প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১১

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১১
অনন্যা

-‘আহনাফ ভাই, আপনি এখানে?
আহনাফের তেমন কোনো ভাবভঙ্গি নেই।সে ভীষণ স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতে দাঁড়িয়ে।কুহু একটা শুকনো ঢোক গিললো।সে বলে উঠলো
-‘রোদ, তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু নয়।
রোদেলা কপাল কুচকালো।কুহু আবার কিছু বলতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো
-‘তুই ঝামেলার মাঝে এখানে এসেছিস কেন?
রোদেলার মনে কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করলো কথাটা শুনে।কিন্তু আহনাফ ভাই ওমন ঝুঁকে কি করছিল?নাহ্ নাহ্ আহনাফ ভাই অমন না।সে মোটেও তার আহনাফ ভাইকে ভুল বুঝবে না।সিনেমাতে দেখেছে সে এমন.. যে নায়ক অন্য একটা মেয়ের চোখে ফু দিতে ঝুঁকে ঠিক তখন নাইকা হাজির হয়ে নায়ককে ভুল বুঝে।রোদেলা মোটেও অমন বোকা নয়।হয়তো কুহুর চোখে কিছু পড়েছিল আর আহনাফ সেটাই দেখছিল ঝুঁকে! রোদেলার ভাবনার মাঝেই আহনাফ বলে উঠলো

-‘কথা শেষ হলে কল দিবি আমাকে।আমিও আজ ও বাড়ি যাবো।
আহনাফ কথাগুলো বলে বেরিয়ে যেতে নিলো।যাওয়ার আগে একবার পেছন ঘুরে তাকালো সে।কুহু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে।আহনাফ রোদেলাকে অন্যমনষ্ক দেখে কুহুকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারে।কুহু চোখ বড়বড় করে ফেললো।আহনাফ চলে গেল। এদিকে আহনাফের কথাগুলো শুনে রোদেলা লাজুক হাসে।প্রতিটা মুহূর্তে সে নতুন করে যেন প্রেমে পড়ে এই আহনাফ ভাইয়ের।তার এই কথাগুলোর মাঝেই রোদেলার প্রতি তার যত্ন প্রকাশ পায়।রোদেলা বুঝি তা বুঝে না!
রোদেলাকে লাজুক হাসতে দেখে হোঁচট খেল কুহু।এই মেয়ে লাজুক হাসছে কেন? কুহুকে ভুল না বুঝে সে লাজুক হাসছে! কুহু বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘এই রোদ! ঠিক আছিস? আসলে তখন…
রোদেলা ভাবনার জগৎ থেকে বেরোলো।সে কুহুর কথার মাঝেই একগাল হেসে বললো
-‘বাদ দে সেসব।এই জানিস কি হয়েছে?
কুহু থেমে গেল।বাদ দে সেসব! যেখানে তার এখন কুহুকে হাজারটা প্রশ্ন করার কথা, ওকে কথা শোনানোর কথা সেখানে এই মেয়ে হাসছে! কুহু পেছনে হেলান দিল।কৌতুহল ভরা নয়নে তাকিয়ে সে।প্রেমে পড়লে যে মানুষ অন্ধ হয়ে যায় তার জীবন্ত প্রমাণ এই রোদ।এতোটা বিশ্বাস করে সে তার আহনাফ ভাইকে! কুহুর ভাবতেও অবাক লাগে।কুহুর মাথায় ঠাডা ফেলতেই বোধহয় রোদেলা হাজারো উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে উঠলো
-‘গতকাল আহনাফ ভাই আমাকে প্রপোজ করেছে!!!
কুহু প্রথমে বললো—“ওহ..!” পরমুহূর্তেই কথাটা ব্রেনে ভালোভাবে সেট হতেই সে একপ্রকার চেঁচিয়ে উঠলো—“কিইই!!”

