প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫ (২)
Drm Shohag
অন্তরা নিজেকে সামলে নিল। ব্যাগ থেকে একটা মাস্ক বের করে দ্রুত পরে নেয়। এরপর গেইটের বাইরে পা রাখে। গেইটের বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ায় অন্তরা।
ইরফান এখনো মাথা নিচু করে কারো সাথে কথা বলছে। বা হাতে প্যান্টের পকেটে। অন্তরা কতক্ষণ যে তাকিয়ে রইল, ইরফানের দিকে। ইরফান কথা বলতে বলতে একবার কলেজ গেইটের ভেতর তাকায়। মাইরাকে হেঁটে যেতে দেখল। চোখ সরালো না। মাইরার দিকে চেয়েই ফোনে কথা বলতে লাগলো। মাইরা ক্লাসরুমের ভেতর চলে গেলে ইরফান সামনে এগোয়। অন্তরা নিশ্চুপ চোখে ইরফানের পানে চেয়ে রইল। ইরফান তাকে পাস করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অন্তরা তাকিয়েই রইল, ইরফানকে যতক্ষণ দেখা যায় দেখল মেয়েটা। চোখজোড়া আবারও ঝাপসা হলো। ইরফান আশেপাশে একবারের জন্যও তাকায়নি। এটা দেখেই অন্তরা ঝাপসা চোখেই একটু হাসলো। বিড়বিড় করল, ‘একটুও বদলাও নি ইরফান।’
ভাবনার মাঝেই অন্তরার ফোনে কল আসে। মেয়েটা কয়েকবার পলক ঝাপটায়। এরপর দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে দেয়। ওপাশ থেকে তার বাবা জানায়, তিনি অন্তরার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তরা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। এখন সে কিভাবে যাবে? তার তে ক্লাস আছে। বাবাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে কল কেটে দেয়। এরপর তার ছোট বোন নুসরাতের কাছে কল করলে কল রিসিভ হয় সাথে সাথেই। নগসরাত জানায় তার ক্লাস ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে। অন্তরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। নুসরাতকে তার কলেজের সামনে আসতে বললে সে বলে, অন্তরা যেন কষ্ট করে দিয়ে আসে। সে গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গিয়েছে।
অন্তরা উপায় না পেয়ে নুসরাতের ভার্সিটির দিকে এগিয়ে যায়।
হঠাৎ মাথায় আসলো ইরফান এখানে কেন এসেছিল? কথাটা ভাবতেই একটু অদ্ভুদ লাগলো, আবার ভাবলো কাজ থাকতেই পারে। সে তো জানে না। কতবছর হয়ে গেল যোগাযোগ-ই নেই। নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত পা চালায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফারাহ ক্লাস শেষে দ্রুত ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসে। সামনে শুদ্ধ কে দেখে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে। পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ফারাহ আবারও শুদ্ধর পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে শুদ্ধ আবারও একই কাজ করে। ফারাহ রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“ক্লাস করে যাবে। এসো।”
ফারাহ শক্ত গলায় বলে,
“আমি তোমার ক্লাস করব না। সরে দাঁড়াও।”
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে,
“আমার তোমাকে মারাত্মক জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে ফারাহ পাখি। ক্যান আই?”
ফারাহ থতমত খেয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বিরক্ত হয়ে বলে,
“তুমি সরে দাঁড়াও তো। মাইরা এসেছে। ওকে আমাদের ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাবো।”
শুদ্ধ কিছু একটা ভেবে বলে,
“ফারাহ তুমি তো আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারো না। তুমি জানো সামিয়া মেয়েটা ভীষণ ভালো। ওর ব্যবহার এতো অমায়িক!”
ফারাহ অবাক হয়ে তাকালো শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ মোটেও মজা করছে না। শুদ্ধ আবারও মৃদু হেসে বলে,
“সামিয়ার মতো মেয়েকে যে কেউ পছন্দ করবে, কিন্তুু..”
ফারাহ মৃদু হেসে বলে,
“বুঝেছি শুদ্ধ ভাইয়া। তোমার জন্য শুভকামনা। তোমার হবু বউ এতো ভালো মানুষ। তোমাকে আর দুঃখ ছুঁতে পারবে না।”
ফারাহ’র মুখে ভাইয়া ডাক শুনে শুদ্ধ বিরক্ত হলো। ফারাহ’র হাত টেনে বলে,
“ফারাহ? আমি যা বলি সবসময় তার উল্টোটাই তোমাকে বুঝতে হয়?”
