পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৫

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৫
সাদিয়া আক্তার

কামরুল সাহেবের বাড়িতে আয়োজনের বাহার বসেছে আজ পারভেজ সাহেবরা আসবে কাল রুপশাদের ও দাওয়াত করা হয়েছে। তিন বছর ধরেই রুপশাদের দাওয়াত দিচ্ছে কামরুল সাহেব তবে কোনো এক কারণে লিমন আসতে চায়নি তবে এবার আর ফিরাতে পারেনি।
পুনম বেশ খুশী সকাল থেকে আজ একসপ্তাহ পর বাবা মাকে দেখবে সে। তাই আজ কোচিং এ ও যায়নি। চাদনী বেগমের আচল ধরে ঘুরঘুর করছে। বেশ কয়েকবার তাকে সাহায্য করতে চাইলেও চাদনী বেগম দিচ্ছে না তার একজন বাধা বুয়া আছে আরেকজন ছুটা বুয়া আছে। তারাই আজ হাতে হাতে করে দিচ্ছে যদিও আজ বেশী আয়োজন করবে না জাষ্ট পিঠা পুলি বানিয়ে রাখছে।।

— এটা কি পিঠা চাচী??
— পুলি পিঠা এটা দুধে ভিজাব।
পুনম মাথা নাড়িয়ে দেখতে থাকে। দুপুরের দিকে পারভেজ সাহেবরা পৌঁছে যায়। তাদের আসার খবর শুনে পুনম দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়।
— আব্বু
দৌড়ে পারভেজ সাহেবের বুকে ঝাপিয়ে পরে। চন্দ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে এরকম খুশী তো আসার পর থেকে দেখেনি চন্দ্র এরকম চলতে থাকলেতো তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
বাবা মেয়ে অনেক কথা বলতে বলতে ঘরে ঢোকে নিশা মুখ বাকিয়ে চন্দ্রের নিকট এগিয়ে যায়।
— কেমন আছেন চন্দ্র??
ভ্রু কুচকে তাকায় চন্দ্র। গম্ভীর স্বরে বলল — তোর বয়স কত??
— কেনো??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমি তোর থেকে নাহলেও দশ বছরের বড় হব। সম্পর্কে তোর বড় ভাই হই । ভাইয়া ছাড়া আর কোনো শব্দ এই চিকন কন্ঠ দিয়ে বের হলে তা রোধ করতে আমার জাষ্ট দশ সেকেন্ড লাগবে।।
চন্দ্রের থ্রেড শুনে ভয় পেয়ে যায় নিশা দ্রুত ঘরে চলে যায়। চন্দ্র রোজিনা বেগমের সামনে যায় যে এতক্ষণ পুনমের দিকে তাকিয়ে ছিল মেয়েটা অনেক বেশী বাবা পাগল। রোজিনা বেগমের সাথে কোনো রকম কুশল বিনিময় করেই বাবার কাছে চলে গেছে।
— ওদিকে কি দেখছ চাচী???
— হু
চন্দ্রের কথায় চমকে ওঠে রোজিনা বেগম। চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র আবার বলল — কেমন আছো??
— আলহামদুলিল্লাহ্ বাবা তুমি কেমন আছো??

চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে বলল — তোমার তো শরীর খারাপ ছিলো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলা ডাক্তার কি বলল??
ডাক্তারের কথা শুনে রোজিনা বেগমের মুখটা চুপসে গেলো। চন্দ্র তাকে কিছু না বলতে দেখে বাকা হেসে বলল — এবার তুমি টের পাবে তুমি জীবনে কত বড় ভুল করেছ।
চন্দ্রের কথায় রোজিনা বেগম অবাক হয় কিছু বলতে গিয়েও পারে না। স্তম্ভ পায়ে ভিতরে চলে যায়।।
পুনম সবার জন‍্য শরবত নিয়ে আসে রোজিনা বেগমের হাত দেয়।।
— আপা মিরাজরা এলো না
— ওরা রওনা দিয়েছে রাতের মধ‍্যেই পৌঁছে যাবে।
রোজিনা বেগম রান্নাঘরে চাদনী বেগমের কাছে দাড়ায়।
— এখানে গরমে দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে যা,,,
— সমস‍্যা হবে না আমি ঠিক আছি ট্রেনে এসেছি তাই অতটা কষ্ট হয়নি।

