প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৩

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৩
Drm Shohag

“একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
ফারাহ শোরুমের সামনে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার ভাই আর ইনায়া সেই তো গিয়েছে। এদিকে মাইরা কই যে গেল, ইরফানও পিছু পিছু গেল। সে আর কি করবে? চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
শুদ্ধ ফাইজের কাছে কল করেছিল। কিছু কাজ থাকায় ইরফান আর মাইরার সাথেই আজ গ্রাম থেকে ব্যাক করেছে।
শুদ্ধর কথায় চোখ তুলে তাকালো ফারাহ। শুদ্ধ ফারাহের দিকেই চেয়ে ছিল। চোখে চোখ পড়ায় ফারাহ দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়। শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“আমার হবু বউ এর জন্য ফোন কিনতে আসলাম। চুজ করে দিবে ফারাহ?”
ফারাহ রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ফারাহের কপালে দু’আঙুলেের দ্বারা একটা টোকা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“ভয় পাচ্ছি তো!”
ফারাহ চোখ সরিয়ে নেয়। রেগে বলে,
“তুমি তোমার হবু বউ এর জন্য ফোন কেন, না পুরো মার্কেট কিনে নাও। আমাকে বলছ কেন? যাও এখান থেকে।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তোমার পছন্দ মারাত্মক সুন্দর বুঝলে? কিন্তুু আমার পছন্দ তো ছিঃ মার্কা। তাই তোমাকে পছন্দ করি। আর এখন বুদ্ধি হয়েছে বলে বিয়ে করব মিষ্টি সামিয়াকে।”
ফারাহ ছলছল দৃষ্টিতে শুদ্ধর দিকে তাকায়। শুদ্ধ দেখল ফারাহের চোখ পানিতে টইটুম্বুর। শব্দ করে হেসে ফেলল। ফারাহ চোখ সরিয়ে নেয়। শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“চোখের পানি টপটপ করে পড়ে না কেন? তোমার এটাকে কান্না বলে না। ভালোভাবে কাঁদো তো ফারাহ।”
ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি যাবে এখান থেকে?”
বলতে বলতে চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ ফারাহের গালে গড়িয়ে পড়া পানি দেখে হেসে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“নাও পারফেক্ট, এভাবেই কাঁদতে হয়।”
ফারাহ রেগে এই জায়গা থেকে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহের হাত টেনে ধরে। ফারাহ রেগে বলে,
“আমার হাত ছাড়ো বলছি।”
শুদ্ধ ঢোক গিলে বলে,
“তুমি অনেকক্ষণ কাঁদবে ফারাহ প্লিজ!”
ফারাহ অদ্ভুদভাবে তাকালো শুদ্ধর দিকে। মেজাজ খা’রা’প লাগে। অ’সহ্য একটা।
শুদ্ধ হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে বলে,
“আচ্ছা আবার পরে কাঁদবে। এখন চলো, আমার মা বলেছে সামিয়াকে একটা ফোন কিনে দিতে। অনেক ভালো ফোন কিনতে হবে। এসো আমার সাথে।”
ফারাহ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। শুদ্ধ শক্তহাতে ফারাহের হাত ধরে শোরুমের ভেতর যায়। বেশ কয়েকটা ফোন দেখল শুদ্ধ। ফারাহকে জিজ্ঞেস করলে ফারাহ মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। শুদ্ধ মৃদু হেসে iphone 15 Pro Max কিনে নেয়। প্যাকিং করে নিয়ে ফারাহের হাত ধরে বেরিয়ে যায়।
ফারাহকে ফাইজের গাড়িতে বসিয়ে বলে,

