প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১২
অনন্যা
-‘তুই দিন দিন অনেকটা বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস, সুহাসিনী।
-‘কতবার বলবো আপনাকে যে আমাকে কুহু বলে ডাকবেন।
আয়ান বলে উঠলো
-‘তোর কি আমাকে দেখে কোকিল মনে হয় যে কুহু কুহু করবো!
কুহু হাঁটা থামিয়ে দিল। এরপর বললো
-‘দেখুন আয়ান ভাইয়া..
-‘এখানেই দেখাবি?
আয়ানের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি।কুহু খ্যাক করে বললো
-‘আরেকটা বাজে কথা বললে আমি আপনাকে তুলে একটা আছার মারবো।
আয়ান নির্দোশের মতো বললো
-‘তুই’ই তো বললি “দেখুন আয়ান ভাইয়া”..তোর ভালোর জন্য বললাম যে এখানে কেন..বাসায় গিয়ে রু…
আয়ানের কথা শেষ হবার আগেই হঠাৎ কোথা থেকে একটা মাঝারি সাইজের ইট এসে লাগলো তার ব্যান্ডেজ করা মাথায়।শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজটা মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করলো।টপটপ করে রক্ত পড়তে লাগলো ক্ষতস্থান থেকে।কুহু মুখে হাত দিয়ে ফেললো।আয়ান মাথায় হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো।তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেল।ইট’টা একটা কাগজে মোড়া ছিল।কুহু এদিক ওদিক দেখতে লাগলো।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।আশেপাশে তেমন মানুষ নেই।ইটটা মারলো কে? কুহু কাগজে মোড়া ইট’টার দিকে তাকাতেই ভ্রু কুচকালো।আয়ানকে না ধরে সে ইট’টা থেকে কাগজটা নিয়ে ইট’টা ফেলে দিল।কিছু একটা লেখা দেখা যাচ্ছে।কুহু মনোযোগ সহকারে তাকালো।
“আজ মাথা ফাটিয়েছি কাল ওটা ফাটিয়ে দিব।আমার জিনিসের দিকে অন্য কারো নজর আমি বরদাস্ত করবো না।মাইন্ড ইট..”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কুহু বেশ ভালো মতো বুঝলো কাজটা কার।তারমানে তার উপর নজর রাখা হচ্ছে! কত্ত বড় খাটাশ! কুহু এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।উধাও হয়ে গেল নাকি! কুহুর ভাবনার মাঝেই আয়ান বলে উঠলো
-‘এদিক ওদিক না দেখে আমাকে ধরলেও তো পারিস…ঘটে কি সেই বুদ্ধিটুকুও নেই?
কুহু বুঝতে পারলো না ধরলে কি ধরবে না।বহুত ডেঞ্জারাস লোক।যদি সত্যিই ওমন কিছু করে তাহলে তো তার আর ফুফি ডাক শোনা হবে না।কুহু রিস্ক নিল না।সে বললো
-‘সামান্য মাথা ফেটেছে বলে এভাবে নুইয়ে গেলেন! ধুর মিয়া! আপনে পুরুষের কাতারেই পড়েন না।
-‘কিহ্!!
কুহু নিজের কথার মানে বুঝতে পেরে বলে উঠলো
-‘আরে ইয়ে…ওটা বলিনি।মানে এইটুকু আ…
আয়ান রেগে গেল।সে বলে উঠলো
-‘তোর কি মাথায় সমস্যা কুহু? দেখছিস মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে আর তুই বাজে বকে চলেছিস! সবসময় মজা ভালো লাগে না।সিরিয়াস হ একটু…
কুহুর মুখটা ছোট হয়ে গেল।সে ব্যাগ থেকে তার রোমালটা বের করে আয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিল।আয়ান তাকালো সেদিকে।এরপর বললো
-‘বেঁধে দিলে কি তোর হাতে ফোসকা পড়বে!
কুহু বেজার মুখেই বললো
-‘ আমার কিছুই হবে না।আপনার মূল্যবান সম্পদে ঠাডা পড়বে।
আয়ান কপাল কুচকে বলে উঠলো—“অ্যা!!”
-‘দোস্ত…বরকে কি সোজা মেরে দিব?
