প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৭
Drm Shohag
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স ওকে। ডোন্ট প্যানিক। কিছু করব না।”
এরপর ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বা হাতে মাইরার হিজাব নিয়ে মাইরাকে মাথাসহ ঢেকে দেয়। মাইরা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাস্তার পানে রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মাইরা ইরফানের কোল থেকে নামতে গেলে ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আমায় রাগিয়ো না। স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা চুপ হয়ে যায়। একটু আগেই নরম গলায় কথা বললো। আবার আগের রূপে ফিরে গিয়েছে। একটু পর পর আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকায়।
কিছুক্ষণ পর ইরফান গ্রাম থেকে বেশ অনেকটা দূরে বাজারের মাঝে গিয়ে গাড়ি থামায়। মাইরাকে পাশের সিটে বসিয়ে দেয়। এরপর গাড়ির ডোর খুলে বেরতে নিলে মাইরা বলে ওঠে,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
ইরফান গাড়ির ডোর লাগাতে গিয়ে থেমে যায়। মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“কাজ আছে। হোয়াট?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলল,
“আমার জন্য দু’টো চিপস আনবেন?”
ইরফান অদ্ভুদভাবে মাইরার দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তুমি বড় হবা না?”
মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“বড়-রাও চিপস খায়।”
ইরফান শব্দ করে গাড়ির ডোর লাগায়। মাইরা বুঝলো না সে রেগে যাওয়ার কি বলেছে। সে কি চিপসও খেতে পারবে না? কত খুনখুনে বুড়ি চিপস খায়। তাদের চেয়ে সে কত ছোট! ভাবনার মাঝেই ইরফান গাড়ির ডোর খুলে সিটে বসে পড়ে।
হাত ভর্তি অনেক বড় বড় কয়েকটা পলিথিন, যেগুলোতে অনেকগুলো করে চিপস ঠাসানো। সবগুলো মাইরার কোলের উপর রাখে। মাইরা হা করে চেয়ে আছে। একটার পর একটা পলিথিন ভরা চিপস রাখে ইরফান। মাইরা মাথা উঁচু করল। তার চেয়েও অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে সবগুলো চিপসের হাইট। তব্দা খেয়ে চেয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এতোগুলো এনেছেন কেন? দু’টো আনলেই হতো।”
ইরফান উত্তর দিল না। তার হাতে একটা শাওয়ার জেল। গাড়ির সামনে শাওয়ার জেল রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
মাইরা বেশ কয়েকটা পলিথিন গাড়ির সামনে রাখল। তার অর্ধেকে নেমে আসলে মাইরা পলিথিন থেকে সবগুলো চিপস বের করে রাখে কোলের উপর। জায়গা না হওয়ায় এদিক-ওদিক পড়ে যায়। ইরফানের কোলের উপর দু’টো ছিটকে প্যাকেট যায়। মাইরা হাত টানা দিয়ে চিপস দু’টো ধরলে ইরফান বা হাতে মাইরার হাত চেপে ধরে। ডান হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায়, ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে চায় একবার। দৃষ্টি সরিয়ে রাস্তার পানে আনে। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“বড় হবে কবে?”
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। একটু থেমে বলে,
“আমি তো বড়-ই। বড়-রাও চিপস খায়। আপনি হয়তো জানেন না।”
ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে বাম হাত গাড়ির স্টিয়ারিং-এ রেখে বিড়বিড় করে, “গাধা।”
মাইরা হাত ছাড়া পেয়ে ইরফানের কোল থেকে চিপস দু’টো নেয়। সবগুলো নেড়েচেড়ে দেখল। অনেক ধরনের চিপস। প্রতিটি দু’টো করে। গাড়ির সামনে যেগুলো রেখেছে সেগুলোও ঢাললো। অনেকগুলো নিচে পড়ে যায়। মাইরা নিচু হয়ে তুলে আবার সেগুলো গাড়ির সামনে রাখে।
মাইরার মন ভালো হয়। এর মধ্যে মনে হচ্ছে অনেক চিপস-ই সে খায়নি কখনো। যেটা পছন্দ হলো সেটাই সবার আগে ছিঁড়ে মুখে পুড়ল। বেশ কয়েকটা খেয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান গাড়ি চালানোয় ব্যস্ত। মাইরা খুশির জোয়ারে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে ওঠে,
“থ্যাঙ্কিউ বর। আপনি একটু একটু ভালো-ই।”
কথাটা বলে আরেকটা চিপস মুখে নেয়। কা’ম’ড় দেয়ার আগেই মনে হয় কি বললো সে? আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। মুখ ফসকে কি বলে ফেলেছে ভাবতেই নিজেই বরফ হয়ে বসে রইল। মুখের চিপস-এ আর কা’ম’ড় বসানোর কথা মনে থাকলো না। কি জ্বালা, এমন লাগছে কেন? ভুলভুল শব্দ বলে দিল, মুখের ব্রেক থামেনা কেন তার?
