প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০
Drm Shohag

“কথা বলছো না কেন?”
মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে, “জ্বি, খেয়েছি।”
ইরফান মাইরার গাল থেকে হাত সরিয়ে নেয়। মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে বলে, “গুড”
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান দু’হাত প্যাণ্টের পকেটে গুঁজে মাইরা আর তার মাঝে খুব সামান্য ফাঁকা রেখে দাঁড়ায়, মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“এরপর বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করলে সাথে হাত পা ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণ করার ইচ্ছেটাও অ্যাড করে তবেই বাড়ির বাইরে পা রাখবে। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
লাস্ট শব্দটা কিছুটা ধমকে বলে। মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। ভয়ে জমা হওয়া পানির ছিটেফোঁটা এখন ধমক খেয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়ল।
ইরফান চোখ বুজে শ্বাস ফেলে। মৃদুস্বরে বলে,

“ডোন্ট ক্রাই।”
মাইরা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। ইরফান আবারও গম্ভীর গলায় বলে, “ঘরে যাও।”
মাইরাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরফান শক্ত গলায় বলে,
“গো। নয়তো গুণে গুণে দশটা থা’প্প’ড় পড়বে এই দু’গালে। স্টুপিট,, তোমার সাহস কি করে হয় এতো রাত পর্যন্ত অন্যের বাসায় গিয়ে থাকতে?
মাইরা কেঁপে ওঠে এতো জোরে ধমক খেয়ে। একটু আগের নরম সুরে যেমন ঝটকা খেয়েছিল তা মুহূর্তেই ভ্যানিস হয়ে গিয়েছে, এই লোকের আগের রূপ দেখে। মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। কোনো কথা বলে না। ইরফানের পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে তার ঘরে চলে যায়। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সোফায় গিয়ে ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দেয়। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“ঝড় তবে থামলো!”
ইরফানের কপালে বিরক্তির ভাঁজ। শুদ্ধ ইরফানের পাশে বসে তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মা খেতে দাও। খেয়ে রওয়ানা দিব।”
“এতো রাতে যাবি? কাল গেলে হবে না?”
শুদ্ধ ইরফানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“তুই কি যেতে চাস মাইরার স্বামী?”
ইরফান রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বিরক্ত হয়ে বলে, “নো।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“শোনো মা, তোমার ছেলে বড় হয়েছে, এবার আমার বিয়ের ব্যবস্থা কর। সবাই বউ ছাড়া থাকতে পারছে না। এসব দেখে আমার দু’দিন পর পর বদ’হজম হচ্ছে।”
তৃণা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমি মেয়ে দেখে রেখেছি তোর জন্য। তুই তো রাজি হচ্ছিস না। শুধু পরে পরে করছিস। তুই রাজি হলেই বিয়ে হয়ে যাবে।”

শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে তাকায়। হায় হায় তার মা কি কেলেঙ্কারি করে রেখেছে? দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে বলে,
“মানে? কি বলছ?”
তৃণা বেগম হেসে বলেন,
“সামিয়া কে চিনিস না? এইচএসসি দিবে এইবার। মেয়েটা খুব ভদ্র।”
শুদ্ধ দ্রুত বলে,
“হয়েছে হয়েছে, আর শুনব না। আমি যাচ্ছি। আমার কাজ আছে।”
“খেয়ে যা।”
শুদ্ধ যেতে যেতে বলে,
“রেডি কর, আমি আসছি। কাল সকালে গিয়ে ভার্সিটির ক্লাস অ্যাটেন্ড করব।”
ইরফান তার ঘরে যেতে যেতে বলে,
“ফুপি এক কাপ কফি দিও।”