আদিতের কথা শুনে আহনাফ তাকালো তার দিকে।এরপর বললো
-‘এসব ছোটখাটো ব্যাপারে হাত নোংরা করার প্রয়োজন মনে করছি না।
নাতাশা বললো
-‘সব কি এতোই সহজ, আহনাফ? যদি আমরা যা ভাবছি তার বিপরীত হয়ে যায়!
আহনাফ কিছু বললো না।মন দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।কানে ব্লুটুথ লাগানো যেটার মাধ্যমে সে কুহুর খবরাখবর পাচ্ছে।তার কথামতোই একটু আগে একজন গার্ড ঐ ইট ছুড়ে মেরেছিল।আহনাফ বললো
-‘তোমার ম্যাম কি করছে এখন?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো
-‘ছেলেটার মাথায় রোমাল বেঁধে দিচ্ছে, স্যার।
আহনাফ দুইদিকে ঘাড় বাঁকালো।এরপর বললো
-‘নজর রাখো।উল্টোপাল্টা কিছু দেখলেই সোজা ছেলেটাকে গুলি করে দিবে।ওকে?
সবাই বড়বড় চোখ করে তাকালো আহনাফের পানে।গার্ড ওকে বলে কল কেটে দিল।নাতাশা বললো
-‘ভাই কি বলছিস তুই? ও মরলে আমার কি হবে?
আহনাফ ড্রাইভ করা অবস্থাতেই এক ভ্রু উঁচু করে পেছন ঘুরে তাকালো তার দিকে।নাতাশা মিন মিন করে বললো
-‘আই’ম ইন লাভ উইথ হিম।
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।এরপর বললো
-‘সেটা তোর ভাবনা।আমার জিনিসের দিকে যে নজর দিবে তাকে আমি ছেড়ে দিব তুই ভাবলি কি করে!
নাতাশা ঠোঁট উল্টালো।এরপর বললো
-‘ইট মার, পাথর মার তাও একেবারের জন্য মারিস না।
আহনাফের ঠোঁট দুই দিকে প্রসারিত হয়ে গেল।এরপর বললো
-‘ইট-পাথর মারলে জায়গা মতোই মারবো।চিনিস তো তুই আমাকে।
-‘সেই বলেছিস মামা!
আদিত হো হো করে হাসতে লাগলো কথাটা বলে।আহনাফ কপাল কুচকে বললো
-‘তুই হাসছিস কেন? আমাদের তো তাও কেও আছে।তোর তো কেউই নেই।সিঙ্গেল!
এবার আহনাফ আর নাতাশা হো হো করে হাসতে লাগলো।আদিতের মুখটা চুপসে গেল।জায়গা মতো লেগেছে কথাটা তার।আজ সিঙ্গেল বলে কি অপমানটাই না সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।আদিত বলে উঠলো
-‘হাহ্! একদিন আমিও মিঙ্গেল হবো। তখন তোদের দেখিয়ে দেখিয়ে কাপল্ ভ্লগ করবো রে পাপির দল।দেখে নিস!
নাতাশা বলে উঠলো
-‘এইসব স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্নের ইজ্জত মারিস না, ভাই।
ওরা আবার হাসতে লাগলো।আদিত দুই হাত উঁচু করে বলে উঠলো
-‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে বিচার দিলাম।
হাসতে হাসতে গন্তব্যে পৌঁছে গেল তারা।আহনাফ ওদের দিকে তাকালো একপল এরপর ইশারায় কথোপকথন হলো।
রোদেলা বোরকা পড়ে বেরিয়েছে সবে ঠিক তখন তার ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হয়।রোদেলা ফোনের দিকে তাকালো।হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজটা দেখতেই তার কপালে ডোজনখানেক ভাজ পড়লো।
“You look pretty in black, my love.”
রোদেলা আশেপাশে তাকাতে লাগলো।বাড়ির গেইট পার করেনি এখনো সে।তাহলে কে বললো কথাটা? কোথা থেকে দেখলো তাকে? তখন আবার একটা ম্যাসেজ এলো
“Don’t waste your time, my doll. I hope your mission will be successful. Best of luck.”
