পারমিতা পর্ব ৪২
Nabila Ahmed
–আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে চোখ খুলে তাকায় অরিয়ন। ধীরে ধীরে সরে আসে মিতা থেকে। অরিয়ন দূরে যেতেই মিতাও নিজের চোখ খুলে তাকায়।চেষ্টা করছে চোখের পানি আটকে রাখার। অন্যদিকে,এক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন।
–কি বললি?
ভুল শুনেছে ভেবে আবারও জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয় মিতা।
–তুই এখন যেতে পারিস।
মিতা থেকে আরও দূরে সরে এসে শান্ত গলায় বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে অবাক হয় মিতা। “চলে যেতে বলছে তার মানে কী নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে? বুঝতে পেরেছে যে, এই সম্পর্কে থাকাটা ঠিক নয়? আফরিন আপুকে মেনে নেওয়াই ঠিক?” মনে মনে ভাবে মিতা।
–এখনো বসে আছিস কেন? চলে যেতে বললাম না?
একটু উচ্চস্বরে বলে অরিয়ন।
মিতা আর কোনো কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অরিয়নের দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখতে পায় অরিয়ন বিছানায় শুয়ে পড়েছে। মিতা খালি ট্রে হাতে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখতে পায় আনিকা চৌধুরী, হাবিব চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু নিয়ে কথা বলছে। ট্রে হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসে মিতা।
–তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে।
সিড়ি থেকে নামতে নামতে বলে মিতা।
মিতার কন্ঠ শুনে সকলেই মিতার দিকে ফিরে তাকায়।
–কী বলবি?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
মিতা ট্রে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রে টেবিলের উপর রেখে আবারও সবার সামনে এসে দাঁড়ায় মিতা।
–আমি ঠিক করেছি আমি আর এই সম্পর্কে থাকবো না।
আমতা আমতা করে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় হাবিব চৌধুরী ও ওয়াহিদ চৌধুরী। অন্যদিকে, আনিকা চৌধুরী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে মিতার দিকে।
–মানে? কোন সম্পর্ক থেকে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমার আর অরিয়ন ভাইয়ার।
বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে মিতা। মিতার হাত পাগুলো প্রতিনিয়ত ঠান্ডা হয়ে আসছে।
–মিতা,মাথা ঠিক আছে তোর?
উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর কন্ঠ শুনে লাফিয়ে উঠে মিতা। মাথা তুলে তাকায় হাবিব চৌধুরীর দিকে। হাবিব চৌধুরীর চোখেমুখে রাগ ফুটে উঠেছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে।
–কি সব বলছিস তুই, মিতা?
শান্ত গলায় মিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–ঠিক টাই বলছি বাবা। এটা আরও আগেই করা উচিৎ ছিলো।
–মিতা…
আবারও উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে হাবিব চৌধুরী।
তাড়াতাড়ি করে এগিয়ে যায় মিতার দিকে।
–আবল-তাবল কী বলছিস তুই,হ্যাঁ? বিয়েটা তোর ছেলেখেলা মনে হয়?
রাগান্বিত কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।
–ভাইয়া, একটু শান্ত হও।
হাবিব চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–তুই ওর কথাগুলো শুনেছিস? কী আজেবাজে বলছে?
ওয়াহিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কি হয়েছে তোর? হঠাৎ করে এসব কী বলছিস? অরিয়নের সাথে কিছু হয়েছে?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে।
–কিছুই হয়নি।
জবাব দেয় মিতা।
–তাহলে? তাহলে কী সমস্যা?
