পারমিতা পর্ব ৫২

পারমিতা পর্ব ৫২
Nabila Ahmed

হাওয়ার গতিতে গাড়ি ছুটে চলেছে। গাড়ি ছেড়েছে ৫ মিনিটের মতো হবে কিন্তু এর মধ্যেই হাজার খানেক প্রশ্ন করে ফেলেছে অরিয়ন।
কীভাবে হাবিব চৌধুরী মিতার খবর জানতে পারলো? আবরারই বা কেন চট্টগ্রাম থেকে হুট করে ঢাকা চলে আসলো? আর সব কিছু জেনে থাকলে কেনই বা তা অরিয়নকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি কেউ?
–কিছু কি বলবি নাকি এভাবেই বসে থাকবি?
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।
–তুমি ঢাকাতে চলে আসার পর বাবা ঠিক করেন উনি ও ঢাকা যাবেন। কী কারণে মিতা চলে গেল তা জানতে চাচ্ছিলেন উনি।
বলে আবরার।

–বাবা ঠিক করেছিলো পার্কে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে তুমি যদি মিতাকে নিয়ে না ফিরো, তাহলে উনি জোর করে হলেও মিতাকে নিয়ে আসবে। তোমার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিলেন না বাবা।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে আবরার।
–বাবা যখন পার্কে পৌঁছালেন তখন মিতাকে কারা যেন জোর করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছিলেন। কোনো কিছু না ভেবেই তাদের গাড়ির পেঁছনে ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দেন বাবা। এরপর পার্ক থেকে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
–তোমাকে হাসপাতালে রেখেই আমাদের কল করেন। আমি আর মা চলে আসতেই বাবা আমাকে সব কিছু খুলে বলেন। আমি সাথে সাথে ছোট চাচ্চুকে সবটা জানাই। এরপর তোমাকে হাসপাতালে রেখেই আমি আর বাবা রওয়ানা রই মিতাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
–তারপর?
জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–ড্রাইভারের দেওয়া ঠিকানা অনুয়ায়ী আমরা নারায়নগঞ্জে পৌঁছাই। মিতাকে এক নতুন তৈরি করা বিল্ডিংয়ে রাখা হয়েছে। এলাকাটা এখনো জনশূন্য। মানুষের আনাগোনা প্রায় নেই বললেই চলে।
–তোরা একটা রাত অপেক্ষা করলি? পুলিশকে ফোন দিয়ে জানালি না কেন? তাহলে আজ মিতা এখানে থাকতো।
রাগ হয়ে বলে অরিয়ন।
–মিতার ঠিকানায় পৌঁছাতেই আমাদের মধ্য রাত হয়ে গিয়েছিলো। ওরা কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করে নিয়ে এসেছে মিতাকে। গাড়িতে ৫/৬ জনের মতো থাকলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই ওরা সংখ্যায় ২০/২৫ জন হবে। দু চার জনের হাতে অ*স্ত্র। গতকাল থেকেই ওরা বিল্ডিংয়ে আছে,সারারাতেও বিল্ডিং থেকে বের হয়নি।
–সকালে অর্ধেকের বেশি লোক বেরিয়ে যেতেই আমরা ঠিক করি মিতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। কিন্তু ওদের মধ্যে একজন কথা বলায় আমরা জানতে পারি এসব কোনো দূর্ঘটনা বা ছিন*তাইকারীর কাজ নয়।এরা সকলেই ভাড়া করা স*ন্ত্রাসী। কারো নির্দেশে মিতাকে তুলে এনেছে।
–কি বলছিস এসব? তাহলে কী এসব ওরাই করেছে?
অবাক হয়ে বলে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে আবরার।

