পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৭
সাদিয়া আক্তার
ফজরের আজান কানে যেতেই ঘুম ভাঙে নড়াচড়া করতে যেয়েও পারে না। পিটপিট করে চোখ জোড়া খুলে দেখে চন্দ্র তার উপর সম্পূর্ণ ভাড় দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।। বলিষ্ঠ দেহী চন্দ্রকে সরাতে বেশ কসরত করতে হয় তার বাতাসী পুনমের সম্পূর্ণ গা ব্যাথা হয়ে গেছে ফ্লোরে পা দিতে গিয়ে বুঝে পা ঝিনঝিন ধরে গেছে।
কতক্ষণ থম মেরে বসে থেকে নামে — উফফ হাতি একটা পুরো শরীর ব্যাথা বানিয়ে দিয়েছে।
— এইটুকু ভাড় সামলাতে পারিস না বাকিটা কিভাবে সামলাবি
পিছন থেকে চন্দ্রের বেফাঁস কথার উত্তর না দিয়ে কাপড় নিয়ে ছুটে যায় ওয়াশরুমে। বাষি কাপড় পাল্টে অযু করে একেবারেই বের হয় চন্দ্রকে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে তার সামনে দাড়িয়ে বলল — না ঘুমিয়ে উঠেন নামাজে যান,,
— যথা আজ্ঞা জোহরা,,, ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল — একসাথেই আজ ফজরের সালাত আদায় করব ওয়েট কর।
পুনম মুচকি হেসে জায়নামাজ রেডি করে। চন্দ্রের টা আগে নিজেরটা পরে বিছিয়ে ওয়েট করে চন্দ্রের। চন্দ্র বের হতেই পুনম বলল — ইমামতি করতে হবে কিন্তু!!
উত্তরে চন্দ্র পুনমের কপালে হ্যা সূচক সম্মতি দিয়ে জায়নামাজে দাড়ায়। দুইজন একসাথে নামাজ আদায় করে — চা খাবেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— বাইরে আসছি আজকের চা আমার তরফ থেকে,,,,
পুনম মাথা নাড়িয়ে চলে যায় কাল রাতে জৈন ভিজানো পানি নিয়ে চলে যায় বাবার কাছে। যেয়ে দেখে বিছানায় পূর্ব ঘুম রোজিনা বেগম এখনো জায়নামাজে বসে।
বাবাকে না পেয়ে বিছানায় বসে পুনম কিছুক্ষণ পরেই পারভেজ সাহেব ঘরে ঢুকে।
— আসসালামু আলাইকুম আব্বু আজ এতো দেরী,,
পানির গ্লাস হাতে দিতে দিতে বলল পুনম। পারভেজ সাহেব পানি তিন ঢোকে পান করে সালামের জবাব দিয়ে বলল — ভাইজানের সাথে একটু হাটতে গিয়েছিলাম
পারভেজ সাহেব পুনমের কপালে চুমু দিয়ে বলল
— আম্মাজান কি বাবার উপরে রাগ,,
অবাক হয় পুনম — কেনো আব্বু??
— চন্দ্রের সাথে বিয়ের ব্যাপারে,,
পুনম আমতা আমতা করে মাথা নিচু করে চন্দ্রের কুকীর্তী জানায়। পারভেজ সাহেব উচ্চস্বরে হেসে ওঠে রোজিনা বেগম হতভম্ব ছেলেটা কি পাজি আবার এটাও ভাবে কতটা ভালোবাসলে এতোটা ধৈর্য্য ধরা সম্ভব। মনে মনে চন্দ্রের ভালোবাসার উপর পুলকিত হলো রোজিনা বেগম।
বাবার উচ্চস্বরে হাসি শুনেই পুনম লজ্জা পায় লাজ রাঙা আদলে সেখান থেকে প্রস্থান করে।।
পুনম নিচে নেমে রান্নাঘরে উকি মেরে দেখে চন্দ্র ব্যস্ত হাতে চন্দ্র ব্রেডে মেয়োনিজ লাগাচ্ছে। ঢুকতে গেলেও মা চাচীকে আসতে দেখে সেদিকে যায় না মুক্তির পাশে বসে আজ সবাই লনে চা খেতে খেতে সূর্য উদয় দেখবে সেটাই ঠিক করে।
লনে একটা ট্রেতে করে চা আর কিছু স্যান্ডউইচ বানিয়ে মিনি সহ নিয়ে আসে। মিনি নাক কুচকে চন্দ্রের পিছনে পিছনে আসে রেনু উঠেনি সে এতো সকালে উঠে না।
টেবিলে ট্রে রেখে মিনু পুনমের পাশে নিচে বসে।
— এই মিনু উপরে বস
বলেই পুনম মিনুকে উপরে বসায়। মিনু পুনমের কথায় বেশ খুশী পুনমের কানে কানে বলল