রোদেলা লাজুক হাসলো।এরপর বললো
-‘হ্যাঁ…গতকালকে উনি….
রোদেলা সবটা বললো কুহুকে।কুহু কি বলবে বুঝতে পারলো না।রোদকেও তিলোত্তমা বলেছে! ভারি বজ্জাদ লোক তো! আল্লাহ জানে আর কতগুলো তিলোত্তমা আছে এই লোকের জীবনে! কুহুকে কিছু একটা ভাবতে দেখে রোদেলা মৃদু ধাক্কা মারলো ওকে।
-‘এই কুহু..কি ভাবছিস? কংগ্রাচুলেশন তো বল শা/লা!
কুহু মুখ কুচকালো।এরপর বললো
-‘বাঙ্গির কংগ্রাচুলেশন জানাবো তোমাকে আমি! দেখ রোদ…আমি তোর ভালোর জন্য বলছি..ওই লোক তো জন্য ঠিক নয়।দেখ গিয়ে আরো কত তিলোত্তমা আছে ঐ লোকের জীবনে!
রোদেলার পছন্দ হলো না কথাটা।সে মুখটা পাংশুটে করে বলে উঠলো

-‘দেখ বেবি…তোকে আগেও বলেছি যে আমাকে যা খুশি বল কিন্তু আহনাফ ভাইকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবি না।
কুহু রোদেলার কথাটা ব্যঙ্গ করে রিপিট করলো।রোদেলা ওর বাহুতে মৃদু থাপ্পর মারলো।কুহু বাহু ডলতে ডলতে বললো
-‘তোর ঐ খাটাশ প্রেমিকের জন্য তুই আমাকে মারলি, জান? সইবে না এই অবিচার…জাতি সইবে না।দেখে নিস…
রোদেলা হেসে ফেললো।হঠাৎ রোদ বলে উঠলো
-‘দোস্ত তুই কিন্তু দারুণ কাজ করেছিস। এই নাহ্ তুই না..তোর জুতো..হাহা হাহা
রোদেলা জোরে জোরে হাসতে লাগলো।কুহুও তাল মেলালো।দুই বান্ধবী বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি করলো।কুহু হঠাৎ বলে উঠলো
-‘আচ্ছা রোদ…কখনো কোনো কারণে তুই আমাকে ভুল বুঝবি না তো…ছেড়ে যাবি না তো কখনো?
কুহুর স্বরে কেমন ভয় প্রকাশ পেল।রোদেলা কুহুর ঘাড়ে হাত ঝুলিয়ে বললো
-‘ভুল বুঝার কারণকে উপড়ে ফেলবো তাও ছেড়ে যাবো না।
কুহু বলে উঠলো

-‘যদি কোনো মানুষ কারণ হয়ে দাঁড়ায়?
-‘হবে না এমন।তোর আর আমার বন্ধুত্ব স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ভাঙতে পারবে না।আর তুই এসব আজেবাজে কথা বলছিস কেন হু?…এই তুই আবার নতুন কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড বানাস নি তো?
কুহু দাঁত কেলিয়ে বললো
-‘হ্যাঁ..বানিয়েছি তো…
রোদেলা বলে উঠলো—“তবে রে শ/য়তান..!”
কথাটা বলেই সে কুহুকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।কুহুও খিলখিল করে হাসতে লাগলো।কুহুও রোদেলাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো তার।এক হাত ব্যান্ডেজে মোড়ানো থাকায় পেরে উঠলো না সে।দুই বান্ধবীর হাসির শব্দে কেবিনটা মুখরিত হয়ে উঠলো।কুহুও যেন অনেকটা চাঙ্গা অনুভব করছে এখন।যদিও সে কোনোকালেই দুর্বল ছিল না।টইটই না করলে এই মেয়ের পেটের ভাত হজম হয় না।
আরোকিছুক্ষণ দুই বান্ধবী খোশগল্প করলো।আহনাফের টপিক বাদ পড়ে গেল মাঝে।এরপর রোদেলা বিদায় নিল। রোদেলা কেবিন থেকে বের হতেই তার ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো।
“প্রেম ভালো, তবে অন্ধ প্রেম নয়।”

