পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪০
সাদিয়া আক্তার
চন্দ্রের ঘরের বারান্দা দিয়ে চিকন একজনের যাওয়ার মতো একটা সিড়ি আছে যেটা ছাদে চিলেকোঠার পিছনের গেইটে যায়।
চন্দ্র চিলেকোঠার ঘরে বসে কাউচে শুয়ে দুই হাত মাথার পিছনে দিয়ে। এলোমেলো ভাবনায় বিভোর। পুনম তো এতোক্ষণে বিয়ের খবর জেনে গিয়েছে সে না করেছে নাকি হ্যা কিছুই বুঝতে পারছে না চন্দ্র। মাষ্টার্সের লাষ্ট পরীক্ষা দিয়েছে গত চারদিন আগে রেজাল্ট দিলেই ইনশাআল্লাহ জাবিতেই সহকারী প্রফেসর হিসেবে জয়্যেন করবে। তাই চন্দ্র চেয়েছে বিয়েটা কিছু দিনের মধ্যেই হোক আর তার জন্যে এটা জানারও জরুরি ছিলো পুনম কি সত্যি শের “এ আলী সাহেবকে ভালোবাসে কি না??
চন্দ্রের জন্য এটা জানা খুব জরুরী যে পুনম তাকে কতটুকু ভালোবাসে কারণ যখন পুনমের সামনে সত্যিটা আসবে তখন তাকে চন্দ্রের কন্ট্রোল করতে সুবিধা হবে। কারণ ভালোবাসায় অভিমান থাকে ঘৃণা না।
আর চন্দ্র খুব তার অভিমানিতার অভিমান ভাঙ্গাতে পারবে।
আস্তে ধীরে পূর্বর পাশ থেকে উঠল পুনম। মাঝে পূর্ব অপর পাশে মুক্তি। আজ মুক্তি পুনমের সাথেই শুয়েছে তার ভয় হয়েছে পুনমের জন্য। পুনম একজন প্রেমিকা আর প্রেমিকারা সবকিছু করতে পারে। একজন প্রেমিকা কোনো কিছুর পরোয়া করে না না বাবা মায়ের মান সম্মান না সংসার। যদি পুনম পালিয়ে যায় তাই তাকে পাহারা দিতেই আজ তার সাথে শুয়েছে মুক্তি।
পুনম ধীর পায়ে উঠে বীনা শব্দে দরজা খুলে বের হয় পুনম বের হতেই মুক্তি চোখ খুলে পুনমের পিছু নেয়। পুনমকে চন্দ্রের ঘরের দিকে যেতে দেখে অবাক হয় তবে পুনমকে ঘরে না ঢুকতে দেখে মাঝপথে থেমে যায় মুক্তি।
চন্দ্রের ঘরের দরজা লক দেখে হতাশ হয় পুনম পরোক্ষণেই মনে হয় চন্দ্র বাসা ছাড়া কোথাও থাকে না। আর বাসায় থাকলে নিজের ঘরে না থাকলেও চিলেকোঠায় অবশ্যই থাকবে। তাই পুনম ছাদের দিকে রওনা দেয়। মুক্তি পুনমকে ফিরে আসতে দেখে ঘরে ঢুকে যায় পুনমকে ঘরে ঢুকতে না দেখে ফের বের হয়। দেখে পুনম ছাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সেও পুনমের পিছু নেয়
ছাদে চিলেকোঠার ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে পুনম ভেতর থেকে দরজা লক না থাকলেও চাপানো দরজা। পুনম টোকা দেয়
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— চন্দ্র ভাই ঘুমিয়ে গেছেন??
ঘুমায়নি চন্দ্র ক্লান্তিতে চোখ মুদে ছিলো তা উধাও হলো পুনমের ডাকে। প্রতিদিন রাত জেগে পুনমের সাথে কথা বলার অভ্যাস দারুন এখানো ঘুম আসছে না। আবারও পুনম নক করলে চন্দ্র উঠে দরজা খুলে
পুনম চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। এই লোকটা সাথে তার কোনোকালে সখ্যতা ছিলো না সদা ভাই হিসেবে সম্মান করত তাকে কিভাবে,,, আর ভাবতে পারছে না পুনম।
— কিছু বলবি
শান্ত স্বর চন্দ্রের নেত্র জোড়া গভীর জোহরার পানে।
— হহ্যা
থামে পুনম মনে সাহস জোগান দেয়। মাথা নিচু করেই বলে — আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না চন্দ্র ভাই
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকিয়ে শান্ত মুখস্রী তবে মনে মনে কিছু শোনার আশায়। তবে পুনম তাকে নিরাস করে না আজ
— ভার্সিটির প্রথম দিনেই চিঠি পেয়েছিলাম একটা। ধীরে ধীরে চিঠি আদান প্রদান বাড়তে থাকে,,,
পুনমকে বলতে না দিয়ে চন্দ্রই বলল — সেখান থেকে বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব থেকে প্রেম কি তাইতো??
পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকায় চন্দ্রের দিকে সেই দৃষ্টি পাত্তা দিলো না চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল — তো এখন কি করতে পারি আমি???
— আপনার সাথে আমার কোনো ভাবেই যায়না। আর আমি এতোদিন আপনাকে ভাইয়ের নজরে দেখেছি,,
— এখন হবু স্বামীর নজরে দেখ বিয়ের পরে স্বামীর নজরে দেখবি। আমিও বউ বউ নজরেই দেখা শুরু করি তাহলে
কটমট করে উঠল পুনম চিল্লিয়ে কিছু বলতে চাইলেও থেমে যায়।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পুনম মনে মনে নিজেকে শান্তনা দেয় — বি কুল পুনম এই ঘাড় ত্যাড়ার সাথে ঘাউড়ামি করে লাভ নেই তাকে নিজের অনুভূতি বুঝা।
ফের চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলে — হ্যা তাই আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না আর যদি বিয়ে করেন তাহলে বাসর রাতেই আপনার গলায় ছুরি চালিয়ে ডিবোর্স পেপারে সাইন করাব।
পুনমের কথায় চন্দ্র ঠোট চেপে ডান ভ্রু উচু করে। পুনমের হাত ধরে তাকে ঘরে নিয়ে যায় কিচেন থেকে একটা ছোট্ট নাইফ নেয়। পুনমের হাতে দিয়ে বলে — ডেমো দেখা,,,,
মুখ খানা চুপসে গেলো পুনমের সে ছুরি বিছানায় ছুড়ে ফেলে বের হতে হতে বলল — আপনার গলায় ছুরি না ধরতে পারলে কি হবে পালিয়ে তো যেতে পারব।
পিছন থেকে চন্দ্রও বাকা স্বরে বলল — সেটার ডেমো দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
রাগে দুঃখে পুনমের এখন কাদতে মন চাইছে। তাও আবার মাথার চুল ছিড়ে। সকল রাগ গিয়ে পরল চন্দ্রের উপর ধপ করে অর্ধেক সিড়িতে বসে কান্না করে দেয়।
— শা*লার চাচাতো ভাই তুমি তোমার চাচাতো বোনের দুঃখ বুঝ না। তাকে বোন বোন নজরে না দেখে বউ বউ নজরে দেখার কি দরকার। ফাউল মার্কা লোক।
বিড়বিড় করে চন্দ্রকে গালি দিয়ে কেদেঁ চলেছে। মুক্তি অনেক্ষণ আগেই ঘরে চলে গেছে।।
বিয়ের আমেজ শুরু হয়েছে সকাল থেকেই। সকাল সকাল সবাই এসে হাজির হয়েছে পুনমের ফুপুরা রুপশা লিমন। ছোট চাচারা মুক্তির শশুর বাড়িতেও দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তারা কাল সন্ধ্যায় হলুদের সময় আসবে।
হলুদের অনুষ্ঠান বাড়ির পিছনে লনে করা হবে আর বিয়ে হবে হাউজিং ক্লাবে। সেভাবেই সব সেট করেছে রিশান শিহাব। তারাই তোড়জোড় করে সব আয়োজন করছে চন্দ্র এসবের ধারে কাছেও নাই সে আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে চিলেকোঠায়। অপর দিকে নিঝুম রিমি রুপশা সকলে পুনমের ঘরে হামলা দেয়। বেশ রাত করে ঘুমানোর ফলে গভীর ঘুমে পুনম ঝিনুক কানের পাশে পু করে বাশি বাজাতেই পুনম ধরপরিয়ে উঠল।
ঝিনুককে দেখে মুখ গোমড়া করল এই প্রথম সবার আগমনে নাখোশ পুনম তবে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। কাকে বলবে যে তাকে সবচেয়ে বেশী বুঝত সেই তাকে বুঝে নাই আর তার ভাই তো আরেক কাঠি উপরে। পালিয়ে যাবে সেটার ডেমো দেখবে ঐ লোক।