–বাবা আমাকে আর ছোট চাচ্চুকে পাঠিয়ে দেন। পুলিশের সাহায্য ছাড়া মিতাকে ছাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব নয় তা বুঝতে পারি আমরা। বাবা বুঝতে পারছিলেন দেরি করলে হয়তো এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। তাই আমাকে আর চাচ্চুকে জোর করে পাঠিয়ে দেন।
ফ্ল্যাশব্যাক : আজ ভোরবেলা
— তুই আর ওয়াহিদ গিয়ে পুলিশ আর অরিয়নকে সব জানা। আমি এখানে ওদের উপর চোখ রাখছি। এখানে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে ফোন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বলেন আতংকিত হাবিব চৌধুরী।
–কিন্তু ভাইয়া,তোমার এখানে একা থাকা উচিত হবে না। আরিয়ান থাকুক তোমার সাথে।
বলে ওয়াহিদ চৌধুরী।
–না। সমস্যা নেই। আমি এখানে লুকিয়ে থাকবো। তুই পুলিশের কাছে সরাসরি চলে যাবি। আর আরিয়ান তুই, তুই গিয়ে অরিয়নকে সবটা বুঝিয়ে বলবি।
–কিন্তু বাবা তুমি একা এখানে..
–কোনো কিন্তু মিন্তু না। এক কাজ দু’জনে করতে গেলে খুব দেরি হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব পুলিশ নিয়ে আয়।
–তুমি সাবধানে থেকো।
চিন্তিত আবরার বলে।
–হুম।

বর্তমান
চেয়ারে বসে আছেন করিম রহমান। মুখে তার বিজয়ের হাসি। অন্যদিকে অবাক হয়ে করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে মিতা। নিজের দু চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না কিছু।
–কী চাই তোমার? মিতাকে কেন ব*ন্দী করেছো?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–কী চাই তা সবটা তো তোমার জানা, হাবিব। নাকি মেয়েকে কষ্ট দিতে চাও না বলে এবারও লুকাবে?
ভ্রু কুঁচকে বলতে থাকেন করিম রহমান।
–তুমি…তুমি আমা…আমার নানাভাই না?
এক পা এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে মিতা।
–এতোদিন…এতোদিন তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছিলে?
–এতোদিন মানে?
মিতার কাছে গিয়ে বলে হাবিব চৌধুরী।
–এতোদিন তুই এর সাথে ছিলি?
প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।

মিতা কিছু না বলেই করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। করিম রহমান আগ্রহ নিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে দেখছে। মনে হচ্ছে তার সামনে কোনো নাট্যমঞ্চ চলছে। মিতা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলে।
–মনে হচ্ছে বাংলা সিনেমা দেখছি, তাই না জসিম?
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।
করিম রহমানের কথাটা বলতেই রুমের সকলে একযোগে হাসতে শুরু করে।
–ঐ ওদের আপ্যায়ন কর ভালো করে।
কথাটা বলতেই কয়েকজন গিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে ধরে ফেলে। চেষ্টা করে লাভ নেই জেনে চুপ করে রইল হাবিব চৌধুরী।
কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারে বেঁধে ফেলা হয় মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে।
–নেও নানাভাই, এখানে সাইনটা করে ফেলো।
মিতার দিকে দলিল এগিয়ে দিয়ে বলে করিম রহমান।
রাগে, ঘৃণায় মিতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে করিম রহমানের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

–থুহ….
কোনো জবাব না দিয়েই করিম রহমানের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে মিতা।
–ঠাসসসসসসসস।
সাথে সাথে চ*ড় মাসে করিম রহমান।
–তোরে তো আ..
করিম রহমানের কথা শেষ হওয়ার আগেই মোবাইলে কল বাজতে শুরু করে।
মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হাসি দেন করিম রহমান।
–হ্যালো এমপি সাহেব…
কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় করিম রহমান।
থা*প্পড়ের কারণে মিতার ঠোঁটের ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে শুরু করেছে। চোখের কোণে পানি, ব্যাথার চাইতেও ধোঁকা খাওয়ার কষ্ট যেন মানতে পারছে না মিতা।
–উনি যে আমার নানাভাই না তা কীভাবে জানলে তুমি?
নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে মিতা।
–তোর জন্মের আগে একবার তোর মার সাথে গিয়েছিলাম তোর নানুবাড়ি। তোর বাবা-মার ভালোবাসার বিয়েটা উনি মেনে নিতে পারেন নি। ওয়াসিমের অভিভাবক হিসেবে গিয়েছিলাম তাকে রাজি করাতে, কিন্তু উনি কিছুই শুনতে চাচ্ছিলেন না। তখন কবির রহমানের সাথেই ছিলো করিম রহমান। তোর মা জানালেন করিম রহমান তার সৎ চাচা।

