পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৮
সাদিয়া আক্তার
ছাদে শুয়ে আছে চন্দ্র খালি ফ্লোরে একটা হাত মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে আছে। তার নজর ঐ দূর আকাশের চাদেঁর দিকে। রুপালি থালার মতো চাদেঁর সৌন্দর্যের কাছে সবকিছুর সৌন্দর্য হাড় মানায় তবে ঐ যে চাদেঁর একটা দাগ তার রুপের কলঙ্ক হিসেবে ধরা হয়।
ঐ আকাশে থাকা চাঁদের মতো ধরনীতে থাকা চাদেঁর ও কলঙ্ক আছে। জীবনের অবিচ্ছিন্ন অধ্যায় যা চন্দ্র চাইলেও ভুলতে পারে না। তবে আজ কয়েকদিন একটু বেশীই মনে পড়েছে। ঐ যে তার ভুলে থাকার নেশাটা চোখের সামনে নেই যে।
পুনমের সাথে আজ একসপ্তাহ দেখা হয় না চন্দ্রের। যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী হয়েছে এই দেয়ালটা তৈরী করেছে চন্দ্রের মা বাবা বোন। এই তিনজনই কোনো না কোনো ভাবে পুনমের জন্য তার সামনে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে। ইভেন খাবারটাও পুনমের ঘরে দিয়ে আসা হচ্ছে এদিকে যে চন্দ্র তীব্র জ্বলনে জ্বলছে তার পোড়া হৃদয়ের দহন যে কাউকে দেখানো যাচ্ছে না। নিজের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে কাউকে বলতেও পারছে না তোমরা একটাবার আমার জোহরাকে দেখতে দাও।
ওকে একটা ঝলক দেখে নিজের হৃদয়কে তৃপ্তি করি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— এতোই যদি ভালোবাসিস তাহলে এতো লুকোচুরি কেনো?? আর তুই যা শুরু করেছিস এতে মেয়েটা তোকে ভালোবাসা তো দূর তোর কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবে।।
পেছন থেকে শিহাবের কথা শুনেও চন্দ্রের ভাবাবেগ হলো না সে নিজের মতোই শুয়ে রইল। শিহাব চন্দ্রের পাশে বসল। আবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — এভাবে আর কতদিন??
— যতদিন না ও আমার হয়,,,,
— তুই যা করছিস তাতে ও কোনোকালে তোর হবে না।
শিহাবের কথা শুনে চন্দ্র ধপ করে চোখ খুলে শিহাবের দিকে তাকায়। শিহাব মুচকি হাসে — ঐ চোখ দেখে সবাইকে ভয়ে দমাতে পারলেও আমাকে পারবি না
— ময়না পাখি বরাবর একটা লাথি খেলে ঠিকই ভয় পাবি
চন্দ্রের কথা শুনে নাক মুখ কুচকে ফেলে শিহাব এই ত্যাড়া ছেলের সাথে কথা বলাটাও বিফল।
— যাই হোক যেটা বলতে এসেছিলাম পুনমের সাবজেক্ট চয়্যেজের রেজাল্ট দিয়েছে। জুলিয়জিতে চান্স পেয়েছে,,
— হুম এখন যা
শিহাব পাত্তা না পেয়ে উঠে দাড়ায়।।
রোজিনা বেগমের শরীরটা আজকে একটু খারাপ। চাদনী বেগম তার সাথে আছে চন্দ্র বাসায় নেই এই সুযোগে মুক্তি পুনমকে নিয়ে রান্নাঘরে রান্না করছে।
— আপু ভাইয়া ফোন দেয় তোমার কাছে??
মুক্তি রান্না করতে করতে জিজ্ঞাসা করে — কোন ভাইয়ার কথা বলছিস??
— তোমার ফিয়্যন্সে ইহান ভাইয়া,,,
— নাহ সেদিনের পর থেকে তার সাথে আমার কোনো আলাপ হয়নি।
— ওওওওও
— হ্হহহহ্যা
টেনে বলেই দুই বোন হেসে দিল। আবার রান্নায় মনোযোগ দিল মুক্তি পুনম সবজি কেটে দিচ্ছে।
— পুনম জুলিয়জিতে তো চান্স পেলি ক্লাস কবে??
