পারমিতা পর্ব ৪০
Nabila Ahmed
–পরী?
–পরীইইইইইই?
–পরীইইইইইইইইইই??
–প্লিজ স্যার আপনি এভাবে চেঁচামেচি করবেন না। আপনার বিপি বেড়ে যাবে।
অরিয়নের কাছে গিয়ে বলে নার্স।
–পরীইইইইইইইইইইইইইইইইইইই?
–পরীইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই?
–স্যার প্লিজ থামুন।
বলে নার্স।
ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই পরীর জন্য অপেক্ষা করছে অরিয়ন। গতকাল বাসায় আসার পর থেকে একবারও চোখের দেখাটাও দেখেনি অরিয়ন। ভেবেছিলো পরী হয়তো একবার হলেও আসবে কিন্তু আসে নি। নার্স খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। সকালের ঔষধ এখনো খাওয়াতে পারেনি অরিয়নকে। কখন থেকে পরীর নাম ধরে চিৎকার করেই যাচ্ছে।
–প…
–কি হয়েছে? এভাবে চেঁচামেচি করছিস কেন?
দ্রুত রুমে আনিকা চৌধুরী প্রবেশ করতে করতে বলে। আনিকা চৌধুরীর পেছন পেছন রুমে আফরিনও প্রবেশ করে।
–পরী কোথায়? এখানে নেই কেন ও?
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–পরী তো নিজের রুমে ক…
–নিজের রুম মানে? পরীর রুম এটা। গেস্ট রুম কবে থেকে পরীর রুম হয়ে গেল?
আফরিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে উঠে অরিয়ন।
আফরিন অবাক হয়ে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। আফরিন এই রুমে আছে কী না, অরিয়নের এহেন বিহেভিয়ারে আফরিনের খারাপ লাগছে কী না তা যেন দেখার প্রয়োজনও অনুভব করলো না অরিয়ন। আফরিনের মুখে বিষন্নতার ছাপ দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে যতই সময় যাচ্ছে অরিয়ন যেন ততোই ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–ওকে কেন ডাকছিস?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে আনিকা চৌধুরী।
–প্রয়োজন আছে তাই।
জবাব দেয় অরিয়ন।
–কিসের প্রয়োজন? কী এমন প্রয়োজন যে এভাবে চেঁচামেচি করছিস ছোট বাচ্চাদের মতো।
বিরক্ত হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
বার বার পরী পরী করা যে আনিকা চৌধুরীর কাছে বিষের মতো লাগে তা যেন এই পরিবারের কেউ বুঝতেই পারে না। নাকি বুঝেও ইচ্ছে করে এরকম করে কে জানে!
–তোমাকে বলা যাবে না।
আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় অরিয়ন।
–আমি ভেবেছিলাম আফরিন ফিরে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই তোর ভালোবাসা ফিরে পাবি, ঐ মেয়ে এই বাড়ি থেকে বিদায় হবে। কিন্তু তুই, তুই আফরিনকে দুই দিনে ভুলে গেলি। মেয়েটার প্রতি তোর একটু করুণাও হলো না।
হতাশার দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
কিছু সময়ের জন্য অরিয়নের চোখ আফরিনের দিকে যায়। আফরিন নিচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্য সময় আফরিনকে এভাবে দেখলে অরিয়নের যে খারাপ লাগা কাজ করতো আজ তা করছে না। আজ খারাপ লাগছে আফরিন যেসবের মধ্যে দিয়ে ৯ টা মাস পার করেছে তার কথা ভেবে।
কী করবে অরিয়ন? কী করা উচিৎ অরিয়নের? অরিয়নতো ভেবেছিলো আফরিন অন্য কারো সাথে সুখে আছে। মিতার সাথে ৯ টা মাস পার করা ৬ বছরের চাইতে বেশি কখন আর কীভাবেই হয়ে গেল? কেন ৬ বছরের ভালোবাসা আফরিনকে ছাড়া থাকতে পারলেও ৯ মাসের নিজের স্ত্রী পরীকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে অরিয়নের কষ্ট হয়?