রোদেলা ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।কে আড়াল থেকে নজর রাখছে তার উপর?এতোকিছু কি করে জানছে সে?যাকে ভালোবাসে তার খবর নেই অন্য পাখি এসে বাসা বাঁধতে চায়।যত্তসব গোলামের ছাঁও! রোদেলা আর পাঁচ না ভেবে গাড়িতে উঠে পড়লো।সে নিজে ড্রাইভ করবে আজ।বাসায় বলেছে কুহুর কাছ থেকে নোট আনতে যাচ্ছে।খুব’ই ইম্পর্টেন্ট।আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে সে বেরিয়ে যায়।ইজি টেকনিক বাসা থেকে বের হওয়ার।
-‘বাসার এতোগুলো প্লেট ভাঙলি তুই আর নাম দিলি আমার।যদিও আমি তোকে বাঁচাতাম।কিন্তু সেই সুযোগটাই দিলি না নিজেই ফাঁসিয়ে দিলি!
কুহু আর আয়ান বর্তমানে নিধিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে।রোদেলার অপেক্ষায় সে।আয়ানের কথা শুনে সে বললো
-‘কেন, কষ্ট হচ্ছে এর জন্য? আপনিও তো চাইলে মামিকে সত্য কথাটা বলে দিতে পারতেন।
আয়ান বলে উঠলো
-‘তাহলে যে তোকে কষ্ট পেতে হতো।
কুহু তাকালো আয়ানের দিকে।আয়ান তার দিকেই তাকিয়ে।কি অদ্ভুদ সেই দৃষ্টি! সে জানে কুহু কোনোদিন তার হবে না তাও কেন এতো আকুলতা! কেন সে বারবার এমন করে? কুহু চোখ সরিয়ে নিল।আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।যেকোনো মুহূর্তে হয়তো বৃষ্টি নামবে।আয়ান বলে উঠলো
-‘আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভয় পাস, সুহাসিনী?
কুহু তাকালো তার দিকে।আয়ান তার তাকানো দেখে বললো
-‘যদি প্রেমে পড়ে যাস..
কুহু হাসলো।এরপর আকাশের পানে তাকিয়ে বললো
-‘প্রেমে মানুষ বহুবার পড়লেও মায়ায় একবার’ই পড়ে।আর মায়া অনেক ভয়ংকর।পুরোটা জীবন লেগে যায় সেই মায়া কাটাতে।হোক সে খারাপ,জঘন্য।তবুও তার মায়া কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে।কখনো কারো মায়ায় পড়লে বুঝবেন।
আয়ানও কুহুর মতো করে আকাশের পানে তাকালো।এরপর বললো
-‘জীবনে সঠিক মানুষ আসলে সেই মায়াও কাটতে বাধ্য।
কুহু কিছু বললো না আর।হঠাৎ’ই তাদের সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে উপস্থিত হয়।গাড়ির দরজা খুলে রোদেলা বেরিয়ে আসে।কুহু এগিয়ে যায়।রোদেলা আয়ানকে দেখে একটু চমকায় বটে।আয়ান যে সাথে আসবে সেটা তার জানা ছিল না।সে নরম সুরে সালাম দিল।আয়ান হেসে সালামের জবাব দিল।রোদেলা ফিসফিস করে কুহুকে বললো
-‘এই আয়ান ভাইয়া যে আসবে এটা তো বলিসনি!
কুহুও ফিসফিস করে বললো
-‘আরেহ খাটাশটাকে বললাম যে বেরোতে সাহায্য করুন।ওমাহ্! নিজেই সাথে ঝুলে গেল।
রোদেলা হেসে বললো
-‘আহা! টুরু লাভ বলে কথা!আমারটা ফিরেও তাকায় না আর আপনারটা ঘুরতেই থাকে সাথে।তোর ভাগ্য ভালো রে, বেবি।
কুহু হাসলো তবে সেই হাসি প্রাণবন্ত ছিল না।সে মনে মনে বললো
-‘এরকম ভাগ্য কারো না হোক।
-‘ভাইজান, আপনি এখানেই থাকবেন।না না আমি কোনো কথা শুনছি না।
অখিল শাহরিয়ার আহান শাহরিয়ারকে একদম জাপটে ধরেছে আজ।সে কিছুতেই আজ তাকে যেতে দিবে না।জেরিন বেগম বলতে লাগলেন
-‘আপা যাওয়ার পর থেকে আর একটাদিন থাকেননি এই বাড়িতে আপনি।বাহিরে বাহিরে থেকেছেন।সাজ্জাদ ভাইজানও চলে গেল দেশ ছেড়ে। আহনাফটাও বড় হওয়ার পর আলাদা হয়ে গেল।আপনাদের ছাড়া কি আমাদের ভালো লাগে, ভাইজান?পুরো বাড়িতে কেমন একটা হাহাকার…