ইরফান গাড়ির স্পিড বাড়ায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হাসে। কিছুক্ষণের মাঝে তার ফুপির বাসার সামনে গাড়ি থামায়। এরপর ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“বের হও।”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকিয়ে অপরাধীর ন্যায় বলে,
“স্যরি!”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াই?”
মাইরা কি বলবে বুঝল না। বরকে বর ডাকার জন্য স্যরি বলছে। কোন বউ এটা করে? মাইরা নিজের উপর-ই বিরক্ত হলো। ইরফানকে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দাঁত বের করে হেসে বলে,
“মাই উইস।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“স্টুপিট।”
মাইরা মনে মনে হাসে। এই লোকটাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে এভাবেই অ্যান্সার দেয়। এখন বুঝুক কেমন লাগে।
ইরফান ডোর খুলে গাড়ি থেকে বের হয়। মাইরার অপর পাশে এসে ডোর খুলে দিলে মাইরা যতগুলো পারল, ততগুলো চিপস এর প্যাকেট দু’হাতে ভর্তি করে নিল। এরপর মাথা তুলে ইরফানের দিকে চেয়ে অসহায় হয়ে বলে,
“আর নিতে পারছি না!”
ইরফান নিচু হয়ে গাড়ির সামনে থেকে সবগুলো চিপস পলিথিনে ভরলো ফটাফট। মাইরার কোলের উপর থেকে চিপসগুলো নিয়ে সেগুলোও পলিথিনে ভরে সবগুলো তার একহাতে নিল। অপরহাতে শাওয়ার জেল। মাইরা গাড়ি থেকে নেমে ইরফানের পিছু পিছু যায়।
ইরফান বাড়ির ভেতর গিয়ে চিপস এর প্যাকেটগুলো টেবিলের উপর রেখে মাইরার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। মাইরা চেঁচিয়ে বলে,
“আরে কি করছেন? ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান শুনলো না। মাইরার হাত চেপে তার ঘরে নিয়ে যেতে লাগলো। তৃণা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মাইরাকে ইরফান নিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি আর কিছু বললেন না। মৃদু হাসলো শুধু। ইরফানের অবস্থা দেখে তিনি হাসেন। এই ছেলেকে আগে তার বাড়িতে আনতে কত বেগ পোহাতে হতো। এখন পারলে নিয়মিত আসে! কারণ তো অজানা নয়।
ইরফান মাইরার হাত থেকে টান মেরে চিপস এর প্যাকেট নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। এরপর মাইরার হাতে শাওয়ার জেল ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“শাওয়ার নাও, ফাস্ট।”
মাইরা শাওয়ার জেল উল্টেপাল্টে দেখে। এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ওই ওয়াশরুমে সাবান আছে। এটা আপনি রেখে দিন।”
ইরফান রেগে বলে,
“স্টুপিট, কিছু শুনতে চেয়েছি? পুরোটা দিয়ে এক্ষুনি শাওয়ার নিবে যাও।”
মাইরা অদ্ভুদ চোখে তাকায়। পুরোটা মানে? এটা তো ছয়মাস যাবে মনে হচ্ছে। সেটা সে একদিনেই ঢেলে দিবে? এতো বড় শাওয়ার জেল এনেছে কেন? ইরফানের দিকে চেয়ে বলে,
“পা’গল নাকি আপনি? এটা লাগবে না আমার। রাখুন তো।”
ইরফান বিরক্ত হয়। এই স্টুপিট কে ভালোভাবে কিছু বললে শুনবে না।
মাইরার দিকে চেয়ে ইরফান তার শরীর থেকে কোট খুলে ছুঁড়ে ফেলে। দু’হাতের সাদা শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়। এরপর বা হাতে মাইরার পেট চেপে তাকে উঁচু করে ধরে। দ্রুতপায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মাইরাকে দাঁড় করিয়ে শাওয়ার অন করে দেয়। ঝপঝপ করে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় পানি পড়তে থাকে, মাইরা মাথা থেকে হিজাব পড়ে যায়, পানির কণাগুলো চুল পেরিয়ে শরীর ছুঁয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। সরে যেতে নিলে ইরফান মাইরাকে টেনে ধরে শাওয়ারের নিচে। পানির দাপটে মাইরার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। আদোআদো চোখ মেলে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
“ছাড়ুন আমায় অ’স’ভ্য লোক।”
কথাটা বলে হাতের শাওয়ার জেলের বোতল ইরফানের দিকে ছুঁড়ে মারে। ফলস্বরূপ বোতলটি ইরফানের বুকে গিয়ে লাগে। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। নিচু হয়ে বোতলটা তুলে নিয়ে এগিয়ে এসে শাওয়ার অফ করে দেয়।
বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে ধরে শাওয়ার জেল এর বোতল মাইরার মাথায় ঢেলে দেয়, ডান কাঁধে ঢেলে দেয়। সবগুলো ঢেলেছে। মাইরা মোচড়ামুচড়ি করে। ইরফান তার কাজ শেষে ফাঁকা বোতল ছুঁড়ে ফেলে। মাইরাকে ছেড়ে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। মাইরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বোলায়। মাইরা ঢোক গিলছে। ভেজা জামা গায়ের সাথে একদম লেপ্টে আছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“তুমি জেলগুলো গায়ে মাখবে নাকি আমি স্টার্ট করব?”