“এটা কী ভালোবাসা?” মনে মনে ভাবে অরিয়ন।
” ভালোবাসা হলে তো আমার বুঝে যাওয়ার কথা ছিলো, যেমনটা বুঝেছিলাম আফরিনের সময়? নাকি পরী সত্যিই বলে যে, ওর শরীরকে ভালোবাসি আমি?” কথাটা ভাবতেই নিজের অজান্তেই হাত শক্ত করে মুঠ করে ফেলে অরিয়ন।
“যদি শরীরকেই ভালোবাসবো তাহলে আফরিনকে দেখলে কেন আগের মতো কিছু অনুভব হচ্ছে না আমার? কেন মন শুধু বার বার পরী পরী করছে? ভাবতে থাকে অরিয়ন।
–আমাকে ডে…
দরজা খুলে কথাটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল মিতা।
দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে আনিকা চৌধুরী ও আফরিন। বিছানার সামনে হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নার্স। অরিয়ন বিছানায় শুয়ে আছে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে সিরিয়াস কোনো কথা হচ্ছিলো রুমে। মিতা আসতেই যেন নিরবতা ছেয়ে গেলো।
–আমি না হয় পরে আসছি।
কথাটা বলে ঘুরে রুম থেকে বের হয়ে যেতে নেয় মিতা।
–দাঁড়া।
পেছন থেকে ডাক দেয় অরিয়ন।
অরিয়নের কন্ঠস্বর শুনে দাঁড়ায় মিতা। আফরিনও চোখ তুলে অরিয়নের দিকে তাকায়। মিতাকে দেখতেই অরিয়নের চোখ যেন জ্বলজ্বল করছে। আফরিনের বুকটা হুট করেই চিনচিন করছে। আফরিন ভেবেছিলো নিজের সম্মান হারানোর চেয়ে হয়তো একটা মেয়ের কাছে কষ্টের আর কিছুই হয় না। ভুল ভেবেছিলো আফরিন। নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে অন্য কারো জন্য অনুভূতি দেখার চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নাই। মুখে ফুঁটে উঠলো এক মৃদু বিষন্নতার হাসি।
–আমার নাস্তা রেডি কর। নাস্তা খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
মিতা অবাক হয়ে অরিয়ন আর নার্সের দিকে তাকিয়ে রইল। নার্সের হাতে নাস্তা। অথচ নাস্তা রেডি করার কী আছে এখানে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না মিতা। এক পা এগিয়ে দিতেই চোখ যায় আফরিনের দিকে। আফরিনের মুখে মৃদু এক হাসি। কিন্তু সেই হাসিতে নেই কোনো প্রাণ। মনে হচ্ছে জীবন্ত কোনো লাশের মুখে জোর করে কেউ হাসি ফুটানোর চেষ্টা করেছে। পরীর মুখটা কালো হয়ে এলো। আফরিনের এরকম চেহারা সহ্য হচ্ছে না মিতার। সামান্য অবসেশন এর জন্য নিজের বোনের জীবনটা নষ্ট করতে পারেনা মিতা।
–নাস্তা তো সামনেই আছে। খেয়ে নেও।
একটু গম্ভীর ভাবে বলে মিতা।
নিজেকে একটু শক্ত করার চেষ্টা করছে।
–সামনে আছে তা আমিও দেখতে পাচ্ছি।
গম্ভীরভাবে অরিয়ন ও বলে।
–তাহলে আবার রেডি ক…
–তোকে.বলেছি.নাস্তা.রেডি.করতে।
প্রতিটা শব্দে জোর দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে অরিয়ন।
মিতার চোখ আবারও আফরিনের দিকে যায়। আফরিনের চোখে পানি ছলছল করছে। যে কোনো মুহূর্তে মনে হচ্ছে এই বাধ ভেঙ্গে যাবে। আফরিনের চোখের পানি দেখে মিতারও মেজাজ যেন খারাপ হয়ে এলো।
–পারবো না। আমি তোমার বাড়ির কাজের মেয়ে নই যে,যখন যা বলবে তাই করবো।
কথাটা বলেই আর এক মিনিটও অপেক্ষা করে না মিতা। রুম থেকে সোজা বের হয়ে যায়।
