পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৩

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৩
সাদিয়া আক্তার

বিয়ের সকল কার্যক্রম শেষ। আপাতত সকলে মিলে মালা বদল ও আয়না দেখার আয়োজন করেছে। মালা বদলের জন‍্য যখন চন্দ্রর সামনে পুনমকে দাড় করানো হলো সামনাসামনি পুনম ঠিক চন্দ্রের বুক সমান তা দেখে চন্দ্র বিড়বিড় করে বলল — বুক পকেটের জোহরা,,,,
— আগে চন্দ্র ভাই মালা পড়াবে,, ঝিনুক রিমি চিল্লিয়ে বলল।
সেই অনুযায়ী চন্দ্র পিঙ্ক গোলাপ ও মতি গাথায় মালা থালা থেকে উঠিয়ে পুনমের গলায় দেয়। সাথে সাথে করতালির আওয়াজ ভেসে আসে এবার পুনমের পালা পুনম নিচে তাকিয়ে আছে নিজের লেহেঙ্গা খামচে ধরে।
— পুনম ভাইয়াকে মালা পরা,,, মুক্তি কানে ফিসফিসিয়ে বললে পুনম মাথা উঠিয়ে মুক্তির দিকে একপলক তাকিয়ে মালা নিয়ে পড়িয়ে দেয় চন্দ্রর গলায়। সাথে সাথে আবার করতালির আওয়াজ ভেসে আসে সকলের অগোচরে রিশান ঝিনুকের কানে কান বলল — কবে আইব আমার পালারে কবে দিমু গলায় মালারে,,

— সাবার কারিয়ে জনাব
ঝিনুকের কথা শুনে রিশান মুখ ভেঙচি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল — এই সাবার করতে করতে তো আমার জাওয়ানি খতম,,,,
তাদের কথোপকথন ব‍্যাঘাত ঘটে আয়না দেখার পালায়। এবার চন্দ্র ও পুনমকে পাশাপাপাশি বসিয়ে আয়না সামনে ধরে চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করল — আয়নায় কাকে দেখতে পায় জামাই ভাইয়া,,,
— আমার জোহরা
কথাটা পুনমের কর্ণপাত হতেই অবাক দৃষ্টিতে চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র সেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে পারে না এবার পুনমকে জিজ্ঞাসা করলে পুনম বিড়বিড়িয়ে বলল — একজন সুস্রি ধোকাবাজ
কথাটা সকলের কানে না পৌছালেও চন্দ্রর কানে ঠিকই পৌঁছে যায়। মনে মনে ভয় পায় ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড়ের আগে যেমন গোটা ধরনী শান্ত থাকে তেমনি পুনম শান্ত।।
দূর থেকে একজন ছলছল চোখে পুনম ও চন্দ্রের দিকে তাকায়

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

— কি দেখছিস ভাই?? ভুলে যা মেয়েটা বিবাহিত।।
— জীবনে এই প্রথম কাউকে দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল ইহান সে এতো সহজে মন মস্তিষ্ক থেকে যাবে না।
ইহান কাইফির কাধ চাপড়ায়। দুই ভাই একে অপরকে দেখে মুচকি হাসে।।
সকল কার্যকারিতা শেষ এখন বিদায়ের পালা। যেহুতু একই বাড়ীতে যাবে কোনো ঝুট ঝামেলা নেই তবুও পারভেজ সাহেব বাবা হিসেবে পুনমকে চন্দ্রর হাতে তুলে দিবেন।
পুনমের হাত ধরে চন্দ্রের হাতে দিয়ে বলে — বাবা হিসেবে এটুকুই বলব যদি কখনো বোঝা মনে হয় অবহেলা না করে আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিস আব্বা,,,
চন্দ্র পুনমের হাতটা শক্ত করে ধরে পারভেজ সাহেবকে ঝাপটে ধরে বলল — তুমি জানো মেঝ আব্বু তুমি আমাকে কি দিয়েছ ও আমার জন‍্য কি!!
মুচকি হাসে উপস্থিত সকলে তবে পুনম তাকিয়ে থাকে চন্দ্রর হাতে শক্ত করে ধরে আছে পুনমের হাতটা যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে। চন্দ্র পারভেজ সাহেবকে ছাড়তে পুনম বাবাকে ধরে কেদেঁ দিল।