“ফাইজ কে ডেকে আনছি। তুমি গাড়িতেই থাকো। আমার কাজ আছে বুঝলে?”
কথাটা বলে দ্রুতপায়ে চলে যায়। ফারাহ অবাক হলো। শুদ্ধ সত্যিই ওই সামিয়া মেয়ের জন্য ফোন কিনলো? তাও আইফোন? দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
শুদ্ধ হঠাৎ-ই কোথা থেকে এসে গাড়ির জানালায় দু’হাত রেখে ডাকে, “ফারাহ?”
ফারাহ ঝাঁকি দিয়ে মাথা তুলে তাকায় গাড়ির জানালার দিকে। চোখের পানিতে পুরো মুখ লেপ্টে অবস্থা খা’রা’প। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। শুদ্ধ নিরব চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো। এরপর হঠাৎ-ই মৃদু হেসে বলে,
“কাঁদলে তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগে ফারাহ।”
ফারাহ চোখ সরিয়ে নেয়। শুদ্ধ আবারও হেসে বলে,
“বিলিভ মি, এই ফোন টা আমার হবু বউ এর জন্যই কিনেছি। তুমি আরেকটু কাঁদো কেমন?”
ফারাহ চেঁচিয়ে ওঠে,
“তুমি যাবে এখান থেকে?”
বলতে বলতে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ হেসে বলে,
“তুমি কি সুন্দর করে কাঁদো ফারাহ! পা চলছে না তো আমার! তুমি আরেকটু কাঁদো,, আমি দেখি।
ফারাহ বিরক্ত হয়ে মাথা নিচু করে নিল।
“আজ গ্রামে ব্যাক করব আবার। সামিয়া ওয়েট করছে ফোনের জন্য। এখন আসছি।”
ফারাহ মুখ ঘুরিয়ে থাকলো। তাকালো না শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। শরীর টানা দিয়ে দ্রুতপায়ে প্রস্থান করে জায়গাটা।

কিছুক্ষণের মাঝে ওয়েটার কফি দিয়ে গেলে ফাইজ ইনায়ার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“টেক ইট।”
ইনায়া মিনমিন করে বলে, “আমি খাবো না।”
ফাইজ চেয়ার ঘুরিয়ে ইনায়ার দিকে ফিরে বসে। এরপর ইনায়ার চেয়ার সহ ইনায়াকে তার দিকে ঘোরায়। ইনায়া অবাক হয়ে বলে, “আরে কি করছেন?”
ফাইজ তার কাজ শেষ করে কফির কাপ হাতে নিয়ে ইনায়ার সামনে ধরে গম্ভীর গলায় বলে, “যা বলছি সেটাই করবে। নো মোর ওয়ার্ডস।”
ইনায়া ঢোক গিলে কাঁপা হাতে কফির কাপ নেয় ফাইজের হাত থেকে। ফাইজ লাউঞ্জ (আরামদায়ক) চেয়ারে গা এলিয়ে দু’হাত ভাঁজ করে ইনায়ার দিকে চেয়ে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা। ইনায়া ফাইজের দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখে কয়েক সেকেন্ড, এরপর চোখ নামিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আপনি অন্যদিকে তাকান।”
ফাইজ ভ্রু কুঁচকে নেয়। বসা থেকে দাঁড়িয়ে চেয়ার টেনে ইনায়ার সাথে অনেকটা লেগে বসে। দু’পা ফাঁক করে বসেছে। ইনায়ার দু’পা তার দুপায়ের মাঝে। তবে ইনায়ার পায়ের সাথে তার পা টাচ লাগেনি। ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। ফাইজ গাল চুলকে বলে,

“অ্যা’ম ওয়েটিং ফর সামথিং।
চোখের ইশারায় কাপ দেখিয়ে বলে,
এটা মুখে নাও, ফাস্ট।”
ইনায়া মাথা নিচু করে দু’বার চুমুক দেয় কফিতে। তৃতীয়বার চুমুক দিতে নিলে ফাইজ বলে ওঠে, “স্টপ লিটল কুইন।”
ইনায়া অবাক হয়ে তাকায়। ফাইজ ইনায়ার হাত থেকে কফির কাপ নিয়ে আরামসে তাতে চুমুক দেয়। ইনায়া দ্রুত বলে ওঠে, “কি করছেন? এটা আমি খেয়েছি।”
ফাইজ মৃদু হেসে বলে,
“এইজন্যই তো নিলাম লিটল কুইন। দিস ইজ আ স্পেশাল সুইট ফর মি।
তুমি খেতে চাইলে অর্ডার করে দিচ্ছি।”
ইনায়া ফাইজের কারসাজি বুঝল। ভীষণ লজ্জা লাগছে তার। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি ফারাহ আপুদের কাছে যেতে চাই।”
ফাইজ কিছু বলল না। চুপচাপ তীক্ষ্ণ চোখে ইনায়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কফির মগে একে একে চুমুক দিতে থাকে। মিটিমিটি হাসছে।