অরিয়ন দাঁতে দাঁত চেপে রইল। নিমিষেই শোয়া থেকে উঠে বসেই নার্সের হাতে থাকা ট্রে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। কাচের প্লেটগুলো সাথে সাথে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে রইল মেঝেতে। আফরিন আর আনিকা চৌধুরী হা করে তাকিয়ে রইল অরিয়নের দিকে। এসব কী করছে অরিয়ন? দুজনের একজনও কিছু বুঝতে পারছে না।
–আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।
বড় বড় শ্বাস ফেলে বলে অরিয়ন।
–অরিয়ন তুই এস…
–আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইইইই।
চেঁচিয়ে বলে অরিয়ন।
আনিকা চৌধুরী আর কিছু বললো না। নিজেকে সবার সামনে অপমানিত মনে হতে লাগলো। একবার নার্সের দিকে ও একবার আফরিনের দিকে তাকিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আফরিন আনিকা চৌধুরীর চলে যাওয়া দেখছে। অরিয়নের দিকে তাকাতেই অরিয়নের সাথে চোখাচোখি হয় আফরিনের। কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছে অরিয়ন।
–তোমাকে কী আলাদা করে বলতে হবে?
আবারও চেঁচিয়ে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আফরিন। নার্স গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। অরিয়ন দাঁতে দাঁত চেপে খাটের উপর স্থির হয়ে বসে রইল।
–আপনার মেডিসিন খে..
কথাটা বলতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নার্সের দিকে তাকায় অরিয়ন। সাথে সাথেই চুপ হয়ে যায় নার্স। হঠাৎ করে এরকম রেগে কেন গেল বুঝতে পারছে না।
রুমে এসেই মিতা কেমন যেন বন্দি খাঁচায় আটকে থাকা পাখির মতো ছটফট করতে লাগলো। ক্ষণে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে তো ক্ষণে ব্যাগ গুছাতে থাকলো। অরিয়নের চাহনি, আফরিনের চোখের পানি, মিতাকে পাগল করে দিচ্ছে। এ কোন দ্বিধায় পড়ে গেল মিতা? তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে তুলে নিয়েই সরাসরি গিয়ে গাড়িতে বসে মিতা। আজ ক্লাস করার ইচ্ছা না থাকলেও বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে মিতার। সব কিছু থেকে পালাতে হবে যেভাবেই হোক।
সারাদিন ক্লাস শেষ করে কলেজ গেইট থেকে বের হতেই গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির রহমানকে।
কবির রহমানের পড়নে আজ কালো রঙের স্যুট।
“কত হবে তার বয়স?৬০?৬৫? ” মনে মনে ভাবে মিতা। দেখে ৬০ বা ৬৫ মনে হয় না। মনে হয় ৫০/৫৫ বয়সের এক মধ্যবয়স্ক লোক।
দূর থেকে মিতাকে দেখতেই হাসি ফুঁটে কবির রহমানের চেহারায়। এগিয়ে যায় মিতার দিকে। মিতার কাছাকাছি আসতেই হাত রাখে মিতার মাথায়।
–কেমন আছো পারমিতা?
মিষ্টি এক হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে কবির রহমান। কবির রহমানের কন্ঠে মায়া আর স্নেহ প্রকাশ পাচ্ছে।
পারমিতা মুখ ফুটে কিছু বললো না। মৃদু এক হাসি দিয়ে ভালো আছে বোঝায়।
–চলো কোথাও গিয়ে বসি।
মিতার কাঁধে নিজের হাত রেখে বলে কবির রহমান। মিতা কিছু একটা ভেবে রাজি হয়।
কলেজের সামনে থাকা ওয়েলফুডের দোকানে বসেছে মিতা। ড্রাইভার মিতাকে না দেখলে খোজাখুজি শুরু করে দিতে পারে ভেবে দূরে কোথাও যায় নি মিতা।
মিতার সামনে বার্গার আর কোল্ড ড্রিংকস রাখা। কিন্তু মিতা কিছুই স্পর্শ করেনি। কবির রহমান মিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
–ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন করেছিলে তুমি?