জেরিন বেগম শাড়ির আচল মুখে চেপে কান্না করে ফেললেন।আহান শাহরিয়ার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর এ বাড়িতে তেমন থাকা হয়নি তার।কীভাবে থাকবেন তিনি! সবটা জায়গাজুড়ে তার স্ত্রী মালিনীর স্মৃতি।সংসারের বড় বউ ছিল সে।আহান শাহরিয়াররা তিন ভাই।তারা দুই ভাই দেশে থাকলেও দেশ ছেড়েছেন মেঝো ভাই সাজ্জাদ শাহরিয়ার।পরিবার নিয়ে বিদেশে পারি জমিয়েছেন তিনি।অবশ্য সেটাও মালিনী শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর।মালিনী সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন।পুরো সংসারটা একজোট করে রেখেছিলেন তিনি।আহান শাহরিয়ারদের মা ছোটবেলাতেই মারা যান।যার দরূন মালিনী ভাবি কম মা ছিলেন।মালিনীও হেসে খেলে সবাইকে নিয়ে থাকতেন।কতটা হৈ-হুল্লোরে মেতে থাকতো এই শাহরিয়ার কুঞ্জ! আর আজ…
-‘ভাইজান…
ভাবনার জগতে ছেদ ঘটলো আহান শাহরিয়ারের।তিনি হালকা হেসে বললেন
-‘এই বাড়ির প্রতিটা কোণায় মালিনীর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।এখানে থাকলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে যাবে আমার।
অখিল শাহরিয়ার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।ড্রয়িং রুমে বড় করে বাঁধানো মালিনী শাহরিয়ারের সাথে তাদের পুরো পরিবারের হাস্যজ্জ্বল ছবিটার দিকে তাকালেন তিনি।এরপর বললেন
-‘ভাবি কতটা নিপুণভাবে আগলে রেখেছিল পুরো সংসারটাকে! আজ সেও নেই আর…
চোখের কোণের পানি মুছলেন ভদ্রলোক।আহান শাহরিয়ার সেসব কথায় গেলেন না আর।তিনি বললেন
-‘সাজ্জাদ কি দেশে আসবে না?
অখিল শাহরিয়ার বললেন
-‘ওহ ভাইজান ভুলেই গেছি… ভাইজান এই মাস শেষে দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন।জানেন ভাইজান!আমাদের রাহুল’টা অনেক বড় হয়ে গেছে। ভিডিও কলে ঐদিন দেখলাম।আর কি সুন্দর হয়েছে মাশাআল্লাহ! ভাবি সবসময় বলতো না যে রাহুল সিনেমার হিরোদের মতন হবে।দেখেছেন ভাবির কথাই সত্যতে রূপান্তরিত হয়েছে।
আহান শাহরিয়ার হাসলেন।তিনি বললেন
-‘যাক তাহলে তো ভালোই।দেশে এলে তিন ভাই জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।
জেরিন বেগম বললেন
-‘তখন কিন্তু থাকতে হবে ভাইজান।সবাই মিলে একসাথে অনেক আনন্দ করবো।আপাও অনেক খুশি হবে।
আহান শাহরিয়ার হাসলেন।তাকালেন বড় ফ্রেমটার দিকে।মালিনী শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
।
।
-‘নিধি…এই নিধি….এই নিধিরাম ভূত…!
কুহু ফিসফিস করে ডাকছে আর ওর বাহুতে মৃদু থাপ্পর দিচ্ছে।নিধি ঘুমে বিভোর।সে মুখটা চুলকিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।রোদেলা বললো
-‘তখন কান্না করছিল আর এখন দেখো! শা/লা মরার মতো ঘুমোচ্ছে।
কুহু দরজার দিকে তাকালো।এভাবে এতোক্ষণ দরজা বন্ধ থাকলে যে কেউ সন্দেহ করবে।সে আর পাঁচ না ভেবে নিধির বাহুতে জোরে একটা চিমটি কাটে।নিধি ধরফরিয়ে উঠে বসে।চেঁচাতে নিলে ওরা দুজন মিলে ওর মুখ চেপে ধরে।নিধির প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো আরেকটু হলে।ধীরে ধীরে হাত ছাড়লো তারা।নিধি লাফিয়ে উঠলো
-‘তোরা এসেছিস!
