পূর্ণতা পর্ব ২৭
নন্দিনী নীলা
স্মরণ দাঁড়িয়ে আছে পূর্ণতা দেয় বাসার সামনে। পূর্ণতা বাসায় গিয়ে কি বলবে সেটাই ভাবছে। এভাবে ঘাড়ে চেপে বাসা অব্দি চলে আসবে এমন বদমাইশ একটুও ভাবেনি।
“ শ্বশুর বাড়ির সামনে আর কত সময় দাঁড়িয়ে থাকব ভেতরে চলো?”
পূর্ণতা জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল স্মরণের দিকে। স্মরণ বলল,“ কি হলো বাসার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবার ইচ্ছে আছে নাকি?”
পূর্ণতা মাফ চাওয়ার মতো হাত জোর করে বলল,“বাসায় গিয়ে আব্বু আম্মুর সামনে দয়া করে মুখে লাগাম টানবেন। তাদের সামনে সিনক্রিয়েট করবেন না। এমনিতেই তাদের বেয়াদব বেয়ারা সন্তান আমি। আপনাকে বাসায় নেবার পর হয়তো আরো গাঢ় হবে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
স্মরণ পূর্ণতার সাথে বাসায় প্রবেশ করল। পূর্ণতার বাবা শাহিন আলম তখন বাসায় ছিলেন না। পূর্ণতার মা রোজিনা বেগম মেয়ের সাথে এক অপরিচিত পুরুষের প্রবেশে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পূর্ণতা মায়ের মুখে প্রশ্নের মেলা দেখতে পায়। ও একটা নিঃশ্বাস ফেলে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,“ উনার বাসা রাজশাহী। ঢাকা এসেছে দরকারি কাজের জন্য। সপ্তাহখানেক থাকবে আমার পরিচিত তাই আমাদের বাসায় নিয়ে আসলাম। এই কয়দিন এখানে থাকার জন্য।তোমার কোন সমস্যা হবে?”
রোজিনা বেগম মাথা নাড়িয়ে না বুঝিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন,“ তোর বাবা কি মনে করবে। এভাবে একটা ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসলি। বিয়ে করছে?”
পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে দেখল স্মরণ উৎসুক চোখে ওদের ফিসফিসানি দেখছে। পূর্ণতা বলল,“ বিয়ে করেনি। কিন্তু তোমার কি মনে হয়? এই ছেলের সাথে আমি রিলেশনশিপ আছি বা বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছি?”
রোজিনা বেগম মেয়ের শক্ত কথা শুনে হেঁসে বললেন,“ তুই নিজে থেকে কাউকে পছন্দ করলে আমাদের থেকে কেউ বেশি খুশি হতো না। আমরা তো এটাই চাই তুই অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যা।”
“ শেগুরে বালি তোমাদের চাওয়া পূরণ হবে না। উনাকে উনার রুম দেখিয়ে দাও আমি নিজের রুমে যাচ্ছি মাথা ব্যথা করিয়ে ফেলেছে একদম।”
“ নামটা তো বলে যা।”
পূর্ণতা স্মরণ কে নিজের মায়ের সামনে ফেলে চলে গেল। স্মরণ ওকে গটগট পায়ে চলে যেতে দেখে বলল,“ আরে আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছ?”
রোজিনা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,“ তোমার নাম কি?”
স্মরণ সালাম দিয়ে ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,“ জি আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমার নাম ইমতিয়াজ স্মরণ হোসেন।”
“ তুমি কি করো?”
“ জি আন্টি পেশায় একজন শিক্ষক।”
রোজিনা বেগম স্মরণ কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললেন,“ যে উদ্দেশ্যে এসেছ সফল হও দোয়া করি।”
স্মরণ চমকিত চোখে তাকাল রোজিনা বেগমের দিকে রোজিনা বেগম বুয়া ডেকে রুমে নিয়ে যেতে বলল স্মরণ কে।
স্মরণ রুমে এসে থ মেরে বসে আছে খাটে। রোজিনা বেগমের শেষের কথা শুনে ও স্তব্ধ। ওর উদ্দেশ্য আছে উনি বুঝলেন কীভাবে? কেমন রহস্যময় করে কথা বললেন। আবার ওকে দেখেও তেমন রিয়েক্ট করলেন না। কেমন জানি দেখে যেন আরো স্বস্তি পেয়েছেন।
শাহিন আলম বাসায় এসে স্মরণ কে ডেকে পাঠাল। কোন ছেলেকে তার মেয়ে পরিচিত বলে বাসায় এনেছে দেখতে হবে তো। তার ডাকে স্মরণ ভয়ার্ত মুখে এসে দাঁড়াল।
“ পূর্ণতার সাথে তোমার পরিচয় কীভাবে?”
স্মরণ মাথা নিচু করে বলল,“ পাত্রী দেখতে গিয়ে মিস পূর্ণতার সাথে আমার প্রথম দেখা এবং প্রথম সাক্ষাৎকার হয়েছে।”
“ বুজলাম না। পাত্রী কোথায় দেখতে গিয়েছিলে? পাত্রী কি নিজের জন্য দেখতে গিয়েছিলে?”
“ জি আঙ্কেল। কিন্তু সেখানে পাত্রীকে রেখে আমি আপনার মেয়ে মিস পূর্ণতাকে চয়েজ করেছিলাম।”
শাহিন আলম বিস্মিত চোখে তাকাল স্মরণের দিকে। কেমন নির্ভয়ে বলে দিল। একটুও ভয় পাচ্ছে না।
তিনি হতচকিত কন্ঠে বললেন,“ আমার সামনে দাঁড়িয়ে অকপটে কথাটা বললে একটুও ভয় করছে না?”