রোদেলা খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো ম্যাসেজটার দিকে।এরপর আশেপাশে তাকালো।সন্দেহজনক কাউকে দেখতে পেল না সে।তাহলে বারবার কে এসব কথা বলে? কে তাকে এতো সাবধানী বাণী দেয়? তার উপর কি কেউ নজর রাখছে? রোদেলার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন তুড়ি বাজালো তার চোখের সামনে।রোদেলা চমকে উঠলো।
-‘এই যে মিস চোরনি! আবার কার কি চুরি করার কথা ভাবছেন হ্যাঁ?
রাফিকে দেখেই রোদেলার মেজাজ খারাপ হলো।এই মদন কোথা থেকে হাজির হলো আবার! রোদেলা বিরক্তমাখা স্বরে বললো

-‘আপনি কি করছেন এখানে?
রাফি বিস্কুটের প্যাকেট থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে তাতে কামড় বসালো।এরপর বললো
-‘আপনাকে দেখতে আসলাম।
রোদেলা খ্যাক করে উঠলো
-‘হুয়াট!
রাফি বলে উঠলো
-‘চেঁচাচ্ছেন কেন?কান ধরে গেল বাবা! যাইহোক যেটা বলতে আসছিলাম..ভাই ডাকছে আপনাকে।
রোদেলা কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো।রাফি দুই কাঁধ উঁচু করে বললো
-‘কি অদ্ভুদ রে বাবা! কিছু না বলেই হাঁটা ধরলো! বাথরুমের চাপ পেয়েছে মনে হয়।আহারে বেচারি চোরনি!
রাফি আরেকটা বিস্কুট মুখে পড়লো।এরপর সেও অন্যদিকে হাঁটা ধরলো।কি মনে করে একবার পেছনে তাকালো।এরপর হেসে ফেললো।

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে।কুহুরাও বাসায় ফিরে এসেছে।এখন তারা অনেকটা সুস্থ।তবে আনোয়ারা বেগম কুহুর উপর চটে রয়েছেন।এই মেয়ে যদি ঐদিন অভিনয় না করতো তাহলে তাদের এতো বড় দূর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হতো না।সব এই মেয়ের জন্য হয়েছে। কুহু আবার আয়ানের উপর চটে রয়েছে।এই হতোচ্ছোরা যদি ঐদিন চোখে পানি ছেটাতো তাহলেই আর ওমন ধুমতানানা বাজতো না তাদের লাইফে।এদিকে আয়ান আছে বিন্দাস মুডে।নাতাশার সাথে বেশ ভালো ভাব হয়েছে তার।মেয়েটা তাকে বলেছে যে কুহুকে পটাতে সাহায্য করবে।আজ অবদি নাকি সে অনেকের সেটিং করিয়ে দিয়েছে।আয়ানও নাতাশাকে বিশ্বাস করে।মেয়েটা বেশ ভালো!
আয়ান কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।হোয়াটস্অ্যাপে নাতাশাকে ম্যাসেজ করলো সে

-‘বাসায় আসলাম মাত্র।
মিনিটখানেক বাদে ম্যাসেজ সিন্ হলো।নাতাশা রিপ্লাই করলো
-‘আমি একটু পরে কথা বলছি।আমার এক ফ্রেন্ড সুইসাইড করেছে।
আয়ান ভড়কালো খানিকটা।সে সাথে সাথে রিপ্লাই করলো
-‘আচ্ছা.. আচ্ছা..তুমি ওদিক সামলাও আগে।পরে কথা হবে।
নাতাশা আর সিন্ করেনি।আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কেন যে মানুষ এসব করে! একটু সবুর করতে পারে না তারা।আল্লাহ’র উপর একটু ভরসা রাখলে কি হয়! আল্লাহ তার বান্দাকে কখনো নারাজ করেন না।তাহলে কেন তারা এসব করে? ভেবে পায়না আয়ান।