জিজ্ঞেস করে কবির রহমান।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে মিতা।
–আর হাবিব চৌধুরী?
মিতার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে কবির রহমান।
–বললো আপনাকে চিনেনা।
জবাব দেয় মিতা।
মিতার জবাব শুনতেই হেসে দেয় কবির রহমান। যেন এই উত্তরের অপেক্ষায় ছিলো। মিতা কবির রহমানের দিকে তাকিয়ে রইল। হাসির কারণ বোঝার চেষ্টা করছিলো।
–হাসছেন কেন?
প্রশ্ন করে মিতা।
–আচ্ছা একটা কথা বলো তো…
কথাটা বলেই গম্ভীর দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকায় কবির রহমান।
–তোমার উপর এই হামলা গুলো কী বিয়ের আগে কখনো হয়েছিলো?
প্রশ্ন করে কবির রহমান।
–আপনি কীভাবে জানলেন আমার উপর হামলা হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে কবির রহমানের দিকে তাকায় মিতা।
–যেভাবে জানতে পেরেছিলাম তুমি আমার নাতনি হও।
অনায়াসে বলে ফেলে কবির রহমান।
–না।
আগের প্রশ্নের জবাব দেয় মিতা।
–আচ্ছা তুমি কী কখনো ভেবে দেখেছো? কেন বিয়ের দিন আফরিন চলে গেল? কেনই বা এতো মানুষ থাকতে, অরিয়নের চাইতে ১১ বছরের ছোট মেয়ের সাথে অরিয়নের বিয়ে হলো? কেনই বা বিয়ের পর পর তোমার উপর এতো এটাক হওয়া শুরু করলো?
একের পর এক কথাগুলো বলে যাচ্ছে কবির রহমান।
কবির রহমানের প্রশ্নগুলো শুনতেই চিন্তায় পড়ে গেলো মিতা। তাই তো, এতো কিছু তো ভাবেনি মিতা।
–কী বলতে চাইছেন আপনি?
অধৈর্য্য হয়ে প্রশ্ন করে মিতা।
–তুমি কী কখনো ভেবে দেখেছো,আসলেই আফরিনের চলে যাওয়াটা কি*ডন্যাপ ছিলো কী না?
আবারও বলে কবির রহমান।
–কী সব বলছেন আপনি?
রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠে মিতা।
–যা সত্যি তাই বলছি।
চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বলে কবির রহমান।
–কী বলতে চাচ্ছেন আপনি? এসব বলে কী প্রমাণ করতে চাইছেন?
আবারও প্রশ্ন করে মিতা। মিতার চোখের কোণে পানি ছলছল করছে।
–তোমার কী কখনো মনে হয়নি, সব কিছু প্ল্যান করে করা হয়ে থাকতে পারে?
গম্ভীরমুখে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে কবির রহমান।
–মানে?
কথাটা যেন মিতার মুখে আটকে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে দু ফোঁটা পানি পড়লো।
–মানে কী তা তুমি ভালোই জানো, পারমিতা।
বলে কবির রহমান।
–কে আর কেন?
আবারও প্রশ্ন করে মিতা।
–কে হতে পারো তাও তুমি জানো৷ তুমি শুধু মানতে চাইছো না।
মিতার দিকে এগিয়ে এসে বলে কবির রহমান।
–কারণ কী?
পরাজিত কন্ঠে প্রশ্ন করে মিতা। বুকটা ধুকধুক করছে মিতার। মনে হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে হার্ট অ্যা*টাক করবে। এতো কিছু কেন এক সাথেই হচ্ছে মিতার সাথে?
