পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৫

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৫
সাদিয়া আক্তার

পুরো বাড়িতে লোকজনে ভর্তি। শিলারা মিরাজরা সবাই দুপুরের খাওয়ার পরেই চলে যায় শর্ট নোটিশে বিয়ের হওয়ার দারুন মিরাজ সাহেব ছুটি পাননি বিয়েটা শুক্রবার হওয়ায় শুধু বৃহস্পতিবারটা ছুটি ম‍্যানেজ করতে পেরেছিলেন। তাই আজ তারা চলে যাবে শিলাদের বাসা এখানে হলেও তাকে আটকে রাখে তিন ভাবী। ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত পুনমের মা চাচীরা রান্নাঘরে।
পুনম নিচে নামতেই সর্বপ্রথম কামরুল সাহেবের চোখ পড়ে তার দিকে। — ঐ তো আমার আম্মাজান এসে পড়েছে মারে আজ সকালে তোর হাতে চা জোটেনি তাই এখনো চা জোটেনি এককাপ চা দেতো।
পুনম কোনো রকম জোরপূর্বক হেসে রান্নাঘরে চলে যায়। পুনম যেতেই মিরাজ সাহেব কামরুল সাহেবকে বলল — ভাই কুছতো শরম করো,,,,

পারভেজ সাহেব গলা খাকারি দিয়ে পেপার দিয়ে মুখ ঢাকল
পুনম রান্নাঘরের সামনে ইস্তত করে দাড়িয়ে আছে। তার কেমন জানি লজ্জা লাগছে তার হঠাৎই সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেলো। চেনাজানা বাড়িতেও পুনম লজ্জা পাচ্ছে
— কিরে মা ঐদিকে দাড়িয়ে আছিস ক‍্যান আয়,,,
নিপা বেগমের কথায় পুনম এগিয়ে যায়। চাদনী বেগম বলল — কি মা এখন রান্নাঘরে কি করছিস যা তুই নতুন বউ মেহেদী যাওয়ার আগ পযর্ন্ত রান্নাঘরে আসতে পারবি না,,,
— চাচী আমি,,,
চাদনী বেগম পুনমকে বলতে না দিয়েই হায় হায় করে বলল — কি চাচী এই মেয়ে চাচী কি হ‍্যা মা ডাক
চাদনী বেগমের কথায় পুনম মাথা নাড়িয়ে বলল —

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

চা বানাই??
চাদনী বেগম জায়গা দিতে পুনম চায়ের পানি বসায়। রোজিনা বেগম কিছু বলছে না নিজের মতো কাজ করছে। পুনম মায়ের দিকে তাকায় তার কেনো জানি মনে হয় তার মা রেগে আছে।।
তার সাথে পরে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
পুনম চা নিয়ে বের হতে দেখে চন্দ্র নামছে। শিহাব রিশান হই হই করে উঠল তাকে দেখে তবে সোফায় বসা বাবাদের দেখে থেমে গেলো। রুপশা লিমন বাইরে গেছিল মাত্র ফিরল তাদের সাথে পূর্ব।
— আপু ভাইকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলে?? তখন কান্না শুনলাম
— হ‍্যা কান্না করছিল দেখেই বাইরে নিয়ে গেছিলাম।
দুই বোন ভাইকে আদর করতে থাকে।।

দুপুরে খেয়ে দেয়ে সবাই চলে যায় তবে লিমন রুপশা থাকে লিমন এখান থেকেই কাল সকালে অফিসে যাবে।।
পুনম সকাল থেকে এখন পযর্ন্ত ঘরে যায়নি। এবার বিশ্রাম নেয়ার জন‍্য তার আগের ঘরে যায় সেখানে রুপশা ও লিমনকে থাকতে দেয়া হয়েছে
— কিরে তুই এই ঘরে এই সময়??
— এমনি আপু
বলে ঘরে ঢুকতে গেলে চন্দ্রের ডাক পড়ে,,
— ঐ শালি সাহেবার ডাক পড়েছে যাও যাও,, লিমনের কথা শুনে পুনম তড়িঘড়ি করে বের হয়ে চন্দ্রকে বিড়বিড় করে বকতে বকতে মুক্তির ঘরের সামনে যায়। পরোক্ষণেই মনে পড়ে এই দুই ভাই বোনই এক ভাইয়ের ডাক শুনলে মুক্তি আপু তাকে নিশ্চিত ঘর থেকে খেদিয়ে ছাড়বে। তাই সেখানে দাড়িয়ে ছাদের দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে কেউ হাত টেনে ধরে। পিছন ফিরে দেখে চন্দ্র চেহারার রঙ উঠে যায় চন্দ্র সেদিকে পাত্তা না দিয়ে পুনমকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যায়।

