরিয়ন মিতাকে খুলে বলেছে।
–না….নানা ভাইয়ের নাম কী?
আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে মিতা। মনে মনে দোয়া করছে কবির রহমান যেন একটা ঠকবাজ হয়। হাবিব চৌধুরীকে নিয়ে যেভাবে কথা বলেছে তা একটু ও ভালো লাগেনি মিতার।
–নামটা….
একটু ভাবে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আসলে অনেকদিন হয়েছে তো তাই…ক…করিম..কবির…হ্যাঁ, মনে পড়েছে…কবির রহমান।
ভেবে চিন্তে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
ওয়াহিদ চৌধুরীর জবাবে কিছুটা হতাশ হলো মিতা। কি করবে বুঝতে পারছে না।
–তুমি কি তাকে কখনো দেখেছিলে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–না। তবে একবার ছবি দেখেছিলাম। সুমাইয়ার সাথে ছিলো। তবে হাবিব ভাইয়া দেখেছিলো কয়েকবার।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–বড় চাচ্চু কেনো?
প্রশ্ন করে মিতা।
–কারণ সুমাইয়া পালিয়ে আসার পর উনি খুব হেনস্তা করতে চেয়েছিলেন আমাদের। তখিন সব কিছু হাবিব ভাইয়াই হ্যান্ডেল করেন।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–ওহ আচ্ছা।
বলে মিতা।
–তুই মন খারাপ করিস না। তোর মা বাবা আর অহনার সাথে যা হয়েছে তাতে তোর কোনো দোষ নেই।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–এই বাড়িতে কেন অহনা আপুর ছবি নেই? কেন কোনোদিন অহনা আপুর নাম শুনিনি আমি?
অশ্রুসিক্ত নয়নে ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–অরিয়নের জন্য।
জবাব দেয় ওয়াহিদ চৌধুরী।
–মানে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা। অরিয়নের জন্য এমনটা কেন হবে তা বুঝতে পারছে না।
–মানে অরি…
–ওয়াহিদ….এইদিকে তাড়াতাড়ি আয়।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাক দেয় হাবিব চৌধুরী।
–আসছি ভাইয়া। পরে কথা বলবো। তুই খেয়ে নিস।
কথাটা বলেই হাবিব চৌধুরীর দিকে চলে যায় ওয়াহিদ চৌধুরী।
মিতাও সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে৷ উদ্দেশ্য অরিয়নকে একবার দেখা।
অরিয়নের রুমে একজন নার্স ছাড়া আর কেউ নেই। অরিয়ন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। নার্স কাউচে বসে ঝিমাচ্ছে। মিতা ধীর পায় অরিয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অরিয়নের মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে লাগছে।
” আমাকে বিয়ের করার সাথে আমার মৃত্যুর কী সম্পর্ক? আমাকে বিয়ে করে কী কম উপকার করেছো যে জীবন দিয়েও আরও করতে হবে?” ঘুমন্ত অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে মিতা।
অরিয়নের পাশে বেডে বসে মিতা। নিজের হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করে অরিয়নের হাত।
“সবকিছু কী ভালোবাসা থেকে করতে পারলে না?” অরিয়নের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে মিতা।
“পরের জন্মে আমি না হয় তোমার আফরিন হবো, তুমি আমার আফনান হয়ে এসো” কথাটা বলতেই মিতার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আলতো করে অরিয়নের হাত উঁচু করে তাতে চুমু খায় মিতা।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অরিয়ন রুমে ঘটে যাওয়া কিছুই জানতে পারেনি। তবে কিছু একটা স্বপ্নে দেখতেই ঘুমের চোখে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে অরিয়নের।
সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিয়েছে। ওয়াহিদ চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে মায়া চৌধুরীকেও নিয়ে এসেছে। গেস্ট রুমে মিতার সাথে আজ আফরিন ও ঘুমাবে।
বিছানায় শুয়ে আছে মিতা। আফরিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু মিতার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে না।
–টুং
মোবাইলের আওয়াজ শুনতেই মোবাল হাতে তুলে নেয় মিতা। স্ক্রিনে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দেখা যাচ্ছে। ইনবক্সে প্রবেশ করে মিতা।
আননোন নাম্বার :
ঘরের শত্রু বিভীষণ। তোমাকে যে মারতে চায় সে চৌধুরী পরিবারেরই একজন।
ইতি K.R.