বিড়বিড় করে, ‘ভালোই তো লাগে হাফ বউকে ল’জ্জা দিতে।’
ইনায়ার দৃষ্টি এলোমেলো। দু’হাত জমা করে কচলায়। ফাইজ খেয়াল করল। বা হাত এগিয় নিয়ে ইনায়ার ডান হাত আগলে নেয়। মৃদুস্বরে বলে,
“ইট’স নট গুড। লজ্জাগুলো এভাবে হাতের উপর ঝাড়তে হবে না। আমি থাকতে তোমার হাতগুলোকে এভাবে কেন কষ্ট দিচ্ছ লিটল কুইন?”
ইনায়া চোখ খিঁচিয়ে নেয়। এই লোক একটা অ’সভ্য। ফাইজ পুরো কফি শেষ করল ইনায়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
“তোমার ফোন দাও।”
ইনায়া তড়াক করে চোখ তুলে তাকায় সামনে। ফাইজ মৃদু হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইনায়া মিনমিন করে বলে, “কেন?’
“আমি বলেছি তাই।”
ইনায়ার বা হাতে ফোন। ফাইজ ইনায়ার দিকে চেয়ে আছে। ইনায়া বাধ্য মেয়ের মতো ফাইজের দিকে তার ফোন বাড়িয়ে দেয়। ফাইজের ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হয়। বা হাতের মাঝে ইনায়ার ডান হাতে ধরে রাখা। ইনায়া ছাড়াতে চাইলে ফাইজ ইনায়ার ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি লিটল কুইন।”

ইনায়া হাত নাড়ানো অফ করে দেয়। ফাইজ ফোনে লক দেখল। ইনায়ার দিকে একবার তাকালো। ইনায়া তার দিকেই চেয়ে ছিল। ফাইজকে তাকাতে দেখে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। ফাইজ মৃদু হেসে কি যেন টাইপ করে। লক খুলে যায়। ফোন আনলক হয়ে গেলে ফাইজ শব্দ করে হেসে দেয়। ফোনের অলপেপার ইনায়ার দিকে তাক করে ধরে রেখে জোরে জোরে হাসতে থাকে। ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়৷ তার ফোনের লক এই লোক কিভাবে জানলো।
ফাইজ কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে,
“অ্যা’ম অলওয়েজ রেডি টু বি ইওর পার্সোনাল ব্যাড বয়, লিটল কুইন।”
ইনায়া লজ্জায় কেঁদে দিবে প্রায়। ফাইজের হাসি থামে না। ইনায়া চোখজোড়া খিঁচিয়ে নেয়। ফাইজ কোনোরকমে হাসি থামিয়ে ইনায়ার ম্যাসেনঞ্জারের চ্যাটলিস্ট চেক করে। অনেক ছেলেমেয়ে মিশিয়ে সবার সাথে কথা বার্তা হয় ইনায়ার। ফাইজ আড়চোখে ইনায়ার দিকে তাকায়। কিছু একটা ভেবে ইনায়ার ফোন পকেটে ভরে দাঁড়িয়ে যায়। ইনায়া অবাক হয়ে বলে,