–তোমার মায়ের নামে হাজারো কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। যার বর্তমান মালিক তুমি।
জবাব দেয় কবির রহমান।
–তোমার মায়ের সাথে রাগ করে অনেক বছর যোগাযোগ রাখিনি আমি। কিন্তু আমার এতো এতো সম্পত্তির মালিক যে শুধুই সুমাইয়া ছিলো। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম আমার সুমাইয়া এই পৃথিবীতে নেই। আরও জানতে পারলাম সুমাইয়ার এক মেয়েও আছে।
কবির রহমানের কণ্ঠ আটকে আসছে। চোখেমুখে দুঃখ ভেসে উঠেছে। ক্ষণিকের জন্য মিতার মনে হলো কবির রহমানের চোখের কোণে পানিও দেখতে পেয়েছিলো।
–কিছুদিন আগে মানে? আপনাকে তো মৃত্যুর সাথে সাথে খবর পাঠানো হয়েছিলো।
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–মিথ্যে কথা। আমাকে কোনো খবর পাঠানো হয়নি।
বলে কবির রহমান।
–ভেবেছিলাম হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না। তাই রাগ থাকলেও সব সম্পত্তি সুমাইয়ার নামে করে দেই। সুমাইয়া এখন আর নেই। সব কিছুর মালিক তুমি।
বলে কবির রহমান।
–কী বলতে চাচ্ছেন?
মিতা যেন বুঝেও অন্য কোনো উত্তরের আশা করছে।
–তুমি মারা গেলে সব সম্পত্তি চৌধুরী পরিবারের..
–মিতা মামুনি?
কবির রহমানের কথা শেষ হওয়ার আগেই দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভার মিতাকে ডাক দেয়।
–জ্বি কাকা?
তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে মাথা ঘুরিয়ে বলে মিতা।
–বাসা থেকে তোমাকে বার বার কল করা হচ্ছে। কল ধরোনি তাই আমাকে দিয়েছে। ইমার্জেন্সি।
বলে ড্রাইভার।
–আচ্ছা তুমি যাও, আমি আসছি।
বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে ড্রাইভার কাকা দোকান থেকে বের হয়ে যায়। মিতা আর কিছু না বলে ব্যাগ কাঁধে তুলে নেয়।
–আমার বাড়ির দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা। সুমাইয়াকে আমি হারিয়েছি কিন্তু সুমাইয়ার শেষ চিহ্নকে হারাতে চাই না।
মন খারাপ করে বলে কবির রহমান।
মিতা আর কিছু বললো না। ব্যাগ কাঁধে নিয়েই দোকান থেকে বের হয় মিতা। দোকান থেকে বের হতেই বড় বড় করে শ্বাস নিতে থাকে মিতা। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে মিতার। আর কী দেখার বাকি আছে? শেষমেষ নিজের আপন মানুষ? যাদেরকে এতো বিশ্বাস করেছে মিতা? এতো ভালোবেসেছে তারা?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখের পানি মুছে ব্যাগ খুলে মোবাইল হাতে নেয় মিতা। স্ক্রিনে আলো জ্বলতেই দেখতে পায় ৫০ টা মিসড কল।পরিবারের সবাই একের পর এক কল দিয়েছে মিতাকে। মোবাইল নিয়ে কল দেয় মায়া চৌধুরীকে।
–হ্যালো মা।
রোবটের মতো বলে মিতা।
–মোবাইল কই তোর? কখন থেকে কল দিচ্ছি।
অপর পাশ থেকে মায়া চৌধুরীর উত্তর আসে।
–সাইলেন্ট ছিলো।
জবাব দেয় মিতা।
–অরিয়ন..
কথাটা বলে একটু থামে মায়া চৌধুরী।
–অরিয়ন কী?
গাড়িতে উঠে বসতে বসতে বলে মিতা।
পারমিতা পর্ব ৩৯
–অরিয়ন সকাল থেকে খাবার আর ঔষধ খাচ্ছে না। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
জবাব আসে মায়া চৌধুরীর।
মিতা কিছু বলার আগেই কল কেটে যায়।
–চলুন কাকা।
বলে মিতা।