–তারপর?
–তারপর তোর ১৮তম জন্মদিনের আগে আমরা জানতে পারি তোর নানা আর এই পৃথিবীতে নেই। মৃত্যুর আগে তার সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিয়ে গেছে।
–ওহ।
মিতার চোখদিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে।
–কিছুদিন পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করি তোর উপর বিভিন্ন এর্টাক হতে থাকে। যা প্রথমে দূর্ঘটনা মনে করলেও পরে লক্ষ্য করতে পারি ঘটনা বিপরীত।
কথাগুলো বলে একটু থামে হাবিব চৌধুরী।
–আমরা তোর নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন ছিলো সবটাই করেছি। তোকে কখনো বুঝতে দেই নি। এরপর, একদিন..
–একদিন?

–একদিন কুরিয়ারে আমাদের কাছে একটা উইল আসলো। তাতে লেখা ছিলো কবির রহমানের সব সম্পত্তির মালিক অস্থায়ীভাবে তোর অভিভাবক হবে, যতোদিন না তুই ২১ বছরে পা দিচ্ছিস ততোদিন। ২১ বছর হলেই সব সম্পত্তি অফিসিয়ালি তোর হয়ে যাবে। ২১ বছরের আগে তুই বা তোর অভিভাবকের কিছু হয়ে গেলে সব সম্পত্তি চ্যারিটিতে চলে যাবে। কেউ হয়তো পুরোটা না জেনেই তোকে মা*রার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তা বুঝতে পারি আমরা। তাই ঠিক করি, অরিয়নের বিয়ের পর তোকে আরিয়ানের সাথে বিয়ে দিবো।
–কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চাচ্ছিলো। আফরিন চলে গেল, নিজের সম্মান বাঁচাতে আমি আরিয়ানের জায়গায় অরিয়নের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিলাম। অরিয়নকে সবটা খুলে বলার পর কেন যেন “না” বলতে পারেনি ও।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনে মিতা যেন আরও কান্নায় ভেঙে পড়লো। কত বড় ভূল করেছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না। অরিয়নকে, হাবিব চৌধুরীকে অবিশ্বাস করেছে মিতা। ভালো হতো যদি হাবিব চৌধুরী আসার আগেই মৃত্যু গ্রাস করে নিতো মিতাকে।

–এরপর যেদিন তোকে বাঁচাতে গিয়ে অরিয়নের বুকে গু*লি লাগলো,সেদিন আমরা কনফার্ম হই সবটা আসলে করিম রহমানের কাজ। এর আগেও আমাদের সন্দেহ হয়েছিলো তবে, আমরা প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম।
–আমাকে কেন বলোনি?
হাবিব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–জানিনা। তবে চাচ্ছিলাম না তুই নিজেকে সব কিছুর জন্য দোষারোপ করিস। নিজের মা বাবার মৃত্যুর জন্য নিজেকে অলক্ষি ভাবতিস তুই। তার উপর অহনার বিষয়টাও জেনে গিয়েছিলি। তোর ছোট মনে এতো কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম না আমরা কেউ।
মিতা কষ্টে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। কি করলে এই অপরাধবোধ থেকে বেঁচে ফিরবে তা জানেনা। কতবড় পাপ করেছে মিতা তাই বুঝতে পারছে।
–এই জন্যই হঠাৎ করে আমাকে খু*ন করার আইডিয়া বাদ দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেল। যেন সব সম্পত্তি আমি নিজে থেকে তার নামে লিখে দি।
কঠোর কন্ঠে বলে মিতা।