কথাটা বলে আশেপাশে তাকিয়ে ফারাহ’র হাত ছেড়ে দিল। ফারাহ’র চোখ পানিতে টইটুম্বুর। মাথা নিচু তার। শুদ্ধ কিছু বলার আগেই ফারাহ মাথা নিচু করেই নিরবে ক্লাসরুমে গেল। শুদ্ধ একটু হাসলো। অতঃপর সেও ক্লাসরুমে প্রবেশ করে।
ফারাহ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। শুদ্ধ ক্লাস নেয়ার ফাঁকে ফাঁকে ফারাহ’র দিকে তাকায়। মেয়েটা একবারও মাথা তুলে তাকায়নি। শুদ্ধ কথা বলতে বলতেই ফারাহ’র পাশে এসে দাঁড়ায়। ফারাহ’র খাতায় নজর করলে দেখল ফারাহ পুরো খাতায় লিখে ভরে ফেলেছে, ‘শুদ্ধ ভাই, তুমি আমার।’
শুদ্ধ এটা দেখে না হেসে পারলো না। তবে শব্দ করে হাসলো না। শব্দহীন হেসে সামনে চলে যায়।
ক্লাস শেষে ফারাহ ক্লাসরুম থেকে বেরোলে শুদ্ধকে আবারও তার সামনে দাঁড়াতে দেখে মাথা নিচু করে নিল। শুদ্ধ হেসে বলে,
“আমার রুমে এসো।”
ফারাহ মাথা নিচু করে বলে, “মাইরা ওয়েট করছে আমার জন্য।”
শুদ্ধ ফারাহ’র পিছনে দাঁড়িয়ে বলে, “ইরফান গিয়েছিল মাইরার কাছে। তুমি এসব চিন্তা ঝেড়ে আমার রুমে এসো। সামিয়াকে একবার ডাকলেই চলে আসে।”
ফারাহ পিছু ফিরে তাকায় শুদ্ধর দিকে। চোখজোড়ায় পানি চিকচিক করছে। শুদ্ধ হেসে আফসোসের সুরে বলে,
“বেশি ভালোবাসা রাখার পাত্র অর্ডার করতে হবে মনে হচ্ছে। আমি তো রাখার জায়গা পাচ্ছি না।”
ফারাহ এবারেও কিছু বললো না। মাথা নিচু করে নিল। শুদ্ধ হেসে বলে,
“তুমি জানো তো, আমি কেমন। তবুও এই মিথ্যে কথাগুলো শুনে কান্না কর কেন?”
ফারাহ হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে ফেলে। নিজেকে সামলে বলে,
“দেখবে?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কি?”
ফারাহ আশেপাশে খেয়াল করলে দেখল শাহেদ হেঁটে এদিকে আসছে। ফারাহ শুদ্ধর সামনে থেকে সরে গিয়ে হাত উঁচিয়ে ডেকে বলে,
“এই শাহেদ, তোকে তো মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে।”
ফারাহ’র ডাকে শাহেদ ফোন থেকে চোখ তুলে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে বলে,
“তোরে কোন ভূতে ধরেছে?”
ফারাহ হেসে বলে,
“তুই আসলেই সুন্দর! এটা অস্বীকার করবি? আমার যদি তোর তোর মতো একটা জামাই হতো! হাউ সুন্দর হতো, বল?”
শাহেদ বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে ফারাহ’র দিকে। সে সুন্দর। মেয়েরা এক দেখায় পছন্দ করবে এটা অস্বীকার করার মতো নয়। কিন্তুু এই ছেমড়ি তারে এইসব গান শুনায় ক্যান?
পিছন থেকে শুদ্ধ রেগে বলে,
“তুমি এই ভার্সিটির সবচেয়ে বিশ্রী ছেলে, রাইট?”
শাহেদ ফারাহ’র থেকে একটু পিছনে শুদ্ধ কে দেখে থতমত খেয়ে একটা সালাম দেয়। শাহেদ ঢোক গিলে বলে,
“স্যার আসছি।”
কথাটা বলেই যেন পালালো। কি জ্বালা। ফ্রেন্ড এর ফিয়ন্সি স্যার হলে বহুত প্যারা। শুদ্ধ পিছন থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তোমার ওর মতো জামাই চাই ফারাহ পাখি?”