মেসেজ আসে আননোন নাম্বার থেকে।
মেসেজ দেখেই লাফিয়ে উঠে বসে মিতা। কে পাঠিয়েছে এই মেসেজ আর কথাই বলছে বুঝতে পারছে না। চৌধুরী পরিবারের লোক কখনোই মিতার সাথে এমন করতে পারে না। ছোট থেকে সবাইকে দেখে আসছে মিতা।
মিতা:
কে আপনি? ফাইজলামি করা মোটেও পছন্দ করিনা আমি। আর কখনো মেসেজ দিবেন না।
সাথে সাথে মেসেজের রিপ্লাই দেয় মিতা।
অপর পাশ থেকে আর কোনো মেসেজ আসেনি। কতক্ষণ ধরে বিছানায় শুয়ে আছে তা মিতা জানেনা। শুধু জানে ভালো লাগছে না। মাথা থেকে মেসেজের ব্যাপারটা শত চেষ্টা করেও সরাতে পারছে না। মাথা ঘুরিয়ে আফরিনের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে আফরিন ঘুমাচ্ছে। কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে নামে মিতা। ধীরপায়ে রুমের দরজা লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
ধীরে ধীরে হেটে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়নের রুমের সামনে। দরজা খুলতেই দেখতে পায় ঘুমিয়ে থাকা অরিয়নকে। পাশেই বসে মোবাইল টিপছে একজন নার্স। মিতাকে দেখতে একপ্রকার লাফিয়ে উঠে সে। হাতের ইশারায় বসে থাকতে বলে মিতা। নার্স ও নিজের জায়গায় আবারও বসে পড়ে। অরিয়নের পাশে যেতেই নার্স উঠে দাঁড়ায়,গিয়ে বসে সোফায়। মিতা অরিয়নের পাশে বসে খাটের সাথে হেলান দেয়।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে মিতার। লাফিয়ে উঠে দেখে অরিয়ন এখনো ঘুমাচ্ছে। গতকাল রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি মিতা। ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে নার্স। মিতা কোনো কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
স্টাডি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিতা। হাবিব চৌধুরীর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো। কবির রহমান যা বললো ও আননোন নাম্বার থেকে যা আসলো সব হাবিব চৌধুরীকে বলে দিবে বলে ঠিক করেছে মিতা। আর যাই হোক হঠাৎ করে কেউ একজন এসে এই পরিবার নিয়ে বললে তা অন্ধবিশ্বাস করা মিতার জন্য বোকামি হবে।
–চাচ্চু ভিতরে আসবো?
দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বলে মিতা।
চেয়ারে বসে আছে হাবিব চৌধুরী। হাতে চায়ের কাপ। মিতার কন্ঠ শুনতেই মুখ তুলে মিতার দিকে তাকায়। মিতাকে দেখতেই মুখে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসি।
–আয়।
টেবিলে কাপ রাখতে রাখতে বলে হাবিব চৌধুরী।
মিতাও হাসি দিয়ে যায় হাবিব চৌধুরীর সামনে। পাশে থাকা চেয়ার টেনে বসে মিতা।
–এতো সকাল সকাল এখানে? কিছু বলবি?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।
বলে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই হাবিব চৌধুরীর চেহারায় বিষন্নতা ফুঁটে উঠে।
–আমার নানাভাই কবির রহমানকে চিনো তুমি?
কিছু একটা ভেবে হাবিব চৌধুরীর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনতেই মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় হাবিব চৌধুরী। দেখে মনে হচ্ছে চুরি ধরা পড়েছে। কেমন যেন বার বার মিতার থেকে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ করে হাবিব চৌধুরী এহেন পরিবর্তন দেখে মিতা গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে হাবিব চৌধুরীর উত্তরের।
–না।
অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা করার অভিনয় করতে করতে বলে হাবিব চৌধুরী।
“বাবা তো বলেছিলো..” মনে মনে কথাটা ভাবে মিতা।
–কখনো দেখা হয়েছিলো নানা ভাইয়ের সাথে?
ভ্রু কুঁচকে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–কী হয়েছে তোর? সকাল সকাল এতো প্রশ্ন করছিস কেন?
চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী। চোখেমুখে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে।
হঠাৎ করে চেঁচানোর কারণে লাফিয়ে উঠে মিতা। তা লক্ষ্য করে হাবিব চৌধুরী। বড় বড় করে একটু শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে হাবিব চৌধুরী।
–সরি। আসলে একটা নিউজ শুনে এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না। তার উপর এতো প্রশ্ন শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–না, কোনোদিন দেখা হয়নি। আজ কেন জিজ্ঞেস করছিস?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
“মিথ্যে” মনে মনে বলে মিতা।
–না এমনিতেই। গতকাল মায়া মার সাথে কথা বলার সময় কথায় কথায় নানা ভাইয়ের নাম উঠেছিলো। ভাবলাম তুমি তো পরিবারের সবার বড় হয়তো তুমি চিনে থাকবে।
মন খারাপ করে বলে মিতা।
–উনার সাথে আমাদের কোনোদিন দেখা হয়নি।
বলে হাবিব চৌধুরী।
–আচ্ছা। আমি তাহলে যাই।
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ায় মিতা।
–শুন..
বলে হাবিব চৌধুরী।
–জ্বি বলো।
বলে মিতা।
–আজ থেকে তুই অরিয়নের রুমে ঘুমাবি..
–কিন্তু নার্স তো….
–নার্স রাতে পাশের আবরারের রুমে থাকবে। রাত বিরাতে অরিয়নের কিছু প্রয়োজন হতে পারে। স্ত্রী হিসেবে এই সময় এসব করা তোর দায়িত্ব।
পারমিতা পর্ব ৩৮
–আচ্ছা।
কথাটা বলেই হেটে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় মিতা। মাথা ঘুরিয়ে একবার ফিরে তাকায় হাবিব চৌধুরী দিকে। হাবিব চৌধুরী চিন্তিত অবস্থায় নিজের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
“কেন মিথ্যে বললে তুমি? তবে কী তুমি যেমন দেখাচ্ছো তেমন নও? তবে কী সত্যিই ঘরের শত্রু বিভীষণ? ”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় মিতা।