প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩০
অনন্যা
বাহিরে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মাঝে মাঝে।বাহিরে বাজ না পড়লেও বর্তমানে আহনাফের ফ্ল্যাটে একটা বাজ ঠিক’ই পড়েছে।সাখাওয়াত আলম আহনাফকে কুহুর উপর থেকে উঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন।আহনাফ কুহুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে চলেছে
-‘না আমি উঠবো না…উঠবো না আমি…
সাখাওয়াত আলমের নিজের’ই লজ্জা লাগছে এবার।কুহু নিজের হাসি আর আটকাতে পারলো না।জোরে হেসে ফেললো সে।আহনাফ যে কেন উঠছে না তা সে ভালোই বুঝতে পারছে।সাখাওয়াত আলম কপাল কুচকালেন মেয়েকে হাসতে দেখে।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেল? আগেও তো ওর সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটতে নিয়েছিল..আবার একই ঘটনা ঘটতে চলেছিল বলে কি সে পাগল হয়ে গেল!
আহনাফ রাগি চোখে তাকালো কুহুর পানে।কুহুর হাসি থামছে না।হারুন রহমান পেছন ঘুরে পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখের পানি মুছলো মেয়েটার করুণ অবস্থা দেখে।ঠিক কতটা আঘাত পেলেই না মানুষ এমন সময় হাসে! তার ভাবতেই খারাপ লাগছে যে তার ছোট মা…পাগল হয়ে গেছে।মুখে রুমাল চেপে ভদ্রলোক ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।গার্ডগুলো মুখ কুচকে দেখছে তাকে।কাঁদছে তো চোখে পানি কই?মনে হচ্ছে ডিজে গানের ভাইব দিচ্ছেন হেচকি তুলে।একজন গার্ড তার কান্নার শব্দের তালে সামনে পেছনে মাথা নেড়ে একটু নাচের ভঙ্গিমা চালালো।তার সাথের জন তা দেখে নিজেও এমন করতে লাগলো।একে একে সবগুলো গার্ড মাথা দোলাতে লাগলো।হারুন রহমান তাদের দিকে তাকাতেই তারা থেমে গেল।ঠিক তখন তাকে সাখাওয়াত আলম ডেকে উঠলেন–“হারুন!”
হারুন রহমান রুমাল দিয়ে মুখ চেপেই সামনে ঘুরলেন।সাখাওয়াত আলম তাকে দেখে চেতে বলে উঠলেন
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘নতুন জামাই সেজেছো কেন?
হারুন রহমান সাথে সাথে রুমাল মুখ থেকে সরিয়ে পকেটে ঢোকালেন।
-‘এই ছেলেকে টেনে তুলো…গার্ডস্…
আহনাফ পড়েছে বিপাকে।রাগে মাথা ফেটে পড়ছে তার।কুহু এদিকে হেসেই চলেছে।আহনাফ বলে উঠলো
-‘মেয়ের বাসর রাতে এসে বাগড়া দিতে লজ্জা লাগে না?আপনার মতো নির্লজ্জ বাপ আমি দুটো দেখিনি।
সাখাওয়াত আলমও আহনাফের মতো করে বলে উঠলো
-‘মেয়ের বাপের সামনে এভাবে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখতে তোমার লজ্জা লাগে না? তোমার মতো নির্লজ্জ ছেলেও আমি দুটো দেখিনি।
কুহুর হাসি থেমে গেছে।আহনাফ জানে সে সাখাওয়াল আলমের মেয়ে! তাকে কিছু বললো না কেন তাহলে? এদিকে সাখাওয়াত আলম আহনাফকে ধরে টানছেন অথচ সে শক্ত করে ধরে আছে কুহুকে।কুহু মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো এতে।সাখাওয়াত আলম ছেড়ে দিলেন।নিজেই লজ্জা পাচ্ছেন এবার।কুহু বলে উঠলো
-‘আপনারা বাহিরে যান…পাঁচ মিনিট দিন আসছি আমরা।
-‘হুয়াট?
সাখাওয়াত আলম ভড়কে বললেন।মেয়ে তাকে বাহিরে যেতে বলছে! তিনি বলে উঠলেন
-‘মাথা ঠিক আছে তোমার?
কুহু বলে উঠলো
-‘আপনারা ভদ্রলোকের মতো দরজায় বেল বাজিয়ে আসলেই তো পারতেন।তাহলে মাথাটা খারাপ হতো না আর।
-‘কিহ্?