ফারাহ হাসল।শুদ্ধকে উত্তর না দিয়ে হুট করে দৌড় দিল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। একবার পিছু ফিরে বলে,
“মানুষ কারণ ছাড়াই রেগে যায়, কি একটা অবস্থা!”
শুদ্ধ গম্ভীর চোখে ফারাহ’র দিকে চেয়ে দেখল। কি সুন্দর ফুরফুরে মেজাজ গরম করে দিয়ে চলে গেল তার না হওয়া বউটা।
অন্তরা ভার্সিটির প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে। বারবার নুসরাতকে কল করছে, তার খবর নেই। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। এই মেয়ে কোথায়? তাকে আসতে বলে এখন উধাও হয়ে গিয়েছে। একের পর এক কল করতে থাকে নুসরাতকে। তার ক্লাস টাইম চলে যাচ্ছে। হঠাৎ-ই কিছুটা দূরে ইরফানকে দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ইরফান এখানে কেন? মুখের মাস্ক তো ফেলে দিয়েছে। কি করবে ভেবে না পেয়ে দ্রুত উল্টো ঘুরে হাঁটতে লাগলো। কিছুদূর যেতেই শুদ্ধর গলা পায়,
“তুই অন্তরা না?”
অন্তরার পা থেমে যায় কিছু সময়ের জন্য। কিন্তুু একেবারে থেমে যায় না। আবারও দ্রুত পা চালায়। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে অন্তরার পিছে পিছে আসতে আসতে,
“এ্যাই অন্তরা?”
বলতে বলতে অন্তরার সামনে এসে দাঁড়ায়। অন্তরা শুদ্ধকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“পালাচ্ছিলি কেন?”
অন্তরা শুদ্ধর দিকে চেয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“একটা কফিশপে বসে কথা বলবো পরে। এখন যাই। দেখি সর।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে অন্তরাকে আটকে বলে,
“আরে কি পালাই পালাই করছিস। অনেকদিন পর দেখা হলো। কিন্তুু তুই এখানে কেন?”
অন্তরা অশান্ত কণ্ঠে বলে,
“কাজ ছিল। যেতে দে। ইরফান এখানে কেন?”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় অন্তরার দিকে। ইরফানকে দেখে পালাচ্ছিল! এবার বুঝল কাহিনী। হেসে বলে,
“এই ভার্সিটির টিচার মোরা। কিন্তুু তুই ইরফানকে দেখে পালাচ্ছিস কেন? তোদের ব্যাপার স্যাপার বুঝিনা বাপ।”
কথাটা বলে সামনে তাকিয়ে ইরফানকে খুঁজল। না পেয়ে হতাশ হলো। অফিসরুমে চলে গিয়েছে হয়তো। কিন্তুু তাতে কি? ইরফানকে ডাকতে তো আর ইরফানকে লাগছে না। সাথে তার মুখ আছে। অতঃপর মিটিমিটি হেসে হাত উঁচিয়ে ডাকে, “এ্যাই ইরফান, শোন। দেখ অন্তরা মামুনি পা রেখেছে আমাদের ভার্সিটিতে।”
অন্তরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত শুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে শুদ্ধর পিছনে লুকিয়ে শুদ্ধর পিঠের শার্ট খামচে রেগে বলে,
“থাপ্পড় খাবি। ওকে ডাকিস না।”
শুদ্ধ ছ্যাঁত করে উঠল। ‘এই সর সর, আমারে ধরিস না। করেছে টা কি!’
আয় হায় তার না হওয়া বউ এমনিতেই শুধু কাঁদে। তাকে এক মেয়ে ধরে এভাবে টানছে তাহলে তো হয়ে গেল!
সাজিদ আর নুসরাত এদিকে আসছিল। নুসরাত কান্নার ভান করে বলছিল, “মাইরার ভাইয়ের নামে আমি বদনাম করে ফেলেছি। এখন ইরফান স্যার আমাকে কি করবে দোস্ত?”
সাজিদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“মাইয়া মানষের ঢং দেখলে গা পিত্তি জ্বইলা ওঠে। বা’লের মাইয়ারা সব।”
সাজিদের কথাটা শুদ্ধর কানে যায়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,
“আরে আমার জমজ ভাইরে পাইছি। মনের কথা বলে দিল, আয় ভাই বুকে আয়।”
শুদ্ধর কথা শুনে সাজিদ আর নুসরাত দু’জনেই তাকায়। শুদ্ধ সাজিদ কে দেখে থতমত খেয়ে তাকায়। ভার্সিটির স্টুডেন্টদের কাছে সে মোটেও এতো ফ্রি না। সাজিদ, নুসরাত দু’জনেই একটু অদ্ভুদভাবে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করল।
সাজিদ, নুসরাত এগিয়ে এসে শুদ্ধকে সালাম দেয়। শুদ্ধ মুখাবয়ব স্বাভাবিক করে খুব ভদ্রভাবেই সালাম এর উত্তর দিল।
পিছন থেকে ফারাহ এগিয়ে এসে শুদ্ধর পিছনে অন্তরাকে দেখে অবাক হয়। তবে এতো না ভেবে মৃদু হেসে বলে,
“আপু কেমন আছো?”
অন্তরা শুদ্ধর আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল। শুদ্ধর শার্ট থেকে হাত অনেক আগেই সরিয়ে নিয়েছে। এই বে’য়া’দ’ব যা। এমনি এমনি কাহিনী করবে। ফারাহ’র ডাকে অন্তরা পাশ ফিরে বলে,
“এইতো ভালো। তুই কেমন আছিস?”
শুদ্ধ উল্টো ঘুরে চোখ ছোট ছোট করে একবার অন্তরার দিকে তাকায়, আরেকবার ফারাহ’র দিকে তাকায়। সাজিদ আর নুসরাত যেতে গিয়েও থেমে যায় অন্তরার গলা পেয়ে। তারা অন্তরাকেই খুঁজছিল।
ফারাহ’র পাশে এসে দাঁড়ায় দু’জনেই।
শুদ্ধ চিন্তিত কণ্ঠে অন্তরা আর ফারাহ’র উদ্দেশ্যে বলে,
“তোরা একে অপরকে কিভাবে চিনিস?”
অন্তরা উত্তর দেয়,
“নুসরাত আমার ছোট বোন। আর নুসরাতের সব ফ্রেন্ড আমার ছোট ভাইবোন।”
কথাটা বলে শুদ্ধর আড়াল থেকে দেখার চেষ্টা করল, ইরফান আছে কি-না। শুদ্ধ বুঝলো এদের সম্পর্ক। অন্তরাকে উঁকি মারতে দেখে হেসে বলে,
“আরে ইরফান নাই। তখন এমনি বললাম। আমার কথা বিলিভ করিস দেখে ভালো লাগলো। আজকাল সবাই ভিলেন হয়ে যাচ্ছে। মনে হয় আমার একটা সঙ্গী পেলাম।”
ফারাহ প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। অন্তরার সাথে শুদ্ধর কি কানেকশন? কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তারা অনেক পরিচিত।
অন্তরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। শুদ্ধর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“কু’কু’রের লেজ আসলেই সোজা হয় না, সেটা তোকে দেখেই উপলব্ধি করলাম।”
শুদ্ধ থতমত খেয়ে তাকায়। তার স্টুডেন্টদের সামনে তার ইজ্জত খেয়ে দিবে না-কি! অন্তরার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলে,
“অন্তরা চল যাই।”
অন্তরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোথায়?”
“তোর চোখের ছানি কাটাতে। আমার একটা রেসপন্সিবিলিটি আছে না? আমার মায়ের চোখে ছানি পড়েছে, টাকা নিয়ে চিন্তা করিস না। আমি সব খরচ দিব। আয় আয়। লেট করিস না।”
অন্তরা বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমার চোখে ছানি পড়েনি। তুই যা তো।”
শুদ্ধ হাত ঝাড়া দিয়ে বলে,
“আরে পা’গ’লেরা স্বাীকার করতে পছন্দ করে না তারা পা’গ’ল। তুই আয়। জলজ্যান্ত কিউট একটা ছেলেকে তুই কু’কু’র দেখছিস। নাহ! মারাত্মক অধঃপতন হয়েছে তোর চোখের। আমি সহ্য করতে পারছি না। আয় মা।”
শুদ্ধর কথা শুনে নুসরাত, ফারাহ আর সাজিদ শব্দ করে হেসে ফেলল। অন্তরা কটমট দৃষ্টিতে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ পাত্তা দিল না। মিটমিটিয়ে হাসছে সে। ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে অন্তরাকে দেখিয়ে বলে,
“ফারাহ এটা তোমার দুই নম্বর শ্বাশুড়ি।”
ফারাহ কৌতুহলী চোখে অন্তরার দিকে তাকায়। অন্তরা ভ্রু কুঁচকে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
“ফারাহ তোর কে হয়?”