ওয়াহিদ চৌধুরী কিছু বলার আগেই বলে উঠে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে মিতা। মিতার কথা শোনার পর থেকেই কেমন যেন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
–কোনো সমস্যা না। বিয়েটা হয়েছিলো আফরিন আপু ছিলো না তাই। এখন আফরিন আপু ফিরে এসেছে। এখন এই সম্পর্কে থাকার কোনো কারণ দেখছি না আমি।
হাবিব চৌধুরী দিকে তাকিয়ে থেকে বলে মিতা।
–আফরিন তোকে কিছু বলেছে?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–এতোদিন পর মাথায় সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।
ব্যঙ্গাত্মক একটা হাসি দিয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
–আপু কিছু বলেনি। বলার প্রয়োজন নেই বাবা। আমি ডিভোর্স চাই সেটা ফাইনাল।
বলে মিতা।
–ফাইজলামি পেয়েছিস? আমাদের কথার উপরে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পেয়েছিস তুই? কোনো ডিভোর্স টিভোর্স হবে না।
কড়া কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কেন? না হওয়ার কারণ কী?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।
–ডিভোর্স হয়ে গেলে কী এমন সমস্যা হবে? এমনিতেও আমাদের বিয়ে হওয়ার তো কোনো কথাই ছিলো না। যেখানে আমরা চাচ্ছি ডিভোর্স হোক সেখানে তুমি কেন চাচ্ছো না?
আবারও বলে মিতা।
অধীর আগ্রহ নিয়ে হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা। হাবিব চৌধুরীর থেকে কি উত্তর আশা করছে জানেনা, শুধু জানে কবির রহমানের বলা কথাগুলো ভুল হোক সেই প্রার্থনা করছে বার বার ।
–সব কিছুর উত্তর এখন তোকে দিতে হবে? এতো বড় হয়ে গেছিস হুট করে?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমি এই বাড়িতে এই পর্যন্ত যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হয়েছে। এবারও তাই হবে। কোনো ডিভোর্স হবে না এই পরিবারে। এটাই শেষ কথা।
গম্ভীর কণ্ঠে কথাগুলো বলেই আর অপেক্ষা করলো না হাবিব চৌধুরী। তাড়াতাড়ি করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে থাকে।
হাবিব চৌধুরী এমন ভাবে সবার সামনে থেকে চলে গেলো যেন মিতার সামনে থেকে পালাতে পারলেও বাঁচে। মিতা সবটাই লক্ষ্য করেছে। মনের মধ্যে শুরু হওয়া ঝড় যেন তার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। মনের মধ্যের সব লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে মিতার। শেষমেষ নিজের আপন চাচ্চু? হাবিব চৌধুরী? তাও শুধু মাত্র কিছু টাকার জন্য? মিতার যেন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।
–আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছি না।
মাথা নিচু করে ওয়াহিদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে মিতা।
–এই প্রথম কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছো। এর থেকে নড়চড় করে নিজের আসল রূপ দেখানোর দরকার নেই।
মিতার উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই চলে যায় আনিকা চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরী ড্রয়িংরুম থেকে চলে যেতেই মিতাকে জড়িয়ে ধরে ওয়াহিদ চৌধুরী। মিতাকে জড়িয়ে ধরতেই চোখ ভিজে আসে মিতার।
–কি হয়েছে তোর? আমাকে সব খুলে বল। কি চলছে তোর মধ্যে? কেউ কিছু বলেছে তোকে?
মিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–কেউ কিছু বলেনি বাবা।
বলে মিতা।
–তাহলে? তাহলে হুট করে এসব কি বলছিস তুই?
প্রশ্ন করে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–আমরা একে অপরকে ভা….ভালোবাসি না বাবা। তাহলে…তাহলে এরকম সম্পর্কে কেন থাকবো? আমি কী ভালো থাকা ডিসার্ভ করিনা?
কথাগুলো কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা। জীবনে কোনোদিন মায়া চৌধুরী আর ওয়াহিদ চৌধুরীর কাছে মিথ্যে বলেনি মিতা। কিন্তু আজ বলতে হচ্ছে,সকলের ভালোর জন্য।
যারা ছোট থেকে লালন পালন করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের মেয়ের ভালোবাসাকে তার জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়েছে মিতা। মিতা ভালো করেই জানে অরিয়ন ম*রে গেলেও আফরিনকে ততোদিন মেনে নিবে না যতোদিন না এই সম্পর্ক থেকে অরিয়ন বেরিয়ে আসছে। চিটিং করা যে কখনোই পছন্দ করে না অরিয়ন। অপরদিকে, আফরিনও কোনোদিন অরিয়নকে মেনে নিবে না,এটা ভেবে যে অরিয়ন এখন মিতার স্বামী।
যেখানে অরিয়ন মিতাকে ভালোবাসে না,যেখানে শুধুমাত্র মিতার টাকার জন্য ওদের বিয়েটা হয়েছে সেখানে কী জন্য শুধুমাত্র নিজের খুশির জন্য দুটো জীবন নষ্ট করবে মিতা? আর কতটা স্বার্থপর হবে?
–ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত ওরা একে অপরকে মানবে না, বাবা। আমি যে ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। খুব বেশী।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–কবে থেকে এতোটা বড় হয়ে গেলো আমার মেয়ে? আমার ছোট মিতা এখন যে খুব বড় হয়ে গেছে।
মিতার মাথায় আবারও হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–তোর সব সিদ্ধান্তে আমি তোর পাশে আছি।
আবারও বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–ধন্যবাদ বাবা, আমাকে বুঝতে পেরেছো তাই।
শান্ত গলায় বলে মিতা।
নিজের রুমে পড়ার টেবিলে বসে আছে মিতা। ২০ দিন পর ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের বোর্ড এক্সাম শুরু হবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে যেই পরীক্ষা চলছে তার থেকেই তো বের হতে পারছে না মিতা। বইগুলো একেকটা একেক জায়গায় পড়ে আছে। ৩০ মিনিট ধরে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মুখ দিয়ে একটা পড়াও আসেনি মিতার।
ডিভোর্সের কথাটা কত সহজে বলে ফেলেছে মিতা কিন্তু সত্যিই কী খুব সহজে বলে ফেলেছে? কতটা রাত ঘুমাতে পারেনি তা শুধু মিতা জানে। কতটা রাত শুধু চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজিয়েছে তা শুধু মিতা জানে। ৯/১০ মাসের মায়া বা ভালোবাসায় অরিয়নকে ছাড়তে যদি মিতার এতো কষ্ট হয় তাহলে ৬ বছরের ভালোবাসা অরিয়ন আর আফরিন একে অপরকে ছেড়ে কতটা কষ্টে আছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মিতা।
–মিতা ভিতরে আসবো?
দরজায় নক করে প্রশ্ন করে শায়লা।
–আসো আপু।
জবাব দেয় মিতা।
দরজা খুলে ভিতরে আসে শায়লা। হাতে খাবারের ট্রে। ট্রে দেখে ঘড়ির দিকে তাকায় মিতা। রাত ৮ টা ৩০ মিনিট। কখন এতো সময় পেরিয়ে গেলো বুঝতে পারেনি। এতোক্ষন কী করছিলো? একটু আগেই না বই নিয়ে টেবিলে বসলো?
–অরিয়ন স্যারের খাবারের টাইম হয়ে গেছে।
বলে শায়লা।
–হুম।
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা। শায়লার হাত থেকে ট্রে নিয়ে সরাসরি চলে যায় অরিয়নের রুমের দিকে।
অরিয়নের রুমের দরজা লাগানো। দূর থেকে আসতে থাকা মিতা নার্সকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা।
–এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
নার্সকে প্রশ্ন করে মিতা।
–মি.হাবিব একান্তে কথা বলছেন মি.অরিয়নের সাথে।
জবাব দেয় নার্স।
–ওহ।
মিতা ট্রে হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যত সময় যাচ্ছে অস্থিরতা ততোই বাড়ছে মিতার। কি কথা বলছে কিছুই শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আড় চোখে নার্স মিতাকে দেখে। মিতার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয় নার্স।
দরজা খুলতেই বেরিয়ে আসে হাবিব চৌধুরী। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে কিছু নিয়ে। মিতাকে দেখে মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো হাবিব চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নেয় মিতা। মিতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিব চৌধুরীকে খুব অচেনা লাগছে মিতার। কেমন যেন ভয়ানক দৃষ্টিতে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু পরেই মিতার সামনে দিয়ে হেটে চলে যায় হাবিব চৌধুরী। নার্সসহ রুমে প্রবেশ করে মিতা।
–আপনি গিয়ে রেস্ট করতে পারেন। কিছুর প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকা হবে।
নার্সকে দেখা মাত্রই বলে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো নার্স। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বের হয়ে যায়।
অরিয়ন বিছানায় বসে আছে। হাত থেকে স্যালাইন খুলে দেওয়া হয়েছে। মিতা টি টেবিলের উপর ট্রে রাখে।
–মাঝেমধ্যে আমি খুব হবাক হই।
হুট করে বলে উঠে অরিয়ন।
অরিয়নের কথা শুনতেই পিছনে ফিরে তাকায় অরিয়ন। বিছানায় আরাম করে বসে আছে।
–তোর সাহস দেখে।
মিতার দিকে তাকিয়ে আলতো এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন। এই হাসির মানে কী মিতা তা বুঝতে পারছে না।
–একটা কথা মানতেই হবে..