“আমার ফোন?”
ফাইজ গম্ভীর গলায় বলে,
“ইরফান নয়তো শুদ্ধর হাতে নেক্সট ডে দিয়ে দিব।”
“কেন?”
“ফ্রেন্ডলিস্টে এতো ছেলে কেন লিটল কুইন? আমার ভীষণ রা’গ লাগছ। ডোন্ট টক।”
ইনায়া অবাক হয়। এইতো একটু আগে পা’গলের মতো হাসছিল। মুহূর্তেই এমন হয়ে গেল কেন? ইনায়া মৃদুস্বরে বলে,
“ওরা সবাই আমার ভাই।”
ফাইজ ইনায়ার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলে,
“পাতানো ভাই আমি লাইক করি না।”
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই লোকটা বিয়ে না হতেই তার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। হঠাৎ-ই রে’গে বলে,
“আমার ফোন দিন বলছি। ওরা সবাই আমার ভাই। ওদের উল্টাপাল্টা বললে ওরা আমায় ভুল বুঝবে।”
ফাইজ রেগে বলে, “বুঝলে বুঝবে। আই ডোন্ট কেয়ার।”
ইনায়াও রেগে বলে, “বাট, আই কেয়ার।”
ফাইজ রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায়। ধমকে বলে,
“সাট আপ। যা বলেছি চুপচাপ শুনবে। ফোন পাবে না মানে পাবে না। আর পাতানো ভাইদের ভুলে যাও।”
ইনায়া কিছু বলতে চায়। ফাইজ রেগে বলে,
“আই সে ডোন্ট টক নাও। রাগিয়েছো ভালো কথা। চুপ থেকে এট লিস্ট কন্ট্রোল করায় হেল্প কর।”
ইনায়া মাথা নিচু করে থাকে। সে নিজেও রে’গেছে। বাড়ি গিয়ে ভাইয়াকে বিচার দিবে আগে। তার ফোন কেন নিবে এই লোক। ফাইজ লম্বা শ্বাস ফেলে ইনায়ার হাত ধরে বাইরের দিকে যায়। ইনায়াও চুপচাপ পিছু পিছু যায়।

মাইরা চোখ বুজে রেখেছে। ইরফান মাইরার কোমড় চেপে আরেকটু তার দিকে এগিয়ে আনে। ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“স্পিক আপ।”
মাইরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “স.স্যরি।”
ইরফান মাইরার পুরো মুখ অবলোকন করল খুব নিঁখুতভাবে। ঢোক গিলল। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে আবারও ঠাণ্ডা স্বরে বলে,
“ইউ নো, অ্যা’ম মোর থার্সটি দ্যান ইউ।”
মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ইরফানের দৃষ্টিতে তার দৃষ্টি স্থির রাখতে পারে না। চোখ নামিয়ে একটু মোচড়ামুচড়ি করে আমতা আমতা করে বলে,
“ছাড়ু…”
কথাটা শেষ করতে পারেনি। ইরফান এগিয়ে এসে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া রাখে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে দু’হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে। মাইরা হাত ছাড়া পেয়ে ছটফটায়। দু’হাতে ইরফানের বুকে ঠেলে সরাতে চায়। বুকে, গলায় অগণিত খামচি দেয়, তবুও ছাড়া না পেয়ে দু’হাত তুলে ইরফানের দাঁড়ি টেনে দেয়, গালে খামচে ধরে। ইরফানের কোনো হেলদোল নেই। সে তার নিজস্ব, একান্ত অনুভূতির জোয়ারে মত্ত। কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে, ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার হাতদু’টো তার হাতের মুঠোয় নেয়। বা হাতে মাইরাকে নিজের সাথে চেপে ধরে।