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“আমার বাড়ির কাজের লোক। সুন্দর না?”
ফারাহ রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। অন্তরা বিরক্ত হলো। একে কোন দুঃখে জিজ্ঞেস করল। নুসরাত আর সাজিদ একটু অবাক হয়। শুদ্ধকে এই রূপে কখনো দেখা হয়নি। দু’জনেই ফারা’হর মুখের দিকে তাকায়। সাজিদ মনে মনে হাসছে ফারাহ’র অবস্থা দেখে। নুসরাত মিটিমিটি হেসে ফারাহ’র কানের কাছে গিয়ে বলে,
“শুদ্ধ স্যারের রুচি তো সেই লেভেলের। ভার্সিটির মেয়েকে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখেছে।”
ফারাহ রেগে তাকায় নুসরাতের দিকে। নুসরাত মেকি হেসে অন্তরার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“আপু চাবি দাও।”
অন্তরা নুসরাতের কান টেনে ধরে। রেগে বলে,
“কতগুলো কল করেছি দেখ তো।”
নুসরাত অসহায় চোখে তাকায়। শুদ্ধর দিকে তাকালে দেখল ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে তাদের দু’বোনের দিকে। নুসরাত ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,
“ফোন সাইলেন্ট ছিল। কান ছাড়ো আপু।”
অন্তরা নুসরাতের কান ছেড়ে নুসরাতের হাতে ঘরের চাবি দিয়ে বলে,
“বাবা ওয়েট করছে। দ্রুত বাড়ি যা।
সাজিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাজিদ ওকে একটু নামিয়ে দিয়ে আয় ভাই। আমার টাইম নেই।”
সাজিদ মাথা নেড়ে বলে, “যাচ্ছি আপু।”
এরপর অন্তরা ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলে,
“একদিন আমাদের বাড়ি আসবি। এখন আমি যাচ্ছি। টাইম নেই।”
ফারাহ অন্তরার হাত ধরে শুদ্ধকে দেখিয়ে বলে,
“আপু উনি তোমার কে হয়?”
অন্তরা শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“আরে ও আমার ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। কিন্তুু এই বাঁদর টা তোর কে হয়?”
ফারাহ অন্তরার মুখে বাঁদর শুনে একটু হাসলো। সাজিদ আর অন্তরা শুদ্ধর দিকে তাকালো। কথার ধরনেই বুঝেছিল অন্তরা শুদ্ধ বন্ধু।
শুদ্ধ খুবই বিব্রতবোধ করল। এই বেদ্দপ মহিলা স্টুডেন্টদের সামনে তার ইজ্জত খেয়ে দিচ্ছে। শুদ্ধ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে অন্তরার উদ্দেশ্যে বলে,
“ফারাহ ফাইজের বোন গর্ধব।”
অন্তরা শুদ্ধর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় ফারাহ’র দিকে। মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ফারাহ’কে তো সেই কবে থেকে চিনি। তুই ফাইজের বোন আমাকে বলবি না?”
ফারাহ বোকা চোখে তাকালো। তার ভাইয়ের ফ্রেন্ড অন্তরা আপু।
শুদ্ধ একটু আড়ালে গিয়ে ইরফানকে কল করে বাইরে আসতে বলে দ্রুত।
অন্তরা নুসরাত আর সাজিদকে পাঠিয়ে ফারাহ’র থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়। শুদ্ধ পিছন থেকে বলে,
“অন্তরা দাঁড়া। ইরফান আসছে।”
অন্তরা দাঁড়ালো না। পায়ের গতি আরও বাড়ালো। শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আরে ইরফান মন খারাপ করবে রে। দেখা করে যা।”
অন্তরা বিড়বিড় করল, ‘করুক, তাতে আমার কি?’
ফারাহ একবার শুদ্ধকে দেখল, আরেকবার অন্তরাকে দেখল।
কিছুক্ষণের মাঝেই ইরফান এসে জিজ্ঞেস করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
শুদ্ধ হতাশ হয়ে বলে,
“চলে গেল তো। লেট করে ফেলেছিস।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কে?”
শুদ্ধ চরম মন খারাপের ভান করে বলে,
“তোর জান প্রাণ অন্তরা।”
ইরফান বিরক্তি চোখে তাকালো শুদ্ধর দিকে।
এরপর দ্রুত চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে, “হোয়ার?”
কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখতে না পেয়ে শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,
“থাপ্পড় খাবি। ফান করার লিমিট রাখতে পারিস না?”
শুদ্ধ ইরফানের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে,
“দেখতে না পেয়ে কষ্ট হচ্ছে বুঝি? আফসোস হচ্ছে? অন্তরা কিন্তুু বিয়ে করেনি এখনো। আফসোস করিস না।”
ইরফান বিরক্ত হলো। তবে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজল বোধয় অন্তরাকে। শুদ্ধ ইরফানের দিকে চেয়ে আবারও মিটিমিটি হেসে বলে,
“আহারে ভালোবাসা! মাইরাটার যে কি হবে! দেখি মাইরার জন্য ছেলে খুঁজতে হবে,,
এরপর চুলের ভাঁজে হাত চালিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“তুই কি ছেলে পছন্দ করে দিবি? দিতেই পারিস, হাজার হোক তোর নামধাম বউ…”
ইরফান রেগে শুদ্ধর কলার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আর একটা ফালতু কথা উচ্চারণ করলে থাপ্পড় খাবি বে’য়া’দ’ব।”
তীব্র বিরক্তিতে শুদ্ধকে ছেড়ে উল্টো ঘুরে অফিস রুমের দিকে গটগট পায়ে চলে যায়।
ফারাহ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। অন্তরা আপু ইরফান ভাইয়ের সাথে কথা বলল না। আবার শুদ্ধর কথাগুলোও কেমন যেন ঠেকল। যদিও শুদ্ধ মজা করে, তবুও ফারাহ’র কেমন যেন লাগলো। সবচেয়ে বড় কথা অন্তরা আপু বিয়ে করেনি এখনো, বয়স তার ২৬+
এটা নিয়ে নুসরাত মাঝে মাঝেই বলে। অন্তরা আপুর বাবার সাথে এইটা নিয়ে মাঝে মাঝেই ঝামেলা লেগে থাকে। তবে কি ইরফান ভাই-ই কারণ?
শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখল শুদ্ধ হাসছে। ফারাহ চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“অন্তরা আপু আর ইরফান ভাইয়ের মাঝে কি কিছু ছিল শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে ফারাহ’র কৌতুহলী মুখ দেখে আবারও হেসে ফেলে। অতঃপর হেয়ালি করে বলে,
“মারাত্মক কিছু ছিল ফারাহ। সেসব বলে শেষ করা যাবে না।”
ফারাহ অদ্ভুদভাবে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধর হেয়ালি পরায় বিরক্ত হলো। এই লোক জীবনেও সিরিয়াস হয় না।
“অন্তরা আপু এখনো বিয়ে করেনি। এটা নিয়ে আঙ্কেল এর সাথে অনেক ঝামেলা হয়। ইরফান ভাই এর কারণ?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফারাহ’র দিকে। অতঃপর বলে,
“অন্তরার সাথে তোমার কবে থেকে পরিচয়?”
“নুসরাতের সাথে কলেজে পরিচয় হয়েছিল। তখন থেকেই অন্তরা আপুকে চিনি। আপু খুবই ভালো মনের মানুষ।”
শুদ্ধ মৃদু হাসল। অতঃপর টপিক এড়িয়ে বলে,
“তোমার আর ক্লাস আছে?”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ক্লাস আছে। তুমি টপিক চেঞ্জ করছ কেন? বলো? অন্তরা আপু ইরফান ভাইকে ভালোবাসে তাই না?”
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলে,
“হুম।”
এরপর হাতঘড়িতে একবার সময় দেখে বলে,
“আমার ক্লাস আছে। তুমি ক্লাসে যাও।”
কথাটা বলে এগিয়ে যেতে নিলে ফারাহ দ্রুত শুদ্ধর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“অর্ধেক বলে যাচ্ছো কেন? ইরফান ভাই ও কি অন্তরা আপুকে ভালোবাসে?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“মারাত্মক।”
ফারাহ’র মাথা ঘোরে। শুদ্ধ কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। অবাক হয়ে বলে,
“তাহলে তারা আলাদা কেন? আর মাইরার কি হবে?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“তুমি আর আমি মিলে মাইরার জন্য পাত্র খুঁজবো। যাবে না আমার সাথে?”
ফারাহ’র সব গোলমেলে লাগে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“আসলেই ইরফান ভাই আর অন্তরা আপু একে অপরকে ভালোবাসে?”