বলতে বলতে বিছানা থেকে পা নামায় অরিয়ন।
–ছোট মরিচের ঝাল বেশি।
কথাটা বলে হাসতেই দাঁত বেরিয়ে আসে অরিয়নের।
–সাইজে এতোটুকু, বয়সে এতো ছোট তাও জেদ দেখাস বড়দের মতো!
এবার কথাটা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।
মিতা নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অরিয়নের কথার অর্থ বোঝায় চেষ্টা করছে । হাবিব চৌধুরীর সাথে কথা বলার পর ভেবেছিলো হয়তো রাগান্বিত অরিয়নকে দেখতে পারবে কিন্তু এই রহস্যময় অরিয়নকে দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা। অরিয়ন হাটতে হাটতে গিয়ে মিতার সামনাসামনি দাঁড়ায়। মিতাও নিজের জায়গা থেকে সরলো না। গম্ভীর দৃষ্টিতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে মিতা।
–আমাদের বাচ্চাগুলো কেমন হবে তা কল্পনা করতেই হাসি পাচ্ছে আমার।
মিতার গাল থেকে চুল সরিয়ে কানের পেছনে গুজে দিতে দিতে বলে অরিয়ন।
“বাচ্চা” শব্দটা শুনতেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরিয়নের দিকে। কি আবল তাবল বলছে তা বোঝায় চেষ্টা করছে। নাকি ফাইজলামি করছে তা।
–তোর কী চাই? মেয়ে না ছেলে? আমার কিন্তু একটা হলেই হবে।
মিতার কাছাকাছি মুখ নিয়ে গিয়ে বলে অরিয়ন। অরিয়নের মুখে মৃদু এক হাসি।
–মাথা ঠিক আছে তোমার?
অরিয়নের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে মিতা।
–তোর কী মনে হয়? মাথা খারাপ করার মতো কিছু করেছিস তুই?
মিতার থেকে আবারও একটু দূরে সরে এসে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–কী চাচ্ছো তুমি? তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। আর বাচ্চা? কিসের বাচ্চা?
অরিয়নের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে মিতা।
–বাচ্চা মানে চাইল্ড।
সোফায় বসে পায়ের উপর পা রাখতে রাখতে বলে অরিয়ন।
–কী খেলা খেলছো তুমি? চাচ্চুর সাথে কী কথা বললে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–তুই জানিস না কী কথা হলো?
দু হাত সোফায় মেলে দিয়ে সোফার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে অরিয়ন।
মিতা কিছু বললো না। অরিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। এরকম অদ্ভুত বিহেভিয়ার করছে যে আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না মিতা।
–বাবা বললো তুই নাকি সবাইকে জানিয়েছিস তুই ডিভোর্স চাস।
মাথা সোজা করে মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন।
অরিয়নের চোখ দেখতেই দু পা পিছিয়ে পড়ে মিতা। অরিয়নের চোখ দেখে মনে হচ্ছে তাতে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভয়ানক সেই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। যেন কোনো শিকারী তার শিকারের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আমার সব সময় মনে হতো তোর কপালটা খারাপ। ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়েছিস তাই।
মিতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলে অরিয়ন।
পারমিতা পর্ব ৪১
–তবে আমার ভুল ভাঙ্গতে সময় লাগেনি। আসলেই তোর কপাল খারাপ।
নিজের চুল ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।
–তবে তোর মা বাবাকে হারিয়েছিস সে জন্য নয়, আমার মতো একজনের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তাই।
কথাটা বলেই দু কদমে মিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অরিয়ন।