চাদনী বেগম হাসে। কিছুক্ষণের মধ‍্যে পুনম আবার রান্নাঘরে আসে চুপি চুপি চাদনী বেগমের আচল ধরে গম্ভীর স্বরে বলে — বউমা দুফুর গড়াইয়া বেলা হতে যাইল তুমি এহনও আমার পুত দুইডারে খাইতে দিলা না,,,
এই কথা শুনে চমকে ওঠে রোজিনা ও চাদনী বেগম। কে হতে পারে বুঝতে পেরে চাদনী বেগম মুচকি হেসে বলে — কি করব আম্মা কাজে একটু ব‍্যস্ত হইয়া পরছি
চাদনী বেগমের কথা শুনে পুনম খিলখিল করে হাসে তবে মেজাজ খারাপ হয় রোজিনা বেগমের। সে পুনমের কথা শুনে সত‍্যিই চমকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিলো যেনো তার প্রয়াত শাশুড়ি সয়ং বলছে। সে তিরিক্ষি মেজাজে বলল — এসব কি পুনম ঢাকায় আসার সাথে সাথে কি সহবোধ আদব কায়দা সব ভুলে গেলে। তোমার চাচী তোমার বড় হয় তার সাথে এমন ভাবে কথা বললে কেনো??

রোজিনা বেগমের চিৎকারে সবাই রান্নাঘরে জড় হয়। পুনম ফুপিয়ে কেদেঁ ওঠে তা দেখে রোজিনা বেগম আবার খেকিয়ে ওঠে — কাদবে না একদম কাদবে না কথায় কথায় কান্না করে বাচতে চাও তাইতো।
পুনমকে বুকে জড়িয়ে চাদনী বেগম বলে — পুনম তোমাকে কিছু বলেনি রোজিনা আমাকে বলেছে আমাদের বিষয়টি নাহয় আমাদের বুঝতে দাও আর ও কতটুকু ভদ্র তা আমার মনে হয় আমার থেকে তুমি বেশী বুঝতে পারবা।
— এখানে তোমার আমার কথা আসছে কেনো ভাবী আমি পুনমকে শাষন করছি আর আমার মেয়েকে শাষন করার সময় তুমি কোনো কথা বলবে না।
— তোমার মেয়ে যে বলছ তা তুমি কতটুকু এই মেয়েকে লালন পালন করেছ এখন আমার মুখ ছুটিও না রোজিনা চুপ থাকো,,,
চাদনী বেগমের কথায় রোজিনা বেগম ফসফস করতে করতে চুপ করে। হনহন করে রান্নাঘর থেকে বের হয় কেউ কিছু বলে না তবে মুক্তি আর চন্দ্রের বেশ রাগ হয়। তবে এখন কিছু বলে না সে জানে শীগ্রই রোজিনা বেগম বড় সর ধাক্কা খাবে। যার জন‍্য সে প্রস্তুত থাকবে না।।
— হুশ কাদে না মা,, তুই আমার মা আমার সাথে যেরকম মনে চায় সেরকম কথা বলবি।
পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলল চাদনী বেগম পারভেজ সাহেব তাদের দেখে মনে মনে কিছু ভাবে। আরো ভাবে এবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগেই এর ব‍্যবস্থা করে যাবে।

রাতে বেলা মিরাজ সাহেব আসলে তিন ভাইয়ের জমজমাট আসর বসে একবোন জামাই নিয়ে।
আর মহিলারা রান্নার কাজ শেষে নিজেদের আড্ডায় মশগুল।
চন্দ্র শিহাব রিশান নিজেদের মতো ছাদে আসর বসিয়েছে।
মুক্তি ঝিনুক রিমি পুনম এরা চারজন মুক্তির ঘরে বসে আছে।
নিশা আপাতত রোজিনা বেগমের কাছে আছে চন্দ্রের সাথে নিজের বিয়ের ব‍্যবস্থা করার জন‍্য।
— আম্মু আজকের অপমানের বদলা কিন্তু নিতেই হবে,,,
নিশার কথা শুনে রোজিনা কপাল থেকে হাত সরিয়ে মেয়ের দিকে তাকায়।
— তোমাকে অপমান করা এর বদলা নিতেই হবে।