— আফামনি আমনে এই খ্যাক খ্যাক করা বেডার লগে থায়েন কেমনে,, আমারে ঘুম থাইকা উঠাইছে মনে হয় কথা দিয়া ঠাসস কইরা একটা বাড়ি মারছে,,
মিনুর কথায় পুনম ফিক করে হেসে চন্দ্রের দিকে তাকায় চন্দ্র পুনমকে চোখ মেরে চুমু ইশারা করে। নিজের চায়ের কাপে চুমুক দেয়। কাশি উঠে যায় পুনম চন্দ্র এমন বিহেব করে যেনো কিছুই হয়নি।। সকলে তড়িঘড়ি করে পুনমের কাছে আসে।।
— সাট সাট,, আফা নিঃশ্বাস নেন।। পুনমের মাথায় ফু দিয়ে মিনু বিড়বিড় করে বলল — শয়তান বেডা হের লাইগা আমার বালা আফাডায় একটু শান্তিও পায় না।
কামরুল সাহেব পুনমকে পানি দিতে পুনম থামে। পুনম থামে দেখে চন্দ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনমের পাশ থেকে সরে।
পুনম আজ ভার্সিটি যাবে। তাই ব্রেকফাস্ট করার পরপরই রেডি হতে ঘরে যায় চন্দ্র একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে তাই উপরে উঠার দরকার নেই তবুও পুনমকে ঘরে যেতে দেখে নিজেও পুনমের পিছে সুরসুর করে চলে যায়।
ঘরে ঢুকে দেখে পুনম হিজাবের পিন লাগাচ্ছে।
— এই কি ফ্রক ট্রক পড়েছিস,, তুই যে বিবাহিত মহিলা ভুলে গেছিস,,
চন্দ্রের আকস্মিক অ্যাটাকে ভরকে যায় পুনম। অনেক প্রায় চারদিন পর এমন গম্ভীর চন্দ্রকে দেখে ঢোক গিলল পুনম
— ততো শাড়ি পড়ে ভার্সিটি গেলে কেমন দেখাবে না,,,, কন্ঠে জোর এনে বলল — আর শাড়ি পরেই বা যাব কেনো শাড়ি পরি কামিজ পরি আমি যে বিবাহিত তার সিলমোহর সাথে আছে
বলে হাত উচু করে হাতে চিকন চুরি ও নাকের দিকে ইশারা করে নাকফুলের দিকে দেখায়।। চন্দ্র তৎক্ষণাৎ পুনমের কোমর পেচিয়ে নিজের কাছে অনেক হাস্কি ভয়েজে বলে — আমার নামের আরেকটি সিলমোহর তাহলে সাথে করে নিয়ে যা,,,, চন্দ্র পুনমের দিকে এগিয়ে যেতে পিছিয়ে যায় পুনম দাত কিড়মিড় করে চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলে — রোমান্সে ডিস্টার্ব করবিনা একদম,,
— আপনার যখন তখন শুরু হয় যায়। আমার যে ভার্সিটি ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে সেটা সরেন এখন কিচ্ছু না
— ওওও জোহরা বিবি,, একটা দিতে দাও
— উহু না
বলেই দ্রুত ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। চন্দ্র রাগী মুড নিয়ে বের হয়। পুনমের দিকে একবার তাকিয়ে গ্যারাজ থেকে বাইক বের করতে চলে যায়।
পুনম মিটিমিটি হাসে। চন্দ্র বাইক এনে সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠতে পুনম দূরত্ব বজায় রেখে উঠে বসে
— আমি কি পরপুরুষ যে দশ মাইল দূরে বসেছিস,,
পুনম এবার চন্দ্রর কাধে হাত রেখে বলল — এর বেশী পারব না,,,
চন্দ্র কথা না বাড়িয়ে টান দেয় বাইকে। পুনমকে নামিয়ে দেয় ভার্সিটির গেইটে যেখানে মিহি আগে থেকেই দাড়িয়ে ছিল
— খেয়াল রেখো বোন
— আচ্ছা ভাইয়া আপনি টেনশন করবেন না,,
চন্দ্র এবার পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — কোনো সমস্যা হলেই আমাকে কল করবে
পুনম মাথা নাড়িয়ে মিহিকে নিয়ে চলে যায়। চন্দ্র চলে যায় ক্যাম্পাসের অন্য দিকে শিহাব ও রিশানকে কল করে ডেকে আনে।। একেবারে পুনমকে নিয়েই ফিরবে!!