মাইরা অসহায় হয়ে এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান ফোঁপানোর শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত মাইরাকে ছেড়ে দেয়। কিছু বলার আগেই মাইরা ইরফানের গায়ের উপর গরগর করে বমি করে দেয়। ইরফান হতভম্ব!
মাইরা একটু আগে যা যা ফুসকা খেয়েছিল সব উগলে ইরফানের গা ভাসিয়ে দিয়েছে। ইরফানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রাগে শরীর কাঁপছে। পরনে কালো স্যুট-প্যান্ট। অফিসে কিছু কাজ ছিল, মাইরাকে নিয়ে অফিস হয়ে যেতে চেয়েছিল।
মাইরা বমি করে বসে বসে ঢুলছে। মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ইরফান বোধয় পারল না রাগ কন্ট্রোল করতে, ডান হাতে মাইরাকে টেনে গালে থা’প্প’ড় মারতে নিলে মাইরা হেলে পড়ে ইরফানের গায়ের উপর। ইরফানের হাত থেমে যায়। তবে চোয়াল শক্ত।
মাইরা দুর্বল শরীর নিয়ে ডানদিকে পড়ে যেতে নেয়, তার আগেই তার দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে।
ইরফান ধরল না মাইরাকে। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। মাইরা দু’হাতে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে ইরফানের গলার সাথে তার মুখ ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। জড়ানো কণ্ঠে খুবই আস্তে বিড়বিড় করে,
“স্যরি! আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না। স্যরি! মারবেন না।”

ইরফান চোখ বুজে ঢোক গিলল। তার গলায় মাইরার গরম নিঃশ্বাস পড়ে, সাথে চোখের নোনতা পানি। মেয়েটা কি যেন বিড়বিড় করে, ইরফান বোঝে না। রা’গ আর বির’ক্তির পারদ র’ক্তের কণার ন্যায় তার শরীরের শিরায় শিরায় ছুটতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলো, মাইরাকে ধরলো না। মাইরাও ইরফানের গলা ছাড়লো না। এখনো গাড়ির ডিকিতে বসে মাইরা। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ডোন্ট ক্রাই। কিছু করব না।”
ইরফানের কণ্ঠে রাগের আভা ঝরে পড়ছে। মাইরা কেঁপে ওঠে। তার শরীর ভীষণ উইক লাগছে, প্রচণ্ড মাথা ব্য’থায় তাকাতে পারছে না যেন। কান্না থেমেছে, তবে মাথা ব্য’থা আর পেট ব্য’থায় অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। ঘনঘন শ্বাস নেয় আর ছাড়ে। যা ইরফানের গলায় গিয়ে ধাক্কা লাগে।
ইরফান শক্ত গলায় বলে,

“স্টুপিট, ছাড়ো।”
মাইরা যেন শুনলো না। সাপের মতো পেঁচিয়ে ইরফানের গলা জড়িয়ে ধরে। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলতে চায়। ইরফান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই মেয়েটা তাকে এভাবেই জ্বালাবে, অথচ তার এই মেয়েকে ছোঁয়া যাবে না। ইচ্ছে করল ঠাটিয়ে চারটে থা’প্প’ড় মেরে এই রাস্তার মাঝে রেখে চলে যেতে। মাইরা ইরফানের গলা জড়িয়ে কিছু বলতে চায়। ঠোঁট নাড়ায়, যা ইরফানের গলায় আপাতত ছুরির ন্যায় লাগলো। ডান হাতে ঝটকা মেরে মাইরাকে তার থেকে সরিয়ে কিছু বলতে চায়, কিন্তুু মাইরা তার ডান দিকে হেলে পড়তে নিলে ইরফান দ্রুত বা হাতে মাইরার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে আগলে নেয়।

রাগ, বিরক্তি চাপা পড়ে হঠাৎ-ই ইরফানের মুখ জুড়ে চিন্তারা হাজির হয়। মাইরা চোখ বুজে, ঠোঁট নাড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করে। ইরফান বুঝল বমি করার ফলে অতিরিক্ত উইক হয়ে মেয়েটার এই অবস্থা। নিজেকেই দু’টো থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করল। এই বাচ্চার আশেপাশে থাকাই তার চরম লেভেলের ভুল। লম্বা শ্বাস ফেলে মাইরার মুখে লেগে থাকা বমির অংশ খসখসে ডান হাতের তালু দ্বারা মুছে দিল। মাইরা নড়েচড়ে ইরফানের স্যুটে মুখ ঘষে ইরফানের সাথে চেপে বসে। দু’হাতে ইরফানকে জড়িয়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে।
ইরফান মাইরার এলোমেলো হিজাব টা টান দিয়ে খুলে কোনোরকমে মাথার উপর দিয়ে দেয়। মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,