মাইরা ঘরে এসে বোরখা ছেড়ে বিছানার এক কোণায় চুপ করে বসে আছে। দু’হাটু ভাঁজ করে মুখটা হাঁটুতে লাগিয়ে রেখেছে। তৃণা বেগমকে দেখে পা ভাঁজ করে বসে বলে,
“খালাম্মা তুমি রাগ করেছ আমার উপর?”
তৃণা বেগম মাইরার পাশে বসে মেয়েটার গালে হাত দিয়ে বলে,
“আমাকে একবার বলে যাওয়া উচিৎ ছিল তোর।”
মাইরা মন খা’রা’প করে বলে,
“গ্রামের বাইরে তো যাইনি। তাই ভেবেছি বলতে হবে না।”
তৃণা বেগম কিছু বললেন না। এটা গ্রাম। এর ওর বাড়ি গেলে ঘটা করে বলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অতঃপর বললেন,

“সে জানি। এতো রাত করে ফিরলি, এটা বলে যাওয়া উচিৎ ছিল।”
মাইরা তৃণা বেগমের দু’হাত আগলে বলে,
“মিমের মা না খাইয়ে কিছুতেই আসতে দেয়নি। আমি সন্ধ্যার পরেই আসতে চেয়েছিলাম। স্যরি খালাম্মা।”
“আচ্ছা হয়েছে। তুই আমাকে ফুপি বাদ দিয়ে খালাম্মা ডাকছিস কেন?”
মাইরা মাথা নিচু করে বলে,
“যার জন্য ফুপি ডাকবো, সে তো বলেনি। তাই খালাম্মাই ঠিক আছে।”
“ইরফান তোর জন্য অনেক চিন্তা করে মা। তোর প্রতি ও দুর্বল। দেখেছিস আজ তোর চিন্তায় কেমন অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল?”
মাইরা মাথা তুলল না। কি মনে করে মলিন হেসে বলে,
“একটা কথা কি জানো খালাম্মা?
আবেগ, ভালোবাসা, মায়া এসব দিয়ে দুনিয়া চলে না। যদি চলতো, তবে আজ আমার বিয়েই হতো না।
তোমার মনে হয়, সৎ মা আমায় ভালোবাসতো না?

সে আমায় অনেক ভালোবাসতো, মায়া করতো। কিন্তুু দেখো বাস্তবতা সামনে আসলে সে আমাকে ঠিকই বিয়ে দিয়ে নিজের দায় সারলো। এই যে এতোদিন হলো, একবারো আমার খোঁজ নেয়নি জানো? তুমি বিশ্বাস করবেনা খালাম্মা,, আমি ভুলেই যেতাম সে আমার নিজের মা না। আমায় অনেক ভালোবাসতো। অনেক না বাসলেও যা বাসতো, ওটাই অনেক মনে হতো আমার। কিন্তুু বিয়ের পর সব ভুলে গেল। নিজের মা হলে হয়তো একটু একটু মনে করতো। কিন্তুু আমি তো তাকে নিজের মা-ই ভাবি। আমার মাকে তো কখনো দেখিইনি। দেখতে কেমন যে ছিল!”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখজোড়া পানিতে টইটুম্বুর হয়ে হয়ে যায়।
একটু থেমে নাক টেনে বলে,

তোমার ভাতিজা আমায় কেন মানে না জানো? কারণ আমি তার টাইপের না। আমি তার চেয়ে অনেক ছোট। আমিই যদি আরও ৪-৫ বছরের বড় হতাম তবে হয়তো মানতো। কিন্তুু এখন এতো ছোট মেয়েকে তিনি মানতে পারেন না। সে আমার প্রতি দুর্বল হলেও বাস্তবতার কাছে এসে দেখবে আমার মায়ের মতো সে আমাকে মানবে না। মানুষ এমনই হয়। আমি জানি।”
তৃণা বেগম অবাক হয়ে তাকালেন মাইরার দিকে। এটুকু মেয়ে কি ভারী কথা বলে? মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বলল,