— কিন্তু কিভাবে তোর আব্বু জানতে পারলে কিন্তু খবর আছে। সে ভাই ভাবী বলতে পাগল,,,, মুখ বাকিয়ে বলল।
নিশা মনে মনে কুটিল হেসে বলল — এমন ভাবে বদলা নিব যেনো সাপও না মরে লাঠিও না ভাঙ্গে,,
নিশার কথা শুনে রোজিনা বেগম ভ্রু কুচকে তাকায়। নিশা কানে কানে কিছু বলতে দুই মা মেয়ে হাসে। রোজিনা নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়েছে বড় ভাইজান যদি তাদের পরিকল্পনা ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে তো এই সব হাতের মুঠোয়।
পুনম সারাদিন মায়ের থেকে দূরে দূরেই থাকে।। রোজিনা বেগম তার দেখেও না দেখার ভান করে। তবে তার কাছে এটা খারাপ লাগে তার মেয়েটা মায়ের থেকে চাচীদের সাথে এটাচ বেশী। মনের কোণে কোথাও সূক্ষ্ম টান লাগে তবে মস্তিষ্কের কুটিলতা তা দূরে সরিয়ে দেয়।।

— চন্দ্র আজ মেঝো মামি একটু বেশী করে ফেলেছে পুনমটা কিভাবে কাদছিল চাচীদের সাথে এরকম দুষ্টামি করাই যায়।
দুই আঙ্গুলের মাঝে রাখা নিকোটিনটা দুই ঠোটে চেপে টেনে নাক দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে চন্দ্র বলল — তার শাস্তি অলরেডি তার জন‍্য তৈরী করা আছে এবং সে নিজেই তৈরী করেছে যদিও এর মাধ্যমে আমার চাচা একটু হ‍্যারেজ হবে।।
চন্দ্রের কথায় রিশান শিহাব একে অপরের দিকে তাকায় কি করতে চলেছে এই ছেলে।
— কি করবি??
— উহু আমি কিছুই করব না,,,
চন্দ্রের হেয়ালি কথা বার্তায় বিরক্ত হয় দুই ভাই তবে কিছু বলে না জানে এখন চন্দ্রের মুখে আর ডি এক্স বোমা মারলেও মুখ ফেটে কথা বের হবে না।।
— ভাইজান আমি ভাবি ঢাকায় এসে পড়ব,,,
পারভেজ সাহেবের কথায় কামরুল সাহেব বেশ খুশী হয়

— সেটা তো আমি আরো আগেই তোরে বলেছি। ঢাকায় এসে নিজের দোকান গুলো দেখ আমার কাধে ব‍্যবসার দায়িত্ব না দিয়ে নিজেরটা নিজেই দেখ,,,
— হ‍্যা আমার আম্মারে ছাড়া আমার দিন চলে না এই সাতটা দিন আমার কাছে সাত বছরের মতো মনে হইছে,,,
— তা ভাইজান তোমার বাড়িতেই উঠবা নাকি??
মিরাজ সাহেবের কথায় তাদের ভগ্নিপতি অবাক হয়ে বলল — মেঝো ভাইয়ের বাড়িও আছে নাকি ঢাকায়??
— হ‍্যা এই সাভারেই আছে,,,
— তাহলে তো ভালোই হয় তা সবাই তো ঢাকায় চলে আসল শালা সাহেব আপনি কখন আসবেন।
— দূর দুলাভাই আর মনে করিয়ে দিয়েন না বা** একটা চাকুরী করি এতো করে বলার পরেও ট্রান্সফার হচ্ছে না।
— ওও থাক থাক তোমরা দূরেই থাকো তাহলে আমাদের ও ঘোরাফেরা করার জায়গা বাড়ল।
মিরাজ সাহেব মাথা নাড়িয়ে মুচকি হাসে।।

রাতের খাবারের পর যে যার রুমে তবে আগের মতো আজো চার বোন একরুমে এবার মুক্তির রুমে পুনমের রুম নিশার দখলে সেই নিয়েও একপ্রকার হম্বিতম্বি হয়েছে।
চন্দ্রের এককথা ঐ ঘরে কেউ থাকবে না লাগলে নিশার জন‍্য নতুন ঘর খোলা হবে তবুও না।
নিশা বুদ্ধি করে কামরুল সাহেবকে ইমোশনালি ব্ল‍্যাকমেইল করে ঐ ঘরটা নিয়েছে।
নিজের ঘরে পায়চারি করছে চন্দ্র তার ইচ্ছে করছে নিশাকে লাথিতে লাথিতে ঐ ঘর থেকে বের করতে তবে এখন তা করতে পারবেন না।। পরোক্ষণে কিছু ভেবে বাকা হেসে ঘর থেকে বের হয়।
বাড়ির মেইন সুইচ অফ করে ফেলে। হালকা শীত ও রাত হওয়ায় কেউই টের পায়না।
গলায় হালকা ঘামে ভিজা হতে ঘুম ভাঙে নিশার। ঘুমের ঘোরে হাত দিয়ে ঘাম মুছে ফ‍্যানের দিকে তাকায়। দেখে ফ‍্যান বন্ধ তখনই চিউচিউ করে কিছুর শব্দ পায়।