— আর কয়েকদিন পরে
এমনেই আরো টুকটাক কথা চলতে থাকে পুনম মুক্তির।।
রান্না শেষে পুনম খাবার টেবিলে সাজাতে যায়। বাটি গুলো একে একে টেবিলে আনে লাষ্ট বাটিটা আনতে গেলেই চন্দ্রের সামনে পরে। চন্দ্র কোচিং থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি এসে পরেছে ভর্তি ক্লাসের চাপ কমে এসেছে। তাই একটু তাড়াতাড়ি এসে পরেছে তবে সে ভাবতেও পারেনি আজ তার ভাগ্য এতোটা সুপ্রন্ন হবে সে অপলক তাকিয়ে থাকে তার জোহরার দিকে।
পুনম ও অনেক দিন পর চন্দ্রকে দেখে যারপরনাই অবাক তবে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে যেতে ধ্যান ভাঙ্গে চন্দ্রের বিড়বিড় করে বলল
— একটু ভালো মতো তৃপ্তি মিটিয়ে দেখতেও দেয়না
বলেই কপাল কুচকে নিজের ঘরে চলে গেলো। অনেক দিন পর মনটা একটু শান্ত হয়েছে একঝলকের জন্যও দেখা পেয়েছে তার জোহরার তাতেই চন্দ্র খুশী।
আজকে পুনমের ভার্সিটির প্রথম ক্লাস তার সাথে মিহিরও মিহিও জাবিতে চান্স পেয়েছে নয়ন মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে। তিন বন্ধুর মধ্যে একজন আলাদা হওয়ায় পুনম মিহি বেশ মন খারাপ করেছে। নয়ন ও বেশ মন খারাপ করেছে তবে কিছু করার নেই এটা তার প্যাশন সে ছাড়তে পারবে না আর এতে পুনম মিহিও সাপোর্ট করেছে।
মিহি হোষ্টেল থেকেই ভার্সিটি যাবে পুনম পারভেজ সাহেবের সাথে যাবে আজ।
রিক্সায় দুই বাপ মেয়ে বসতেই রোজিনা বেগম উচু পেটটা ধরে ধীর পায়ে ভিতরে চলে গেলেন।। গেটে সামনে থেকে বাবাকে বিদায় দিয়ে মিহির সাথে পুনম ভিতরে ঢুকল। চারিদিকে তাকাতে তাকাতে ঢুকছে পুনম হঠাৎই তার নাক বরাবর একটা কাগজের টুকরো এসে পরল।
পুনম নাক ডলতে ডলতে বসে কাগজটা নিয়ে চারিদিকে তাকায়। আশে পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে ফেলে দিতে নিলে মিহি বাধা দিয়ে বলল
— আরে কি করছিস??
— কি করছি কাগজটা ফেলে দেই আমার নাকে উপর পরল মনে হয় বাতিল পেপার কেউ ছুড়ে ফেলেছে,,,
— যাই হোক খুলে দেখ কি লেখা আছে,,
— সব কিছুতে তোর কৌতূহল গেলো না।
বলেই পুনম মুড়ানো কাগজটা সোজা করে খুব সুন্দর হাতের লেখা দেখে পড়ার আগ্রহ জাগে তাদের। পুনম পড়তে শুরু করে
নক,,নক,,
— শুরু হলো প্রেমের কাহিনী ওয়েল কাম টু জাবি মিস,,,;
প্রেমের প্রথম ধাপে পা দেয়ার জন্য আপনাকে উপহার দিলাম হৃদয়ে গচ্ছিত একগুচ্ছ আবেগ!!
লেখাটা পড়ে পুনম অবাক হয় এরকম করে কেউ ওয়েলকাম করে জানা নেই তার।।
— এই পুনু কি লেখা আছে এতে??