“পা’গলি মেয়ে। ইরফান ওমন নয়। ধীরে ধীরে বুঝতে পারবি।”
মাইরা কিছু বলল না। তৃণা বেগম মাইরার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
“ফুপি যেহেতু ডাকছিস না, তবে মা ডাক। ডাকবি তো?”
মাইরা দু’হাতে মুখ মুছে শব্দ করে হেসে বলে,
“ওক্কে আম্মাজান।” এরপর ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
“ডাক টা পছন্দ হয়েছে?”
তৃণা বেগম হাসলেন মাইরার কাণ্ডে। মেয়েটাকে তার কেমন অদ্ভুদ লাগে বটে। মুহূর্তেই কেমন দুঃখের ছাপ মুছে ফেলে মন থেকে। ঘরের বাইরে যেতে যেতে বলে,,
“এখন এসব চিন্তা বাদ দে। ইরফনাকে কফি দিয়ে আয়। আমি রেডি করছি। দ্রুত আয়।”

মাইরা হতে গিয়েই তার মা মারা যায়, এরপর তিন মাসের মাথায় মাইরার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। যিনি মাইরার বর্তমান সৎ মা। মাইরা জানতো না, মাইরার বাবার দ্বতীয় স্ত্রী তার সৎ মা হলেও মাইরাকে নিজের মেয়ের মতো করেই আগলে রেখেছিলেন। মাইরার বাবার চোখের মণি ছিল মাইরা। মাইরার ঝাপসা মনে পড়ে তার বাবার কথা। তার যখন সাত বছর বয়স তখনই তার বাবা মারা যায়। এরপরই মাইরা জানতে পারে তার মা আসলে নিজের মা নয়। এজন্যই মাইরাকে তার নানা বাড়ির মানুষেরা পছন্দ করতো না, আগে বুঝতো না তবে যখন একটু বড় হয়েছে তখন বুঝতে পারতো। বাবা মারা যাওয়ার দু’বছরের মাথায় তার সৎ মাকে বিয়ে দিয়ে দেয় বাসা থেকে। তিনি মাইরাকে বেশ আদর করতেন। সেই ছোট্ট থেকে নিজের মেয়ের মতোই লালন করেছেন। কিন্তুু সৎ মায়ের স্বামী তো মাইরাকে একটুও সহ্য করতে পারে না। ধীরে ধীরে মাইরার মায়ের ভালোবাসা কমতে কমতে তাকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে বিদায় দিয়ে দিল।

কথাগুলো ভেবে মাইরার চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। ডান হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে জামার কোণা পেঁচায় আবার খোলে। আর চোখ থেকে ঝরঝর করে কয়োক ফোঁটা পানি পড়ে। কয়েক সেকেন্ড পেরোতেই দ্রুত চোখজোড়া ডলে মুছে নেয়। লম্বা করে দীর্ঘশ্বাস টেনে নিজে নিজেই হাসে।
~
“তোর ভিআইপি বোনকে ফোন টা দে।”
ফাইজ ফোনের ওপাশ থেকে বলে,
“কেন?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“আমার বিয়ে। এই খবর ওকে না দিলে শান্তি পাচ্ছি না।”
“দ্রুত করে নে। আমরা বেঁচে যাবো। আর ফারাহকে বিয়ে দিতে পারবো।”
শুদ্ধ ধুলোময় রাস্তার মাঝে একটা ইটের খোয়ায় শট দিয়ে বলে,
“ইনায়ার কপাল খুলে গেল। তোর মতো মীরজাফরের সাথে বিয়েটা হচ্ছে না।”
ইয়াজ রেগে বলে,

“একদম উল্টাপাল্টা কিছু করবি না বেয়া’দব। ও আমার ফোন ধরে না কেন? মেজাজ খা’রা’প লাগে।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তুই যখন বিদেশ ছিলি, তখন ইনায়ার অনেক ছেলে ফ্রেন্ড জুটেছে বুঝলি? ওদের টাইম দিতে হয়।”
ফাইজ রেগে বলে,
“আসলেই ওর এতো ছেলে ফ্রেন্ড আছে?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“জানিনা। ওর ফ্রেন্ড এর লিস্ট আমি কেমনে জানবো? তবে একটা কথা৷ মনে রাখবি, ইনায়া তোকে মাত্র তিনবার সামনে থেকে দেখেছে। সেই ক’বছর আগে দু’বার, রিসেন্ট একবার।
তোর বোনের সাথে কবে থেকে লেগে বসে আছি, তাও মানছে না। আর ইনায়া তোকে চেনেই না ঠিকঠাক, মানতে সময় লাগবে।”