শুদ্ধ ফারাহ’র পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলে,
“বাসে বাসে। আমিও তো ভালোবাসি অন্তরাকে। বাট, ধরণ টা যাস্ট ডিফরেন্ট।”
কথাটা বলে শুদ্ধ পিছিয়ে এসে ফারাহ’র সামনে দাঁড়ায়। সিরিয়াস কণ্ঠ, তবে মুখে হাসি নিয়ে বলে,
“তোমার কোয়শ্চন অনেক ফানি ছিল ফারাহ। ইরফান কাউকে ভালোবাসার মতো মানুষ নয় বুঝলে? আমার অন্তরার জন্য ভীষণ আফসোস হয়, ও বেচারি এক পাথর কে ভালোবেসে নিজের লাইফ নষ্ট করেছে।
একটু থেমে চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এরপর ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে ভীষণ সিরিয়াস হয়ে বলে,
“তুমি জানো ফারাহ? মাইরা ইরফানকে মাঝে মাঝে হার্টলেস বলে। আমিও হেসে উড়িয়ে দিই। বাট আমার নিজেরই ওকে হার্টলেস লাগে। মাইরার প্রতি ওর যে পজেসিভনেস দেখেছি, ফাস্ট ফাস্ট এটাতে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। বাট, এখন, ও মাইরা রিলেটেড ৯০% কাজগুলোতে একদমই নির্লিপ্ত থাকে। যেন মাইরা ওর কেউ না।”
একটু থেমে হতাশ কণ্ঠে বলে,
“শা’লা, মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে ওর হার্ট খুলে আমার হার্ট থেকে একটু ভালোবাসা ওকে ধার দিই।”
ফারাহ শুদ্ধর কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো। তবে লাস্ট কথাটায় হেসে ফেলল। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“আমি কিন্তুু আমার ফারাহ পাখিকে মারাত্মক ভালোবাসি।”
ফারাহ শুদ্ধর থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। শুদ্ধ আর কিছু বললো না। ক্লাসের দিকে যেতে যেতে বলে,
“ক্লাস শেষে ওয়েট করবে।”
ফারাহ তাকিয়ে রইল শুদ্ধর পানে। ঠোঁটের কোণে হাসি।
মাইরা কলেজ শেষে কলেজ গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে অনেক ভিড়। মেয়েটার চোখেমুখে ক্লান্তি সাথে বিরক্তি। এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। ভিড় কমলে রাস্তায় নামবে বলে। হঠাৎ-ই কারো ধাক্কা খেয়ে মাইরা ভিড় এর মাঝেই উপুর হয়ে পড়ে যায়। ডান হাতের কব্জি তে বেকায়দায় লেগেছে। কয়েকজন মেয়ে মাইরাকে ধরে ধরে দাঁড় করালো। মাইরা ঠিক করে দাঁড়াতেই পারছে না। মনে হচ্ছে পায়েও ব্য’থা পেয়েছে।
অন্তরা কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, এদিকটায় ভিড় দেখে এগিয়ে আসে। মাইরাকে চোখমুখ কুঁচকে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। কলেজ এর আগে মেয়েটা তার সাথে ধাক্কা খেয়েছিল। বোরখা হিজাবে মাটি লেগে আছে। ঠিক করে দাঁড়াতে পারছে না মেয়েটা। অন্তরার খারাপ লাগলো। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে এখানে?”
কয়েকজন মেয়ে অন্তরাকে বলে, ‘মাইরা পড়ে গিয়েছে।’
অন্তরা মাইরার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“বেশি ব্য’থা পেয়েছ না-কি?”
মাইরা অন্তরার দিকে চোখ তুলে তাকায়। চোখের কোণে পানি। ব্য’থায় চোখের কোণে পানি জমেছে। অন্তরা বুঝল মেয়েটা ভালোই ব্য’থা পেয়েছে। অতঃপর বলে,
“তোমার বাসা কোথায়?”
মাইরা মিনমিন করে তার বাসার ঠিকানা বলে। অন্তরা আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“তোমার বাড়ির কেউ নিতে আসে? না-কি তুমি একাই যাও?”