— ছাড়েন ছাড়েন আমাকে যাবনা আপনার ঘরে,,
চন্দ্র পুনমের কথায় পাত্তা না দিয়ে পুনমকে ঘরে এনে দরজায় খিল দিতেই পুনম চুপ মনে পড়ে যায় সকালের কথা চন্দ্র দরজা আটকে ফাজিল হাসল। যা বুঝার বুঝে যায় পুনম চন্দ্র থেকে বাচতে দৌড়ে ওয়াশরুমে যায় দরজা আটকাতে নিলে চন্দ্র দরজা ধরে
— বাচতে পারবি জোহরা জান উহু
— ওয়াশরুম যাব
— সত্যিই তো
সন্দিহান নজর চন্দ্রর পুনম দাতে দাত চেপে বলল
— হ‍্যা
চন্দ্র গেট ছেড়ে দেয় পুনম দরজা আটকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিক করে হেসে দেয়। সকাল থেকে এই চন্দ্র ব‍্যাটাকে ভালোই জ্বালিয়েছে সে। অনেক বার ঘরে যাওয়ার জন‍্য সবার সামনেই বলেছে ইশারা ইঙ্গিত ও করেছে তবে পুনম সেদিকে পাত্তা দেয়নি চন্দ্রর যদিও লজ্জা নেই সবার সামনে থেকে নিয়ে যেতে পারতো কিন্তু নতুন জামাই হিসেবে একটু রয়েসয়ে ছিল।।
দশ মিনিট পার হওয়ার পরেও যখন পুনম বের হয় না তখন জোরে জোরে দরজা ধাক্কানো শুরু করে।
— কিরে আর কতক্ষণ??
ব‍্যগ্র কন্ঠ চন্দ্রের। পুনম আর জ্বালায় না চুপচাপ বেড়িয়ে আসে পুনম বেড়িয়ে আসতে চন্দ্র তাকে কোলে তুলে নেয় পুনম গলা জড়িয়ে ধরে না পুরো ভাড় ছেড়ে দেয়।
পুনমকে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসে নিজের বুকের সাথে মেশায় পুনম মুচড়ামুচরি করতেই চন্দ্র হাতে বাধন শক্ত করে ।

— জানি আমার উপর অভিমান করে আছিস তোর অভিমান জায়েজ আছে তবে একটাবার আমার কথাটা শোন,, ধোকা আমি তোকে দিতে চাইনি তবে আর কোনো রাস্তা ছিলো না আমার।
পুনম চুপচাপ থাকে — তোর জন‍্য পাগলামি আমার গোটা ফ‍্যামিলি জানতো এই ডুবে যাওয়া আমিটাকে তুই ছাড়া কেউ বাচাতে পারবে না। টিনএজ আঠারো বছরের ছেলেটা ভালোবাসা অনুভূতি মানেই তুই বুঝেছিল। সেই তুই যখন আমায় ইগনোর করতি।
সেটা আমায় রাগান্বিত করত না পুড়িয়ে ছাড়খার করে ফেলত।
থামল চন্দ্র পুনম মুখ উঠিয়ে চন্দ্রের দিকে তাকায়। চন্দ্র আবার বলতে শুরু করে — সবাই বলতো নামের সাথে মিলিয়েই নাকি আল্লাহ আমাকে সৌন্দর্য দান করেছে সবার কাছে বেশ পপুলার ছিলাম তাই!! তবে তুই নামক রমনীর নজরে পড়লাম না। মাঝে মাঝে বেশ বিরক্ত লাগত এই ভেবে যে। যে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না তাকে কিভাবে আমার মনের অবস্থা বুঝাব রুপশার বিয়েতে গিয়েছিলাম আমার মনে তান্ডব তোকে বুঝাতে এই আমিটাকে যাতে একটু বুঝিস তাই কিন্তু সেই সময় অনেক কান্ডে আমার রাগ উঠে তাই তোর উপর আমার রাগের বহ্নিপ্রকাশ ঘটে।

তখন থেকেই তুই আমাকে আরো ইগনোর করতি। তোর মনোভাব জানার অনেক চেষ্টা করেছি শেষে জানলাম আমার প্রতি তোর মনোভাব জিরো পার্সেন্ট। একদিন তো মুক্তি না পেরে বলে বসল তুমি একটু সেজেগুজে পুনমের সামনে থাকতে পারো না।। পরে না পেরে এই চিঠির পদ্ধতি অ‍্যাপলাই করেছি
চন্দ্র থামতেই পুনম ভ্রু কুচকে বলল — এই চিঠির পদ্ধতিটা আপনি কোথায় পেয়েছেন??
চন্দ্র হাসল — তুই দিয়েছিস,,,,
পুনম তো অবাক সে কিভাবে দিলো ফের ভ্রু কুচকে বলল — আমি কিভাবে??
— নব্বই দশকের মুভি লাভার পুনমের “সেরফ তুম” মুভি থেকেই আইডিয়াটা পেয়েছি তাতে নিজের মতো আপডেট করেছি
চোখ মেরে বলল চন্দ্র ফিক করে হেসে দিলো পুনম। সেই হাসির দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে চন্দ্র হাসতে হাসতে চন্দ্রের দিকে নজর যেতেই থেমে গেলো পুনম।
ভ্রু উচু করে জানতে চাইল কি?? উত্তরে চন্দ্র মুচকি হাসল। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকল পুনম

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৪

— আপনি এতো সুন্দর কেন??
— আমার সৌন্দর্য তাহলে এতোদিন পর বউয়ের নজরে পড়ল তাহলে,,
— হুম সৌন্দর্য মেয়েদের জন‍্য ছেলেদের এতো সুন্দর মানায় না।
— আসলেই সৌন্দর্য মেয়েদের তাইতো মায়াময় সৌন্দর্যে ডুবেছি আমি। তার গহীন চোখে ঘন পাপড়ি যুক্ত আখি জোড়ায় ডুবেছি আমি যার খিলখিল হাসিতে মরেছি আমি,,
চন্দ্রের এমন কথায় লজ্জা পায় পুনম। চন্দ্র সেই লজ্জা দেখে তর্জনী দ্বারা পুনমের চেহারা উচু করে ললাটে দীর্ঘ চুমু খায়। পুনম আবেসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবে — ইশশ এমন প্রেমিক পুরুষের উপর রেগে থাকা যায় নাকি??

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৬