কুহু বললো
-‘বাহিরে যান, আমার আপনাদের দেখে লজ্জা লাগছে।
সাখাওয়াত আলম আকাশ থেকে পড়লেন যেন এ কথা শুনে।উনি বলে উঠলেন
-‘এ হতোচ্ছারা তোকে ব্লাকমেইল করেছে তাই না রে মা! একে আমি পুলিশে দিব..চিন্তা ক…
আহনাফ ক্ষেপে বলে উঠলো
-‘আপনার মেয়ে আমাকে জুতা নিয়ে দৌঁড়ানি দিছে …আর আপনি আমাকে পুলিশে দিবেন!
থম মেরে গেলেন যেন তারা।হারুন রহমান বলে উঠলেন
-‘এসব কথায় বিশ্বাস করবেন না স্যার।আমি পুলিশে কল করছি…
-‘মেরে পা’ছা লাল করে দিব।দিয়েই দেখেন কল..
আহনাফের কথা শুনে ভদ্রলোক ফোন রেখে নিজের পা’ছায় হাত বুলালেন।সাখাওয়াত আলম কিছু বলতে নিলে কুহু বলে উঠলো
-‘ভাই সত্যি লজ্জা লাগতেছে এবার…প্লিজ যান..
ভাই! সাখাওয়াত আলম মুখ কুচকে ফেললেন।
-‘আরে যান না..
রাগে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো সাখাওয়াত আলমের মস্তিষ্ক।যা খুশি করুক এই মেয়ে।উঠে হনহন পায়ে বাহিরে চলে গেলেন তিনি।হারুন রহমান আর গার্ডরা তার পিছু নিল।তারা এতেই আহনাফ তাৎক্ষণাৎ উঠে পড়লো।সোফায় রাখা তোয়ালেটা কোমড়ে পেঁচিয়ে ফেললো।কি লজ্জাজনক ব্যাপার! জীবনে প্রথম আহনাফ এমন সিচুয়েশনে পড়লো।কুহু এদিকে চিতপটাং হয়ে শুয়ে রয়েছে।আঁচল আগেই ঠিক করে ফেলেছিল।তবে কুচি এলোমেলো হয়ে বাজে অবস্থা তার উপর আহনাফের মতো একটা হেলদি মানুষ তাকে চেপে রেখেছিল।চেপ্টা হয়ে গেছে বোধহয়! আহনাফ হঠাৎ’ই তাকে কোলে তুলে নিল।হকচকিয়ে গেল মেয়েটা।জড়িয়ে ধরলো আহনাফের গলা।আহনাফ ওকে নিয়ে রুমে গেল।এদিকে মনের মাঝে কৌতুহল দমন করতে না পেরে একটু ভেতরে উঁকি দিয়েছিলেন হারুন রহমান।দেখলো আহনাফ কুহুকে কোলে করে রুমে নিয়ে যাচ্ছে।আহনাফ হঠাৎ পেছন ঘুরলো তখন।হারুন রহমান হকচকিয়ে গেলেন।আহনাফ ওনাকে এক চোখ মারলো।ভদ্রলোক ভড়কে মাথা সরিয়ে আনলেন।
-‘কে কোথায় আছো? শুনছো? আমাদের আহনাফ বিয়ে করেছে…
জেরিন বেগম চেঁচিয়ে বলছেন কথাগুলো।চোখে-মুখে হাসি উপচে পড়ছে তার।যাক ছেলেটা অবশেষে একটা ভালো কাজ করেছে।যেভাবেই করুক বিয়ে..করেছে এটাই অনেক।জেরিন বেগমের চেঁচামেচি শুনে সবাই হলরুমে উপস্থিত হয়।রোদেলার ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে।সে যা শুনলো তা কি ঠিক? রাহুল বলে উঠলো
-‘কি হয়েছে ছোটমা?
-‘আহনাফ বিয়ে করেছে…
অখিল শাহরিয়ার বলে উঠলেন
-‘কাউকে না জানিয়েই? কাকে বিয়ে করলো?