পুনম মিহি নির্ধারিত স্থানে বসতেই তাদের পাশে বসা মেয়েটি পুনমকে দেখে বলল — ও মাই গড পুনম তুমি বিয়ে করে ফেলেছো,,,
পুনম মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। — তা কে সে এক্ষুনি বরের ছবি দেখাও আর আমরা কেউ দাওয়াত ও পেলাম না,,;
— ঘরোয়া ভাবে হয়েছে ইনশাআল্লাহ রিসিপশনে দাওয়াত পাবে,,
বরের ছবির কথাটা এড়িয়ে অন্য কথা উঠায় পুনম। এমন ভার্সটির কাউকে না জানানোর মনোভাব করে। এরমধ্যেই প্রবেশ করে বতর্মান ফ্যাকল্টি হেড নাওয়াজ শেখ।
পুরো ক্লাস পিনপতন নিরবতায় ডুবে যায়। রোল কল করে পুনমের নাম ডাকতেই সে প্রেজেন্ট করে
— আপনি গত দুই দিন ক্লাসে অনুপস্থিত ছিলেন হোয়াই??
— স্যার হঠাৎই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তাই,,,
আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল — লিভ অ্যাপলিকেশন দিয়ে যাবেন।
পুনম মাথা নেড়ে বসে পড়ে স্যার রোল ডাকা শেষে পড়ানো শুরু করে। পরপর চারটা ক্লাস শেষে পুনমরা বের হয় ক্লাস থেকে তখনই চন্দ্র কল করে পুনমকে — আর ক্লাস করা লাগবে না এর পরের ক্লাস গুলো অতটা জরুরী না চলে আয় গেইটের সামনে বাসায় যাবি।।
পুনম ও সুবোধ বালিকার মতো চলে যায় মিহির থেকে বিদায় নিয়ে। পুনমকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চন্দ্র চলে যায় কোচিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে। পুনম ঘরে গিয়ে আগে ঢোকে ওয়াশরুমে গোসল সেরেই বের হয়।
দুপুরে চন্দ্র বাসায় আসবেনা তাই মা চাচীদের সাথে খেয়ে পূর্বকে নিজের কাছে রাখে মুক্তি কলেজের থেকে এখানো আসেনি বেলা গেছে স্কুলে সেখান থেকে ট্রান্সফার নিবে ততদিন সেখানেই থাকবে শুধু উইকেন্ডে এখানে আসবে।।
পুনম পূর্বর সাথে খেলতে শুরু করে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ে। পুনমও তার পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। পুনমের ঘুম ভাঙ্গে নিঃশ্বাস না নিতে পেরে।
ঘুমের ঘোরে নিঃশ্বাসের ঘাটতি হওয়ায় হাত পা ছুটাছুটি করে চন্দ্র হাত একসাথে করে উপর পিন করে। পুনম চোখ মেলে দেখে মোহগ্রস্থ চন্দ্র যখন ডুবে আছে তা জোহরার নেশায়
অপর পাশ থেকেও সমান তালে তাল মেলাচ্ছে পুনম।
তখনই পূর্বের চিৎকার কানে যায়। পুনমের ঘোর ভাঙে নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারে না পূর্বের চিৎকার জোরালো হলে পুনম মুখ ঘুড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলল — পূর্ব কাদছে
— পূর্ব নেই এখানে
বলেই বিনা নোটিশে আবারও অ্যাটাক করে পুনমের অধরে। পুনম আবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে — পূর্ব কাদছে দদেখে আসি,,,
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৬
বলেই চন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো। পুনমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চন্দ্র বিড়বিড় করে বলল — ছ্যাহ এই চাচাতো ভাই শালা এতোদিন প্রেমে ব্যাঘাত দিতো এখন রোমান্সেও ব্যাঘাত দেয়।।