মাইরা মাথা নিচু করেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠে ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
“আপনার একটুও ল’জ্জা নেই?”
ইরফান মাইরার ভেজা মুখপানে চেয়ে অকপটে বলে,
“নো।”
ইরফানের দৃষ্টি দেখে মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। মিনমিনে গলায় বলে,
“আপনি বাইরে যান।”
“নো।”
মাইরার হাতপা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“যান বলছি। মেয়েদের গোসল করা দেখতে চান?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার বডিতে নোংরা লেগেছে। ভালোভাবে ক্লিন করতে হবে। স্টার্ট কর, ফাস্ট।”
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“বিশ্বাস করুন আমার শরীরে একদম ময়লা নেই। আমি কোনো নর্দমায় পড়িনি। আমি অনেক সাবধানে চলাফেরা করি।”
ইরফান এগিয়ে আসতে নিলে মাইরা দেয়ালের সাথে চেপে গিয়ে বলে,
“করছি করছি। এগোচ্ছেন কেন?”
ইরফান দাঁড়িয়ে যায়। গম্ভীর স্বরে বলে, “ফাস্ট।”
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
“আপনি যান। আপনি থাকলে পারবো না।”
ইরফান রেগে বলে,
“আমায় রাগিয়ো না। নয়তো আমি স্টার্ট করব।”
কথাটা বলতে বলতে শার্টের হাতা গোটায়। মাইরা রেগে বলে,
“আপনি একটা অ’সভ্য লোক। আমি আপনার সামনে সব খুলব?”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ভাবলেশহীন হয়ে বলে,
“সো হোয়াট?”
মাইরা থতমত খেয়ে তাকায়। অসহায় লাগছে নিজেকে।
“আপনার কি মনে হচ্ছে আমি ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“নো। আপাতত তোমার বডির চেয়ে ম্যানহোল বেটার।”
মাইরার মনে হলো তার বডি পঁচে গিয়েছে। মাইরা বুঝতে পারছে না ইরফান কেন এমন করছে। মেয়েটা মাথা নিচু করে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“প্লিজ যান এখান থেকে।”
ইরফান মাইরার সামনে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়।
মাইরা মাথা নিচু করেই এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ইরফান দু’হাতে মাইরার গাল ধরে উঁচু করল। ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে মেয়েটা। চোখ নিচে নামানো। কেমন হাসফাস করে। ইরফান ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মাইরার কপালে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু পানির কণা মুছে দেয়। বা হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে গলার তিলে আঙুল ছোঁয়ায়, দৃষ্টি সেথায় নিবদ্ধ রেখে গম্ভীর স্বরে বলে,
“বডি ভালোভাবে ক্লিন করবে, ওকে? আদারওয়াইস, সেকেন্ড টাইম নো চান্স,, আমি নিজ হাতে গোসল করাবো।”
মাইরা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“করব, ভালোভাবে করব।”
ইরফান মাইরার মুখের দিকে তাকায়। মৃদুস্বরে বলে,
“গুড গার্ল।”
কথাটা বলেই ইরফান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা আটকে রাখা শ্বাস ফেলে।
ইরফান দুপুর পর পরই গ্রাম থেকে ব্যাক করে অফিসের কাজ সব সামলে নিয়েছে। বেশ রাত করে বাড়ি ফিরল।
“গ্রামে গিয়েছিলে কেন?”