–তোর উচিৎ ছিলো আমাদের জিজ্ঞেস করা।
মন খারাপ করে বলে হাবিব চৌধুরী।
–আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাকে। তুমি বলেছিলে এই নামে কাউকে চিনো না।
–কারণ আমি রাগ ছিলাম তোর নানার উপর। ওয়াসিম আর সুমাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনেও তিনি আসেন নি একটিবার। তাই না বলেছিলাম।
–আর আমি বাবাকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বলেছেন নানাভাইয়ের নাম কবির রহমান।
–ভুল তো বলেনি। তোর বুঝায় ভুল ছিলো।
–হ্যাঁ। আমার বিশ্বাসের এতো বড় সুযোগ নিবে তা বুঝতে পারিনি আমি। মার সাথে উনার ছবি দেখে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।
–যা হয়েছে তো হয়েছে। এখন শুধু দোয়া কর। ওরা কিছু করে ফেলার আগেই যেন পুলিশকে নিয়ে আরিয়ান চলে আসতে পারে।
বলে হাবিব চৌধুরী।

খালি এক মাঠের প্রান্তে এসে গাড়ি থামায় আবরার।
–এখানে কেন রাখলি?
আশেপাশে কিছু দেখতে না পেয়ে বলে অরিয়ন।
–এখান থেকে হেটে যেতে হবে তা না হলে ওরা বুঝে যাবে।
বলে আবরার।
প্রায় ২০ মিনিট হাটার পর চোখের সামনে দুই/তিনটা বিল্ডিং দেখতে পায় অরিয়ন। সবগুলাই এখনো পুরো কমপ্লিট হয়নি।
–ঐ টায় রাখা হয়েছে মিতাকে।
একটা ৪ তলা ভবন দেখিয়ে বলে আবরার।
–আগে বাবার সাথে দেখা করতে হবে।
–হুম।

অরিয়ন আর আবরার লুকিয়ে লুকিয়ে ভবনের পিঁছনে গিয়ে হাবিব চৌধুরীকে দেখতে না পেয়েই চমকে যায়।
–বাবার তো এখানেই থাকার কথা ছিলো।
–এখানে থাকার কথা থাকলে কোথায় গেল?
–আবার মিতার কাছে যায়নি তো?
–একা একা?
বলে অরিয়ন।
–আগে দেখি মিতাকে কোথায় রেখেছে।
–চল।
দুই ভাই একসাথে যতোটা পারছে লুকিয়ে লুকিয়ে মিতা আর হাবিব চৌধুরীকে খোঁজার চেষ্টা করতে লাগল। নিচ তলায় কাউকে দেখতে না পেয়ে দ্বিতীয় তলায় ধীরে ধীরে উঠে দু’জন।
–ভাইয়……
–হুসসসসসসস।
নিজের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে অরিয়ন। ইশারা দিয়ে কিছু দেখাতেই বুঝতে পারে আবছা আবছা কথা শোনা যাচ্ছে।
–এখানেই আছে ওরা।
ফিসফিস করে বলে অরিয়ন।
–হ্যাঁ।
জবাব দেয় আবরার।

তড়িঘড়ি করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে করিম রহমান। চেয়ারায় বিরক্তির ছাঁপ। হঠাৎ করে এরকম করার মেজাজ খারাপ হওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না মিতা।
–সাইন করছে?
জিজ্ঞেস করে করিম রহমান।
স*ন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন মাথা নাড়িয়ে না বলে।
–তুই হারামজাদা। আমাদের ফলো করছিলি তাই না?
হাবিব চৌধুরীর কাছাকাছি গিয়ে বলে করিম রহমান।
হাবিব চৌধুরী কিছু বললো না। আলতো করে একটা হাসি দিলো।
–ঐ ওর সাইন লাগবে না। টিপসই নিবো। কালির ব্যবস্থা কর। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ও একা এসেছে নাকি তাও নিশ্চিত বলতে পারছি না।
বলে করিম রহমান।

–কী বলেন স্যার!
জিজ্ঞেস করে আতংকিত জসিম।
–এমপি সাহেব কল দিছিলেন। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে। উনি বেশি ঝামেলায় জড়াতে চান না। যতোটুকু দরকার হেল্প করবেন বলেছেন। তাই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
জবাব দেয় করিম রহমান।
–টিপসই নিলে কেউ বিশ্বাস করবে? ওরা তো কেসও করতে পারে।
–তুই চুপ থাক। দরকার পড়লে ওর হাত ভেঙ্গে দিবো কাজ শেষে।
বলে করিম রহমান।
–সারাজীবন তোর নানার সাথে ছাঁয়ার মতো থাকছি, সব কাজ আমি করে দিছি আর ও…ও ম*রার আগে সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিলো। আর তুই…
–আহ..
মিতার পায়ে নিজের পা দিয়ে চাপ দেয় করিম রহমান।