নাতাশা আর আদিত ওটির সামনে হাঁটাহাঁটি করছে।আর বারবার তাকাচ্ছে ওটার লাল রঙের জ্বলে থাকা আলোর দিকে।তখন’ই সেখানে হাজির হলো আহনাফ।তার কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে।আহনাফকে দেখতেই নাতাশা আর আদিত থেমে গেল।আহনাফ ঠাণ্ডা স্বরে জিজ্ঞাসা করলো
-‘কি হয়েছিল?
আদিত তিরিক্ষি মেজাজে বলতে লাগলো
-‘ওই মা//তারির আজ বিয়া।গতকাল কত করে বুঝালাম।সব এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিছে। বি/ষ খাইছে হারা/মজাদায়..
নাতাশাও রাগি স্বরে বলে উঠলো

-‘আমাদের হারা/মাজাদারে পরে দেখবো।আগে ঐ হারা/মজাদির চৌদ্দ গোষ্ঠীর পিণ্ডি চটকাবো আমি।কি কমতি আছে আমাদের আরিফির মাঝে? বিয়া যখন করবিই না তাহলে নাটক করলি কেন? ওরে তো আমি ছাড়বো না।
আহনাফ জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো
-‘ডাক্তার কি বলছে? বাঁচবে?
আদিত বললো—“যখন এনেছি তখনও পার্লস্ চলছিল।জানি না এখন।”
আহনাফ আদিতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
-‘ও না গতকাল তোর সাথে ছিল?
আদিত বললো
-‘আরেহ বা// রাত পর্যন্ত তো ঠিক’ই ছিল।সকালে উঠে দেখি লটকায় রইছে মেঝেতে।তখন’ই খাইছে।ভাগ্যিস ঘুমটা ভাঙছিল তখন!
আহনাফ বললো
-‘আংকেল-আন্টিকে খবর দিয়েছিস?
নাতাশা বললো

-‘আংকেল এমনিতেই হার্টের রোগী।আর আন্টিকেই বা কি বলবো? তাই জানাইনি কিছু তাদের।
হঠাৎ ওটির আলো নিভে যায় তখন।ওরা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।ভেতরে প্রত্যেকের’ই তুফাই বইছে।তাদের এই গ্রুপটা অনেক পুরোনো।সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে একসাথে তারা।বন্ধুর এই কাজে ওরা সবাই হতাশ হয়েছে।একটা মেয়ের জন্য সে আজ সুইসাইড করে ফেললো!
ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।আহনাফ বাহিরে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত দেখালেও তার ভেতর আজ উলোটপালোট হয়ে গিয়েছে।এই বন্ধুমহলটা তার জীবনের অর্ধেক অংশ জুড়িয়ে আছে।আরিফ একটাবার তাদের কথা ভাবলো না! অন্তত নিজের বাবা-মায়ের কথা ভাবা উচিৎ ছিল তার।তার ভাবনার মাঝেই ডাক্তার বলে উঠলো
-‘অপারেশন সাকসেসফুল…ওনাকে কিছুক্ষণ পরে কেবিনে সিফট্ করা হবে।
সবাই স্বস্থির শ্বাস ছাড়লো যেন প্রাণটা ফিরে এলো তাদের।সবাই চেয়ারে বসলো।আহনাফ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো
-‘হকস্টিকটা আনতে পারবি আদিত?
নাতাশা আর আদিতেরও রাগ উঠেছে আজ।নাতাশা বললো
-‘দুইটা আনিস…
আদিত দাঁত কিড়মিড় করে বললো—“আজ তো তিনটাই লাগবে।”

-‘নিধি স্টপ প্লিজ…আর কত কাঁদবি ইয়ার..!
রোদেলা বিরক্ত হয়ে বললো কথাটা।কুহু খেকিয়ে বললো
-‘একদম রঙ্গলীলা করবি না বলে দিলাম, বাঙ্গির মাইয়া! এতোদিন আমি হসপিটাল পড়েছিলাম…একটাদিন গিয়েছিস আমাকে দেখতে? এখন আসছে ওই বানিকচন্দ্রের জন্য কাঁদতে!
তারা এখন গ্রুপ কলে রয়েছে।রোদেলা আর কুহুর এক’ই ভার্সিটিতে চান্স আসলেও নিধি আলাদা হয়ে যায় তাদের থেকে।তার অন্য ভার্সিটিতে চান্স আসে।এই নিয়ে ঐদিন তিন বান্ধবী অনেক কেঁদেছিল।নিধি এই দুঃখে দেশ ছেড়েই চলে গেল।থাকবেই না এই দেশে।কুহু আর রোদেলা নিধির এই সিদ্ধান্তে রাগ করে আর কথা বলেনি।নিধি তাই দেশে আসে।বেশি হয়নি,, এই তো পাঁচদিন হবে হয়তো সে এসেছে।আর এর মাঝেই তার বাবা সুযোগ বুঝে তার বন্ধুর ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে।আজকেই কাবিন।
নিধি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে

-‘আমাকে বাসায় আটকে রেখেছিল।তোদের দুলাভাইয়ের কথা বাসায় জানাতেই আমার ফোনটাও নিয়ে যায়।
কুহু বললো
-‘ভালো করেছে।কেমন ফ্রেন্ড তুই হ্যাঁ? বিয়েতে দাওয়াতটা পর্যন্ত দিলি না!
নিধির রাগ হলো।সে কান্না থামিয়ে বললো
-‘মেরে না একদম পা/ছা ফাটিয়ে দিব।আমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে আর তোরা দাওয়াত নিয়ে আছিস! অ্যা.. অ্যা..
নিধি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।হঠাৎ রোদেলা জোরে একটা ধমক দিল।
-‘চুপপপ..
এক ধমকে থেমে গেল নিধি।রোদেলা বলে উঠলো
-‘তুই বিয়ের সময় কবুল বলবি না।তাহলেই তো হয়!
নিধির হেচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।

-‘বাবা বলে’বলেছে যে..বি’বিয়ে না করলে তোদের দুলাভাইকে মেরে দিবে….অ্যা.. অ্যা..
কুহু প্লেট ধুচ্ছিল।কানে ইয়ারফোন লাগানো তার।সে বলে উঠলো
-‘আংকেলের মনটাকে যদি এই ঝামাটা দিয়ে দুইটা ঘষা দিতে পারতাম!
রোদেলা বলে উঠলো
-‘পাতিলের কালি উঠাতেই যে কষ্ট.. মনেরটা কীভাবে উঠাবি?
কুহু বললো
-‘তোর বাপ কিন্তু সেই ডেঞ্জারাস, নিধু।খু/ন করতেও হাত কাঁপে না।
নিধি কান্না থামিয়ে আহত স্বরে বললো
-‘উনি বাবা হিসেবে খারাপ নয় রে! শুধু স্বামী আর মানুষ হিসেবেই ব্যর্থ।
রোদেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।এসব টপিকে আর গেল না তারা।কুহু বললো
-‘বিয়ে কখন?
নিধি বললো—“সন্ধ্যায়।”
রোদেলা বললো

-‘আমি যা ভাবছি তুইও কি তাই ভাবছিস, কুহু?
কুহু বাঁকা হাসলো।এরপর একে একে প্ল্যান বললো ওদের।রোদেলা একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
-‘মাইরি বলছি…ধরা পড়লে সোজা আল্লাহ’র কাছে যেতে হবে।
কুহু ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো
-‘কুফা লাগিয়ে দিচ্ছিস কেন রে বাঙ্গির মেয়ে!
নিধি বললো
-‘কঠিন প্ল্যান করেছিস…আশা করি সব ঠিকঠাক হবে।
কুহু বললো—“তাহলে দেখা হচ্ছে সন্ধ্যায়।”
রোদেলা বলে উঠলো
-‘তুই বেরোতে পারবি তো?

