পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৯

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৯
সাদিয়া আক্তার

ক‍্যানটিনে বসে আছে পুনম পাশে মিহি বসে এদিক ওদিক দেখছে তবে পুনম মাথা নিচু করে বসে আছে। তাকে অবশ‍্য রিশান বসিয়ে দিয়ে গেছে বলে গেছে তাদের জন‍্য খাবার আনতে গেছে এর মধ‍্যেই কোথা থেকে একঝাঁক মেয়েদের দল এসে পুনম মিহির সামনে দাড়ায়।
— এই তোমাদের মধ‍্যে চন্দ্র ভাইয়ের আত্মীয় কে??
মেয়েটির কথা শুনে মাথা উচু করে পুনম। পুনম মিহি একে অপরের দিকে তাকায়
— কি হলো বলছো না কেনো?? সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি,,, বলে টেবিলে চাপর দিতে পুনম শান্ত স্বরে বলল — আমি,, আমি চন্দ্র ভাইয়ের আত্মীয়,, কেনো কী প্রয়োজন আপনার??
মেয়েটার গলার স্বর হঠাৎই যেনো চেঞ্জ হয়ে গেলো মধুর কন্ঠে বলল — তুমি কি হও চন্দ্র ভাইয়ের??
— বোন আইমিন চাচাতো বোন

মেয়েটি খুশী হলো। হাসি মুখেই বলল — তাহলে তো তোমরা চন্দ্র ভাইয়ের ব‍্যপারে এ ঠু জেড সবই জানো তাইনা।।
মাথা নাড়ে পুনম হ‍্যা জানে। মেয়েটি যেনো আরো খুশী হলো গদগদ স্বরেই বলল — তোমরা চন্দ্র ভাইয়ের বউকে আমাকে একটু দেখাতে পারবা??
পুনম মিহি মেয়েটির কথা শুনে টুকুর টুকুর চোখে তাকিয়ে রইল। কি বলে এই মেয়ে চন্দ্র ভাইয়ের বউ আর তারা জানে না। তাহলে কি সত‍্যিই চন্দ্র ভাইয়ের স্পেশাল কেউ আছে ভেবেই কপাল খানা কুচকে গেলো পুনমের।
— কি হলো তোমরা ওকে একবার ক‍্যাম্পাসে আনতে পারবা?? যাষ্ট একবার দেখব কার জন‍্য আমার প্রোপোজাল রিজেক্ট করেছে,,,,
— আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে এতো কেনো কিউরিসিটি তোমার এলিনা??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পিছন থেকে চন্দ্রের কথায় এলিনা ভরকে গেলো। এলিনা সেই মেয়ে যে ভরা ক‍্যাম্পাসে চন্দ্রকে প্রোপোজ করার মত সাহস দেখিয়েছে। অথচ ভার্সিটির একেকটা বেঞ্চ পযর্ন্ত জানে চন্দ্র নিজের পাশে কোনো মেয়ে সহ‍্য করতে পারে না।
সামনে ফিরে এলিনা জোর করে হাসি টানল ঠোঁটের কোণে। এতেও যেনো মেয়েটাকে চমৎকার লাগল
— কি হলো বললে না তো এতো কেনো কৌতূহল আমার প্রতি,,,,??
— যাকে ভালোবাসি তার প্রতি কৌতূহল থাকবে না। কে সেই মেয়ে যার জন‍্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করেছ তাকে দেখার ইচ্ছা পেশন করতেই পারি আমি,,,,
মাথা নাড়ে চন্দ্র — থাকতেই পারে তবে আমি কৌতূহল জিনিসটা বড্ড অপছন্দ করি। ইভেন আমার লাইফে তিন নারী ছাড়া কারো আগমন আমি পছন্দ করি না তাহলে আমার পছন্দের দিকটাও খেয়াল রাখা উচিৎ। আর যদি না রাখো কিভাবে খেয়াল রাখতে হয় তা এই চন্দ্রের বেশ ভালোভাবে জানা আছে
বলেই ঘাড় বাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে পুনমের দিকে তাকায়। পুনম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এলিনার দিকে এতো সুন্দরী মেয়েও চন্দ্রের কাছে পাত্তা পায়নি তাহলে চন্দ্র ভাইয়ের পছন্দের মেয়েটা নিশ্চয়ই আগুন সুন্দরী।।
— খাবার গুলো দ্রুত শেষ করে চল,,

চন্দ্রের ডাকে ধ‍্যান ভাঙে পুনমের। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এলিনা নামক মেয়েটা চলে গেছে। নিজের ভাবনায় এতোটাই বিভোর ছিল যে মেয়েটা কখন চলে গেছে খেয়াল করল না।।
খাওয়া শুরু করল পুনম মিহিও পাশে বসে নিঃশব্দে খাচ্ছে তার পাশে শিহাব শিহাবের পাশে রিশান তার পাশে চন্দ্র চন্দ্রের পাশে পুনম। পুনম পাশে ফিরে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — চন্দ্র ভাই ভাবীকে বাসায় কবে আনবেন??
পানি খাচ্ছিল রিশান ফিক করে সব পানি শিহাবের গায়ে পরল। সাথে সাথে কাশিও উঠে গেলো। রিশানের দিকে তাকিয়ে আবার চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — বিয়ে করলেন একটাবার আমাদের কাউকে জানালেন না এটা কি ঠিক??
রিশানের কাশি বন্ধ তিনজনই পুনম ও চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে চন্দ্র নিজের ফোনে কমেন্টের রিপলাই দিতে ব‍্যস্ত।