বাবার কথায় ইরফানের পা থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কাজ ছিল।”
“কাজ টা কি সেই ছেলের হাত ভাঙা?”
ইরফান পিছু ফিরে তার বাবার দিকে তাকায়। ভাবনা বিহীন উত্তর করে, “মেবি!”
তারেক নেওয়াজ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। রেগে বলে,
“তুমি কি এখন শিক্ষকতা ছেড়ে গুণ্ডামিতে যোগ দিতে চাইছো?”
“ভেবে দেখব।”
তারেক নেওয়াজ হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল ছেলের পানে। গাজীপুর থেকে ফিরে আসলে গ্রামের এক পরিচিত লোক তাকে কল করে জানায়, তার ছেলের হাত ভেঙে দিয়েছে তার ছেলে ইরফান। লোকটার বোনের মেয়ের বিয়ে ছিল আজ। সেসব রেখে সেই ছেলেকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়ায়। তারেক নেওয়াজ এর মোটামুটি ভালোই সম্পর্ক ছিল লোকটার সাথে। এখন ইরফানের জন্য কি একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়ে গেল! ছেলের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“তোমাকে কেউ কিছু বললে গায়ে তো লাগাও না। এখন কি আমার মান সম্মান টাও খাবা বলে মাঠে নেমেছ? হাত ভেঙেছ কেন ছেলেটার?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“মানসম্মান খাবো না বলেই তো যাস্ট একটা হাত ভাঙলাম!”
তারেক নেওয়াজ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
“ছেলেটার হাত ভাঙার পরও তোমার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখছি না।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
তোমার ছেলেটাকে এবার একটু মানুষ হতে বলো রুমা।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলে,
“ছেলেটার হাত ভালো না। যেখানে সেখানে চলে যায়। তবুও তো সাথেই রেখেছি। এতো আপসেট হওয়ার কি আছে? স্ট্রেঞ্জ!”
তারেক নেওয়াজ অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে রইল ইরফানের দিকে। মানে হাত ভাঙার অনুশোচনা তো নেই নেই-ই ইরফানের মাঝে। বরং হাত সাথে রেখেছে এটার জন্যই আফসোস করছে। বাকহারা হয়ে ইরফানের প্রস্থান দেখল। এটা তারই ছেলে তো! সে এতো ভদ্র একটা মানুষ, তার ছেলে ইরফান? রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাবছি ইরফান যে হসপিটালে হয়েছিল, একদিন সেখানে খোঁজ নিতে যাবো। কোন ত্যাড়ার ছেলের সাথে যে আমার ভদ্র ছেলের বদল হয়েছে আল্লাহই জানে!”
তারেক নেওয়াজ এর কথায় রুমা নেওয়াজ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় স্বামীর পানে। রেগে বলে,
“আমিও যাবো একদিন পা’গলা গারদে। আমার স্বামীর মুখোশ পরে কোন পা’গল আমার সাথে বসে বসে সংসার করছে, সেই খোঁজ নিতে।”
কথাটা বলে শব্দ করে পা ফেলে ঘরে চলে গেল। তারেক নেওয়াজ হতভম্ব চোখে স্ত্রীর যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। ছেলের জন্য মাথা নিচু, বউ এর কাছে পা’গল, এসব তার সাথে হচ্ছে টা কী!
অসহায় মুখ করে তার ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো। তার স্ত্রী তাকে না ধুয়ে থাকতে পারে না। এ আর নতুন কী!
দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ চলে যায়। শুদ্ধ গ্রামে এসেছে আজ। সন্ধ্যার পর বাসা থেকে বেরিয়ে নাসিমের নাম্বারে কল করে দেখা করতে। নাছিম আশেপাশেই ছিল। তাই শুদ্ধ নাছিমকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে। মাইরা ঘর থেকে বের হয়। দুপুরের পর থেকে বসে বসে পড়ছিল। ঘর থেকে বের হয়নি। মাত্র বের হলে সামনে শুদ্ধকে দেখে হেসে বলে,
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
শুদ্ধ কিছু বলার আগেই পাশ থেকে নাছিম অবাক হয়ে বলে,
“বার্বি ডল?”
মাইরা শুদ্ধর পাশে সেই বাসের ছেলেটাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। রেগে বলে,
“আপনি আমায় ফলো করতে করতে বাসায়ও চলে এসেছেন? আপনি জানেন আমার জামাই কত রাগি? আপনাকে উড়ে দিতে এক সেকেন্ডও লাগবে না তার।”
নাছিম হা করে চেয়ে আছে। পাশ থেকে শুদ্ধ নিজেও অবুঝ নয়নে চেয়ে আছে। তবে মাইরার কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসলো। ফোন বের করে রেকর্ডের অপশন অন করে বলে,
“তোমার জামাই কি করবে মাইরা? আরেকবার বলো তো!”