নিশা উঠ বসে এদিকে ওদিক তাকিয়ে গায়ের পাতলা কাথা সরিয়ে উঠে দাড়ায়। গেটের কাছে গিয়ে লক খোলার চেষ্টা করতে দেখে লক খুলছে না। নিশা অনেক চেষ্টা করেও পারেনা।
তখনই হা হা হা করে কারো হাসির শব্দ পায়। ভয় পেয়ে লাফিয়ে পেছন ফিরে নিশা অনবরত ঢোক গিলে। বিড়বিড় করে দোআ পড়ে বারান্দার দিকে এগোয়।
তখনই উপর থেকে ঝপাত করে একবালতি পানি নিশার গায়ে পড়ে।
নিশা ভয়ে — আআআআআআ চিৎকার করে ভিতরে ঢুকে রুমটা সাউন্ডপ্রুফ হওয়াতে কেউই টের পায়না।
নিশা কাপতে কাপতে ভেজা কাপড়েই বিছানায় গিয়ে বসে তার এখন দিন দুনিয়ার কোনো খেয়াল নেই।।
বারান্দার কোণায় দাড়িয়ে বাকা হাসে চন্দ্র সাবধানে নিজের ঘরে যেয়ে আবার বাইরে বের হয় চুপচাপ মেইন সুইচ অপেন করে ভদ্র ছেলের মতো নিজের ঘরে যেয়ে শুয়ে পড়ে।
— আজকে তুই নামক আফিম না নিয়েই ঘুমাতে হচ্ছে আমার জোহরা। আম সরি,,,, বিড়বিড় করে বলে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের মধ‍্যে ঘুমিয়েও যায়।

সকাল সকাল টাটকা খবরে সবার ঘুম ভাঙে আর এই সংবাদ দাতা হচ্ছে সয়ং রাইয়‍্যান।
— মেঝো চাচী মেঝো চাচা তাড়াতাড়ি উঠো দেখো নিশা বিছানায় প্রশ্রাব করে দিয়েছে,,,,
রোজিনা বেগম রাইয়‍্যানের চিল্লাচিল্লি শুনে লাফ দিয়ে ওঠে তবে। পাশে গভীর ঘুমে পারভেজ সাহেবকেও উঠায়।
ইতিমধ্যে রাইয়‍্যান সবাইকে জড়ো করে ফেলেছে সবাই নিশার ঘরে উপস্থিত।
ঘরে ঢুকেই ভোটকা প্রশ্রাবের গন্ধে সবাই নাক চেপে ধরে।
রোজিনা বেগমের ডাইরেক্ট বমি চলে আসে। নিপা বেগম নাক চেপে নিশাকে ডাকে,,,,
ভোরেই ঘুমিয়ছিল নিশা ছোট চাচীর ডাকে ধরফরিয়ে ওঠে
— ককি হয়েছে চাচী???
— কি হয়েছে সেটা ভালো মতো চেক কর বয়স সতেরো হবে আর কিছুদিন পর এখনো বিছানায় প্রস্রাব করিস তুই,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৪

— কিহ এটা কে বলল??
— আরে গাধী শুকে দেখ তোর ঘরে গন্ধের জ্বালায় থাকা যাচ্ছে না।
নিশা শুকে দেখে সত‍্যি বেশ দূর্গন্ধময় হয়ে আছে ঘরটা। নিজেই গন্ধ সইতে না পেরে ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথরুমে চলে যায়।
— এই নিশা কাপড় নিয়ে যা একেবারে গোসল সেড়ে আসিস। এই ঘরে এখন কেউ থাকার মতো উপায় নেই এটা আটকে রাখতে হবে।
চাদনী বেগম নিশাকে অন‍্য বাথরুমে পাঠিয়ে ঘর বন্ধ করল।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১৬