পুনম মিহির দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দেয় মিহি পড়ে মুখ কুচকে বলে — নির্ঘাত ব্যাটা বেরসিক নক নক এমন ভাবে বলছে যেনো নাকে ঠুয়া দিচ্ছে।
মিহির কথা শুনে পুনম ফিক করে হেসে দিল।
— যাই বল তবে ওয়েলকামটা ডিফ্রেন্ট ছিলো
— হ্যা তবে ভাবনার বিষয় এটা কে পাঠাল??
গালে তর্জনী দিয়ে ভাবতে ভাবতে বলল মিহি।
— থাক আপা আপনার কৌতূহল বন্ধ করেন এখন চলেন ঐ দিকে আবার ক্লাসও খুজতে হবে নাহলে দেখা যাবে ছুটি পযর্ন্ত এখানেই দাড়িয়ে আছি,,,
মিহি পুনম চলল ক্লাস খোজার উদ্দেশ্যে। এরমধ্যে শিহাব সামনে পড়ল — আরে শিহাব ভাইয়া তুমি কখন আসলা,,,
— সে অনেক্ষণ,, তা ক্লাস পাচ্ছিস না বুঝি??
মাথা নাড়ে পুনম শিহাব পুনমকে ক্লাস দেখিয়ে দিল। ক্লাসে যেয়ে পুনম মিহি একসাইটের বেঞ্চে বসল।। কিছুক্ষণ পরে ক্লাস শুরু হলো আজকে শুধু পরিচিতি হলো সবার সাথে।
টুকটাক বইয়ের সাথেও হলো দুইটা ক্লাস পর আর ক্লাস হবে না তাই সবাই বেড়িয়ে পরল ক্লাস থেকে। পুনম মনে মনে ভাবল বাসায় চলে যাবে তবে তার ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে মিহি আবদার করল ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখবে। অগত্যা পুনমের ও যেতে হলো।
ঘুরতে ঘুরতে তারা আসল অডিটোরিয়াম রুমে সেখানে কেউ গান গাচ্ছে কবিতা আবৃত্তি করছে। গোল গোল করে দুই তিনটা সাড়ি আছে পুনম উকি মেরে আবার চলে আসতে নিলে তখনই গানের আওয়াজে থেমে গেলো।
” বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে,
তার গন্ধ মেখে থাকতে
— কেনো সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে সে পালায়!
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা,,,
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা _
আমি দাড়িয়ে দেখছি শেষটা জানালায়,,,,
বোঝেনা সে বোঝেনা!!!
মন দিয়ে গানটা শুনল পুনম গান শেষ হতেই আবার উকি মারল ভিতরে তবে বুঝতে পারল না কে এখানে দুইটা গ্রুপের ছেলের হাত গিটার।।।
কিছু না ভেবে আবার ঘুরাঘুরিতে মন দিল হাটতে হাটতে লাইব্রেরিতে এসে পৌছাল।
— উফফ অনেক হেটেছি এবার একটু জিরাই
মিহি বসে পড়ল। তাদের সবে মাত্র ক্যাম্পাসের একাংশ দেখা হয়েছে বাকিটা এখনো রয়েছে। তবে পুনম বসল না সে বুক শেলফের দিকে এগিয়ে গেলো পুনম একটা বইয়ে হাত দিতে আবার ও একটা মুড়ানো কাগজের বল তার কাধে এসে বারি খেলো।
পুনম নিচে তাকিয়ে আবারও আশেপাশে তাকায় ।।
পুরো লাইব্রেরিতে তিন চারজন মানুষ আছে তাও তারা টেবিলে বসে পড়ছে আর নাহলে কোনো সাড়াশব্দ নেই এবার পুনমের সত্যিই কৌতূহল হয়। সে কাগজ খানা উঠিয়ে খুলে
— এই শ্যামবতী এতো কৌতূহল কেনো হ্যা। গান শুনেছো সেই পযর্ন্ত সমাপ্ত থাকো না কে গাইছে তা দেখার ইচ্ছা পেশন করো কেনো??
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৭
পুনম এবার নিজেকে দমাতে না পেরে ব্যাগ থেকে কলম বের করে শেলফে রেখে লিখতে শুরু করে
— কোনো কৌতূহল না যাষ্ট দেখার ইচ্ছা কে এতো মধুর স্বরে গানটা গাইল।