-‘ওর নাকি পছন্দ ছিল।আর আহনাফকে তো চিনোই।যা ইচ্ছা তাই করে…তবে এই প্রথম সে একটা উত্তম কাজ করেছে।আল্লাহ! আমার আহনাফ বিয়ে করেছে! সুখী করুক আল্লাহ ওদের।
রোদেলা দু পা পিছিয়ে গেল।একটা শুকনো ঢোক গিললো।এমন একটা দিন যে আসবে সেটা কি সে জানতো না? জানতো..তবে অবাধ্য মন কি আর মানে?প্রথম ভালোবাসা তার।কত আবেগ,স্বপ্ন জুড়ে ছিল তা।কোনোদিন এটা ভাবতেও চায়নি যে আহনাফ ভাই অন্য কারোর হবে।তাকে নিয়ে কত রঙিন স্বপ্ন বুনেছে সে! আজ সবটা একেবারে তছনছ হলো বুঝি! অন্য কারো স্বামী আজ সে।অন্যের স্বামীকে নিয়ে এসব ভাবাটাও যে পাপ।রোদেলার গলায় বুঝি ফাঁসের দড়ি পড়িয়ে দিল কেউ।চোখটা হঠাৎ ঝাপসা হয়ে গেল তার।পানিতে টইটুম্বর চোখের কোটর।নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে আজ।এখানে আর থাকা যাবে না।রোদেলা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।সবাই তাকালো সেদিকে।রাহুল কপাল কুচকালো।এখনো কি ভুলতে পারেনি সে? চোয়াল শক্ত হলো তার।
“ভুলতে যে তোমাকে হবেই, বেবিগার্ল।তোমার সবটাজুড়ে শুধু আমি থাকবো,,,শুধু আমি।”
রোদেলা দরজাটা লক করেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।চিৎকার করে আজ সে কাঁদে।এই কান্নার শেষ হবে কোনোদিন আদেও? আহনাফ ভাইকে না পাওয়ার জ্বালা তাকে তিলে তিলে শেষ করবে।রোদেলা ভাঙা স্বরে বলে
-‘কেন আহনাফ ভাই? কেন? কেন আমাকে ভালোবাসলেন না? আমার হৃদয়টা যে আপনাকে না পাওয়ার দহনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে!কেন কুহুকে ভালোবাসলেন,,,,আমাকে নয়? আল্লাহ! এই যন্ত্রণা আমি কেমন করে সইবো?
বালিস ভিজে যাচ্ছে তার চোখের পানিতে।ভেতরটা ভেঙেচুরে আসছে তার।চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও যেন আহনাফ ভাইকে না পাওয়ার আক্ষেপ তার ফুরাবে না।কিন্তু এখানে যে কিছু করার নেই।তার ভালোবাসাটা ছিল একপাক্ষিক।একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রণা যে এক আকাশসম।
কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলে গেছে মেয়েটার।হেচকি তুলে তুলে কাঁদছে।আহনাফ ভাই তার নেই..কিছুতেই মনটা মানতে পারছে না এই তিক্ত সত্যটা।একটাসময় হেচকিও বন্ধ হয়ে গেল।একদম নিরব হয়ে গেল সে।গালে চোখের অশ্রুকণাগুলো শুকিয়ে গিয়েছে।অনুভূতিহীন নয়নে সামনে তাকিয়ে সে।মনের গহীণে কোথাও একটা ব্যথাতুর সুর ভেসে চলে।রোদেলা উঠে বসে।ওয়াসরুমে গিয়ে মুখে ছিটায়।জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।বাহিরে এসে মুখ মুছে বিছানায় বসে।মাথা ঠাণ্ডা করে সে।ওরা বিয়ে করলো অথচ কিছু জানালো না তো! কুহুও তো কিছু বললো না।আর হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে বিয়ে! রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বিছানার পাশের ছোট্ট ড্রয়ারটা খুলে।বেরিয়ে আসে আহনাফের কিছু ছবি।রোদেলা ছবিগুলোতে আলতো হাত বুলিয়ে দেয়।চোখের অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে একটা ছবির উপর।রোদেলা ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে।এরপর চোখের পানি মুছে ছবিটাতে হাত বুলিয়ে বলে
-‘এজন্যই বোধহয় বলে নারীর রূপবতী হওয়ার থেকে ভাগ্যবতী হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।আপনি আমার ভাগ্যে নেই।এতোটাই জঘন্য আমার ভাগ্য।
হঠাৎ রোদেলা ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠে।সে পাশ থেকে ফোনটা নেয়।অপরিচিত নম্বর দেখে কপাল কুচকায়।এখন আবার কে কল করলো?রোদেলা নাক টেনে রিসিভ করে ফোন।
-‘হ্যালো!
ভেসে এলো এক পুরুষালি ডিপ ভয়েস..
-‘হ্যালো বেইবিগার্ল! হুয়াই আর ইউ ক্রাইং জান?
রোদেলা এক মুহূর্তের জন্য থমকায়।বেইবিগার্ল! রাহুল না ডাকে এটা বলে?রাহুল কল করলো? কিন্তু ভয়েসটা কেমন যেন।
-‘কে?
-‘ইউর উডবি..
রোদেলা বিরক্তিতে মুখ কুচকায়।রাহুল কল করছে! কিন্তু সে জানলো কেমন করে যে রোদেলা কাঁদছে? রোদেলা বলে উঠলো
-‘আপনি জানলেন কীভাবে যে আমি কাঁদছি?আর আপনার ভয়েস এমন লাগছে কেন?
রাফি হাসে।ভয়েস চেইঞ্জ কোনো ব্যাপার’ই না তার জন্য।সাধারণত এই ডিপ ভয়েসে সে কারো সাথে কথা বলেনা।তার মতে এটা পার্সোনালিটির সাথে যায় না।
-‘ডু ইউ নো হু আই এম?
-‘ব্রিটিশদের মতো ইংরেজিতে কথা বলছেন যে! বাংলায় বললে কি আপনার উপর ঠাডা পড়বো?
-‘উমম..ওকে..তুমি আমাকে চেনো?
রোদেলার মেজাজ খারাপ হলো।
-‘আপনার পরিচয় জানতে কল করছেন?নিজে জানেন না আপনি কে?
-‘আমি সেই ব্যক্তি সে তোমাকে রোজ সতর্ক করতাম।তোমার ভালোবাসাটা একপাক্ষিক সেটা তোমাকে বুঝাতাম।
রোদেলা হতভম্ব হয়ে গেল।ঐ ব্যক্তি রাহুল না? সে জানতো রাহুল।রোদেলা বলে উঠলো
-‘আপনার নাম কি?
-‘নাম দিয়া কাম কি?
-‘শালা তুমি খা…বলবো?
রাফি হকচকিয়ে গেল।কি বেয়াদব! সে বলে উঠলো
-‘ইউ আর ঠু মাচ নটি..
-‘তাতে আপনার কি? আর আপনি আমাকে চিনেন কিভাবে?এতকিছু কীভাবে জানেন?
-‘সেসব বাদ।এখন একটা পার্সেল যাবে সেটা রিসিভ করবে।আই হোপ ইউ উইল..
-‘বাংলায় বলেন…
রাফি হেসে বলে
-‘আশা করি তুমি খুশি হবে।
-‘কিসের পার্সেল?
-‘বেশি কথা আমার পছন্দ না।যা বলছি তাই করবে…আর যদি কান্না করতে দেখি তাহলে..তোমার আহনাফ ভাই শেষ।মাইন্ড ইট..
-‘এই কি? কি বললেন?
-‘তুমি যদি আর কাঁদো তাহলে তোমার আহনাফ ভাইকে উড়িয়ে দিব।কজ ইউ আর অনলি মাইন।কাঁদলে আমার জন্য কাঁদবে।আন্ডার্সন্ট্যান্ড?
রোদেলা স্তব্ধ হয়ে গেল।এটা আবার নতুন কোন ঝামেলার উৎপত্তি হলো? কে এই ব্যক্তি?তার পরিচিত কেউ নাকি অপরিচিত?
রাফি কল কেটে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।কেঁশে গলা ঠিক করলো।আর নিজেকে প্রস্তুত করলো আজকে রাতের জন্য।
-‘তুমি এই রাতেই চলে এসেছো! পাগল নাকি!
নাতাশা মুচকি হেসে বলে
-‘সমস্যা নেই।আয়ান কোথায়?
রাইফা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে ওর রুমের দিকে নিয়ে যায়।মাঝপথে দেখা হয় আনোয়ারা বেগমের সাথে।মেজাজ বিগড়ে ওনার।ছেলেটা ঝাড়ুটা দিয়ে আবার নাহয় খিল দিত..কিন্তু দরজা খুললোই না! একসময় তো ঠিকই খুলবে তখন পুরো বাড়ি ঝাড় দেওয়াবে ওকে দিয়ে।নাতাশাকে দেখে বলে উঠলো
-‘এই মেয়ে কে?
নাতাশা রাইফার দিকে তাকায়।
-‘আয়ানের মা ইনি..
নাতাশার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।আনোয়ারা বেগম ওকে নিচ থেকে উপর পরখ করছে।পরণে কালো রঙের বোরকা আর হিজাব।হঠাৎ’ই নাতাশা ধরফরিয়ে আনোয়ারা বেগমের পা ধরে।ভদ্রমহিলা ভয়ে লাফিয়ে উঠেন।নাতাশা মূলত সালাম করছিল।আনোয়ারা বেগম বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন।এভাবে কেউ সালাম করে! ভয়টাকে চেপে রেখে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন
-‘দী’দীর্ঘায়ু হোক তোমার…
নাতাশা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
-‘আমি আপনার ছেলের বউ..
-‘কিহ্?
চমকে তাকালেন আনোয়ারা বেগম।রাইফা ঠোঁট চেপে হাসে।নাতাশা পরক্ষণেই বলে
-‘বন্ধু.. বন্ধু..
-‘ওহ তাই বলো..
-‘জ্বী…আপনি চিন্তা করবেন না আমি এক্ষুণি আয়ানকে বাইরে বের করে আনছি।
আনোয়ারা বেগম ওর কনফিডেন্স দেখে অবাক’ই হলেন।পরক্ষণেই বললেন
-‘আয়ানের মেয়ে বন্ধুও আছে! কখনো বললো না তো।নাম কি তোমার?
-‘ নাতাশা আরশিয়া।
নাতাশার উত্তর শুনে আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘ওওও…দেখো পারো কিনা বের করতে..
নাতাশা মুচকি হেসে এগিয়ে যায়।সব প্ল্যান করেই যেন সে এসেছে।রাইফাকে বললো
-‘আপু কিছু কাগজ আর একটা ম্যাচ দিন।
-‘অ্যা!
-‘আহা! দিন’ই না!
রাইফা হতবিহ্বলিত হয়েই কাগজ আর ম্যাচ আনতে চলে যায়।আনোয়ারা বেগম দেখছে সবটা।মেয়েটাকেও ভালো করে পরখ করছেন।রাইফা ওগুলো নিয়ে হাজির হতেই নাতাশা মুচকি হাসে।বোরকার হাতাটা উঁচুতে উঠিয়ে কাগজেগুলো আয়ানের দরজার সামনে রেখে ম্যাচ থেকে কাঠি বের করে আগুন ধরালো।কাগজে লাগাতেই আনোয়ারা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন
-‘আরে কি..
-‘শশশশ
নাতাশা চুপ থাকতে বললো।আনোয়ারা বেগম থেমে গেলেন।
কুহুর একটা ছবি নিয়ে ফ্লোরে বসেছিল আয়ান।চোখ দুটো ফোলা ফোলা।বুঝা যাচ্ছে যে অনেক্ষণ কেঁদেছে।হঠাৎ’ই তার নজর গেল তার তৈরি করা প্ল্যানের কাগজের দিকে।সুযোগ’ই পেল না সে।কুহুর হাস্যজ্জ্বল ছবির দিকে তাকিয়ে বললো
-‘ধোকা দিয়েছিস তুই আমাকে, সুহাসিনী।আমার এই চোখের পানির মূল্য তোকে দিতেই হবে।আমি কাঁদবো আর তুই সংসার করবি!আগুন জ্বালিয়ে দিব আমি তোর সংসা…
হঠাৎ নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেই তার কথা থেমে যায়।দরজা দিয়ে ধোয়া আসতে দেখে চমকে উঠলো সে।উঠে দাঁড়ালো তাৎক্ষণাৎ।আগুন দেখা যাচ্ছে!তার বাড়িতে কে আগুন লাগালো? আয়াহায়!আয়ানের বুঝে আসে না সে কিছু করার আগেই তার উপরে এরকম গজব পড়ে কেন! এই মাত্র কুহুর সংসারে আগুন লাগানোর কথা ভাবছিল আর এখন…হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেল।তার মা আর রাইফা আগুন বলে চেঁচাচ্ছে।আয়ান কুহুর ছবিটা ফেলে দিয়ে ধরফরিয়ে দরজা খুলে।দরজা খুলতেই নাতাশা হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার বুকের উপর।বেচারি কান পেতে ছিল আয়ান আসছে নাকি সেটা বুঝতে।আয়ান ভড়কে যায়।রাইফা চেঁচিয়ে উঠে
-‘ইয়েএএ প্ল্যান সাকসেসফুলল…
আনোয়ারা বেগম দৌঁড়ে গিয়ে ঝাড়ুটা নিয়ে বাহিরে আসেন।তিনি ঝাড়ুটাকে জড়িয়ে ধরেন যেন কতকালের বন্ধন!তিনি অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মানুষ।দিনে চব্বিশ বার ঝাড়ু দেওয়া তার অভ্যাস।আয়ান নাতাশাকে বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে বলে
-‘তুমি কি করছো এখানে?
নাতাশা মুচকি হেসে বলে
-‘তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।
আয়ান নাতাশার উপরেও আজ রেগে।আহনাফের বিয়ে ব্যাপারে সে নিশ্চই জানতো।তাও কেন তাকে বললো না? সে তো জানতো কুহুকে আয়ান কতটা ভালোবাসে।আয়ান কঠোর স্বরে বলে উঠলো
-‘চলে যাও এখান থেকে, নাতাশা।তোমার মুখ দেখতে চাই না আমি।
-‘তাহলে চোখে টেপ মেরে রাখো।
-‘ফাজলামো করবে না একদম।
নাতাশা ভেতরে গেল।আয়ান বলে উঠলো
-‘বেরিয়ে যেতে বলেছি তোমাকে আমি।
আনোয়ারা বেগম ধমকে উঠলেন
-‘এই চুপপ…আমরা এতক্ষণ চেষ্টা করেও দরজা খোলাতে পারিনি আর ও কি সুন্দর এসেই করে ফেলেছে সেটা।এদিকে আয় তো মা..
নাতাশা যাওয়ার আগে আনোয়ারা বেগম’ই গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খেলেন কপালে।আয়ান বললো
-‘তোমরা এসব পিরিত বাহিরে গিয়ে করো…
-‘তুই আমাকে বেরিয়ে যেতে বললি বাবু?
আনোয়ারা বেগম আবেগি স্বরে বললেন।আয়ান ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।নাতাশা বললো
-‘আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই আয়ান।
-‘আমি চাই না।
আনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন
-‘তুই বলবি না তোর বাপ বলবে কথা…
-‘বাপকেই আনো..
কথাটা বলেই জিহ্ব কাটলো আয়ান।আনোয়ারা বেগম ঝাড়ুটা দিয়ে ওর পেছনে দিল এক বারি।নাতাশা ফিক করে হেসে ফেলে অন্যদিকে ঘুরে।আয়ান মায়ের দিকে হতাশ চোখে তাকালো।আনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন
-‘কত বড় বেয়াদব! বলে বাপকে আনো! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
আনোয়ারা শাড়ির আচলটা কোমড়ে গুজলো।কেউকিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা ঝাড়ু নিয়ে ওকে তাড়া করতে লাগলেন।আয়ান নিজের দুঃখ ভুলে দৌঁড়াচ্ছে।
-‘থাম বেয়াদব ছেলে! ছ্যাকার মা কি বাপ! আগেই এমন একটা মার দিলে সিধে হয়ে যেতি।
নাতাসা আর রাইফা হো হো করে হেসে ফেলে।আয়ান বলছে
-‘মধ্যবিত্ত পরিবারে ছ্যাকা খেয়েও শান্তি নেই।
আনোয়ারা বেগম এটা শুনে ঝাড়ুটা ছুঁড়ে মারলেন।আয়ান আর্তনাদ করে উঠলো।মান-সম্মান আর রাখলো না তার মা।
-‘আমি বলছি না আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো..
-‘আমি বলছি না আমার বউ আমার কাছে থাকবে…
সাখাওয়াত আলম আর আহনাফ দুজন কুহুর দু হাত ধরে টানছে আর বলছে কথাগুলো।কুহু বলে উঠলো
-‘শরীরটা ব্যথা করতেছিল এখন আরাম লাগতেছে।
দুজনের রক্তচক্ষু কুহুর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেল।তবে আহনাফ সেসব পাত্তা না দিয়ে বললো
-‘বিয়ে করছি আমি, বউ আমার থাকবেও আমার কাছেই।
-‘জন্ম তো আমি দিছি।
-‘আপনি না আপনার বউ দিছে।
-‘বউয়ের পেটে বাচ্চা আসলো কিভাবে?আমার কৃতিত্ব সব।
-‘বউ না থাকলে দিতেন কারে?সব কৃতিত্ব আন্টির।
কুহুর কানটা গরম হয়ে গেল এদের কথা শুনে।যেমন জামাই তেমন শ্বশুর।সাখাওয়াত আলম বলে উঠলেন
-‘যার’ই হোক মেয়ে তো আমার।
-‘ছিল..এখন সে আমার বউ।
সাখাওয়াত আলম কুহুর হাত টেনে ধরে বললেন
-‘আগে আমার মেয়ে।
আহনাফ অপর হাত টান মেরে বললো
-‘আগের দিন বাঘে খাইছে…এখন সে আমার বউ।
হারুন রহমান একবার সাখাওয়াত আলমকে দেখছেন একবার আহনাফকে দেখছেন।হঠাৎ সাখাওয়াত রিভালবার বের করে আহনাফের দিকে তাক করলেন।আহনাফও তৈরিই ছিল।সেও নিজের রিভালবার বের করে ওনার দিকে তাক করলো।দুজনের অপর হাত এখনো কুহুকে ধরে।কুহু একটা শুকনো ঢোক গিললো।সাখাওয়াত আলম বললেন
-‘ছেড়ে দাও আমার মেয়েকে।
আহনাফ বললো
-‘ছেড়ে দিন আমার বউকে।
-‘মানি না আমি এই বিয়ে।
-‘বিয়ে তো আপনাকে করিনি।যা করার আপনার মেয়ের সাথে করবো।আপনি মানলেই কি আর না মানলেই কি?
কুহু চোখ বড় বড় তাকালো আহনাফের পানে।একটু তো লজ্জা কর।সাখাওয়াত আলম ক্রোধে ফেটে পড়ে বললেন
-‘হাত ছাড়ো আহনাফ…
-‘আশ্চর্য তো! আপনি শ্বশুর শ্বশুরের মতো থাকেন।সঙ্গী লাগলে বলবেন নাতি-নাতনি এনে দিব।বউ নিয়ে টানাটানি করছেন কেন?
সাখাওয়াত আলম দাঁতে দাঁত পিষে বললেন
-‘সুট করে দিব কিন্তু..
-‘মেয়েকে বিধবা বানানোর এত শখ!
হারুন রহমান পাকনামি করে বললেন
-‘ছোটমাকে আমরা অন্য একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব..
আহনাফ ঘাড় বাঁকা করে দেখলো ওনাকে।এরপর বললো
-‘শুনতে পাইনি।কি বললেন?
-‘বললাম অন্য একজনের সাথে বিয়ে দিব।তাহলেই তো হলো।
-‘একটু পেছনে ঘুরেন তো…
ভদ্রলোক হকচকালেন।
-‘কেন?
-‘ঘুরেই দেখেন না..চমক আছে..
ভদ্রলোক চমক দেখার জন্য’ই ঘুরলেন বোধহয়।কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারেন না তিনি।পেছনে ঘুরতে একটা গুলির শব্দ শোনা গেল।সবাই চোখ খিঁচে চেঁচিয়ে উঠলো।হারুন রহমান দেয়ালের সাথে চিপকে গেছেন ভয়ে।পিটপিট করে চোখ খুললেন তিনি।হাত- পা পরখ করলেন।নাহ্ বাবা তার কিছু হ…হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন রক্ত পড়ছে।পেছনে ঘুরেন ভদ্রলোক।এরপরেই চেঁচিয়ে উঠলেন—“ও মাগোওওওওওও..!” এমন চমক দিবে জানলে দোঁড়ে পালাতো সে।
কুহু হাসবে না কাঁদবে বুঝলো না।হারুন রহমান লাফাচ্ছেন।সাখাওয়াত আলম রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো আহনাফের পানে।বডিগার্ডদের নির্দেশ দিতেই তারা হারুন রহমানকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেতে লাগলো।আহনাফ তখন বলে উঠলো
-‘ভবিষ্যতে আমার সাথে কথা বলার আগে একশতবার ভেবে বলবেন।শ্বশুরের এসিস্টেন্ট বলে পাছায় মারলাম গুলি অন্যথায় মাথায় মারতাম।
হারুন রহমান মনে মনে বললেন
-‘শেষ রক্ষা হলো না গো..বাঁচাতে পারলাম না আমার পা..ও মাআআ!
আহনাফ কুহুকে টান মেরে নিজের কাছে এনে জোর গলায় বললো
-‘আমার সাথেই থাকবে ও।
সাখাওয়াত আলম দাঁতে দাঁত পিষে কুহুর দিকে তাকালেন।বললেন
-‘তুমি কি চাও?
কুহু একটা শুকনো ঢোক গিললো।আহনাফের হাতের বাঁধন দৃঢ় হলো তার কোমরে।বুঝালো তার সাথে থাকার কথা বলতে বলছে।কুহু জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো
-‘আমি আ…
-‘বলো তিলোত্তমা..
আহনাফের শান্ত স্বরটাও ভয়ংকর শোনালো।সাখাওয়াত আলম বলে উঠলেন
-‘ও তোমার বাবার শত্রু শানায়া।তোমাকে ও ভালোবাসে না, মা।ও তোমার সাথে নাটক করছে।সবটা করছে প্রতিশোধ নিতে।বাবার কাছে আসো মা…
কুহুর বাবার দিকে তাকায়।পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় তার বাবা একজন খুনি।আর সবচেয়ে বড় কথা আহনাফ তার বাবাকে মেরে ফেলবে।এখন সে বাবার সাথে গিয়ে ওর রাগটা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ভুল করবে না।সে বলে উঠলো
-‘ঘুম পাচ্ছে আহনাফ…রুমে যাবো…
সাখাওয়াত আলম আহত চোখে তাকালেন।আহনাফ হাসলো।বিজয়ের হাসি।সে কুহুকে ছেড়ে বললো
-‘রুমে যাও সোনা…আমি আসছি।
কুহু চলে গেল।যাওয়ার আগে একবার তাকালো বাবার পানে।ভদ্রলোক আজকে ব্যথিত হলেন মেয়ের সিদ্ধান্তে।আহনাফ বলে উঠলো
-‘শত্রু থেকে শ্বশুর-জামাই হয়ে গেলাম।খেলা তো এবার জমবে শ্বশুরজি…
সাখাওয়াত আলম আহনাফের কলার চেপে ধরে
-‘খুন করে ফেলবো আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি করলে।
আহনাফ হাসে।ছাড়িয়ে নেয় কলার।এরপর বলে
-‘আপনার মেয়েই হবে আমার হাতিয়ার।তিলে তিলে মারবো বিশ্বাস করুন…একদম..
সাখাওয়াত আলম বলে উঠলেন
-‘মুখোশধারী…তোর এই রূপ আমি আমার মেয়ের সামনে আনবোই।আর আমার মেয়ের গায়ে যদি একটা আঁচ লাগে বিশ্বাস আহনাফ…ধ্বংস করে ফেলবো সব।
-‘দ্যান বেস্ট অফ লাক।
সাখাওয়াত আলম রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যেতে লাগলেন।হঠাৎ পেছনে ঘুরলেন। মনটা মানছে না।মেয়েটাকে বিপদের মুখে রেখে যেতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।মেয়েটা জানেও না সে কোথায় এসে পড়েছে।আহনাফ তার তাকানোর মাঝেই দরজা বন্ধ করে ফেললো।এরপরেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
-‘ব্রাভো আহনাফ! কি অভিনয়টাই না করলি! তুই মারবি তাও কিনা তোর তিলোত্তমাকে! যে মেয়ে তোর দিকে তাকালে তুই নিজেই খুন হয়ে যাস তুই তাকে মারবি! নাইস জোকস্..
আহনাফ হাসতে লাগলো জোরে জোরে।কুহু রুম থেকে খেকিয়ে উঠলো
-‘খ্যাক শিয়ালের মতো করছেন কেন?
-‘অনলি ফর ইউ বেইবি..
-‘তোর নানি বেইবি বাঙ্গির পোলা…
আহনাফ হাসছে।ভালো ভয় দেখিয়েছে সাখাওয়াত আলমকে।রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে লোকটার।ইশ! পৈশাচিক আনন্দ!
গভীর রাত।মাঝে মাঝে ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে।একটা অবয়ব এই রাতে দেয়াল ডেঙিয়ে শাহরিয়ার কুঞ্জে প্রবেশ করলো।হাত ছুঁলে গেছে বোধহয়।সেসব সে পরোয়া করলো না।সে গুটিগুটি পায়ে সামনে এগোচ্ছে।গাছের শুকনো পাতায় পা পড়তেই মচমচ শব্দ হলো।একটা জায়গায় এসে থামলো সে।কাঁধে ঝুলছে ব্যাগ।সে পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলো।বহু কষ্টে বেলকনিতে এসে পৌঁছালো।দরজা খোলাই ছিল বেলকনির।তাই অসুবিধা হলো না ভেতরে প্রবেশ করতে।রাহুল গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।অবয়বটা সেইদিকে এগিয়ে গেল।ব্যাগ থেকে কি একটা বের করে রাহুলের ওপর স্প্রে করে দিল।এরপর একে একে বের করলো জিনিসপত্র।একটা বাটিতে আলকাতরা ঢাললো।ব্রাশে আলকাতরা লাগিয়ে সুন্দর করে রাহুলের সিগারেটে পোড়া ওষ্ঠে লাগাতে লাগলো।গান ধরলো
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৯
“ঠোঁটে লাগাবো কালা আলকাতরা হৈ”
বেশি করে আলকাত্রা লাগিয়ে দিল ওর ওষ্ঠে।এরপর হুডিটা ফেলে দিল।ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি।ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় ফুটে উঠলো তার মুখ।আরেহ! রাফি!!! রাফি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো
-‘যা আরো খা চুমু…একদম লেপে দিয়েছি।শালা মাদারবোর্ড আর মাইয়া পাইলা না!
রাফি সব জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে ফেললো।যাওয়ার আগে ওর গালে ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পর লাগিয়ে হিসহিসিয়ে বললো
-‘সি ইজ অনলি মাইন…