মাইরা নাছিমের দিকে চেয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“আমার জামাইয়ের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শুধু রাগ আর রাগ। যদি জানে তার একমাত্র বউয়ের পিছনে কেউ পড়েছে, তবে তাকে ঠুস করে উড়ে দিতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না তার, বুঝলেন?”
শুদ্ধ হাসলো। ভালোই উন্নতি হয়েছে মনে হচ্ছে এদের। হাসি থামিয়ে বলে,
“মাইরা তোমার জামাইয়ের দু’টো খা’রা’প গুণ বলো তো!”
মাইরা নিজের জামাই শব্দটা শুনে একটু ল’জ্জা পেয়ে যায়। ওটা তো কথায় কথায় বলে ফেলেছে। আর এই নাছিম তো বাইরের মানুষ, তার সামনে ইরফানকে নিয়ে বলবে কেন? শুদ্ধ বোধয় মাইরার মনোভাব বুঝলো। তাই গলা ঝেড়ে বলল,
“নো প্রবলেম মাইরা। ও আমাদের ফ্রেন্ড। তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো।”
মাইরা চিন্তিত বদনে বলে,
“উনাকে বলবেন না কিন্তুু।”
শুদ্ধ মনে মনে হাসে। ওকে শোনানোর জন্যই তো বলতে বলছে। উপরে উপরে মাথা নাড়ে।
মাইরা মুখ ফুলিয়ে বলে,
“আসলে উনি গণ্ডার প্রো ম্যাক্স, উনার অনুভূতি নেই,, তার ব্য’থা লাগে না। আর উনি হলো থা’প্প’ড় মারার যন্ত্র। ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী যেমন পরিবেশ নষ্ট করতে ধেয়ে আসে,, আপনার বন্ধু ওভাবে থা’প্প’ড় মারার জন্য আমার গালের মানচিত্র পাল্টাতে ধেয়ে আসে। আবার মাঝে মাঝে একটু মেন্টালদের মতোও আচরণ করে।
লাস্টে মিনমিন করে বলে,
তবে একটু একটু ভালো ও আছে।”
কথাগুলো বলে শুদ্ধর দিকে চেয়ে বলে,
“আপনারা তার বন্ধু বলেই কিন্তুু বলেছি। তাকে বলবেন না যেন।”
নাহিদ গম্ভীর চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা খেয়াল করলে বলে,
“আপনি আবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন? শুনলেন না আমি আপনার বন্ধুর বউ!”
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
“কি হয়েছে মাইরা?”
মাইরা শুদ্ধকে বিচার দেয়,
“ভাইয়া এই লোকটা আমায় অনেকদিন হলো ডিস্টার্ব করে। কিছু বলুন তো!”
শুদ্ধ নাছিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! এতো অধঃপতন হয়েছে তোর? শেষমেশ ইরফানে বউয়ের পিছু পরলি?”
নাছিম রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। অতঃপর বলে,
“ওকে ইরফান কবে বিয়ে করল? ওকে তো আমি বিয়ে করব।”
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
“এই সেই?”
নাছিম রেগে বলে, “হ্যাঁ। ইরফান তো ওকে ডিভোর্স দিতে চায়। কবে দিবে?”
শুদ্ধ মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে আছে। মৃদু হেসে বলে,
“মাইরা মা কে ডেকে বলো, আমার এক ফ্রেন্ড এসেছে।”
মাইরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাথা ভর্তি চিন্তা নিয়ে তৃণা বেগমের ঘরের দিকে যায়। আসলেই ইরফান তাকে ডিভোর্স দিবে? তার বন্ধুরাও জানে। তবে তার খেয়াল রাখে যে এতো! মনটা হঠাৎ-ই খারাপ হয়ে গেল।
শুদ্ধ তার ফোন পকেটে রেখে বলে,
“তোর মামাতো ভাইয়ের হাত কে ভেঙেছে জানিস?”
“কে?”
শুদ্ধ ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
“ইরফান।”
নাছিম চেঁচিয়ে ওঠে, “কিইইই?”
শুদ্ধ কানে এক আঙুল ঢুকিয়ে বলে, “আরে আস্তে। এর কারণ জানিনা। তবে মাইরা রিলেটেড ছাড়া কিছু হবে না। গ্রামে আসেই মাইরার জন্য। হাত ভাঙবে আবার কার জন্য!”