“আর ইউ ওকে?”
মাইরা ইরফানকে ছেড়ে দেয়। ডিকির উপর বসে ঢুলছে।
ইরফান রাগে বিরক্তিতে গায়ের স্যুট একটানে খুলে ফেলে, এরপর দ্রুতহাতে কালো শার্টের বোতামগুলো একে একে খুলতে থাকে,, মাইরা আদোআদো চোখ মেলে ইরফানকে দেখে ভয় পায়। ইরফান শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মনে হচ্চে এক্ষুনি টুপ করে খেয়ে ফেলবে। মাইরা কান্নামাখা জড়ানো গলায় বলে, “স্যরি!”
ইরফান স্যুট আর শার্ট গাড়ির ডিকির উপর রেখে ঝট করে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা ইরফানকে ভীষণ ভয় পায়। মাথা ব্য’থায় চোখমুখ কেমন লাল হয়ে গেছে। তবুও আদোআদো স্বরে বলে,
“আমি আপনার সাথে যাবো না। আমায় ছাড়ুন।”
ইরফান দু’পা এগোলে সামনে শুদ্ধর কথায় থেমে যায়।

“হোয়াট আ সিনেমা!
ছিঃ!ছিঃ!ছিঃ! ভাই,, তাই বলে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে….১৫ বছরের বাচ্চা মেয়েটাকে ছাড়লি না?”
মাইরা কথাই বলতে পারছে না। হঠাৎ-ই মাথা ব্য’থা বেড়ে গিয়েছে। তবে বুঝল এখানে শুদ্ধ এসেছে। কিন্তুু চোখ খুলল না।
ইরফান এমনিতেই রে’গে বোম হয়ে আছে। শুদ্ধর কথায় যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ হলো। রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ডোর খুলে দে।”
শুদ্ধ আফসোসের সুরে বলল,
“মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে রে। আহারে! তোর কাছে থাকা সেভ নয় মনে হচ্ছে,, ওকে আমায় দে। বড় হলে আবার তোকে দিয়ে দিব।”

কথাটা বলে এগিয়ে আসতে নিলে ইরফান উল্টো ঘুরে অপর পাশে গিয়ে নিজেই ডান হাত দিয়ে ডোর খুলল। এরপর মাইরাকে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে দেয়।
শুদ্ধ হাসলো, তবে মাইরাকে বেশ ভালোই অসুস্থ লাগলো। সিরিয়াস কিছু না-কি? ইরফান মাইরাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে শুদ্ধ কে বলে, ‘ইনায়াকে যেন বাড়ি দিয়ে আসে।’
এরপর ইরফান এগিয়ে গিয়ে মাইরার সিল্ট বেল্ট বাঁধতে নেয়। মাইরা পিটপিট করে চোখ খুলে ইরফানকে উদাম গায়ে তার কাছে দেখে কান্নামাখা গলায় বলে,
“কি করছেন? সরুন।”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা আমতা আমতা করে বলে, “স্যরি”
ইরফান মাইরার সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ির লাইট অফ করে সিটে গা এলিয়ে চোখ বুজে।
মাইরা কপালের কোণায় হাত দিয়ে ব্য’থা কমানোর চেষ্টা করে। মিনমিন করে বলে,
“আমি শুদ্ধ ভাইয়ার সাথে যেতে চাই।”

ইরফান কথাটা শুনেই ঝড়ের বেগে মাইরার কাছে এসে মাইরার গালে একটা শক্তপোক্ত চড় মেরে দেয়। মাইরার মাথা ভনভন করে। মাথা ব্য’থার মাঝে এমন থা’প্প’ড় খেয়ে যেন মাথা ঝিম মেরে যায়। ফুঁপিয়ে ওঠে।
ইরফান শক্ত করে মাইরার গাল চেপে ভস্ম করা চোখে চেয়ে হিসহিসিয়ে বলে,
“আর একটা কথা বলবি তো এখানে এক্ষুনি গাড়ির নিচে চাপা দিয়ে দিব।”
মাইরা ভয়ে কাঁপছে। আবারও উঁকি করতে নিলে ইরফান তার জায়গায় বসে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ একটা পাঞ্চ মারে। এরপর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। মাইরা ফুঁপিয়ে কাঁদে। বিড়বিড় করে,
“সিগারেট খেয়ে এসে অ’স’ভ্য’তামি করবে,, অ’স’ভ্য লোক।”