–ভেবেছিলাম তুই সাইন করে সব খেলা শেষ করবি, কিন্তু করলি না। তোর মা বাবার সাথে সেদিন তুই মরলে আর এতো অভিনয় করতে হতো না আমাকে। সেদিনের প্লানও ভেস্তে গেছে, কিন্তু আজ কিছুতেই হার মানবো না আমি।
করিম রহমানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় মিতা। হাবিব চৌধুরী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলো করিম রহমানের দিকে।
–কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে হাবিব চৌধুরী।
–বলতে চাচ্ছি, তোর ভাই,ভাবি আর আদরের মেয়েকে আমি ই খু*ন করিয়েছি…হাহায়াহাহাহহা।
কথাটা বলেই হাসতে থাকে করিম রহমান।
–করিমমমমমমম…
চিৎকার করে উঠে হাবিব চৌধুরী। চেষ্টা করেও হাতের বাধণ ছাড়াতে পারছেন না।

–ভাইয়া, চাচ্চু কল করেছে।
ফিসফিস করে বলে আবরার।
আবরারের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে এক কোণায় চলে যায় দুজনে। রিসিভ করে কানে ধরে অরিয়ন।
–হ্যাঁ চাচ্চু, বলো! কোথায় তুমি?
ফিসফিস করে বলে অরিয়ন।
–ঠিক আছে। আমরা দো-তলায় আছি।
–কী বলে?
প্রশ্ন করে আবরার।
–পুলিশ ফোর্স নিয়ে চাচ্চু চলে এসেছে। ওরাও হেটে আসতেছে। তা না হলে ওরা সাবধান হয়ে যেতে পারে তাই।
–ওকে।
“আয়ায়ায়ায়ায়া…চাচ্চুউউউউউউউউউউ”
হঠাৎ করে মিতার চিৎকার শুনতে পায় আবরার ও অরিয়ন।
সাথে সাথেই কোনো কিছু না ভেবে দৌড়ে তৃতীয় তলায় উঠে যায় দুই ভাই। মিতার চিৎকার শুনে বুকের মধ্যে ভয় কাজ করছে দুজনের।

অরিয়ন আর আবরার সিড়ি বেয়ে উপরের উঠতেই দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। অরিয়ন আর আবরারকে দেখে থতমত খেয়ে যায় দুজনে। কোনো কিছু না ভেবেই অরিয়ন আর আবরার ঝাপিয়ে পড়ে তাদের উপর। একে অপরকে আঘাত করতে ব্যস্ত হয়ে যায় সবাই। অরিয়ন একজনকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে পি*টাচ্ছে অন্যদিকে, আবরার অন্যজনের পেটে একের পর একে লা*থি মা*রছে। মা*রামা*রির শব্দ শুনে নিমিশেই চারপাঁচ জন অন্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
–বসকে গিয়ে বল।
একজন দৌড়ে আবরারকে ধরতে গিয়ে অন্যজনের উদ্দেশ্যে বলে।
আবরারের বয়সি যুবকটা ক্ষণিকেই আবরারকে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অরিয়ন দৌড়ে যায় আবরারকে ছাড়াতে। একে একে ৬/৭ জন ঘিরে ধরে আবরার আর অরিয়নকে। স*ন্ত্রাসীদের মধ্যে দুজন অরিয়ন্নের দু হাত ধরে রেখেছে। অন্য দিকে একজন অরিয়নকে প্রতিনিয়ত আঘাত করতে থাকে। অরিয়নের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় আবরার। এভাবে আর কিছুক্ষণ মা*র খেলে অরিয়নের মৃত্যু নিশ্চিত। কোনো কিছু না ভেবেই ফ্লোরে পরে থাকা ভাঙ্গা ইট হাতে তুলে নেয় আবরার।