ফাইজ গম্ভীর মুখে কিছু ভাবছে। শুদ্ধ আবাও বলে,
“আমি এখন তোর বিদেশি ম্যামদের সাথে পিক ওকে দেখিয়ে বলব, এগুলো আমাদের ফাইজ বাবুর পার্ট টাইম গার্লফ্রেন্ড ছিল। চিন্তা করিস না,, বিয়ে সে তোকেই করবে।”
ফাইজ চিৎকার করে বলে,
“শুদ্ধর বাচ্চা, তোকে ছাড়বো না আমি। আমি কত লয়াল জানিস।”
শুদ্ধ কান থেকে ফোনটা দূরে নিয়ে খানিক হাসলো। এ আর ইরফানের সাথে ভালোই মজা নেওয়া যায়। যদিও ইরফানের ব্যাপারটা জমে বেশি। কারণ ও তো স্বীকার-ই করেনা। শুদ্ধ কানে ফোন নিয়ে হাসি আটকে বলল,
“লায়ল সেটা তো আমি জানি সোনা। তোমার ইনায়া নয়, বোঝোনি ব্যাপারটা?
এরপর স্বাভাবিক ভাবে বলে, ফারাহকে ফোন টা দে।”
ফাইজ রেগে বলে,
“বেয়া’দব, ভুলে যা ফারাহকে।”

বলেই কল কেটে বিছানার উপর ছুঁড়ে মারলো ফোন। রাগে শরীর জ্বলছে। এই মেয়ের কি ছেলে ফ্রেন্ড দিয়ে ভর্তি? এমন হলে ওকে যে কি করবে, মাথাই কাজ করেনা। তার কল না ধরার জন্য ইচ্ছে করে তুলে এক আছাড় মারতে।
আর এই শুদ্ধর বাঁদরামি তো আছেই। ওই মেয়ে তো মাথামোটা। তাকে ভুল বুঝে কি করবে, আর সেই বা রেগে কি করবে আল্লাহ ভালো জানে।
এদিকে শুদ্ধ বারবার ফাইজের ফোনে কল দেয়। কল রিসিভ হয় না। শুদ্ধ অসহায় চোখে চেয়ে আছে। ফারাহের সাথে কথা বলার পর এসব বলতে হতো। এখন তার কি হবে? বা হাতে বুকে দু’টো আলতো থা’প্প’ড় দেয়। তার জ্বালা কেউ বোঝে না। এখন কি করবে? হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। দ্রুতপায়ে বাড়ির দিকে যায়। এরপর সোজা ইরফানের ঘরে গিয়ে দেখল ঘরে ইরফান নেই। ওয়াশরুম থেকে আওয়াজ পেয়ে বুঝল ইরফান ওয়াশরুমে। শুদ্ধ ইরফানের ফোন নিয়ে ইরফানের নাম্বার থেকে ফারাহের ফোনে কল করে। প্রথমবারেই রিসিভ হয়।
মিষ্টি কণ্ঠে সালাম ভেসে আসে। শুদ্ধ মৃদু হাসে। তবে চুপ থাকে, কিছু বলে না। ওপাশ থেকে ফারাহ বলে,