কুহু কথা না বলে হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বোরকা আর নিকাব বের করে ছুঁড়ে মারলো তার দিকে। নিধির পরণে মেরুন রঙের শাড়ি আর মুখে হালকা সাজ।গায়ে টুকটাক গহনা।সে বলে উঠলো
-‘শাড়ির উপর বোরকা পড়ব!
কুহুর রাগ হলো।এমনিতেই যেকোনো মুহূর্তে ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকা আছে তার উপর এই মেয়ে নাটক শুরু করেছে! কুহু খ্যাক করে বলে উঠলো
-‘সব খুলে তারপর বাহিরে চল।কিছুই পড়া লাগবে না তোর।
নিধি লাজুক হেসে বললো
-‘যা দোস্ত! ওভাবে তো তোদের দুলাভাই দেখবে!
রোদেলা আর কুহু একে অপরের দিকে তাকালো।এরপর দুজন ধরাম করে কিল বসিয়ে দিল নিধির পিঠে।নিধি মার খেয়ে দ্রুত বোরকা নিকাব পড়ে নেয়।কিন্তু তখন ঘটলো এক বিপত্তি! হাঁটতে গেলেই নিধি উষ্টা খাচ্ছে।শাড়ি পায়ে বেজে যাচ্ছে।কুহু ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।রোদেলা বলে উঠলো—“আইডিয়া!”ওরা রোদেলার দিকে তাকালো।রোদেলা দাঁত কেলালো যদিও নিকাবের কারণে তা দেখা গেল না।
রোদেলা শাড়িটা উঁচু করে নিধির কোমড়ে গুজে দিল।তিনজনেই বহু কষ্টে নিজেদের হাসি আটকালো।কুহু ঝটপট ফোনটা বের করলো সেলফি তুলতে।রোদেলা নিকাবটা খুলে ঠোঁট চোকা করে এক চোখ মেরে পোজ নিল, নিধি বত্রিশটা দাঁত বের করে ক্লোজাপ মার্কা হাসি দিল আর কুহু নিকাবটা খুলে কপালে হাত দিয়ে চোখ বুঝে হায় হায় মার্কা পোজ দিল।একটা ক্লিক! ব্যাস হয়ে গেল!
-‘ নওশাদ আহমেদ! রাইট?
নওশাদ আহমেদ কিছু গেস্টদের সাথে কথা বলছিলেন।ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের নাম শুনে খানিকটা ভড়কালেন ভদ্রলোক।গেস্টদের থেকে বিদায় নিয়ে সাইডে এলেন তিনি।হাঁটুর বয়সী একটা ছেলে তাকে নাম ধরে সম্বোধন করলো! বড্ড অদ্ভুদ লাগলো ব্যাপারটা।
-‘কারা তোমরা?
আহনাফ হাসলো।এরপর বললো
-‘সেসব কথা ছাড়ুন। বরযাত্রী যে আসছে না সেটা কি জানেন?
ভড়কালেন ভদ্রলোক।খানিকটা চেঁচিয়ে উঠলেন
-‘এইসব কি বলছো তুমি? আর তোমার পরিচয়ই বা কি?
আহনাফ বললো
-‘আস্তে…চেঁচাচ্ছেন কেন? আর আমার পরিচয় বাদ দিন।বরযাত্রী আসছে না এটাই মেইন ফ্যাক্ট।এটাতেই থাকুন।
-‘আসবে না কেন?
আদিত বললো
-‘আপনার মাইয়া যে অন্য কাউকে পছন্দ করে তা কি আপনি জানেন না?
নওশাদ আহমেদ যেন বুঝলেন কিছু।তিনি বললেন
-‘ওওও তোমরা তাহলে ঐ ছোকরার বন্ধু-বান্ধব? বিয়ে ভাঙতে এসেছো তাই না?
নওশাদ আহমেদের কথা শুনে ওরা তিনজন’ই হো হো করে হেসে উঠলো।নাতাশা বললো
-‘এমন ব্যবস্থা করে এসেছি যে আপনার মেয়েকে আর কেউই বিয়ে করবে না।
চেঁচিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক—“মানে?”
আহনাফ হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কাউন্ট করতে লাগলো
-‘1…2…3…4..