“ওকে পছন্দ করলাম আমি। বিয়ে করল ইরফান, এসব কি ভাই!”
শুদ্ধ মন খারাপের ভান করে বলে,
“এখন ভুলে যা। বিয়ে করে নে আরেকজনকে। নয়তো ইরফান তোর ভাইয়ের হাত ভাঙলো, তোকে আবার না জানি একেবারে পঙ্গুই করে দেয়!”
নাছিম বিরক্ত হলো। মাস তিনেক আগে একবার গ্রামে এসে মাইরাকে দেখেছিল। তখনই ঠিক করেছিলে এই মেয়েকে বিয়ে করবে। এক দেখাতে ভালো লাগার মতো একটা মেয়ে। কয়েক মাসে ভালো লাগার পরিমাণ দীর্ঘ হয়েছে। এখন শুনছে সে মেয়ে ইরফানের বউ।
শুদ্ধর দিকে চেয়ে রেগে বলে,
“তোর ফালতু বকা বন্ধ কর। ইরফান যা কাঠখোট্টা মানুষ। মাইরা ওর বিপরীতধর্মী। যা বলছিস সব স্বপ্নেই সম্ভব। বাস্তবে না। সারাদিন আমার পা ধরে বললেও বিলিভ করব না। ইরফান ডিভোর্স দিলে ওকে আমিই বিয়ে করব।”
শুদ্ধ চোখ ছোটছোট করে তাকালো নাছিমের দিকে। হেসে ঘড়িতে দেখল রাত বাজে নয়টা। হেসে বলল,
“ম্যাজিক দেখবি?”
নাছিম এমনিতেই রেগে আছে। মেজাজ খা’রা’প লাগছে। শুদ্ধর বাঁদরামি তে আরও মেজাজ খা’রা’প হচ্ছে। শুদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে মাইরার সেই রেকর্ড সেন্ড করে ইরফানকে, সাথে একটা ছোট ম্যাসেজ~
‘ছেলেটা মাইরার পিছু পিছু আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। বলছি তোর জন্য তো সিনিয়র মেয়ে দেখছি। যে ছেলে মাইরার পিছু নিয়েছে, সে ভালো ছেলে। কথা বলে সব ঠিক করব?’
মিটিমিটি হেসে ফোন পকেটে রেখে নাছিমের দিকে চেয়ে বলে,
“রাত ১২ টার মধ্যে ইরফানকে এখানে পাবি।”
এরপর শুদ্ধ নাছিমের কাধে হাত দিয়ে বলে,
“মাইরার প্রথম কথাতেই বোঝা যাচ্ছে ওকে কেউ ডিস্টার্ব করছে। আর আমিও মসলা দিলাম। এবার আমাদের নির্দয় ইরফান বাবু ঝড়ের গতিতে তার না মানা বউয়ের কাছে উড়াল দিয়ে চলে আসবে। আর তোকে সুন্দর করে শায়েস্তা করবে।”
নাছিম শুদ্ধর হাত নামিয়ে সোফায় বসে বলল,
“ওকে, আমিও ওর আসার ওয়েট করছি। দেখি তোর কথা কতটুকু সত্য। সত্য হলেও কী! ওকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি ওকেই বিয়ে করব।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ইরফানের সাথে পারবি? ফালতু ঝামেলা করিস না। ফান করছি না আমি।”
নাছিম চোখ বুজে বলল,
“আমিও ফান করছি না ভাই। তিন মাস একেবারে কম নয়। ওকে নিয়ে ডেইলি ভাবি আমি। একদম বার্বি ডলের মতো। তুই পারলে আমাকে হেল্প কর। আমি ছ্যাঁকা খাইতে পারবো না। তাছাড়া শুনলি না, ইরফান ওকে মারে। এই পুতুলকে মারে কেমনে? আমার তো ভাবলেই কলিজায় লাগে। এই টপিকে একেবারে ইরফানের সাথেই কথা বলবো।”
শুদ্ধ চিন্তিত হলো। এরা দু’জন কোন হা’ঙ্গা’মা করবে এখন?