বুকের উপর বসে থাকা স*ন্ত্রাসীর মাথায় আঘাত করেই লাফিয়ে উঠে আবরার। দৌড়ে গিয়ে অরিয়নকে ধরে রাখা স*ন্ত্রাসীদের হাতে থাকা ইট দিয়ে আঘাত করে। অরিয়নও আবরারের দেখাদেখি নিজেকে বাঁচাতে রড তুলে নেয়।
–দাঁড়া, নইলে গু*লি করমু।
পি*স্তল হাতে অরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে একজন। সাথে সাথেই সোঁজা হয়ে দাঁড়ায় আবরার আর অরিয়ন।
পি*স্তল হাতে থাকা লোকটি এগিয়ে আসে। আবরারের মাথার সাথে ব*ন্দুক ঠেকিয়ে অরিয়নের দিকে তাকায়।
–চল।
অরিয়নকে ধাক্কা দিয়ে বলে লোকটি। অরিয়ন আর আবরার কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করে।

অহনার মৃত্যু কোনো দূর্ঘটনা ছিলো না। সবটাই প্ল্যান করা। কথাগুলো শুনতেই আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারেনি হাবিব চৌধুরী। পা দিয়ে স্বজোরে এক লা*থি মারে করিম রহমানকে। যদিও তা ভালো ভাবে লাগেনি তাও এই লা*থি যেন করিম রহমানের ইগোতে গিয়ে লাগলো।
–তোর এতো বড় সাহস!
কথাটা বলেই হাবিব চৌধুরীর মুখে ঘুষি মা*রতে থাকে করিম রহমান।
–আয়ায়ায়ায়ায়া…..চাচ্চুউউউউউউউউ।
চেঁচিয়ে উঠে মিতা।
–ছেড়ে দেও। আমার চাচ্চুকে ছেড়ে দেও। আমি সাইন করে দিচ্ছি। তোমার যা চাই সব নিয়ে নেও। আমার চাচ্চুকে ছেড়ে দেও প্লিজ।
অনুরোধের সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
–গুড গার্ল। আগে সাইনটা করে দিলে এতো কষ্ট পেতে হতো না কাউকে।
একজনকে ইশারা দিয়ে কিছু একটা বলে করিম রহমান।
–বস, বস।
রুমের মধ্যে দৌড়ে একজন প্রবেশ করতে করতে বলে।

–কি হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে বলে করিম রহমান।
–দুইজন ছেলে এখানে চলে আসছে। আমাদের লোকদের সাথে মা*রামা*রি করতাছে। আপনি বললে ওদের জানে খতম করে দেই?
–অরিয়ন আর আবরার!!
নিজের অজান্তেই বলে ফেলে হাবিব চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরীর কথা শুনতেই মুচকি হাসি দেয় করিম রহমান।
–আজ তাহলে পুরো খেলাই শেষ করে যাবো। ওদের এখানে নিয়ে আয়।
–ওকে বস।

আবরার আর অরিয়ন রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই থমকে দাঁড়ায়। হাবিব চৌধুরীকে চেনা যাচ্ছে না। হাত পা বাধা অবস্থায় তাকে যে খুব পে*টানো হয়েছে তা মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। মিতা ফ্লোরে পড়ে আছে। পড়ে আছে বলতে কাত হয়ে শুয়ে আছে। দু হাত পিছনে নিয়ে বাঁধা। পা বাঁধা। গায়ে উড়না নেই। পুরো জামা ভিজা। একটা মেয়েকে ঠিক কতোটা নি*র্যাতন করলে এরকম অবস্থা হতে পারে তা ভাবতেও পারছে না অরিয়ন। মিতার পিঠের উপর এক পা দিয়ে পাড়া দিয়ে রেখেছে করিম রহমান। মুখে তার বিশাল এক ব্যাঙ্গাত্মক হাসি।
নিজের বাবা আর ওয়াইফে এই অবস্থায় দেখতেই শরীরে আগুন জ্বলে উঠে অরিয়নের। আবরারও রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরেছে।
–ওয়েলকাম। তোমাদেরই কমতি ছিলো।
বলে করিম রহমান।
–কেমন লাগছে ওদের? সুন্দর তাই না?
কথাটা বলেই করিম রহমান নিজের পা মিতার পিঠ থেকে সরিয়ে মাথায় চেপে ধরে।
মিতা চোখ বন্ধ করে আছে। এই মুখ অরিয়নকে দেখাতে চাচ্ছে না। অরিয়নের চোখের সাথে কীভাবে চোখ মিলাবে তাও জানেনা। তাই কষ্ট হলেও মুখ থেকে কোনো সাড়াশব্দ বের হলো না মিতার।