নাক মুখ কুচকে ওয়াশরুমে চলে যায় পুনম। রিমি ঝিনুক হা হয়ে তাকিয়ে থাকে
— একি হলো রুপশা আপু পুনম এমন ইগনোর করল ক্যান
— আরে লজ্জা পাইছে,, জানিসই তো ও কেমন নাজুক,,;
সবাই বিশ্বাস করে মুক্তির কথা। চলতে থাকে আরো বিভিন্ন
আলাপ বিকালে হলুদের জন্য মুক্তি কি কি ড্রেস এনেছে কে কিভাবে সাজবে। আবার চলে গেলো মুক্তির ঘরে ড্রেস দেখতে।।।
পুনম ফ্রেশ হয়ে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার কোনো কিছুই ভালো লাগছে না আচ্ছা পুনম তো এখনো আব্বুকে কিছুই বলেনি একবার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখবে।
ভেবেই ঘর থেকে বের হয়ে পারভেজ সাহেবের ঘরে যায়। পারভেজ সাহেব ঘরে টাকা নিতে এসেছিল।
ভাগ্য ভালো থাকায় পুনম বাবা মাকে একাই পায়।।
— আসব আব্বু,,
— আসেন আম্মাজান বাবার ঘরের পথ তো এখন ভুলেই গেছেন।
— কে বলল কাল সকালেও তো তোমাকে জৈন ভিজানো পানি দিয়ে গেলাম।
পারভেজ সাহেব জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল — উই ভুলে গেছি।
পুনম আজ আর হাসল না। ধীর পায়ে আব্বু আম্মুর সামনে দাড়ায়। পারভেজ সাহেব ও রোজিনা বেগম একে অপরের দিকে তাকায়। আবার পুনমের দিকে তাকিয়ে পারভেজ সাহেব জিজ্ঞাসা করেন — কিছু বলবেন আম্মাজান??
মাথা নাড়ে পুনম ঢোক গিলে বলে — আমি এই বিয়ে করতে পারব না
পুনমের কথায় পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগম হতবাক। — কি বলছিস মাথা খারাপ সব আয়োজন শেষ লোকজন আসা শুরু হয়েছে। কোথায় দাড়াবে তোর আব্বুর মান ভেবে দেখেছিস।
ডুকরে কেদেঁ উঠল পুনম। রোজিনা বেগম কিছু বলতে নিলে তাকে থামায় পারভেজ সাহেব।
পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে — আমি আরো একবছর আগে তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার জীবনের এই ইম্পরট্যান্ট ডিসিশনটা আমি নিতে পারি কিনা তুমি সেদিন নির্ধিদায় বলেছিলা আমি তোমার জন্য যাকে পছন্দ করব তুমি তাকেই বিয়ে করবে তাহলে আজ এই কথা ক্যান??
গম্ভীর স্বর পারভেজ সাহেবের তবে আজ কেমন তীক্ষ্ম কথাগুলো। তা মনে হতে কেপে উঠল পুনম এটা কিভাবে ভুলে গেলো পুনম। সেতো সেদিন তার বাবাকে কথা দিয়েছিল তার পছন্দ ছেলেকেই সে বিয়ে করবে। এখন এখন কোথায় যাবে পুনম। তবে পারভেজ সাহেবের কথায় আশার আলো জাগে পুনমের মনে
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৯
— আমার কাছে আমার মেয়ের ভালো থাকাটাই আসল। আজ হলুদের দিন থেকে কাল সকাল এগারোটা পযর্ন্ত তোমার সময় আছে এরমধ্যেই বিয়ে ভাঙ্গার কারণ উপস্থিত করবে। আর যদি না পারো তাহলে চন্দ্রকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তত থাকবে।
বলেই পারভেজ সাহেব চলে যায়। পুনম হাটু ভেঙ্গে বসে কেদেঁ দেয়। এখন সে কি করবে ভেবে পায়না।।
তার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।