কুহু একটা শয়তানি হাসি দিল।এরপর বললো—“অবশ্যই পারবো।”
কল কেটে দিল। কুহু বলে উঠলো—“আয়ান ভাইয়া, আপ তো গেয়া..! আপকা সুন্দরী বান্ধবী তো কুহুনে দেখলিয়া।হিহি হিহি
কুহু খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো।তার হাসি বোধহয় প্লেটগুলোর সহ্য হলো না।আনোয়ারা বেগম তাকে শাস্তিসরূপ সোকেজের কাচের প্লেটগুলো ধোয়ার জন্য বের করে দিয়েছিল। প্লেটগুলো একটার উপর অরেকটা রেখে রেখে একটা পিলার তৈরি করেছিল কুহু।কিন্তু বেশি উত্তেজিত হয়ে দুই হাত মেলে হাসতে গিয়ে সবগুলো প্লেট নিচে পড়ে গেল।আর সে কি আওয়াজ! কুহু পাথর বনে গেল।হাসবে না কাঁদবে, দাঁড়াবে না দৌঁড়াবে বুঝে উঠতে পারলো না।আনোয়ারা বেগম শব্দ শুনে এদিকেই আসতে লাগলেন।কুহু মনে মনে যত দোয়া-দরূদ পারে পড়তে লাগলো।ভাগ্য তাকে এই বাঁশটা না দিলেও পারতো।

আরিফ বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রয়েছে।ঠিক তখন ঠকঠক করে কিছু শব্দ হলো।সে তাকালো।দেখলো আহনাফ,নাতাশা আর আদিত দাঁড়িয়ে।প্রত্যেকের হাতে হকস্টিক।আরিফ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো
-‘মারবি? মার..মরতেই তো চেয়েছিলাম।দিলি না..
আহনাফ এগিয়ে এলো তার নিকট।এরপর বললো
-‘মরার খুব শখ না তোর?
আরিফের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।তাও সে ভাঙা স্বরে বলে উঠলো
-‘ওকে না পেলে আমি বেঁচে থেকে কি করবো?কেন মরতে দিলি না আমাকে?কেন তোরা…
“ঠাসসস”
আরিফ হেলে গেল ডান দিকে।হঠাৎ’ই বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে।আহনাফ ধরলো না তাকে।কাঁদতে দিল।কাঁদলে মন হালকা হয়।আরিফ কাঁদলো অনেক্ষণ।আদিত বলে উঠলো

-‘একটা মাইয়া মানুষের জন্য তুই নিজের জীবন দিয়ে দিবি! আর ইউ ম্যাড আরিফ?
আরিফের কান্না থেমে গেছে।সে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
-‘ইয়েস আই’ম ম্যাড…আই’ম ম্যাড ফর হার…
আরিফের এই অবস্থায় কথা বলা নিষেধ ছিল।তার এই চেঁচানোতে গলায় আরো বেশি কষ্ট পায় সে।নাতাশা ডাক্তারকে ডেকে আনে দৌঁড়ে গিয়ে।ডাক্তার বলে উঠলো
-‘আপনারা উনাকে প্লিজ উত্তেজিত করবেন না।উনার কথা বলা নিষেধ তিনদিন।সে জায়গায়..
ওরা বলে উঠলো –“সরি..”
ডাক্তার দুইপাশে মাথা নাড়লেন।আহনাফ বলে উঠলো

-‘তুই মেয়েটার দায়িত্ব নিতে পারবি?
আরিফ ভেজা নয়নে তাকালো আহনাফের দিকে।আহনাফ শক্ত কণ্ঠে আবার বললো
-‘মেয়েটার দায়িত্ব নিতে পারবি? হ্যাঁ কি না?
আরিফ উপর নিচ মাথা ঝাকালো।আহনাফ নাতাশা আর আদিতের দিকে তাকালো।চোখে চোখে যেন হাজারো কথা হয়ে গেল এদের।আদিত খেকিয়ে বলে উঠলো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১০ (২)

-‘শা/লা একে তো তলে তলে টেম্পু চালাতো.. এখন আমাদের’ই আবার ওর টেম্পু ঠেলতে হবে।
এরপর’ই দুঃখী দুঃখী স্বরে বললো
-‘সবার’ই টেম্পু আছে। শা/লা! টেম্পু তো দূর আমার তো একটা সাইকেলও নাই যে ক্রিং ক্রিং করবো! ডিগবাজি ভাবিই ঠিক বলে.. বা/লে///র কপাল!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here