— আচ্ছা ভাবি কি আমাদের ভার্সিটির কেউ??
মোবাইল খানা পকেটে পুরে চন্দ্র জবাব দিল — হ‍্যা,,
— স‍ত‍্যিই কে,,
— আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ তার জন‍্য একরাশ ভালোবাসা গচ্ছিত হৃদয় এবং চোখের সামনে আনাচে কানাচে শুধু সেই,,,
বোকা পুনম আশেপাশে খুজল। চন্দ্রের নজর অনুসরণ করেও খুজল কাউকে পেলো না।
— কই কাউকেই তো পেলাম না,,,
— না পেলে নাই আমিও বললাম না বলেই সেখান থেকে চলে গেলো। আর পুনম নাক কুচকে চন্দ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল
— ব‍্যাটা তিতা করলা বলবিনা তাহলে এতো ভনিতা করার কি দরকার। ফাজিল কোহানকার,,

সন্ধ্যা সাতটা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চন্দ্র বাড়িতে ঢুকল,,,
নিচে কেউ নেই মিনু রান্নাঘরে আছে শুধু সে ছুটিতে ছিলো আজই এসেছে।।
পুনম বইয়ে মুখ গুজে আছে মুক্তি ফোন চালাচ্ছে। হঠাৎই পুনম বলল — জানো আপু চন্দ্র ভাই বিয়ে করে ফেলেছে,,,,
পুনমের কথাটা কর্নে যেতেই জোরেশোরেই ভিসম খেলো মুক্তি। বলে কি পুনম চন্দ্র ভাই আবার বিয়ে
বহু কষ্টে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে মুক্তি
— এসব কি বলছিস তুই কোথা থেকে শুনেছিস??
— আরে হ‍্যা আজকে ভার্সিটির একটু আপু চন্দ্র ভাইয়ের বউয়ের কথা জিজ্ঞাসা করল প্রথমে আমি মানতেই পারিনি পরে চন্দ্র ভাইকে জিজ্ঞাসা করতেই সেও সম্মতি জানাল,,,

পুনমের কথা শেষ হতে না হতেই হায় হায় করে ওঠে মুক্তি একি শুনল সে। সারাবছর এক রকম স্বপ্ন দেখিয়ে এখন সব ভাঙচুর করে দিল। দাড়িয়ে বলল — দাড়া আমি এক্ষুনি ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করছি
— হ‍্যা হ‍্যা চলো আমিও আসছি,,,
বলেই মুক্তির পিছু পিছু যায়। চন্দ্র বৃষ্টির এসেছে মাথায় বৃষ্টির পানি পরেছে বিধায় গোসল করে বের হলো টিশার্ট শরীরে চাপিয়ে ট্রাউজারে হাত দিতেই ধপাধপ শব্দ হতে লাগল।
বেশ বিরক্ত হলো চন্দ্র ট্রাউজার পরে নিয়ে গেট খুলে মুক্তিকে দিলো জোরে এক ধমক। ধমকের চোটে বাঘীনি মুক্তি চুপসে বিড়াল হয়ে গেছে চিউচিউ করে বলল — ভাইয়া এটা কি ঠিক করলা তুমি সারাবছর একজনকে ভাবী বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে বসে আছো।। বিয়ে আমরা কিছুতেই মানি না মানব না তুমি লাগলে আমাদের পছন্দ মতোই বিয়ে করে আবার তাও ওকেই বিয়ে করা লাগবে,,,,
এই ওসময়ে মুক্তির প‍্যানপ‍্যানানি বিরক্ত লাগল চন্দ্রের তবুও বিরক্ত চেপে কোণা চোখে পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — বিয়ে যাকে করার কথা তার কথাই বলেছি তবে কিছু কিছু মানুষ এতোটাই বেকুব যে সব কিছু ধারনাও করতে পারে না।

মুক্তি একবার পুনমের দিকে তাকিয়ে আবার চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখ এই মেয়ে এখনো কিছু বুঝে নাই। মাথা নাড়িয়ে পুনমকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় মুক্তি। চন্দ্র দরজায় হ‍্যালান দিয়ে তাদের যাওয়া দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল বিড়বিড় করে বলল
— এই ছয়টা মাস যে কবে শেষ হবে,, কবে তুমি আমার বুকে থাকবে জোহরা। তুমি বিহীন চন্দ্র বিলীন।
ঘুমানো প্রস্ততি নিচ্ছে পুনম। বিছানা ঝেড়ে মশারি টানিয়ে সাইড গুলো গুজে দাড়াতে পুনমের পিঠে একটা কিছু বারি খেল। পুনম দেখল সেই সকালের মতো একটা বল আকারে মুড়ানো পেপার। হাত বাড়িয়ে সেটা উঠিয়ে নিলো।
— এই মেয়ে এতো বোকা কেনো তুমি তোমার সামনে বসেই তোমাকে কেউ আগাগোড়া স্ক‍্যান করে তুমি টের পাওনা এতোটা বোকা হয়না জোহরা বেশী করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেতো।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৮

পুনম অবাক আবার সকালের মতো চিঠি পেয়ে দৌড়ে বারান্দায় যায় নিচে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে পায়না আবার ফিরে আসতে নিলে আরেকটা কাগজ এসে পরে। পুনম খুলে দেখে সেখানে লিখা
— শোনো মেয়ে আমাকে এতো খুজতে যেয়ো না পরে আমাতে নিজেকে হারিয়ে ফেললে আর পাবে না আমি কিন্তু মানুষ ভালো না,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩০