প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪২

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪২
অনন্যা

গুরুম গুরুম করে বজ্র পড়ছে বাহিরে।বৃষ্টি থামার কোনো নাম’ই নিচ্ছে না আজ।বৃষ্টি যেন আজ না থামার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে।শাহরিয়ার পরিবার যে যেখানে ছিল সেখানেই আছে।অখিল শাহরিয়ার, আনিসা বেগম আর রাহুলের জ্ঞান ফিরানো হয়েছে।আহান শাহরিয়ার মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেন।কি থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না।আহনাফ একটু ব্রেক দিয়েছে সবাইকে।পনেরো মিনিটের একটা বিরতি।এর মাঝেই যার যা কাজ আছে করে নিতে বলেছে সে।এরপর আবার শুরু হবে রহস্য উন্মোচনের খেলা।এ যেন কোনো নাটক চলছে।অনেকেই বলছে যে, বাকিটা আগামী পর্বে মানে আগামীকাল দিলে ভালো হতো।একদিনে এত কিছু জানলে আবার কৌষ্ঠকাঠিন্য না হয়ে যায়!
পনেরো মিনিট শেষ হওয়ার আগেই সবাই একসাথে হলো। সাজ্জাদ শাহরিয়ার,জেরিন বেগম আর রাহুল ফ্লোরে বসে রয়েছে।আর বাকিরা তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে।আদিত বললো

-‘মনে হচ্ছে যেন দামড়া ছেলে সহ কট খেয়েছে এরা।
রাইফা বললো
-‘চুপ করবে তুমি! হাসলে চলবে না এখন।সিরিয়াস মুহূর্তকে আরো সিরিয়াস করতে আমাদের বেশি করে সিরিয়াস হতে হবে।বুঝলে?
আদিত উপর নিচ মাথা ঝাকালো।রাইফা জিজ্ঞাসা করলো
-‘কি বুঝলে?
-‘সিরিয়াসকে সিরিয়াস মুহূর্তে সিরিয়াস করতে আরো সিরিয়াস হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
রাইফা আদিতের বাহুতে থাপ্পর বসালো।বাকিরা শব্দ করে হেসে ফেললো।আদিত বললো
-‘হুহ! শখের নারীর মারও চুমুর মতো লাগে।তোরা কি করে বুঝবি এই অনুভূতি, পাপীর দল!!
নাতাশা বললো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘তাহলে তোদের বাসর রাতে আমি রাইফাপুকে একটা চাপাতি গিফট্ করতে চাই।
-‘আসতাগফিরুল্লাহ! আল্লাহ’র গজব পড়বো।এই পাপীদের থেকে আমাকে রক্ষা করো, আল্লাহ।
সবাই হেসে ফেললো ওরা। পনেরো মিনিট হয়েই এসেছে। কিন্তু আহনাফ কই?সবাই আহনাফের খোঁজ করতে লাগলো এবার।কই গেল তারা?

-‘আমার বাবা খুনি নয়?
-‘চুমু…
-‘উত্তর দিন…
কুহু বেশ কঠোর স্বরে বললো।আহনাফ ভাবলেশহীনভাবে আবার বললো
-‘চুমু দাও…
কুহুর রাগ হলো এবার।
-‘বাঙ্গির চুমু দিব…মেজাজটা খারাপ করেন।আমার বাবা খুনি না অথচ আপনি বলেছিলেন আমাকে তিনি খুনি।
আহনাফ হাসলো।কুহু বললো
-‘আপনি এটা আগে থেকেই জানতেন যে তিনি খুনি নয়?
-‘হ্যাঁ।
কুহু আকাশ থেকে পড়লো।রাগে শরীর কাঁপছে তার।আহনাফের কলার চেপে ধরে সে।
-‘এই বাঙ্গির পোলা!! এই!! সাহস হয় কি করে আমাকে মিথ্যা বলার?

আহনাফ আজ পাল্টা আক্রমণ করলো।কুহুর লেহেঙ্গার উপরের পার্টের গলার অংশ চেপে ধরে বললো
-‘এই বাঙ্গির মাইয়া! এই! সাখাওয়াত আলম যে তোমার বাবা সেটা তুমি আমাকে জানিয়েছিলে? বলো? জানিয়েছিলেএএএ?
কুহু এক মুহূর্তের জন্য থামলো।ইশ! দোষ তো তার’ই।কিন্তু ঝগড়ার মাঝে হেরে গেলে তো চলবে না।কুহু বলে উঠলো
-‘বেশ করেছি জানাইনি।আপনি না খোঁজ নিয়েছিলেন আমার ব্যাপারে? তাহলে জানতেন না কেন তা?
-‘আমি তো জানতাম’ই।তুমি নিজে থেকে জানালে না কেন?
কুহু একটা শুকনো ঢোক গিললো।এরপর আহনাফের কলার ছেড়ে একটু ভাব নিয় বললো
-‘গুড জব।আমিও জানতাম আপনি জানেন তাই বলিনি।দেখছেন আমার কত বুদ্ধি! আপনার কপাল ভালো আমার মতো এত বুদ্ধিমতি বউ পেয়েছেন।আই লাইক ইউর চয়েস আহনাফ শাহরিয়ার।এভাবেই সামনে এগিয়ে যান।জয় বাঙ্গি।

আহনাফ আর কুহু ওয়াসরুমের এক সাইডে ছিল।আহনাফ কুহুকে ছেড়ে তার মতো করেই বললো
-‘আমিও জানতাম আপনি জানেন তাই আর জিজ্ঞাসা করিনি।দেখছেন আমার কত বুদ্ধি! আপনার কপাল ভালো আমার মতো এত বুদ্ধিমান জামাই পেয়েছেন।আই লাইক ইউর চয়েস শানায়া আলম।এভাবেই সামনে এগিয়ে যান।আর যাওয়ার আগে অবশ্য’ই আমার চুমুটা দিয়ে যান।
কুহু বিরক্ত হলো।আবার সেই এক কথা।সে বললো
-‘ওয়াসরুমে গিয়ে বদনাকে চুমু খান।আমার এখন মুড নেই।
আহনাফ বললো

-‘এসব বদটা টদনা এখানে নেই।তাই তো তোমাকে বলছি।
কুহু হা হয়ে গেল।কি সুন্দর করে অপমান করে দিল! বাঙ্গির পোলার তো হেব্বি বুদ্ধি! কুহু চেতে বললো
-‘বেয়াদপ পুরুষ মানুষ।যান দূরে যান…একদম কাছে আসবেন না আমার।বদনা নেই বলে আমাকে বলছেন তাই না! যান সরেন…
কুহু আহনাফকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলে আহনাফ তার হাত চেপে ধরলো। বললো
-‘শুধু রাগ আর রাগ! একটা চুমু দিলে কি হয়…দাও না!
-‘ওলে বাবালে!! বাহিরে এত মানুষকে অপেক্ষা করিয়ে তুমি এখানে চুমু খাবে!! তা তো হবে না গুরু।
হঠাৎ আদিতের স্বর শুনে ভড়কে গেল তারা।আহনাফ ছেড়ে দিল কুহুর হাত।কুহু ছুট্টে পালালো।আহনাফ বললো

-‘তোরা একটু এদিক আয় তো!
আদিত বললো
-‘কেন ভাই?
-‘না মানে আমি এমন ক্ষতি করেছি তোদের যে প্রত্যেকবার আমার রোমান্সের সময় ঠাডা ফেলিস? বল একটু শুনি…
আদিত আর আরিফ একে অপরের দিকে তাকালো।আদিত বললো
-‘সারারাত পড়ে আছে ভাই।কেউ ডিস্টার্ব করবো না তোদের।
আহনাফ বিরক্ত নিয়ে তাকালো ওদের দিকে।এরপর ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল।আদিত আর আরিফ ফিক করে হেসে ফেললো।

-‘প্রিয় অতিথিগণ…সবাই রেডি?
সবাই চেঁচিয়ে হ্যাঁ বললো যেন এখন আরেক নাটক শুরু হবে।এদিকে সাখাওয়াত আলম চিন্তায় ভুগছেন।মালিনী বেগমকে তিনি খুন করেছেন! এটা জানতো সবাই! হচ্ছেটা কি? আহান’ই তো উল্টো সাখাওয়াত আলমের বউকে মার্ডার করেছেন।নাকি সেটাও মিথ্যা? কারণ এই কথাটাও তো তাকে জানিয়েছিল…
-‘সাজ্জাদ শাহরিয়ার..আপনিই বলুন বরং…আমার মুখ ব্যথা হয়ে গেছে আপনার কুকর্মের কথা বলতে বলতে।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার দেবদাসের মতো বসে আছেন।এখন মুখ খুললেই কি আর না খুললেই কি! তিনি হতাশ স্বরে বললেন

-‘মালিনী ভাবি অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন।পরিবারের বড় বউ বিধায় তার কাছে সব দায়িত্ব থাকতো যা এই জেরিন মানতে পারতো না।
-‘এই! তোমার কথা বলতে বলছে।আমার কথা বলছো কেন বেয়াদব?চুপ করো…
জেরিন বেগম খেকিয়ে বললেন কথাটা।অখিল শাহরিয়ার বললেন
-‘বিন্দু মাত্র লজ্জা সরম নেই তোমার? নির্লজ্জ কোথাকার!
জেরিন বেগম কিছু বললেন না।কি আর বলবেন তিনি? বলার মতো মুখ রেখেছেন!
-‘আচ্ছা বাদ দিন আমি বলছি।
-‘না থাক আহনাফ আমিই বলছি।
আহনাফ তার কথা শোনেই নি যেন।সে বললো

-‘মিস্টার সাখাওয়াত আলম ওরোফে আমার শ্বশুর।ওহ বাই দ্যা ওয়ে..আপনারা কি জানেন এটা যে সাখাওয়াত আলম সম্পর্কে আমার শ্বশুর হয়? জানেন না রাইট?
সবার চোয়াল ঝুলে পড়লো।এ আবার কি বোম ফাটালো আহনাফ! আহনাফ বললো
-‘আমার ওয়াইফ কুহু শেখ ওরোফে শানায়া আলম সাখাওয়াত আলমের একমাত্র কন্যা।যাকেও সবাই মৃত জানে।
সবার মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো।কুহু সাখাওয়াত আলমের হাত চেপে ধরে রেখেছে।সাখাওয়াত আলম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
-‘যাজ্ঞে সে কথা…আমার শ্বশুর আবার জানে তার বউকে আমার বাপ খুন করছে।রাইট?
সাখাওয়াত আলম কিছু বললেন না মুখে।এটাই তো সত্য।তিনি উপর নিচ মাথা ঝাকালেন আস্তে ধীরে।আহনাফ বললো

-‘গুড..বাট এটাও ঠাডা পড়া মিথ্যা কথা।জেরিন বেগম আমার শ্রদ্ধেয় চাচি আমার মাকে হিংসা করতেন।চাবির গোছার দিকে তার নজর ছিল।রাইট?
জেরিন বেগম কিছু বললেন না।মাথা নিচু করে রেখেছেন তিনি।রোদেলা মুখ ফিরিয়ে নিল।জীবনে একটু শান্তি বোধহয় মিলবে না মেয়েটার।আহনাফ বললো
-‘তাই আমার মা ছিল তার দুই চোখের বিষ সে যত’ই উপরে ভাব দেখাক।তো একদিন কি হলো! রাতে সাজ্জাদ শাহরিয়ারকে গেস্টরুম থেকে বের হতে দেখলেন আমার মা।একটু পরেই সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন আবার আমার শ্রদ্ধেয় মিসেস চাচি।তো যা বুঝার বুঝেছেন নিশ্চই?
অখিল শাহরিয়ারের কানটা ধরে গেল।তিনি উঠে দাঁড়ালেন।রোদেলা তার হাত ধরে বললো

-‘সবটা শুনো আগে।কোথাও যাবে না..বসো..
-‘রোদ!
-‘বসো…
অখিল শাহরিয়ার ছলছল নয়নে মেয়ের দিকে তাকালেন।রোদেলা অনুভূতিহীন হয়ে গেছে যেন।
-‘এখন আপনাদের আমার কথা বিশ্বাস না হতেই পারে।চলুন সবাই স্ক্রিনে তাকাই।
তাৎক্ষণাৎ সাজ্জাদ শাহরিয়ার উঠে দাঁড়ালেন।না জানি এই ছেলে আবার কি দেখাবে! তিনি বলে উঠলেন

-‘না, না..এ’এটা সত্য সত্য..আ’আমি বলছি তো…আর কিছু দেখতে হবে না।ভা’ভাবি দেখেছিলেন ঐদিন।এরপর জেরিনকে জিজ্ঞাসা করে এই ব্যাপারে।ধরা পড়েছিলাম আমরা বলতে গেলে।ভাবি অনেক বুঝায় ওকে যা ওর রাগকে আরো বাড়িয়ে দেয়।সেদিনের পর ঘটে আরেক ঘটনা।ভাবি আমার নারী পাচারের ব্যবসা সম্পর্কে জেনে যায়।ব্যাস! আমিও জেরিনের মতো করে ভাবিকে সরাতে চাইলাম।এরপর প্ল্যান করে ভাইজান আর সাখাওয়াত ভাইয়ের বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটাই।সাখাওয়াত ভাইকে বারবার উসকে দিতে থাকি ভাইজানের বিরুদ্ধে যেতে।শেষে তাকে এটা বুঝাই যে ভাইজানের সাথে সাখাওয়াত ভাইয়ের ওয়াইফের সম্পর্ক আছে।যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। এরপর এমনভাবে ঘটনাটা সাজাই যে ভাবির মৃত্যুর দায়ভার গিয়ে পড়ে সাখাওয়াত ভাইয়ের উপর।আর সাখাওয়াত ভাইয়ের ওয়াইফকেও আমি খুন করি।কারণ ভাইজানের প্রতি তখনও তার দরদ ছিল।তাই তার ওয়াইফকে খুন করে বলি যে ভাইজান খুন করেছে।ঠিক ভাইজানের মতো পাঞ্জাবি পড়ে আমি খুনটা করেছিলাম।সেটার ভিডিও দেখাই।এমন এক ভান করি যেন আমি দেখতে গিয়েছিলাম তখন খুন হতে দেখেছি।ব্যাস এতোটুকুই।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন কথাগুলো বলে।সবাই হা হয়ে গেল।কথাগুলো বুঝতে মিনিট পাঁচেক লাগলো তাদের।সাখাওয়াত আলম হতভম্ব হলেন।তাকালেন আহান শাহরিয়ারের দিকে।আহান শাহরিয়ার এ কথা জানতেন না।সাখাওয়াত আলম বললেন

-‘কথাগুলো সত্য নাকি ভয়ে বলছো?
আহনাফ বললো
-‘আমার মতো একজন সহজ-সরল মানুষকে ভয় পাবে! মজা করবেন না তো শ্বশুরজি।
সাখাওয়াত আলম মুখ কুচকালেন।এ নাকি সাদা-সিধে! খেয়ে দিল সাদা-সিধে মানুষগুলোকে একদম।
-‘সবাই সবটা বুঝতে পেরেছেন?
সবাই হা হয়ে থেকেই উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো।আহনাফ বললো
-‘একটা প্রমাণ দিতে ইচ্ছা করছে।সবাই স্ক্রিনির দিকে তাকাই আমরা।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার খেকিয়ে বললেন
-‘এই আবার কিসের জন্য? বলেই তো দিয়েছি সব।
আহনাফ বললো

-‘আহা! ভয় পাচ্ছেন কেন? শান্ত হন।আর দেখতে দিন সবাইকে।
সবাই তাকালো।তাদের পুরোনো ড্রাইভার মালেক সাহেবের স্বীকারউক্তি।আহনাফরা এটার ভিডিও করেছিল।ভিডিওতে তিনি সবটা বলছেন যে জেরিন বেগম তাকে টাকা দিয়েছিলেন এমনটা করতে।সাথে ছিলেন সাজ্জাদ শাহরিয়ার।সাখাওয়াত আলমের সাথে তার কোনোদিন কথাও হয়নি এটাও বললেন।আহান শাহরিয়ার দু পা পিছিয়ে গেল।ভেতরটা ভেঙে চূড়ে আসছে তার।সাখাওয়াত আলমের হাতটা কুহু আরো শক্ত করে ধরলো।সাখাওয়াত আলম তাকালেন আহান শাহরিয়ারের দিকে।তার মানে সবটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল! তার আহান নির্দোষ! হায় আল্লাহ! সে তো আহানকে মারতে কত পরিকল্পনা করেছিল।যদি কিছু করে ফেলতো! মরে গেলেও তো এই আফসোস তার ফুরাতো না তাহলে।হারুন রহমান আস্তে করে বললেন

-‘ডিজিটং! পোলা দেখি আগুনের গোলা।একসাথে এতকিছু বের করে ফেলেছে!
কিছুক্ষণ নিরবতা।এরপর হঠাৎ সাখাওয়াত আলম সবাইকে চমকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আহান শাহরিয়ারকে।আদিত গান ধরলো
-‘ইয়ে দোসতি..আম নেহা..তরঙ্গ..তরঙ্গ…
সবাই অদ্ভুদভাবে তাকালো তার পানে।হিন্দি পারিস না তো গাওয়ার কি দরকার! নাতাশা বললো
-‘গানটাকে খেয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।কৃপা করে এবার যদি মুখটা বন্ধ করতেন সঙ্গীতান্দ্রনাথ আদিত বাবা।
সবাই হু হা করে হেসে ফেললো।আদিত চেঁচিয়ে মনের সুখে গেয়েই যাচ্ছে।গাইছে বললে ভুল হবে রীতিমত চেঁচাচ্ছে সে।
-‘তরঙ্গঅঅঅঅ…তরঙ্গঅঅঅঅঅ…
সবাই কানে হাত দিয়ে ফেললো।রাইফা বললো
-‘তরঙ্গ বাবাজি থামেননন…আল্লাহ গোওও….
আদিত বললো

-‘একটু গানও গাইতে দিল না।কারোর সহ্য হয় না অমার সুখ।হুহ!
সবাই আরেক দফা হাসলো।এদিকে সাখাওয়াত আলম আর আহান শাহরিয়ার একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন।কান্নার মাঝেই হাসছেন আবার।ঠিক কতগুলো বছর পর দুই বন্ধু এক হয়েছেন? জীবনে ভাবেনওনি যে আবার এক হতে পারবেন।সেই বাল্যকালের বন্ধুত্ব যখন হঠাৎ এক ঝড়ে ভেঙে গেল দুজন’ই ভেঙে পড়েছিলেন।বাহিরে প্রতিশোধ নিবে বললেও মনে মনে দুজন’ই চাইতেন এর সমাপ্তি হোক।আবার এক হোক তারা।আবার দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলুক।আল্লাহ’ই করে দিলেন তা।মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা বুঝি পূরণ হলো।সবাই দেখলেন আজ দুই বন্ধুর মিল।আহনাফ মুচকি হাসলো।হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হলেন সেই ওসি সাহেব।

-‘এহুম.এহুম…মিস্টার শাহরিয়ার!
আহনাফ তাকালেন তার দিকে।আরিফ মুখ কুচকে ফেললো।আবার কোন হিডেন ট্যালেন্ট দেখাতে এলেন এই ভদ্রলোক!
আহনাফ এগিয়ে গেল।
-‘আরে অফিসার আসুন আসুন…
-‘জ্বী আমিও সব দেখেছি।এখন তাহলে এনাদের নিয়ে যাই?
সাজ্জাদ শাহরিয়ার ভড়কে গেলেন।রাহুল অনুভূতিহীন।জেরিন বেগম বললেন
-‘কো’কোথায় নিয়ে যাবেন?
আহনাফ মুচকি হেসে বললো

-‘আপনার মামার বাড়িতে।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার হঠাৎ আহনাফের পা ধরলো।আহনাফ চমকে পেছনে সরে গেল।
-‘আহনাফ দহাই লাগে…এরকম করো না…পুলিশে দিও না দয়া করে…আ’আমি তো স্বীকির করেছি সব।আমি বিদেশ চলে যাব।আর আসবো না।সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিব আমি।
আহনাফ বললো
-‘কয়লা ধুলে কি আর ময়লা যায় কাক্কু! আবার আপনারা আমার মাকে খুন করেছেন।আপনাদের ছেড়ে দিব ভাবলেন কি করে?
সাজ্জাদ শাহরিয়ার একটা শুকনো ঢোক গিললেন।তিনি তো ভুলেই গিয়েছিলেন যে তার কাছে রিভালবার আছে।তাৎক্ষণাৎ তিনি সেটা বের করে আহনাফের দিকে তাক করলেন।সবাই মুখে হাত দিয়ে ফেললো।

-‘যেতে দাও আমাকে আহনাফ।
আহনাফের কোনো ভাবমূর্তি এক’ই দেখে সাজ্জাদ শাহরিয়ার কপাল কুচকালেন।হঠাৎ আহনাফ তুড়ি বাজালো।আর সাথে সাথে সাজ্জাদ শাহরিয়ারের হাত বরাবর কেও গুলি করলো।সবাই কানে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।আহনাফ পড়ে যাওয়া বন্দুকটা হাতে তুললো।
-‘আহনাফ শাহরিয়ার মাঠে নেমেছে যখন একদম তৈরি হয়েই নেমেছে।তবে অবাক হয়েছি আপনি এটা আগে প্রয়োগ করেননি বলে।এনিওয়েজ, ভেবেছিলাম ক্ষমা করবো এখন তো প্রশ্নই উঠে না।অফিসার! নিয়ে যান…
ওসি সাহেব বললেন
-‘আরেকটুর হলেই আমি আমার হিডেন ট্যালেন্টটা তুলে ধরতে যাচ্ছিলাম।যাই হোক তার আর প্রয়োজন পড়লো না।আরিফ বললো

-‘এই না, না।এসব হিডেন ট্যালেন্ট এখানে দেখাবেন না প্লিজ।
ওসি সাহেব আরিফকে আগেই চিনেছেন।তিনি হো হো করে হাসতে লাগলেন।বাকিরা বুঝলো না কিছুই। এদিকে রাহুল উঠে দাঁড়ায় এতক্ষণে।গিয়ে খপ করে রোদেলার হাত ধরে।রোদেলা চমকে উঠলো।
-‘সৎ বোন হোক আর যে বোন’ই হোক।আমি তোমাকে ভালোবাসি।আই নিড ইউ।
রাফি তেড়ে যেতে নিলে আহনাফ থামালো।
-‘আরেহ! রাহুল! ভাই আমার! বিবাহিত নারীর দিকে চোখ দিস না ভাই।তুই এখন সম্পর্কে ওর ভাসুর হোস প্লাস আবার ভাই।
রাহুল কপাল কুচকায়।

-‘ভাসুর! কার ভাসুর? কিসের ভাসুর?
রাফি গিয়ে রোদেলার হাত রাহুলের থেকে ছাড়িয়ে নিজের সাথে তাকে জড়িয়ে বললো
-‘মিট মাই সুইট,কিউট ওয়াইফ।মিসেস আরিশ শাহরিয়ার।
রাহুলের মাথায় বজ্র পড়লো আবার।সে তো ভেবেছিল মজা করে বলছে।রাহুল রাফির কলার চেপে ধরলো
-‘খুন করে ফেলবো একদম।ও আমাকে ভালোবাসে।আমি জানি এটা।
রাফি ওর হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো
-‘বিশ্বাস না হলে তাকেই জিজ্ঞাসা করো মাই ডিয়ার হুল।
রাহুলের ভেতর ধরফর করছে।সে তাকায় তার বেইবিগার্লের দিকে।
-‘এই জান! আমার বেইবিগার্ল! তু’তুমি আমাকে ভালোবাসো।তাই না? এসবকিছু মিথ্যা তাই না?বলো না..এসব মিথ্যা।তুমি তো শুধু আমার।
রোদেলা হঠাৎ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।বললো

-‘যন্ত্রণা হচ্ছে না খুব?খুব কষ্ট হচ্ছে এটা শুনে যে আমি অন্য কারোর বউ?
রাহুল নিরুত্তর।ছলছল নয়নে তাকিয়ে সে।
-‘ এই প্রথম আপনি কাউকে ভালোবেসেছিলেন।আই নো দ্যাট। ভালোবেসে না পেলে তার যে ঠিক কি যন্ত্রণা সেটাই আমি আপনাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম।এন্ড আই উইন।আমি পেরেছি সেটা।এতদিন ভালোবাসা নিয়ে আপনি খেলেছেন এবার আমি আমি খেলেছি।সবগুলো মেয়ের হয়ে আমি প্রতিশোধ নিয়েছি মিস্টার রেনান।আর আমি পেরেছি..পেরেছি আমি।
রাহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার পানে।এটা কি তার কর্মফল ছিল? এদিকে আদিত..
-‘তেরেনা ধুমতানানা..তেরেনা ধুমতানানা..আআআআ..ধুমতানানা…
আরিফ বিট দিচ্ছে

-‘ঢিচ্চিক..ঢিচ্চিক…রাহুল..ঢিচ্চিক ঢিচ্চিক রাহুল…
রাইফা আর নিধি দুটোর বাহুতে থাপড় মারলো।বাকিরা হাসি আটকাতে ব্যস্ত।আয়ান বললো
-‘রোদেলা এমনটা না করলেও পারতো।ভালোবাসা নিয়ে খেলা উচিত না।
সবাই তার দিকে ঘুরে তাকালো।
-‘কি বললে?
আয়ান ভড়কে গেল।মেকি হেসে বললো
-‘এই প্রথম রোদেলা একটা ভালো কাজ করেছে।বেশ করেছে একদম।
আদিতরা উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো।নাতাশা তার পিঠ চাপড়ে বললো
-‘বেঁচে গেলে…
আয়ান মেকি হেসে কপালের ঘাম মুছলো।

-‘আবার হন আবার সৎ ভাই।আপনার আর আমার বাপ এক’ই।ছিঃ!
রাহুলের চোয়াল শক্ত হলো। রেগে সাজ্জাদ শাহরিয়ারের দিকে তাকালো।ভদ্রলোক অন্যদিকে ঘুরে গেলেন।আহনাফ হঠাৎ বললো
-‘আমি একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।
সবাই আহনাফের দিকে তাকালো।
মিনিট খানেক বাদ…

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থেকেই আলহামদুলিল্লাহ বললো।একটু আগেই রাহুল রোদেলার বিয়ের উকিল হয়েছে।এক কথায় উকিল বাপ। রাহুল এখন শোকে মহা শোকাহত।আহনাফ বলেছে উকিল বাপ হলে শাস্তি কম হবে।আবার উপস্থিত সবাই একমত জানিয়েছে।এই ছেলে এমনিতেই রোদেলাকে পছন্দ করে।যদি পরে খারাপ কিছু করে? তাদের দেখে তো সমাজ নষ্ট হবে।তাই আবার বেআইনিভাবে সৎ ভাই হয়।রাহুলের ভেতরটা ভেঙে টুকরো টুকরো হলো।প্রথমে ছাইয়া থেকে ভাইয়া এখন ডিরেক্ট বাপ বানিয়ে দিল।ছাইয়া থেকে বাপ..কথাটা শুনতেও কেমন যেন লাগছে।নিজে বিয়ে করতে এসে নিজের হবু বউয়ের উকিল বাপ হয়ে গেল সে।কেউ তার নাম পাতিহাসে উঠাও।এবার রাফি বললো

-‘এবার আমি একটা কথা বলি?
সবাই রাফির দিকে তাকায়।রাফি রোদেলার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ সে দরজার কাছটায় গেল।যেন দৌঁড় দেওয়ার প্রস্তুতি।কপাল কুচকালো সবাই।আহনাফ নিজেও একটু কেঁশে কুহুর হাত ধরে ওদিকে গেল।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।আদিতরাও পজিশন নিয়ে রাখলো।রাফি তখন বলে উঠলো
-‘চোরনি আই মিন রোদেলা রাহুলের চাচাতো বোন’ই হয়।দুজনের বাপ-মা আলাদা।
আহনাফ বললো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪১

-‘ সবাইকে ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে এতক্ষণ নাটকটা দেখার জন্য।বাইইই..
দুইজন’আ তাদের প্রেয়সির হাত ধরে উরাধুরা দৌঁড় দিল।জনগণ বোকা বনে গেল।বিশেষ করে রাহুল।সে আবার জ্ঞান হারালো।ধপ করে চেয়ার সহ স্টেজ থেকে উল্টে পড়লো।সবাই ভড়কে গেল।বেচারা শুধু শুধু উকিল বাপ হলো! অখিল শাহরিয়ারের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।কথাখান শুনে ওসি সাহেবের হিডেন ট্যালেন্ট পর্যন্ত বেরিয়ে এলো।পেছনে ছিলেন সাজ্জাদ শাহরিয়ার।ভদ্রলোক স্ট্যাচু বনে গেল।সে শুধু বললো
-‘মুখ বরাবর কাজটা না করলেও পারতেন ওসি সাহেব।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ শেষ পর্ব 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here