মাইরা এবারেও ছোট করে উত্তর করল, “নিতে আসে। কিন্তুু আজ এখনো আসেনি।”
অন্তরা কি করবে বুঝলো না। এভাবে মেয়েটাকে রেখে যেতে মন স্বায় দিচ্ছে না। যে বাড়ির ঠিকানা বলল, সেটা তো মোটামুটি অনেক দূর। তার বাড়ি কাছেই। তাদের কলেজের আরও দু’টো মেয়েকে সহ সে নিজেই মাইরাকে ধরে ধরে তার গাড়িতে বসায়। মাইরা অবাক হয় অন্তরার ব্যবহারে। অপরিচিত এক মেয়েকে এভাবে কোনো স্টুডেন্ট কে কোনো মেডাম হেল্প করে? মাইরার দৃষ্টিতে অন্তরা মৃদু হেসে বলে,
“আপাতত আমার বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিও। আমার বাড়ি এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। ওখানে গিয়ে তোমার বাড়ির কাউকে ফোন করলে তোমাকে নিয়ে যাবে। তারা হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে।”
মাইরা ভীষণ অবাক হয়। অন্তরা ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। মাইরা মেয়েটাকে অন্তরা চিনে নিয়েছে। কিছু স্টুডেন্ট কে ক্লাসে নোটিশ করে যেমন, অন্তরা মাইরাকে সেভাবেই নোটিশ করেছে। দু’টো কারণে অন্তরার চোখে পড়েছে মাইরাকে। একটা, এই মেয়ে প্রচুর কথা বলে। বেশ কয়েকদিনেই মেয়েটা পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছে। প্রচুর কথা বলার জন্য মাইরাকে সবসময় প্রায় ৯০% পড়া ধরত অন্তরা, মজার ব্যাপার এই মেয়ে সব উত্তর ঠিকঠাক দিয়ে দিত। অন্তরার ভালো লেগেছে, মাইরা ভালো স্টুডেন্ট বলে। আরেকটি ভালো লাগার কারণ, মাইরা মেয়েটা একদম তার ছোট বোন নুসরাতের মতো, ভীষণ চঞ্চল।
মাইরা অন্তরার কাজে সহজ হলো। বুঝলো এই ম্যাম ভালো খুব। অতঃপর বলে,
“ম্যাম আপনার নাম কি?”
অন্তরা আড়চোখে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“অন্তরা। পড়লে কিভাবে তুমি?”
মাইরা একটু ভেবে বলে,
“ম্যাম আমার মনে হয়, আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে।”
অন্তরা হেসে বলে,
“তোমার শরীরে তো কিছুই নেই। তোমাকে ধাক্কা দিতে হবে না-কি!”
মাইরা বিব্রতবোধ করে। অন্তরা গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে থঘোরাতে প্রশ্ন করে,
“তোমাকে কে নিতে আসে?”
“বাবা আসে। আজ হয়তো কাজে আটকে গিয়েছে।”
অন্তরা আর কিছু বলল না।
ইরফান রাত ৮ টায় বাড়ি ফিরেছে। কলেজ শেষ করে অফিসে গিয়েছিল। তারেক নেওয়াজ ইরফান দেখে এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলে,
“মাইরা কোথায়?”
ইরফানের পা থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার বাবার দিকে।
তারেক নেওয়াজ দুপুর পর ইরফানের নম্বরে ম্যাসেজ করে দিয়েছিল সে কাজে ব্যস্ত আছে, ইরফান যেন আজকে মাইরাকে নিয়ে আসে। ভেবেছিল ইরফান মাইরাকে ঠিক আনবে। কিন্তুু সে বাড়ি ফিরে হতাশ হয়েছে। ইরফান মাইরাকে আনেনি। রাত আটটা বাজতে চলল, অথচ মাইরার কোনো খোঁজ নেই। টেনশনে তার মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“আমাকে কেন আস্ক করছ?”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
“ফোন চেক করনি? নাকি জেদ করেই আনতে যাওনি?”
ইরফান বুঝতে পারছে না। প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে বলে,
“ও কোথায়?”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৫
“নেই ও। বললে ও আমার মেয়ে। আমার মেয়ে হলে, সে হিসেবেও তো তোমার একটা দায়িত্ব থাকে, সব গুলে খেয়েছ?
একটু থেমে বলে,
ও তো তোমার বোঝা। তাই আনতে যাওনি তাই না? ভালো করেছ। কলেজ থেকে এখনো ফেরেনি। রাত বাজে ৮ টা। মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে! আমার বন্ধুর আমানতের এ কী হাল হলো আমার কাছে এসে!”
ইরফান তার বাবার দিকে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। ঢোক গিলল বেশ কয়েকবার। এরপর কোনোদিকে না তাকিয়ে সেভাবেই দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।