–পা সরা।
গম্ভীর কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–কষ্ট লাগছে বুঝি? এই মেয়ের জন্য যে কিনা তোকে একটুও বিশ্বাস করলো না? আমার কথায় তোদের খু*নি ভাবলো তার জন্য?
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।
কথাগুলোর মাধ্যমে করিম রহমান যে কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটা মা*রছে তা সকলেই বুঝতে পারছে।
–তুই কী ভেবেছিস! এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবি?
বলে আবরার।
–তাড়াতাড়ি ওর টিপসই নে। আমরা এখুনি বের হয়ে যাবো।
করিম রহমান কথাটা বলতেই জসিম দলিল সহ মিতার দিকে এগিয়ে যায়। বাহু ধরে টান দিয়ে বসায় মিতাকে। হাতের বাধন খুলতেই মিতা আস্তে করে নিজের চোখ খুলে।
মিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ডান হাত ধরে দলিলে টিপসই বসায় জসিম।
–হাহাহাহাহাহহাহাহাহা…….
কোমড়ে দু হাত রেখে হাসতে থাকে অরিয়ন।
সকলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো অরিয়নের দিকে। হঠাৎ করে পাগলের মতো কেন এভাবে হাসছে তা বুঝতে পারছে না।

— তুই কি নিশ্চিত যে, সব সম্পত্তির মালিক পরী?
হাসি থামিয়ে বলে অরিয়ন।
–মানে?
প্রশ্ন ছুড়ে করিম রহমান।
–মানে সব সম্পত্তি অনেক আগেই আমার নামে হয়ে গেছে।
উত্তর দেয় অরিয়ন।
–তুই মিথ্যে বলছিস।
চেঁচিয়ে উঠে করিম রহমান। রাগে তার শরীর জ্বলছে।
–বিশ্বাস না হলে উইল চেক কর। রেজিস্ট্রারে এখন সব সম্পত্তি আমার নামে।
–তাহলে তো এরা আমার কোনো কাজের ই না। জসিম পি*স্তল দে। সবার আগে এদের শেষ করবো। শুধু শুধু আমার ৬ টা মাস নষ্ট করেছে।
দাঁত কিরমির করতে করতে বলে করিম রহমান।

জসিম পি*স্তল এগিয়ে দিতেই করিম রহমান গিয়ে মিতার কাছাকাছি দাঁড়ায়। অরিয়ন মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এতোক্ষণে তো পুলিশের পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিলো। তাও কেন আসছে না তা বুঝতে পারছে না।
–আগে কাকে শেষ করবো বল? তোর বাপ নাকি তোর বউ?
–তোর যা চাই সব আমি দিয়ে দিবো। ওদের ছেড়ে দে।
বলে অরিয়ন।
–সেটা তো আমি নিবই। তবে আজ এক মজার খেলা খেলবো। দেখবো তোর কাছে কে বড়! বাপ নাকি বউ!
–ভালো করে ভাব। বাপ ম*রলে বাপ পাবিনা কিন্তু বউ ম*রলে বউ পাবি।
হাসতে হাসতে বলে জসিম।
–আমাকে মা*র। ওদের যেতে দে।
হাবিব চৌধুরী বলে।
–না না না না….চাচ্চুকে ছেড়ে দেও। আমাকে মা*রো। সব দোষ আমার, আমাকে মা*রো।
বলে মিতা।

পারমিতা পর্ব ৫১

–এতো পুরাই বাংলা সিনেমা।
হাসতে হাসতে বলে করিম রহমান।
–যাহ, আমি ই ঠিক করি কে আগে ম*রবে।
–তুই..।
মিতার মাথায় পি*স্তল ঠেকিয়ে বলে করিম রহমান।

পারমিতা পর্ব ৫৩