পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৪
সাদিয়া আক্তার
মাস একের পর ____________
আর একসপ্তাহ পর মুক্তির বিয়ে। পিছাতে পিছাতে মুক্তির বিয়ের ডেট বেশ ভালোই পিছিয়েছিল। প্রথম চন্দ্রর জন্য পরে ইহানের জন্য। নতুন চাকরি চন্দ্র ছুটি পাবে না তাই বিয়েটা পিছিয়েছে এরপর ডেট ফেলবে তখন ইহান অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে এভাবেই বলতে বলতে বিয়ের ডেট পিছিয়েছে। তবে এবার আর হয়নি ইহান পাগল হয়ে গেছে নিজের ঘরে বউ তোলার জন্য। তাই সামনের শুক্রবার ডেট ঠিক করা হয়েছে সাথে এটাও ঠিক করা হয়েছে যে মুক্তি ও চন্দ্রর রিসিপশন একসাথেই হবে।
সকাল সকাল পুনমের কাজের বাহার। চন্দ্রকে রেডি করিয়ে দেয়া ইউনিভার্সিটির জন্য নিজে রেডি হওয়া সব মিলিয়ে বেশ হ্যাসেল যায় বেচারীর উপর। তবুও নিষ্ঠুর চন্দ্র একটু হেরফের চায়না। সব পুনমের হাতে তার চাইই।
চন্দ্র ওয়াশরুমে পুনম চন্দ্রর শার্ট আয়রন করছে।
— আগে শুনেছি নিজের সব কাজ নিজেই করত এখন এই লোক একটা কাজও করেনা।
— আগে বউ ছিলো না তাই নিজের কাজ নিজে করেছি এখন বউ আছে তাই বউয়ের হাতে ছোয়া ছাড়া কোনো কিছু ভালো লাগে না।
পুনম ঠোঁট উল্টে চন্দ্র দিকে তাকায়। চন্দ্র মুচকি হেসে ইশারা করে শার্ট পরিয়ে দিতে। পুনম শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল — আলমারির উপরে একটা লকার আছে ঐটার চাবি কই?? অনেক দিন ধরেই আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে যেয়েও করা হয়নি।
চন্দ্রর হাসি মুখ ধপ করে নিভে গেলো। গম্ভীর হলো সেভাবেই বলল — ঐ তাকে তোমার কোনো নেই তুমি কি করবে ঐটার চাবি দিয়ে??
পুনম চন্দ্রর গম্ভীর স্বর শুনে বেশ অবাক হয় তবে কিছু বলে না। ভেবে নেয় আরেকদিন এর বিষয়ে কথা বলবে আপাতত সে আরেক মিশনে আছে তার মনোভাব যদি সঠিক হয় তাহলেই হলো।।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভার্সিটিতে ঢুকেই মিহিকে নিয়ে আগে নাওয়াজ শেখের কেবিনে গেলো সে
— দেখ পূর্ণ এভাবে স্যারের পার্সোনাল কথা আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি না তাও আবার সে ফ্যাকাল্টি হেড।
— তুই চুপ করতো মিহি এমনিতে ভয়ে আছি আর ভয় বাড়াস না তোহ
দুজনে মিলে নাওয়াজ কেবিনে নক করে সে অনুমতি দিলে দুইজন হাসি মুখে প্রবেশ করে।।
— স্যার আমার ননদের বিয়ে তার পরের দিন আমার রিসিপশন এবারও কিছু দিনের ছুটি লাগবে আগেরবার তো আপনি রাগ করেছেন তাই এবার আমি নিজেই আপনাকে দাওয়াত দিলাম।
বলেই ব্যাগের থেকে কার্ড বের করে মিহি পুনম হাসল। — কার্ডটি টেবিলে রেখে!! দাঁত বের করা বন্ধ করে ক্লাসে যাও
দুজনেই মুখ মুচরে ক্লাসে চলে গেলো। নাওয়াজ শেখ কার্ডটি হাত তুলে নেয় কনের পিতার জায়গায় পারভেজ আহমেদ নামটি তার ভীত নাড়িয়ে দেয়। সাথে চন্দ্রের পিতার নামটিও দেখে তার সন্দেহ জাগে দুইজনের নাম একইভাবে হুবহু মিলে গেলো কিভাবে। আবার শুভেচ্ছান্তে গিয়ে সেখানে তার বহু পরিচিত দুইটি নাম দেখতে পায়।
— আল্লাহ্ আমি যাকে খুজছি তাকে যেনো পেয়ে যাই
উপরে তাকিয়ে মনে মনে দোয়া চাইল। কেউ নক করতেই নিজের ভঙ্গিমায় আবার বসে পড়ল।
বাড়িতে হইহুল্লোর শুরু হয়ে গেছে মিরাজ সাহেব নিজের পরিবার নিয়ে গতকালই চট্টগ্রাম থেকে এসে পড়েছে আজ চন্দ্রর মামা আসবে সাথে তার নানী।।
আজ চন্দ্র মামারা এসেছে,,,,,,
চন্দ্রর নানী এসেই পুনমের সাথে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রের নানীর নাম রানিবানু এই মহিলাটি বেশ রসীক ছেলের বাড়িতেই বেশীরভাগ থাকে ঐ বছরান্তেও মেয়ের বাড়িতে আসে কেননা কামরুল সাহেবকে সে মেয়ের জন্য পছন্দ করে নাই করেছিল পারভেজ সাহেবকে তবে কামরুল সাহেবকে চাদনী বেগমের বেশ পছন্দ হওয়ায় মেয়ের বিরুদ্ধে যেতে পারেনি। পারভেজের মেয়ে শুনে পুনমের প্রতি তার বেশ গদগদ ভাব পুনমকে কাছ ছাড়া করছেই না।।
— হ্যারে পূর্ণ রুপশা আপু আসেনি কেনো এখনো
পূর্বকে দোলাতে দোলাতে বলল ঝিনুক। ছয়মাসের পূর্ব ফোকলা দাতেঁ বোনের দিকে তাকিয়ে হাসে পুনম ভাইকে কোলে নিতে নিতে বলল — আপু ছেলে পক্ষ থাকবে তাই একেবারে রিসিপশনে আসবে।
— ওও
এরমধ্যেই রুপশা ভিডিও কল দেয় তিনবোন কথা বলা শুরু করে সাথে রানিবানুর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই কথা বলছে এরমধ্যে চন্দ্র প্রবেশ করে — জোহরা আমি বাইরে যাব শার্ট বের করো,,
চন্দ্রর কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে ফের পুনমের দিকে তাকিয়ে একত্রে বলল — হোওওও জজোহহহরা,,,,
চন্দ্র তাদের পাত্তা দিলো না পুনমকে ফের তারা দিলো তখন রানিবানু বলল — যাও বোইন এখন যা যা লাগে দিয়া আহো রাইতে তো আমার লগেই থাকবা,,,
নানীর কথা শুনে চন্দ্রর মাথায় বিস্ফোরণ ঘটে সে একপ্রকার চিল্লিয়ে বলল — কি ও তোমার সাথে থাকবে কেনো নানু,,,??
সকলে মুচকি মুচকি হাসছে রানিবানু এবার একটু গম্ভীর হলো — কেনো ভাই তুমার বউ আমার কাছে থাকলে কি হইব দুইডা রাইতেরই তো ব্যাপার নানীর লইগা এইডাও করতে পারবা না।
— ইমোশনে হিট দিবানা নানু একদম ইমোশনে হিট দিবানা বউ ছাড়া রাতে ঘুম হয় নাকি,,, এই জোহরা তাড়াতাড়ি আয়,, শেষের কথাটা পুনমের দিকে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। পুনম লাজে রাঙা হয়ে নিজেও চন্দ্রর পিছন পিছন গেলো। পিছন থেকে রানিবানু সহ সবাই হাহা করে হেসে উঠল।
রাতে ______
খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে চন্দ্র এখনো পায়চারি করে চলেছে একঘণ্টা ধরে রাতে বাজে সাড়ে বারোটা এখনো পুনমের আগমনের খবর নাই। এবার অধৈর্য্য হয়ে ঘর থেকে বের হয় ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে মহিলা মন্ডলী কাজে ব্যস্ত
— এখানে এতো কি কাজ হ্যা
— কাল সকালে হলুদের ত্বত্ত নিয়ে সাথে বিয়ের কাপড় নিয়ে ছেলের বাড়িতে পাঠাতে হবে সকাল বেলা। এখন গুছিয়ে না রাখলে হবে আব্বা
চাদনী বেগমের কথা শুনে চন্দ্র কিছু বলে না চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে। চন্দ্রকে বসতে দেখে সবাই মুচকি মুচকি হাসে রানিবানু চন্দ্রকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলে
— ভাই আইজ থেকে পুরা দুই দিন বউরে ছাড়া ঘুমানোর চেষ্টা করো মুক্তির সাথে তো তোমারও পরসু বৌভাত হইব।
— তো এখন বইল না এগুলো নিয়ম এইসব আমি মানতে পারব না।
গলা খাকারি দিলো রোজিনা বেগম তা দেখে নিপা বেগম বলল — চন্দ্র বাবা একটু রয়ে সয়ে কথা বল এখানে তোর শাশুড়ি ও আছে
চন্দ্র এই মহিলা মন্ডলীর সাথে কথা বলে না চুপচাপ বসে থাকে নিজের মতো করে রাতের দেড়টায় কাজ শেষ হয় তাদের।
— আম্মু কাল সকালে এতো তাড়াতাড়ি উঠার দরকার নেই রেনু ও মিনু মিলে সামলে নিবে ওরা তো এখন ঘুমিয়েই আছে,,
— আচ্ছা আব্বাজান
রানিবানু মেয়ে আর নাতীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যাতে সবাই এরকমই একসাথে সুখে থাকে।
সবাই ঘরে যাওয়ার পর চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় চোখ ছোটছোট করে।
— কি ঘরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই নাকি চলো,,
— যাবনা আপনার সাথে আমি নানুর সাথে ঘুমাব
ভেংচি কেটে বলল পুনম।
— কেনো কেনো
চন্দ্র তেড়ে আসতেই পুনম অন্যদিকে সরে যায়।
— কাল থেকে বেশ কয়েকবার আপনার কাছে লকারের চাবি চেয়েছি দিয়েছেন। সকালে তো একপ্রকার ঝাড়ি মেরেছেন
গাল ফুলায় পুনম চন্দ্র সেই ফুলন্ত গাল আজলায় নিয়ে বলল — তাই বুঝি জোহরার অভিমান হয়েছে,,
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫৩
— কিসের অভিমান আমার কোনো অভিমান নেই,,
হাসল চন্দ্র চট করে পুনমকে কোলে তুলে বলল
— তোমার অভিমান বেশী
— আপনার ভালোবাসা বেশী
— আর এই ভালোবাসাতেই সিক্ত তুমি আমার আবেশী।।