ইরফান ঘণ্টাখানেক হলো ভার্সিটির খাতা কাটছিল। ফোনে টুং করে শব্দ হওয়ায় হাত বাড়িয়ে ফোন চেক করে। শুদ্ধর দেয়া ভয়েস-এ ক্লিক করলে মাইরার কথা ভেসে আসে। প্রথম ভয়েসটা শুনে ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। ডান হাতে কফির মগ তুলে নিয়ে ফোনসহ বেলকনিতে যায়। বিড়বিড় করে, ‘যতটা গাধা ভাবি ততটা না।’
এরপর দ্বিতীয় ভয়েস টা গম্ভীর মুখে শোনে। রাগের আভা নেই মুখে। যখন মাইরার মেন্টাল কথা কানে আসে, তখন ইরফান বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট গার্ল।’
এরপর শুদ্ধর ম্যাসেজে চোখ বুলায়। প্রথম ভয়েস আবারও অপেন করে। মনে হলো, মাইরা কাউকে বলছে, মানে শুদ্ধর কথা মিথ্যা নয়। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। শুদ্ধর নাম্বারে কল দিলে সাথে সাথে রিসিভ হয়।
ইরফান বলে ওঠে, “ছেলেটা কে?”
শুদ্ধ শব্দ করে হেসে ফেলল। যদিও এখন হাসির সময় না। দুই বন্ধুর মাঝে ঝামেলা লাগতে যাচ্ছে, আর সে হাসছে। কিন্তুু ইরফানের কাহিনী দেখে না হেসেও পারে না। ইরফান রেগে বলে,
“যা জিজ্ঞেস করলাম বল।”
শুদ্ধ নিজেকে সামলে বলল,
“নাছিম। ওর বার্বি ডল এই মাইরা।”
ইরফান অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তা দিয়ে দিবি ওর বার্বি ডলকে? ও আমাদের বাসায়-ই আছে। শেয়াল যেমন মুরগিকে ধরতে চায়, ও মাইরাকে বারবার এভাবে ধরতে যাচ্ছে। আমি তোর দায়িত্ববান বন্ধু আর ভাই বলে তোর বউকে পাহারা দিচ্ছি। কতক্ষণ পারবো জানিনা।”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওকে এক্ষুনি বের করে দে বাসা থেকে।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“যাচ্ছে না। মাইরাকে ডেকে আনি যাই। ওদের গল্প করার স্পেস দিই একটু। তুই নিশ্চিন্তে ঘুমা।”
কথাটা বলেই কল কেটে দিল।
ওপাশ থেকে ইরফান হাতের মগ ছুঁড়ে ফেলল। বিড়বিড় করে,
‘স্টুপিট গার্ল, তোমার মুখে পার্মানেন্ট কালি মাখব আমি, ওয়েট।”
এরপর গটগট পায়ে ভেতরে গিয়ে টেবিলে বিছানো এক্সামের খাতাগুলো গুছিয়ে রাখল। দ্রুত রেডি হয়ে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
নাছিম কটমট চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ পাত্তা দিল না। নাছিম রেগে বলল,
“আমি শেয়ালের মতো ওত পেতে আছি?”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলল,
“তা নেই? মাইরাকে ডেকে আনলে বার্বি ডল, বার্বি ডল করে তো মুখে ফেনা তুলবি। গল্পও করবি, করবিনা?”
মুহূর্তেই নাছিমের মুখ থেকে রাগের আভা মিলিয়ে যায়। স্বাভাবিক গলায় বলে,
“যা ডেকে আন তবে।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ইরফান আসুক। ওর বউ, ও দিলে দিবে। আমাকে বলে লাভ নাই।”
নাছিম হতাশার শ্বাস ফেলে মন খা’রা’প করে বসে রইল। কি কপাল তার! একটাই মেয়ে জীবনে পছন্দ করল, তাকেই তার বন্ধুর বউ হতে হলো! মনটাই ভেঙে গেল।
নাছিম আর শুদ্ধ শুদ্ধদের বাড়ির সামনে অন্ধকারে বসে ছিল। রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। ঔরফানের গাড়ি এসে থামে। শুদ্ধ হেসে নাছওিমের উদ্দেশ্যে বলে,
“বুঝলি কিছু?”
নাছিম মন আরও খা’রা’প হয়। তার কপালযে পুড়েছে খুব ভালোই বুঝলো। ইরফান নাছিমকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,
“তুই এখনো যাস নি কেন?”