“ইরফান ভাই কিছু বলবে?”
শুদ্ধ গলা ঝেড়ে ভারী কণ্ঠে বলে,
“খবদরদার ফোন কাটবে না ফারাহ।”
ফারাহ ভ্রু কোঁচকালো। তবে কিছু বলল না। শুদ্ধ হেসে বলে,
“খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা টপিক নিয়ে কথা বলব বুঝলে? তাই ভুলেও কল কাটবে না।”
ফারাহ কিছু বলে না। শুদ্ধ ঠোঁট টিপে হেসে বলে,
“সামিয়া নামের এক মেয়েকে আমার মা আমার জন্য পছন্দ করেছে, বুঝলে? মেয়েটা মারাত্মক সুন্দর ফারাহ। এইচএসসি দিবে এইবার। বিয়ের ডেট টা কবে দেয়া যায় বলো তো?”
ফরাহের চোখ পানিতে টইটুম্বুর। বারবার ঢোক গিলছে। শুদ্ধ ফারাহের কোনো রেসপন্স না পেয়ে বলে,
“বলো ফারাহ, ডেট তুমি ফিক্সড করে দিবে, মেয়েকে তুমি সাজাবে, বা’স’র ঘর তুমি সাজাবে,, ফুল কিন্তুু তোমার বাগানের দিতে হবে।”
ফারাহের চোখ থেকে টপ করে পানি গড়িয়ে করে। শুদ্ধ ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসছে। আবারও বলে,

“তুমি মেয়েকে দেখতে চাও? আমি পিক দিব অবশ্যই। তুমি ডেট টা বলো তো ফারাহ। আমি বিয়ে করতে চাই, দ্রুত। ডেট টা অবশ্যই এই মান্তের মধ্যেই বলো, কেমন?”
ফারাহ ভাঙা গলায় বলে,
“আজকেই করো, আমাকে বলছো কেন?”
বলেই কল কেটে দেয়। দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। কিছুক্ষণ কেঁদেকেটে তার ঘর থেকে বেরিয়ে ফাইজের ঘরে যায়। ফাইজ ইজি চেয়ারে বসে চোখ বুজে ছিল। বিরক্ত লাগছে সবকিছু তার। হঠাৎ-ই ফারাহ ফাইজের সামনে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,
“তোমার বন্ধু বিয়ে করছে?”
ফারাহের কথায় ফাইজ চোখ মেলে তাকায়। বোনের চোখমুখের অবস্থা বেহাল। কেঁদেকেটে চোখমুখ লাল হয়ে আছে। ফাইজ অবাক হয়ে বলে,

“হোয়াট?”
ফারাহ রেগে বলে,
“তোমার বন্ধু বিয়ে করছে, আমাকে ফোন করে সেসব গান শোনায় কেন?”
ফাইজের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। কার বিয়ে? ফারাহ আবারও রেগে বলে,
“তোমার বন্ধু যে মেয়েকে বিয়ে করবে ওই মেয়েকে আমি থাপড়াতে থাপড়াতে তোমার বন্ধুর জীবন থেকে তাড়িয়েই ছাড়বো বলে দিচ্ছি।”
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায়। ফাইজ পিছন থেকে অবাক হয়ে বলে,
“আরে কি বলে গেলি? আর কাঁদছিস কেন?”
ফারাহ যেতে যেতে চিল্লিয়ে বলে,
“তোমার শয়’তান বন্ধুর জন্য। একবার এখানে আসুক। বিয়ে করাচ্ছি তাকে।”
ফাইজ বিছানা থেকে তার ফোন নিয়ে শুদ্ধর নাম্বারে কল করে। রিসিভ হলে রেগে বলে,
“আমার বোনকে কাঁদিয়েছিস কেন?”
শুদ্ধ হেসে বলে,

“ভাল্লাগে কাঁদাতে। তুই শুধু ভাব, ওর প্রতিটি চোখের পানির ফোঁটায় আমার জন্য কতশত ভালোবাসা মিশে আছে, ভাবতেই কি যে শান্তি লাগে ইয়ার!
ওর একটা পিক তুলে দে তো। আরো শান্তি লাগবে।”
ফাইজ বিরক্ত হলো। রেগে বলল,
“ফারাহকে আরেকজনের সাথে বিয়ে দিই। তারপর তুই বসে বসে কেঁদে ভালোবাসা দেখাস। বেয়া’দব।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“শুদ্ধর জিনিস শুদ্ধ নিজের করে রাখতে জানে। আমার তো তোর জন্য চিন্তা হচ্ছে সোনা। আহারে ইনায়া…”
ফাইজ রেগে সাথে সাথে কল কেটে দেয়। শুদ্ধ এপাশ থেকে হাসে।