এরপরেই তারা একসাথে নওশাদ আহমেদের দিকে তাকালো।নওশাদ আহমেদ ভ্রু কুচকালেন।হঠাৎ’ই তার ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো।চমকালেন ভদ্রলোক।ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়েই কল রিসিভ করলেন তিনি।হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলে উঠলো।হয়তো এমনকিছু যে কখনো শুনতে হবে ভদ্রলোক কখনো আশাও করেনি।আশা করার কথাও না।নওশাদ আহমেদ একপ্রকার হা হয়ে গেলেন।তাকে কিছু বলতে না দিয়েই ওপাশ থেকে কল কেটে দেওয়া হলো।
আহনাফরা হাসছে।নওশাদ আহমেদের রাগে শরীর কাঁপছে।সে আহনাফের কলার চেপে ধরতে নিলে আদিত আর নাতাশা ধরে ফেললো তাকে।অনেকের নজর এদিকে চলে এসেছে।আহনাফ বললো
-‘সিনক্রিয়েট করলে লস আপনার লাভ আমাদের।এখানকার উপস্থিত সবাই জানবে কথাটা।
নওশাদ আহমেদ ঝাটকা মেরে হাত ছাড়ালেন।রাগে কথা বলতে পারছেন না ভদ্রলোক।আশেপাশে তাকালেন একটু।অনেকের নজর এদিকে। এলাকায় ভদ্রলোকের একটা সুনাম আছে।এখন এখানে সিনক্রিয়েট করলে হয়তো তা আর থাকবে না।ভদ্রলোক ওদের ভেতরে আসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন।বাঁকা হাসলো তিনজন। আদিত বলে উঠলো
-‘যে কথা বলে এসেছি জিন্দেগিতে উনার মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না যদি এটা ছড়িয়ে যায়!
নাতাশা বললো
-‘ছড়াবে না।এতেই সিধে হয়ে যাবে।তবে এমন কথা বলাটাও ঠিক হয়নি।
আহনাফ বললো
-‘লাস্ট মোমেন্টে এসে বিয়ে আটকাতে বললে এর চেয়ে ভালো উপায় আমার জানা নেই।
নাতাশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আদিত হঠাৎ বলে উঠলো
-‘দোস্ত তুই মেয়ে তো? না মানে যে যুগ…
নাতাশা ধরাম করে কিল বসিয়ে দিল আদিতের পিঠে।আদিত বলে উঠলো
-‘কি শক্তি তোর! মাইরি বলছি তোর জামাইয়ের কপালে দুঃখ আছে।
নাতাশা বললো
-‘আমার জামাই আমি বুঝে নিব।তোর এতো জ্বালা কেন?
আহনাফ ধমকের সুরে বলে উঠলো
-‘চুপ করবি তোরা?এখানে এসেও শুরু করে দিয়েছিস!
চুপ হয়ে গেল ওরা।দুজন দুজনকে মুখ ভেংচি কাটতে ভুললো না।আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভেতরে যেতে নেয়।যাওয়ার পথে হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো তার।তিনজন বোরকাওয়ালী।এদের একজনের সাথেই ধাক্কা লেগেছে।আহনাফ “সরি” বলে চলে যেতে নেয়।কিন্তু কুহু চেতে বলে উঠে
-‘ধুরো বাঙ্গির পোলা!
আহনাফ থেমে গেল।কপাল কুচকে এলো তার।কুহু রোদেলা আর নিধির সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছিল।সামনে খেয়াল করেনি।তানাহলে যেচে সিংহের সাথে কে ধাক্কা খায়! কুহু কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে তা দেখার জন্য তাকাতেই চমকে উঠলো।রোদেলার আত্মাটা ছ্যাৎ করে উঠলো।রোদেলা ক্ষেপলো কুহুর উপর। একটা সেকেন্ড যদি এই মেয়েটা চুপ থাকতে পারে! এখন কি হবে? আর এই আহনাফ ভাই’ই বা এখানে কি করছে? নিধি বুঝলো না কিছু।কুহু হঠাৎ বলে উঠলো—“ভাগো পোলাপান.. ভাগো…”
ওরা কথাটা বুঝার সময়টাও পেল না।কুহু ওদের হাত ধরে দৌঁড় লাগালো।আহনাফ বুঝলো তার সন্দেহ’ই সঠিক।সে বলে উঠলো
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১১
-‘স্টপ তিলোত্তমা…
থামলো না কেউই।রোদেলা বললো–“তিলোত্তমার সময় নেই।” কুহু বলে উঠলো
-‘খাটাশ ভাসে গাঙ্গে.. তিলোত্তমা চাঙ্গে..ভাগোওওও