সিগারেটের গন্ধে আবারও যেন বমি আসলো মাইরার। মেয়েটা সিগারেটের গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারে না।
ইরফান গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পাশেই দাঁড়ায়। পকেট হাতালো, কিন্তুু সিগারেট পায় না। প্যাকেটে দু’টো সিগারেট ছিল, এখানে গাড়ি থামিয়ে সেই দু’টো সিগারেট এর ধোঁয়া উড়িয়ে মাইরার কাছে এসেছিল। সিগারেট না পেয়ে আরও রে’গে গেল। পাশে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে রসিকতার ছলে বলে,
“মেজাজ ফুরফুরে থাকার বদলে এমন গরম কেন রে!”
ইরফান রেগে শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ওই স্টুপিট কে যাস্ট নিতে পারছি না আমি।”
শুদ্ধ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। হেসে বলল,
“ওকে, তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দে।”
ইরফান শুদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

“এখান থেকে যা। আর পারলে এটার ব্যবস্থাই কর।”
শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকায়। ভেবেছিল রেগে যাবে। কিন্তুু ইরফানের এমন কথায় শুদ্ধ ভারী অবাক হলো। অতঃপর সিরিয়াস কণ্ঠে বলে,
“সিরিয়াসলি? তুই ডিভোর্স চাইছিস?”
ইরফান দু’হাতে নিজের মাথার চুল টেনে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আমার সাথে ওর ঠিক যায় না। ও আস্ত একটা বাচ্চা। আমি কবে জানি ওকে মেরে দিই। সো, ডিভোর্স ইজ বেটার।”
শুদ্ধ, ইরফান গাড়ি থেকে বেশি দূরে না দাঁড়ানোয় মাইরা ইরফান আর শুদ্ধর প্রতিটি কথা শুনতে পায়। এতোক্ষণ মাথা ব্য’থায় চোখ থেকে পানি পড়লেও এবার হৃদয়ের ক্ষ’তে যেন চোখের পানি শুকিয়ে গেল। কান্না থেমে যায় মাইরার। ডান হাত তুলে নিজের ঠোঁটে একবার হাত বুলায়। ছেলেদের কাছে মেয়েদের এই শরীরটাই সব? ছোট্ট মেয়েটা কেমন যেন বড়দের মতো কষ্ট পায়। চোখ থেকে টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে কোলের উপর পড়ে। দু’হাতে চোখ মুছে নেয়। কষ্ট পাওয়ার কি আছে। লোকটা তো বিয়ের দিন থেকেই তাকে মানে না। আজ মুক্তি চাইছে, এটাই তো স্বাভাবিক। মাথা ব্য’থায় যেন মাথা ছিঁড়ে যাবে। তবুও বহু কষ্টে মাইরা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। পিছু ফিরে তাকায় না। ঢুলতে ঢুলতে ধীরপায়ে হেঁটে সামনে এগোয়। একটা সিএনজি দাঁড় করিয়ে তাতে উঠে বসে। ঘাড়ের সাথেই ছোট ব্যাগ আছে। তাতে টাকা। তাই আর কিছু ভাবলো না। সিএনজির এক কোণায় বসে মাথা লাগিয়ে চোখ বুজল। বন্ধ চোখের পাতা দিয়ে জল গড়ায়। বিড়বিড় করে,
“বাবা, মা তোমরা আমায় তোমাদের সাথে কেন নিয়ে গেলে না?”