মাইরা হাতে কফির মগ নিয়ে ইরফানের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে ভেতরে গেলে তাকে কিছু বলবে কি না। তখনকার দশটা থা’প্প’ড় দিতে চাওয়ার একটা যদি ভুল করে দিয়ে দেয়? অনেক ভাবনাচিন্তা রেখে দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেয়। কম পাওয়ারের এক লাইট দেয়া, তবে ভেতরে সব দেখা যাচ্ছে। ইরফান বেডে সটান হয়ে শুয়ে আছে। মাইরা বিরক্ত হয়। এই লোকটা ঘরে থাকলে জীবনেও কাপড় পরে না কেন বোঝে না। যদিও তার দেখতে ভালোই লাগে।

ভাবনা রেখে পা টিপে টিপে ভেতরে যায়। ইরফান সটান হয়ে শুয়ে ডান হাত চোখের উপর রেখেছে। নড়াচড়া নেই কোনো। মাইরা ইরফানের মুখের সামনে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করে জেগে না ঘুমিয়ে। এমনিতে তো বোঝা যায় না, জেগে থাকলেও যেমন, ঘুমিয়ে থাকলেও তেমন। মাইরা ঘরের আশেপাশে তাকালো। একটু এগিয়ে গিয়ে ঘরের জিনিস খেয়াল করে দেখছে। এই ঘরে ফার্নিচার চারটে। একটি কাভার্ড, একটি আয়না, বেড আর বেডসাইড টেবিল। কিন্তুু আসল ব্যাপার হলো এই ঘরের জিনিসগুলো সাদা আর কালো। মাইরা বুঝলো না, ইরফান যেখানেই যায়, সেখানে কি এমন একটি করে সাদা কালো রুম বানিয়ে রাখে না-কি? ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,
“এখানে কি করছ?”
মাইরা দ্রুত পিছন ফিরে তাকায়। ইরফান চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে গম্ভীর মুখে মাইরার পানে চেয়ে। মাইরা দ্রুত হাতের মগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এইতো আপনার কফি দিতে এসেছি।”
মাইরা ঘরের চারপাশ দেখতে দেখতে ইরফানের হাঁটু বরাবর দাঁড়িয়ে ছিল। তাড়াহুড়ো করে মগ এগিয়ে দিতে গিয়ে হাত ফসকে যায়, মাইরা দ্রুত মগ ধরে ফেলে, তবে গরম কফির বেশি অর্ধেক ইরফানের উপর পড়ে যায়। মাইরা বা হাতে মগ ধরে ডান হাতে দ্রুত ইরফানের কফি পড়ার অংশ ঝাড়তে থাকে। কি কেলেঙ্কারি হয়ে গেল। ইরফান শোয়া থেকে উঠে মাইরার ডান হাত ধরে শক্ত গলায় বলে,

“স্টুপিট, কি করছ?”
মাইরা ভীত স্বরে বলে,
“স্যরি, স্যরি! আমি বুঝতে পারিনি।”
কথাটা বলে আবারও নিচের দিকে তাকালে চোখ বড় বড় করে তাকায়। এ কোথায় পড়েছে কফি! আর কোনো জায়গা ছিল না? দ্রুত চোখ বুজে নেয়।
বিড়বিড় করে, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৯

চোখ মেলে ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান অদ্ভুদ চোখে তার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান তার হাত ছেড়ে দিয়েছে। ছাড়া পেয়ে মাইরাকে আর পায় কে। ল’জ্জা, ভ’য় সবমিলিয়ে এক দৌড় দেয় মগ হাতেই। বিড়বিড় করে, ‘আর জীবনে কফি দিতে আসব না আল্লাহ, মাফ চাই।’
ইরফান বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। শান্ত চোখে গম্ভীর মুখে মাইরার দৌড় দেখল।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২০ (2)