— ধুর মেয়ে সেই একই বাড়িতেই তো যাবি শুধু সম্পর্ক গুলো শেষ হবে বড় চাচা থেকে শশুর আব্বা হয়েছি
পুনমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল কামরুল সাহেব। পুনম চাচাকে জড়িয়ে ধরতে নিলে চন্দ্রর ধরা হাতটা বাধা পড়ে পুনম মুচরাতে বাধন আরও শক্ত করে চন্দ্র।
— আব্বাজান হাতটা একটু ছাড়েন আপনার বউ পালিয়ে যাচ্ছে না
মিরাজ সাহেবের কথায় হাসির রোল পরল উপস্থিত সকলের মাঝে তবে বেহায়া চন্দ্রের তার কোনো ফারাক পড়ল না। লাজে রাঙ্গা হলো পুনমের আদল সেদিকে ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে থাকল চন্দ্র।।
তা দেখে আরেকদফা হাসির আওয়াজ আসল।। এই হাসি ঠাট্টার মাঝেই চন্দ্র নিজ গৃহে নিজের প্রান বধূয়া নিয়ে প্রবেশ করল।
বেলা তখন পাচঁটা বিশ নতুন বধূকে বরণ করে ঘরে তুলল চাদনী বেগম মুখে উজ্জল হাসি যেনো বহু কাঙ্খিত জিনিস আজ পেয়ে গেছে তিনি।
পুনমকে চন্দ্রের ঘরে নিয়ে যাওয়া হলে চন্দ্র ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।

— শালা বাবু হাউ ইজ দ‍্যা ফিলিং??
— কান্ট সে
— হয় হয় কাঙ্খিত জিনিস পেলে এমনি হয়!!
বলেই আরো হাসি তামাশা চলতে থাকে ড্রয়িং রুমে বসে ম‍্যানলি আলাপ করতে পারবে না ভেবেই চারজন ছাদে চলে যায়।

ফুলে ফুলে সাজানো চন্দ্রের ঘরটা সাথে আর্টিফিশিয়াল মোম।
— কি দেখছিস??
পুনম এতোক্ষণ ঘর দেখছিল। মুক্তির ডাকে ধ‍্যান ভাঙ্গে আলমারি থেকে একটা নতুন পাট ভাঙা তাতির শাড়ি দিয়ে বলল — লেহেঙ্গা পাল্টে ফ্রেশ হয়ে আয় জানি এতে তোর অস্বস্তি হচ্ছে,,,
পুনম কিছু না বলে শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। এই দুইদিন শাড়িটা মোটামুটি রপ্ত করতে পেরেছে পুনম তাই আগোছালো কুচিতেই বের হয় ওয়াশরুম থেকে।
— আপু আমি আমার ঘরে যাই??
— চল
মুক্তি পুনম বের হয় ঘর থেকে পুনম নিজের ঘরে যায় আর মুক্তি নিজের ঘরে। সবাই নিচে ইহানদের আপ‍্যায়নে ব‍্যস্ত পুনম নিজের ঘরে ঢুকে দেখে রিমি ঝিনুক হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।।