ইরফান শুদ্ধর থেকে সিগারেট নেয়। দু’টো সিগারেট পুড়িয়ে কি যেন ভেবে দ্রুত তার গাড়ির দিকে যায়। শুদ্ধ চিন্তিত বদনে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। সত্যি বলতে ইরফানের হঠাৎ এমন কথায় তার নিজেরই খা’রা’প লাগছে। যদি সত্যিই ইরফান এমনটা করে তবে শুদ্ধ তার সম্মানিত মামাকে ইরফানের বাবাকে চারটে কথা শুনিয়েই ছাড়বে। শুদ্ধর খা’রা’প লাগে মেয়েটার জন্য। ওইটুকু একটা মেয়ে, একে তো বয়স না হতেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আরেক ডিভোর্স হয়ে যাবে।

ইরফান গাড়ির ডোর খুলে ভেতরে মাইরাকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ব্যাক সিটে চেক করেও মাইরাকে না দেখে অবাক হয়। এখানেই তো বসে ছিল। দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আশেপাশে তাকায়। কোথাও নেই। ইরফান ঢোক গিলল। গাড়ির ডোর শব্দ করে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় দ্রুত পায়ে, চোখ ঘোরায়,, মাইরার ছায়াও নেই। ইরফানের গলা শুকিয়ে আসে। পায়ের গতি বাড়িয়ে শুদ্ধর কাছে এসে শুদ্ধর কলার ধরে বলে,
“ও কোথায়?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অসহায় কণ্ঠে বলে,
“কি জ্বালা! তোর ও হারালে শুধু আমার কাছে আসিস কেন? আমার ভেতরে, বাইরে সবখানে আমার হবু বউ। তুই চাইলে আমাকে উইথ আউট ড্রেসে চেক করে দেখতে পারিস। আমার কোথাও তোর ও নেই।”
ইরফান রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তুই ওপাশে দাঁড়িয়েছিলি আমি এ পাশে আসার পর। বল ও কোথায়?”
শুদ্ধ হা করে তাকালো। লে, সে একটু দাঁড়িয়েও থাকতে পারবে না। চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“ডিভোর্স-ই তো দিবি। ওর চিন্তা ঝেড়ে ফেল। আমি ওকে একটা নায়কের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। এখন থেকে সেই নায়ক ওর চিন্তা করবে।”
ইরফান রেগে শুদ্ধ কে ধাক্কা দেয়।
ফাইজ ইনায়াকে ফারাহের সাথে গাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছে। এদিকে ইরফানের গাড়ি দাঁড় করানো দেখতে পেয়েই মূলত আসলো। ইরফানকে খালি গা, সাথে শুদ্ধকে এভাবে বলতে শুনে অবাক হয়ে বলে,
“কি হয়েছে?”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২২

শুদ্ধ পিছনে তাকিয়ে বলে,
“ইরফান ওর বউকে ডিভোর্স দিবে বুঝলি? কিন্তুু সেই বউ এর জন্যই ওর পরাণ পুড়ছে জঘণ্যভাবে। জটিল ইকুয়েশন!”
ইরফান দু’হাতে মাথার চুল টেনে আবারও এদিক-ওদিক চোখের মণি ঘোরায়। শুকনো ঢোক গিলছে বারবার। সীমান্তের ওখানে গিয়েও মেয়েটা গাড়ি থেকে বেরিয়েছিল একা একা। আবারও বেরিয়েছে। ভাবতেই রাগে গাড়ির চাকায় একটা জোরে লাথি বসায়। বিড়বিড় করে, “স্টুপিট, আই উইল কি’ল ইউ।”
যদি খা’রা’প কারো হাতে পড়ে যায়? ভাবতেই ইরফানের চোখেমুখে ভীতি জড়ো হয়। রা’গ চেপে যায়। দু’হাতে মাথার চুল টেনে হঠাৎ-ই চিৎকার করে বলে,
“ওকে এনে দে প্লিজ!”
শুদ্ধ, আর ফাইজ অবাক হয়ে তাকালো ইরফানের দিকে। ইরফানে কণ্ঠ কাঁপছিল। আর প্লিজ শব্দটা! তাও ইরফান? নট পসিবল।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৪