নাছিম হেসে বলে,
“বার্বি ডল যেখানে আমিও সেখানে। তুই আমার বর্বি ডলকে ডিভোর্স দিয়ে দে। আমি ওকে বিয়ে করব।”
কথাটা বলতে দেরি হলেও, ইরফানের নাছিমের গাল বরাবর ঘুষি দিতে দেরি হয়নি। নাছিম ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“বা’ল তোর এই হাত চালানো অফ কর তো। আমার ডলটাকেও নাকি মারিস। তোর কাছে তো ওকে রাখাই যাবে না।”
ইরফান আবারও তেড়ে যেতে নিলে শুদ্ধ পিছন থেকে ইরফানকে টেনে ধরে বলে,
“আরে থাম থাম। কি মারামারি শুরু করলি। আমি সমাধান করে দিচ্ছি সব।”
নাছিম ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার বার্বি ডল কে কত মার টা না মারলি রে। তোর খবর করব আমি।”
ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,
“She is only my personal property. ওকে মারব, কাটব যা ইচ্ছা করব। who are you to say? আর একবার ওকে এই ফালতু নামে ডাকলে তোর জিভ টিনে ছিঁড়ে ফেলব আমি।”
নাছিম অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। এটা ইরফান? বিশ্বাস-ই হয় না। শুদ্ধর দিকে তাকালে দেখল শুদ্ধ হাসছে। নাছিম ঢোক গিলল। অতঃপর মৃদুস্বরে বলে,
“তুই ওকে অনেক মেরেছিস। আর তোর মতো এমন হোপ করে রাখা মানুষকে কে লাইক করবে? ও তোকে লাইক করে না, অ্যা’ম সিওর।”
ইরফান শান্ত চোখে তাকায় নাছিমের দিকে। নাছিম আবারও বলে,
“আমার সাথে তিনদিন মিশলে ওর আমাকে ভালো লাগবে, আমি লিখে দিচ্ছি। তাছাড়া ও তোর মার খেয়ে আমার মতো অপশন পেলে অবশ্যই মার খাওয়ার জন্য তোর কাছে থাকবে না?”
ইরফান শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে এসে নাছিমের কলার ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“ওর আশেপাশে তোকে যদি একবারও দেখেছি,, বিলিভ মি, তোকে কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে যাস্ট একবাও ভাববো না। মাইন্ড ইট।”
কথাটা বলে নাছিমকে ধাক্কা মেরে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
মাইরা পড়তে পড়তে টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। ঘুম ভাঙলে অনুভব করে ঘাড় কেমন যেন ব্য’থা হয়ে গিয়েছে। ঘরের লাইট জ্বালানো। ঘড়িতে দেখল ১২ টা বাজে। চেয়ার থেকে উঠে দরজার কাছে আসে ঘরের লাইট অফ করতে। তখনই তার ঘরের দরজা খুলে যায়। মাইরা চোখ তুলে তাকিয়ে সামনে ইরফানকে দেখে অবাক হয়। এতো রাতে ইরফান এখানে কেন?
ইরফান ভেতরে এসে ঘরের দরজা ভিড়িয়ে দেয়। এরপর উল্টো ঘুরে মাইরার দিকে তাকায়।
মাইরার চোখজোড়া মৃদু লাল, মুখ হালকা ফোলা, ঘুমুঘুমু চোখে মাইরা ইরফানের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
ইরফান বাইরে থেকে রেগে আসলেও মাইরাকে দেখে কেন যেন মুখাবয়ব হঠাৎ-ই শান্ত হয়ে গেল। দপদপ করা রাগটাও কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
টেবিলের উপর বাম গাল ঠেকিয়ে ঘুমানোয় মাইরার গালের উপরিভাগে দাগ পড়ে গিয়েছে। ফর্সা গালে হালকা লাল দাগ চোখ এড়ায় না ইরফানের। ইরফান ডান হাতের আঙুল ছোঁয়ায় মাইরার গালে। মৃদুস্বরে বলে,
“এখানে কি হয়েছে?”
মাইরা পিটপিট করে চেয়ে থাকে ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরাকে দেখে বুঝল ঘুমিয়েছিল। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৬
“ঘুমিয়েছিলে?”
মাইরা ঘোরের মাঝে আছে। সে ভুলভাল দেখছে নাকি ঘুমের ঘোরে। ডান হাতে দু’চোখ কচলে ইরফানের দিকে তাকায়। নাহ, ঠিক-ই তো দেখছে। ইরফান মাইরার এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিল অগোছালো হাতে।
নাছিমের কথা মনে হলে মাইরার চোখের পানে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
“তুমি কেমন ছেলে লাইক কর?”
মাইরা আগের চেয়েও অদ্ভুদভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। সে পা’গল হলো নাকি এই লোক? জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। তিনটে প্রশ্ন করেছে। একটারও উত্তর দিতে পারছে না মাইরা। তবুও ইরফান শান্ত। মাইরার নিজেকেই পা’গল লাগছে। ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান এখনো শান্ত চোখে গম্ভীর মুখাবয়বে তার দিকে চেয়ে আছে।