স্মরণ বলল,“ সরি আঙ্কেল আমাকে বেয়াদব ছেলে ভাববেন না সত্যি কথা বলাতে। আমি সত্যি কথা বলতে পছন্দ করি। আঙ্কেল চাইলেই আমি হাজারটা বানোয়াট কথা আপনাকে বলতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছে করল না। মিথ্যা বলার চেয়ে সত্য বলে একটু রাগের সম্মুখীন হওয়াটাও ভালো।”
“ তুমি যথেষ্ট সাহসী এবং বুদ্ধিমান।”
“ সাহসী না হলে কি আপনার ঘাড়ত্যারা মেয়েকে রাজি করিয়ে বাসায় আসতে পারতাম। আপনার মেয়ে যে ধানি লঙ্কা তার সামনে সাহসী হতেই হবে।”
“ এসব জানার পর আমি যদি তোমাকে বাসা থেকে বের করে দেয় তোমার ভয় করছে না?”
“ আপনি বের করে দিলে কথা বলতে ডাকতেন না। বাসায় ফিরে এক অপরিচিত ছেলে বাসায় এসেছে শুনলে তখনি ঘাড় ধরে বের করে দিতেন। এতোটা সময় নিতেন না।”
“ ভেরি স্মার্ট।”
শাহিন আলম চলে গেলেন। স্মরণ সোফায় বসতেই পূর্ণতা এগিয়ে এসে বলল,“ বাবার সাথে কি কথা বললেন?”
“ জামাই শ্বশুরের পার্সোনাল কথা শুনে তোমার কাজ নেই।”
পূর্ণতা রাগে কটমট করে বলল,“ লিমিটের মধ্যে থাকবেন।”
“ বাইরে গেলে কি বিয়ে করবে নাকি?”
“ কখনোই না।”
“ তোমার পরিবার টা দারুন। সবাইকে মানাতে আমার প্যারা নিতে হবে না। শুধু তুমিই জটিল। তোমাকে রাজি করাতেই আমার দফারফা হয়ে যাবে বুঝতে পারছি।”
“ আপনার চালাকি আমি বুঝিনা ভেবেছেন তাই না? আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু যতই ওভার কনফিডেন্স হোন না কেন ফলাফল শূন্যই থাকবে।”
“ এসেছি সেই কখন খিদে তো পেয়েছে কিছু খেতে দাও।”
“ পারব না।”
“ একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে না খাইয়ে শাস্তি দিও না। তুমি এতোটা নিষ্ঠুর নও।”
পূর্ণতা একাই খাবার টেবিলে এসে বসতে দেখে রোজিনা বেগম বললেন,“ একা আসলি স্মরণ কে ডাকলি না?”
পূর্ণতা উত্তর না দিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে খেতে লাগল। তিনি আবার বললেন,“ তুই কি রাজশাহী গিয়েছিলি?”
“ কেন? গেলে খুশি হবে নাকি না গেলে!”
“ বিয়ে শেষ না করেই চলে এলি কোন সমস্যা হয়েছে কি?”
“ কি সমস্যা হবে? কোন সমস্যা হয়নি!”
“ তাহলে বিয়ে শেষ না করে চলে এলি কেন?”
“ আমি যদি যেতাম তাহলে না শেষ করে আসব। আমি তো রাজশাহী যাইনি।”
“ তাহলে এই কয়দিন কোথায় ছিলি? তোর বাবার সাথে জেদ করে তখন তো চলে গিয়েছিলি।”
পূর্ণতা বলল,“ মানুষকে অপমান করা একটা ধারা হয়ে গেছে তোমাদের কাছে। নিজেদের ভুল না সবসময় অন্যের উপর দোষ চাপানোর স্বভাব বাদ দাও।”
স্মরণ আর শাহিন আলম একসাথে খাবার টেবিলে এসে বসতেই পূর্ণতা বিস্মিত চক্ষু করে তাকাল দুজনের দিকে।
পূর্ণতা বিড়বিড় করল,“ এসেই সবাইকে বশ করে ফেলেছে বদমাইশ টা।”
স্মরণ চেয়ার টেনে বসে বলল,“ আঙ্কেল আন্টি আপনাদের দেখে মনেই হয়নি আজকেই আমাদের পরিচয় হয়েছে। যেন কত দিনের পরিচয় আমাদের। তাই না?”
রোজিনা বেগম বললেন,“ ঠিকি বলেছ।”
পূর্ণতা আধ খাওয়া করেই উঠে দাঁড়াল। এদের আদ্যিখেতা জাস্ট অসহ্য লাগছে ওর কাছে। শরীর জ্বলে উঠছে স্মরণের প্রতি বাবা মায়ের আহ্লাদ দেখে।
পূর্ণতা পর্ব ২৬
পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ও জানেই না স্মরণ কে কোন রুমে থাকতে দিয়েছে জানার প্রয়োজন বোধ ও করেনি। স্মরণের উপর প্রচুর রাগ ওর কিন্তু কথা দিয়ে ফেঁসে গেছে তাই রাগ ঝাড়তেও পারছে না। কত বড় সাহস ওকে শর্ত দিয়ে বাসায় এসে ওকে জ্বালায়। ও ঘুম থেকে উঠে একটা রুমে যায়। এটা হচ্ছে প্রভাতের রুম মাত্র তিনমাস এই রুমে ছিল প্রভাত। পূর্ণতা রুমে ঢুকে দেখে স্মরণ ঘুমিয়ে আছে। ওর মাথায় রক্ত উঠে যায়। ও চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলে নেয়। ঘুমন্ত স্মরণ পূর্ণতার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসে। ঘুমঘুম চোখে কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করতে লাগে।