— তোরা একটু আপুর ঘরে যা তো,,,
— কি ইম্পরট‍্যান্ট কাজ করবে হু হু
ভ্রু নাচিয়ে ঝিনুক বলল। — একটু আগে রিশান ভাইয়াকে দেখলাম বিয়ে বাড়িতে আসা একটা মেয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলছে,,
তড়াক করে উঠে বসল ঝিনুক — কই কই শা*ল লু*চ্চা আজকে ওর খবর আছে। বলেই বেড়িয়ে গেলো।
তার পিছু পিছু রিমিও বেড়িয়ে গেলো। পুনম আলমারি খুলে চিঠির বাক্সটা নিলো। এতোদিন প্রত‍্যেকটা চিঠি পুনম সযত্নে রেখেছে আজ এগুলো পুড়াবে তবে এমন মানুষের সামনে পুড়াবে যাতে এই দগ্ধ চিঠি দেখে তার হৃদয়ে জ্বলন সৃষ্টি করে।
মেহমানরা বিদায় নিলে রাত দশটায় পুরো বাড়ি খালি হয়। পুনমকে চন্দ্রর ঘরে দিয়ে বোনেরা পাহারাদাড়ের মতো অপেক্ষা করছে চন্দ্রের।
চন্দ্র নিচে নেমে নিজের ঘরে সবাইকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে — কিরে এখানে কি সবাই??
— বোন যখন ভাবি টাকা চাওয়ার দাবি
— তোদের বংশ কি ডাকাত বংশ এভাবে আটকে টাকার দাবি করিস।
গর্জে উঠল চারবোন সাথে চন্দ্র ও — এই বংশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবি না ভুলে যাসনা ফুপীর কানে গেলে কেলিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে।

চন্দ্রের কথায় শিহাব ও রিশানের মুখটা ফুসস হয়ে যায়। চার বোনের মুখে হাসি ফুটে তারা ভাবে চন্দ্র বুঝি টাকা দিবে তবে তাদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের অন‍্য মনস্কতার সুযোগ নিয়ে চন্দ্র চট করে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়।
যতক্ষণে তারা বুঝল কি হয়েছে ততক্ষণে চন্দ্র দরজায় খিল দিয়েছে।
চারিদিকে তাকায় চন্দ্র কাঙ্খিত বধূয়াকে না দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে তাকায়।
কি মনে হতে বারান্দায় যায়। বারান্দায় দাড়িয়ে আছে পুনম সুগন্ধি ক‍্যান্ডেল দিয়ে সাজানো বারান্দায় ঘ্রাণে ভরপুর।
পুনম এলোমেলো অবস্থায় দাড়িয়ে খোলা চুল অবিনস্ত পিঠময় ছড়িয়ে আচলটাও আড়াআড়ি ভাবে কাধে ঝুলছে। ঢোক গিলল চন্দ্র বেশ মোহনীয় লাগছে পুনমকে

— পুনম
আদুরে স্বরে ডাকে পুনমকে। পিছন ফিরে পুনম ধীর স্বরে বলল — ক‍্যান আই ফিল ইয়‍্যু শের “এ আলী সাহেব
চন্দ্র ঘোর থেকেই স্বভাবসুলভ জবাব দিলো
— অবকোর্স মাই জোহরা
ঘোর ভাঙল চন্দ্রের কি বলে ফেলেছে সে। একটু আগেও চিন্তা করেছে পুনমকে এখন কিচ্ছু জানাবে না।।
ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে পুনমের বিষাদের হাসি। সেই হাসিতে থতমত খায় চন্দ্র।
— বেশ আয়োজন করেই আমাকে ধোকাটা দিলেন চন্দ্র ভাই
— পুনম আমার কথাটা শুন
— কি শুনব হ‍্যা কি শুনব কিভাবে কিভাবে ধোকা দিয়েছেন নাকি এটা শুনব আমার অনুভূতি নিয়ে এই গেমটা কেনো খেললেন।
— আমি কোনো গেম খেলিনি শুধু তোকে হাসিল করেছি বাই হুক অর বাই ক্রুক
— আমি বুঝি কোনো জড়বস্তু যা আপনি হাসিল করেছেন
— পুনম

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪২

বলেই দুই পা এগোলে পুনম চার পা পিছিয়ে যায়।
— ধরবেন না আপনি আমাকে কোনো ধোকাবাজদের স্পর্শ সহ‍্য হবে আমার। কেনো করলেন আমার সাথে এমন কেনো কেনো বলতে বলতে ঢলে পড়ল পুনম। খুব যত্ন করে তার জোহরাকে আগলে নিলো চন্দ্র।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৪